কালবৈশাখী দূরন্ত ঝড়ে নড়বড়ে চালাঘরটা ধসে পড়লো মাটিতে। বিন্তি জানতো না সে খবর।

মিয়া বাড়িতে ধান ভানতে গিয়েছিল সে। ফিরে আসতেই রাস্তায় মনার মা বললো, তখনই কইছিলাম বৌ ঘরডারে একটু মেরামত কর। তা তো কইরলা না এহন—

এহন কি অইছে বুয়া? শ্বাসরুদ্ধ কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো বিন্তি। মনার মা বললো, কি আর অইবো বাপু। ঘরডা পইড়া গেছে তুফানে।

পইড়া গেছে? ইয়া আল্লা! হাত পাগুলো সব ভেঙ্গে এলো বিন্তির। করুণ কণ্ঠে তীব্র আর্তনাদ করে উঠলো সে। তিনডা কাচ্চাবাচ্চা নিয়া কোনহানে যামু আমি। কেমন কইরা ঠিক করমু ওই ঘর। আল্লারে-আল্লাহ্।

বিন্তির কান্নাটা বুকে বড় বিঁধলো মনার মার। কি আর কইরবা বৌ। খোদার কাছ থাইকা দুঃখই আনছো; দুঃখই টানতে অইব জীবনভর। বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো সে। সোয়ামীটাও অকালে মারা যাওনে, আহ; তোমার এত দুর্দশা।

তার কথা আর কও ক্যান বুয়া। হে যেইদিন মরছে হেইদিন থাইকাই তো ভাঙছে এ পোড়া কপাল। কথা শেষে কান্নার বেগটা আরো একটু বাড়লো বিন্তির। আদর করে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিল মনার মা। কথায় কয় সোয়ামী নাই যার দুনিয়াই আন্দার তার!

স্বামী অবশ্য এককালে ছিল বিন্তির। হাসিখুশি ভরা মানুষ। শক্ত-সামর্থ্য দেহ। বিন্তিকে কতই না ভালবাসতো সে। হাটে গেলে রোজ ঠোঙ্গায় করে চার পয়সার বাতাসা কিংবা দু’পয়সার ডালমুট নিয়ে আসতো বিন্তির জন্য। আদর করে হাতের মুঠোয় পুরে দিয়ে কানে কানে বলতো, সোনাদানা কিছু নাই, আর কি দিমু তোরে। আল্লা মিয়ায় গরিব কইরা বানাইয়াছে মোরে। তারপর— একদিন অকস্মাৎ জ্বরে পড়লো সে। টিপরা রাজার দেশে পাহাড়ে বাঁশ কাটতে গিয়েছিল শীতের মৌসুমে। ফিরে যখন এলো তখন ম্যালেরিয়ায় হাড্ডিসার হয়ে গেছে আবুল। দেখে প্রথমে আঁতকে উঠেছিল বিন্তি। ইয়া আল্লা, এই কাল ব্যামোয় কেমন কইরা ধরলো তোমারে। কেমন কইরা এই অবস্থা অইলো তোমার।

কথা কইও না বৌ। কথা কইবার পারি না। জলদি গায়ে কাঁথা চাপা দে। জ্বরে তখন ঠকঠক করে কাঁপছিলো আবুল। চাটাইয়ের উপর শুইয়ে দিয়ে, গায়ে ওর কাঁথা চাপা দিল বিন্তি।

বিপদ আসেতো সব দিক দিয়েই আসে।

মিয়াবাড়িতে তখন ধান ভানার কাজ করতো বিস্তি। তিন মণ ওজনের ঢেঁকি; ঘণ্টাখানেক ভানতেই পায়ে ব্যথা করে ওঠে। শরীর অবশ হয়ে আসে। হঠাৎ একটু অন্যমনস্ক হতেই পা পিছলে পড়ে গিয়ে কপাল আর পায়ে ভীষণ আঘাত পেলো বিন্তি। হাটুর নিচটা অসম্ভব রকম ফুলে গেলো দেখতে না দেখতে।

পুরো সাতটি দিন আতুরের মতো ঘরে বসে ছিল সে। আবুলের তখন শেষ অবস্থা। তো জ্বরের ঘোরে যা তা বকতে শুরু করেছে সে। এক ফোঁটা পথ্য কি ঔষুধ কিছুই ছিল না ঘরে। আবুল মারা গেল। ওর মৃত্যুতে উঠানে গড়াগড়ি দিয়ে অসম্ভব কেঁদেছিল বিন্তি। পাগলের মতো চিৎকার করে কেঁদেছিল সে।

পাড়াপড়শীরা সান্ত্বনা দিয়েছিলো। কাইন্দা কি অইবে আবুর বৌ। কাঁদলে কি আর আবুরে ফিরা পাইবি।

এত কান্দিস না বৌ। কান্দলে পর খোদা রাগ করবে। বিন্তির দুঃখে সহানুভূতি দেখিয়ে বলেছিলেন বুড়ো কাশেম মোল্লা। খোদার মাল খোদা নিয়া গেছে। তাতে কাইন্দবার কি আছে। কাইন্দা কি লাভ? হের থাইকা সোয়ামীডার যাতে পরকালে সদগতি অয় তার চেষ্টা কর। দুই চারডা মোল্লা ডাইকা খতম পড়া। কিছু দান খয়রাত কর।

দান খয়রাত করতে অবশ্য কার্পণ্য করেনি বিন্তি। ইহকালের মাটিতে শুধু মাত্র দু- পয়সার কুইনাইনের অভাবে স্বামীকে বাঁচিয়ে না রাখতে পারলেও স্বামীর পরকালীন সুখ অভাবে শান্তির জন্য যথাসাধ্য ব্যয় করেছে সে। সে সব দীর্ঘ পাঁচ বছর আগের কথা।

মাটিতে থুবড়ে পড়া কুঁড়েটার সামনে দাঁড়িয়ে সেদিনের ঘটনাগুলোই চোখের উপর বুলিয়ে নিচ্ছিল বিন্তি।

মনার মা বললো, ভাবনা চিন্তা কইরা আর কি কইরবা বৌ। ঘরটা কেমনে মেরামত কইরবা এহন সেই চেষ্টা কর। কাচ্চাবাচ্ছাগুলোরে নিয়াতো আর উঠানে রাইত কাটান যাইবো না।

মনার মার কথায় ওর দিকে মুখ তুলে তাকালো বিন্তি।

না-না, আইজ রাইতের লাইগা চিন্তা নাই। আইজ রাইতটা না অয় আমার ঘরেই কাটাইলা। সহানুভূতির সাথে বললো মনার মা।

বাড়ির মুরুব্বি মনু পাটারী বললো, দুঃখ করিস না বিন্তি। খোদায় যা করে ভালার লাইগাই করে। জানেন উপর দিয়া আইছিলো, মালের উপর দিয়া গেছে। কিছু দান খয়রাত কর তুই, দুই চাইরডা মোল্লা ডাইকা খতম পড়া।

হ-হ— তা-তো কইরবই। খোদার কামে গাফেলতি করন ঠিক না। মনুকে সমর্থন জানালো মনার মা।

সে রাতটা, মনার মার ছোট্ট কুঁড়েতেই ছেলেপিলে নিয়ে কাটালো বিন্তি।

পরদিন ভোর সকালে বড় মিয়ার দোরগোড়ায় ধরনা দিল সে।

বড় মিয়া পাকা পরহেজগার লোক। দু’ দু’বার হজ্জ করে এসেছেন তিনি। বিন্তির দুঃখের কথা শুনে বললেন, আবু বড় ভালা মানুষ আছলো বিন্তি। তুই তার বৌ। তোরে সাহায্য করমু না কারে করমু। বিন্তির হাতের বালা জোড়া, লোহার সিন্দুকে তুলে রেখে, তাকে একটা পাঁচ টাকার নোট বের করে দিলেন বড় মিয়া। সময় মতো টাহাগুলো ফেরত দিয়া তোর জিনিস তুই নিয়া যাইস। কেমন?

মহাজনী কারবার করেন বড় মিয়া। তবে, সুদ খান না। সুদের নাম কেউ নিলে, গালে চাটি মেরে সাতবার তওবা পড়ান তাকে। লোকে অলঙ্কারপত্র বন্ধক রাখে। বড় মিয়া দু’চার টাকা দিয়ে সাহায্য করেন তাদের। তবে, শর্ত আছে একটা। মাস তিনেকের মধ্যে টাকা শোধ না দিতে পারলে, অলঙ্কারগুলো বড় মিয়ার হয়ে যায়। মালিকের তাতে কোন অধিকার থাকে না। আর তাই বড় মিয়ার লোহার সিন্দুক দিন দিন ভর্তি হয়ে আসে।

বালা বন্ধক রেখে আনা টাকা দিয়ে ভাঙ্গা ঘর মেরামত করলো বিন্তি। পুরোনো খুঁটি, পুরোনো খড় আর পুরোনো বেড়াগুলোকেই জোড়াতালি দিয়ে নতুন করে দাঁড় করালো কোন রকমে।

ঘরটা মেরামত করতে করতে সঈদ কামলা বললো, আরো কিছু টাহা খরচ কইরলে ভালা অইতো আবুর বৌ। এই জোড়াতালি দেয়া ঘর তুফান আইলেই তো আবার পইড়া যাইবো।

কি করমু চাচা। অসহায় ব্যাকুলতায় হু হু করে কেঁদে উঠলো বিন্তি। খোদা, খোদাই ভরসা আমার।

তাতো ঠিকই কইছ বৌ। খোদাইতো সব। খোদায় ইচ্ছা কইরলে সুখ দিবার পারে মানুষেরে, ইচ্ছা কইরলে দুখ। বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো সঈদ কামলা।

মনার মা বললো, আহা— কথায় কয় মাটি দিয়া বানাইছ খোদা, মাটির নিচে নিবা। বেহেস্ত কি দোজখ তুমি; তোমার ইচ্ছা মতো দিবা।

করিম মোল্লা বোধ হয় বিকেলে হাট করতেই বেরিয়েছিলেন।

বিন্তির নতুন ঘরটার দিকে চোখ পড়তে, দরদ ভেজা কণ্ঠে বিন্তিকে ডেকে বললেন, আবুর বৌ, খোদারে ফাঁকি দিও না। দু’চার জন মোল্লা ডাইকা নতুন ঘরে মিলাদ পড়াও। নইলে ঘরের ভিটা পাকা অইবো না।

মিলাদ পড়ানোর কথাটা বিত্তিও ভাবছিলো মনে মনে।

নতুন ঘর উঠালে মিলাদ পড়ানো রেওয়াজ। মিলাদ না পড়ালে ঘরে ফেরেস্তা আসে না। আর যে ঘরে ফেরেস্তা আসে না সে ঘরের উন্নতি নেই; স্থায়িত্ব নেই— তা ভালো করেই জানে বিন্তি। তাই, আবার বড় মিয়ার দোরগোড়ায় হাজির হলো সে।

মিয়া গিন্নি ছমিরন বিবি তখন উঠানে ধান শুকাচ্ছিলেন বসে বসে। আর বার বার তাকাচ্ছিলেন আকাশের দিকে। বৈশাখের আকাশ এই রোদে ভরা, আর এই মেঘে ঢাকা। কোথায় থেকে হঠাৎ এত মেঘ এসে হাজির হয় তা ভাবতে অবাক লাগে ছমিরন বিবির। তাই, একসাথে ধান আর আকাশ দুটোকেই পাহারা দিচ্ছিলেন তিনি বসে বসে। মেঘ দেখলেই ধানগুলো ঝটপট ঘরে উঠিয়ে নিয়ে যাবেন এই ইচ্ছে তাঁর।

বিন্তির দুঃখের কথা শুনে বড় আফসোস করলেন ছমিরন বিবি। আহা তোর কপালডা তুই খাইবার আছস বিন্তি। কইলাম, ছেইলা মাইয়াগুলোরে কারো হাওলা কইরা দিয়া কারো সঙ্গে ‘সাঙ্গা’ বইয়া যা তুই। যৌবন এহনো ঢলঢল কইরবার আছে তোর গায়ে। সাঙ্গা বইতি চাইলে তুই হাজার জনে এহন সাঙ্গা করতে চাইবো তোরে। ক্যান বেহুদা নিজেরে শুকাইয়া মইরবার আছস তুই।

ছমিরন বিবির কথায় দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো বিন্তি। তারপর বললো। না আম্মাজান, মইরা গেলেও সাঙ্গা বইমু না কারো কাছে। তাইলে ছেইলা মাইয়াগুলা আমার উপাস মরবো।

এর উত্তরে কি যেন বলতে যাচ্ছিলেন ছমিরন বিবি। হঠাৎ চোখ পড়লো তাঁর আকাশের দিকে। দক্ষিণ থেকে একটা বিরাটকায় কালো মেঘ উঠে আসছে আকাশে। ওরে ও বিন্তি আমার ধানগুলোরে একটু ঘরে তুইলা দে। জলদি কর জলদি কর বৃষ্টি যে আইয়া পড়লো।

মিয়া গিন্নির ধানগুলো ঘরে তুলে দিয়ে— কাপড়ের আঁচলে ঘাম মুছে নিয়ে সসঙ্কোচে বড় মিয়ার সামনে গিয়ে দাঁড়াল বিন্তি। কয়ডা টাহা ধার দেন হুজুর।

ধার দিতে আমার কোন আপত্তি আছেরে আবুর বৌ। আমার কি কোন আপত্তি আছে। সাদা দাড়িগুলোতে হাত বুলোতে বুলোতে বললেন বড় মিয়া। কিন্তুক, কিছু একডা তো বন্ধক রাইখতে অইবো তোরে। এমনে কেমন কইরা টাহা দেই।

আমার কাছে একডা তামার বাটিও নাই হুজুর। জোড়হাতে অনুনয় করলো বিন্তি। কয়ডা টাহা দেন।

কইলাম তো কিছু বন্ধক না রাইখলে টাহা দিবার পারমু না।

তাইলে আমার কি অইবো হুজুর। আমার কি অবস্থা অইবো। বিন্তি কেঁদে উঠলো এবার।

কিছুক্ষণ চুপচাপ কি যেন ভাবলেন বড় মিয়া। তারপর বললেন। তোর ঘর ভিটিটাই না অয় বন্দক রাখ না আমার কাছে।

তা কেমন কইরা অয় হুজুর। বড় মিয়ার আকস্মিক প্রস্তাবে রীতিমত ঘাবড়ে গেলো বিন্তি। ভিটেবাড়ি বন্ধক রাখবে এ কেমনতর কথা? বিন্তিকে এ নিয়ে চিন্তা করতে দেখে অভিমানহত হলেন বড় মিয়া।

এতে এত চিন্তা কইরবার কি আছে বিন্তি। আমি কি কোনদিন তোগো কোন খারাবি করছি। না করবার চাই?

না-না, তা ক্যান কইরবেন হুজুর। তা ক্যান কইরবেন। বাধা দিয়ে বললো বিন্তি। আপনে আমাগো মা-বাপ।

বিত্তির কথায়, দরদ যেন উছলে বড় মিয়ার কণ্ঠে। তোরে বিনা বন্ধকেই কিছু টাকা ধার দিবার ইচ্ছা আছিল বিন্তি। কিন্তু হায়াত মউততো কায়েম না হাওলাত বরাত রাইখা মইরা গেলে কেয়ামতের দিন দায় দিবার লাগবো তাই কইবার আছিলাম— বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন বড় মিয়া। আল্লার কুদরতের শান কে বুঝবার পারে। তোর মতো গরিব দুঃখীদের বাঁচাইবার লাইগাইতো আল্লায় আমাগো মতো দুই চাইরজন বড় মানুষের পাঠাইছে দুনিয়ার পরে। কথা শেষে তছবি পড়ায় মন দিলেন বড় মিয়া।

দ্বিমত করিছ না বিন্তি রাজি অইয়া যা। বড় মিয়ার হয়ে ওকালতি করলেন সুলতান মৌলভী। আল্লার ওলি মানুষ একডা কথা কইছে কথাডা ফালাইস না, বদদোয়া লাগবো।

বদদোয়াকে ভীষণ ভয় করে বিন্তি। খোদাভক্ত, পরহেজগার মানুষের বদদোয়া বড় সাংঘাতিক জিনিস। বিন্তির মনে আছে— এ গাঁয়ের কেতু শেখকে একবার বদদোয়া দিয়েছিলেন এক পীর সাহেব। সেই বদদোয়াতেই তো গোষ্ঠী শুদ্ধ লোপ পেলো কেতুর। এক এক করে সবাই মরলো। এখন একেবারে ফাঁকা বাড়ি খাঁ খাঁ করে।

বদদোয়ার ভয়ে অগত্যা রাজি হয়ে গেলো বিন্তি। একটা সাদা কাগজে কি সব লিখে, তার ওপর বিত্তির টিপসই নিলেন বড় মিয়া। তারপর, এক টাকার বারটা ময়লা নোট গুঁজে দিলেন ওর হাতে।

মোল্লা খাওয়ানোর সময়, মুরগির হাড্ডি চিবোতে চিবোতে বিন্তির রান্নার অজস্র প্রশংসা করলেন কাশেম মোল্লা। বললেন, আহা বড় স্বাদের রাঁধা আবুর বৌ। বড় স্বাদের রাঁধা রাঁধছ।

সুলতান মৌলভী বললেন, আরো দু’এক টুকরো গোস্ত দাও না আব্বুর বৌ। কেপ্পনি কর ক্যান। খোদার কামে কেপ্পনি ভালা না। ঠিক-ঠিক। কাসেম মোল্লা সমর্থন জানালেন তাকে। খোদার কামে কেপ্পনি ভালা না বৌ। আমারে আর চাইডা ভাত আর একটুহানি সুরুয়া দাও।

খাওয়া শেষে মিলাদ পড়লেন সবাই। বিন্তির জন্যে দোয়া করলেন অকৃপণ কণ্ঠে। তারপর, নতুন ঘরের চার কোণে চারটে তাবিজ পুতে ঘরময় পড়ানো পানি ছিটোলেন কাসেম মোল্লা। ঘাবড়াইস না বিন্তি। খোদার উপরে আস্থা রাহিস। খয়রাতি পয়সাগুলো হাতের মুঠোয় নিয়ে বললেন সুলতান মৌলভী।

আকাশ বেয়ে তখন অসংখ্য মেঘ অস্বাভাবিক গতিতে ছুটে চলেছে দূর দিগন্তের দিকে। বৈশাখ এখনও শেষ হয়নি।

ঝাঁপিটা লাগিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়লো বিন্তি। কাল বৈশাখীকে আর কোন ভয় নেই তার। ভয় নেই কোন দূরন্ত ঝড়ের কঠোর ভ্রূকুটিকে। ঘরে ফেরেস্তা এনেছে সে। খোদার ফেরেস্তা। যে খোদা এই দুনিয়াকে সৃষ্টি করেছে। যার ইঙ্গিতে চলছে এই বিশ্ব ব্ৰহ্মাণ্ড।

প্রশান্ত হাসিতে ভরে উঠলো বিন্তির মুখখানা।

মাঝরাতে হঠাৎ কিসের প্রচণ্ড শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো ওর। প্রথমে কিছুতেই বিশ্বাস হলো না। কাসেম মোল্লার তাবিজ; সুলতান মৌলভীর পড়ানো পানি; খোদার ফেরেস্তা। সব কিছুর প্রতি এমন চরম উপেক্ষা; এ কোন শক্তি। ভাঙ্গা হাতের কব্জিটাকে চেপে ধরে ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ আকাশের দিকে তাকালো বিন্তি।

সকাল বেলা বড় মিয়ার মেজ ছেলেকে উর্দু পড়াতে যাচ্ছিলেন কাসেম মোল্লা। বিন্তির ভাঙ্গা কুঁড়েটার দিকে চোখ পড়তে অনেক আফসোস করলেন তিনি। খোদা তোরে পরীক্ষা কইরতাছে বিন্তি। আহা— খোদার কুদরতের শান কে বইলবার পারে।

ছাগ্‌লে দাড়িগুলোর ভেতর হাত বুলোতে বুলোতে বললেন তিনি, হয়ত কোন বড় মুছিবত আছিলো তোর উপর। খোদার ছোট্ট মুছিবত দিয়া পার কইরলেন সেইডা। ঘাবড়াইস না। এহন কান্নাকাটি কইরা খোদার কাছে মাপ চা। খোদার রাস্তায় কিছু খরচ কর। আহা— খোদায় যা করে ভালার লাইগাই করে।

খোদায় যা করে ভালোর লাইগাই করে। কাসেম মোল্লার দিকে তাকিয়ে কাঁপা ঠোঁটে অদ্ভুতভাবে হাসলো বিত্তি।

Leave a Reply