» » চতুর্থ সংস্করণের বিজ্ঞাপন

স্বর্গীয় মহাত্মা বিহারীলাল সরকার মহাশয়ের বিদ্যাসাগর-জীবনীর ৪র্থ সংস্করণ প্রকাশিত হইল। বড়ই আক্ষেপের বিষয়, শ্রদ্ধাভাজন বিহারীবাবু তাহার বড় সাধের বর্তমান সংস্করণের প্রকাশ ভার আমার প্রতি অৰ্পণ করিয়া এই গুরুতর কার্য্য সম্পন্ন হইবার পূর্ব্বেই আমাদিগকে শোক-সাগরে ভাসাইয়া অমরধামে গমন করিষ্যছেন।

এই সংস্করণে বিদ্যাসাগরের অঙ্গ-সৌষ্ঠব সম্পাদনে তাহার সম্পূর্ণ ইচ্ছা ছিল। যথাস্থানে পরিবর্ত্তন ও পরিবর্দ্ধন করিয়া যাতে “বিদ্যাসাগর” সৰ্ব্বসাধারণের আদরণীয় হয়, তদ্বিষয়ে তিনি প্রস্তুত হইয়াছিলেন এবং আমাকে উপদেশ দান করিয়াছিলেন। কিন্তু বিধির বিধানে তাঁহার লোকান্তরের কারণ সেই সাধু সঙ্কল্প কার্য্যে পরিণত হইতে পারে নাই। স্থানে স্থানে সামান্য যাহা পরিবর্ত্তিত হইয়াছে, তাহা বিহারীবাবু নিজেই তাঁহার জীবিতাবস্থায় করিয়া গিয়াছিলেন। যথোপযুক্ত পরিবর্ত্তন ও পরিবর্দ্ধন করিয়া সৰ্ব্বাঙ্গ সুন্দরভাবে গ্রন্থখানি প্রকাশ করিবার জন্যই বিহারী বাবু আমাকে এই কার্য্যের ভার প্রদান করেন, কিন্তু হায়, তাঁহার মৃত্যুতে সেই কার্য্য অসম্পন্নই রহিয়া গেল!

বিদ্যাসাগর মহাশয়ের জীবনের একটা প্রধান কাজ বিধবাবিবাহ প্রচলন, তাহা সৰ্ব্ববাদী সম্মত না হইলেও সেই সম্বন্ধে বিদ্যাসাগর মহাশয় ও অপরাপর শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিতমণ্ডলী যে বিচার ও গবেষণা করিয়া গিয়াছেন, তাহার বিস্তারিত ভাবে আলোচনাপূর্ণ মন্তব্য পাঠ করিতে আজকাল অনেকেই ইচ্ছা প্রকাশ করিয়া থাকেন। বিহারী বাবুর অভাবে তাঁহার গ্রন্থ মধ্যে ঐ বিষয়ের সমালোচনার সম্ভাবনা না থাকায় পাঠকগণের সন্তুষ্টির জন্য পরিশিষ্টে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বিধবাবিবাহ নামক সম্পূর্ণ গ্রন্থখানি সন্নিবিষ্ট হইল। সুধীগণ তাহা পাঠ করিয়া বিদ্যাসাগর মহাশয়ের পাণ্ডিত্য ও বিচার-কুশলতা দেখিয়া মুগ্ধ হইতে পারিবেন এবং সাধারণ পাঠকগণও বিধবাবিবাহ সম্বন্ধে স্বয়ং চিন্তা করিতে সক্ষম হইবেন। এই সংস্করণে গ্রন্থখানার বিশেষ উৎকর্ষ সাধন করিতে না পারিলেও ছাপা, কাগজ ও বাঁধাই ইত্যাদি সম্বন্ধে যত্ন, চেষ্টা ও ব্যয়ের কোনটী ত্রুটী করা হয় নাই। এক্ষণে পাঠকগণের সহানুভূতি পাইলেই এম সফল বোধ করিব। উপসংহারে আর একটী কথা উল্লেখ করা কর্ত্তব্য মনে করি।

কলিকাতা ৬২নং আমহার্ষ্ট স্ট্রীট্‌স্থ ‘মেসার্স পুরুষোত্তম কোম্পানীর’ প্রোপ্রাইটার শ্রীযুক্ত বাবু রাজকুমার ভট্টাচার্য্য মহাশয় বিদ্যাসাগরের জন্য সমস্ত কাগজ সরবরাহ না করিলে, ইহা প্রকাশ করিতে কত যে বিলম্ব হইত, তাহা বলা যায় না। তিনি কাগজ প্রদান করিয়াই নিশ্চিন্ত হন নাই, ইহার মুদ্রণেও যথেষ্ট সাহায্য করিয়াছেন। তজ্জন্য আমি তাঁহার নিকট চিরকৃতজ্ঞ রহিলাম। ফলতঃ বর্তমান সংস্করণে শ্রদ্ধাষ্পদ রাজকুমার বাবুই এই গ্রন্থের প্রকাশক, আমি উপলক্ষ মাত্র।

হরিপদ চট্টোপাধ্যায়।

শাস্ত্রপ্রকাশ কার্যালয়

১৫নং হরীতকী বাগান লেন,

কলিকাতা। ১৯২২।