মহান আল্লাহ রব্বুল ‘আলামীন যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিশুদ্ধ সুন্নাহ উপস্থাপন করার তাওফীক যে কয়জন বান্দাকে দিয়েছেন তাঁদের মধ্যে হাফিজ যাহাবী (রহ.) ও হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহ.)-এর পর আল্লামা নাসিরুদ্দীন (রহ.)-এর নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে। তাঁর পুরো নাম আবূ ‘আবদুর রহমান মুহাম্মদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহ.)।

জন্ম: যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহ.) ১৯১৪ ঈসায়ী সনে পূর্ব ইউরোপের একটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশ আলবেনিয়ার রাজধানী কুদরাহতে জন্মগ্রহণ করেন। আলবেনিয়ায় জন্মগ্রহণ করার কারণে তিনি ‘আলবানী’ নামে অভিহিত হন। তাঁর পিতার নাম নূহ নাতাজী আলবানী।

শিক্ষা-দীক্ষা: দামিস্কের একটি মাদ্‌রাসা থেকে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। অতঃপর তাঁর পিতার বন্ধু শায়খ সায়ীদ আল-বুরহানীর নিকট ফিক্‌হের বিভিন্ন গ্রন্থ এবং আরবী সাহিত্য ও বালাগাত প্রভৃতি গ্রন্থ অধ্যয়ন করেন। একবার তিনি মিশরের আল্লামা রশীদ রিয়া সম্পাদিত “আল-মানার”-এর একটি সংখ্যায় ইমাম গাযযালী (রহ.)-এর প্রবন্ধ পাঠ করেন। এই প্রবন্ধই তাঁকে হাদীস চর্চা ও রিজাল শাস্ত্রের গবেষণায় পিপাসার্ত করে তুলে। পরবর্তীতে তিনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন যে, সাধারণ মুসলিমদের সামনে আল্লাহর নাবী ﷺ-এর বিশুদ্ধ সুন্নাহ উপস্থাপন করবেন। আল্লাহ তাঁর এই ইচ্ছাকে বাস্তবরূপ দান করার তাওফীক দান করেছেন এবং তার জন্য জ্ঞানের ভাণ্ডারকে উন্মুক্ত করে দিয়েছেন।

কর্মজীবন: আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহ.) নিজেই বলেছেন—‘আল্লাহ আমাকে অসংখ্য সম্পদ দান করেছেন। তার মধ্যে একটি হলো, আমার পিতা আমাকে ঘড়ি মেরামত করার কাজ শিখানো।’ যৌবনের প্রথম দিকে তিনি ঘড়ি মেরামত করে জীবিকা অর্জন করেন। কিন্তু পাশাপাশি অধিকাংশ সময় তিনি হাদীস অধ্যয়ন ও গবেষণা এবং বই লেখার কাজে ব্যয় করতেন। তিনি মদীনাহ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন বছর অধ্যাপনায় নিয়োজিত ছিলেন। কর্ম জীবনের অধিকাংশ সময়েই তিনি গবেষণা, লেখালেখি ও বক্তৃতা দানে ব্যস্ত থাকেন। হাজার বছর ধরে হাদীস শাস্ত্রের যে খিদমাত হয়নি বিংশ শতাব্দীতে তিনি তা করার তাওফীক লাভ করেন।

রচনাবলী: আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহ.)-এর প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় ৩০০। তার মধ্যে কয়েকটি হলো, ১. সিলসিলাতুল আহাদীস যঈফাহ্ ওয়াল মাউযূ’আহ; ২. সিলসিলাতুল আহাদীস সহীহাহ; ৩. সহীহ ও যঈফ সুনান আবূ দাউদ; ৪. সহীহ ও যঈফ তিরমিযী; ৫. সহীহ ও যঈফ সুনান নাসাঈ; ৬. সহীহ ও যঈফ সুনান ইবনু মাজাহ; ৭. সহীহ ও যঈফ আদাবুল মুফরাদ; ৮. তাহ্‌ক়ীক় মিশকাতুল মাসাবীহ; ৯. সিফাতু সলাতিন্ নাবী ﷺ; ১০. সলাতুত তারাবীহ; ১১. হাজ্জ, উমরাহ ও যিয়ারাহ; ১২. কিস্‌সাতু মাসীহিদ্‌ দাজ্জাল ইত্যাদি।

আলবানী সম্পর্কে মতামত: সাউদী আরবের প্রাক্তন গ্রান্ড মুফতি শায়খ ‘আবদুল ‘আযীয বিন বায্ (রহ.) তাঁকে যুগ মুহাদ্দিস নামে অভিহিত করেছেন। ইসলামী যুবকদের বিশ্ব সংগঠন-আন্‌নাদওয়াতুল ‘আ-লামিয়্যাহ লিশ্‌শাবা-বিল ইসলামীর জেনারেল সেক্রেটারী ড. মা-নি’ ইবনু হাম্মাদ আল্‌জুহানী বলেন, আল্লামা আলবানী সম্পর্কে বলা যায় যে, বর্তমান যুগে আকাশের নীচে তাঁর চেয়ে বড় হাদীস বিশারদ আর কেউ নেই। ড. সুহায়িব হাসান বলেন, আলবানী বিংশ শতকের হাদীস শাস্ত্রের মু’জিযাহ (অলৌকিক ঘটনা)।

মৃত্য: ১৯৯৯ ঈসায়ী সনের ২ অক্টোবর আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহ.) জর্দানের রাজধানী আম্মানে ৮৬ বছর বয়সে ইন্‌তিকাল করেন। হাদীস শাস্ত্রে তাঁর অবদানের জন্য বিশ্ববাসী তাঁকে স্মরণ করে রাখবে। আল্লাহ তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুন—আমীন।