» » তৃতীয় প্রবন্ধ

বর্ণাকার

পূর্ব্বে একবার “লাতেহার” নামক পাহাড়ের উল্লেখ করিয়াছিলাম। সেই পাহাড়ের কথা আবার লিখিতে বসিয়াছি বলিয়া আমার আহ্লাদ হইতেছে। পুরাতন কথা বলিতে বড় সুখ, আবার বিশেষ সুখ এই যে, আমি শ্রোতা পাইয়াছি। তিন চারিটি নিরীহ ভদ্রলোক, বোধ হয় তাঁহাদের বয়স হইয়া আসিতেছে, পুরাতন কথা বলিতে শীঘ্র আরম্ভ করিবেন এমন উমেদ রাখেন, বঙ্গদর্শনে আমার লিখিত পালামৌ-পর্য্যটন পড়িয়াছেন; আবার ভাল বলিয়াছেন। প্রশংসা অতিরিক্ত; তুমি প্রশংসা কর আর না কর, বৃদ্ধ বসিয়া তোমায় পুরাতন কথা শুনাবে; তুমি শুন বা না শুন সে তোমায় শুনাবে, পুরাতন কথা এইরূপে থেকে যায়, সমাজের পুঁজি বাড়ে। আমার গল্পে কাহার পুঁজি বাড়িবে না, কেন না আমার নিজের পুঁজি নাই। তথাপি গল্প করি, তোমরা শুনিয়া আমায় চিরবাধিত কর।

নিত্য অপরাহ্ণে আমি লাতেহার পাহাড়ের ক্রোড়ে গিয়া বসিতাম, তাঁবুতে শত কার্য্য থাকিলেও আমি তাহা ফেলিয়া যাইতাম; চারিটা বাজিলে আমি অস্থির হইতাম; কেন তাহা কখনও ভাবিতাম না; পাহাড়ে কিছুই নূতন নাই, কাহার সহিত সাক্ষাৎ হইবে না, কোন গল্প হইবে না, তথাপি কেন আমায় সেখানে যাইতে হইত জানি না। এখন দেখি এ বেগ আমার একার নহে। যে সময়ে উঠানে ছায়া পড়ে, নিত্য সে সময় কুলবধূর মন মাতিয়া উঠে, জল আনিতে যাইবে; জল আছে বলিলেও তাহারা জল ফেলিয়া জল আনিতে যাইবে; জলে যে যাইতে পাইল না, সে অভাগিনী। সে গৃহে বসিয়া দেখে উঠানে ছায়া পড়িতেছে, আকাশে ছায়া পড়িতেছে, পৃথিবীর রং ফিরিতেছে, বাহির হইয়া সে তাহা দেখিতে পাইল না, তাহার কত দুঃখ। বোধ হয়, আমিও পৃথিবীর রং ফেরা দেখিতে যাইতাম। কিন্তু আর একটু আছে, সেই নির্জ্জন স্থানে মনকে একা পাইতাম, বালকের ন্যায় মনের সহিত ক্রীড়া করিতাম।

এই পাহাড়ের ক্রোড় অতি নির্জ্জন, কোথাও ছোট জঙ্গল নাই, সর্ব্বত্র ঘাস। অতি পরিষ্কার, তাহাও বাতাস আসিয়া নিত্য ঝাড়িয়া দেয়। মৌয়া গাছ তথায় বিস্তর। কতকগুলি একত্রে গলাগলি করে বাস করে, আর কতকগুলি বিধবার ন্যায় এখানে সেখানে একাকী থাকে। তাহারই মধ্যে একটিকে আমি বড় ভাল বাসিতাম, তাহার নাম “কুমারী” রাখিয়াছিলাম। কখন তাহার ফল কি ফুল হয় নাই; কিন্তু তাহার ছায়া বড় শীতল ছিল। আমি সেই ছায়ায় বসিয়া “দুনিয়া” দেখিতাম। এই উচ্চ স্থানে বসিলে পাঁচ সাত ক্রোশ পর্য্যন্ত দেখা যাইত। দূরে চারি দিকে পাহাড়ের পরিখা, যেন সেইখানে পৃথিবীর শেষ হইয়া গিয়াছে। সেই পরিখার নিম্নে গাঢ় ছায়া, অল্প অন্ধকার বলিলেও বলা যায়। তাহার পর জঙ্গল। জঙ্গল নামিয়া ক্রমে স্পষ্ট হইয়াছে। জঙ্গলের মধ্যে দুই একটি গ্রাম হইতে ধীরে ধীরে ধূম উঠিতেছে, কোন গ্রাম হইতে হয়ত বিষণ্ণ ভাবে মাদল বাজিতেছে, তাহার পরে আমার তাঁবু, যেন একটি শ্বেত কপোতী জঙ্গলের মধ্যে একাকী বসিয়া কী ভাবিতেছে। আমি অন্যমনস্কে এই সকল দেখিতাম; আর ভাবিতাম এই আমার “দুনিয়া।”

একদিন এই স্থানে সুখে বসিয়া চারি দিক্‌ দেখিতেছি, হঠাৎ একটি লতার প্রতি দৃষ্টি পড়িল; তাহার একটি ডালে অনেক দিনের পর চারি পাঁচটি ফুল ফুটিয়াছিল। লতা আহ্লাদে তাহা গোপন করিতে পারে নাই, যেন কাহারে দেখাইবার জন্য ডালটি বাড়াইয়া দিয়াছিল; একটি কালোকালো বড় গোচের ভ্রমর তাহার চারি দিকে ঘুরিয়া বেড়াইতেছিল; আর এক একবার সেই লতায় বসিতেছিল। লতা তাহাকে নারাজ, ভ্রমর বসিলেই অস্থির হইয়া মাথা নাড়িয়া উঠে। লতাকে এইরূপ সচেতনের ন্যায় রঙ্গ করিতে দেখিয়া আমি হাসিতেছিলাম, এমত সময়ে আমার পশ্চাতে উচ্চারিত হইল:

“রাধে মন্যুং পরিহর হরিঃ পাদমূলে তবায়ং।”

আমি পশ্চাৎ ফিরিলাম, দেখিলাম কেহই নাই, চারি দিক্‌ চাহিলাম, কোথায়ও কেহ নাই। আমি আশ্চর্য্য হইয়া ভাবিতেছি, এমত সময়ে আবার আর এক দিকে শব্দিত হইল,

“রাধে মন্যুং” ইত্যাদি।

আমার শরীর রোমাঞ্চ হইল, আমি সেই দিকে কতক সভয়ে, কতক কৌতূহলপরবশে গেলাম। সে দিকে গিয়া আর কিছুই শুনিতে পাইলাম না। কিয়ৎ পরেই “কুমারীর” ডাল হইতে সেই শ্লোক আবার উচ্চারিত হইল, কিন্তু তখন শ্লোকের স্পষ্টতা আর পূর্ব্বমত বোধ হইল না, কেবল সুর আর ছন্দ শুনা গেল। “কুমারীর” মূলে আসিয়া দেখি, হরিয়াল ঘুঘুর ন্যায় একটি পক্ষী আর একটির নিকট মাথা নাড়িয়া এই ছন্দে আস্ফালন করিতে করিতে অগ্রসর হইতেছে, পক্ষিণী তাহাকে ডানা মারিয়া সরিয়া যাইতেছে, কখন কখন অন্য ডালে গিয়া বসিতেছে। এবার আমার ভ্রান্তি দূর হইল, আমি মন্দাক্রান্তাচ্ছন্দের একটিমাত্র শ্লোক জানিতাম; ছন্দটি উচ্চারণ মাত্রেই শ্লোকটি আমার মনে আসিয়াছিল, সঙ্গে সঙ্গে কর্ণেও তাহার কার্য্য হইয়াছিল; আমি তাহাই শুনিয়াছিলাম “রাধে মন্যুং।” কিন্তু পক্ষী বর্ণ উচ্চারণ করে নাই, কেবল ছন্দ উচ্চারণ করিয়াছিল। তাহা যাহাই হউক, আমি অবাক্‌ হইয়া পক্ষীর মুখে সংস্কৃত ছন্দ শুনিতে লাগিলাম। প্রথমে মনে হইল, যিনি ‘উদ্ধবদূত’ লিখিয়াছেন, তিনি হয়ত এই জাতি পক্ষীর নিকট ছন্দদ পাইয়াছিলেন। শ্লোকটির সঙ্গে এই “কুঞ্জকীরানুবাদের” বড় সুসঙ্গতি হইয়াছে। শ্লোকটি এই—

রাধে মন্যুং পরিহর হরিঃ পাদমূলে তবায়ং।
জাতং দৈবাদসমৃশমিদং বারমেকং ক্ষমস্ব॥
এতানাকর্ণয়সি নয়বন্ কুঞ্জকীরানুবাদান।
এভিঃ ক্রুরৈর্বয়মবিরতং বঞ্চিতাঃ বঞ্চিতাঃ স্মঃ॥

উদ্ধব মথুরা হইতে বৃন্দাবনে আসিয়া রাধার কুঞ্জে উপস্থিত হইলে গোপীগণ আপনাদের দুঃখের কথা তাঁহার নিকট বলিতেছেন, এমত সময়ে কুঞ্জের একটা পক্ষী বৃক্ষশাখা হইতে বলিয়া উঠিল, “রাধে আর রাগ করিও না। চেয়ে দেখ, স্বয়ং হরি তোমার পদতলে। দৈবাৎ যাহা হইয়া গিয়াছে, একবার তাহা ক্ষমা কর।” গোপীরা এত বার এই কথা রাধিকাকে বলিয়াছে যে, কুঞ্জ-পক্ষীরা তাহা শিখিয়াছিল। যাহা শিখিয়াছিল, অর্থ না বুঝিয়া পক্ষীরা তাহা সর্ব্বদাই বলিত। গোপীরা উদ্ধবকে বলিলেন, “শুন্‌লে—কুঞ্জের ঐ পাখী কী বলিল—শুন্‌লে? একে বিধাতা আমাদের বঞ্চনা করেছেন, আবার দেখ, পোড়া পক্ষীও কত দগ্ধাচ্ছে।”

পক্ষী আবার বলিল, “রাধে মন্যুং পরিহর হরিঃ পাদমূলে তবায়ং”। তাহাই বলিতেছিলাম বিহঙ্গচ্ছন্দে বিহঙ্গের উক্তি বড় সুন্দর হইয়াছিল।

ছন্দ কি গীত শিখাইলে অনেক পক্ষী তাহা শিখিতে পারে; কিন্তু ছন্দ যে কোন পক্ষীর স্বরে স্বাভাবিক আছে, তাহা আমি জানিতাম না। সুতরাং বন্য পক্ষীর মুখে ছন্দ শুনিয়া বড় চমৎকৃত হইয়াছিলাম। পক্ষীটির সঙ্গে কতই বেড়াইলাম, কত বার এই ছন্দ শনিলাম, শেষ সন্ধ্যা হইলে তাঁবুতে ফিরিয়া আসিলাম। পথে আসিতে আসিতে মনে হইল, যদি এখানে কেহ ডারউইন সাহেবের ছাত্র থাকিতেন, তিনি ভাবিতেন নিশ্চয়ই এ পক্ষীটি রাধাকুঞ্জের শিক্ষিত পক্ষীর বংশ, বৈজিক কারণে পূর্ব্বপুরুষের অভ্যস্ত শ্লোক ইহার কণ্ঠে আপনি আসিয়াছে। বৈষ্ণবদের উচিত, এ বংশকে আপন আপন কুঞ্জে স্থান দেন। রাধাকুঞ্জের সকল গিয়াছে, সকল ফুরাইয়াছে, কেবল এই বংশ আছে। আমার ইচ্ছা আছে, একটি হরিয়াল পালন করি, দেখি সে “রাধে মন্যুং পরিহর” বলে কি না বলে।

আর এক দিনের কথা বলি; তাহা হইলেই লাতেহার পাহাড়ের কথা আমার শেষ হয়। যেরূপ নিত্য অপরাহ্ণে এই পাহাড়ে যাইতাম, সেইরূপ আর এক দিন যাইতেছিলাম, পথে দেখি একটি যুবা বীরদর্পে পাহাড়ের দিকে যাইতেছে, পশ্চাতে কতকগুলি স্ত্রীলোক তাহাকে সাধিতে সাধিতে সঙ্গে যাইতেছে। আমি ভাবিলাম, যখন স্ত্রীলোক সাধিতেছে, তখন যুবার রাগ নিশ্চয় ভাতের উপর হইয়াছে; আমি বাঙ্গালী, সুতরাং এ ভিন্ন আর কি অনুভব করিব? এক কালে এরূপ রাগ নিজেও কত বার করিয়াছি, তাহাই অন্যের বীরদর্প বুঝিতে পারি।

যখন আমি নিকটবর্ত্তী হইলাম, তখন স্ত্রীলোকেরা নিরস্ত হইয়া এক পার্শ্বে দাঁড়াইল। বৃত্তান্ত জিজ্ঞাসা করায় যুবা সদর্পে বলিল, “আমি বাঘ মারিতে যাইতেছি, এইমাত্র আমার গোরুকে বাঘে মারিয়াছে। আমি ব্রাহ্মণ-সন্তান; সে বাঘ না মারিয়া কোন্ মুখে আর জল গ্রহণ করিব?” আমি কিঞ্চিৎ অপ্রতিভ হইয়া বলিলাম “চল, আমি তোমার সঙ্গে যাইতেছি।” আমার অদৃষ্টদোষে বগলে বন্দুক, পায়ে বুট, পরিধানে কোট পেণ্টুলন, বাস তাঁবুতে; সুতরাং এ কথা না বলিলে ভাল দেখায় না, বিশেষতঃ অনেকে আমায় সাহেব বলিয়া জানে, অতএব সাহেবি ধরণে চলিলাম, কিন্তু নিঃসঙ্কোচচিত্তে। আমি স্বভাবতঃ বড় ভীত, তাহা বলিয়া ব্যাঘ্র ভুল্লুক সম্বন্ধে আমার কখন ভয় হয় নাই। বৃদ্ধ শিকারীরা কত দিন পাহাড়ে একাকী যাইতে আমায় নিষেধ করিয়াছে, কিন্তু আমি তাহা কখনও গ্রাহ্য করি নাই, নিত্য একাকী যাইতাম; বাঘ আসিবে, আমায় ধরিবে, আমায় খাইবে, এ সকল কথা কখনও আমার মনে আসিত না। কেন আসিত না, তাহা আমি এখনও বুঝিতে পারি না। সৈনিক পুরুষদের মধ্যে অনেকে আপনার ছায়া দেখিয়া ভয় পায়, অথচ অম্লান বদনে রণ-ক্ষেত্রে গিয়া রণ করে। গুলি কি তরবার তাহার অঙ্গে প্রবিষ্ট হইবে, এ-কথা তাহাদের মনে আইসে না। যত দিন তাহাদের মনে এ কথা না আইসে, তত দিন লোকের নিকট তাহারা সাহসী; যে বিপদ্‌ না বুঝে, সেই সাহসিক। আদিম অবস্থায় সকল পুরুষই সাহসী ছিল, তাহাদের তখন ফলাফলজ্ঞান হয় নাই। জঙ্গলীদের মধ্যে অদ্যাপি দেখা যায়, সকলেই সাহসী, ইউরোপীয় সভ্যদের অপেক্ষাও অনেক অংশে সাহসী; হেতু ফলাফলবোধ নাই। আমি তাহাই আমার সাহসের বিশেষ গৌরব করি না। সভ্যতার সঙ্গে সঙ্গে সাহসের ভাগ কমিয়া আইসে; পেনাল কোড যত ভালো হয় সাহস তত অন্তর্হিত হয়। এখন এ সকল কচকচি যাক।

যুবার সঙ্গে কতক দূর গেলে সে আমায় বলিল, “বাঘটি আমি স্বহস্তে মারিব।” আমি হাসিয়া সম্মত হইলাম। যুবা আর কোন কথা না বলিয়া চলিল। তখন হইতে নিজের প্রতি আমার কিঞ্চিৎ ভাল বাসার সঞ্চার হইল। “হস্তে মারিব” এই কথায় বুঝাইয়াছিল, যে পরহস্তে বাঘ মারা সম্ভব; আমি সাহেববেশধারী, অবশ্য বাঘ মারিলে মারিতে পারি, যুবা এ কথা নিশ্চয় ভাবিয়াছিল, তাহাতেই কৃতার্থ হইয়াছিলাম। তাহার পর কতক দূর গিয়া উভয়ে পাহাড়ে উঠিতে লাগিলাম। যুবা অগ্রে, আমি পশ্চাতে। যুবার স্কন্ধে টাঙ্গী, সে একবার তাহা স্কন্ধ হইতে নামাইয়া তীক্ষ্ণতা পরীক্ষা করিয়া দেখিল, তাহার পর কতক দূর গিয়া মৃদুস্বরে আমাকে বলিল, আপনি জুতা খুলুন, শব্দ হইতেছে। আমি জুতা খুলিয়া খালি পায় চলিতে লাগিলাম, আবার কতক দূর গিয়া বলিল, “আপনি এইখানে দাঁড়ান, আমি একবার অনুসন্ধান করিয়া আসি।” আমি দাঁড়াইয়া থাকিলাম, যুবা চলিয়া গেল। প্রায় দণ্ডেক পরে যুবা আসিয়া অতি প্রফুল্লবদনে বলিল, “হইয়াছে, সন্ধান পাইয়াছি, শীঘ্র আসুন, বাঘ নিদ্রা যাইতেছে।” আমি সঙ্গে গিয়া দেখি, পাহাড়ের একস্থানে প্রকাণ্ড দীর্ঘিকার ন্যায় একটি গর্ত্ত বা গুহা আছে, তাহার মধ্যস্থানে প্রস্তরনির্ম্মিত একটি কুটীর, চতুঃপার্শ্বস্থ স্থান তাহার প্রাঙ্গণস্বরূপ। যুবা সেই গর্ত্তের নিকটে এক স্থানে দাঁড়াইয়া অতি সাবধানে ব্যাঘ্র দেখাইল। প্রাঙ্গণের এক পার্শ্বে ব্যাঘ্র নিরীহ ভাল মানুষের ন্যায় চোখ বুজিয়া আছে, মুখের নিকট সুন্দর নখরসংযুক্ত একটি থাবা দর্পণের ন্যায় ধরিয়া নিদ্রা যাইতেছে। বোধ হয় নিদ্রার পূর্ব্বে থাবাটি একবার চাটিয়াছিল। যে দিকে ব্যাঘ্র নিদ্রিত ছিল, যুবা সেই দিকে চলিল। আমায় বলিল, “মাথা নত করিয়া আসুন, নতুবা প্রাঙ্গণে ছায়া পড়িবে।” তদনুসারে আমি নতশিরে চলিলাম; শেষ প্রাঙ্গণে একখানি বৃহৎ প্রস্তরে হাত দিয়া বলিল, “আসুন, এইখানি ঠেলিয়া তুলি।” উভয়ে প্রস্তরখানিকে স্থানচ্যুত করিলাম। তাহার পর যুবা একা তাহা ঠেলিয়া গর্ত্তের প্রান্তে নিঃশব্দে লইয়া গেল, একবার ব্যাঘ্রের প্রতি চাহিল, তাহার পর প্রস্তর ঘোর রবে প্রাঙ্গণে পড়িল। শব্দে কি আঘাতে তাহা ঠিক জানি না, ব্যাঘ্র উঠিয়া দাঁড়াইয়াছিল; তাহার পর পড়িয়া গেল। এ নিদ্রা আর ভাঙিল না। পর-দিবস বাহকস্কন্ধে ব্যাঘ্রটি আমার তাঁবু পর্য্যন্ত আসিয়াছিলেন; কিন্তু তখন তিনি মহানিদ্রাচ্ছন্ন বলিয়া বিশেষ কোন প্রকার আলাপ হইল না।