বাঁধনহারা

বাঁধনহারা

‘বাঁধনহারা’ পত্রোপন্যাস বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত প্রথম উপন্যাস। করাচিতে থাকাকালীন তিনি ‘বাঁধনহারা’ উপন্যাস রচনা শুরু করেন। ১৯২১ খৃষ্টাব্দ মুতাবিক ১৩২৭ বঙ্গাব্দের বৈশাখ থেকে প্রথম বর্ষ প্রথম সংখ্যা ‘মোসলেম ভারত’ পত্রিকায় ‘বাঁধনহারা’ ধারাবাহিকভাবেContinue Reading

বাঁধনহারা

উৎসর্গ

সুর-সুন্দর শ্রীনলিনীকান্ত সরকার করকমলেষু বন্ধু আমার! পরমাত্মীয়! দুঃখ-সুখের সাথী! তোমার মাঝারে প্রভাত লভিল আমার তিমির রাতি। চাওয়ার অধিক পেয়েছি–বন্ধু আত্মীয় প্রিয়জন, বন্ধু পেয়েছি–পাইনি মানুষ, পাইনি দরাজ মন। চারিদিক হতে বর্ষেছে শিরে অবিশ্বাসের গ্লানি, হারায়েছি পথ–আঁধারেContinue Reading

বাঁধনহারা

পরিচ্ছেদ ক : পত্র এক

করাচি সেনানিবাস, ২০এ জানুয়ারি (সন্ধ্যা) ভাই রবু! আমি নাকি মনের কথা খুলে বলিনে বলে তুমি খুব অভিমান করেছ? আর তাই এতদিন চিঠি-পত্তর লেখনি? মনে থাকে যেন, আমি এই সুদূর সিন্ধুদেশে আরব-সিন্ধুর তীরে পড়ে থাকলেও আমারContinue Reading

বাঁধনহারা

পরিচ্ছেদ ক : পত্র দুই

করাচি সেনানিবাস ২১এ জানুয়ারি (প্রভাত) মনু! আজ করাচিটা এত সুন্দর বোধ হচ্ছে সে আর কী বলব! কী হয়েছে জানিস? কাল সমস্ত রাত্তির ধরে ঝড়-বৃষ্টির সঙ্গে খুব একটা দাপাদাপির পর এখানকার উলঙ্গ প্রকৃতিটা অরুণোদয়ের সঙ্গে সঙ্গেইContinue Reading

বাঁধনহারা

পরিচ্ছেদ খ : পত্র এক

সালার ২৯শে জানুয়ারি (প্রভাত,– চায়ের টেবিল সম্মুখে) নূরু! তোর চিঠিটা আমার ভোজপুরী দারোয়ান ম’শায়ের ‘থ্রু’ দিয়ে কাল সান্ধ্য-চায়ের টেবিলে ক্লান্ত করুণ বেশে এসে হাজির। দেখি, রিডাইরেক্‌টের ধস্তাধস্তিতে বেচারার অঙ্গ ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে। আমি ক্ষিপ্রহস্তে সেইContinue Reading

বাঁধনহারা

পরিচ্ছেদ খ : পত্র দুই

বাবা নূরু! আমার স্নেহ-আশিস জানবে। মা’কে এরই মধ্যে ভুলে গেলে নিমকহারাম ছেলে? আমাকে ভুলেও একটা চিঠি দেওয়া হল না এতদিনের মধ্যে? আমি প্রথমে রেগে চিঠিই দিইনি। যে ছেলে মায়ের নয়, তার ওপর দাবি-দাওয়া কিসের? ওরে,Continue Reading

বাঁধনহারা

পরিচ্ছেদ গ : পত্র এক

বাঁকুড়া ২৬এ জানুয়ারি (বিকেলবেলা) অথ নরম গরম পত্রমিদম কার্যনঞ্চাগে বিশেষ! বাঙালি পল্টনের তালপাতার সিপাই শ্রীল শ্রীযুক্ত নূরুল হুদা বরাবরেষু।… বুঝলি নূরু! তোর চিঠি নিয়ে কিন্তু আমাদের বোর্ডিং-এর কাব্যিরোগাক্রান্ত যাবতীয় ছোকরাদের মধ্যে একটা বিভ্রাট রকমের আলোচনাContinue Reading

বাঁধনহারা

পরিচ্ছেদ গ : পত্র দুই

সালার ৬ই ফাল্গুন নিরাপদ্দীর্ঘজীবেষু, ভাই নূরুল হুদা, আমার শত স্নেহাশিস জানবে। অনেকদিন চিঠি দিতে পারিনি বলে তুমি তোমার ভাইসাহেবের পত্রে অনুযোগ করে বেশ একটু খোঁচা দিয়েছ। কী করি ভাই, সংসারের সব ঝক্কি এখন আমার ওপর।Continue Reading

বাঁধনহারা

পরিচ্ছেদ ঘ : পত্র এক

১০ই ফাল্গুন (নিঝুম রাত্তির) ভাই সোফি! অভিমানিনী, তুমি হয়ত এতদিনে আমার ওপর রাগ করে ভুরু কুঁচকে, ঠোঁট ফুলিয়ে, গুম হয়ে বসে আছ! কারণ আমি আসবার দিনে তোমার মাথা ছুঁয়ে দিব্যি করেছিলাম যে গিয়েই চিঠি দেব।Continue Reading

বাঁধনহারা

পরিচ্ছেদ ঘ : পত্র দুই

সালার ১৩ইফাল্গুন সই মাহ্‌বুবা! এলোকেশী দূতীর মারফত তোর চিঠিটা পেয়ে যেন আমার মস্ত একটা বুকের বোঝা নেমে গেল। বাস্‌রে বাস্! এত বড় দস্যি মেয়ে তুই! কী করে এতদিন চুপ করে ছিলি? জানটা যেন আমার রাত-দিনContinue Reading

বাঁধনহারা

পরিচ্ছেদ ঘ : পত্র তিন

করাচি সেনানিবাস ১৫ই ফেব্রুয়ারি (দুপুর) ভাবি সাহেবা! হাজার হাজার আদাব। আপনার চিঠি পেয়েছি। সব কথা বুঝে উত্তর দেওয়ার মত মনের অবস্থা নেই আর সময়ও নেই। পরে যদি সময় পাই আর ইচ্ছা হয়, তবে আপনার সবContinue Reading

বাঁধনহারা

পরিচ্ছেদ ঙ

বাঁকুড়া ২রা ফেব্রুয়ারি (নিশুত রাত্তির) কবি-সৈনিক নূরু! ‘একচোখো’ ‘এক-রোখো’ প্রভৃতি তোর দেওয়া ঝুড়ি ঝুড়ি বিশেষণ আমি আমার আঁতুড়-ঘর থেকে এই বিশ বছরের ‘যৈবন বয়েস’ নাগাদ বরাবর কুইনাইন-মিক্সচারের মতন গলাঃধকরণ করতে প্রাণপণে আপত্তি জানিয়েছি, কারণ সেসময়Continue Reading

বাঁধনহারা

পরিচ্ছেদ চ

করাচি সেনানিবাস, (শ্রীঘর) ১৭ ফেব্রুয়ারি বাঁদর মনো! শুয়োর-পাজি-ছুঁচো-উল্লু-গাধা-ড্যাম-ব্লাডিফুল-বেল্লিক-বেলেল্লা-উজবুক-বেয়াদব-তমিজ!–ওঃ আর যে মনে পড়ছে না ছাই, নইলে এ চিঠিতে অন্য কিছুই না লিখে শুধু হাজার খানেক পৃষ্ঠা ধরে তোকে আষ্টে-পিষ্টে গাল দিয়ে তবে কখনও ক্ষান্ত হতাম! একটাContinue Reading

বাঁধনহারা

পরিচ্ছেদ ছ

সালার, ১২ই ফাল্গুন ভাগ্যবতীসু, আমার বুক-ভরা স্নেহ-আশিস নাও। তারপর কিগো সব ‘কলমিলতা’ ‘সজনে ফুল’-এর দল, বলি–তোমরা যে-লতা যে-দলই হও তাতে আমার বিশেষ আপত্তি নেই, কিন্তু পথের পাশের এই ‘আলোক-লতা’, ‘ঘলঘসি ফুল’ দু-একটারও তো সেই সঙ্গেContinue Reading

বাঁধনহারা

পরিচ্ছেদ জ : পত্র এক

সালার ১৩ই ফাল্গুন বোন আয়েশা! তুমি আমার হাজার ‘দোয়া’ জানবে। মা মাহ্‌বুবাকে আমার বুকভরা স্নেহাশিস দেবে। এখানে খোদার ফজলে সব ভাল। সোফিয়া আর বহুবিবি মা-জানের কাছে তোমাদের সব খবর জানতে পারলাম। আমায় চিঠি দেবে বলেContinue Reading

বাঁধনহারা

পরিচ্ছেদ জ : পত্র দুই

শাহপুর ১লা চৈত্র বুবু সাহেবা! তোমার চিঠি পেয়েছি। নানান কারণে উত্তর দেওয়া হয়নি। মাহ্‌বুবাটাও বোধ হয় বউমার কিংবা সোফিয়ার চিঠি পেয়েছে, তাই এই কদিন ধরে শুধু তার কাঁদো-কাঁদো ভাব দেখা যাচ্ছে। আজকালকার ছেলে-মেয়েরা এমনই বেইমান!Continue Reading

বাঁধনহারা

পরিচ্ছেদ জ : পত্র তিন

সালার ২৭শে চৈত্র, রাত্রির দুষ্টু সাহসিকা! তোর সাথে এবার দেখছি সত্যিকার আড়ি দিতে হবে। বাহা রে, দুষ্টু ছুঁড়ি। আমি না হয় সংসারের ঝঞ্ঝাটে পড়ে তোকে কিছুদিন চিঠি দিতে পারিনি, তাই বলে তুইও যে গুমোট মেঘেরContinue Reading

বাঁধনহারা

পরিচ্ছেদ জ : পত্র চার

বিডন স্টিট, কলিকাতা প্রথম বৈশাখ (সকাল) ভাই রেবা! আজ যে নতুন বছরের প্রথম দিনের প্রথম সকালে তোর নামটিই সর্বপ্রথমে আমার মনের কোণে উঁকি মারল, আমার এ বিপুল আনন্দের নিবিড় মাধুরী তুই হয়ত বুঝবিনে; কেননা, তুইContinue Reading

বাঁধনহারা

পরিচ্ছেদ জ : পত্র পাঁচ

শেঙান ১লা আষাঢ় দুপুর রাত্তির শ্রীচরণসরোজেষু! সাহসিকাদি! বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ পেরিয়ে গেল। ঝড়-ঝঞ্ঝা যত বইবার, বয়ে গেল আমার জীবনের ওপর দিয়ে। কিন্তু বৃষ্টি আজও থামেনি। আজ পয়লা আষাঢ়। আমার জীবনের এ-আষাঢ় বুঝি আর ফুরোবে না। আশীর্বাদContinue Reading

বাঁধনহারা

পরিচ্ছেদ জ : পত্র ছয়

বোগদাদ ২৩শে চৈত্র শ্রীচরণারবিন্দেসু! সাহসিকাদি! এই হয়ত আমার শেষ চিঠি। কিন্তু এই শেষ চিঠিটা লিখতেই একটা বছর পেরিয়ে গেল। ফুল জমে পাথর হয়ে গেছে, দেখেছ? আমি কিন্তু দেখেছি।…  যাক, ওসব কথা বলতে আসিনি আমি। কয়েকটাContinue Reading