» » পঞ্চম পরিচ্ছেদ

বর্ণাকার

পঞ্চম পরিচ্ছেদ

অভিজ্ঞান

‘আমার দুই ছেলে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কলেজে পড়ে, এ কথা বলতে আমার লজ্জা হয়,’ সোফার ওপরে রবিবারের আজ সকাল, বেঙ্গল নিউজ আর উইকেন্ড ছুঁড়ে বললেন মনোজ। ‘তোরা মানুষ না জানোয়ার? এইসব করিস ডাক্তারি পড়তে ঢুকে? মদ, গাঁজা, ড্রাগস, মেয়েদের ওপরে নোংরামো? ছি! ছি!’

‘আহা! ওদের কেন বলছ?’ আজ সকাল কাগজটা নিপুণভাবে ভাঁজ করতে করতে বলেন অরুণা। ‘ওরা কি কিছু করেছে? বিলু বরং মেয়েটাকে বাঁচিয়েছে।’

রবিবারের সকাল। আজ জানুয়ারি মাসের ঊনত্রিশ তারিখ। নতুন বছরের গোড়ায় সেই কুৎসিত ঘটনার পরে কেটে গেছে প্রায় একমাস। কিন্তু সংবাদপত্র থেকে ঘটনাটা মিলিয়ে যায়নি। আর বছর তিনেক বাদে বিধানসভা নির্বাচন। বিরোধীপক্ষ প্রতিদিন শক্তিশালী হয়ে উঠছে। বাজারে হালকা গুজব ছড়াচ্ছে যে জনমোর্চা পার্টির ক্ষমতায় থাকার এটাই শেষ টার্ম। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুলিশ, অ্যাডমিনিস্ট্রেশান, শিল্প—সবেতেই সরকারের প্রতিনিধিদের গয়ংগচ্ছ ভাব। এতদিন ক্ষমতায় থেকে তারা ক্লান্ত।

মিডিয়া তার কাজ করছে। প্রতিদিন স্বাস্থ্য দপ্তরের ত্রুটির তালিকা প্রকাশিত হচ্ছে। কোথাও ওয়ার্ডে বেড়াল ঘুরছে, কোথাও হাসপাতাল চত্বরে শুয়োর চরছে, কোথাও ইঁদুর সদ্যজাতর চোখ খুবলে নিয়েছে, কোথাও চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে দশজন নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। সব খবর সযত্নে প্রথম পাতায় ছবিসহ ছাপা হচ্ছে।

এর সঙ্গে যদি যুক্ত হয় যে কলেজ চত্বরে কালচারাল প্রোগ্রামের সময় ডাক্তারি ছাত্রী মলেস্টেড—তা হলে তো কথাই নেই। ডাক্তারি ছাত্রছাত্রীরা কলেজে মদ-গাঁজা খেয়ে বেল্লেলাপনা করে। এরা পাস করে বেরিয়ে কীরকম ডাক্তার হবে? এই নিয়ে সাধুভাষায় রোজ সম্পাদকীয় প্রকাশিত হচ্ছে। বাঙালির অধঃপতন সম্পূর্ণ—এই ভবিষ্যতবাণীও করা হচ্ছে।

দময়ন্তী প্রেসের কাছে মুখ খোলেনি। থানা-পুলিশ করেনি। বাড়িতে বাবা-মাকেও জানায়নি। নতুন বছরের প্রথম রাতটা লেডিজ হোস্টেলে কাটিয়ে বাড়ি চলে গিয়েছিল। পরদিন অ্যাজ ইউজুয়াল কলেজে এসেছে। রিপুরা সুরজকে সেই রাতে বেধড়ক মারধর করেছিল। চন্দন চেয়েছিল সুরজকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে। টিনটিনের আপত্তিতে সেটা করা যায়নি। কলকাতায় সবচেয়ে বড় কলেজের ফেস্টের শেষটা ভালো হয়নি।

থানা-পুলিশে না যাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় ফার্স্ট ইয়ারের ছেলেমেয়েরা হঠাৎ কলেজ স্ট্রাইক করে বসে। শুরু হয়েছিল নেতাবিহীন, দলবিহীন, স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন হিসেবে। মেয়েদের নিরাপত্তার দাবিতে ফার্স্ট ইয়ারের জেমসি, শ্রীপর্ণা, প্রবাল আর সঞ্জয় অ্যাকাডেমিক বিল্ডিং-এর সামনে ধর্নায় বসে পড়েছিল নতুন বছরের প্রথম দিন। আস্তে আস্তে সেখানে এসে জুটল সাবিনা, দীপ, সব্যসাচী, বিলু, অভি, লাটু। ফার্স্ট ইয়ারের ধর্নায় পরবর্তী তিন ঘণ্টায় অংশ নিল দু’শো ছেলেমেয়ে। রিপু, সুব্রত, আপ্পু, বান্টি আড়াল থেকে অনেক চেষ্টা করল ধর্না তোলার জন্য। ধর্নাকারীরা খেপে গিয়ে পোস্টার লিখে সারা কলেজে সেঁটে দিল। সারারাত মোমবাতি জ্বেলে বসে রইল অ্যাকাডেমিক বিল্ডিং-এর সামনে।

খবর রটতে সময় লাগে না। বিকেল নাগাদ একাধিক টিভি চ্যানেলের ওবি ভ্যান দাঁড়িয়ে গেল। যে যা পারছে বাইট দিচ্ছে। সব্যসাচী ফটাং করে বলে বসল, ‘দোষীর শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত কলেজে আমরা স্ট্রাইক ডাকলাম।’

‘আমরা মানে কারা?’ জানতে চাইল সাংবাদিক।

‘প্রোগ্রেসিভ মেডিক্যাল ফোরাম।’ গর্বের সঙ্গে জানাল সব্যসাচী।

এই খবর টিভিতে দেখানো মাত্র আগুনে ঘৃতাহুতি হল। জনমোর্চার ছাত্র সংগঠনের জেলা কমিটির সেক্রেটারি অধীর হালদার রিপুকে পার্টি অফিসে ডেকে বেদম ঝাড় দিলেন। ‘ছ’শো স্টুডেন্ট স্ট্রেংথওয়ালা কলেজে আমরা ইউনিয়ন চালাচ্ছি। ইউনিয়নের তেরোটা পোস্টের মধ্যে তেরোটাই আমাদের। ক্লিন সুইপ চলছে গত দশ বছর ধরে। তাহলে দুশো ছেলেমেয়ে ধর্নায় বসল কী করে?’

‘আমি দেখছি অধীরদা,’ মিনমিন করে রিপু। ছয়ফুটিয়া ছাত্রনেতা এখন সাড়ে পাঁচফুট, সিড়িঙ্গে চেহারার বড় নেতার সামনে ঘাড় ঝুঁকিয়ে কথা বলছে, ‘আসলে ইস্যুটা এত সেন্সিটিভ…’

‘সেন্সিটিভ ইস্যু নিয়ে ডিল করবে বলেই তুমি নেতা। কিউবার গণ আন্দোলনের মতো গোদা বিষয় নিয়ে দেখার জন্য পলিট ব্যুরো আছে। দুটো ছেলেমেয়ে মাল খেয়ে টেপাটিপি করছিল, এর মধ্যে সেন্সিটিভ কী দেখলে ডাক্তারবাবু?’

রিপু গুম মেরে রইল। ডাক্তারি ফ্রন্টে রাজনীতি করার এই এক মুশকিল। ডাক্তাররা তাকে রাজনীতিবিদ ভাবে। ডাক্তারি ছাত্র হিসেবে সিরিয়াসলি নেয় না। পলিটিশিয়ানরা তাকে ডাক্তার ভাবে। পলিটিশিয়ান হিসেবে পাত্তা দেয় না। না ঘরকা না ঘাটকা।

‘চুপ করে থাকলে চলবে?’ ধাঁতানি দেন অধীর, ‘পিএমএফ-এর নকশালগুলো একটা স্পনট্যানিয়াস মুভমেন্টকে হাইজ্যাক করে নিল। আর তোমরা ছিঁড়লে?’

‘না ছিঁড়ে কী করতাম?’ রেগে গিয়ে বলে রিপু, ‘স্ট্রাইকে নেতৃত্ব দিতাম? কলেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের বিরুদ্ধে একটা মুভমেন্ট সাপোর্ট করত আমাদের দল? সেটা ভালো দেখাত? প্রিন্সিপাল আমাদের লোক, সুপারইনটেনডেন্ট আমাদের লোক, ইউনিয়নে আমাদের লোক। নিজেরা মারামারি করে লাভ আছে?’

‘আছে ডাক্তারবাবু আছে,’ রিপুর পিঠ চাপড়ে বলেন অধীর। ‘মাঝে মধ্যে মক ফাইট করতে হয়। কখনও কখনও গট আপ গেম খেলতে হয়। না হলে নেপোয় এসে দই মেরে দিয়ে চলে যায়। যেমন পিএমএফ দিল। অবশ্য ওটাকে দই না বলে তোমার পশ্চাদ্দেশও বলা যেতে পারে। আমাদের তো বাড়ির মালিকদের ইউনিয়ন আছে, আবার ভাড়াটেদের ইউনিয়নও আছে। পরস্পর বিরোধী দুই শক্তিকে ব্যালানস করে চলি না? ট্রাফিক পুলিশের ইউনিয়ন আছে, অটো-ওয়ালার ইউনিয়নও আছে। লাইসেন্সবিহীন অটো সিজ করলে অটোওয়ালারা মিছিল করে। ট্রাফিক কনস্টেবলকে ট্রান্সফার করলে কনস্টেবলরা মিছিল করে। পলিটিক্স নয়, এ হল ‘রিয়্যালপলিটিক’ ডাক্তারবাবু! দেখলে হবে? খরচা আছে!’

জেলা কমিটির সেক্রেটারির কাছ থেকে রাজনীতির পাঠ চুকিয়ে রিপু যতক্ষণে আইএমসিতে ফিরল, ততক্ষণে কলেজে নিশ্ছিদ্র স্ট্রাইক। দলের ছাপমারা পনেরো-ষোলজন ক্লাস অ্যাটেন্ড করছে, বাকিরা ধর্নামঞ্চে বসে।

সেই স্ট্রাইক চলছে গত এক মাস। সুরজ বেপাত্তা। পুলিশ তাকে ধরার চেষ্টা করেনি। কেন না থানায় কোনও অভিযোগ নথিভুক্ত হয়নি। দময়ন্তী নিয়মিত ক্লাস করছে এবং সচেতনভাবে ধর্না মঞ্চে বসছে না বা মিডিয়ার সামনে আসছে না।

সামনেই ফার্স্ট সেমিস্টার। ধর্নামঞ্চে উপস্থিতি কমতে শুরু করেছে। মিডিয়া থাকলে আন্দোলনে রক্ত সরবরাহ বাড়ে। কিন্তু টিভি একই খবর কতদিন দেখাবে? টিভির সাংবাদিকরা আসা বন্ধ করে দিয়েছে। খবরের কাগজের উত্তর সম্পাদকীয়তে চিকিৎসা সঙ্কট নিয়ে মাঝে মধ্যে লেখা প্রকাশিত হচ্ছে। সেইসব পড়েই উত্তেজিত হয়ে খবরের কাগজ ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন মনোজ। আজ তাঁর কল শো আছে। সকাল থেকে প্রস্তুতি চলছে। ঘন ঘন চা, গার্গল, গলায় মাফলার। এসব লক্ষণ বাড়ির সদস্যদের জানা।

‘তোমার অসুবিধে বোধহয় মিডিয়ার অ্যান্টি গভর্নমেন্ট স্ট্যান্ড দেখে…’ কড়াইশুটির কচুরি আর শুকনো আলুর দম খেতে খেতে বলল বিলু।

‘এগুলো মিডিয়া?’ চোখ পাকিয়ে জানতে চান মনোজ, ‘এদের কাজ জনমোর্চাকে খিস্তি করা। এদের এডিটোরিয়াল পলিসি হল যেন তেন প্রকারেণ জনমোর্চাকে দেশ থেকে উৎখাত করা। এ সবই সিআইএ-র চক্রান্ত।’

‘তা বোধ হয় না।’ শান্তভাবে বলে বিলু, ‘শিল্পায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এইবারে জনমোর্চা যখন ক্ষমতায় এল, তখন সন্দীপ সামন্ত যথেষ্ট মিডিয়া সার্পোট পেয়েছিলেন। আজ সকাল, বেঙ্গল নিউজ বা স্কুপ চ্যানেল-এর মালিক মায়াকম। এটা বেসিক্যালি নন-ব্যাঙ্কিং অর্গ্যানাইজেশান। এরা চায় যে ন্যাশনালাইজড ব্যাঙ্কিং সিস্টেম ধ্বসে যাক। এরা চায় লোকের মধ্যে পোস্ট অফিসে টাকা জমানোর প্রবণতা কমুক। এরা খোলাবাজার অর্থনীতিকে সমর্থন করে। মুনাফা করার জন্য এরা আজ কাগজ আর টিভি চ্যানেল তৈরি করেছে। কাল যদি দেখে আলু-পেঁয়াজ বিক্রি করলে মুনাফা বেশি, তাহলে কাল কাগজ আর টিভি চ্যানেল বন্ধ করে দিয়ে আলু-পেঁয়াজ বিক্রি করবে। তোমার জনমোর্চা যতদিন বাজার অর্থনীতিকে সমর্থন করেছে, ততদিন আজ সকাল জনমোর্চাকে সমর্থন করেছে। এখন জনমোর্চার যাবার পালা। মৃন্ময় চ্যাটার্জির নবযুগ পার্টি তোমাদের থেকেও বেশি প্রো মার্কেট। আজ সকাল তাই এখন জনমোর্চাকে ফেলছে আর নবযুগকে তুলছে। সহজ বাজারের অঙ্ক। এর মধ্যে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের জুজু দেখা বন্ধ করো।’

মনোজ হালকা হাসলেন। তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বললেন, ‘প্রগ্রেসিভ মেডিক্যাল ফোরাম। তারা কারা? তারা হল এমন একটা দল, যাদের টিকি ধরে নাড়াচ্ছে জঙ্গলমহলের মাওবাদি নেতারা। তুই ওদের সঙ্গে কী করে ভিড়লি বিলু? সেভেন্টিজে ছেলেমেয়েরা নকশাল মুভমেন্টের দিকে ঝুঁকেছিল। তার একটা ঐতিহাসিক তাৎপর্য আছে। একটা পূর্বাপর আছে। কিন্তু দুহাজার এগারো সালে বাংলা-ঝাড়খণ্ড-উড়িষ্যা-অন্ধ্রপ্রদেশের জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা নেতারা তোকে কীভাবে হিপনোটাইজ করল? কীভাবে ব্রেন ওয়াশ করল?’

‘যেভাবে সাতসমুদ্র তেরো নদীর ওপার থেকে ভ্লাদিমির ইলিচ উলিয়ানভ লেনিন তোমাদের জেনারেশানের ব্রেনওয়াশ করেছেন। আর তোমরা কেরানি কমিনিউজিম চালিয়ে যাচ্ছ!’ খাওয়া শেষ করে বলে রিপু।

অরুণা এতক্ষণ ধরে খবরের কাগজ ভাঁজ করছিলেন। এটা তাঁর নতুন বাতিক। আলাদা আলাদা করে প্রতিটি পাতা নিখুঁত চার ভাঁজ করছেন। তারপর কাগজের তাড়া একটা পলিথিনের প্যাকেটে ঢুকিয়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখছেন। অভি মায়ের হাত থেকে প্যাকেট ছিনিয়ে নিয়ে বলল, ‘তোমার মাথা-ফাথা খারাপ হয়েছে নাকি? এখনও কেউ কাগজ পড়েনি, এর মধ্যে বেঁধেবুঁধে প্লাস্টিকের মধ্যে ঢুকিয়ে ফেললে?’

‘গুছিয়ে রাখি বলে সব খুঁজে পাস।’ ঝংকার দিয়ে ওঠেন অরুণা। ‘আমি না থাকলে দেখবি, এই সংসারের কী হাঁড়ির হাল হয়!’

‘তোমার না থাকার কথা কোথা থেকে আসছে?’ অবাক হয়ে বলে অভি।

‘তোর মায়ের মাথাটা গেছে। একবার সাইকায়াট্রিতে দেখিয়ে নিয়ে আয় তো!’ স্ত্রীকে আওয়াজ দিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেলেন মনোজ। স্নান করে বেরিয়ে বললেন, ‘আমার শো আছে কালনায়। ফিরতে রাত হবে। আগে থেকে বলে দিলাম। ফোন কোরো না। আমি ধরব না। তখন আবার তুমি উলটোপালটা চিন্তা করবে।’

মনোজ বেরিয়ে যান। অরুণা এঁটো থালাবাসন ধুতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এটাও একটা বাতিক। বারবার বাসন মাজা, বারবার দরজা-জানলা বন্ধ করা, বারবার হাত ধোয়া—এইসব অরুণার আগে ছিল না। সম্প্রতি শুরু হয়েছে। অরুণার আচরণ দেখতে দেখতে বিলু অভিকে বলে, ‘ফার্স্ট সেমিস্টার তো এসে গেল। প্রিপারেশান কদ্দুর?’

‘খুব খারাপ। অ্যানাটমিটা কিছুতে সুবিধে করতে পারছি না।’

‘অস্টিওলজি আর সারফেস মার্কিং প্র্যাকটিস করছিস?’

‘সারফেস মার্কিং? সেটা কী?’

‘এখনও সারফেস মার্কিং জানিস না? তুই অ্যানাটমিতে সিওর ঝাড় খাচ্ছিস। কালুয়া ডোমকে তোর সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে এনজি বলবেন, ”ডরসালিস পেডিস আর্টারি আঁকো।” তখন তোকে সরু সুতো গুঁড়ো রঙে রাঙিয়ে কালুয়ার পায়ে আর্টারি আঁকতে হবে। আঁকা শেষ হলে এনজি পড়া ধরবেন। ”ডরসালিস পেডিস আর্টারির কোর্স বলো।” পারলে পাস, না পারলে ফেল। তুই এখনও এটার প্র্যাকটিস শুরু করিসনি?’

ভয়ের চোটে অভির পেট গুড়গুড় করতে শুরু করেছে। সে কোনওরকমে খাওয়া শেষ করে তিনতলার ঘরে চলে গেল। সারা সকাল পায়ের হাড় নিয়ে মাথা ঘামানোর পরে নিচে নামল বারোটা নাগাদ। বিলু আপাতত বাড়িতে নেই। পাড়ায় আড্ডা মারতে বেড়িয়েছে। পান্নালাল রাস্তার মোড়ে পাড়ার পাঁচটা বেকার ছেলে রেগুলার ঠেক মারে। মনোজ ওদের পঞ্চপাণ্ডব বলে ডাকেন। বিলু ওদের সঙ্গে আড্ডা মারতে গেছে।

অরুণা বাসন ধোয়া শেষ করে রাধা আর মানদার সঙ্গে গপপো করছেন। রাধা একটা পোস্টকার্ড দেখিয়ে বলছে, ‘মেজর গুরবিন্দর সিং চিঠি লিখেছে। আর কোনও চিন্তা নেই। সাহেবখালির মাঠ থেকে খানসেনাদের হটিয়ে দেওয়া হয়েছে। অশথতলা গ্রাম এখন ইন্ডিয়ায়। চলে গেলেই হল।’

‘ওলো রাধা!’ আদুরে গলায় আবদার করছে মানদা, ‘আমাকে নিয়ে যাবি, তোর ওই কীসেরতলা গ্রামে? একবার গুরবিন্দরকে দেখে আসতুম। আর্মির সদ্দারগুলো খুব চিসসা হয়।’

‘আঃহ! মানদা। বাজে কথা কেন বলো,’ বিরক্ত হয়ে বলেন অরুণা। ‘টিভির রিমোটটা দাও তো। একটু খবর শুনি। তোমাদের দাদা কালনায় কল শো করতে গেল। যেতে চার ঘণ্টা। আসতে চার ঘণ্টা। ফিরতে ফিরতে রাত বারোটা বাজবে। আমাকে টেনশানে ফেলা ছাড়া লোকটার কোনও কাজ নেই।’

‘টেনশানের কী আছে?’ বিরক্ত হয়ে বলে মানদা। ‘এক বাস লোক যাবে। তোমার বর কি টুন্নি নাকি যে হারিয়ে যাবে?’

‘টুন্নি কী?’ হাসতে হাসতে বলে অভি।

‘ছোট খুকি গো! এটাও জানো না?’ অভিকে নতুন শব্দ শিখিয়ে নিচে চলে যায় মানদা। রাধা অরুণাকে অশথতলা গ্রামের গল্প বলতে থাকে। অরুণাকে বিরক্ত না করে অভি ব্রেকফাস্ট সেরে নেয়। অরুণার আজকাল রান্নাবান্নায় মন কম। কড়াইশুটির কচুরি আর শুকনো আলুর দম বানিয়েছেন। আলুর দমে নুন বেশি। কোনওরকমে সেটা গিলল অভি। বাটি আর চামচ সিঙ্কে রেখে তিনতলার ঘরে গিয়ে চৌরাসিয়ার বই আর ফিমার নিয়ে বসল। উফ! পরীক্ষাটা চুকলে হয়।

বেলা দুটোর সময় পড়া থেকে প্রথম ব্রেক নিল অভি। নীচে এসে দুপুরের খাওয়া সারল। রাধা আর মানদা এখন একতলায়, নিজের ঘরে। বিলু আড্ডা মেরে এখনও ফেরেনি। অরুণা স্নান করছেন। স্নান চুকতে একঘণ্টা লাগবে।

এটাও নতুন বাতিক। সারা দিনে অজস্রবার হাত-পা ধুয়ে ফাঙ্গাল ইনফেকশান হয়েছে। যাকে বাংলায় ‘হাজা’ বলে। অভি আর বিলু বকে বকেও অভ্যাস বন্ধ করতে পারেনি। ঘেয়ো হাতে যখন অরুণা ভাত বাড়েন, অভির ঘেন্না করে। কিন্তু হাজার হোক, মা তো! কিছু বলতে পারে না। মনোজ আজকাল মাঝে মাঝে রাতে গেস্টরুমে শোন। কারণটা অভি আন্দাজ করতে পারে। কিন্তু এ সব বিষয়ে সে নাক গলাবার কেউ নয়।

রবিবার খেয়েদেয়ে দুপুরে ঘুমনো অভির বদভ্যাস। আজ মেনু হয়েছে ভাত, মাছের মাথা দিয়ে ডাল, বকফুল ভাজা আর পাঁঠার মাংস। নিজেই ভাত বাড়ল অভি। এক থালা ভাত সাফ করে আবার ভাত নিল। এবার একঘণ্টার পাওয়ার ন্যাপ।

সাড়ে তিনটে থেকে আবার অ্যানাটমি নিয়ে ধস্তাধস্তি শুরু। এবারের সেশন লম্বা। শেষ হল সাড়ে ছ’টার সময়। অভি উঠত না। কিন্তু বিলু মেসেজ করেছে, ‘চা’। তার মানে বাবু আড্ডা মেরে ফিরে, খেয়েদেয়ে, এক ঘুম দিয়ে এতক্ষণে উঠেছে।

দোতলায় নেমে অভি দেখল বিলু মুড়ি মাখছে। কুচি কুচি করে কাটা পেঁয়াজ, লঙ্কা মুড়িতে ঢেলে চানাচুর আর কাঠিভাজা ঢালল। তার ওপর ঢালল আমচুরের তেল। টকটক, ঝালঝাল! ভালো করে মেখে অভিকে বলল, ‘ধর। আমি চা করছি।’

‘তুই এসব পারিস?’ অভি অবাক।

‘আমি কী কী পারি, এই নিয়ে তোর কোনও ধারণাই নেই। সুরজকে যা কেলিয়েছিলাম না! শুয়োরের বাচ্চা আজীবন মনে রাখবে।’

‘ভারি সুপারম্যান এলেন একেবারে!’ বিলুকে আওয়াজ দেয় অভি। চা বানিয়ে ভাইয়ের হাতে কাপ ধরিয়ে বিলু জিজ্ঞাসা করে, ‘দিঠি ঠিক আছে তো?’

মুড়ি চানাচুর খেতে খেতে অভি বলল, ‘গত একমাসে তুই এই প্রশ্নটা একশো সাতাশবার করেছিস। কী ব্যাপার বল তো? ওর সঙ্গে তো রোজ কলেজে তোর দেখা হয়। ওকেই জিজ্ঞাসা করলে পারিস।’

‘আহ! ব্যাপারটা ওরকম নয়।’ একখাবলা মুড়ি মুখে দিয়ে বলে বিলু, ‘সিনিয়র দাদা হিসেবে আমার কাছে মেয়েটা ফ্রিলি কথা বলবে না। তোরা ক্লাসমেট। তোদের কাছে বেশি ফ্রি হবে।’

‘দিঠি ঠিক আছে। তুই মা-কে একবার দ্যাখ।’ চা খেতে খেতে বিলুকে খোঁচায় অভি। অভি আর বিলু খেয়াল করল, অরুণা টিভির সামনে বসে বাংলা নিউজ চ্যানেলগুলো ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছেন। চোখেমুখে দুশ্চিন্তার ছায়া।

‘মারও তার কেটেছে। এনিওয়ে, আমি রাধা পাগলি আর মানদা পিসির জন্য চা করেছি। ওরা এলে দিয়ে দিস।’ অভিকে হুকুম করে নিজের ঘরে চলে গেল বিলু। সে যেতে না যেতেই চায়ের গন্ধে ওপরে এসে হাজির রাধা আর মানদা। রাধা চায়ের কাপ নিয়ে অরুণাকে বলল, ‘টিভিতে প্রেসিডেন্টের ভাষণ হয়ে গেছে?’

‘না,’ বিরক্ত হয়ে বলেন অরুণা।

‘মেজর গুরবিন্দরের?’

‘না।’

‘নেতাজির?’

‘ওফ! তুমি থামবে!’ মানদা ধমক দেয় রাধাকে, ‘পাগলির কথা শুনে গা জ্বালা করে।’

‘আমি পাগলি হলে তুই আধ-পাগলি। আর গিন্নিমা পুরো পাগলি। টিভি খুলে অ্যাক্সিডেন্টের খবর খুঁজছে।’ মানদাকে পাল্টা ধমকে অরুণাকে চায়ের পেয়ালা এগিয়ে দেয় রাধা। অরুণা রাগী চোখে রাধাকে দেখে চায়ে চুমুক দেন।

চা-পানের বিরতি শেষ। আবার তিনতলার ঘরে ঢোকে অভি। চৌরাসিয়া খুলে মন দিয়ে পড়ছে, এমন সময় ফোন। মোবাইলের স্ক্রিনে দেখা যাচ্ছে, ‘বৃন্দা কলিং!’

‘বলুন ম্যাডাম। গোলাম আপনার জন্য কী করতে পারে?’

‘ধ্যাত!’ কুলকুল করে হাসছে বৃন্দা, ‘তুই আবার গোলাম কবে হলি? শোন না, একটা দরকারি কথা বলতে ফোন করলাম। অ্যানাটমির একটা থিয়োরি কোশ্চেন জানতে পেরেছি।’

‘কোত্থেকে পেলি?’

‘বয়েজ হোস্টেলের প্রবাল নাকি এনজির কাছ থেকে জেনেছে। তারপর সেটা চাউর হয়ে গেছে। ইঙ্গুইনাল ক্যানালের বাউন্ডারি আর তার ক্লিনিকাল সিগনিফিক্যান্স।’

‘হুম!’ আপনমনে ভাবে অভি, ‘আচ্ছা, কোশ্চেন লিক করার কোনও নেক্সাস আছে? এমবিবিএসের কোয়েশ্চেনও কি লিক হয়?’

‘এই শোন’, বিরক্ত হয়ে বলে বৃন্দা, ‘তোকে দেশোদ্ধার করতে হবে না। ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্ট হয়ে স্টিং অপারেশনও করতে হবে না। যা বললাম পড়। ইঙ্গুইনাল ক্যানাল আমাদের প্রথম ডিসেকশান ছিল। মনে আছে?’

‘দিব্যি মনে আছে। এনজি আমায় ঝাড় নামিয়েছিলেন। এনিওয়ে, আমার ওটা পড়া শেষ। থ্যাংকস ফর দ্য টিপ।’

‘উফ! খুব থ্যাংকস শিখেছে! দুদিন আগেও তো ভালো করে কথা বলতে পারতিস না! ফ্যালফ্যাল করে এদিক সেদিক তাকিয়ে থাকতিস।’

‘কী করি বল! মফসসলের ছেলে। কলকাতার জল গায়ে পড়েছে। একটু আধটু ট্যাঁশপনা চলে আসবেই।’

‘কলকাতার জল? হিহি! বাংলায় একটা কথা আছে, ‘বিয়ের জল গায়ে পড়া’। মেয়েদের সম্বন্ধে ব্যবহার করা হয়। বিয়ের জল গায়ে পড়লেই মেয়েরা নাকি বদলে যায়। ‘কলকাতার জল’ কথাটা আজ প্রথম শুনলাম, খুব কিউট!’

ফোনে বৃন্দা কথা বলছে আর তার অদৃশ্য তরঙ্গ গরম ভাপের মতো ছড়িয়ে পড়ছে অভির কানে, গালে, ঘাড়ে। হাতের চেটো গরম হয়ে উঠছে। ভাপ ছড়িয়ে যাচ্ছে তলপেটে, দুই পায়ের ফাঁকে। শরীর মোচড়াতে মোচড়াতে অভি বলে, ‘পরীক্ষার আগে ফোনে এত বকবক করছিস, সময় নষ্ট হচ্ছে না?’

‘না,’ সাফ জবাব বৃন্দার। ‘এতক্ষণ বই খুলে বসে আছি। এক লাইনও পড়া হয়নি। ভাবলাম কারও সঙ্গে গপপো করি। তা হলে বোরডম কাটবে। কাকে ফোন করব ভেবে চোখ বুঁজে তোকে দেখতে পেলাম।’ শেষের কথাগুলো বলার সময় বৃন্দা ফিসফিস করে। যেন গোপন কোনও কথা বলছে।

অভি খাটের ওপরে সোজা হয়ে বসেছে। বৃন্দা কি তাকে কিছু বলতে চাইছে? এত ক্যাজুয়ালি কোনও সিরিয়াস কথা বলা যায়? তার মতো মফসসলি, অর্ডিনারি লুকিং ছেলে এইরকম সিরিয়াস কথার যোগ্য? সে ভুল ইন্টারপ্রিটেশান করছে না তো?

‘কী রে? চুপ কেন?’ ওপাশ থেকে আবার ফিসফিসোচ্ছে বৃন্দা।

‘আম…আমি কিছু বুঝতে পারছি না। খুব কনফিউশান হচ্ছে।’ সত্যি কথাটা বলেই ফেলে অভি।

‘কী নিয়ে কনফিউশান?’

‘ম্যা…ম্যা…মানে তুই কি আমাকে কিছু বলতে চাইছিস? না, মানে, তুই আমাকে কি বললি সেটা বো…বো…বোঝার চেষ্টা করছি। মানে…’

‘ইঙ্গুইনাল ক্যানাল এবং তার ক্লিনিকাল সিগনিফিক্যান্স। এইটা আমাদের মন দিয়ে পড়তে হবে। এটাই আমি তোকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। মন দিয়ে পড়াশুনো কর। সেমিস্টারে ঝাড় খেলে ব্যাপক মনখারাপ হবে।’

থতমতো খেয়ে অভি বলে, ‘ঝাড় খেলে মন খারাপ হবে বলছিস?’ তার কনফিউশান এখনও কাটেনি। বৃন্দা তাকে কী বলার চেষ্টা করল?

‘রাখছি।’ ফোন কেটে দিয়েছে বৃন্দা। অভিও ফোন রাখল। ফোনালাপের আফটার এফেক্ট হিসেবে পরবর্তী দীর্ঘ সময় ধরে পড়াশুনো হল না। একবার মনে হল এক্ষুনি বৃন্দার বাড়ি গিয়ে ওর পায়ের কাছে বসে প্রোপোজ করে। একবার মনে হল লুটেরা জলদস্যুর মতো চুমুতে ভিজিয়ে দেয় কমলালেবুর মতো ঠোঁট। একবার মনে হল ‘আই লাভ ইউ’ লিখে এসএমএস করে। পরমুহূর্তে নিজের বোকামোর কথা ভেবে টুকটুক করে ঘাড় নাড়ে।

মোদ্দা কথা, অনেকক্ষণ ধরে হিজিবিজি চিন্তা করার ফলে লেখাপড়া হল না। দিবাস্বপ্ন দেখে, পড়াশুনার নামে ছেলেখেলা করে, কাগজে আঁকিবুঁকি কেটে অভি ঘড়ি দেখল। আরেঃ! রাত এগারোটা বাজে! তাকে এখনও কেউ খেতে ডাকল না কেন?

তরতরিয়ে দোতলায় নামে অভি। ডাইনিং স্পেসে ঢুকতে গিয়ে শুনতে পায় মনোজ আর অরুণার কথোপকথন।

‘ঋষিতা পৌঁছে দিয়ে গেল?’

‘পাগলামো কোরো না। বাস সেকেন্ড ব্রিজ হয়ে বেরিয়ে গেল। আমি হাওড়া থেকে ট্যাক্সি করে ফিরলাম।’

‘ট্যাক্সির ভাড়া মেটালে না তো?’

‘আরও দুজন লোক ছিল। ওরা মিটিয়ে দেবে।’

‘আরও দুজন লোক না আরও একজন?’

‘আচ্ছা বাবা, একজন। এবার খেতে দাও। অভি আর বিলুকে ডাকো। কাল সোমবার। ওরা সকাল সকাল বেরোবে। আমারও অফিস আছে।’

‘তাহলে ঋষিতাই ছিল। মেয়েটার কত বয়স গো? তিরিশের কোঠায়? না আরও ছোট?’

‘ধ্যাত্তেরিকা! খালি বাজে কথা। খেতে দেবে কি না বলো! না হলে আমি শুচ্ছি।’

‘তুমি বাইরে থেকে খেয়ে এসেছ। ঋষিতার সঙ্গে। তোমার মুখ থেকে পেঁয়াজের গন্ধ আসছে। ধাবায় খুব টেস্টি খাবার পাওয়া যায়, না? কালি ডাল। কড়াই মুর্গ। লচ্ছা পরোটা। চিকেন টিক্কা মসালা! আমি ম্যাগাজিন পড়ে পড়ে শিখেছি। আমার রান্না তুমি আর খেতে চাও না। সেই থোড়-বড়ি-খাড়া, খাড়া-বড়ি-থোড়। তোমার এসব ভালো লাগে না, আমি জানি। কাল থেকে খুব টেস্টি রান্না করব। তাহলে তুমি খাবে? খুব ঝাল দেব। খুব তেল। খুব মশলা! সত্যি বলছি। তুমি খাবে গো?’

অরুণার অসহায় অনুরোধ শুনে অভির কান্না পেয়ে গেল। সে এতক্ষণ তিনতলায় বসে বানানো প্রেমের স্বর্গে নিজের জীবনচরিত লিখছিল। একতলা নীচে নেমেই বিবাহ-পরবর্তী বাস্তবতাকে দেখতে পাচ্ছে। মানসিক রোগগ্রস্ত স্ত্রী, চাকরি আর রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত স্বামী, আর দুজনের মধ্যে এক সমুদ্র দূরত্ব। অথচ মনোজ আর অরুণার লাভ ম্যারেজ।

‘ধুসশালা!’ মনোজের গর্জন শুনতে পায় অভি। ‘আমি রাত্তিরে খাব না। তোমার ফালতু ছেনালি যদ্দিন না বন্ধ হচ্ছে, আমি রাতে গেস্টরুমেই শোব। তুমি আমায় ডিস্টার্ব করবে না।’

গেস্টরুমে ঢুকে দড়াম করে দরজা বন্ধ করে দেয় মনোজ। আওয়াজে পুরো লক্ষ্মী নিবাস কেঁপে ওঠে। বিলু নিজের ঘরের দরজা খুলে বেরিয়ে আসে। অভিও ডাইনিং স্পেসে আসে। দুজনকে দেখে, কাঁদতে কাঁদতে, অরুণা শোওয়ার ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন।

ডাইনিং টেবিলে চারজনের খাবারই পড়ে রইল। আজ লক্ষ্মী নিবাসে কেউ খাবে না।