কোরআন লিখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগ থেকেই কোর’আন সংরক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে ছিল। গত ১৪শত বছরের মধ্যে কোরআন মাজীদ লিখনের উন্নতির স্তরসমূহের প্রতি একবার দৃষ্টি দিলে তা দেখে মানব বিবেক আশ্চর্য হয় যে, প্রতিটি যুগের মানুষের মধ্যে আল্লাহ্ তা’লা কোরআন মাজীদকে অত্যন্ত সুন্দর করে লিখার ব্যাপারে কত ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। শতাব্দীর উন্নত স্তরসমূহ অতিক্রম করার পর আজ আমাদের সামনে পূর্ণাজ্ঞ যের, যবর, পেশ এবং ওয়াকফ (বিরাম) চিহ্নসহ অত্যন্ত সুন্দর এবং সহজতর লিখনীর মাধ্যমে এমন একটি মোসহাফ (কোরআন) বিদ্ধমান যা বিশ্ব ব্যাপী অত্যন্ত সহজভাবে শিখা এবং শিখানো হয়। মূলত এ সমস্ত কর্মকাণ্ড আল্লাহ্ তা’লার পরিপূর্ণ হিকমত এবং সর্বময় ক্ষমতারই বহিঃপ্রকাশ, যার মাধ্যমে আল্লাহ্ তা’লা কোর’আন মাজীদ সংরক্ষণের ওয়াদা করে রেখেছেন। নে’মতের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে এ বাস্তবতা প্রকাশ করা আমার (লিখকের) জন্য আনন্দের বিষয় যে, কীলানী বংশকেও আল্লাহ্ তা’লা কোর’আন লিখার সুভাগ্য দান করেছেন, যার শুরু সম্মানিত পিতা হাফেজ মোহাম্মদ ইদরীস কীলানী (রাহিমাহুল্লাহ্) পূর্ব পুরুষ মৌলবী মোহাম্মদ বখস (রাহিমাহুল্লাহ্) (মৃত ১৮৬১ইং) মৌলবী মোহাম্মদ বখশ (রাহিমাহুল্লাহ্‌র) ছেলে মৌলবী ইমামুদ্দীন কীলানী (রাহিমাহুল্লাহ্) (মৃত ১৯১৯ইং) তার নাতী মৌলবী নূর এলাহী কীলানী (রাহিমাহুল্লাহ্) (মৃত১৯৪৩ইং) এরপর তার পৌত্র হাফেজ মোহাম্মদ ইদরীস কীলানী (রাহিমাহুল্লাহ্) (মৃত১৯৯২ইং) ব্যতীত কীলানী বংশের আরো কিছু সুভাগ্যবান ব্যক্তিকেও আল্লাহ্ তা’লা এ সুভাগ্য দান করেছেন যাদের নাম এবং তাদের লিখিত কোরআন মাজীদের বিস্তারিত বর্ণনা নিম্নরূপ:

  1. মৌলবী মোহাম্মদ বখশ কীলানী (রাহিমাহুল্লাহ্) তিনি বেশ কিছু কোর’আন লিপিবদ্ধ করেছেন।
  2. মৌলবী ইমামুদ্দীন কীলানী (রাহিমাহুল্লাহ্) তাফসীর ওহীদী (নওয়াব ওয়াহিদুজ্জামান হায়দারাবাদী রাহিমাহুল্লাহ্‌) ও আরো কিছু কোর’আন লিপিবদ্ধ করেছেন।
  3. মৌলবী মোহাম্মদ দীন কীলানী (রাহিমাহুল্লাহ্‌) তাফসীর ওহীদী (নওয়াব ওয়াহিদুজ্জামান হায়দারাবাদী রাহিমাহুল্লাহ) ছাড়াও আরো কিছু কোর’আন লিপিবদ্ধ করেছেন।
  4. মৌলবী নূও এলাহী কীলানী (রাহিমাহুল্লাহ) তিনি সাধারণ কোরআন লিপিবদ্ধ করেছেন যার সংখ্যা ১৫টি।
  5. মোহাম্মদ সুলাইমান কীলানী (রাহিমাহুল্লাহ্) তাফসীর আবুল হাসানাতের ২৬তম পারা পর্যন্ত লিখেছেন, বাকী চার পারা অসুস্থতার কারণে লিখতে পারেন নি।
  6. হাফেজ ইদরীস কীলানী (রাহিমাহুল্লাহ্) তাফসীর সানায়ী (মাওলানা সানাউল্লাহ্ অমৃতসরী রাহিমাহুল্লাহ) এবং তাফসীর আহসানুত্তাফাসীর (ডেপুটি সায়্যেদ আহমদ হাসান দেহলভী রাহিমাহুল্লাহ্ লিখিত) লিপিবদ্ধ করেছেন।
  7. আবদুররহমান কীলানী (রাহিমাহুল্লাহ্) আশরাফুল হাওয়াসী (মাওলানা মোহাম্মদ আবদুহ লিখিত) লিপিবদ্ধ করেছেন। এছাড়া ফিরোজ সানায এবং তাজ কোম্পানীর বেশ কিছু সাধারণ কোর’আন তিনি লিপিবদ্ধ করেছেন।
  8. আবদুল গাফুর কীলানী মাওলানা আমীন আহসান ইসলাহী লিখিত তাদাব্বুর কোর’আন লিপিবদ্ধ করেছেন। এছাড়াও পারা পারা অনুবাদ কৃত কোর’আনও লিপিবদ্ধ করেছেন।
  9. আবদুল গাফ্‌ফার কীলানী (রাহিমহুল্লাহ্) তাফহিমুল কোর’আনের ১ম খণ্ড এবং বিভিন্ন সাধারণ কোর’আন লিপিবদ্ধ করেছেন।
  10. মোহাম্মদ ইউসুফ কীলানী (রাহিমাহুল্লাহ্) মাওলানা সায়্যেদ আবুল আলা মাওদুদী লিখিত তাফহিমুল কোর’আন লিপিবদ্ধ করেছেন, এছাড়াও বেশ কিছু সাধারণ কোরআন মাজীদও লিপিবদ্ধ করেছেন।
  11. খুরসীদ আহমদ কীলানী (রাহিমাহুল্লাহ) পারা পারা অনুবাদ কৃত কোর’আনও লিপিবদ্ধ করেছেন।
  12. রিয়ায আহমদ কীলানী ময়ীনউদ্দীন সাফেয়ী লিখিত আরবী তাফসীর জামেউল বায়ান লিপিবদ্ধ করেছেন।
  13. মোহাম্মদ ইয়াকুব কীলানী তাফসীর মাযহারী ছাড়াও বেশ কিছু সাধারণ কোরআন লিপিবদ্ধ করেছেন।
  14. এনায়েতুল্লাহ্ কীলানী সাধারণ কোর’আন লিপিবদ্ধ করেছেন।
  15. আবদুর রউফ কীলানী সাধারণ কোর’আন লিপিবদ্ধ করেছেন।
  16. খালীলুর রহমান কীলানী সাধারণ কোর’আন লিপিবদ্ধ করেছেন।
  17. মোহাম্মদ সাঈদ কীলানী সাধারণ কোর’আন লিপিবদ্ধ করেছেন।
  18. আবদুল ওয়াহীদ কীলানী সাধারণ কোর’আন লিপিবদ্ধ করেছেন।
  19. আবদুল ওয়াকীল কীলানী সাধারণ কোর’আন লিপিবদ্ধ করেছেন।
  20. আবদুল মুয়েদ কীলানী সাধারণ কোর’আন লিপিবদ্ধ করেছেন।
  21. আবদুল মুগীস কীলানী সাধারণ কোর’আন লিপিবদ্ধ করেছেন।

কোর’আন লিখন কোন অতিরঞ্জন ছাড়াই বলা যায় যে, একটি বড় সুভাগ্যের ব্যাপার; কীলানী বংশে এর কল্যাণকর ধারা আলহামদুলিল্লাহ্ আজও আছে, কিন্তু আফসোসের বিষয় হল কম্পিউটারের যুগে কীলানী বংশসহ সমস্ত কোর’আন লিখকদেরকে এ সুভাগ্য থেকে বঞ্চিত করেছে, যদিও কিছু কিছু পুরাতন প্রকাশক টেকনিকেল সৌন্দর্যের জন্য আজও হাতের লিখনীকে কম্পিউটারের উপর অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। তবে তাদের সংখ্যা খুবই কম। মূল কথা কোর’আন মাজীদের প্রকাশনা এবং প্রচারণা আলহামদুলিল্লাহ্ দিন দিন বেড়ে চলছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত তা চালু থাকবে। অতএব, আল্লাহ্‌র জন্য অসংখ্য প্রশংসা।

সূত্রনির্দেশ ও টীকা

  1. মাওলানা আবদুর রহমান কীলানী (রহমাতুল্লাহি আলাইহির) রিখা অনুযায়ী কীলানী বংশে সুন্দর হস্তলিপির ধারা আমাদের (লিখকের) পূর্বপুরুষ হাজী মোহাম্মদ আরেফ থেকে শুরু হয়েছে, যিনি আওরঙ্গজেব আলমগীরের (১৬৫৫-১৭০৫ইং) সময়ে আমাদের পিতৃপুরুষদের বাসস্থান কীলানোয়ালা (জেলা গুজরানোয়ালায়) বিচারক ছিলেন। তার ছেলে আমানুল্লাহ্ তার ছেলে হেদায়তুল্লাহ্‌রও হাতের লেখা সুন্দর ছিল, তবে কোরআন মাজীদ লেখার দ্বারা ফাইজুল্লাহ্‌র ছেলে মৌলবী মোহাম্মদ বখশ কীলানী (রাহিমাহুল্লাহ্) থেকে শুরু হয়েছে।
  2. মৌলবী ইমামুদ্দীন (রাহিমাহুল্লাহ্) এবং মৌলবী মোহাম্মদ দীন—এ উভয়ে আপন ভাই ছিল, তারা উভয়ে মিলে তাফসীর ওয়াহেদী লিপিবদ্ধ করেছেন।
  3. মৌলবী নূর এলাহী কীলানী (রাহিমাহুল্লাহ্‌র) লিখনির কিছু নমূনা লাহোর জাদুঘরের ১৯৯ ও ২০০ নাম্বারে সংরক্ষিত আছে।
  4. লেখকের সম্মানিত পিতা হাফেজ মোহাম্মদ ইদরীস কীলানী (রাহিমাহুল্লাহ) কোরআন মাজীদ ব্যতীত প্রসিদ্ধ ৬টি হাদীস গ্রন্থ (বোখারী, মুসলিম, আবুদাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনে মাযাহ্)ও লিপিবদ্ধ করেছেন। এছাড়াও মেশকাত এবং বুলুগুল মারামও লিপিবদ্ধ করেছেন।
  5. মদীনাস্থ বাদশাহ্ ফাহাদ আল-কোরআন একাডেমি থেকে ভারত ও পাকিস্তানের জন্য প্রকাশিত কোরআন মাজীদও মাওলানা আবদুর রহমান কীলানী (রাহিমাহুল্লাহ – মৃত্যু ১৯৯৫) লিখিত।