ভোরে আসার কথা ছিলো। আসতে বেলা হয়ে গেলো ওর। ছাইদানের ওপর রাখা সিগারেট থেকে শীর্ণ ধোঁয়ার রেখা সাপের মত এঁকেবেঁকে উঠে বাতাসে মিইয়ে যাচ্ছে। বিছানা শূন্য। কৌচেও কেউ বসে নেই।

বাথরুমে ঝাঁপঝপ শব্দ হচ্ছে পানি পড়ার। বজলে চারপাশে তাকিয়ে টেবিলের ওপর থেকে একটি ম্যাগাজিন তুলে নিয়ে ছবি দেখতে লাগলো।

কিছুক্ষণ পর পানি পড়ার শব্দ বন্ধ হলে, তোয়ালে দিয়ে মাথার পানি মুছতে মুছতে বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলো মাহমুদ। এই যে তুমি এসে গেছ, তাহলে। ও হেসে বললো, ওই পত্রিকার নিচে সিগারেটের প্যাকেট আছে নিয়ে একটা ধরাও।

বজলে শুধালো,সাহানাকে দেখছি না, ও কোথায় গেলো?

চুলে তেল মাখছিলো মাহমুদ, মুখ না ঘুরিয়েই বললো, আর বলো না, ওর সঙ্গে কাল রাতে একটা বিশ্রী রকমের ঝগড়া হয়ে গেছে আমার!

হঠাৎ?

না, ঠিক হঠাৎ নয়। কদিন থেকে সম্পর্কটা বড় ভালো যাচ্ছিলো না।

ক্ষণিক বিরতি নিয়ে মাহমুদ আবার বললো,তুমিতো জান, ওর ব্যাপারে কোনদিন কোন কার্পণ্য করি নি আমি। যখন যা চেয়েছেদিয়েছি, কিন্তু কি জানো, মেয়েটা এক নম্বরের নিমকহারাম, বড় নির্লজ্জ, আর ওর কথা শুনে তোমার কাজ নেই। থেমে আবার নতুন কিছু বলতে যাচ্ছিলো মাহমুদ। বজলে বাধা দিয়ে বললো, কিন্তু সে গেলো কোথায়?

মাহমুদ ক্ষণকাল চুপ করে থেকে বললো, চলে গেছে, ভোরে উঠে ওর মালপত্র নিয়ে বুঝলে বজলে, একটা কথা না বলে চলে গেছে।

যাক, মরুকগে, আমার কি? চুলের ওপর চিরুনি বুলোতে বুলোতে মুখটা বিশ্রীভাবে বাঁকালো মাহমুদ।

সিগারেটটা ধরিয়ে নিয়ে ম্যাগাজিনের ওপর আবার চোখ নাবালো সে।

হ্যাঁ, যে কথা বলার জন্য ডেকেছিলাম বজলে–।

হুঁ, বলো। পত্রিকাটা টেবিলের ওপর নাবিয়ে রাখলে সে।

দেয়ালে টাঙানো ওর নিজের ছবিটার দিকে তাকিয়ে মাহমুদ মৃদু গলায় বললো, মুনিম তোমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু, তাই না?

এ ধরনের প্রশ্ন আশা করে নি বজলে। তাই প্রথমে সে কিছুক্ষণের জন্যে বোবা হয়ে গেলো। তারপর আস্তে করে বললো, না, ঠিক ঘনিষ্ঠ বন্ধু নয় তবে তার সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের আলাপ। কিন্তু, কেন বল তো?

না, এমনি। থেমে আবার বললো মাহমুদ, ওর সম্পর্কে তোমার ধারণাটি কি বলতো, মানে ছেলেটা কেমন?

সিগারেটে একটা জোর টান দিলো বজলে, তারপর একরাশ ধোঁয়া ছেড়ে বললো, দেখো ব্যক্তি হিসেবে ওকে বেশ ভাল লাগে আমার। তবে ওর রাজনৈতিক আদর্শকে আমি ঘৃণা করি। কিন্তু আজ হঠাৎ এসব প্রশ্ন কেন করছো আমায়?

মাহমুদ সহসা কোন জবাব দিলো না। তারপর যখন সব কিছু খুলে বললো তখন আর কিছু অস্পষ্ট রইলো না বজলের কাছে। বজলের উচিত মুনিমের সঙ্গে খুব সদ্ভাব রাখা। ওর আস্থাভাজন হওয়া। তারপর ধীরে ধীরে ওর কাছ থেকে ভেতরের খবরগুলো সব অতি সাবধানে বের করে নেয়া। কোথায় থাকে সে, কি করে, কাদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ায়, এসব জেনে মাহমুদকে বলা। এর বিনিময়ে তার কর্তাদের কাছ থেকে ওকে একটা মোটা টাকার বন্দোবস্ত করে দিতে পারে মাহমুদ। কোন খাটুনী নেই অথচ ফিয়াসেকে নিয়ে আমোদফুর্তিতে থাকার মত অনেক টাকা পাবে সে।

অর্থাৎ তুমি আমাকে গোয়েন্দাগিরি করতে বলছ, তাই না? অল্প একটু হেসে গম্ভীর হয়ে গেলো বজলে ।

না, ঠিক তা নয়, বুঝলে বজলে, ব্যাপারটা ঠিক তা নয়। মাহমুদ ইতস্তত করছিলো।

প্যাকেট থেকে আরেকটা সিগারেট বের করে নিয়ে বজলে ধীরে ধীরে কেটে কেটে বললো, দেখো মাহমুদ, তুমিতো আমাকে জান, জীবন সম্পর্কে আমার নিজস্ব একটা দর্শন। আছে, সেটা হলো, কারো ক্ষতি না করা, কাউকে দিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ না হওয়া। ঝামেলা আমার ভাল লাগে না। আমি চাই নিরুজ্ৰৰ অথচ সুন্দর জীবন। আমাকে ওসব জটিলতার ভেতর না টানলে ভালো হয় না?

একটু আগের হালকা আবহাওয়াটা হঠাৎ যেন একটু গুমোট বলে মনে হলে মাহমুদের। উভয়ে খানিকক্ষণের জন্যে মৌন হয়ে রইলো। অবশেষে মৌনতা ভেঙ্গে বজলে বললো, তুমি কি এখন বেরুবে কোথাও?

দেয়ালে একটা টিকটিকি খাবারের তালাশে ঘুরে বেড়াচ্ছিলো, সেদিকে চেয়ে থেকে মাহমুদ বললো, না, এ বেলা কোথাও যাবার ইচ্ছা নেই, ঘরেই থাকবো।

একটু পরে বজলে উঠে দাড়ালো,দুপুরের দিকে ডলি হয়তো আসতে পারে এখানে, এলে বসতে বলো, আমি আবার আসবো–বলে আর অপেক্ষা করলো না।

ও চলে গেলে কিছুক্ষণ চোখ মুদে চুপচাপ বসে রইলো মাহমুদ। হাত ঘড়িটা দেখলো। বার কয়েক । নটা বাজতে মিনিট কয়েক বাকি।

এতক্ষণে তার এসে যাবার কথা। মাহমুদ বিড়বিড় করে বললো, এখনো এলো না যে? উঠে কিছুক্ষণ ঘরের মধ্যে পায়চারি করলো সে। জানালায় গিয়ে দাঁড়িয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে রইলো। হঠাৎ সিড়িতে পায়ের শব্দ শোনা যেতে শিকারি কুকুরের মত কানজোড়া খাড়া হয়ে গেলো তার।

হ্যাঁ, তারই পায়ের শব্দ। মুখখানা প্রসন্ন হাসিতে ভরে গেলো। একটু পরে পর্দার ফাঁক দিয়ে তার চেহারা দেখা গেলো। মাহমুদ মৃদু হেসে ডাকলো, এসো।

চারপাশে এক পলক তাকিয়ে নিয়ে ভেতরে এসে কৌচের উপর বসলো সবুর । মাহমুদ উৎকণ্ঠা নিয়ে বললো, এত দেরি হলো যে?

সবুর একটা ক্লান্তির হাই তুলে বললো, হলে কয়েকটি ছেলে এ্যারেষ্ট হয়েছে, ওদেরে নিয়ে ছেলেদের মধ্যে ভীষণ উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে কিনা তাই আসতে দেরি হয়ে গেলো। বলে আরেকবার চারপাশে তাকালো সে।

মাহমুদ সিগারেটের প্যাকেটটা ওর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো, তারপর কি খবর বলো।

সবুর মৃদু হেসে বললো, গতকাল যে রিপোর্টটা পাঠিয়েছিলাম, পেয়েছেন তো?

মাহমুদ মাথা সামনে একটু ঝুঁকিয়ে বললো,হ্যাঁ পেয়েছি।

সবুর বললো, আমাকে এখুনি আবার ফিরে যেতে হবে হলে। আজকের রিপোর্টটা বিকেলে পাঠিয়ে দেবো। আমাকে ডেকেছিলেন কেন বলুন তো?

হ্যাঁ, তোমাকে ডেকেছিলাম, বলতে গিয়ে কি যেন ভাবলো মাহমুদ।

তোমাকে ডেকেছিলাম, হ্যাঁ, শোন, একটু সাবধানে থেকে আর তোমার রিপোর্টগুলো খুব ভাসা ভাসা হয়ে যাচ্ছে, আরো একটু বেশি করে ইনফরমেশন দেবার চেষ্টা করো।

সবুর আহত হলো। কেন, ইনফরমেশন কি আমি কম দিই।

না না, সে কথা আমি বলছি নে। শব্দ করে হেসে পরিবেশটা হাল্কা করে দিতে চাইলে মাহমুদ। বললো, আরো ইনফরমেশন থাকা দরকার। আমি সে কথা বলছিলাম।

আচ্ছা ভবিষ্যতে তাই চেষ্টা করবো। সবুর উঠে দাঁড়ালো। দরজার কাছে গিয়ে আবার ফিরে এলো সে।

মাহমুদ জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে বললো, কি?

সবুর বললে, আমার এ মাসের বিলটা এখনো পাইনি।

ও হ্যাঁ, তোমার বিল তৈরি হয়ে আছে, দু-একদিনের মধ্যেই পেয়ে যাবে।

একটা সিগারেট ধরিয়ে টেবিলের ওপর রাখা ম্যাগাজিনটার পাতা উল্টাকে লাগলো মাহমুদ। সবুরের পায়ের শব্দটা একটু পরে ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেলো সিড়ির ওপর।

 

বেলা নটা দশটা থেকে ছেলেরা বিভিন্ন হল, কলেজ আর স্কুল থেকে এসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জমায়েত হতে লাগলো। রাস্তা দিয়ে দলবদ্ধভাবে না এসে একজন দু’জন করে আসছিলো ওরা। কারণ শহরে তখনো একশ চুয়াল্লিশ ধারা পুরোপুরিভাবে বহাল রয়েছে। জীপে চড়ে পুলিশ অফিসাররা ইতস্তত ছুটোছুটি করছে রাস্তায়। কয়েকটি রাস্তার মোড়ে স্টেনগান আর ব্রেনগান নিয়ে রীতিমত ঘাঁটি পেতে বসেছে ওরা।

শহরের চারপাশ থেকে ছেলেরা যেমন আসছিলো তেমনি সাথে করে নতুন নতুন খবর নিয়ে আসছিলো ওরা। একদল ছেলে নিজেদের মধ্যে কি যেন আলোচনা করতে করতে মধুর স্টলে এসে ঢুকলো। আসা কাছেই বসেছিলো ওদের। ঘাড় বাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, আপনারা কোত্থেকে আসছেন?

আমরা নবকুমার স্কুল থেকে।

আর আপনারা?

আমরা জগন্নাথ কলেজ।

ও দিককার খবর কি?

সাতজনকে এ্যারেস্ট করেছে।

আরে, ডাঃ জামান যে, তোমাদের হোস্টেলে নাকি পুলিশের হামলা হয়েছিলো। ব্যাপার কি?

তিনজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মোট সতেরোজন গ্রেপ্তার হয়েছে, তার মধ্যে সাতজন মেয়ে। ওর কথায় চমকে উঠলো আসাদ।

সালমার কথা মনে পড়লো। ক্ষণিক নীরব থেকে আগ্রহের সাথে সে প্রশ্ন করলো, মেয়েদের হোস্টেলেও হামলা হয়েছিলো বুঝি?

হয়েছিলো মানে, রীতিমত কুরুক্ষেত্র। জামান হেসে জবাব দিলো।

মেয়েরা অবশ্য একহাত দেখিয়েছে এবার। সেই পঞ্চাশ সালের কথা মনে নেই? তখন স্টাইকের সময় আমরা দোরগোড়ায় শুয়ে পড়েছিলাম আর মেয়েরা সব আমাদের গায়ের ওপর দিয়ে টপকে ক্লাশে গিয়েছিলো। সেই পাজী মেয়েগুলো এখন আর নেই। ওগুলো প্রায় সব বেরিয়ে গেছে। এখন নতুন যারা এসেছে তারা বেশ ভালো।

জামান থামলো।

আসাদ ভাবছিলো সালমা গ্রেপ্তার হয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করবে। কিন্তু কি ভেবে প্রশ্ন করলো না সে।

পাশের টেবিলে তখন খাওয়া-দাওয়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলো আরেক দল ছেলে।

একজন ডাকলো, বলাই এদিকে এসো। মধু, কোথায় মধু?

এদিকে দুকাপ চা দাও মধুদা।

খাবার আছে কিছু যা আছে নিয়ে এসো, ভাল করে খেয়ে নিই। যদি এ্যারেস্ট হয়ে যাই তো ক্ষিধেয় মরবো।

কি ব্যাপার, একটা সন্দেশ চেয়ে চেয়ে হয়রান হয়ে গেলাম, এখনি কালো পতাকা তুলতে যেতে হবে, কইরে বলাই, একটা সন্দেশ কি দিবি জলদি করে?

ব্যাটা অপদার্থ, তাড়াতাড়ি কর।

মুনিমকে এদিকে আসতে দেখে আসাদ উঠে দাঁড়ালো। মুনিমের হাতে দুটো কালো পতাকা আর এক বাডিল কালো ব্যাজ। বাডিলটা টেবিলের ওপর নাবিয়ে রেখে মুনিম বললো, আর দেরি করে কি লাভ। ছেলেরা প্রায় সব এসে গেছে। এখন কালো পতাকাটা তুলে দিই, কি বল আসাদ

আসাদ কোন জবাব দেবার আগেই বাইরে থেকে কে যেন একজন চিল্কার করে ডাকলো, মুনিম ভাই, আসুন, আর কত দেরি।

পাশ থেকে রাহাত বললো, দাঁড়ান মুনিম ভাই, একটু দাঁড়ান। এক কাপ চা খেয়ে নিই।

সবুর দাঁড়িয়েছিলো একটু দূরের কথা শুনে সে জ্বলে উঠলো ভীষণভাবে, তোমাদের শুধু খাওয়া আর খাওয়া, কেন, একদিন না খেলে কি চলে না।

তোমার চলতে পারে আমার চলে না। রাহাত রেগে উঠলো। মুনিম বললো, হয়েছে তোমরা এখন ঝগড়া বাধিয়ো না, কালো পতাকা তুলতে কারা কারা যাবে এসো আমার সঙ্গে।

কয়েকজন ছেলে সাথে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ভবনের সিড়ি বেয়ে একটু পরে উপরে উঠে গেলো মুনিম।

নিচে, মধুর স্টলের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে সংঘবদ্ধ হলো বাকি ছেলেরা, সংখ্যায় হয়তো শচার-পাঁচেক হবে ওরা। বয়সের তারতম্যটা সহজে চোখে পড়ে। কারো বয়স ষােল সতেয়োর বেশি হবে না। কারো চব্বিশ পেরিয়ে গেছে। কারো গায়ের রঙ কালো। কারো গৌরবর্ণ। করে পরনে পায়জামা, কারো প্যান্ট। কিন্তু সংকল্পে সকলে এক। প্রতিজ্ঞায় অভিন্ন।

একটু পরে মুনিম আর তার সাথীদের ছাদের উপর দেখা গেলো। ওরা কালো পতাকা তুলছে। পূবালি সুর্যের সোনালি আভায় চিকচিক করছে ওদের মুখখানা। কালো পতাকা উড়ছে আর শ্লোগানের শব্দে ফেটে পড়ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ।

সার বেঁধে কয়েকটা পুলিশের গাড়ি এসে থামলো অদূরে, বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে। গাছের ছায়ায়।

রাহাত মুখে গুনলো এক, দুই, তিন, চার, পাঁচ, ছয়, সাত সাত গাড়ি পুলিশ এসেছে। রে, ওই দেখ, সাত গাড়ি পুলিশ এসেছে। সবুর ঠোঁট বাঁকালো। এতেই ঘাবড়ে গেলে বুঝি? সব পিঁপড়ে, পিঁপড়ে; একেবারে কাপুরুষের দল। এর চাইতে মায়ের কোলে বসে চুকচুক। করে দুধু খাওয়া উচিত ছিলো তোমাদের।

খবরদার, মুখ সামলে কথা বলে বলছি, নইলে। রাহাত ঘুষি বাগিয়ে উঠেছিলো, দৌড়ে এসে ওর হাতটা চেপে ধরলো আসাদ। একি হচ্ছে, একি করছো তোমরা। ছিছি। ঘৃণায় দেহটা রি-রি করে উঠলো। তারা ওদের দিকে কিছু কালো ব্যাজ আর আলপিন এগিয়ে দিয়ে বললো, নাও, কালো ব্যাজ পরাও সকলকে, তোমরাও পরো।

ছেলেরা তখন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে ইতস্তত দল বেঁধে বেঁধে আলাপ আলোচনায় ব্যস্ত। কেউ আলোচনা করছে পুলিশ নিয়ে। কেউ ভাবছে যদি জেলে যেতে হয়। কেউ ভাবছে, যারা জেলে গেছে তাদের কথা।

কয়েকটি ছেলেকে ঘুরে ঘুরে কালো ব্যাজ পাচ্ছিলো। কারো শার্টের পকেটে, কারো কাঁধের ওপর। আসাদ এগিয়ে গেলো তাদের দিকে। আপনারা অমন ঘুরঘুর করছেন কেন? সবাই এক জায়গায় জমায়েত হোন, ওদের ডাকুন। তারপর সে নিজেই ডাক দিলো, ভাইসব। তার ডাকে ছেলেরা এসে ধীরে ধীরে সংঘবদ্ধ হতে লাগলো আম গাছতলায়। মেয়েরাও এসে পৌঁছেছে এতক্ষণে। বারোজন মেয়ে। পরনে সবার কালো পাড় দেয়া শাড়ি। চোখেমুখে সবার আনন্দের উজ্জ্বল দীপ্তি। রাহাত বললো, আপনাদের আর সবাই কোথায়?

নীলা বললো, ওরা আসবে না।

কেন?

ওদের ভয় করে। আম গাছতলায় ছেলেদের পাশে ওর সাথীদের বসিয়ে রেখে নীলা সোজা মুনিমের কাছে এলো। কই ব্যাজ দি আমরা এখনো ব্যাজ পাইনি।

আমার কাছে তো নেই, আসাদের কাছে। হাত দিয়ে অদূরে দাঁড়ানো আসাদকে দেখিয়ে দিলো সে। পুলিশ অফিসাররা তখন গেটের সামনে দাঁড়িয়ে প্রক্টারের সঙ্গে কি যেন আলাপ করছিলো অত্যন্ত অন্তরঙ্গভাবে।

ছেলেরা ওদের দিকে তাকিয়ে আলাপ করছিলো।

তুমি কি মনে করো, পুলিশের ভেতরে আসবে।

আসবে মানে, দেখছে না ওরা ভেতরে আসার জন্যে প্রস্তুত হচ্ছে।

হলেই হলো নাকি, আমরা ওদের ভেতরে ঢুকতে দেবো না।

আমরা এখানে শুয়ে পড়বো তবু ঢুকতে দেবোনা ওদের।

আমরা এখানে জান দিয়ে দেবো, তবু–।

আহ, আপনারা থামুন, এত উত্তেজিত হচ্ছেন কেন, একটু চুপ করুন।

মুনিমের গলা শোনা গেল একটু পরে। কিন্তু সোরগোল থামানো গেলো না। কে একজন চিৎকার করে উঠলো। ওই যে আরো দু রী পুলিশ আসছে, দেখো দেখে।

দু লরী নয়, তিন লরী, তাকে শুধরে দিলো আরেকজন। দেখেছো মাথায় লোহার টুপি লাগিয়েছে ওরা, যেন যুদ্ধ করতে এসেছে।

প্রক্টার সাহেবকে সাথে নিয়ে তিনজন পুলিশ অফিসার লনটা পেরিয়ে দ্রুতপায়ে এগিয়ে এলো ছেলেদের দিকে। ইন্সপেক্টর রশীদের বুকটা কাঁপছিলো ভয়ে। কে জানে ছাত্রদের ব্যাপার, কিছু বলা যায় না। কাছে গেলে কেউ যদি একটা ইট ছুঁড়ে মারে মাথার ওপর, তাহলে?

উহ্‌ কেন যে এই পুলিশ লাইনে এসেছিলাম। অস্পষ্ট গলায় বিড়বিড় করে ওঠে ইন্সপেক্টর রশীদ।

পাশ থেকে কিউ, খান জিজ্ঞেস করেন, কি বললেন?

বড় সাহেবের প্রশ্নে রীতিমত অপ্রস্তুত হয়ে যায় ইন্সপেক্টর রশীদ।

সামলে নিয়ে বললেন, না না, ও কিছু না স্যার। বলছিলাম কি, এই ছেলেগুলো বড় বেশি বেড়ে গেছে, এদের আচ্ছা করে ঠেঙ্গানো উচিত।

হুম, ঠোটের ওপর মৃদু হাসি খেলে গেলে কিউ. খানের।

ওদের এদিকে এগুতে দেখে ছেলেরা এমন বিকটভাবে চিৎকার জুড়ে দিলো যে, কে কি বলছিলো ঠিক বোঝা গেল না। আসাদ এগিয়ে এসে থামাতে চেষ্টা করলোল ওদের । কিন্তু কেউ থামলো না।

ইন্সপেক্টর রশীদ বার কয়েক ইতস্তত করে বললো, আমাদের কথাটা আপনারা একটু শুনবেন কি?

আপনাদের কথা আমরা গুনতে চাই না।

আপনারা এখান থেকে চলে যান।

এটা কি পুলিশ ব্যারাক নাকি?

এটা বিশ্ববিদ্যালয়।

এখানে কে ঢুকতে দিয়েছে আপনাদের?

বেরিয়ে যান, বেরিয়ে যান এখান থেকে।

রাগে চোখমুখ লাল হয়ে গেলে কিউ. খানের কয়েক দাঁতে দাঁত ঘষলেন তিনি।

তারপর ইশারায় সাথীদের ফিরে আসতে বলে, নিজেও ফিরে যাবার জন্যে পা বাড়ালেন। কপালে তার ভাবনার ঘন রেখা। কি করা যেতে পারে এখন?

এদিকে ছেলেরা তখন উত্তেজনায় ফেটে পড়ছে।

ওদের কিছুতে এদিকে আসতে দেবো না আমরা।

না মুনিম ভাই, আপনি না বললে কি হবে। আমরা ওদের বাধা দেবোই। ইট মেরে ওদের মাথা ফাটিয়ে দেব আমরা। সবার গলা ছাপিয়ে সবুরের গলা শোনা গেলো, ভাইসব, তোমরা ইট জোগাড় কর। আমরা জান দেবো তবু মাথা নোয়াবো না। আমরা বীরের মতো লাগবে-ইট জোগাড় করো।

ওর কথাটা শেষ না হতে কে একজন চিৎকার করে উঠলো, পুলিশ।

আরেকজন বললো, পালাও, পালাও।

অদূরে, শখানেক পুলিশ অর্ধ বৃত্তাকারে ছুটে আসছে ছাত্রদের দিকে।

মাথায় ওদের হেলমেট, হাতে একটা করে লাঠি। লোহার নাল লাগানো বুট জুতো দিয়ে শ্যামল
দুৰ্বাঘাসগুলো মাড়িয়ে ছুটে আসছিলো ওরা।

ছুটে আসছিলো দুচোখে বন্য হিংস্রতা নিয়ে। পালাও, পালাও–।

পুলিশ।

এর মাঝে আরেকটি কণ্ঠস্বর শোনা গেলো, ভাইসব, পালিও না, রুখে দাড়াও সে কণ্ঠস্বর আসাদের। কিন্তু তার কণ্ঠস্বর চাপা পরে গেলো চারদিকের উন্মত্ত কোলাহল।

ভাইসব পালিও না। সমস্ত গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠলো আসাদ।

সামনে তাকিয়ে দেখলো পুলিশগুলো প্রায় গায়ের ওপর এসে পড়েছে তার। পেছনে একটা ছেলেও দাঁড়িয়ে নেই, সকলে পালাচ্ছে। শুধু পাঁচটি মেয়ে ভয়ার্ত চোখ মেলে বসে আছে ওর পেছনে
আম গাছতলায় । ভাইসব……। শেষ বারের মত ডাকতে চেষ্টা করলো আসাদ। পরক্ষণে একটা
লাঠি এসে পড়লো ওর কোমরের ওপর।

আর একটা।

আরো একটা আঘাত ।

টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যাচ্ছিলো আসাদ। পাশ থেকে কে যেন গম্ভীর গলায়। বললো, এ্যারেস্ট হিম। আর সঙ্গে সঙ্গে দু’জন কনস্টেবল তাদের ইস্পাত দৃঢ় বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করলো তাকে।

আসাদের মনে পড়লো বায়ান্ন সালের এমনি দিনে প্রথম যে দশজন ছেলে চুয়াল্লিশ ধারা ভঙ্গ করেছিলো তাদের নেতৃত্ব দিয়েছিলো সে।

সেদিনও সবার আগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো তাকে।

আর আজ তিন বছর পর সেই দিনটিতে সে আবার সবার আগে বন্দি হলো। বাণিজ্য
ভবনের দিকে যারা পালাচ্ছিলো, তাদের মধ্যে মেয়েও ছিলো একজন। শাড়িতে পা জড়িয়ে কংক্রিটের রাস্তার ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেলো মেয়েটা। জীবনে কোনদিন পুলিশের মুখোমুখি
হয়নি তাই ভয়ে মুখখানা সাদা হয়ে গেলো তার। কলজেটা ধুকধুক করতে লাগলো গলার কাছে
এসে। মনে মনে সে খোদাকে ডাকলো। খোদা বাঁচাও। পরক্ষণে চেয়ে দেখলো একটা
কনস্টেবল লাঠি উচিয়ে ছুটে আসছে ওর দিকে। অস্ফুট আর্তনাদ করে মেয়েটা চোখজোড়া
বন্ধ করলো।

পুলিশ ভ্যানে উঠে দাঁড়াতে আসাদ পেছনে তাকিয়ে দেখলো, আম গাছতলায় বসে থাকা সে পাঁচটি মেয়েকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসা হচ্ছে এদিকে। নীলা আছে, রানু আর রোকেয়াও আছে ওদের দলে।

ওরা হাত তুলে অভিবাদন জানালে ওকে। তারপর এগিয়ে গেলো আরেকটি পুলিশ ভ্যানের দিকে। ওদের দিক থেকে চোখজোড়া সরিয়ে আনতে আসাদ চমকে উঠলো। রাহাতও গ্রেপ্তার হয়েছে। কপাল চুইয়ে দরদর করে রক্ত ঝরছে ওর। সাদা জামাটা ভিজে লাল হয়ে গেছে রক্তে। কাছে আসতে দু’হাতে ওকে বুকের ভেতর জড়িয়ে নিলো আসাদ। তারপর পকেট থেকে রুমাল বের করে ওর ক্ষতস্থানটা চেপে ধরলো সে। মেয়েরা তখন পাশের ভ্যান থেকে স্লোগান দিচ্ছিলো, বরকতের খুন ভুলবো না। শহীদের খুন ভুলবো না।

আরো জন কয়েক ছেলেকে এনে ভোলা হলো প্রিজন-ভ্যানের ভেতরে। তাদের মধ্যে একজনের কাঁধের ওপর লাঠির ঘা পড়ায় হাড়টা ভেঙ্গে গিয়েছে। তাই ব্যথায় সে। কাতরাচ্ছিলো আর ফিসফিস করে বলছিলো, হাতটা আমার ভেঙ্গে গিয়েছে একেবারে, মাগো ব্যথায় যে মরে গেলাম।

কি, তোমরা চুপ করে কেন স্লোগান দাও।

আসাদ স্লোগান দিলো, শহীদের স্মৃতি।

আর সকলে বললো, অমর হোক।

ছাত্রদের কাছ থেকে প্রথম প্রতিরোধ এলো লাইব্রেরির ভেতরের দরজায়, দুটো টেবিল টেনে এনে দরজার ওপর ব্যারিকেড সৃষ্টি করলো ওরা। একটি ছেলে চিৎকার করে ডাকলো, আরো টেবিল আন এদিকে, আরো, আরো। দরজা আটকে ফেলো, যেন ওরা ঢুকতে না পারে।

ওদের এখানে ঢুকতে দেবো না আমরা।

না কিছুতে না।

ওরা যখন প্রতিরোধ সৃষ্টি করার পরিকল্পনা করছিলো তখন কিছু সংখ্যক ছেলে পুলিশের হাতে ধরা পড়ার ভয়ে সেলফ থেকে কয়েকটা বই নাবিয়ে সুবোধ বালকের মত পড়তে বসে গেলো। বাইরে যে এত কিছু ঘটে গেলো যেন ওসবের সাথে কোন যোগ ছিলো না ওদের। যেন অনেক আগে থেকে এমনি পড়ছিলো ওরা। এখনন পড়ছে।

ওদের দিকে চোখ পড়তে ঘৃণায় দেহটা বার কয়েক কেঁপে উঠলো বেনুর। চোখজোড়া জ্বালাপোড়া করে উঠলো। একটা ছেলের হাত থেকে ছোঁ মেরে বইটা কেড়ে নিয়ে তীব্র গলায় বেনু তিরস্কার করে উঠলো, আপনার লজ্জা করে না এখন বই পড়ছেন, ওদিকে আপনার বন্ধুদের কুকুরের মত মারছে। আপনার লজ্জা করে না।

কয়েকটি ছেলে লজ্জা পেয়ে উঠে দাঁড়ালো।

কিন্তু কয়েকজন উঠলো না। আগের মতো বইয়ের পাতায় মনোনিবেশ করলো তারা।

একজন ছেলে গলা চড়িয়ে বললো, থাক, ওদের পড়তে দাও। কাপুরুষদের শান্তিতে থাকতে দাও। তোমরা সকলে এদিকে এসো। পুলিশগুলোকে এখানে কিছুতে ঢুকতে দেবো না আমরা। কিন্তু পেছনের দরজা দিয়ে পুলিশগুলো ততক্ষণে ঢুকে পড়েছে সেখানে। শুধু সেখানে নয়, মেয়েদের কমনরুমে, অধ্যাপকদের ক্লাবে, বাণিজ্য ভবনে, দোতলার করিডোরে, সারা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাণ্ডব নৃত্য শুরু হয়েছে পুলিশের।

 

ঘুমঘুম চোখে পায়ের শব্দটা কানে আসছিলো তার। ভেজানো দরজাটা ঠেলে কে যেন ঢুকলো ভেতরে। পায়ের শব্দ ঘরের মাঝখানে এসে শ্লথ হয়ে গেলো, তারপর থেমে গেলে এক সময়।

মাহমুদ চোখ মেলে তাকালো এতক্ষণে।

চোখেমুখে অপ্রস্তুত ভাব নিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে ডলি।

ও আপনি বসুন। শুয়েছিলো, উঠে বসলী মাহমুদ।

ওর দিকে ভালো করে তাকাতে সাহস হলো না ডলির। গত রাতের কথা মনে হতে অকারণে আরক্ত হলো সে। টিয়ে রঙের ব্যাগটা টেবিলের ওপর রেখে দিয়ে সামনের কৌটিতে বসে পড়লে ডলি। পরনে তার হলদে ডোরা কাটা শাড়ি। গায়ে সিফনের ব্লাউজ। চুলগুলো সুন্দর বেণি করা। কপালে চন্দনের একটা ছোট্ট ফোটা আর কানে একজোড়া সাদা পাথরের ট। ডলিকে বেশ লাগছিলো দেখতে।

বার কয়েক ইতস্তত করে ওর দিকে না তাকিয়েই ডলি জিজ্ঞেস করলো, বজলের আসার কথা ছিলো, ও কি এসেছিলো এখানে?

বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে ওপাশের বড় জানালাটা খুলে দিলো মাহমুদ, তারপর বললো, এসেছিলো, আপনাকে বসতে বলে গেছে।

ডলি হতাশ হলো। আসবে তো বলে গেছে, কিন্তু কখন আসবে তার কি কোন ঠিক আছে। এতক্ষণ কি করে এখানে অপেক্ষা করবে ডলি?

দুজনে চুপ করে ছিলো।

মাহমুদ নীরবতা ভেঙ্গে একটু পরে বললো, শহরের কোন খবর জানেন?

ডলি প্রথমে ঠিক বুঝতে পারলো না। পরে বুঝতে পেরে বললো, না। কিছু জানে না সে।

মাহমুদ বললো, ইউনিভার্সিটি থেকে কয়েকশ ছেলেকে গ্রেপ্তার করেছে। ডলি চোখ তুলে তাকালো ওর দিকে। কার কাছ থেকে শুনলেন?

কণ্ঠস্বরে ওর ব্যগ্রতা দেখে একটু অবাক না হয়ে পারলো না মাহমুদ।

বললো, সারা শহর জানে আর আপনি জানেন না?

এ কথার পর চুপ করে গেলোডলি। আর কোন প্রশ্ন তাকে করলো না। মাহমুদ লক্ষ্য করলো ডলি যেন বড় বেশি গম্ভীর হয়ে গেছে। কিছু ভাবছে সে, কিন্তু অত গভীরভাবে কি ভাবতে পারে ডলি?

একটু পরে ডলি জিজ্ঞেস করলো, কেন গ্রেপ্তার করা হলে ওদের?

মাহমুদ না হেসে পারলো না। হেসে বললো, বড় বোকার মত প্রশ্ন করলেন আপনি, বিনে কারণে কি ওদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওরা আইন অমান্য করেছিলো। ক্ষণকাল থেকে মাহমুদ আবার বললো, ওদের নেতা কি যেন নাম ছেলেটার, হ্যাঁ, মুনিম, একে নিশ্চয় চিনেন আপনি? ডলি চমকে উঠে বললো, কই নাতো, আপনি কার কাছে শুনলেন? মাহমুদ মৃদু হেসে বললো, বজলের বন্ধু কিনা, তাই ভাবলাম সে ওর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েছে।

ডলি মাটিতে চোখজোড়া নাবিয়ে রেখে ঈষৎ ঘাড় নাড়লো, না বজলে ওর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেয় নি ডলির।

আলোচনার ধারাটা হয়তো অন্য দিকে ঘুরিয়ে নেবার জন্যেই একটু পরে ডলি জিজ্ঞেম করলো, উনি কোথায়, ওনাকে দেখছি না যে

মাহমুদ বুঝতে না পেরে বললো, কার কথা বলছেন?

ডলি অপ্রস্তুত হয়ে গিয়ে বললো, কেন আপনার ওয়াইফ।

ওয়াইফ মাহমুদ যেন চিৎকার করে উঠলো, আমার ওয়াইফ?

তারপর হো হো করে হেসে উঠে বললো। ও সাহানার কথা বলছেন?

কে বলেছে ও আমার ওয়াইফ, ও নিজে বুঝি?

ডলি ঘাড় নেড়ে বললো, না, অন্যের কৃছিথেকে শুনেছি।

কে সে?

বজলে।

বজলে? মাহমুদ আবার শব্দ করে হেসে উঠলো। তাহলে আপনি ভুল শুনেছেন। সাহানা আমার বোন। বলে হঠাৎ কেমন যেন গম্ভীর হয়ে গেলো সে।

ডলির ভালো লাগলো না। সব কিছু যেন কেমন অস্বস্তিকর মনে হচ্ছিলো তার কাছে।

খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে এক সময় উঠে দাঁড়ালো সে।

মাহমুদ সচকিত হয়ে বললো, একি আপনি চললেন নাকি?

ডলি ওর দিকে না তাকিয়েই বললো, বজলে এলে বলবেন, শরীরটা আমার খুব ভালো লাগছিলো না তাই চলে গেলাম।

আচ্ছা তাই বলবো। ও চলে যেতে চাওয়ায় যেন স্বস্তি পেলো। কে জানে, সাহানা সম্পর্কে যদি আরো কিছু জিজ্ঞেস করে বসতো? ডলি চলে গেলে একটা সিগারেট ধরিয়ে মনে মনে বজলেকে গালাগালি দিলো মাহমুদ। আস্ত একটা ইডিয়ট। তারপর গুনগুন করে একটা ইংরেজি গানের কলি ভাজতে লাগলো সে। একটু পরে তাকেও বেরুতে হবে বাইরে।