বর্তমান পৃথিবীর বড় অপশক্তি আমেরিকা কখনো ‘নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার’, ‘গ্লোব্লাইজেশন’ নামে নিজেদের বস্তুবাদী নাস্তিকতাবাদী সংস্কৃতিকে আলোকিত চিন্তা চেতনা বলে আখ্যায়িত করে জোরপূর্বক সমগ্র বিশ্বের উপর তা চাপিয়ে দিতে চায়, দুঃখের বিষয় হল এই যে, স্বয়ং মুসলমানদের মধ্যে কিছু লোক অপশক্তিধরের ভয়ে অথবা দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞ হওয়ার কারণে অপশক্তিধরের সংস্কৃতিকে উন্নত, নিরপেক্ষ এবং আলোকিত চিন্তার ধারক বলে মুসলমানদের উপর চাপিয়ে দেয়ার জন্য চেষ্টা করছে। প্রিয় জন্মভূমি (লেখকের) ইসলামী প্রজাতন্ত্র পাকিস্তানেও এ ভাল কাজটিকে বড় জিহাদের চেতনা মনে করে কাজ করা হচ্ছে, এর কিছু দৃষ্টান্ত দ্রষ্টব্য।

  1. পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট তার এক বক্তব্য বলেছেন— চরমপন্থী মৌলভীদের ইসলামের আমাদের দরকার নেই, যদি কারো কাছে বোরকা এবং দাড়ি পছন্দ হয় তাহলে সে যেন তা তার ঘরে সীমাবদ্ধ রাখে, আমরা তাদের এ বোরকা এবং দাড়ি রাষ্ট্রের উপর চাপিয়ে দিতে দিব না।[১]
  2. লণ্ডনে প্রেস কনফারেন্সে বক্তব্য দিতে গিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী তার চিন্তা চেতনার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন— “কিছু মৌলবাদী সংগঠন আমাদেরকে কয়েক শতাব্দী পিছনে নিয়ে যেতে চায়, আমাদেরকে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে, ধর্মীয় অন্ধত্ব চায় যে আমি চোরের হাত কেটে দেই, আমি কি সমস্ত গরীবদের হাত কেটে তাদেরকে টুণ্ডা করে দেব? না তা কখনো হতে পারে না। চরমপন্থী গ্রুপ আমাদের উপর তাদের ইচ্ছা চাপিয়ে দিতে চায়, কিন্তু এ সল্প লোকদের জানা থাকা উচিত যে, আমরা একবিংশ শতাব্দীতে বেঁচে আছি, আমরা চরমপন্থীদেরকে তাদের চিন্তা চেতনা প্রকাশ করতে অনুমতি দেব না।[২]
  3. বিবিসিকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী বলেন—নারীদেরকে ঘরে বন্দী রাখা একটি পশ্চাদমুখী চিন্তা, পর্দায় লুকিয়ে থাকা নারীরা ইসলামের পশ্চাদমুখীতার চিত্র প্রকাশ করছে, কিছু লোক নারীদেরকে ঘরের মধ্যে বন্দী রাখতে এবং তাদেরকে পর্দা করাতে চায়, যা একেবারেই ভুল।[৩]
  4. কোহাটে এক বৈঠকে আলোচনা করতে গিয়ে পাকিস্তানের প্রধান বলেছেন— ইসলামের পশ্চাদ পদতা রাষ্ট্রের উন্নতির পথে বাধা, কেউ দাড়ি রেখেছে তো ভাল, কিন্তু আমাকে বলবে না যে, আমি দাড়ি রাখব বা না রাখব। ফিল্মি পোষ্টার, গান বাজনা, দাড়ি না-রাখা, মহিলাদেরকে বোরকা পরিধান না করানো, সেলওয়ার, কামিজ, পেন্ট এবং এল এফ, এগুলো ছোট খাট বিষয়। অতএব এগুলোকে ইস্যু বানাবে না, এগুলো ছোট চিন্তার লোকদের কাজ, পাকিস্তান বিরাট চেলেঞ্জের মুখে আছে, ইস্যু হল এই যে, দেশে কার আইন চলবে? আমরা উন্নত ইসলাম চাই, যা কায়েদে আযম এবং আল্লামা ইকবালের চিন্তায় ছিল, উন্নয়নশীল পাকিস্তান, কোন ধর্মীয় রাষ্ট্র নয়, ইসলাম বাস্তবায়নের জন্য মানুষের চিন্তা চেতনার মধ্যে পরিবর্তন দরকার, সমগ্র জাতি গ্রহণযোগ্য সংস্কৃতি চায়, ইসলামে সকলের অধিকার সংরক্ষণ করা হয়েছে, তার মর্যাদা বুঝুন।[৪]

পাকিস্তানের প্রধানের আরো কিছু বক্তব্য

  1. সেকেলে চিন্তা-চেতনা এবং প্রাচীন বর্ণনাসমূহের উন্নতির এ যুগে মোটেও কোন দরকার নেই, বর্তমান যুগ উন্নতির এমন স্তরে এসে পৌঁছেছে যে অতীতের সাথে তার সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে। সাইন্স, টেকনোলজী এবং উন্নত জীবনযাপনের দ্রুততায় ধর্ম কালের সাথী হতে পারবে না, চাদর, চার দেয়াল, পর্দা, স্কার্ফ, দাড়ি মোল্লাদের ধর্ম এবং পশ্চাদপদতার নিদর্শন। তলওয়ার দিয়ে যুদ্ধ করার যুগ শেষ হয়ে গেছে, এখন এর পরিবর্তে ডিবলোমাসীর মাধ্যমে কাজ করা হয়, অপরাধ, ডাকাতি ইত্যাদির শাস্তি ইসলামী বিধান পরিহার করে যুগোপযুগী বিধান আবিষ্কার করতে হবে, চোরের হাত কেটে জাতিকে টুণ্ডা করা যাবে না।[৫]

রাষ্ট্র প্রধানের বক্তব্যের সারমর্ম হল এই—

ক) দাড়ি, পর্দা চরমপন্থী মৌলভীদের ইসলাম।

খ) চোরের হাতকাটা ধর্মীয় পাগলামীর বহিঃপ্রকাশ।

গ) ধর্ম কালের সাথে তাল মেলাতে পারবে না।

ঘ) জিহাদের যুগ শেষ হয়ে গেছে, এখন জিহাদ পরিহার করতে হবে।

ঙ) গবেষণার মাধ্যমে ইসলামী দণ্ডবিধিতে পরিবর্তন আনতে হবে।

পর্দা, দাড়ি, স্কার্ফ, জিহাদ, ইসলামী দণ্ডবিধির কথা আলোচনা করার আগে রাষ্ট্রপ্রধান এও বলেছেন— সেকেলে চিন্তা চেতনা এবং প্রাচীন বর্ণনাসমূহের উন্নতির এ যুগে মোটেও কোন দরকার নেই।

যেন উল্লেখিত অনৈসলামী কানুনসমূহ আলোকিত চিন্তা-চেতনা এবং উন্নতির সাথে সম্পর্ক রাখে, সম্ভবত এটাই কারণ যে, রাষ্ট্র প্রধান ইসলামী প্রজাতন্ত্র পাকিস্তানের সমস্ত ইসলামী গৌরবকে খতম করার এবং পাশ্চাত্য সংস্কৃতিকে দেশের উপর চাপিয়ে দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, দাড়ি, পর্দার বিরোধিতা, ইসলামী দণ্ডবিধিতে অসন্তুষ্টি, আল্লাহর পথে জিহাদের বিরোধিতা, খেলাফত (ইসলামী আইন)-এর প্রতি অসন্তুষ্টি[৬], সিনেমা, গান-বাজনার সমর্থন, নিজের গৌরবময় অতীত ইতিহাস থেকে পিছপা। হিন্দুয়ানি সংস্কৃতি এবং নারী পুরুষের সম্মিলিত মেরাথন, ইসলামী প্রতিষ্ঠানসমূহের উপর নযরদারী, বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য পাকিস্তানী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দরজা বন্ধ, গোত্রীয় অঞ্চলসমূহে সঠিক আক্বীদা বিশ্বাসী লোকদের রক্তপাত করা, শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে কোরআ’নের সূরা এবং আয়াতসমূহ ছাটাই করা, মুসলিম বিজয়ীদের কর্মকাণ্ড সম্বলিত বিষয়সমূহ খতম করা, সাহাবাগণের ব্যাপারে ‘শহীদ’ শব্দটি উঠিয়ে দিয়ে ‘নিহত’ শব্দ ব্যবহার করা, গৌরবজনক নিদর্শনসমূহের কথা শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে দূর করা, হিন্দু সংস্কৃতি এবং হিন্দু শাসকদের ইতিহাস শিক্ষাব্যবস্থায় চালু করা, ক্লাস ওয়ান থেকে ইংরেজী শিখানোর সিদ্ধান্ত নেয়া, মুসলমানদের চিরস্থায়ী শত্রু ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাঈলের সাথে কুটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করার ব্যাপারে সৌখিনতা প্রকাশ করা। এমনিভাবে অন্যান্য ইসলামী ঘটনাবলী, ইসলামী বিধিবিধান এবং ইসলামী সংস্কৃতি আলোহীন এবং অনুন্নত মনে করার ফল।[৭]

ইতিহাস সাক্ষী যে মুসলিম শাসকদের দ্বীন থেকে দূরে থাকা এবং দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞতাই মুসলমানদেরকে সর্বদা অপূরণীয় ক্ষতি সাধন করেছে, তুর্কীতে মোস্তফা কামাল পাশা সাধারণ জনসাধারণকে ‘নুতন উন্নত তুর্কী’ সুন্দর শ্লোগান দিয়ে সর্ব প্রথম ইসলামী খেলাফতের প্রতি হস্তক্ষেপ করেছে এবং তা শেষ করেছে ইসলামী খেলাফত শেষ করার পর, আরবী ভাষা এবং আরবী লিখনীর প্রতি কঠোরতা আরোপ করেছে, ইসলামী ইবাদত, নামায, আযানের জন্য আরবী ভাষার পরিবর্তে তুর্কীভাষায় চালু করেছে। জোরপূর্বক মুসলমানদের দাড়ি মুণ্ডন করিয়েছে, বোরকা পরহিতা নারীদেরকে জোরপূর্বক বোরকা খুলে দিয়েছে, টুপির স্থলে হেট বা ইংলিশ পোষাক পরতে বাধ্য করেছে, শিক্ষা বোর্ড থেকে আরবী, ফার্সি ভাষা তুলে দিয়েছে। আরবী গ্রন্থ এবং দুর্লভ পাণ্ডুলিপিসমূহ বিক্রি করে দিয়েছে, ওক্‌ফ সম্পত্তি বিলীন করে দিয়েছে, মসজিদসমূহে তালা ঝুলিয়েছে, আয়া সুফিয়ার প্রসিদ্ধ মসজিদকে জাদুঘরে পরিণত করেছে, সুলতান মোহাম্মদ ফাতেহ মসজিদকে গুদামে পরিণত করেছে, দেশ থেকে ইসলামী বিধানসমূহ অকার্যকর করে দিয়েছে, ইউরোপের স্কলারদেরকে সারাদেশে নিয়োগ করেছে, মোস্তফা কামালের উল্লেখিত ভূমিকার ফলে তুর্কির ইসলামী কর্মকাণ্ড পরিপূর্ণ রূপে বিনষ্ট হয়ে গেছে, বর্তমানে তুর্কি একটি সেকুলার রাষ্ট্র হিসেবে আছে, কিছু দিন আগে সংবাদপত্রের আলোচিত একটি সংবাদ দ্রষ্টব্য।

তুর্কির শহর আনাতুলের আদালত দু’জন কোরআ’নের শিক্ষকের ব্যাপারে সাড়ে আট বছর বন্দী থাকার ফায়সালা করেছে, কেননা তারা ১৯৯৪ সালে যখন তাদের বয়স ১১ বছর ছিল তখন দু’জন বাচ্চাকে নিয়ম বহির্ভুতভাবে এক মসজিদে কোরআ’ন শিখানোর অপরাধে লিপ্ত হয়েছিল। যেহেতু এ মামালাটির অনেকদিন পর্যন্ত শুনানী চলছিল তাই দীর্ঘদিন পর এর রায় ঘোষণা করা হল।[৮]

আমাদের সামনে আরও একটি উদাহরণ, উপমহাদেশে ভারত ও পাকিস্তানের বড় মোগল, যে ইতিহাসে জালালুদ্দীন আকবর নামে পরিচত, জালালুদ্দীন আকবর আল্লাহ্‌র দ়ীনের ভিত্তি এ দর্শনের উপর রেখেছে যে, ইসলাম ১৪শত বছরের পুরাতন ধর্ম, এখন আমাদের একটি নূতন উন্নত ধর্ম দরকার, তাই বাদশাহ্ সালামত একটি নূতন দিন আবিষ্কার করল, যার কালেমা ছিল ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ আকবর খলিফাতুল্লাহ্‌’। ভারতে যেহেতু বিভিন্ন ধর্মের লোকদের বসবাস ছিল তাই এধর্মে মুসলমান ব্যতীত সমস্ত দলসমূহের সন্তুষ্টির প্রতি লক্ষ্য রাখা হল, অগ্নিপূজকদের সন্তুষ্ট রাখার জন্য শাহী মহলে পৃথকভাবে আগুন জ্বালিয়ে আলোকিত রাখা হত এবং তার পূজা করা হত, তাদের ধর্মীয় উৎসবসমূহ সরকারীভাবে পালন করা হত, খৃষ্টানদেরকে সন্তুষ্ট রাখার জন্য ঈসা (আ.) এবং মারইয়ামের মূর্তি তৈরি করে তার সামনে আকবর সম্মান জানাতে দাঁড়াত, আবার চার্চেও উপস্থিত হত। হিন্দুদেরকে সন্তুষ্ট রাখার জন্য হিন্দুদের মূর্তি এবং তাদের বিভিন্ন উৎসব সরকারীভাবে পালন করা হত, আকবর নিজে মাথায় তিলক ব্যবহার করত, গাভী কোরবানী করা নিষেধ করেছিল, তার মহলে বানর ও কুকুর পালিত হত,  বানরকে পবিত্র প্রাণীর মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল, মহলে নিয়মিত জুয়ার আসর বসত, জীনভূতের অনুসারীদেরকে সন্তুষ্ট রাখার জন্য আকবর শুধু শিকার করাই ত্যাগ করে নি, বরং মাংস খাওয়াও পরিহার করেছিল। ইসলামী বিধি-বিধানসমূহকে প্রকাশ্যে বিদ্রুপ করা হয়েছে, সূদ, জুয়া, মদ পান হালাল করে দেওয়া হয়েছিল, দাড়ি মুণ্ডাতে উৎসাহিত করার জন্য আকবর নিজের দাড়ি মুণ্ডন করেছিল। মোহাম্মদ, আহমদ, মোস্তফা ইত্যাদি নাম রাখা নিষেধ করা হয়েছিল, নূতন মসজিদ নির্মাণের ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা জারি করা হয়েছিল, পুরাতন মসজিদসমূহ ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছিল, আযান, নামায, রোযা, হজ্ব ইত্যাদি ইবাদতের ক্ষেত্রে বাধ্য বাধকতা ছিল, বার বছরের আগনে খতনা করা নিষেধ ছিল। এরপর মেয়েদর স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছিল যে, তারা চাইলে খতনা করতে পারবে আর না চাইলে করবে না। একাধিক বিয়ে নিষেধ করা হয়েছিল, ইসলামী শিক্ষা-ব্যবস্থাকে পঙ্গু করা হয়েছিল। অথচ, বিজ্ঞান, দর্শন, গণিত, ইতিহাস ইত্যাদি শিক্ষা ব্যবস্থা সরকারী ছত্রছায়ায় চলত। বায়তুল্লাহ্‌কে অবমাননা করার ইচ্ছা নিয়ে আকবর রাতে কেবলার দিকে পা দিয়ে রাত্রি যাপন করত, আকবের এ নূতন উন্নত ধর্ম যদি পরিপূর্ণভাবে বিস্তারের সুযোগ পেত তাহলে আজ সমগ্র হিন্দুস্থান কুফরস্থানে পরিণত হত। কিন্তু আল্লাহ্‌র ইচ্ছা সবকিছুর উপর বিজয়ী। ঐ সময়ে আল্লাহ্‌ শাইখ আহমদ সেরহিন্দি রাহিমাহুল্লাহের মাধ্যমে এ কুসংস্কারকে সমূলে উৎপাটনের জন্য ভূমিকা রাখলেন, যার সুন্দর পক্ষেপের ফলে আবুল আলা মওদূদী রাহিমাহুল্লাহের ভাষায়, ‘শুধু হিন্দুস্তানকেই কুফরীর অতলতলে যাওয়া থেকে বাঁচান নি, বরং এ বিশাল ফিতনা মুখথুবড়ে পড়ে গিয়েছিল। যদি তা কামিয়াব হতে পারত, তাহলে আজ থেকে ৩/৪শ’ বছর আগেই এখান থেকে ইসলামের নাম নিশানা মিটে যেত।[৯]

মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের রেখে যাওয়া সংস্কার ‘নূতন উন্নত ধর্ম’ আকবরের রেখে যাওয়া সংস্কার ‘নূতন উন্নত ধর্ম’, আর মোশাররফের রেখে যাওয়া সংস্কার ‘আলোকিত চিন্তা’, এ তিনটি পন্থাই সাধারণ মানুষের জন্য দৃষ্টি আকর্ষক হলেও ইসলামের জন্য তা বিষাক্ত।

বর্তমান যুগের আলোকিত চেতনার মূল আলোকিত চেতনা নয় বরং তা হল ঐ অন্ধকার এবং যুলম যে পথে শয়তান তার বন্ধুদের আনতে চায়। যেমন স্বয়ং আল্লাহ্ বলেছেন—

اللَّهُ وَلِيُّ الَّذِينَ آمَنُوا يُخْرِجُهُمْ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ ۖ وَالَّذِينَ كَفَرُوا أَوْلِيَاؤُهُمُ الطَّاغُوتُ يُخْرِجُونَهُمْ مِنَ النُّورِ إِلَى الظُّلُمَاتِ ۗ أُولَٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ ٢٥٧

অর্থ: “আর যারা কুফরী করে তাদের অভিভাক হচ্ছে তাগুত (শয়তান) তারা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়, এরাই হল জাহান্নামী, চিরকাল তারা সেখানেই থাকবে। (সূরা বাকারাহ-২৫৭)

অতএব আলেমদের উচিত হল সর্ব সাধারণকে এ আলোকিত চেতনা সম্পর্কে অবগত করানো এবং তাদেরকে বুঝানো যে আমাদের অতীত মোটেও অনুজ্জ্বল নয় বরং অন্যান্য সমস্ত উম্মতদের তুলনায় আমাদের অতীত সবচেয়ে উজ্জ্বল এবং আলোকিত যাতে আমাদের গৌরব রয়েছে, আমরা ১৪শত বছরের পুরানো শরীয়তে মোহাম্মদীকে আমাদের জীবনের চেয়েও অধিক ভালবাসি। এরই উপর মৃত্যুবরণ করা এবং এরই উপর পুনরুত্থিত হওয়া আমাদের জীবনের লক্ষ্য। এর বিপরীতে শয়তানের সংস্কৃতি, আলোকিত চেতনা, নিরপেক্ষতা, আমার ঘৃণাকরি এবং এ থেকে আমরা মুক্ত। আমাদেরকে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে—

أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آمَنُوا بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَنْ يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُوا أَنْ يَكْفُرُوا بِهِ وَيُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُضِلَّهُمْ ضَلَالًا بَعِيدًا ٦٠

অর্থ: “আপনি কি তাদেরকে দেখেননি যারা দাবী করে যে, যা আপনার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে আমার সে বিষয়ের উপর ঈমান এনেছি এবং আপনার পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে। তারা বিরোধীয় বিষয়কে শয়তানের দিকে নিয়ে যেতে চায়, অথচ তাদের প্রতি নির্দেশ হয়েছে যাতে তারা ওকে মান্য না করে, পক্ষান্তরে শয়তান তাদেরকে প্রতারিত করে পথভ্রষ্ট করে ফেলতে চায়। (সূরা নিসা-৬০)

সূত্রনির্দেশ ও টীকা

  1. রোযনামা নাওয়ায়ে ওয়াক্ত, লাহোর, ১৬ ডিসেম্বর ২০০৪।
  2. রোযনামা নাওয়ায়ে ওয়াক্ত, লাহোর, ৮ ডিসেম্বর ২০০৪।
  3. রোযনামা নাওয়ায়ে ওয়াক্ত, লাহোর, ৮ ডিসেম্বর ২০০৪।
  4. রোযনামা নাওয়ায়ে ওয়াক্ত, লাহোর, ১১ ডিসেম্বর ২০০৩।
  5. মাহেনামা মোহাদ্দেস, লাহোর, মে ২০০৫।
  6. ইসলামী রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে রাষ্ট্রপ্রধানের ধারণা এই যে, পাকিস্তানে ইসলামী রাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়ন যোগ্য নয়, এগুলো কিছু পরীর কিস্‌সার ন্যায় যা উন্নতির এ যুগে প্রযোজ্য নয়। (মাজাল্লা দাওয়া, লাহোর, শা’বান ১৪২৪ হিজরী।
  7. দেশে আলোকিত চিন্তা ব্যাপক করার ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় কর্মচারীদের মনপুত হওয়ার অনুমান নিম্নোক্ত সংবাদসমূহ থেকে পাওয়া যাবে— ‘বেফাকী শিক্ষাবোর্ডের মন্ত্রী নবম শ্রেণীর দু’জন ছাত্রীকে ১০,০০০০০০ রূপিয়া পুরষ্কার দিয়েছে, কারণ তারা কানাডা গিয়ে সমকামিতার পক্ষে বক্তব্য রেখে ট্রফি জিতেছে। —রোজনামা উম্মত, করাচী, মাহেনামা তায়েবাত-এর সূত্র, লাহোর, এপ্রিল ২০০৫।
  8. সহিফা আহলে হাদীস করাচী, ১৭ ডিসেম্বর ২০০৩।
  9. দেখুন—তাজদীদ ও ইহইয়ায়ে দ্বীন, মাওলানা সাইয়্যেদ আবুল আ’লা মওদূদী রাহিমাহুল্লাহ। আরও দেখুন, তারিখ পাক ওয়া হিন্দু, আবদুল্লাহ্‌ মূল্‌ক লিখিত, সদর শোবা তারিখ ইসলামিয়া কলেজ, রেলওয়ে রোড, লাহোর।