না, আর সইতে পারে না সালেহা। জীবনটা একেবারে দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে তার কাছে। বিয়ে হয়েছে আজ চার বছর। চারটে বছর মানুষের জীবনে নেহায়েৎ কম নয়। এ চারটে বছর কেমন করে তাকে কাটাতে হয়েছে তা সেই একমাত্র জানে। দু’বেলা চারটে ভাত খেতে পারলেই যদি মানুষ সুখী হতো, তাহলে সালেহার অসুখী হবার কোন কারণই ছিল না। মানুষের জীবনে অনেক আমোদ-আহ্লাদ থাকে, কিন্তু তার কোনটাই ভোগ করতে পারেনি সালেহা। কারাগার। এ চারটে বছর ঠিক যেন কারাগারের ভিতরই দিন কাটিয়েছে সে। এতটুকু স্বাধীনতা নেই, নেই নিজের ইচ্ছামত চলাফেরা করার এতটুকু অধিকার।
পীর সাহেবের বাড়ির কঠোর শাসন। ঘরের ঝি-বৌদের বাইরের লোক যাতে দেখতে না পায়, তার জন্যে জানালায় মোটা পর্দা টাঙ্গানো। তা একটু ফাঁক করে বাইরে এক পলক তাকাতে যাবে তাও স্বামীর নিষেধ। শোবার ঘরের ছোট্ট কামরাটা আর রান্নাঘরের ধোঁয়ায় ভরা পরিসরটার ভেতরে তার গতিবিধি সীমাবদ্ধ। বাইরের মুক্ত আলো বাতাসে প্রাণ জুড়ানো ছোঁয়া সে আজ চারটে বছর ধরে পায়নি। অসহ্য! একেবারে অসহ্য বোধ হচ্ছে সালেহার। এ চারটে বছর একটু প্রাণ খুলে শ্বাসও নিতে পারেনি সে। গলা ছেড়ে একটা কথা বলতে কিংবা হাসতেও সাহস পায়নি। পীর সাহেবের কঠোর আপত্তি এতে। মেয়েদের জোরে কথা বলতে নেই। শব্দ করে হাসতে নেই। পদে পদে বাঁধা। পেট ভরে চারটে ভাত খাবে, তারও জো নেই। মেপে মেপে ভাত ওঠে সবার পাতে। পীর সাহেব বলেন, অতিরিক্ত খেলে কেয়ামতের দিন তার হিসাব দিতে হবে।
অনেক সয়েছে সালেহা। অনেক। কিন্তু তার প্রতিদানে কি পেয়েছে সে? দু’টি চোখ পানিতে ভিজে ওঠে সালেহার। ভাল করেই সে জানে যা সে চায় তা তার আশি বছরের স্বামীর কাছ থেকে কোনদিনও পেতে পারে না। ডুকরে কাঁদতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে অশান্ত বুকটাকে টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলতে।
আঠারো বছরের তরুণী সে। বিয়ে হয়েছিল চৌদ্দ বছর বয়সে। বাবার এ কীর্তির কথা মনে পড়তে আরো জোরে কান্না আসে— বাবা! তার বাবা কি করে এ দোজখখানায় তাকে ছুঁড়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত আরামে দিন কাটাচ্ছে।
সমস্ত কাহিনীটা ভাবতেও তার আজ মন কেমন করে। ঝিমঝিম করে মাথার ভেতরটা। মনে হয় দুঃস্বপ্ন দেখে উঠলো এইমাত্র। কিন্তু দুঃস্বপ্ন কি মানুষের জাগরণে এমনি বার বার করে ফিরে আসে। হয়ত আসে, নইলে বিগত এই ক’টি বছরের ভেতর কেন সে ভুলতে পারলো না সেই বছরটিকে—
সে বছর বর্ষা এসেছিল বড় অসময়ে। ভীষণভাবে। পথঘাট ডুবে গিয়েছিল সব। দিগন্ত ছোঁয়া অথৈ পানিতে টলমল করছিল চারদিক। শোনা গেল পলাশপুরের পীর সাহেব এ পথে আসবেন। জাঁদরেল পীর। পূর্ব পুরুষ থেকে বর্তমান পুরুষের নাম পর্যন্ত নানাবিধ অলৌকিক কীর্তিতে জড়ানো। দাদা আর বাবা এর ভয়ানক ভক্ত শিষ্য। খবরটা এ তল্লাটে শোনা যেতেই বাবা সাদর আহ্বান জানালেন, গোলামি ঘরে হুজুরকে মেহেরবানী করতে। হুজুর মেহেরবানী করলেন। একা নয়। একপাল সাঙ্গপাঙ্গ সঙ্গে করে।
বৈঠকখানায় ধবধবে বিছানা পেতে তাদের থাকবার আস্তানা করা হলো। বারবাড়ির প্রাঙ্গণে খোঁড়া হলো ইয়া বড় বড় দু’টি চারমুখো উনুন।
পীর সাহেবের লম্বা দাড়ি আর নুরানী চেহারার সুখ্যাতি শুনে পাড়ার কৌতূহলী মেয়েদের জোড়া জোড়া চোখের মেলা বসেছিলো ওদের বাংলা ঘরের বেড়া ঘিরে। সবার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সালেহাও একবার চুপি চুপি গিয়েছিল। কিন্তু লম্বা দাড়ি বা নুরানী চেহারার বিশেষত্ব বুঝতে না পেরে বিরক্ত হয়েই সরে এসেছিল মিনিট দুই পরে।
রাত্রে দাদা তাকে ডেকে বললেন, যা নাতনী ভাল দেইখা একখানা শাড়ি পইরা আয়।
অবাক হয়ে সালেহা দাদার মুখের দিকে হা করে তাকিয়েছিল, শাড়ি ক্যান পরমু দাদা?
হুজুরের হাত পাওগুলো একটু টাইনা টুইনা দিয়া আয় সালু, বহুত দোয়া করবো।
চৌদ্দ বছর বয়স তখন সালেহার। ছোট একটা ঘোমটা দিয়ে বাবার সাথে পীর সাহেবের পাশে এসে দাঁড়ালো সে।
বাবা বললেন, আমার লেড়কি, হুজুর।
হাত বাড়িয়ে পীর সাহেবকে ছালাম করলো সালেহা। হাত তুলে দোয়া করলেন পীর সাহেব। তারপর বাবার দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমার লেড়কি নাকি? বহুত আচ্ছা লেড়কি আছে।
হুজুরের হাত পাগুলো টিইপা দেওত— মা-বাবা ঈশারা করলেন সালেহাকে। ভীষণ লজ্জা করছিল সালেহার।
তোমহার নাম কি আছে? পীর সাহেব জিজ্ঞাসা করলেন। কেমন মিষ্টিই না লেগেছিল কথা ক’টি সেদিন।
কিন্তু সালেহা কি তখন জানতো যে সে বুড়োটা একটা পুরোপুরি জন্তু, পাক্কা একটা খুনী?
চারটে বছর। চারটে বছর, নয়তো ঠিক চারটে যুগ যেন। সালেহাই জানে এ ক’টা বছর কেমন করে সে জ্বলে পুড়ে মরছে। প্রথম থেকেই জানতো সে এ বুড়োর সাথে বিয়ে তার মৃত্যুরই সামিল। কিন্তু, জেনেও কি সে প্রতিবাদ করতে পেরেছিল? সে কি মুখ ফুটে বলতে পেরেছিল তোমরা কেন এ বুড়োর সাথে বিয়ে দিচ্ছ আমায়? আমার দেহমনের স্বাভাবিক স্বপ্ন কি পূরণ করতে পারবে এ বুড়ো? কিন্তু কিছুই বলতে পারেনি সালেহা। বলবার সাহসের অভাব ছিল তার ভেতর। বললেও হয়ত কেউ আমল দিত না।
পাশের বাড়ির মেয়েদের কাছেই প্রথমে সে কথাটা শুনেছিলো কিন্তু বিশ্বাস হয়নি। আশি বছরের এক বুড়োর সাথে তার বিয়ে এ-ও কি সম্ভব। কিন্তু দিন দুয়েকের ভেতর সব কিছু পরিষ্কার হয়ে গেলো। দাদা মাকে ডেকে বললেন, আমাগো সালেহারে পীর সাইবের ভারী পছন্দ অইছে।
মা কোন উত্তর দেয়নি। সালেহা ভাল করেই জানে এ বিয়েতে মায়ের মত ছিল না। প্রতিবাদও তিনি করেছিলেন কিন্তু ফল হয়নি। বাবা বলেছিল মাইয়া লোকে ভালো মন্দের কি বোঝে। তাদের জিজ্ঞাইবার বা কোন দরকারডা। আরে পীর জামাই কি সকল মাইয়ার ভাইগ্যে জোটে। মাইয়ার কপাল ভালা কইতে অইবে।
কপাল। এ ক’বছর হাঁড়ে হাড়ে টের পেয়েছে সালেহা তার কপালকে। পাঁচ সতীনের ঘর। পাঁচ সতীন নয়তো ঠিক পাঁচ পাঁচটা দজ্জাল বাঘ যেন। ওরা সালেহার আগে এসেছে, তাই ওদের দাবিও তার আগে। উঠতে বসতে তাদের তীব্র কটাক্ষ সালেহার মনকে বিষিয়ে তুলেছে। মৃত্যুর প্রতিক্রিয়া বুঝি আরম্ভ হয়ে গেছে তার ভেতর। আর বাঁচবে না সালেহা; আর কিছুদিন এখানে থাকলে সে নিশ্চয়ই মরে যাবে।
বাইরের ঘরে লোক আসে, তাদের চোখে না দেখলেও গলার স্বরে আন্দাজ করতে পারে সে। এক এক সময় মনে হয় ছুটে গিয়ে তাদের কাছে দাঁড়ায় সালেহা। সব কিছু জানিয়ে দেয় ওদের। সবার সামনে দাঁড়িয়ে বুড়ো ছদ্ম মুখোশ খুলে দিয়ে জিজ্ঞাসা করে এখানে কেন ওরা আসে? কেন ওরা একটা খুনীর পাঁয়ে এত শ্রদ্ধা নিবদেন করে? খুনী! খুনী! বুড়োটা একটা খুনী ছাড়া আর কিছু নয়। সালেহাকে সে খুন করেছে।
একটা পূর্ণযৌবনা তরুণীর আশা আকাঙ্ক্ষায় ভরা কোমল হৃদয়কে ছুরি দিয়ে কুচি কুচি করে কেটে ফেলছে। ওই বুড়োটা। সে সব বলে দেবে। সব কিছু। কিন্তু বড় দুর্বল সে, তাই কিছু বলা হয় না।
সালেহা বুঝতে পারে, দুর্বলতাই এতদূর নিয়ে এসেছে তাকে। নইলে প্রথমেই সে প্রতিবাদ করতে পারতো। স্পষ্ট মনে আছে— তাদের গ্রামের চৌধুরী বাড়ির মেয়ে হাসিনার কথা, বাবার পছন্দ করা জায়গায় বিয়ে করতে স্পষ্ট আপত্তি জানিয়েছিল সে।
শেষে একগুঁয়ে মেয়েটি বাবার মুখে ছাই দিয়ে এক রাতে পালিয়ে গেলো, কলেজ পাশ করা এক ছেলের সাথে। সালেহার স্পষ্ট মনে আছে, গ্রামের ছেলে বুড়োরা কেমন ছি ছি করছিলো। পুকুর ঘাটে, ঘরের দাওয়ায়, ঢেঁকির চারপাশে জটলা পাকিয়ে গ্রামের মেয়েরা কেমন হাসাহাসি করতো চৌধুরী বাড়ির কলঙ্কের বিষয় আলোচনা করে। সালেহাও যোগ দিত তাদের সাথে।
কিন্তু আজ সে বুঝতে পেরেছে। হাসিনা ঠিকই করেছিলো। হাসিনার মতো সালেহাও যদি পালিয়ে যেতে পারতো তাহলে জীবনটা দুঃখের হতো না।
বিয়ের রাতে পাড়াপড়শীরা যখন মুখের কোণে হাসি টেনে সালেহাকে সাজাতে এলো, মা তখন বার বার আঁচলে চোখ মুছছিলো। আজও সে সব কথা সালেহা ভুলে যায়নি। মামারা অনেক সান্ত্বনা দিচ্ছিল। তুই কান্দছ ক্যান সালুর মা। মাইয়ার তর বরাত ভালো, বেহেস্তের হুর অইয়া থাকবো।
পরাণ দিয়া পীর সাহেবের খেদমত করিছ সালু, আখেরাতে বেহেস্ত পাইবি। পালকিতে চড়িয়ে দিয়ে নানা নানী তার কানে কানে সিসফিসিয়ে বলে দিয়েছিল বিদায় দেবার সময়।
হ্যাঁ। এ ক’বছরে বেহেস্তের আস্বাদ ভাল করেই পেয়েছে সালেহা। বেহেস্তের অমন যৌবন হুরত্ব লাভের আশায় আজ তার বয়সের বসন্ত সম্ভারে অসময়ে উল্টো হাওয়া বইছে। অকাল বার্ধক্য আজ ইশারা দিয়ে যেন তাকে ডাকছে। অসহায় আর্তনাদে পাশবালিশটাকে বুকে চেপে ধরে সালেহা। কিন্তু প্রাণহীন এ তাকীয়াটাকে বুকে জড়িয়ে আর কতদিন সে একটা মানব শিশুর উপস্থিতিকে ভুলে থাকবে? কতদিন রিক্ত বুকের হাহাকার নিয়ে লোক সমাজে অভিনয় করবে সব পাওয়ার পরিতৃপ্তির? বার কয়েক এপাশ-ওপাশ করে অসহ্য উত্তেজনায় বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় সালেহা। আজ মনের সঙ্গে শেষ বোঝাপড়ার পালা তার। জানালার পাশে এসে দাঁড়ায় সালেহা। আর কাউকে ভয় করবার প্রয়োজন নেই। হাত বাড়িয়ে পর্দাটা ফাঁক করে সে। ফিনফিনে বাতাসের সাথে এক ঝলক চাঁদের আলো এসে পড়ে ওর মুখের উপর! পূর্ণিমার ভরা চাঁদ। সেদিকে একবার মুখ তুলে চেয়ে রোমাঞ্চিত হয়ে উঠে সে। ওহ্ খোদা, প্রকৃতির কত মুক্ত সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত সে। রাত্রি বেড়ে চলে। জানালার পাশে দোলান চাঁদটা একটু এলিয়ে গেছে পশ্চিমে। আর তার তেরছা আলোয় দেখা যাচ্ছে দীর্ঘ একটি তরুণীর ছায়া জানালার পাশ থেকে এসে দাঁড়িয়েছে কম্পিত পা দু’খানা— পাশের কামরা থেকে বড় বিবির নাক ডাকার শব্দ আসছে। কোণের ঘরের জানালার ফাঁক গলিয়ে মিটমিটে আলো আসছে বাইরের দিকে, পীর সাহেব আজ ঝি-বৌ-এর কাছে আছে।
সেদিকে একবার ফিরে ছায়া আবার সরতে শুরু করে নিঃশব্দে সিঁড়ি বেয়ে। পূর্ব পুরুষদের কবরখানার কাছে এসে আর একবার সে থমকে দাঁড়ায়। সম্মুখে উন্মুক্ত আকাশের নিচে পায়ে চলা অপরিসর গ্রাম্য পথ। খানিক বাদে পদধ্বনি বেজে ওঠে সে পথের ধূলিকায়। তারপর—সালেহার হুঁশ নাই। হুঁশ হলো চুলের মুঠিতে টান পেয়ে। এ্যঁ সে পালিয়েছে। স্বামীর বাড়ি থেকে বাপের বাড়ি। এই দীর্ঘ ক’ক্রোশ পথ সে হেঁটে এসেছে। একে কি পালানো বলে? এই কি পালানোর সংজ্ঞা; তা না হ’লে চুলের মুঠি ধরা রুদ্র মূর্তি বাবার গলায় ও আওয়াজ কিসের— হারামজাদী আমার মুখে চুন কালি লাগাইলি তুই। মানসম্মান ভেস্তে দিলি আমার। আত্মসম্মান জ্ঞানী সমাজী জীব বাবা। কলঙ্কিনী মেয়েকে মারবার অধিকার তার আছে। তাই খোদাই হাতপা দুটো সমান ভাবে মেয়ের উপর চালাতে থাকে ৷
না, এবারে সে প্রতিবাদ করবে। নিশ্চয়ই করবে। কিন্তু ভাষা কোথায়? একি সে কাঁপছে? বাবার পা দু’খানি জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে বলছে, আর মাইরো না বাপজান, তোমার পায়ে পড়ি আর মাইরো না। ক্লান্ত পিতা ক্ষান্ত হয় এবারে। দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে দাদী কাঁদছিলেন। মেয়েটাকে ছুঁড়ে ফেলে দিতেই তিনি ধরে ফেললেন। দাদীকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকে সালেহা। বুকটা জ্বলছে, না ব্যথা করছে ঠিক বুঝতে পারে না সে। শুধু মনে হচ্ছে হাঁটুর উপর ওঠা কাপড়টাকে নামিয়ে নেবার ক্ষমতা বুঝি তার লোপ পেয়েছে।
আজ মা বেঁচে নেই। বেঁচে থাকলে বাবা তাকে এরকমভাবে মারতে পারতেন না। তার বিয়ের পরেই মারা গেছে। মায়ের কথা মনে পড়তে দ্বিগুণ হয়ে এলো কান্নার বেগ। পাষাণ বাবা। মাকেও এরকমভাবে মারতো। মার খেয়ে মায়ের হাড়গুলো সব জখম হয়ে গিয়েছিল। মা কাঁদতো না, কোঁকাতো। আর সুদূর আকাশের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে কি যেন ভাবতো।
উঃ হাত দুটো আর পিঠটা কি রকম ফুলে যাচ্ছে সালেহার। মায়েরও মাঝে মাঝে এ রকম হতো। কেরোসিন তেল গরম করে যা মালিশ লাগাতো। বাবা না জানলেও জানে বাবার মার খেয়েই মা মারা গেছে। ডাকু! এরা সবাই ডাকু। খুনী। উঃ আর কিছু ভাবতে পারছে না সালেহা। অসাড় হয়ে আসছে তার সমস্ত শরীর।
বিকেলে লোক এলো পীর সাহেবের বাসা থেকে। দাদা হাতজোড় করে বললেন— অবুঝ মাইয়া, একটা খারাপ কাম কইরা ফেলছে, পীর সাইবেরে বইলা দিয়েন মাফ কইরা দিতে।
মাফ! মাফ করবেন পীর সাহেব একজন দুশ্চরিত্রা মেয়েকে।
খবর শুনে সমস্ত শরীর কাঁপতে থাকে পীর সাহেরের। বারান্দায় কতক্ষণ দ্রুত পদচারণা করলেন তিনি, পীর বংশের কলঙ্ক। তিনি সইবেন কি করে?
দুশ্চরিত্রা মেয়ের শাস্তি-এক-শ-এক কোড়া, এক-শ-এক। গর্জে উঠলেন পীর সাহেব, চমকে উঠে বাবা। সকালে রাগের উপর মা মরা মেয়েকে তিনি যথেষ্ট মার মেরেছেন। তার ওপর এক-শ-এক কোড়া বেত্রাঘাত! সে কি সালেহার কোমল দেহে সইবে।
অথচ পীর সাহেবের আদেশ।
আমার পিঠের উপর একশ এক কোড়া মারেন হুজুর। ওই মাইয়াটারে মাফ কইরা দেন। বাবা পীর সাহেবের পা জড়িয়ে ধরে।
পীর সাহেবকে কোন উত্তর দিতে হলো না এর। উত্তর নিয়ে এলো সামছুল। সালেহার ছোট ভাই।
সকাল থেকে রক্ত বমি করতে করতে ঘণ্টাখানেক হয় সালেহা মারা গেছে।
সপাং করে কে যেন একটা চাবুকের ঘা মারলো উপস্থিত জনতার পিঠের উপর।
অস্পষ্ট গুঞ্জরণ শোনা গেল সঙ্গে সঙ্গে— মাগীটা মরবে না? পীর সাইবের মুখে ছাই মারি যাবে কোথায়। পীর সাহেবের বদদোয়া লেগেছে।
সায় দিয়ে পীর সাহেবও মাথা নাড়লেন— গুনাহগারোকো, আল্লাহ্ তায়ালানে কভি মাফ নাহি করতা হ্যায়।