ব্যর্থতা[১]

আজকে হঠাৎ সাত সমুদ্র তেরো নদী

পার হ’তে সাধ জাগে, মনে হয় তবু যদি

পক্ষপাতের বালাই না নিয়ে পক্ষীরাজ,

চাষার ছেলের হাতে এসে যেত হঠাৎ আজ।

তা হলে না হয় আকাশবিহার হত সফল,

টুকরো মেঘেরা যেতে-যেতে ছুঁয়ে যেত কপোল;

জনারণ্যে কি রাজকন্যার নেইকো ঠাঁই?

কাস্তেখানাকে বাগিয়ে আজকে ভাবছি তাই।

অসি নাই থাক, হাতে তো আমার কাস্তে আছে,

চাষার ছেলের অসিকে কি ভালবাসতে আছে?

তাই আমি যেতে চাই সেখানেই যেখানে পীড়ন,

যেখানে ঝলসে উঠবে কাস্তে দৃপ্ত-কিরণ।

হে রাজকন্যা, দৈত্যপুরীতে বন্দী থেকে

নিজেকে মুক্ত করতে আমায় নিয়েছ ডেকে

হেমন্তে পাকা ফসল সামনে, তবু দিলে ডাক;

তোমাকে মুক্ত করব, আজকে ধান কাটা থাক।

রাজপুত্রের মতন যদিও নেই কৃপাণ,

তবু মনে আশা, তাই কাস্তেতে দিচ্ছি শান,

হে রাজকুমারী, আমাদের ঘরে আসতে তোমার

মন চাইবে তো? হবে কষ্টের সমুদ্র পার?

দৈত্যশালায় পাথরের ঘর, পালঙ্ক-খাট,

আমাদের শুধু পর্ণ-কুটির, ফাঁকা ক্ষেত-মাঠ;

সোনার শিকল নেই, আমাদের মুক্ত আকাশ,

রাজার ঝিয়ারী! এখানে নিদ্রাহীন বারো মাস।

এখানে দিন ও রাত্রি পরিশ্রমেই কাটে

সূর্য এখানে দ্রুত ওঠে, নামে দেরীতে পাটে।

হে রাজকন্যা, চলো যাই, আজ এলাম পাশে,

পক্ষীরাজের অভাবে পা দেব কোমল ঘাসে।

হে রাজকন্যা সাড়া দাও, কেন মৌন পাষান?

আমার সঙ্গে ক্ষেতে গিয়ে তুমি তুলবে না ধান?

হে রাজকন্যা, ঘুম ভাঙলো না? সোনার কাঠি

কোথা থেকে পাব, আমরা নিঃস্ব, ক্ষেতেই খাটি।

সোনার কাঠির সোনা নেই, আছে ধানের সোনা,

তাতে কি হবে না? তবে তো বৃথাই অনুশোচনা॥

সূত্রনির্দেশ ও টীকা

  1. ‘ব্যর্থতা’ কবিতাটি আষাঢ় ১৩৫৩-এর কবিতা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। কবিতাটি ‘মীমাংসা’ কবিতার প্রথম খসড়া বলে মনে হয়।