আগ্নেয়গিরি

কখনো হঠাৎ মনে হয় :

আমি এক আগ্নেয় পাহাড়।

শান্তির ছায়া-নিবিড় গুহায় নিদ্রিত সিংহের মতো

চোখে আমার বহু দিনের তন্দ্রা।

এক বিস্ফোরণ থেকে আর এক বিস্ফোরণের মাঝখানে

আমাকে তোমরা বিদ্রূপে বিদ্ধ করেছ বারংবার

আমি পাথর : আমি তা সহ্য করেছি।

মুখে আমার মৃদু হাসি,

বুকে আমার পুঞ্জীভূত ফুটন্ত লাভা।

সিংহের মতো আধ-বোজা চোখে আমি কেবলি দেখছি :

মিথ্যার ভিতে কল্পনার মশলায় গড়া তোমাদের শহর,

আমাকে ঘিরে রচিত উৎসবের নির্বোধ অমরাবতী,

বিদ্রূপের হাসি আর বিদ্বেষের আতস-বাজি—

তোমাদের নগরে মদমত্ত পূর্ণিমা।

দেখ, দেখ :

ছায়াঘন, অরণ্য-নিবিড় আমাকে দেখ;

দেখ আমার নিরুদ্বিগ্ন বন্যতা।

তোমাদের শহর আমাকে বিদ্রূপ করুক,

কুঠারে কুঠারে আমার ধৈর্যকে করুক আহত,

কিছুতেই বিশ্বাস ক’রো না–

আমি ভিসুভিয়স-ফুজিয়ামার সহোদর।

তোমাদের কাছে অজ্ঞাত থাক

ভেতরে ভেতরে মোচড় দিয়ে ওঠা আমার অগ্ন্যুদ্‌গার,

অরণ্যে ঢাকা অন্তর্নিহিত উত্তাপের জ্বালা।

তোমার আকাশে ফ্যাকাশে প্রেত আলো,

বুনো পাহাড়ে মৃদু-ধোঁয়ার অবগুণ্ঠন :

ও কিছু নয়, হয়তো নতুন এক মেঘদূত।

উৎসব কর, উৎসব কর—

ভুলে যাও পেছনে আছে এক আগ্নেয় পাহাড়,

ভিসুভিয়স-ফুজিয়ামার জাগ্রত বংশধর।

আর,

আমার দিনপঞ্জিকায় আসন্ন হোক

বিস্ফোরণের চরম, পবিত্র তিথি॥