ভাঙার গান

‘ভাঙার গান’ বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত বিদ্রোহাত্মক কাব্যগ্রন্থ— এতে কবিতা ও গান সঙ্কলিত হয়েছে। গ্রন্থটি ১৩৩১ বঙ্গাব্দের শ্রাবণ মুতাবেক ১৯২৪ খৃষ্টাব্দের আগষ্ট মাসে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। উৎসর্গ পাতায় লেখা ছিল— “মেদিনীপুরবাসীর উদ্দেশে”। ১১ নভেম্বর তারিখে তৎকালীন বঙ্গীয় সরকার গ্রন্থখানি নিষিদ্ধ ও বাজেয়াপ্ত করেন। বৃটিশ সরকার কখনও এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেননি। ‘ভাঙার গানে’র দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ পায় ১৯৪৯ খৃষ্টাব্দে। প্রকাশক সুরেন দত্ত, ন্যাশনাল বুক এজেন্সী লিমিটেড, ১২ বঙ্কিম চ্যাটার্জি ষ্ট্রিট, কলিকাতা—১২। পৃষ্ঠা ৪+৩৬; মূল্য এক টাকা। দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় রাবার ষ্ট্যাম্পের লেখা — “সম্পূর্ণ লভ্যাংশ কবির সাহায্যে দেওয়া হইবে।” এখানে দ্বিতীয় সংস্করণের পাঠ ও ক্রম অনুসৃত হয়েছে।

‘ভাঙার গান’ শীর্ষক গানটি সম্পর্কে জনাব মুজফ্‌ফর আহমদ লিখেছেন—

“আমার সামনেই দাশ-পরিবারের শ্রীসুকুমাররঞ্জন দাশ ‘বাঙ্গলার কথা’র জন্যে একটি কবিতা চাইতে এসেছিলেন। শ্রীযুক্তা বাসন্তী দেবী তাঁকে কবিতার জন্য পাঠিয়েছিলেন। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ তখন জেলে। … অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নজরুল তখনই কবিতা লেখা শুরু ক’রে দিলেন। সুকুমাররঞ্জন আর আমি আস্তে আস্তে কথা বলতে লাগলাম। বেশ কিছুক্ষণ পরে নজরুল আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে তার সেই মুহূর্তে রচিত কবিতাটি আমাদের পড়ে শোনাতে লাগল। … নজরুল ‘ভাঙার গান’ লিখেছিল ১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাসের কোনো এক তারিখে। ‘ভাঙার গান’ ‘বাঙ্গলার কথা’য় ছাপা হয়েছিল।”

— [ কাজী নজরুল ইসলাম : স্মৃতিকথা ]

‘জাগরণী’ শীর্ষক কোরাস গানটি সম্পর্কে জনাব আফতাব-উল-ইসলাম লিখেছেন—

“১৯২১ সনে শ্রীযুত বীরেন সেন (কাজীর এবং আমাদের সকলের ‘রাঙা দা’) তখন কুমিল্লা বিদ্যালয়ে শিক্ষক। কাজী নজরুল কান্দিরপার তাঁরই বাড়ীতে থাকেন। প্রিন্স অব ওয়েল্‌সের ভারত-ভ্রমণ উপলক্ষে কংগ্রেস-ঘোষিত হরতাল-পালনের জন্য (২১শে নভেম্বর) একটি গান লিখে দেওয়ার অনুরোধ নিয়েই প্রথম তাঁর সাথে দেখা করি ‘রাঙা দা’র বাড়ীতে। তিনি তা তো দিলেনই, অধিকন্তু কাঁধে হারমোনিয়াম বেঁধে মিছিলের সঙ্গে তিনি নিজেও গাইলেন:

ভিক্ষা দাও। ভিক্ষা দাও

ফিরে চাও ওগো পুরবাসী,

সন্তান দ্বারে উপবাসী,

দাও মানবতা ভিক্ষা দাও।”

— [ গুলিস্তাঁ, নজরুল-সংখ্যা]

‘মোহান্তের মোহ-অন্তের গান’ সম্বন্ধে ডক্টর সুশীলকুমার গুপ্ত বলেন—

“অসহযোগ আন্দোলন আরম্ভ হবার পর তারকেশ্বরের দুর্নীতিপরায়ণ অসচ্চরিত্র ধর্মব্যবসায়ী মোহান্তকে তাড়াবার নিমিত্ত একটি আন্দোলন উপস্থিত হয়। নজরুল এই সময়ে ‘মোহান্তের মোহ-অন্তের গান’ লিখে এই আন্দোলনকে সমর্থন ও শক্তিশালী করেন।”

— [নজরুল-চরিত-মানস, ১৫৭ পৃষ্ঠা]

‘আশু-প্রয়াণ-গীতি’ ১৩৩১ বঙ্গাব্দের আষাঢ়ে ৩য় বর্ষের ৫ম সংখ্যক ‘বঙ্গবাণী’তে প্রকাশিত হয়।

‘দুঃশাসনের রক্তপান’ ১৩২৯ বঙ্গাব্দের ১০ই কার্তিক শুক্রবার ১ম বর্ষের ১৭শ সংখ্যক ‘ধূমকেতু’তে ‘দুঃশাসনের রক্ত’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়।

‘শহিদী ঈদ’ সাপ্তাহিক ‘মোহাম্মদী’তে ছাপা হয়েছিল।