মাসীহ দাজ্জালের কিসসা, ঈসা (আ.)-এর অবতরণ এবং দাজ্জালকে হত্যা করা সম্পর্কে আবূ উমামাহ্ (রাযি.) বর্ণিত হাদীসকে ঘিরে এ সম্পর্কে অন্যান্য সাহাবীগণের (রাযি.) সূত্রে যা কিছু সহীহভাবে বর্ণিত হয়েছে:

  1. হে লোক সকল! আল্লাহ যেদিন থেকে আদম সন্তানাদি সৃষ্টি করেছেন তখন থেকে যমীনের উপর দাজ্জালের ফিতনার চেয়ে ভয়ঙ্কর ফিতনা আর নেই [এবং ক়িয়ামাত পর্যন্ত হবেও না। যে ব্যক্তি পূর্ববর্তী ফিতনাসমূহ থেকে নাজাত পাবে সে দাজ্জালের ফিতনা থেকেও নাজাত পাবে। [আর সে মুসলিমদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না]।
  2. নিশ্চয়ই আল্লাহ যত নাবী পাঠিয়েছেন তারা প্রত্যেকেই স্বীয় উম্মাতকে [কানা] দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। আমিও তোমাদেরকে তার ব্যাপারে সাবধান করছি।
  3. আমি নাবীদের মধ্যে সর্বশেষ নাবী এবং তোমরা উম্মাতসমূহের মধ্যে সর্বশেষ উম্মাত।
  4. সে (দাজ্জাল) অবশ্যই তোমাদের মাঝে প্রকাশ পাবে। এটা অবশ্যই সত্য, এবং তা অতি নিকটেই, আর যা কিছুই ঘটবে তা অতি নিকটে। [দাজ্জাল সর্বপ্রথম ক্রোধের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করবে]। [সে বের হবে না যতক্ষণ না অবস্থা এরূপ হয় যে, মীরাস বণ্টন করা হবে না এবং গণীমাত পেয়ে কোন আনন্দ প্রকাশ করা হবে না]।
  5. আমি তোমাদের মাঝে বর্তমান থাকাবস্থায় যদি সে বের হয়, তাহলে আমি প্রত্যেক মুসলিমের পক্ষে যুক্তি উত্থাপন করবো (তাকে দোষারোপ করব)। আর যদি সে আমার পরে বের হয়, তাহলে প্রত্যেককে নিজের পক্ষে দলীল পেশ করতে হবে। তখন মহান আল্লাহ প্রত্যেক মুসলিমের জন্য আমার খলীফাহ স্বরূপ হবেন (অর্থাৎ তিনি মুসলিমদের দাজ্জাল থেকে রক্ষা করবেন)। উম্মু সালামাহ্ হাদীসে রয়েছে: সে যদি আমার মৃত্যুর পরে বের হয় তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে নেককার লোকদের দ্বারা রক্ষা করবেন।
  6. নিশ্চয়ই দাজ্জাল বের হবে [পূর্ব দেশ থেকে] যাকে ‘খুরাসান’ বলা হয়। [আসবাহানের ইয়াহুদীদের মাঝে] তাদের চেহারা হবে ভাঁজযুক্ত। (দাজ্জাল আত্নপ্রকাশ করবে) সিরিয়া ও ইরাকের ‘খাল্লা’ নামক স্থান হতে। আর সে তার ডান ও বামে সর্বত্র বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। হে আল্লাহর বান্দারা! তোমরা ঈমানের উপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকবে (তিনবার)।
  7. কেননা, আমি তোমাদের কাছে তার এমন অবস্থা বর্ণনা করব, যা আমার পূর্বে কোন নাবী স্বীয় উম্মাতের কাছে বর্ণনা করেননি। (“উবাদাহ্ হাদীসের রয়েছে : আমি তোমাদের কাছে দাজ্জাল সম্পর্কে অনেক হাদীস বর্ণনা করেছি। এতদসত্ত্বেও আমার ভয় হয়, তোমরা তাকে চিনতে পারবে না)।
  8. প্রথমে সে বলবে, আমি নাবী এবং আমার পরে কোন নাবী নেই।
  9. অতঃপর সে দাবী করে বলবে, আমি তোমাদের রব! অথচ তোমরা তোমাদের রব্বকে মৃত্যুর পূর্বে দেখবে না।
  10. আর সে হবে কানা। [তার বাম চোখ হবে মিশানো] [যার উপর মোটা চামড়ায় ঢাকা হবে]। [তা যেন উজ্জ্বল নক্ষত্র] [তার ডান চোখ যেন জ্যোতিহীন, আঙ্গুর সদৃশ গোল]। যা উপরে উঠে থাকবে না এবং নীচে থাকবে না।] [সে কোঁকড়ানো চুল বিশিষ্ট হবে]। [সাবধান! দাজ্জালের বিষয় তোমাদের কাছে গোপন নয়। আর তোমাদের কাছে গোপন নয় যে, তোমাদের রব্ব কানা নন। দাজ্জালের বিষয় তোমাদের কাছে গোপন নয়। আর তোমাদের কাছে গোপন নয় যে, তোমাদের রব্ব কানা নন।] [তিনবার]। [তোমরা মৃত্যুর আগে তোমাদের রব্বকে দেখবে না]।
  11. সে পৃথিবীতে বিচরণ করবে। আর আকাশ ও যমীন তো আল্লাহ্ই।
  12. [সে হবে বেঁটে, তার পদক্ষেপ হবে দীর্ঘ, মাথার চুল হবে কুঞ্চিত] [সে হবে খুঁতযুক্ত]।
  13. সে হবে কোঁকড়ানো চুল বিশিষ্ট লোক। [কুঞ্চিত চুল]।
  14. তার দুই চোখের মাঝে (কপালে) লেখা থাকবে ‘কাফির’। এই লেখা পড়তে পারবে [যারা তার কার্যকলাপ অপছন্দ করবে] অথবা প্ৰত্যেক মু‘মিন ব্যক্তিই পড়তে পারবে, চাই সে অক্ষর হোক বা নিরক্ষর।
  15. তার অন্যতম ফিতনা হলো, তার সাথে থাকবে জান্নাত ও জাহান্নাম [নদী ও পানি] এবং [রুটির পাহাড়]। [সে আত্মপ্রকাশ করবে সাথে জান্নাত ও জাহান্নাম সদৃশ বস্তু নিয়ে]। ‘তার জাহান্নাম হলো জান্নাত আর জান্নাত হলো জাহান্নাম।’ [মুগীরাহ ইবনু শু‘বাহকে দাজ্জাল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, আমি বললাম, লোকেরা বলাবলি করছে যে, তার সাথে নাকি রুটি ও গোশতের পাহাড় এবং পানির নহর থাকবে? তিনি বলেন: আল্লাহর পক্ষে তো তা এর চাইতে অধিক সহজ] (আরেক হাদীসে এসেছে: [দাজ্জালের সাথে থাকবে দুটি প্রবাহিত নহর। তার একটি বাহ্যিক চোখে দেখা যাবে সাদা পানি আর দ্বিতীয়টি বাহ্যিক চোখে দেখা যাবে জ্বলন্ত আগুন]। [তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি ঐ যুগ পাবে, তার উচিত হবে সে যেন সেটা থেকেই পান করে যেটাকে আগুন মনে করবে]। এবং চক্ষু বন্ধ করবে অতঃপর মাথা নত করে পান করবে। কেননা তা হবে প্রকৃতপক্ষে পানি [শীতল মিঠা পানি] [উত্তম পানি] [কাজেই সাবধান! তোমরা (ধোঁকায় পড়ে) নিজেদের ধবংস করো না। (অন্য বর্ণনায় রয়েছে: যে ব্যক্তি তার নহরে (জান্নাতে) প্রবেশ করবে তার সওয়াব বিনষ্ট হবে এবং পাপ সাব্যস্ত হবে। আর যে ব্যক্তি তার জাহান্নামে প্রবেশ করবে তার জন্য সওয়াব সাব্যস্ত হবে এবং পাপ মোচন হবে)।
  16. যে ব্যক্তি তার আগুনের দ্বারা পরিক্ষিত হবে, সে যেন আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করে এবং সূরাহ কাহ্‌ফ-এর প্রথমাংশ তিলাওয়াত করে। [কেননা তা পাঠ করলে তোমরা তার ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকবে।]
  17. দাজ্জালের অন্যতম ফিতনা হচ্ছে এই, সে জনৈক বেদুইনকে বলবে: আমি তোমার জন্য তোমার পিতা-মাতাকে জীবিত করে দিতে পারলে তুমি কি সাক্ষ্য দিবে যে, নিশ্চয় আমি তোমার রব্ব! তখন সে বলবে: হ্যাঁ, তখন তার জন্য দু’টি শয়তান তার পিতা ও মাতার আকৃতি ধারণ করবে। তারা বলবে: হে বৎস! তার আনুগত্য কর। নিশ্চয় সে তোমার প্রতিপালক।
  18. দাজ্জালের আরেকটি ফিতনা হল, সে এক ব্যক্তিকে পরাভূত করে তাকে হত্যা করবে। এমনকি তাকে করাত দিয়ে দুই টুকরা করে নিক্ষেপ করবে।
  19. দাজ্জালের আরেকটি ফিতনা হলো, সে একটি গোত্রের পাশ দিয়ে অতিক্রম করবে, [তাদেরকে সে আহবান করবে] কিন্তু তারা তাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করবে। [সে তাদের থেকে সরে যাবে] ফলে তাদের গৃহপালিত পশু ধ্বংস হয়ে যাবে।
  20. দাজ্জালের আরেকটি ফিতনা হলো, সে অন্য আরেকটি গোত্রের পাশ দিয়ে যাবে। [সে তাদেরকে আহ্বান করবে] তখন তারা তাকে সত্য বলে মেনে নিবে [তার ডাকে সাড়া দিবে]। ফলে সে আকাশকে বৃষ্টি বর্ষণের নির্দেশ দিবে এবং আকাশ বৃষ্টি বর্ষণ করবে। অতঃপর সে যমীনকে শস্য উৎপাদনের নির্দেশ দিলে যমীন শস্য উৎপাদন করবে। যমীন ফসলাদি এমনভাবে উৎপন্ন করবে যে, তাদের পশুগুলো সেদিন সন্ধ্যায় খুব মোটাতাজা এবং পেট ভর্তি করে স্তন ফুলিয়ে প্রত্যাবর্তন করবে।
  21. দাজ্জাল একটি বিরান (পুরাতন) স্থানে গিয়ে তাকে আদেশ করবে, তোমার গুপ্ত ধনরাশি বের করে দাও। তখন এর ধনরাশি এভাবে তার কাছে এসে পুঞ্জীভূত হবে যেরূপ মৌমাছির ঝাঁক দলে দলে এসে এক জায়গায় একত্রিত হয়।
  22. সে বের হবে [মানুষের মতভেদ ও দলে দলে বিভক্ত হওয়ার যুগে]। [তখন মানুষ পরষ্পরের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে, ধর্মকে কিছুই মনে করবে না, এবং আপোষে খারাপ আচরণ করবে। অতঃপর (দাজ্জাল) সকল নদীর ঘাটে আগমন করবে। যমীন তার জন্য এমনভাবে সংকোচন করে দেয়া হবে তা যেন মেষের একটি চামড়া]।
  23. সে বের হবে না যতক্ষণ এ নিদর্শন প্রকাশ না পাবে যে, রোমকরা (সিরিয়ার) আ‘মাক় ও দায়িক় নামক নহরের কাছে অবতীর্ণ হবে। [একদল দুশমন ইসলামপন্থীদের উদ্দেশে একত্রিত হবে এবং একদল ইসলামপন্থীও তাদের উদ্দেশে একত্রিত হবে] অতঃপর মাদীনাহ্ থেকে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনী তাদের মোকাবিলার উদ্দেশে রওয়ানা হবে। সেখানে পৌঁছে যখন তাঁরা সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়াবে, তখন রোমকরা বলবে: আমাদেরকে এবং আমাদের মধ্যকার যারা বন্দী হয়েছে উভয়কে মিলিত হওয়ার সুযোগ দাও, আমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব। তখন মুসলিমরা বলবে: মনে রেখ, আল্লাহর শপথ! আমরা তোমাদের বন্দীদেরকে ছাড়ব না বা যারা তাদেরকে বন্দী করেছে তাদের সাথে তোমাদেরকে মিলিত হতে দিব না। অতঃপর মুসলিমদের সাথে তাদের তুমুল লড়াই হবে। ঐ যুদ্ধে (উভয় পক্ষের) প্রতিরোধ ব্যবস্থা খুবই প্রবল হবে। মুসলিম বাহিনী একদল মুজাহিদকে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত রাখবে, যারা বিজয়ী না হওয়ার পূর্বে কিছুতেই ফিরবে না। অতঃপর তারা সারাদিন যুদ্ধে লিপ্ত থাকবে যে পর্যন্ত রাত তাদের মাঝে অন্তরায় সৃষ্টি না করে। রাত হলে এই দল ঐ দল সকলেই এভাবে ফিরে আসবে যে, কেউই বিজয়ী হতে পারেনি। এদিকে মৃত্যুর জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ দলটি শেষ হয়ে যাবে। অতঃপর মুসলিমরা মৃত্যুর জন্য আরেকটি দল প্রস্তুত করবে যারা বিজয়ী না হয়ে ফিরবে না। এরাও রাত এসে অন্তরায় সৃষ্টি না করা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। অবশেষে রাত এসে গেলে এই দল ঐ দল সবাই অবিজয়ী হয়ে ফিরে আসবে। আর প্রতিজ্ঞাবদ্ধ দলটিও শেষ হয়ে যাবে। অতঃপর মুসলিমরা আরেকটি দলকে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত করবে যারা বিজয়ী না হয়ে ফিরে আসবে না। এরাও রাত এসে অন্তরায় সৃষ্টি না করা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। অবশেষে রাত এসে গেলে এই দল ঐ দল সবাই অবিজয়ী হয়ে ফিরে আসবে। আর প্রতিজ্ঞাবদ্ধ দলটিও শেষ হয়ে যাবে। যখন চতুর্থ দিন আসবে তখন অবশিষ্ট মুসলিম বাহিনী শত্রুবাহিনীর দিকে অগ্রসর হবে]। যুদ্ধে মুজাহিদদের এক তৃতীয়াংশ পরাজয় বরণ করবে, যাদের তাওবাহ আল্লাহ কবূল করবেন না। আর এক তৃতীয়াংশ শাহাদাত বরণ করবে, [এরা] আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম শহীদ গণ্য হবে। আর এক তৃতীয়াংশ জয়ী হবে যারা কখনো পর্যুদস্ত হবে না। [অতঃপর এদেরকেও আল্লাহ পরাজয়ের সম্মুখীন করবেন অথবা চরম অবস্থায় সম্মুখীন করবেন অথবা ধ্বংসের মুখোমুখি পৌঁছাবেন। যাতে এরাও এমন প্রাণপণে যুদ্ধ করবে যার দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া যায় না বা খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকি পাখি যখন তাদের আশেপাশে উড়ে যাবে, তখন তাদেরকে অতিক্রম করতে সক্ষম হবে না। অতিক্রম করতে গেলে মরে মাটিতে পড়ে যাবে। যুদ্ধশেষে কোন পিতার সন্তানদেরকে যাদের সংখ্যা একশো গণনা করা হবে কিন্তু মাত্র একজন ব্যতীত তাদের আর কাউকে জীবিত পাওয়া যাবে না। তাহলে কিসের গণীমাতে আনন্দ হবে? বা কোন মীরাস বণ্টন করা হবে? কাদের মাঝে বণ্টন করা হবে?]। অবশেষে এরাই কুসতুনতুনিয়া জয় করবে। বিজয় লাভের পর তারা তাদের তরবারিসমূহ যাইতূন গাছের সাথে ঝুলিয়ে রেখে গণীমাত বণ্টন করতে থাকবে। এমন সময় হঠাৎ তাদের মধ্যে শয়তান চিৎকার দিয়ে বলে উঠবে: “শুনো, মাসীহ (দাজ্জাল) তোমাদের পরিবার-পরিজনের মধ্যে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত হয়েছে।” এ সংবাদ শুনামাত্র সবাই [হয়রান পেরেশান হয়ে তাদের হাতে যা কিছু আছে, সব পরিত্যাগ করে] কুসতুনতুনিয়া থেকে বেরিয়ে আসবে। এসে দেখবে, কিছুই হয়নি, একটা গুজব মাত্র। [তাদের আগে আগে দশ জন অশ্বারোহী পাঠিয়ে দেয়া হবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ঐসব অশ্বারোহীর নাম ও তাদের পিতার নাম, এমনকি তাদের ঘোড়ার রঙ পর্যন্ত আমার জানা আছে। তারা তৎকালীন পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে উত্তম অশ্বারোহী বা সেরা অশ্বারোহীদের অন্যতম হবে]। [অতঃপর তারা সিরিয়ায় পৌঁছলে শয়তান (দাজ্জাল) আত্নপ্রকাশ করবে]।
  24. সমগ্র পৃথিবীর তার জন্য সংকোচন করে দেয়া হবে এবং সে তার উপর বিজয়ী হবে। তবে [চারটি মাসজিদ ব্যতীত : মাসজিদুল হারাম, মাদীনাহ্‌র মাসজিদ, তূর এবং মাসজিদে আকসা]।
  25. দাজ্জালের সময়কাল হবে চল্লিশ দিন। তবে প্রথম দিন হবে এক বছরের সমান, দ্বিতীয় দিন এক মাসের সমান, তৃতীয় দিন এক সপ্তাহের সমান এবং বাকী দিনগুলো তোমাদের এই দিনগুলোর সমান হবে। সাহাবীগণ বললেন, যে দিনটি এক বছরের সমান হবে তাতে কি বর্তমান এক দিনের সলাত আমাদের জন্য যথেষ্ট হবে? তিনি বললেন: না, তোমরা অনুমান করে সময় নির্ধারণ করবে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, যমীনে তার গতি কেমন হবে? তিনি বললেন: মেঘের গতি যাকে প্রবল বাতাস পিছন থেকে হাঁকিয়ে নিয়ে যায়।
  26. দাজ্জালের আবির্ভাবের তিন বছর পূর্বে দুর্ভিক্ষ দেখা দিবে। তখন মানুষ চরমভাবে ক্ষুধায় কষ্ট পাবে। প্রথম বছর মহান আল্লাহ আকাশকে তিন ভাগের একভাগ বৃষ্টি আটকে রাখার নির্দেশ দিবেন। আর যমীনকে নির্দেশ দিবেন, ফলে সে তিন ভাগের একভাগ ফসল উৎপন্ন করবে। অতঃপর তিনি আসমানকে দ্বিতীয় বছর একই নিদের্শ দিবেন। তখন তা দুই তৃতীয়াংশ বৃষ্টি বন্ধ রাখবে এবং যমীনকে নির্দেশ দিবেন, ফলে যমীন দুই তৃতীয়াংশ ফসল কম উৎপন্ন করবে। অতঃপর মহান আল্লাহ তৃতীয় বছর একই নির্দেশ দিবেন, তখন সে সম্পূর্ণরূপে বৃষ্টিপাত বন্ধ করে দিবে। ফলে যমীনে কোন ঘাস জন্মাবে না, কোন সবজি অবশিষ্ট থাকবে না। বরং তা ধ্বংস হয়ে যাবে। তবে আল্লাহ যা চাইবেন।
  27. সে মাক্কাহ্ ও মাদীনাহ্‌য় আসা মাত্রই এর প্রত্যেক প্রবেশ পথে খোলা তরবারি হাতে ফিরিশতাদের দেখতে পাবে।
  28. এমন কোন শহর বাদ থাকবে না যেখানে মাসীহ (দাজ্জালের) আতঙ্ক না ছড়াবে। তবে মাদীনাহ্ ব্যতীত। [সেদিন মাদীনার সাতটি দরজা থাকবে] এর প্রত্যেকটি প্রবেশ পথে দুইজন করে ফিরিশতা নিযুক্ত থাকবেন যারা মাসীহ দাজ্জালের ভয় থেকে একে নিরাপদ রাখবে।”
  29. এমনকি সে তৃণলতা শূণ্য জায়গা [সাইহানাতুল জুরুফ] নামক স্থানে এসে পৌঁছবে। [যা উহুদ পাহাড়ের পিছনে অবস্থিত]। [সে সেখানে তার আসন গাড়বে]।
  30. এরূপ অবস্থায় মাদীনাহ্ তার অধিবাসীদের নিয়ে তিনবার প্রকম্পিত হবে। তখন প্রতিটি মুনাফিক পুরুষ ও নারী মাদীনাহ্ থেকে বেরিয়ে দাজ্জালের কাছে চলে যাবে। অতঃপর মাদীনাহ্ থেকে মন্দ (পাপী লোকেরা) দূরীভূত হবে যেমন হাফর লোহার ময়লা দূর করে থাকে। আর এটাই হলে নাজাত দিবস। [যারা বেরিয়ে দাজ্জালের কাছে যাবে তাদের অধিকাংশ হবে মহিলা]।
  31. দাজ্জাল বের হলে একজন (বিশিষ্ট) ঈমানদার ব্যক্তি তার দিকে রওয়ানা হবে। সংবাদ পেয়ে দাজ্জালের পক্ষ থেকে তার অস্ত্রধারী ব্যক্তিরা গিয়ে তাঁর সাথে মিলিত হবে। তারা তাকে জিজ্ঞেস করবে, তুমি কোথায় যাওয়ার ইচ্ছা করেছ? তিনি বলবেন, ঐ ব্যক্তির কাছে যে আবির্ভূত হয়েছে। তখন তারা বলবে, তুমি কি প্রভূর প্রতি ঈমান আনবে না? তিনি বলবেন, আমাদের প্রভূর ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। এরপর তারা পরস্পরে বলবে, একে হত্যা কর। তারপর একে অপরকে বলবে, তোমাদের প্রভূ নিষেধ করেছেন যে, তোমরা তাকে না দেখিয়ে কাউকে হত্যা করবে না। অতঃপর তারা তাঁকে দাজ্জালের নিকট নিয়ে যাবে। যখন ঈমানদার ব্যক্তি দাজ্জালকে দেখতে পাবেন তখন বলবেন, হে জনগণ! [আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি] এই তো সেই দাজ্জাল যার কথা রাসূলুল্লাহ (সা.) উল্লেখ করেছেন (অন্য বর্ণনায় রয়েছে: আলোচনা করেছেন)। এরপর দাজ্জালের নির্দেশে তাঁর চেহারা ক্ষতবিক্ষত করা হবে। বলা হবে, একে ধরে চেহারা ক্ষতবিক্ষত করে দাও। অতঃপর তাঁর পেট ও পিঠকে পিটিয়ে বিছিয়ে ফেলা হবে। তারপর দাজ্জাল জিজ্ঞেস করবে, আমার প্রতি ঈমান আনবে না? তিনি বলবেন, তুই তো মিথ্যাবাদী। মাসীহ দাজ্জাল বলবে, তোমাদের কি ধারণা, আমি যদি একে হত্যা করার পর জীবিত করি তাহলে কি তোমরা আমার কাজের ব্যাপারে সন্দিহান হবে? তখন তারা বলবে, না]। তখন তাঁকে কুড়াল দিয়ে খণ্ডবিখণ্ড করে ফেলার জন্য আদেশ করা হবে। তার আদেশে প্রথমে তাকে দুই পা আলগা করে খণ্ড করা হবে [তাকে হত্যা করা হবে]। (নাওয়াস বর্ণিত হাদীসে রয়েছে: তাকে তলোয়ার দিয়ে জোরে আঘাত করবে এবং তাকে দুই টুকরো করে ফেলবে। প্রত্যেকটি টুকরো দুই ধনুকের ব্যবধানে চলে যাবে)। তিনি বলেন, অতঃপর দাজ্জাল খণ্ডিত টুকরাদ্বয়ের মাঝখানে এসে তাকে লক্ষ্য করে বলবে, উঠ! তৎক্ষণাৎ তিনি উঠে দাঁড়াবেন। তিনি বলেন : [অতঃপর তাকে ডাকবে। ডাকা মাত্র সে জীবিত হয়ে তার কাছে আসবে। তখন তার চেহারা হবে উজ্জ্বল, চমকপ্রদ ও হাস্যময়] অতঃপর দাজ্জাল তাকে আবার জিজ্ঞেস করবে, এবার আমার প্রতি ঈমান আনবে কি? তখন তিনি বলবেন, [আল্লাহর শপথ!] আমি তো তোমার সম্পর্কে আরো অধিক অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। অতঃপর তিনি উপস্থিত জনতাকে লক্ষ্য করে বলবেন, হে লোক সকল! মনে রেখ, দাজ্জাল আমার পরে আর কোন মানুষের উপর কর্তৃত্ব চালাতে পারবে না। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর দাজ্জাল তাঁকে জবাই করার জন্য ধরবে এবং গলা ও ঘারে তামা জড়িয়ে দিতে চেষ্টা করবে। কিন্তু এ পর্যায়ে পৌঁছতে সক্ষম হবে না। অতঃপর তাঁর হাত পা ধরে তাঁকে নিক্ষেপ করবে। মানুষ ধারণা করবে বুঝি আগুনে ফেলে দিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তাঁকে জান্নাতে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “আল্লাহ রব্বুল ‘আলামীনের নিকট এই ব্যক্তি বড় শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করবেন।”
  32. অতঃপর ফিরিশতারা দাজ্জালের মুখকে সিরিয়ার দিকে ঘুরিয়ে দিবেন। [অতঃপর সে ‘ইলিয়া’ পাহাড়ে আসবে। সেখানে এসে সে একদল মুসলিমকে অবরোধ করে রাখবে]। মুসলিমরা তখন কঠিন অবস্থার সম্মুখিন হবে]। [মানুষ দাজ্জাল থেকে পলায়ন করে পাহাড়ে আশ্রয় নিবে। উম্মু শুরাইক বিনতু আবুল আকর বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! তখন আরবগণ (মাক্কাহ্ ও মাদীনাবাসী) কোথায় থাকবে? তিনি বললেন: তাদের সংখ্যা খুবই কম হবে]।
  33. তাদের ইমাম হবেন একজন সৎ ব্যক্তি। [রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: মাহদী আমাদের আহলে বাইতের মধ্য থেকে হবেন [ফাত়িমার বংশধর থেকে]। আল্লাহ তাঁকে এক রাতে খিলাফাতের যোগ্য করে দিবেন]। [তার নাম হবে আমার নামের মত এবং তার পিতার নাম হবে আমার পিতার নামের মত] [তার ললাট প্রশস্ত ও নাক উঁচু হবে]। [তিনি পৃথিবীকে ন্যায়-ইনসাফ দ্বারা এরূপ পরিপূর্ণ করবেন, যেরূপ তা যুলুম ও পাপাচারে পরিপূর্ণ ছিল] [তিনি সাত বছর রাজত্ব করবেন]। নাবী (সা.) বলেছেন: (আমার উম্মাতের দু’টি দলকে আল্লাহ জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দিবেন: একদল যারা হিন্দুস্থানের জিহাদে অংশ গ্রহণ করবে এবং অপর দলটি হলো যারা ঈসা ইবনু মারইয়ামের সঙ্গী হয়ে দাজ্জালের বিরুদ্ধে লড়বে) এবং তিনি (সা.) বলেন: তোমাদের কেউ এদের দেখা পেলে তাকে আমার পক্ষ থেকে সালাম জানাবে)।
  34. তাদের ইমাম যখন এগিয়ে গিয়ে তাদেরকে নিয়ে ফাজরের সলাত আদায় করতে থাকবেন এমন সময় ঈসা ইবনু মারইয়াম (আকাশ থেকে) ভোর বেলায় অবতরণ করবেন। তিনি দামিস্কের পূর্বপ্রান্তে অবস্থিত সানা মিনারায় অবতরণ করবেন। এ সময় তিনি ওয়াস ও জাফরান রঙের দুটি বস্ত্র পরিহিত অবস্থায় থাকবেন। দু’জন ফিরিশতার পাখায় দু’হাত রেখে অবতরণ করবেন। যখন তিনি মাথা নীচু করবেন হালকা বৃষ্টি হবে আর যখন মাথা উঁচু করবেন, তখন দেহ থেকে মুক্তার বিন্দুর ন্যায় ফোটা গড়িয়ে পড়বে। তাঁর নিশ্বাসের বাতাস পেলে একটি কাফিরও বাঁচতে পারবে না, সব মরে যাবে। এবং তাঁর শ্বাস তাঁর শেষ দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।
  35. [আমার এবং তার (ঈসার) মাঝে কোন নাবী আসবে না। অবশ্য তিনি (আকাশ থেকে) অবতরণ করবেন। তোমরা যখন তাঁকে দেখবে, তখন তাঁকে এভাবে চিনবে যে, ‘তিনি হবেন মধ্যম আকৃতির, তার দেহের রঙ হবে লাল-সাদা মিশ্রিত, তার পরিধানের কাপড় হবে হালকা হলুদ রঙ বিশিষ্ট দু’খানি চাঁদর এবং তার মাথার চুল ভিজে না থাকা সত্ত্বেও সেখান থেকে ফোটায় ফোটায় পানি ঝরতে থাকবে। তিনি ইসলামের জন্য লোকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করবেন, ক্রশ ভেঙ্গে ফেলবেন, শুকর নিধন করবেন এবং জিযিয়া কর রহিত করবেন। মহান আল্লাহ তাঁর সময়ে ইসলাম ছাড়া অন্য সব মতবাদকে ধ্বংস করে দিবেন)। এবং তিনি বলেন: (তখন কেমন হবে যখন ঈসা ইবনু মারইয়াম (আকাশ থেকে) তোমাদের মাঝে অবতরণ করবেন, আর ইমাম হবেন তোমাদের থেকে। (আরেক বর্ণনায় রয়েছে: তোমাদের থেকেই তোমাদের ইমাম হবে)। ইবনু আবূ যি’ব (এক বর্ণনায়) বলেন: “তোমাদের থেকেই তোমাদের ইমাম হবে।”- এর অর্থ সম্পর্কে তুমি জানো কি? আমি বললাম: আমাকে অবহিত করুন। তিনি বলেন: তোমাদের মহান পরাক্রমশালী বরকতময় আল্লাহর কিতাব ও তোমাদের নাবী (সা.)-এর সুন্নাতের অনুসারী হয়েই তিনি তোমাদের ইমাম হবেন]।
  36. ঈসা (আ.)-কে দেখে উক্ত ইমাম পিছনে সরে যাবেন যেন ঈসা ইবনু মারইয়াম (আ.) সামনে গিয়ে লোকদের সলাতে ইমামতি করতে পারেন। [ইমাম বলবেন, আপনি এগিয়ে এসে আমাদের সলাতে ইমামতি করুন] তখন ঈসা (আ.) তাঁর হাত উক্ত ইমামের দুই কাঁধের উপর রেখে বলবেন: [না, আপনারা একে অন্যের আমীর। আল্লাহর পক্ষ থেকে এটা উম্মাতের মর্যাদা] আপনি সামনে যান এবং সলাতের ইমামতি করুন। ফলে তাদের ইমাম তাদের নিয়ে সলাত আদায় করবেন।
  37. অতঃপর দাজ্জাল (ইলিয়া) পাহাড়ে আসবে এবং মুসলিমদের একটি দলকে ঘেরাও করবে। তখন এক ব্যক্তি অবরুদ্ধ মুসলিমদের বলবে, তোমরা এই তাগুতের অপেক্ষায় না থেকে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো যতক্ষণ পর্যন্ত না আল্লাহর সাথে মিলিত হও (শাহাদাত বরণ করো) অথবা আল্লাহ তোমাদেরকে বিজয়ী করেন? অতঃপর তারা তার আদেশ মোতাবেক সকালবেলায় দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে।
  38. [যখন মুসলিমরা তার মুকাবিলার উদ্দেশে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিবে এবং সমানভাবে সারিবদ্ধ হবে। এমন সময় সলাতের আযান হবে] [ফাজর সলাতের] [তারা সকাল করবেন এমন অবস্থায় যে, তখন ঈসা (আ.) তাদের সাথেই আছেন]। [অতঃপর তিনি লোকদের ইমামতি করবেন। তিনি যখন রুকু‘ থেকে মাথা উঠাবেন তখন বলবেন: সামিআল্লাহু লিমান হামীদাহ, আল্লাহ মাসীহ দাজ্জালকে ধ্বংস করেছেন এবং মুসলিমদের বিজয়ী করেছেন]। অতঃপর সলাত শেষে ঈসা ইবনু মারইয়াম বলবেন : দরজা খুলে দাও। তখন দরজা খুলে দেয়া হবে। আর দরজার পিছনে থাকবে দাজ্জাল। তার সঙ্গে থাকবে সত্তর হাজার ইয়াহুদী। তাদের প্রত্যেকের সাথে চাঁদরে আবৃত কারুকার্য খচিত তলোয়ার থাকবে। [ঈসা (আ.) যমীনে অবতরণ করে দাজ্জালকে অনুসন্ধান করবেন]।
  39. [অতঃপর ঈসা (আঃ) তাঁর অস্ত্র নিয়ে দাজ্জালের দিকে রওয়ানা হবেন]। যখন দাজ্জাল তাঁকে দেখবে, তখন সে এরূপ বিগলিত হয়ে যাবে যেমন পানিতে লবণ গলে যায়। [যদি তাকে এমনি ছেড়ে দেয় তবুও সে বিগলিত হয়ে হালকা হয়ে যাবে বরং আল্লাহর নাবী (ঈসা) তাকে নিজ হাতে হত্যা করবেন, এবং তিনি ঈমানদার সাথীদেরকে তাঁর বল্লমে ওর রক্ত দেখিয়ে দিবেন]। তিনি তাকে পূর্ব দিকের বাবে লুদে পাবেন এবং তাকে হত্যা করবেন। [অতঃপর আল্লাহ তাকে ‘আক়াবায়ে আফীক়ের নিকটে ধ্বংস করবেন]।
  40. আল্লাহ ইয়াহুদীদের পরাজিত করবেন। [এবং মুসলিমদেরকে তাদের উপর কর্তৃত্ব দান করবেন]। [এবং মুসলিমরা তাদেরকে হত্যা করবে]। তখন ইয়াহুদীরা আল্লাহর সৃষ্ট যেকোন বস্তুর আড়ালে লুকিয়ে থাকুক না কেন, সে বস্তুকে আল্লাহ বাকশক্তি দান করবেন, চাই তা পাথর, গাছপালা, দেয়াল অথবা কোন জন্তু হোক না। তবে একটি গাছ হবে ব্যতিক্রম, যার নাম গারকাদাহ। একে ইয়াহুদীদের গাছ বলা হয়। সে কথা বলবে না। তবে সে বলবে: হে আল্লাহর মুসলিম বান্দা! এই তো ইয়াহুদী [আমার পিছনেই আছে] তুমি এসো এবং তাকে হত্যা করো।
  41. এর পরে মানুষ দীর্ঘ সাত বছর যাবৎ এমন শান্তিপূর্ণভাবে জীবন যাপন করবে যে, দুই ব্যক্তির মধ্যে কোন দুশমনি থাকবে না।
  42. ঈসা ইবনু মারইয়াম (আ.) আমার উম্মাতের একজন হবেন। [মুহাম্মাদ (সা.)-কে সত্যায়ন করে এবং তার উম্মাতের একজন হয়ে আসবেন] তিনি হবেন ন্যায়পরায়ণ শাসক ও ইন্‌সাফকারী হিদায়াতপ্ৰাপ্ত ইমাম। [তিনি ইসলামের জন্য লোকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করবেন] ক্রশ ভেঙ্গে ফেলবেন, শুকর নিধন করবেন, [তাঁর জন্য সলাতকে একত্র করা হবে], তিনি জিযিয়া কর রহিত করবেন এবং সদাক়াহ উসূল বন্দ করবেন! বকরী ও উটের উপর যাকাত ধার্য বন্ধ হবে এবং লোকদের মাঝে পারষ্পরিক হিংসা বিদ্বেষ ও ক্রোধের অবসান ঘটবে। [তখন মাল-সম্পদ গ্রহণ করার মত লোক পাওয়া যাবে না]। [এমনকি তখন একটিমাত্র সাজদাহ্ দুনিয়া ও এর মধ্যকার সমগ্র বস্তু থেকে উত্তম হবে]। [তখন দা‘ওয়াত হবে একমাত্র রাব্বুল ‘আলামীনের জন্য (অর্থাৎ সবাই একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করবে)]। — [ঐ সত্ত্বার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ! ইবনু মারইয়াম অবশ্যই রাওহার গিরিপথে তালবিয়া পাঠ করবেন এবং সেখান থেকে হাজ্জ বা ‘উমরাহ করবেন অথবা দুটোই একত্রে করবেন]।
  43. অতঃপর এক সম্প্রদায় লোক ঈসা (আ)-এর সমীপে আসবে যাদেরকে মহান আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছেন। ঈসা (আ) তাদের চেহারায় হাত বুলিয়ে দিবেন এবং জান্নাতে তাদের জন্য নির্ধারিত স্থান সম্পর্কে তাদেরকে জানিয়ে দিবেন। তিনি এ আলোচনারত অবস্থায় থাকতেই মহান আল্লাহ তাঁর কাছে ওয়াহী নাযিল করবেন: “আমি আমার একদল বান্দাকে বের করে দিয়েছি যাদের সাথে যুদ্ধ করার কারোর ক্ষমতা নেই। সুতরাং আপনি আমার ঈমানদার বান্দাদেরকে তূর পাহাড়ের দিকে নিয়ে একত্র করুন।” এদিকে আল্লাহ তা‘আলা ইয়াজুজ মাজুজকে ছেড়ে দিবেন। তারা ছাড়া পেয়ে পৃথিবীর সব প্রান্তে দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। তাদের প্রথম দলগুলো বুহাইরায়ে তাবারিয়া (ভূমধ্যসাগর) উপকূলে এসে পৌঁছবে এবং তাতে যত পানি আছে সব খেয়ে নিঃশেষ করবে। এরপর শেষ দল এসে বলবে, (পানি কোথায়?) এখানে তো কোন সময় পানি ছিল। [অতঃপর তারা (ইয়াজুজ মাজুজ) ঘুরতে ঘুরতে ‘জাবালে খামার’ পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। সেটা বাইতুল মুক়াদ্দাসে অবস্থিত একটি পাহাড়। সেখানে পৌঁছে তারা বলবে, আমরা তো যমীনের বাসিন্দাদের মেরে ফেলেছি, এবার চলো আসমানের বাসিন্দাকে হত্যা করবো। এই বলে তারা আকাশের দিকে তীর ছুঁড়তে থাকবে। অবশেষে মহান আল্লাহ তাদের তীরকে রক্তাক্ত অবস্থায় তাদের কাছে ফিরিয়ে দিবেন]। এদিকে আল্লাহর নাবী ঈসা (আ.) ও তাঁর সঙ্গীগণ অবরুদ্ধ অবস্থায় অতিকষ্টে কাল যাপন করবেন। এমনকি একটা গরুর মাথাও তাদের কাছে বর্তমানের একশো স্বর্ণমুদ্রার চেয়ে অধিক শ্রেয় মনে হবে। এরপর আল্লাহর নাবী ঈসা (আ.) ও তাঁর সঙ্গীরা প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাদের (ইয়াজুজ মাজুজের) গর্দানে এক প্রকার বিষাক্ত কীট সৃষ্টি করবেন, যার ফলে তারা এক নিমিষে সব মরে যাবে। তারপর আল্লাহর নাবী ঈসা (আ.) ও তাঁর সঙ্গীগণ যমীনের বুকে নেমে আসবেন। এসে দেখবেন যমীনে এক বিঘত জায়গাও খালি নেই বরং ইয়াজুজ মাজুজের লাশের পঁচাগলা ও তীব্র দুর্গন্ধে যমীন ভরে গেছে। তখন আল্লাহর নাবী ঈসা (আ.) ও তাঁর সঙ্গীরা আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করলে আল্লাহ একদল পাখি পাঠিয়ে দিবেন, যাদের গর্দান হবে উটের গর্দানের ন্যায়। তারা এগুলো বহন করে আল্লাহর যেখানে ইচ্ছা সেখানে ফেলে দিয়ে আসবে। অতঃপর মহান আল্লাহ প্রবল বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, যা পৃথিবীর আনাচে কানাচে কোন ঘর দুয়ারে না পৌঁছে থাকবে না। তা সমগ্র যমীনকে বিধৌত করে আয়নার মত পরিষ্কার করে দিবে। অতঃপর যমীনকে আদেশ করা হবে—“তোমার ফলমূল শস্যাদি উৎপন্ন করো এবং বরকত ফিরিয়ে দাও।” ঐ সময় বিরাট জনগোষ্ঠি একটিমাত্র আনার ফল খেয়ে পরিতৃপ্ত হবে এবং একটি আনারের ছালের নীচে ছায়া গ্রহণ করবে। পশুর দুধে যথেষ্ট বরকত হবে। এমনকি একটি দুগ্ধবতী উষ্ট্রী এক বিরাট জনগোষ্ঠির জন্য যথেষ্ট হবে, একটি দুগ্ধবতী গাভী একটি গোত্রের জন্য যথেষ্ট হবে এবং একটি দুগ্ধবতী বকরী একটি ছোট গোত্রের জন্য যথেষ্ট হবে]। তখন বদল গরু হবে এই এই মুল্যের এবং ঘোড়া স্বল্প মূল্যে বিক্রি হবে। [তিনি (সা.) বলেন: (মাসীহ্ এর পরে যারা বেঁচে থাকবে তাদের জন্য সুসংবাদ, মাসীহ্ এর পরে যারা বেঁচে থাকবে তাদের জন্য সুসংবাদ। তখন আকাশকে আদেশ দেয়া হবে বৃষ্টি বর্ষণ করতে এবং যমীনকে আদেশ দেয়া হবে ফসলাদী উৎপন্ন করতে। তখন যদি তুমি সাফা (পাহাড়ের) উপরও তোমার বীজ বপন করো তাতে ফসল উৎপন্ন হবে। তখন পরস্পরের মাঝে কোন কৃপণতা, হিংসা ও ক্রোধ থাকবে না]।
  44. প্রতিটি বিষাক্ত জন্তুর বিষ দূরীভূত হবে। [পৃথিবীতে শান্তি-নিরাপত্তা আসবে, তখন সিংহ উটের সাথে চরবে, চিতাবাঘ গরুর সাথে এবং বাঘ বকরীর সাথে চরে বেড়াবে, শিশুরা সাপ নিয়ে খেলা করবে কিন্তু এসব তাদের কোন ক্ষতি করবে না] এমনকি দুধের শিশু তার হাত সাপের মুখে ঢুকিয়ে দিবে কিন্তু সে তার কোন ক্ষতি করবে না। একজন ক্ষুদ্র মানব শিশু সিংহকে তাড়া করবে। সেও তার কোন ক্ষতি করবে না। নেকড়ে বকরীর পালে এমনভাবে থাকবে যে, যেন সে তার (রক্ষক) কুকুর। পৃথিবী শান্তিপূর্ণ হয়ে যাবে। যেমন পানিতে পাত্র পরিপূর্ণ হয়। তখন সকলের কালেমা এক হবে। আল্লাহ ছাড়া কারোর ইবাদাত করা হবে না। যুদ্ধ-বিগ্রহ তার সরঞ্জাম রেখে দিবে। কুরাইশদের রাজত্বের অবসান হবে। যমীন রূপার তৈরি তশতরীর মত হয়ে যাবে। সে এমন ফসল উৎপন্ন করবে যেমন আদম (আ.) এর যুগে উৎপন্ন হতো।
  45. এরপর ঈসা (আ.) পৃথিবীতে চল্লিশ বছর জীবিত থাকার পর ইন্তিকাল করবেন এবং মুসলিমরা তাঁর জানাযার সলাত আদায় করবেন।
  46. তারা যখন এ অবস্থায় থাকবে তখন আল্লাহ [সিরিয়ার দিক থেকে একটা শীতল বাতাস ছেড়ে দিবেন। এ বাতাস তাদের বগলের নীচে প্রভাব ফেলবে (বুক স্পর্শ করবে) এবং তা প্রতিটি মু‘মিন ও প্রতিটি মুসলিমের রুহ কবয করবে। (আর ইবনু ‘উমারের হাদীসে আছে: শীতল বাতাসের স্পর্শ লেগে যমীনের বুকে এমন একটি লোকও জীবিত থাকবে না যার অন্তরে অণু পরিমাণও ঈমান আছে, বরং সবাই প্রাণ ত্যাগ করবে। এমনকি কেউ কোন পাহাড়ের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকলেও সেখানে বাতাস প্রবেশ করে তার জান কবয করবে) এরপর পৃথিবীতে কেবল মন্দ পাপী লোকেরাই জীবিত থাকবে [যাদের ফিতনা পাখির ন্যায় তড়িৎ গতিতে ছড়িয়ে পড়বে এবং যাদের স্বভাব পশুর স্বভাব তুল্য হবে। যারা কোন ভাল কাজ চিনবে না এবং মন্দ কাজকে মন্দ বলে জানবে না। অতঃপর শয়তান তাদের কাছে ছবি ধরে এসে বলবে, তোমরা কি আমার কথা শুনবে না? তখন তারা বলবে, আমাদেরকে কি আদেশ করবেন করুন। এরপর সে মানুষকে মূর্তিপূজার আদেশ করবে। এ সময় তাদের কাছে প্রচুর খাদ্য সম্ভার মজুদ থাকবে, তাদের জীবন সুখ সাচ্ছন্দে কাটবে]। [নারী-পুরুষ গাধার মত প্রকাশে সঙ্গমে লিপ্ত হবে। আর তাদেরই উপরই ক়িয়ামাত ক়ায়িম হবে]।
  47. তারপর এক সময় সিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে। এর বিকট শব্দ যে শুনবে সে একবার ঘাড় নোয়াবে একবার উপরে উঠাবে। সর্বপ্রথম ঐ শব্দ এমন ব্যক্তি শুনবে, যে তার উটকে পুকুরে গোসল করাতে পানি ঘোলাটে করছে। সিঙ্গার আওয়ায শুনে সে বেহুঁশ হয়ে যাবে। এরপর সব মানুষ বেহুঁশ হয়ে যাবে। এরপর মহান আল্লাহ বৃষ্টি ছেড়ে দিবেন অথবা বলেছেন বারিধারা বর্ষণ করবেন যেন তা কুয়াশা বা ছায়া— এ দুইয়ের মধ্যে বর্ণনাকারী সন্দিহান। এ বৃষ্টির ফলে যমীন থেকে মানুষের দেহসমূহ উত্থিত হতে থাকবে। “অতঃপর দ্বিতীয়বার সিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে। এ ফুঁকের পর সকল মানুষ দাঁড়িয়ে তাকিয়ে থাকবে”— (সূরাহ আয-যুমার : ৬৮)। অতঃপর বলা হবে, হে সমবেত মানবগোষ্ঠী! আস তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের সামনে। আর ফিরিশতাদের বলা হবে, “এদেরকে দাঁড় করাও এদের হিসাব নেয়া হবে”— (সূরাহ আস-সাফফাত : ২৪) আবার বলা হবে, জাহান্নামের দলকে বের কর। জিজ্ঞেস করা হবে, কত সংখ্যা থেকে কত? বলা হবে, প্রতি হাজার থেকে নয়শো নিরানব্বই। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন: “এটাই সেই দিন যেদিন তরুণ বালকদের বুড়ো করে দিবে।” (সূরাহ আল-মুয্যাম্মিল : ১৭) “এটাই সেই দিন, যে দিন পায়ের নালাকে অনাবৃত করে ফেলবে।” (সূরাহ আল-কুলাম : ৪২)

সমাপ্ত

আল-হামদুলিল্লাহ