বাঁধনহারা
‘বাঁধনহারা’ পত্রোপন্যাস বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত প্রথম উপন্যাস। করাচিতে থাকাকালীন তিনি ‘বাঁধনহারা’ উপন্যাস রচনা শুরু করেন। ১৯২১ খৃষ্টাব্দ মুতাবিক ১৩২৭ বঙ্গাব্দের বৈশাখ থেকে প্রথম বর্ষ প্রথম সংখ্যা ‘মোসলেম ভারত’ পত্রিকায় ‘বাঁধনহারা’ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। ১৩৩৪ বঙ্গাব্দের শ্রাবণ মুতাবিক ১৯২৭ সালের জুন মাসে ‘বাঁধনহারা’ গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। প্রকাশ করেন ডিম. এম. লাইব্রেরি, ৬১ কর্ণওয়ালিশ ষ্ট্রীট, কলিকাতা থেকে গোপালদাস মজুমদার। মূল্য দুই টাকা।
সংক্ষেপে উপন্যাসটির কাহিনী হচ্ছে, — নুরু মাহবুবা একে অন্যকে পছন্দ করে এবং তাদের বিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়। এই সময়ে নুরু বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে সেনাবাহিনীতে যোগদান করে। নুরুর সেনাবাহিনীতে যোগদানের পিছনে দেশ ও জাতিকে রক্ষার কোন তাগিদ ছিল না। মাহবুবা, রাবেয়া ও সাহসিকা— তিন বাল্যসখী—তাদের মধ্যে পত্র যোগাযোগ হয়। সাহসিকা তার নামের মতই সাহসী ও প্রতিবাদী। চিরকুমারী সাহসিকা নারীদের উপর অন্যায়ের প্রতিবাদ করে। মাহবুবা নুরুল হুদাকে প্রচণ্ড ভালবাসে। কিন্তু নুরুল হুদা কোন বাঁধনে জড়াতে চায় না। অবশেষে মাহবুবার বিয়ে হয়ে যায় চল্লিশোর্ধ্ব এক জমিদারের সঙ্গে। কিছুদিন বাদেই মাহবুবা বিধবা হয়ে যায়। নুরুল হুদাকে সে লেখে যে, সে মক্কা ও মদিনায় তীর্থ ভ্রমণে যাবে এবং নুরুল হুদার কর্মস্থল বাগদাদেও যেতে পারে। নুরুল হুদা মাহবুবাকে নিষেধ করে না। তাদের দুজনের দেখা হওয়ার সম্ভাবনার মাধ্যমে শেষ হয় উপন্যাসটি।
‘বাঁধন হারা’ উপন্যাসে মোট চরিত্রের সংখ্যা দশটি— নুরুল হুদা, মাহবুবা, রাবেয়া, সাহসিকা, আয়েশা, খুকি/আনারকলি, মা/রোকেয়া, মনুয়ার, রবিউল ও সোফিয়া। রাবেয়া ও রবিউল দম্পতির শিশুকন্যা খুকি বা আনারকলি ছাড়া প্রত্যেকেই চিঠিতে নিজেদের চরিত্র ও ভাবনা ধারণ করে।
‘বাঁধনহারা’ বাংলা সাহিত্যের প্রথম পত্রোপন্যাস। নজরুল ‘বাঁধনহারা’র মাধ্যমে বাঙালিদের প্রথম আধুনিক যুদ্ধ অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জ্ঞাত করেছেন। উপন্যাসে নজরুলের সামরিক জীবনের অভিজ্ঞতার ছাপ রয়েছে। যুদ্ধের অভিজ্ঞতায় প্রেমের আখ্যান হলেও সাহসিকার পত্রে যে বিদ্রোহিতার আভাস আছে, তাই পরবর্তীকালে ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় পূর্ণাঙ্গতা লাভ করেছে।
২০১৩ সালের ঢাকা রিডিং সার্কেলের একদল অনুবাদক— তানভিরুল হক, আসফা খাতুন, শিরীন হাসানাত ইসলাম, আয়েশা কবীর, জ্যাকি কবির, সায়েদা করিম খান, শাহরুখ রহমান ও নিয়াজ জামান, ‘বাঁধন হারা’ উপন্যাসের ইংরেজি অনুবাদ করেন। ‘শহীদ কাজী’র প্রচ্ছদে অনুবাদ কর্মটি ‘আনফেটার্ড’ শিরোনামে ঢাকার নিমফিয়া পাবলিকেশন হতে প্রকাশিত হয়।