» » পূর্ণ-অভিনন্দন

বর্ণাকার

পূর্ণ-অভিনন্দন

[গান]

এসো অষ্টমী-পূর্ণচন্দ্র! এসো পূর্ণিমা-পূর্ণচাঁদ!

ভেদ করি পুন বন্ধ কারার অন্ধকারের পাষাণফাঁদ!

এসো অনাগত নব-প্রলয়ের মহাসেনাপতি মহামহিম!

এসো অক্ষত মোহান্ধ-ধৃতরাষ্ট্র-মুক্ত লৌহ ভীম!

স্বাগত ফরিদপুরের ফরিদ, মাদারিপুরের মর্দবীর,

বাংলা মায়ের বুকের মানিক, মিলন পদ্মা-ভাগীরথীর!

ছয়বার জয় করি কারা-ব্যূহ রাজ-রাহুগ্রাসমুক্ত চাঁদ!

আসিলে চরণে দুলায়ে সাগর নয়-বছরের মুক্ত বাঁধ।

নবগ্রহ ছিঁড়ি ফণি-মনসার মুকুটে তোমার গাঁথিলে হার,

উদিলে দশম মহাজ্যোতিষ্ক ভেদিয়া গভীর অন্ধকার!

স্বাগত ফরিদপুরের ফরিদ, মাদারিপুরের মর্দবীর,

বাংলা মায়ের বুকের মানিক, মিলন পদ্মা-ভাগীরথীর!

স্বাগত শুদ্ধ রুদ্ধপ্রতাপ, প্রবুদ্ধ নব মহাবলী!

দনুজদমন দধীচি-অস্থি, বহ্নিগর্ভ দম্ভোলি!

স্বাগত সিংহবাহিনী-কুমার! স্বাগত হে দেবসেনাপতি!

অনাগত রণ-কুরুক্ষেত্রে সারথি পার্থ মহারথী!

স্বাগত ফরিদপুরের ফরিদ, মাদারিপুরের মর্দবীর,

বাংলা মায়ের বুকের মানিক, মিলন পদ্মা-ভাগীরথীর!

নৃশংস রাজ-কংসবংশে হানিতে তোমার ধ্বংস-মার

এসো অষ্টমী-পূর্ণচন্দ্র, ভাঙিয়া পাষাণ-দৈত্যাগার!

এসো অশান্তি-অগ্নিকাণ্ডে শান্তিসেনার কাণ্ডারি!

নারায়ণী-সেনা-সেনাধিপ, এসো প্রতাপের হারা-তরবারি!

স্বাগত ফরিদপুরের ফরিদ, মাদারিপুরের মর্দবীর,

বাংলা মায়ের বুকের মানিক, মিলন পদ্মা-ভাগীরথীর!

ওগো অতীতের আজও-ধূমায়িত আগ্নেয়গিরি ধূম্রশিখ!

না-আসা-দিনের অতিথি তরুণ তব পানে চেয়ে নির্নিমিখ।

জয় বাংলার পূর্ণচন্দ্র, জয় জয় আদি-অন্তরীণ,

জয় যুগে-যুগে-আসা-সেনাপতি, জয় প্রাণ আদি-অন্তহীন!

স্বাগত ফরিদপুরের ফরিদ, মাদারিপুরের মর্দবীর,

বাংলা মায়ের বুকের মানিক, মিলন পদ্মা-ভাগীরথীর!

স্বর্গ হইতে জননী তোমার পেতেছেন নামি মাটিতে কোল,

শ্যামল শস্যে হরিৎ ধান্যে বিছানো তাঁহারই শ্যাম আঁচল।

তাঁহারই স্নেহের করুণ গন্ধ নবান্নে ভরি উঠিছে ওই,

নদীস্রোত-স্বরে কাঁদিছেন মাতা, ‘কই রে আমার দুলাল কই?’

স্বাগত ফরিদপুরের ফরিদ, মাদারিপুরের মর্দবীর,

বাংলা মায়ের বুকের মানিক, মিলন পদ্মা-ভাগীরথীর!

মোছো আঁখি-জল, এসো বীর! আজ খুঁজে নিতে হবে আপন মা-য়,

হারানো মায়ের স্মৃতি-ছাই আছে এই মাটিতেই মিশিয়া, হায়!

তেত্রিশ কোটি ছেলের রক্তে মিশেছে মায়ের ভস্ম-শেষ,

ইহাদেরই মাঝে কাঁদিছেন মাতা, তাই আমাদের মা স্বদেশ।

স্বাগত ফরিদপুরের ফরিদ, মাদারিপুরের মর্দবীর,

বাংলা মায়ের বুকের মানিক, মিলন পদ্মা-ভাগীরথীর!

এসো বীর! এসো যুগ-সেনাপতি! সেনাদল তব চায় হুকুম,

হাঁকিছে প্রলয়, কাঁপিছে ধরণি, উদ্‌গারে গিরি অগ্নিধূম।

পরাধীন এই তেত্রিশ কোটি বন্দির আঁখি-জলে হে বীর,

বন্দিনী মাতা যাচিছে শক্তি তোমার অভয় তরবারির।

স্বাগত ফরিদপুরের ফরিদ, মাদারিপুরের মর্দবীর,

বাংলা মায়ের বুকের মানিক, মিলন পদ্মা-ভাগীরথীর!

গলশৃঙ্খল টুটেনি আজিও, করিতে পারি না প্রণাম পা-য়

রুদ্ধ কণ্ঠে ফরিয়াদ শুধু গুমরিয়া মরে গুরু ব্যথায়!

জননীর যবে মিলিবে আদেশ, মুক্ত সেনানী দিবে হুকুম,

শত্রুখড়্গ-ছিন্নমুণ্ড দানিবে ও-পায়ে প্রণাম-চুম।

স্বাগত ফরিদপুরের ফরিদ, মাদারিপুরের মর্দবীর,

বাংলা মায়ের বুকের মানিক, মিলন পদ্মা-ভাগীরথীর!

সূত্রনির্দেশ ও টীকা

  1. মাদারিপুর শান্তি-সেনা-বাহিনীর প্রধান অধ্যক্ষ শ্রীযুক্ত পূর্ণচন্দ্র দাস মহাশয়ের কারামুক্তি-উপলক্ষে রচিত।