» » পঞ্চম পরিচ্ছেদ

বর্ণাকার
🕮

দময়ন্তী

এটা কোন জায়গা? ইটের তৈরি একচিলতে সরু রাস্তা খানাখন্দে ভরা। রাস্তার দু’পাশে ফুটপাথের ওপরে একের পর এক দোকান। কোনও দোকানে মশলা চা বিক্রি হচ্ছে, কোনও দোকানে মাংসের ঘুগনি। কোনও দোকানে পরোটা, কোনও দোকানে চাউমিন, কোনও দোকানে দিশি মদ। ত্রিপল দিয়ে ঢাকা দোকানের ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে দু’পাশে পুরনো আমলের অজস্র বাড়ি। পলেস্তারা খসে গিয়ে ইট দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে বাড়িগুলো দাঁত বার করে হাসছে। রংচটা সবুজ কাঠের দরজার ওপারে নানা বয়সি অজস্র মেয়ে দাঁড়িয়ে। তারা নিজেদের মধ্যে হাহাহিহি করে হাসছে।

রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করছে অজস্র লোক। প্যান্টশার্ট, ধুতি-পাঞ্জাবি, শেরওয়ানি-কুর্তা, লুঙ্গি-ফতুয়া—সব রকমের পোশাক রয়েছে। সকলের মাথায় ছাতা। কেন না মুষলধারায় বৃষ্টি পড়ছে। দময়ন্তীর পরনের জিনস আর টি-শার্ট ভিজে শপশপ করছে। এই মহল্লায় সে পৌঁছল কী করে? রাস্তার পুরুষরা, ফুটপাথের দোকানদাররা, কোঠার মেয়েরা এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে।

ভীষণ শীত করছে। ঠান্ডায় থরথর করে কাঁপছে দময়ন্তী। উষ্ণতার খোঁজে চায়ের দোকানের ত্রিপলের তলায় দাঁড়িয়ে সে বলে, ‘একটা চা দেখি।’

কঠিন গলায় দোকানদার বলল, ‘মেয়েদের চা খেতে নেই।’

এ আবার কীরকম নিয়ম রে বাবা! বিরক্ত হয়ে সে পাশের দোকানে গিয়ে বলল, ‘এক প্লেট চাউমিন দেখি।’

চাউমিনওয়ালা তার দিকে তাকাতে দময়ন্তী অবাক। এ তো রমেন! রোম্যানো স্যান্টোস ছেড়ে এখানে দোকান দিয়েছে কেন? রমেন মাথা নিচু করে, জিভ দিয়ে ‘ছিক’ আওয়াজ করে, ঘাড় নেড়ে বলল, ‘মেয়েদের চাউমিন খাওয়া বারণ। বাড়ির শিক্ষা-দীক্ষা নেই নাকি? তা ছাড়া মেয়েদের জিনস পরা বারণ, সন্ধেবেলা একা বাড়ির বাইরে যাওয়া বারণ, মোবাইল ব্যবহার করা বারণ। তুমি নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনছ।’

ধ্যাত্তেরিকা! ফুটপাথ ছেড়ে আবার রাস্তায় নামে দময়ন্তী। কোন জায়গায় এসে পড়েছে সে? এখান থেকে এক্ষুনি কাটতে হবে। সামনে রেনকোট পরা, ঢ্যাঙা একটা লোক হাঁটছে। তাকে দময়ন্তী জিজ্ঞাসা করল, ‘এটা কোন জায়গা?’

রেনকোট পরা লোকটা দময়ন্তীর কনুই চেপে ধরে বলে, ‘এটা ভারতবর্ষ। ইন্ডিয়ার মেয়েছেলে হয়ে ভারতে কেন এসেছ? তোমাকে শাস্তি পেতে হবে।’

লোকটার দিকে তাকিয়ে আঁতকে ওঠে দময়ন্তী। এ তো সুরজ! এ এখানে এল কী করে? কনুই ছাড়িয়ে নিয়ে সরু রাস্তা বরাবর দৌড় লাগায় দময়ন্তী। অবিলম্বে এখান থেকে পালাতে হবে।

পালানোর উপায় নেই। রাস্তায় থিকথিক করছে লোক। পুরুষ মানুষের দল তাকে ঘিরে ফেলছে। সুরজ ধাওয়া করে আসছে নিশ্চিত পদক্ষেপে। দময়ন্তীর শ্বাস আটকে আসছে। নিজেকে বাঁচাতে আবার ফুটপাথে ওঠে সে। চোখের সামনে যে দরজাটা দেখতে পায় সেটা দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে। দরজায় খিল লাগিয়ে দেয়।

‘তেরো নম্বর ঘরেই আসতে হল?’ মেঝেয় বসে খিলখিল করে হাসছে ফুলমতিয়া আর এক মেমসাহেব। মেমের পরনে গোলাপি গাউন। কাট গ্লাসের পাত্র থেকে অনেকটা সোনালি তরল চুমুক দিয়ে মেম বলল, ‘আর কোনও শহর পেলে না? এই শহরে সাইমন আর্চার থাকে।’

হাঁফাতে হাঁফাতে সোফায় বসে দময়ন্তী বলল, ‘ফুলমতিয়া! এ কে?’

‘আমাদের দিদিমণি গো!’ কলকেতে গাঁজা ঠাসতে ঠাসতে বলে ফুলমতিয়া। ‘যার নামে এই হোস্টেল!’

‘মিসেস আর্চার?’ আঁতকে উঠে সোফা ছাড়ে দময়ন্তী। মিসেস আর্চার বলে, ‘এই ঘরে কেন এলে? এখানে সুরজ থাকে।’

এটা সুরজের ঘর? বুকের ভিতর দিয়ে মেল ট্রেন চলে যায় দময়ন্তীর। মুখ শিরিষ কাগজের মতো শুকনো হয়ে যায়। তেরো নম্বর ঘর থেকে দৌড়ে বাইরে বেরোতে যায় সে। খিল লাগানো দরজা ভেদ করে হঠাৎ তার সামনে চলে আসে সুরজ। মিষ্টি হেসে বলে, ‘আজ আমরা মেল জেনিটালিয়া পড়ব। দ্য কমপোনেন্টস আর পেনিস, টেসটিস, স্ক্রোটাম অ্যান্ড প্রস্টেট। পেনিসের লেংথ বল তো!’

‘জানি না!’ গুঙিয়ে ওঠে দময়ন্তী।

‘জানি না বললে হবে? আর দেড়মাস বাদে ফার্স্ট এমবিবিএস। আয়, তোকে সব শিখিয়ে দিই।’ দময়ন্তীর হাত ধরে নিজের দিকে টেনে নেয় সুরজ।

‘না…’ চিৎকার করে উঠে ঘুম ভাঙে দময়ন্তীর। হাঁফাতে হাঁফাতে খেয়াল করে, সে গোলঘরে শুয়ে রয়েছে। এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিল। এখন সকাল আটটা বাজে।

উঠে বসে হাঁটুতে মুখ দিয়ে স্বপ্নটা নিয়ে কিছুক্ষণ ভাবে দময়ন্তী। ফেস্টের তৃতীয় দিনের রাতে সেই ঘটনাটা তার ওপরে বড়সড়ো প্রভাব ফেলেছে। শারীরিক এফেক্ট নেই। কিন্তু মেন্টাল ট্রমা হয়েছে মারাত্মক। এইরকম শ্বাসরোধকারী দুঃস্বপ্ন সে এখন প্রায়ই দেখে। তবে আজ সকালের স্বপ্নটা মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। কেন এমন হল?

একটু ভাবতেই পরিষ্কার হল। গতকাল সে, বৃন্দা আর বিলু মিলে সিনেমা দেখতে গিয়েছিল। সিনেমাটার নাম ‘বোল’। পাকিস্তানি ডিরেক্টর শোয়েব মনসুরের ছবি। গতকাল ছবিটা একইসঙ্গে ভারত আর পাকিস্তানে মুক্তি পেয়েছে। হুমাইমা মালিক, আতিফ আসলাম, মাহিরা খান, ইমান আলি ছিল। সিনেমাটা জুড়ে সারাক্ষণ মেয়েদের ওপরে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ আর ধর্মের নানারকমের অত্যাচার দেখিয়েছে। ছবিটা খুবই ভালো। দময়ন্তীর অবচেতনে কোনওভাবে ঢুকে গিয়ে বদহজম বাঁধিয়েছে।

পাশাপাশি, আগামী অগাস্ট মাস থেকে তাদের ফার্স্ট এমবিবিএস পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। আইএমসিতে ঢোকার, দিল্লি ছেড়ে কলকাতা শিফট করার এক বছর পূর্তি হতে চলল। সেটাও স্বপ্নে কোনওভাবে ঢুকে পড়েছে। সে যখন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কলেজের মাটিতে পা দিয়েছিল, তখন জনমোর্চা সরকারের বয়স ঊনত্রিশ ছিল। এখন বয়স ত্রিশ।

বিছানার পাশ থেকে চিরুনি নিয়ে আপন মনে চুল আঁচড়াচ্ছে দময়ন্তী, এমন সময় মোবাইলের দিকে চোখ পড়ল। ফোনটা নিঃশব্দে দপদপ করছে। রাতে মোবাইল ফোন সায়লেন্ট মোডে রেখে শোওয়া অভ্যেস দময়ন্তীর। তার কারণ, রাতে ঘুম ভেঙে গেলে তার আর ঘুম আসে না। এটাও ওপিয়ামের শেষদিনের রাতের সেই ঘটনার ফল। প্রথম কদিন তো ঘুমই হয়নি। সারারাত জেগে বসে থাকত। তারপর নিজের থেকেই অ্যাংজাইটি কমানোর ওষুধ অ্যালোপাম খেতে শুরু করে। প্রথম প্রথম চমৎকার ঘুম হতো। মড়ার মতো স্বপ্নহীন রাত কাটত। এখন পয়েন্ট টু ফাইভের বড়ি খেয়ে কাজ হয় না। দময়ন্তী জানে ডবল ডোজ না খেলে এইরকম দুঃস্বপ্ন ভরা ঘুম প্রতি রাতে ফিরে আসবে। এদিকে ওষুধটায় নির্ভরতা হয়ে গেছে। শুতে যাওয়ার আগে না খেলে অস্থির অস্থির লাগে। মনে হয় ঘুম আসবে না। বাবা-মাকে লুকিয়ে এক মাসের ওষুধ আনিয়ে রেখেছে সে। মোবাইল হাতে নেওয়ার আগে দময়ন্তী ভাবল, সে কি ড্রাগ অ্যাডিক্ট হয়ে গেল? তার কি সাইকায়াট্রিক কাউন্সেলিং করানো উচিৎ?

‘হ্যাপি বার্থডে টু ইউ!’ বৃন্দার মেসেজে ঝলমল করছে মোবাইলের স্ক্রিন।

‘শুভ জন্মদিন।’ চন্দন।

‘হ্যাপি বার্থডে।’ অভি।

‘এইচবিডি।’ আপ্পু।

গোটা তিরিশেক মেসেজ। গোটা কুড়ি মিসড কল। মেসেজ দেখতে দেখতে দময়ন্তী ভাবল, আজ পঁচিশে জুন। তার জন্মদিন। মনেই ছিল না। ড্যানিয়েল আর শক্তিরূপার মনে আছে কি? মোবাইল ফোনকে নীরব থেকে সরব করে দময়ন্তী বিছানা থেকে উঠে সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় নামে। ড্যানিয়েল কী করছেন দেখা যাক।

ড্যানিয়েলের স্টুডিওর সমস্ত জানলা খোলা। ইজেল ক্যানভাস চড়িয়ে ড্যানিয়েল একটা বিশাল ছবির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। হাতে প্যালেট ও মোটা ব্রাশ। দূর থেকেই ছবিটা ভালো লাগল দময়ন্তীর। ড্যানিয়েলের আঁকার মধ্যে একটা বড়সড়ো পরিবর্তন এসেছে। শান্তিনিকেতনের শান্ত ও সমাধিস্থ ঋষিপ্রতিম ড্যানিয়েলের নতুন ছবিগুলো অনেক উজ্জ্বল, অনেক উচ্ছ্বল, অনেক রঙিন, অনেক রংবাজ। কলকাতা শহর নিয়ে একটা সিরিজ আঁকছেন ড্যানিয়েল। নাম দিয়েছেন, ‘আনডাইং সিটি’।

‘আনডাইং সিটি’ সিরিজের ছবিগুলো ড্যানিয়েল আঁকতে শুরু করেছেন কলকাতায় শিফট করার পর থেকে। প্রথমে চিরকুটের সাইজের কাগজে স্কেচ করতেন আর ফেলে দিতেন। তারপর একটু বড় কাগজে কতগুলো থিম্যাটিক স্কেচ করলেন। সেগুলোও ফেলে দিলেন। দময়ন্তী বাবার ফেলে দেওয়া সমস্ত কাগজ একটা বড় স্ক্র্যাপবুকে জমিয়ে রাখে। তাই এই সিরিজটা কীভাবে জন্মগ্রহণ করল তার আগাপাস্তালা জানা। মাসপাঁচেক আগের এক দুপুরবেলায় হঠাৎই ভারমিলিয়ন রেড অয়েল পেন্টের টিউব আর মোটা ব্রাশ নিয়ে ক্যানভাসের দিকে তেড়ে গিয়েছিল ড্যানিয়েল। সাদা ক্যানভাসের সঙ্গে মিনিট পাঁচেকের যুদ্ধ চালিয়ে ক্যানভাসটা ফালাফালা করে ছিঁড়ে দিয়েছিল।

দময়ন্তীর মনে হয়, এই সংঘাতপর্ব থেকে বাবার মাথায় ‘আনডাইং সিটি’ সিরিজের জন্ম হয়। গত পাঁচ মাসে পঁচিশটা ছবি এঁকেছে ড্যানিয়েল। অদ্ভুত এক কার্নিভালের মেজাজ সিরিজ জুড়ে। প্রাইমারি কালচারের প্রাধান্য, চওড়া স্ট্রোক; কালো, ধূসর বা খয়েরি রঙের অনুপস্থিতি, ক্যানভাসের সাদা জমিকে নিপুণভাবে ব্যবহার করা—সব মিলিয়ে ছবিগুলো অনবদ্য।

আজ বাবাকে পঁচিশতম ক্যানভাসের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দময়ন্তীর মনে পড়ল, কাল রাতেই ড্যানিয়েল বলছিলেন, ‘একঘেয়ে লাগছে। কলকাতা নিয়ে আপাতত আর ছবি আঁকব না।’

‘পঁচিশটা ছবি এক্সিবিশনের পক্ষে যথেষ্ট। করবে নাকি একটা?’ প্রশ্ন করেছিলেন শক্তিরূপা।

‘হ্যাঁ। আগামিকাল হৈমবতী সান্যাল আসছেন। ছবিগুলো দেখতে।’

হৈমবতীর আসার খবর শুনে শক্তিরূপা চুপ করে গিয়েছিলেন। সে বিবস্বান-হৈমবতীর বেতনভুক কর্মচারী। মালিক-কর্মচারীর সম্পর্কের ইকুয়েশন আর আর্টিস্ট-গ্যালারি ওনারের সম্পর্কের ইকুয়েশান আলাদা হয়। এই পাওয়ার পলিটিকসে নিজে কোথায় থামবে বুঝতে না পেরে শক্তিরূপা বলেছিলেন, ‘আমি তাহলে কাল ওই সময়টায় অফিসে থাকব।’

‘তোমার যা ইচ্ছে।’ স্ত্রীর জীবনচর্যায় নাক গলাননি ড্যানিয়েল।

এখন ড্যানিয়েলকে ক্যানভাসের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কথাগুলো মনে পড়ে গেল দময়ন্তীর। মিডিয়া-ব্যারন এবং গ্যালারি-ওনার যুগল কখন আসবেন কে জানে। তার আগে সে-ও বাড়ি থেকে কেটে পড়তে চায়। অত বড় বড় লোকের সামনে পড়ার কোনও ইচ্ছেই তার নেই। এদের সামনে বসে দেঁতো হাসি হাসার কোনও অর্থ হয় না। বাড়ি থেকে পালাবার জন্য বাথরুমে ঢুকে পড়ে দময়ন্তী। ঝটপট স্নান সেরে ফেলা যাক।

জিনস আর কুর্তি পরে বাথরুম থেকে বেরিয়ে খাবার টেবিলে এসে দময়ন্তী দেখে শক্তিরূপা একগাদা খবরের কাগজ নিয়ে ব্রেকফাস্ট সারছেন। সবকটা কাগজের হেডলাইনে মৃত্যুর খবর। মায়ের পাশে বসে, প্রাতরাশ করতে করতে বেঙ্গল নিউজ টেনে নেয় সে।

বাঁজাপলাশ গ্রামে ‘হেলথ হাব’ করার জন্য জনমোর্চা সরকার এক হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করার জন্য নোটিস দিয়েছে। এর জন্য ভিটেহারাদের পুনর্বাসনও দেওয়া হবে। কিন্তু বাঁজাপলাশ গ্রামের মানুষ পুনর্বাসন চায় না। তার জমি ছাড়তে আগ্রহী নয়। সরকার বিরোধী তীব্র আন্দোলন শুরু হয়েছে বাঁজাপলাশ এবং সংলগ্ন নতুনগ্রামে। তাতে মদত জোগাচ্ছে শহরের বুদ্ধিজীবীরা। ত্রিশ বছর বয়সি জনমোর্চা সরকারকে ফেলার জন্য দেশজুড়ে শুরু হয়েছে আন্দোলন, যাতে দক্ষিণপন্থী থেকে অতিবামপন্থী সবরকম রঙের সহাবস্থান আছে। এই ‘রেনবো কোয়ালিশন’-এর লক্ষ্য একটাই। ‘বদল চাই।’

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সন্দীপ সামন্তর বদলে মৃন্ময় চ্যার্টাজিকে চাই।

জনমোর্চা পার্টির বদলে নবযুগ পার্টিকে চাই।

ত্রিশ বছরের অচলায়তনকে গুঁড়িয়ে দিয়ে মুক্তধারা চাই।

‘মুক্তধারা’! কবি সুদিন চক্রবর্তী কিছুদিন হল সক্রিয় রাজনীতি করছেন। সুদিনের নেতৃত্বে কলকাতা শহরের চিন্তাশীল মহল তৈরি করেছেন সমন্বয়-মঞ্চ, ‘মুক্তধারা’। গতকাল পার্কসার্কাস সাত মাথার মোড়ে তাঁরা ধর্নায় বসেছিলেন। পুলিশ ধর্না তুলতে গিয়েছিল। তাঁরাও ধর্নামঞ্চ ত্যাগ করবেন না। টানা-হ্যাঁচড়া, গ্রেফতার বরণ, লাঠিচার্জ, স্লোগান—এই সবের মধ্যে পুলিশের সার্ভিস রিভলভার থেকে ছোঁড়া গুলিতে মারা গেছে তরতাজা এক যুবক। হৃষিকেশ নন্দী। প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তনী, বাংলা ফোক ব্যান্ড ‘মাটি’-র ফ্রন্টম্যান।

হৃষিকেশ ওপিয়ামের শেষ দিনে কলেজে পারফর্ম করেছিল। মাটির অনুষ্ঠানের সময়ই সুরজ বদমায়েশি করেছিল দময়ন্তীর সঙ্গে।

হৃষিকেশ ও মাটি সমার্থক। ইয়াং অ্যাডাল্টদের মধ্যে, কলেজ-মহলে খুব জনপ্রিয়। এবং হৃষিকেশ জনমোর্চার সমর্থক ছিল। সরকারের ল্যান্ড গ্র্যাবিং পলিসি মেনে নিতে পারেনি বলে সুদিনের সঙ্গে মুক্তধারার ধর্নামঞ্চে বসেছিল।

আজ সকাল জুড়ে ব্যানার হেডলাইন। ‘পুলিশের গুলিতে যুবকের মৃত্যু’। তলায় পরপর চারটে ছবি। সুদিন চক্রবর্তীর ভাঙাচোরা মুখের ছবি। কোলে হৃষিকেশের লাশ। পাশের ছবিতে ক্রন্দনরত হৃষিকেশের মা। তৃতীয় ছবিতে মুখ্যমন্ত্রী সন্দীপ সামন্তর ছবি। কুর্শিতে বসে হাত দিয়ে চোখ ঢেকে আছেন। শেষ ছবিতে মৃন্ময় চ্যাটার্জি। তিনি মহাকরণ অবরোধের ডাক দিয়েছেন।

পাশাপাশি চারটে ছবিতে পশ্চিমবঙ্গের টানাপোড়েনের চেহারা স্পষ্ট। ছবিগুলো দেখতে দেখতে শক্তিরূপা বলল, ‘সাবলাইম খচ্চর!’

‘কাকে বললে?’ আঁতকে উঠে বলে দময়ন্তী। সে মাকে খুব কম গালাগালি দিতে শুনেছে। যখন দেন তখন লোকজনের প্যান্টুল খুলে ছেড়ে দেন।

‘সুদিন চক্রবর্তী। ফ্রাস্ট্রেটেড বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের আগে বলা হতো হারামির হাতবাক্স। এখন হাতবাক্সে ধরছে না। হারামির হোল্ড-অল বলতে হয়। একটা ছোকরার লাশ ঘাড়ে নিয়ে এখন চ্যানেল থেকে চ্যানেল বাইট দিয়ে বেড়াবে আর নিজের কবিতা কোট করবে।’

শক্তিরূপার কথার মধ্যে বেল বাজল। দময়ন্তী শক্তিরূপার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ওঁরা এলেন। আমি ওঁদের দরজা খুলে দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছি। আলাপ করার ইচ্ছে নেই।’

‘আমারও নেই।’ দ্রুত গতিতে ব্রেকফাস্ট শেষ করছেন শক্তিরূপা। ‘ড্যানিয়েলের কাছে ওঁদের পৌঁছে দিয়ে আমিও কাটব।’

শক্তিরূপাকে টাটা করে ব্যাকপ্যাক নিয়ে তরতর করে একতলায় নামে দময়ন্তী। ডিটিপির দোকানের পাশ দিয়ে উঠে আসছেন সাড়ে পাঁচফুটের বিবস্বান সান্যাল। মোম-মসৃণ ত্বকে গোলাপি আভা। মাথায় একটাও চুল নেই। টাক পড়তে শুরু করার পরে গালের সঙ্গে মাথাও দু’বেলা শেভ করেন। পরনে জিনস ও টি-শার্ট। বাঁ কানে হিরের ইয়ারস্টাড।

হৈমবতী স্বামীর থেকে ইঞ্চি তিনেক লম্বা। পরে আছেন আকাশি রঙের শিফন ও অ্যাকোয়ামেরিন ব্লু রঙের ব্লাউজ। হাতে ফুলের বুকে। বাতাসে হাল্কা সুগন্ধ। যে গন্ধের একটাই বিশেষণ হয়। অভিজাত। এখান থেকেই দেখা যাচ্ছে, এজেসি বোস রোডে একটা মার্সিডিজ বেনজ দাঁড়িয়ে রয়েছে।

‘ড্যানিয়েল আর্চার বাড়িতে আছেন?’ বিনয়ের সঙ্গে প্রশ্ন করলেন বিবস্বান।

‘উনি আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছেন। আসুন আমার সঙ্গে।’ দময়ন্তী আবার সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে থাকে।

‘তোমার নাম দময়ন্তী। ডাক্তারি পড়ছ।’ হৈমবতী বলেন।

‘হ্যাঁ।’ দময়ন্তী দু’জনকে নিয়ে দোতলায় আসে। সেখানে শক্তিরূপা ও ড্যানিয়েল দু’জনেই দাঁড়িয়ে রয়েছে।

এখানে থাকা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। ড্যানিয়েলকে টাটা করে দময়ন্তী সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকে। কলেজের দেরি হয়ে যাচ্ছে। ফার্স্ট এমবিবিএসের আগে রোজ স্পেশাল ক্লাস হচ্ছে। একটাও মিস করা যাবে না। অ্যাটেন্ডেন্সের ঘাটতিও রাখা যাবে না। এনজি অ্যাটেন্ডেন্স নিয়ে খুব বাওয়াল করছেন।

এসএলটিতে এনজির অ্যানাটমি ক্লাস সকাল ন’টায়। একটু আগেই পৌঁছল দময়ন্তী। ক্লাস একেবারে হাউসফুল। সবাই বলছে, এনজি আগামী কুড়িটা ক্লাসে যা পড়াবেন, সেটাই সাজেশন। থিয়োরি বা প্র্যাকটিকালের কোশ্চেন সেখান থেকেই আসবে। দময়ন্তীকে ঢুকতে দেখে কয়েকজন ‘হ্যাপি বার্থডে’ বলে চ্যাঁচাল বটে, কিন্তু কারো গলার আওয়াজেই তেজ নেই। ফার্স্ট এমবিবিএসের হাড়িকাঠে গলা দেওয়ার পরে তেজ থাকা সম্ভবও নয়।

সেকেন্ড বেঞ্চের ডানদিকে অভি, চন্দন আর বৃন্দা পাশাপাশি বসে নিজেদের মধ্যে নিচু গলায় কথা বলছে। অভিকে ঠেলে সরিয়ে বসল দময়ন্তী। বলল, ‘কী ব্যাপার, চারিদিকে এইরকম শোকের ছায়া কেন?’

অভি আর চন্দন কোনও কথা বলল না। বৃন্দা বলল, ‘বাজারে জোর গুজব, এনজি ট্রান্সফার হয়ে নর্থ বেঙ্গল মেডিক্যাল কলেজ চলে যাচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে এইসব সাজেশান কাজে লাগবে কি না, কে জানে!’

‘শুধু এনজি নয়, এএম-এরও ট্রান্সফার অর্ডার এসেছে। তবে উনি যাবেন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ। আমাদের অবস্থা ঢিলে!’ মিনমিন করে বলল অভি।

‘ওসব ভেবে লাভ নেই। পরীক্ষা তো আর মুখ দেখে হবে না!’ চন্দন ব্যাজার মুখে বলে।

‘আলবাত মুখ দেখে হয়।’ বেঞ্চি থাবড়ায় বৃন্দা, ‘আমাদের থিয়োরি পরীক্ষা হবে অন্য কলেজে। মানে, আমাদের ব্যাচকে পাঠাবে ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজ, আরজি কর, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে। কিন্তু খাতা দেখবে আমাদের কলেজ। আবার প্র্যাকটিক্যাল হবে নিজের কলেজে। কাজেই মুখ দেখাদেখির একটা বড় গুরুত্ব আছে।’

‘আর সুন্দরী মেয়েদের তো ব্যাপারই আলাদা। ওরাল পরীক্ষার সময়ে সামান্য ঝুঁকে বুক দেখিয়ে দিলেই পাস।’ চন্দন ফুট কাটে।

‘ছ্যাবলা কোথাকার,’ চন্দনকে চাঁটায় দময়ন্তী, ‘তাহলে এএম আর পিএমের ভাইভার সময়ে তোরা প্যান্ট খুলে পোল ডান্স করিস। পাস করে যাবি।’

হ্যাহ্যা হিহির মধ্যে নিঃশব্দে ক্লাসে ঢুকেছেন এনজি। টেবিলে অ্যাটেন্ডেন্স খাতা রেখে বললেন, ‘আর্চ অব অ্যাওর্টা অ্যান্ড ইটস ব্রাঞ্চেস। কে কে এক্ষুনি বলতে পারবে?’

গোটা কুড়ি হাত উঠল। বৃন্দা তার মধ্যে একজন।

‘আধঘণ্টা সময় দিলে রিভাইস করে নামাতে পারবে এমন কজন আছে? আগের বার যারা হাত তুলেছে, তারা বাদ দিয়ে বাকিরা হাত তোলো।’

পঞ্চাশ-ষাটটা হাত উঠল। দময়ন্তী তাদের মধ্যে একজন।

‘এখনও একবারও পড়োনি, এমন ক’জন আছ? বাকি সবাই। তাই তো?’

গোটা ক্লাস চুপ। এনজি বললেন, ‘তোমরা যদি ভেবে থাকো যে আমার ট্রান্সফার অর্ডার এসেছে বলে তোমরা পার পেয়ে যাবে, তাহলে খুব ভুল ভেবেছ। আমি ট্রান্সফার হচ্ছি এটা ঠিক। তবে সেটা তোমাদের পরীক্ষা নেওয়ার পরে। এবং আমার কাছে ওনলি মেরিট ম্যাটারস। চন্দন, আর্চ অব অ্যাওর্টার অরিজিন বলো।’

এত ছেলেগুলোর মধ্যে চন্দনকে বেছে নেওয়ায় গোটা ক্লাস অবাক হল না। উচ্চ মাধ্যমিকের ফার্স্ট বয় কলেজে রাজনীতি করে গত এক বছরে কতটা উচ্ছন্নে গেছে এটা জানতে সবাই আগ্রহী। চন্দন উঠে দাঁড়াল। এনজির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আমি কিন্তু স্যার হাত না তোলাদের দলে।’

‘আজকে আমি তাদেরই পড়া ধরব।’ এনজি তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলেন।

চন্দন দীর্ঘশ্বাস ফেলে কুঁতিয়ে কুঁতিয়ে শুরু করল, ‘আর্চ অব অ্যাওর্টা স্টার্টস ফ্রম লেফট ভেন্ট্রিকল অব হার্ট। ইট সাপ্লায়েজ অক্সিজেনেটেড ব্লাড ফ্রম হার্ট টু…’

‘তবে যে বললে পড়োনি।’ এনজি ধমক দিলেন।

‘এসব আমি টুয়েলভ থেকেই জানি। ব্রাঞ্চগুলো যদি জানতে চান তা হলে একটাও বলতে পারব না।’

‘সে চেষ্টা তোমার বন্ধু করুক।’ চন্দনকে থামিয়ে অভিকে দাঁড় করিয়েছেন এনজি। ‘বলো অভিজ্ঞান।’

সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে এনজির দিকে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল অভি।

‘আর্চ অব অ্যাওর্টার ব্রাঞ্চ বলতে না পারলে এমবিবিএস-এ সাপ্লি খাওয়া তোমার কপালে নাচছে।’ কঠিন গলায় বলেন এনজি। ‘নাও স্টার্ট।’

‘জানি না স্যার।’ বেঞ্চির দিকে তাকিয়ে বলে অভি।

বৃন্দা একটা কাগজে ব্রাঞ্চগুলো লিখে কাগজটা অভির দিকে ঠেলে দিল। বেচারি বেঞ্চির দিকে তাকিয়ে রয়েছে। গড়গড় করে আউড়ে দিলেই এই অপমান সহ্য করতে হয় না! তবে অভি কি শোনার বান্দা? সে তর্জনীর টোকায় কাগজ ফেলে দিল।

‘দেখি আর কে কে সাপ্লি খাবে!’ মিষ্টি হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে এনজি বললেন, ‘সুরজ, তুমি বলো।’

পরবর্তী একঘণ্টা ধরে বেছে বেছে ত্রিশজন ছেলেমেয়েকে দাঁড় করালেন এনজি। কেউ পড়া পারল না। দময়ন্তী বুঝল, গত এক বছর ধরে দেড়শোজন ছেলেমেয়ের নাড়ি-নক্ষত্র জানা হয়ে গেছে এনজির। প্রত্যেকের নাম ও পদবি জানেন। কার কোথায় বাড়ি জানেন। কোন আইটেমে কে কেমন ফল করেছে জানেন। পার্টে কে কেমন ধেড়িয়েছে, সেটাও জানেন। এক ঘণ্টার মাথায় ব্ল্যাকবোর্ডের দিকে ঘুরে এনজি শুরু করলেন, ‘এই হল আর্চ অব অ্যাওর্টা।’

ক্লাসভর্তি ছাত্রছাত্রী অবাক হয়ে দেখল, এনজি দু’হাতে ছবি আঁকছেন। ডান ও বাঁ—দু’হাতেই লাল, নীল, হলুদ, সবুজ রঙের চক। ডান হাতে লাল চক দিয়ে শিরা আঁকছেন। একই সঙ্গে বাঁহাতের নীল চক দিয়ে ধমনি আঁকছেন। লাল চক দিয়ে শিরা আঁকা শেষ করে তার শাখা-প্রশাখা আঁকছেন। তখন বাঁহাতে সবুজ চক দিয়ে স্নায়ু আঁকছেন। চোখ আর হাতের মধ্যে কোন পর্যায়ের সংযোগ থাকলে এই জিনিস সম্ভব! কী সাংঘাতিক স্মৃতিশক্তি, সাবজেক্টের প্রতি কী অসম্ভব ভালোবাসা থাকলে এটা করা যায়! মনে মনে এনজিকে প্রণাম করে দময়ন্তী। ট্রান্সফারের খবরটা শুনে খারাপ লাগছে। মন্ত্রমুগ্ধের মতো এনজির লেকচার শুনতে থাকে সে।

বাড়ি ফিরতে ফিরতে তিনটে বাজল। দুপুরের খাবার বাড়ি ফিরে খাবে—এটা বলা ছিল। দময়ন্তীর ধারণা ছিল বাড়ি ফিরে দেখবে, বাবা স্টুডিওতে, মা অফিসে, টেবিলে খাবার ঢাকা রয়েছে। দোতলায় উঠে দেখল ঘটনা অন্যরকম।

শক্তিরূপা অফিস যাননি, অথবা গেলেও বাড়ি চলে এসেছেন। ড্যানিয়েল স্টুডিও ছেড়ে দোতলার ডাইনিং টেবিলে বসে চপিং বোর্ডে ব্রকোলি কাটছেন। শক্তিরূপা কী একটা রান্না করছে। ভীষণ ভালো গন্ধ আসছে। অবাক হয়ে দময়ন্তী বলল, ‘কী সেলিব্রেশান? বাবার ‘আনডাইং সিটি’ সিরিজ বিক্রি হয়ে গেল বুঝি?’

‘বিক্রি হয়নি,’ কাটা ব্রকোলি থালায় রেখে ড্যানিয়েল বলেন, ‘হৈমবতীর ”পথের ধারে” প্রদর্শনীশালার সঙ্গে চুক্তি হল। ওরা আগামী মাসে এই পঁচিশটা ছবি নিয়ে প্রদর্শনী করবে। সামান্য সম্মান দক্ষিণা অগ্রিম দিয়ে গেল। পরে ছবি যে রকম বিক্রি হবে, প্রদর্শনশালার লভ্যাংশ রেখে আমাকে আমার প্রাপ্য দেবে।’

দময়ন্তী জানে, ড্যানিয়েল খুব খারাপ নেগোশিয়েটার। টাকাপয়সা নিয়ে কথা বলতে লজ্জা পান। আন্তর্জাতিক বাজারে ড্যানিয়েলের আবছা খ্যাতি আছে। কয়েকজন জাপানি ক্রেতা নিয়মিত ড্যানিয়েলের ছবি কেনেন। তবে জাতীয় স্তরে ড্যানিয়েলের বাজার ভীষণ ভালো। ছবি আঁকতে বসার আগেই ক্যানভাস বিক্রি হয়ে যায়। তিন থেকে চার লাখের মধ্যে ছবির দাম ঘোরাঘুরি করে। দময়ন্তীর ধারণা ড্যানিয়েলের ছবির দাম আরও বেশি হওয়া উচিৎ। গ্যালারির ওনাররা ঠকান। চেয়ারে ব্যাগ রেখে সে বলল, ‘এক এক করে বোঝার চেষ্টা করি। ”পথের ধারে” প্রদর্শনশালা মানে ”বাই দ্য ওয়ে” আর্ট গ্যালারি। ”অগ্রিম সম্মান দক্ষিণা” মানে ”টোকেন অ্যাডভান্স”। তাই তো?’

‘এ তো ব্যাঘ্র মানে শার্দুল হয়ে গেল!’ আপত্তি করেন ড্যানিয়েল। উত্তর না দিয়ে দময়ন্তী বলে, ‘কত টাকার টোকেন অ্যাডভান্স পেলে জানতে পারি?’

‘দশ লাখ। টিডিএস করে।’ গ্যাস থেকে কড়া নামিয়ে শক্তিরূপা বলেন।

‘ওয়াও! গ্রেট!’ হাততালি দেয় দময়ন্তী। ‘বাবার অনারে আজকের মেনু কী?’

‘আজকের মেনু হল ভাত, মিক্সড ভেজিটেবিল, সোনামুগের ডাল, বেকড ভেটকি আর পায়েস। তবে এই মেনু তোর বাবার অনারে নয়,’ মেয়ের কাছে এসে মাথায় চুমু খেয়ে শক্তিরূপা বলেন, ‘হ্যাপি বার্থডে দময়ন্তী।’

ড্যানিয়েল চেয়ারের আড়াল থেকে নাহুমের একটা ফ্রুট কেক বার করে বলল, ‘শুভ জন্মদিন, খুকি!’

‘ধ্যাত!’ বাবাকে জড়িয়ে ধরে দময়ন্তী। তার দু’চোখে জল। দেড় মাস বাদের ফার্স্ট এমবিবিএস-এর বিভীষিকার কথা ভুলে গেছে সে।