» » কুড়ি

বর্ণাকার

বগাদিয়ার কোলশরিক কোরবান ঢালীর পুতের বউ সবুরন মোরগের বাকেরও আগে নদীর ঘাটে গিয়েছিল ফরজ গোসল করতে। অনেকক্ষণ পরে ঘুম ভেঙে বিছানায় গড়াগড়ি দিয়ে তার স্বামী সোরমানও যায় গোসল করতে। এত সময়ের মধ্যেও সবুরন ঘরে ফিরে আসেনি আর নদীর ঘাটেও তাকে দেখতে পায় না সোরমান। গোসলের পর পরবার জন্য যে শাড়িটা সে নিয়ে গিয়েছিল সেটা পড়ে রয়েছে পাড়ে তুলে রাখা একটা ওচার ওপর। সোরমানের বুকের ভেতরটা ধক করে ওঠে। সবুরনকে কুমিরে নিয়ে যায়নি তো!

তার ডাক-চিৎকারে বাড়ির ও আশপাশের লোকজন ছুটে আসে। কয়েকজন লগি মেরে মেরে নদীর কিনারায় খোঁজ করে। কয়েকটা নৌকা নিয়ে কয়েকজন খোঁজ করে এ-চর ও চর। কিন্তু সবুরনের কোনো হদিস পাওয়া যায় না। সে কোথাও কারো সাথে পালিয়ে যায়নি–এ ব্যাপারে সবাই একমত। বছর খানেক আগে বিয়ে হয়েছে। হেসে-খেলে দিব্যি ঘর-সংসার করছিল মেয়েটি।

পালিয়ে যাওয়ার কোনো কারণও ঘটেনি। আর পালিয়ে গেলে শাড়িটা নিশ্চয়ই নিয়ে যেত। সে সাঁতার জানে। সুতরাং পানিতে ডুবে মরার কথাও নয়। তবে কি সত্যি সত্যি কুমিরেই নিয়ে গেছে?

কিন্তু একদিন এক রাত পর ভোরবেলা যখন তাকে নদীর সেই একই ঘাটে পাওয়া গেল তখন সবাই বিস্ময়ে হতবাক। সবুরন কেমন যেন সম্মোহিত, বাহ্যজ্ঞানশূন্য। তার মুখে কথা নেই। অনেক সময় ধরে ঘোমটা টেনে সে বসে থাকে এক জায়গায়। কারো প্রশ্নের উত্তর সে দেয় না। সকলের দৃঢ় বিশ্বাস মেয়েটির ওপর জিনের দৃষ্টি পড়েছে এবং জিনই তাকে নিয়ে গিয়েছিল?

খবরটা লোকের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে সারা চর অঞ্চলে। লোকের মুখে এ-ও শোনা যায়–সবুরনের শরীরে, শাড়ি-ব্লাউজে মন-মাতানো খোশবু। সে নাকি জিন-পরীর দেশ কোহকাফ-এর খোশবুর নহরে ডুব দিয়ে এসেছে।

জরিনার কাছে খবরটা পায় ফজলও। সে মনে মনে হাসে আর এই ভেবে স্বস্তি বোধ করে যে নিশ্চিত বিপর্যয়ের হাত থেকে বউটির ভবিষ্যৎ দাম্পত্য জীবন রক্ষা পেয়ে গেল।

ফজলের মনে পড়ে যায় একদিনের কথা। মাস ছয়েক আগে সে মাছ বিক্রি করতে গিয়েছিল তারপাশা, মাছের চালানদারদের কাছে তারপাশা স্টেশনে অপেক্ষমান কয়েকজন স্টিমার-যাত্রীর মধ্যে তর্ক হচ্ছিল। ফজল মনোযোগ দিয়ে শুনছিল পাশে দাঁড়িয়ে। একজন বলছিল, ‘জিনের কথা কোরান শরিফে লেখা আছে।’ আর একজন বলছিল, ‘হ্যাঁ লেখা আছে ঠিকই। কিন্তু জিন কী, কেমন, কোথায় থাকে তার কোনো স্পষ্ট বর্ণনা নেই।’ কোরান শরিফের একজন অনুবাদক তার টীকায় লিখেছেন—‘কোরান শরিফের কোনো কোনো আয়াতে জিনের উল্লেখে যে ইঙ্গিত পাওয়া যায় তা থেকে মনে হয়, ‘সুচতুর বিদেশী’ বোঝাবার জন্য জিন শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।’

ফজল মনে মনে বলে, ‘ঠিকই, বউটারে জিনেই ধইর‍্যা লইয়া গেছিল।’

ফজল আরো খবর পায়–ফুলপুরী পীরবাবাকে নিয়ে জঙ্গুরুল্লা আগামী শনিবার বগাদিয়া যাচ্ছে। জিন চালান দিয়ে জিনের দৃষ্টি থেকে পীরবাবা সবুরনকে উদ্ধার করবেন।

কোনো সাক্ষী-সাবুদ পায়নি বলে ডাকাতি মামলাটা দাঁড় করাতে পারেনি পুলিস। তাই খারিজ হয়ে গেছে মামলা। কিন্তু জেলভাঙার অভিযোগ আছে ফজলের বিরুদ্ধে। তাকে ধরবার জন্য মাঝে মাঝে হানা দেয় পুলিস।

পালিয়ে পালিয়ে আর কতদিন থাকা যায়? পালাবার আর জায়গাও নেই। জরিনার শাশুড়ি ফিরে এসেছে। সে বাড়িতে যাওয়া যায় না আর। তাকে ধরবার জন্য আত্মীয় স্বজনদের বাড়ি ঘেরাও করে তল্লাশি চালিয়েছিল পুলিস। এভাবে বেইজ্জত হওয়ায় অনেকেই বিরক্ত হয়ে গেছে তার ওপর। তাদের বাড়িতে আশ্রয়ের জন্য আর যাওয়া যায় না। বর্ষার পানিতে ডুবে গেছে মাঠ-ঘাট। ঝপাঝপ বৃষ্টি নামে যখন তখন। এ দিনে পাটখেতে বা বনবাদাড়ে লুকিয়ে থাকবার উপায় নেই। শিকারির ভয়ে ভীত এ পশুর জীবন আর ভাল লাগে না ফজলের। জেল থেকে যে উদ্দেশ্য নিয়ে সে পালিয়েছিল তার একটাও সফল হয়নি। না পারল সে প্রতিশোধ নিতে, না পারল চরটা আবার দখলে আনতে। এভাবে পালিয়ে বেড়ালে কোনো কাজই সমাধা হবে না–সে বুঝতে পারে। অনেক ভেবেচিন্তে মেহের মুনশির সাথে পরামর্শ করে সে মহকুমার আদালতে আত্মসমর্পণ করাই সমীচীন মনে করে।

উকিল ধরে শেষে আদালতে আত্মসমর্পণই করে ফজল।

আবার হাজতবাস। তবে কিছু দিনের মধ্যে তার বিচার শুরু হয়। ডাকাতি মামলায় অনর্থক গ্রেফতার, বিনা অপরাধে দীর্ঘদিন হাজতবাস, স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ ইত্যাদি কারণগুলো তার জেলভাঙার অপরাধের গুরুত্ব অনেকখানি কমিয়ে দেয়। এটাও প্রমাণিত হয়–সে জেল ভাঙেনি। জেল ভেঙেছিল বিপ্লবী রাজনৈতিক দল। সে শুধু সুযোগ বুঝে পালিয়েছিল। বিচারক এসব বিবেচনা করে তার রায় দেন। মাত্র তিন মাস কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে তাকে।

ফজলের সাজা হয়েছে শুনে আরশেদ মোল্লা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ে তার।

ফজল জেল থেকে পালিয়ে এসেছে শুনে সে খুবই দুশ্চিন্তায় পড়েছিল। রূপজানকে সে ভাগিয়ে নিয়ে যেতে পারে এই ছিল তার ভয়। মেয়ের মতিগতিও ভাল মনে হয়নি। পানি আনার নাম করে সে নদীর ঘাটে গিয়ে প্রায়ই চুপচাপ বসে থাকত। তাকে চোখে-চোখে রাখতে হতো সব সময়। ঐদিন পুলিস দিয়ে ধরিয়ে না দিলে ফজল তাকে নিশ্চিয় ভাগিয়ে নিয়ে যেত। রূপজানও তৈরি ছিল, ঘর থেকে বেরুবার চেষ্টাও করেছিল। ভাগ্যিস উঠানে দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছিল সে, আর ঠিক সময়ে পুলিস এসে পড়েছিল।

রূপজান এখনো প্রায়ই নদীর ঘাটে গিয়ে বসে থাকে। তবে পালিয়ে যাওয়ার ভয় আর নেই। এবার দিন-তারিখ ঠিক করে শুভ কাজটা সমাধা করতে পারলেই সব ঝঞ্ঝাট চুকে যায়।

ফুলপুরী পীরবাবা আরো কিছুদিন থাকবেন এ অঞ্চলে। জঙ্গুরুল্লাও তাগিদ দিচ্ছে বারবার। কিন্তু রূপজানকে কিছুতেই রাজি করানো যাচ্ছে না। সে তার মা-কে সোজা বলে দিয়েছে, আমারে বিয়া দিতে পারবা না। পারবা আমার লাশটারে বিয়া দিতে। বেশি জোরাজুরি করলে গলায় দড়ি দিমু।

মহাভাবনায় পড়ে যায় আরশেদ মোল্লা। নিরুপায় হয়ে সে জঙ্গুরুল্লার কাছে গিয়ে সব খুলে বলে। জঙ্গুরুল্লা শুনে হো-হো করে হেসে ওঠে। বলে, ‘তুমিও যেমুন! মাইয়া রাজি অয়না ক্যান্? পীরবাবার পাকনা দাড়ি দেইখ্যা বুঝিন পছন্দ অয়না মাইয়ার?’

‘হ ঠিকই ধরছেন।’

‘আরে মিয়া, তুমি তো একটা জাহিল। রসুলে করিমের বয়স যখন পঞ্চাশের উপরে তখন তিনি হজরত আয়েশাকে বিয়া করেন। তুমি জানো, বিবি আয়েশার বয়স তখন কত?’

‘তেনারাতো আল্লার পিয়ারা। তেনাগো লগে আমাগো লগে তুলনা অয়?’

‘আরে রসুলে করিম যা কইর‍্যা গেছেন সেই মতন কাম করা তো সুন্নত–অনেক সওয়াবের কাম। পীরবাবা আল্লার পিয়ারা দোস্ত। তার লগে মাইয়া বিয়া দিলে গুষ্টিশুদ্ধ বেহেশতে যাইতে পারবা।’

‘কিন্তুক মাইয়ারে যে রাজি করাইতে পারলাম না। সে কয়–আমার লাশটারে বিয়া দিতে পারবা।’

‘সবুর করো। এট্টু বসো তুমি। আমি জিগাইয়া আসি পীরবাবারে। তিনার কাছে এই ব্যারামেরও ওষুধ আছে।’

কিছুক্ষণ পরে জঙ্গুরুল্লা ফিরে আসে। বলে, ‘শোন, মোল্লা, তুমি বাজারে যাও। এক মূলের সোয়াসের জিলাফি আর এক শিশি সুবাসিত তেল নিয়া আসো। দরাদরি কইর‍্য না কিন্তুক। যা দাম চাইব তাই দিয়া কিনবা। তেলের নামডা যে কি কইল বাবা? হ হ মনে পড়ছে, রওগনে আম্বর। ঐ ডা না পাইলে যে কোনো সুবাসিত তেল আনলেই চলব।’

পরের দিনই আরশেদ মোল্লা জিলাপি আর একশিশি কামিনীকুসুম কেশ তৈল নিয়ে আসে জঙ্গুরুল্লার বাড়ি।

জঙ্গুরুল্লা ওগুলো নিয়ে যায় পীরবাবার বজরায়। তিনি মন্ত্রতন্ত্র পড়ে ওগুলোতে ফুঁ দিয়ে ফেরত দেন। উপদেশও দেন কিছু।

জঙ্গুরুল্লা জিনিসগুলো আরশেদ মোল্লার হাতে দিয়ে বলে, ‘এই জিলাফি খাওয়াইবা মাইয়ারে। আর এই তেল সে মাথায় দিব। তারপর দ্যাখবা মিয়া, ক্যামনে নাচতে নাচতে তোমার মাইয়া আইয়া পড়ে পীরবাবার ঘরে।’

‘এতগুলা জিলাফি একলা মাইয়ারে দিলেতো সন্দ করব।’

‘না মিয়া, খালি মাইয়ারে দিবা ক্যান্? তোমার বউ-পোলা-মাইয়া বেবাকগুলারে খাওয়াইবা।’

‘এইডা কি কতা কইলেন চদরীসাব? হেষে আমার কবিলার উপরেও যদি টোনার আছর অয়?’

জঙ্গুরুল্লা খিকখিক করে হেসে ওঠে। কোনো রকমে হাসি চেপে সে বলে, ‘ও তোমার বুঝিন ডর লাগছে? তুমি মনে করছ তোমার কবিলা নাচতে নাচতে আইয়া পড়ব মন্তরের ঠেলায়। উঁহু, হেইডা চিন্তা কইর‍্য না। তোমার মাইয়ার নাম লইয়া মন্তর পড়া অইছে এই জিলাফি আর তেলের উপরে। আর কোনো মাইনষের উপরে আচর অইব না।’

‘ঠিক কইলেন তো?’

‘আরে হ হ হুগনা ওলানের তন দুধ দোয়ানের কারো এমুন আহেঙ্কাত নাই। এইবার যাও। বিছমিল্লাহ বুইল্লা—থুরি না-না, বিছমিল্লাহ কওনের দরকার নাই। বিছমিল্লাহ কইয়া মোখে দিলে বেবাক বিষ পানি অইয়া যায়। জাদু-টোনার মন্তর-তন্তর ফুক্কা অইয়া যাইতে পারে, বোঝ্‌লা মিয়া?’

আরশেদ মোল্লা জিলিপির পুটলি ও তেলের শিশি হাতে নেয়।

‘আর শোন, পীরবাবা আর একটা কথা কইয়া দিছেন। জিলাফি খাওনের তিনদিন পর যখন জিলাফির মন্তর গিয়া ঢুকব শরীলের মইদ্যে তখন মাইয়ারে টোনার কথা জানাইতে অইব। তোমার বিবিরে তালিম দিয়া দিও। এমুন কইরা কইতে অইব ‘পীরবাবা তোরে টোনা করছে, রাইতে খোয়বে পীরবাবার কাছে চইল্যা যাবি। তুই ঘুমাইলে তোর রুহু চইল্যা যাইব পীরবাবার কাছে। এই কথাগুলা দিনে তিনবার–ফজর, জহুর আর এশার নামাজের পর কওন লাগব। মনে থাকব তো?’

‘হ থাকব। এহন যাই।’

জঙ্গুরুল্লাকে ‘আসলামালেকুম’ দিয়ে আরশেদ মোল্লা বাড়ির দিকে রওনা হয়।

জঙ্গুরুল্লার নির্দেশমত জিলিপি খাওয়ানো হয়েছে রূপজানকে। সুবাসিত তেল মাখিয়ে রোজ চুল বেঁধে দিচ্ছে তার মা। দিনে তিনবার টোনার কথা বেশ জোর গলায় বলা হচ্ছে তার কাছে। কিন্তু তার মনের কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। সে আগের মতোই অচল অটল।

রাতে বিছানায় শুয়ে রূপজান ঘুমের ভান করে থাকে। সবাই ঘুমিয়ে পড়লে সে উঠে বসে থাকে। ঘুমিয়ে পড়লেই স্বপ্ন দেখার ভয় আছে। আত্মাটা দেহ ছেড়ে চলে যাবে পীরের কাছে।

সে সারারাত জেগে থাকে। রাতের ঘুম সে পুষিয়ে নেয় দিনের বেলা ঘুমিয়ে।

রাতের নিঃসীম অন্ধকারে রূপজানের ব্যাকুল মন খুঁজে বেড়ায় ফজলকে। জেলের ভেতর সে এখন নিশ্চয় ঘুমিয়ে আছে। সে কি তাকে স্বপ্নে দেখে এখন। টোনা করে সে যদি আনতে পারত ফজলের আত্মাটাকে। আত্মাটা পাহারা দিতে পারত তার নিজের আত্মাটাকে।

বাড়ির সবাই তাকে বুঝিয়েছিল, ফজল ডাকাত। ডাকাতির মামলায় তার চৌদ্দ বছর জেল হবে। কেন সে তার জন্য নিজের জীবনটা নষ্ট করবে?

রূপজান তাদের কথা বিশ্বাস করেনি। ফজল ডাকাতি করতে পারে না–সে জানত। সেটাই এখন প্রমাণিত হয়েছে। সে ওভাবে জেল থেকে না পালালেই ভাল করত। জেল পালানোর অপরাধে সাজা খাটতে হতো না। যাক, মাত্র তিন মাসেরই তো ব্যাপার। দেখতে দেখতে জেলের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। ফিরে আসবে ফজল।

কিন্তু ফিরে এলে তার কি লাভ? সে-তো তাকে তালাক দিয়ে গেছে। আর তো সে তাকে ঘরে নিতে পারবে না।

তবুও ফজল জেল থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে আসুক মনে মনে সে এ প্রার্থনা করে দিনরাত।

আরশেদ মোল্লার প্রার্থনা কিন্তু তা নয়। ফজলের জেলের ভাত যত দেরিতে ফুরোয় এই তার কামনা। মাত্র কয়েক দিন হলো রূপজানকে জিলিপি খাওয়ানো হয়েছে। এর আছর হতে সময় লাগবে। কিন্তু বেশি সময় নিলে তো মহামুশকিল হয়ে যাবে। ফজল ফিরে এলে একটা কিছু গোলমাল বাঁধিয়ে দিতে পারে–এই তার ভয়।

পদ্মার স্রোতের মতো সময় বয়ে যাচ্ছে। একমাস পার হয়ে গেছে এর মধ্যে। কিন্তু একটুকুও পরিবর্তন হয়নি রূপজানের। তার মা টোনার প্ররোচন-বাক্য উচ্চারণ করলেই সে কানে আঙুল দেয়, পা উঁচিয়ে মেঝের ওপর লাথি মারে আর বলে, ‘টোনার কপালে লাথি, টোনার মুখে লাখি।’

‘ছি মা, অমুন করিস না। আল্লাহ্ গুনা লেখব, চুপ কর। তোর বাজান হুনলে কাইট্যা ফালাইব।’ সোনাইবিবির কণ্ঠে অনুনয়ের সুর।

রূপজান চুপ করে না। সে এবার বাঁ পা দিয়ে বারবার লাথি মারে মেঝের ওপর। আর দাঁত কিড়মিড় করে বলে, ‘টোনার মাজায় বাইয়া ঠ্যাঙ্গের লাথি। একশো একটা লাথি।’

সোনাইবিবিও চায়না জাদু-টোনার আছর পড়ুক রূপজানের ওপর। কিন্তু স্বামীর আদেশ অমান্য করার সাহস নেই তার। তাই দিনে তিনবার সে টোনার কথা শোনায় রূপজানকে। প্রত্যেক বারই কানে আঙুল দেয় রূপজান। থুক ফেলে, লাথি মারে মেঝেতে। সোনাইবিবির চোখ থেকে ধারা নামে। বুক ভেঙে বেরিয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস।

পীরবাবার তুকতাকে কাজ হচ্ছে না কেন বুঝতে পারে না আরশেদ মোল্লা। এদিকে দিন যে আর বেশি বাকি নেই। কার্তিক মাস শেষ হওয়ার কয়েক দিন পরেই বেরিয়ে যাবে ষণ্ডাটা। এখন উপায়?

আরশেদ মোল্লা পরামর্শের জন্য ছোটে জঙ্গুরুল্লার বাড়ি।

পীরবাবার তুকতাকে রূপজানের মন টলেনি শুনে ভাবনায় পড়ে জঙ্গুরুল্লাও। আরো কড়া, আরো তেজালো বশীকরণমন্ত্র নিশ্চয়ই জানা আছে পীরবাবার। কিন্তু আর যে বেশি সময় নেই। ফজল জেল থেকে বেরিয়ে এসে গোলমাল বাঁধাবে, তার জন্য মোটেও ভাবে না সে। ফজলতো একটা পিঁপড়ে তার কাছে। খালি একটু চোখের ইশারা ব্যস এক ডলায় খতম। তার ভাবনা শুধু পীরবাবার জন্য। এই চান্দের মাসের পনেরো তারিখে তার মেয়ের শাদি-মোবারক। আর মাত্র তেরো দিন বাকি আছে। পাঁচ দিন পরে তিনি নিজের ‘ওয়াতন’ ফুলপুর চলে যাবেন। সুতরাং তিন-চার দিনের মধ্যেই শুভ কাজটা সমাধা করা দরকার।

‘শোন মোল্লা, মাইয়ার মনের দিগে চাইয়া থাকলে কোনো কাম অইব না।’ জঙ্গুরুল্লা বলে। ‘বিয়ার কলমা পড়লে আর পুরুষ মাইনষের হাত লাগলে সব ঠিক অইয়া যাইব।’

‘আমার মনে অয় চদরী সাব, মাইয়ারে কবুল করান যাইব না। আপনে জুয়ান দেইখ্যা একটা পোলা ঠিক করেন।’

‘দ্যাখো মোল্লা, আমার যেমুন কথা তেমুন কাম। পীরবাবারে তোমার মাইয়া দিমু বুইল্লা নিয়াত কইর‍্যা রাখছি। এই নিয়াত ভাঙতে পারমু না।’

‘কিন্তু চদরীসাব, মাইয়া কবুল না করলে কি করবেন?’

‘কবুল করাইতে অইব। যদি এই শাদি না অয় তবে আর জমির ধারে কাছে যাইতে পারবা না। কইয়া দিলাম।’

আরশেদ মোল্লা কুঁকড়ে যায়। সে হাতজোড় করে বলে, ‘এট্টু রহম করেন, চদরীসাব। বেঢকচরের অর্ধেক জমি গাঙে খাইয়া ফালাইছে। আপনের জমিই এখন ভরসা। জমি লইয়া গেলে খাইমু কী?’

‘কী খাইবা, আমি কী জানি। জমি খাইতে অইলে আমার কথা মতন কাম করণ লাগব।’

‘হ, আপনে যা শুকুম দিবেন সেই মতন কাম করমু।’

জঙ্গুরুল্লা হেসে বলে, ‘তুমি হুকুমরে শুর্দু কইর‍্যা শুকুম কইলা বুঝিন? আসলে হুকুম কথাডাই শুর্দু, বোঝলা মিয়া? ভর্দ লোকেরা শুকুম কয় না, হুকুম কয়। আমার এই হুকুমের কথা মনে রাইখ্য সব সময়।’

একটু থেমে আবার বলে জঙ্গুরুল্লা, ‘পীরবাবার গায়ের রং দ্যাখছো? এক্কেরে হবরী ক্যালার মতন। তিনার লগে কি আনদুরা-বানদুরা কালাকষ্টি মাইয়ার শাদি দেওন যায়? তিনার রঙের লগে মিশ খাইব তোমার মাইয়ার রং। এহন বোঝতে পারছ–কিয়ের লেইগ্যা আমি এত তেলামাখি করতে লাগছি তোমারে?’

‘পীর বাবাতো বুড়া মানুষ। ওনার আবার শাদি করণের খায়েশ অইল ক্যান্?’

‘আরে পীরবাবার খায়েশ থাকুক আর না থাকুক, আসলে খায়েশটা অইছে আমার। পীরবাবা বুজুর্গ মানুষ। আল্লার পিয়ারা দোস্ত। তিনারে যদি আমাগ চরে রাখন যায়, তয় বালা-মসিবত আইতে পারব না। দ্যাখো না ক্যান্, রাক্কইস্যা গাঙ ক্যামনে ভাইঙ্গা রসাতল কইরা লইয়া যায় আমাগ চরগুলা। উনি যদি আমাগ লগে আমাগ চরে বসত করেন তয় কোনোদিন চর ভাঙতে পারব না। আমাগ চরডা অনেক পুরান আর বড়। দক্ষিণ-পশ্চিম দিগ দিয়া এট্টু-এট্টু ভাঙতে শুরু করছে। পীরবাবারে আইন্যা এই ভাঙন ঠেকাইতে অইব। তারপর তোমার কানে কানে কই একটা কথা। কারো কাছ ভাঙবা না কিন্তুক।’ জঙ্গুরুল্লা আরশেদ মোল্লার কানের কাছে মুখ নিয়ে আস্তে আস্তে বলে, ‘পীরবাবা যখন ইন্তিকাল করবেন তখন ওনারে কবর দিমু আমাগ চরে। তারপর আল্লায় মকসুদ পুরা করলে কবরডারে পোস্তা কইর‍্যা দিমু। তখন আল্লায়ই হেফাজত করব তার পিয়ারা দোস্তের কবর। এরপর গাঙ ক্যান্, গাঙ্গের বাপেরও পাওর’ থাকব না এই চর ভাঙনের।’

একটু দম নিয়ে আবার বলে সে, ‘যেই মতন মনে মনে ঠিক কইর‍্যা রাখছি, হেই মতন ঠিক ঠিক যদি কামডা অইয়া যায়, তা অইলে আরো ফয়দা অইব। তোমার মাইয়ারও কপাল খুইল্যা যাইব তখন, হুঁহ্ হুঁহ!’

‘মাইয়ার কপাল খুলব!’ আরশেদ মোল্লার কণ্ঠে বিস্ময়। ‘ক্যামনে খুলব?’

‘হেইডাও এহনই জানতে চাও? কইবা না তো কাওর কাছে?’

‘না–না, কইমু না। আপনি কইয়া ফেলেন।’

‘তুমি পীর-দরবেশের মাজার দ্যাখছো?’

‘দেখছি।’

‘কত দ্যাশ-বিদ্যাশের মানুষ যায় মাজারশরিফে। কত সৰ্মান! কত পয়সার আমদানি! পীরবাবারে আমাগ চরে কবর দিতে পারলে আমারও মাজারশরিফ বানাইতে পারমু। তখন মিয়া তোমার মাইয়া ছালা ভইরা ফালাইব টাকা দিয়া।’

আরশেদ মোল্লার চোখে-মুখে খুশি ঝিলিক দিয়ে ওঠে।

‘এখন তুমি কও, পীরবাবারে ক্যামনে ভুলাইয়া রাখন যায়? ক্যামনে আটকাইয়া রাখন যায় আমাগ চরে?’

‘সোন্দর দেইখ্যা একটা শাদি করাইয়া দিলে–’

‘এইতো এইবার বুইঝ্যা ফালাইছ। যেমুন-তেমুন আনদুরা-বানদুরা মাইয়ার লগে শাদি দিলে কাম অইব না। তার লেইগ্যা মাইয়া চাই বেহেশতের হুরির মতন সোন্দর, খুবসুরত। এইডা চিন্তা কইর‍্যা আমি তোমার মাইয়া ঠিক করছি। তোমার মাইয়ার মতন সোন্দর ঢক চেহারার মাইয়া আমাগ এই চরে-চঞ্চালে আর একটাও নাই। তোমার মাইয়ারে দ্যাখছে পীরবাবা, বজরা দিয়া যাইতে আছিল, হেই সময় একদিন আমারে কয়, অ্যায়ছা খুবসুরত লারকি হামি কোনোদিন দেখে নাই। হামার মুলুকেও এমুন চুন্দর লাড়কি নাই। এহন বোঝতে পারছ তো? তোমারে বুঝানের লেইগ্যা অনেক কথা খরচ করলাম।’

‘আমিতো বেবাক বোঝলাম। মাইয়াতো বোঝতে চায় না।’

‘বোঝতে চাইব একশবার। ছালা-ছালা টাকার কথা শোনলে এক কথায় কবুল কইরা ফালাইব। তুমি তোমার বিবিরে বুঝাইয়া কইও বেবাক কথা। সে যে মাইয়ার কানে কানে কয় সব।’

‘আইচ্ছা কইমু।’

‘এইবার তা অইলে তুমি শাদির ইন্তিজাম করো।’

‘কবে, দিন-তারিখ কইয়্যা দ্যান।’

‘আইজ রবিবার। তারপর সোম, মঙ্গল, বুধ। হ্যাঁ বুধবারই বিয়ার তারিখ ধার্য করলাম। আরে দ্যাখো তো কি কারবার। যার বিয়া তার দ্যাখতে মানা। আরে আসল কথাডাই ভুইল্যা গেছিলাম। যার শাদি তারে না জিগাইয়া তারিখ ধার্য করণ ঠিক না। আমি পীরবাবার লগে কথা কইয়া দেখি।’

বাড়ির ঘাটে বাঁধ আছে ফুলপুরী পীরের বজরা। জঙ্গুরুল্লা বজরার কক্ষে ঢুকে দেখা করে তাঁর সাথে। অনেকক্ষণ পরে সে বেরিয়ে আসে। চোখে-মুখে উৎসাহের যে দীপ্তি নিয়ে সে গিয়েছিল, তা আর নেই এখন। আরশেদ মোল্লা তার অন্ধকার মুখের দিকে চেয়ে থাকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে।

জঙ্গুরুল্লা তার কাঁঠাল কাঠের খাস চেয়ারটায় বসে বলে, ‘জবর একটা ভুল কইর‍্যা ফালাইছি। মাইয়ার মন এহনো নরম অয় নাই, এইডা কওনে সব্বনাশ অইয়া গেছে। পীরবাবা কয়–তব শাদি নেহি হোগা। তারে অনেক বুঝাইলাম–সব ঠিক অইয়া যাইব। কিন্তু কিছুতেই সে রাজি অইতে চায় না। হেষে অনেক কষ্টে রাজি করাইছি। কিন্তুক শাদি এহন অইব না। উনি যহন শীতকালে আবার তশরিফ নিব, তহন তোমার মাইয়ারে উড়াইয়া দিমু তিনার আতে।’

‘কিন্তু মাইয়া যদি ঐ সময়েও রাজি না অয়?’

‘রাজি করান লাগব। রাজি করানের দাওয়াই দিব পীরবাবা। ওনার ছিনার মধ্যে অনেক এলেম, বেশুমার মারফতি-কেরামতি, মন্তর-তন্তর। অনেক জিন তিনার হুকুমের গোলাম। তোমার মাইয়া বশ করতে জিন চালান দিব এইবার।’

‘ওরে ডাক্‌কুসরে। না চদরীসাব, জিন-পেরেতের দরকার নাই।’

‘আরে ওনারাতো পীরবাবার পোষা জিন। কোনো লোসকান করব না। এইবার মাইয়া ঠিক অইয়া যাইব। তুমি কোনো চিন্তা কইর‍্য না। কোনো ডর নাই তোমার। বাজারের বেইল অইয়া গেছে। এইবার বাড়িত যাও।’

আরশেদ মোল্লা তার ডিঙি বেয়ে বাড়ি রওনা হয়।

কোনো ডর নাই, কোনো চিন্তা নাই। কিন্তু যার ডরে সে অস্থির সে জেল থেকে বেরিয়ে আসছে কিছুদিনের মধ্যেই। ফজল বেরিয়ে যদি শুনতে পায়–রূপজান তার জন্য সব সময়ে কাঁদে, জাদু-টোনা করেও তাকে ভোলানো যায়নি তার কথা, তবে তো সে তুফান ছুটিয়ে দেবে। লোক-লশকর নিয়ে হাজির হবে তার বাড়ি। ধরে নিয়ে যাবে রূপজানকে।

আরশেদ মোল্লার মাথার মধ্যে কেমন একটা দপদপানি শুরু হয়।

ফজল নিশ্চয়ই খবর পেয়ে যাবে। রূপজান নিজেও গোপনে চিঠি লিখে জানিয়ে দিতে পারে।

আরশেদ মোল্লা ভেবে কূল পায় না কেমন করে এ তুফান থেকে রক্ষা পাবে সে। রক্ষা করবে মান-ইজ্জত।

ঘর-দোর, গরু-বাছুর নিয়ে খুনের চরে গেলে কেমন হয়? সেখানে অনেক মানুষ আছে চরের পাহারায়। কিন্তু ফজলের দল যদি চর দখলের জন্য হামলা করে? না, অত হিম্মত হবে না। কিন্তু খুনের চরে সবাই থাকে ভাওর ঘরে। এখনো বউ-ছেলে-মেয়ে নিয়ে কেউ যায়নি সেখানে।

রূপজানকে কোথাও লুকিয়ে রাখলে কেমন হয়? উঁহু, তাকে পাহারা দিয়ে রাখতে হবে। রূপজান নিজেই হয়ত পালিয়ে যাবে কোনো ব্যবস্থা করে। এক কাজ করা যায়–জঙ্গুরুল্লার বাড়ি রেখে দিলে আর কোনো ভয় থাকে না। জঙ্গুরুল্লার বাড়িতে অনেক মানুষজন। তারাই চোখে চোখে রাখবে আর ফজলেরও সাহস হবে না সে বাড়িতে হামলা করার।

আরশেদ মোল্লা স্বস্তি বোধ করে। এতক্ষণ সে গভীর চিন্তায় ডুবে ছিল। হাতদুটো বৈঠা টানছিল যন্ত্রচালিতের মতো। আকাশের মেঘ, নদীর ঢেউ, ইলিশ ধরার ডিঙি, নানা রঙের বাদাম, সবুজ ধানখেত, লটা আর কাশবন–কিছুই তার নজরে পড়েনি। হালবৈঠার কেড়োত-কোড়োত দাঁড়ের ঝপ্‌পত্‌ঝপ, জেলেদের হাঁক-ডাক, কিছুই কানে যায়নি তার। এবার চারদিকে তাকায় আরশেদ মোল্লা। দূরে, ডিঙির মাথি বরাবর দেখা যাচ্ছে খুনের চর। নদীতে এখন ভাটা। চরের ঢালু তট জেগে উঠেছে অনেক দূর পর্যন্ত। ফজলদের ফেলে যাওয়া বানার বেড় থেকে মাছ ধরছে জঙ্গুরুল্লার কোলশরিকেরা। চরের ওপরে দাঁড়িয়ে আছে কয়েক সারি ভাওর ঘর–কোলশরিক আর বর্গাদারদের থাকবার ঝুপড়ি।

পীরবাবাকে চর পাঙাশিয়ায় কবর দেয়া হবে। মাজার হবে তার।

আরশেদ মোল্লা নূরপুর আহসান ফকিরের মাজারে গিয়েছিল কয়েকবার। প্রতি বছর মাঘ মাসে ‘উরস’ হয় সেখানে। সেই দৃশ্য এবার স্পষ্ট হয়ে ওঠে তার মনের চোখে।

বিরাট মেলা। হাজার হাজার মানুষের ভিড়। দূর-দূরান্তরের মানুষের সমাগম। দোকানপাট, ম্যাজিক, সার্কাস, ঘোড়াচক্কর, রাধাচক্কর। বিপুল বিশাল ডেগের মধ্যে রাতদিন রান্না হচ্ছে। পাশেই চালাঘরের নিচে কয়েকটা ডিঙি। রান্না করা ডাল-ভাত-তরকারি ঢেলে দিচ্ছে ডিঙির ডওরায়। মানুষ তুলে নিয়ে খেয়ে যাচ্ছে যার যার ইচ্ছে মতো।

ফকিরের রওজা। লাল মখমলের গেলাপে ঢাকা কবর। রওজার চারপাশে কয়েকটা তালা দেয়া বাক্স। দর্শনার্থীরা বাক্সের ওপরের কাটা ছিদ্রপথে ফেলছে টাকা, আধুলি, সিকি।

এ ছাড়া আরো টাকা আমদানি হয় নিশ্চয়। দোকানপাটের খাজনা আদায় হয়। চাল, ডাল, নগদ টাকা আসে মুরিদানের কাছ থেকে। মানতের গরু, খাসি, মুরগি আসে।

জাহাজের সিটি যবনিকা টেনে দেয় তার মনে-জাত চলচ্ছবির।

দুটো গাধাবোট টেনে নিয়ে ভাটির দিকে যাচ্ছে একটা লঞ্চ। কিছুক্ষণ পরেই গুড়গুড় আওয়াজ শোনা যায়। শব্দ ক্রমেই বাড়ছে। পশ্চিম থেকে উড়ে আসছে সাতটা উড়োজাহাজ। পুব দিকে যাচ্ছে।

বাড়ির কাছে এসে পড়েছে আরশেদ মোল্লা ডিঙিটাকে বাঁ দিকে ঘুরিয়ে সে নলতার খাড়ির মধ্যে ঢোকে।

ভাটির টান খুব জোর। সে শুধু হাল ধরে থাকে। অল্পক্ষণের মধ্যেই সে বাড়ির ঘাটে পৌঁছে যায়।

ঘরে গিয়েই সে সোনাইবিবিকে বলে, ‘রূপজানরে বাড়ি রাখন ঠিক না। ষণ্ডাডা জেলেরতন আইলে কোন কাণ্ড কইর‍্যা ফালায় ঠিক নাই। ওরে জঙ্গুরুল্লার বাড়ি পাড়াইয়া দিতে চাই। হেইখা থাকব কয়ডা মাস।’

‘ওনারে কি শয়তানে পাইছে নি? এমুন জুয়ান মাইয়াডা মাইনষের বাড়ি রাখনের কথা ক্যামনে কইতে পারল? আর জঙ্গুরুল্লার স্বভাবও হুনছি ভাল না। পোলা জহিরডাও হুনছি লুচ্চা।’

আরশেদ মোল্লা চুপ করে থাকে।

সোনাইবিবি আবার বলে, ‘এমুন কথা আর কোনদিন যেন মোখ দিয়া বাইর না করে।’