ভূবনচন্দ্র মুখোপাধ্যায়
হরিদাসের গুপ্তকথাপ্রথম খণ্ড
একবিংশ কল্প : নূতন চাকরী
বাবু দীনবন্ধু চট্টোপাধ্যায়ের নিবাস মুর্শিদাবাদ, এ কথা পূর্ব্বেই উল্লেখ করা গিয়াছে, যথাসময়ে আমরা মুর্শিদাবাদে উপনীত হোলেম। রক্তদন্তের ভয়ে এ অঞ্চলে শীঘ্র ফিরে আসবার ইচ্ছা ছিল না, কিন্তু বিধাতার ইচ্ছায়, দীনবন্ধবাবুর যত্নে, অনুগ্রহে, অনুরোধে কাজে কাজেই মুর্শিদাবাদে আসতে হয়েছিল। দীনবন্ধুবাবুর বাড়ীখানি অতি সুন্দর; যেমন প্রশস্ত, তেমনি সুদৃশ্য। সদরবাড়ী দু-মহল। সম্মুখের মহলে তিনটী দেউড়ী, তাহার পরে প্রাঙ্গণ; প্রাঙ্গণের মধ্যস্থলে তালগাছের খুটী-দেওয়া বৃহৎ এক আটচালা; আটচালার বাহিরে ঈশানকোণে একটী বিল্ববৃক্ষ; চারিধারে ইষ্টকের বেদীগাঁথা; আটচালার পূর্ব্ব-পশ্চিম-দক্ষিণে সারি সারি অনেকগুলি ঘর; আটচালার উত্তরাংশে পুজোর দালান;—প্রাচীনপ্রণালীর বিবিধ কারুকর্ম্ম খচিত সাতফুকুরে দালান। সেই দালানের মাথার সঙ্গে রুজু রুজু অপর তিনদিকে দ্বিতল বৈঠকখানা। এটী পূজার মহল। এই মহলের পশ্চাতে দপ্তরমহল, এ মহলেও চকবন্দীকরা উপরনীচে অনেকগুলি ঘর; সেই সকল ঘরে দেওয়ান, নায়েব, তোঞ্জী, কারকুন, পেস্কার, মুন্সী, মুহুরী, সরকার প্রভৃতি আমলাবর্গ বাস করেন। নীচের ঘরগুলিতে দপ্তরখানা, উপরের ঘরগুলিতে আমলাদের বাসস্থান। তিন দেউড়ীতে ভিত্তিতে ভিত্তিতে বড় বড় ঢাল, তলোয়ার, কিরীচ সংলগ্ন; প্রত্যেক দেউড়ীতেই খাটিয়া পাতা, মোট দশজন দারোয়ান সেই সকল খাটিয়ায় বিরাজ করে, দেউড়ীর কোণে কোণে লাঠী, বর্শা, মালকাৎ, মুগুর দণ্ডায়মান। দেউড়ীর মাথায় নাচঘর; সম্মুখে প্রায় শতহস্ত দীর্ঘ বারান্দা; বারান্দার ধারে ধারে জোড়া জোড়া গোল-থামের মাথায় সবুজবৰ্ণ ঝিলিমিলি; নিম্নভাগে ফোকরে ফোকরে লোহার রেল, তাতেও সবুজ রং দেওয়া; বারান্দার সম্মুখে ঠিক মধ্যস্থলে সমচতুষ্কোণ গাড়ী-বারান্দা;—বিংশতি হস্ত দীর্ঘ, বিংশতি হত প্রশস্ত; নীচের চারি কোণে তিন তিনটী মোটা মোটা গোলথাম দণ্ডায়মান হয়ে সেই গাড়ীবারান্দাটী মাথায় কোরে রোয়েছে। বাড়ীর সম্মুখে প্রশস্ত ময়দান, চারিধার কাষ্ঠের রেল দিয়ে ঘেরা, চারিদিকেই রাস্তা; রাস্তার দুধারে রেল দেওয়া; রাস্তার পাশে পাশে ঢেউখেলানো প্রাচীরঘেরা মণ্ডলাকার পুষ্পবাটিকা। প্রায় পঞ্চাশ হাত তফাতে বড় বড় থামদেওয়া সুবহৎ রঙ্গীন-কপাটযুক্ত ফটক; ফটকের পশ্চিমধারে বৃহৎ এক সরোবর; চারি ধারে, বড় বড় বাঁধা ঘাট; চারিটী ঘাটের দুই দুই ধারে আটটী শিবের মন্দির। সরোবরের দক্ষিণধারে সদর-রাস্তা। রাস্তায় দাঁড়িয়ে উত্তরদিকে চেয়ে দেখলে বাড়ীর শোভা অতি চমৎকার দেখায়। ফটকের দুধারে দুটী উচ্চ নহবৎখানা।
বাড়ীর আয়তন দেখে বোধ হলো, বাবুরা সেখানকার বুনিয়াদী বড়মানুষ; বাড়ীখানি বহুদিনের প্রাচীন; বাহিরদিকে এলামাটীর রং দেওয়া ভিতরের ঘরগুলিতে শ্বেতপাথরের কাজ করা। নাচঘরটী প্রায় ষাট হাত দীর্ঘ প্রায় ত্রিশ হাত প্রশস্ত; মেজে কার্পেটমোড়া, দেয়ালে বড় বড় ছবি, ছবির মাথায় জোড়া দেয়ালগিরী, কড়িকাঠে বড় বড় বেলোয়ারী ঝাড় দোদুল্যমান; কার্পেটের উপর সারি সারি অনেকগুলি তাকিয়া বালিশ, রক্তবর্ণ আবরণে সেই বালিশগুলি সমাবৃত; আবরণবস্ত্রের উপর নানাপ্রকার ঝাড়বুটো কাটা; আসবাবসজ্জায় বিশেষ-সমৃদ্ধির পরিচয় হয়।
বাবুদের জমীদারী অনেকগুলি; নিজের বাসগ্রামখানিও তাঁদের জমীদারীর অন্তর্গত। শুনা গেল, গৃহবিবাদে কতকগুলি জমীদারী নষ্ট হয়ে গিয়েছে, কতকগুলি ভাগ হয়ে গিয়েছে, বংশবৃদ্ধি হওয়াতে বংশের কেহ কেহ পৈতৃক বাড়ী পরিত্যাগ কোরে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে গিয়ে বাস কোরেছেন।
দীনবন্ধবাবুর নিজাংশে যে কয়েকখানি জমীদারী আছে, তার বার্ষিক আয় সদর মালগুজারী বাদে প্রায় সত্তর আশী হাজার টাকা। দুঃখের বিষয়, দীনবন্ধবাবুর পুত্র সন্তান নাই; পিতার জ্যেষ্ঠপুত্র তিনি; পিতা বর্ত্তমান নাই, তিনিই এখন কৰ্ত্তা। পাঁচটী সহোদর ছিলেন, দেশব্যাপী মহামারীতে অপরাপর পরিবারের সহিত চারিটী সহোদর অকালে কালগ্রাসে পতিত হয়েছেন। একটী কনিষ্ঠ সহোদর বর্ত্তমান, তাঁর নাম পশুপতি, বয়স অনুমান পঁচিশ ছাব্বিশ বৎসর। দীনবন্ধুবাবু অপুত্রক, ভ্রাতৃবিয়োগী, মনের দুঃখে তিনি বিষয়কার্য্যে উদাসীন, ছোটবাবুই সমস্ত বিষয়কৰ্ম্ম দেখেন। যে সকল দলীলপত্রে দস্তখৎ না কোল্লে নয়, বড়বাবু কেবল সেইগুলিতে স্বাক্ষর মোহর কোরে দেন। জমীদারী-সম্বন্ধে এইমাত্র তাঁর কার্য্য; তাঁর অধিকাংশ সময় ঠাকুরপূজাতে আর ইষ্টমন্ত্রজপে অতিবাহিত হয়। ভদ্রাসনবাড়ী থেকে প্রায় অর্দ্ধ মাইল দূরে একটা প্রশস্ত উদ্যানে বাবুদের পৈতৃক ব্রহ্মময়ী দেবী প্রতিষ্ঠিতা আছেন, ব্রহ্মময়ীর মন্দিরেই বেলা প্রায় আড়াইপ্রহর পর্য্যন্ত বড়বাবু প্রতিদিন উপস্থিত থাকেন, সেইখানেই পূজা-অর্চ্চনা হয়, সন্ধ্যাকালেও সেই মন্দিরে গিয়ে আরতি দেখেন। বিষয়কার্য্যে ঔদাস্য জমেছে বোলেই তীর্থদর্শনে তাঁর অনুরাগ। তিনি আড়ম্বর ভালবাসেন না; তীর্থভ্রমণকালেও কোন প্রকার আড়ম্বর থাকে না; অত বড় একজন জমীদার কেবল একজন বৃদ্ধ চাকর সঙ্গে নিয়ে তীর্থভ্রমণে বহির্গত হয়েছিলেন, এই পরিচয়েই পাঠকমহাশয় দীনবন্ধুবাবুর আড়ম্বরশূন্যতার উত্তম প্রমাণ প্রাপ্ত হয়েছেন। নিজের পোষাক-পরিচ্ছদেও বাবুগিরী নাই, প্রবাসে তাঁরে দর্শন কোল্লেও সামান্য একজন মধ্যবিত্ত গৃহস্থ বোলে মনে হয়। প্রয়াগসঙ্গমে তাঁরে দর্শন কোরে আমিও বাস্তবিক সেইরুপ মনে কোরেছিলেম। তার নিজগ্রামে উপস্থিত হয়ে জানতে পাল্লেম, ধনসম্পদে ও মানগৌরবে তিনি একজন রাজাবিশেষ; বাড়ীখানিও যেন রাজবাড়ী।
গ্রামখানির নাম যদুপুর। গ্রামবাসীরা দীনবন্ধুবাবুর একান্ত ভক্ত। নাচঘরের পাশে একটা ছোটঘর, সজ্জা পরিষ্কার, কিন্তু আড়ম্বরশূন্য; সেই ঘরে বড়বাবু বসেন। গ্রামের ভদ্রলোকেরা দেখা কোত্তে এলে সেইখানেই দেখা-সাক্ষাৎ হয়, বাবু তাঁদের সঙ্গে দিব্য অন্তরঙ্গভাবে আলাপ করেন, যাঁর যেমন মর্য্যাদা তদপেক্ষা বেশী সম্মান দেখান, এই কারণে সকল লোকেই তাঁর গুণগান করেন, যশোগান করেন, মঙ্গলকামনা করেন; সকলেই তাঁর বাধ্য। কেবল এই কারণেই নয়, গ্রামের কেহ বিপদাপন্ন হোলে অর্থে সামর্থে তিনি সাহায্যদান করেন, নিরুপায় দরিদ্র গৃহস্থের ভরণপোষণের ব্যবস্থা কোরে দেন, পিতৃদায়, মাতৃদায়, কন্যাদায় প্রভৃতিতে দায়গ্রস্থ হয়ে কেহ তাঁর শরণাপন্ন হোলে, তিনি মুক্তহস্ত হয়ে সেই সকল কার্য্যের পূর্ণব্যয়ভার একাকী বহন করেন। গুণের অধিকারী সেই মহানুভব দীনবন্ধু চট্টোপাধ্যায়।
সদরবাড়ীর যৎকিঞ্চিৎ পরিচয় আমি দিয়েছি, অন্দরমহলের কিছুই আমার দেখা হয় নাই। একমাস আমি সেই বাড়ীতে থাকলেম, অনেকের সঙ্গেই আলাপ হলো; বড়বাবু আদর করেন, তাই দেখে আর আমার স্বভাবচরিত্র বুঝতে পেরে, ছোটবাবুও দিন দিন আমারে ভালবাসতে লাগলেন। সেই বাড়ীতে আমার চাকরী হলো। মাসিক বেতন কুড়ি টাকা। সেরেস্তায় বোসে লেখাপড়া করা আর বড়বাবুর নিজ খরচপত্রের হিসাব রাখা, কেবল এই পর্য্যন্তই আমার কার্য্য; সময় অনেক পাই, সংস্কৃত আর ইংরেজী ভাষার চর্চ্চার কোন ব্যাঘাত হয় না।
বাড়ীর আমলারা দুই বেলা ব্রহ্মময়ীর বাড়ীতে গিয়ে ভোগের প্রসাদ পান, প্রথম প্রথম দিন পাঁচ ছয় আমারেও সেই দেবালয়ে আহার কোত্তে যেতে হয়েছিল, তার পর ছোটবাবুর আদেশে বাড়ীর মধ্যেই আমার আহারের ব্যবস্থা হয়। বাড়ীতেও নিত্য নিত্য ব্রহ্মময়ীর প্রসাদ আসে, ভোগের প্রসাদ পেতে আমিও বঞ্চিত থাকি না।
হাঁ, অন্দরমহলের কোন কথাই আমি বোলতে পারি নাই। যখন অন্দরে প্রবেশ করবার অনুমতি পেলেম, তখন দেখলেম, সদরমহল অপেক্ষাও অন্দরমহল বড়। রন্ধনমহল, ভাণ্ডারমহল, ঘাটমহল, শয়নমহল, সমস্তই ভিন্ন ভিন্ন। ঘাটমহল ব্যতীত আর তিনটী মহলে সুন্দর সুন্দর অনেক ঘর। সেই সকল ঘর বহুসামগ্রী-পরিপূর্ণ; শয়নমহলের ঘরগুলি সুসজ্জিত। সব দেখলেম ভাল, কেবল একটী দৃশ্য আমার চক্ষে বড় শোচনীয় বোধ হলো। বাড়ীতে বিধবা রমণী অনেকগুলি। বড়-বৌঠাকুরাণী, ছোট-বৌঠাকুরাণী আর বাবুর একটী ভাইঝি ব্যতীত যাঁর দিকে চাই, তাঁরেই দেখি ম্রিয়মাণা;—অলঙ্কারশূন্য, সিঁদরশূন্য, মণ্ডিতমস্তক, থানবস্ত্রপরিহিতা। স্ত্রীলোকেরা কেহই আমারে দেখে ঘোমটা দেন না, লজ্জা করেন না, সকলগুলির মুখ আমি দেখতে পাই; বিধবাগুলির ম্লানমুখ দেখে আমার বড় কষ্ট হয়। গৃহিণী পরম সুন্দরী, বয়স অনুমান ত্রিশ বৎসর; পুত্র হয় নাই, শুনলেম, একটী কন্যা হয়েছিল, জন্মের এক বৎসর পরেই সেটী মারা গিয়েছে; সেই দুঃখে এক একবার তিনি ম্লানমুখী হন, নতুবা সৰ্ব্বক্ষণ তাঁরে প্রসন্নমুখী দেখা যায়। ছোট-বৌটীও সুন্দরী; বয়স অনুমান ১৮/১৯ বৎসর। তিনিও সৰ্ব্বক্ষণ প্রফুল্লবদনে সংসারের কাজকর্ম্ম করেন, মিষ্টবচনে সকলকেই তুষ্ট রাখেন, আবশ্যক হোলে আমার সঙ্গেও অসঙ্কোচে ফুল্লবদনে কথা কন। বাবুর ভাইঝিটীর নাম নয়নতারা; গত বৎসর বিবাহ হয়েছে; বয়স অনুমান দ্বাদশবর্ষ; বর্ণ শ্যামোজ্জ্বল, লাবণ্য চমৎকার; নয়নতারার নয়ন দুটী পলকে পলকে যেন হাস্য করে। নয়নতারা আমার সঙ্গে হেসে হেসে কথা কন; হাসিও মিষ্ট, কণ্ঠস্বর সুমিষ্ট। বিধবাগুলির রপে বর্ণনা কোত্তে ক্লেশবোধ হয়, সুতরাং সে বর্ণনায় ক্ষান্ত থাকলেম। বাড়ীতে দাসী-চাকর অনেক; পাচক-পাচিকা নাই, বাড়ীর স্ত্রীলোকেরাই রন্ধনকার্য্য নিৰ্ব্বাহ করেন; স্বয়ং গৃহিণীই রন্ধনশালার অধিক কাৰ্য্য স্বহস্তে সম্পন্ন কোরে থাকেন। ছোট-বোটীর প্রতি তাঁর যথেষ্ট স্নেহ। চক্ষেও দেখলেম, লোকের মুখেও শুনলেম, বড়-বৌঠাকুরাণী এ সংসারের লক্ষ্মী।
আমি চাকরী করি। মুর্শিদাবাদ প্রাচীন সহর, অবকাশকালে প্রকৃতিদর্শনে আমি বহির্গত হই। ভাগীরথীর পুৰ্ব্বকূলে মুর্শিদাবাদ সহর, পশ্চিমকূলেও অনেকগুলি নগর ছিল, ক্রমে ক্রমে সমৃদ্ধিশূন্যে হয়ে এসেছে। মুর্শিদাবাদের প্রাচীন নাম ছিল মুখশুধাবাদ, বঙ্গের নবাব মুর্শিদকুলীখান আপন নামে এই মুখশুধাবাদের নূতন নাম দেন মুর্শিদাবাদ। তদবধি সেই নামটীই চোলে আসছে।
পূর্ব্বেই বলেছি, ভাগীরথীর উভয়কূলে মুর্শিদাবাদ। পূর্ব্বকূলে সহর, আদালতযুক্ত বহরমপুর, কাশীমবাজার, খাগড়া ইত্যাদি; পশ্চিমকূলে আজিমগঞ্জ, কাণসোণা, কিরীটেশ্বরী ও রাঙামাটী প্রভৃতি অনেক স্থান আছে। আমি গরিব, কিন্তু যেখানে যখন যাই, সেখানকার প্রসিদ্ধ প্রসিদ্ধ স্থানগুলি দর্শন করবার ইচ্ছা বলবতী হয়ে থাকে। মুর্শিদাবাদে কিরীটেশ্বরী নামে এক দেবী আছেন। লোকের মুখে শুনা গেল, এই দেবী ভগবতীর পীঠমালার একটী পীঠের অধিষ্ঠাত্রী। ভগবতীর মস্তকের কিরীট বিষ্ণুচক্রে ছিন্ন হয়ে এইখানে পতিত হয়, তাতেই কিরীটেশ্বরী নাম; ভৈরব এখানে সম্বৰ্ত্তদেব। কিরীটেশ্বরীকে কেহ কেহ মুকুটেশ্বরী বলে, কেহ কেহ বিমলাও বলে; বস্তুতঃ কিরীটপাতের পীঠেরী সাধারণতঃ কিরীটেশ্বরী নামেই প্রসিদ্ধ। পূর্ব্বে অনেক বড় বড় লোক এই তীর্থে সমাগত হোতেন, দেবীর সেবার ব্যবস্থা খুব ভালই ছিল, অনেক লোক এই তীর্থপ্রসাদে প্রতিপালিত হতো, সমারোহের সীমা ছিল না। ডাহাপাড়া গ্রামের দেড়ক্রোশ পশ্চিমে কিরীটেশ্বরী-পীঠ। কিরীটেশ্বরীর মন্দির অতি সুন্দর ছিল, এখন ভগ্নাবশেষ; কালাপাহাড় সে মন্দিরে কোন অপকার করে নাই। আদিমন্দির ভগ্নস্তুপ, দ্বিতীয়বার আর একটী মন্দির নির্ম্মিত হয়, সংস্কারাভাবে সেটাও জীর্ণ প্রায়। আপনাদের সুবিধার জন্য পূজকেরা এখন গ্রামের মধ্যে একটী স্বতন্ত্র মন্দির নির্ম্মাণ কোরে সেইখানে কিরীটেশ্বরী স্থাপন কোরেছেন, সেইখানেই পুজো হয়। “কিরীটেশ্বরীর মেলা” নামে পৌষ মাসে মহাসমারোহে একটী মেলা হতো, আজিও হয়, কিন্তু এখন কেবল নাম মাত্র। মুর্শিদাবাদ যখন বঙ্গ বিহার উড়িষ্যার রাজধানী হয়, মুসলমান-নবারেরা সেই সময় কিরীটেশ্বরীর মহিমা স্বীকার কোত্তেন। কথিত আছে, মহারাজ নন্দকুমার যখন নবাবসরকারের দেওয়ান ছিলেন, সেই সময় নবাব মীরজাফর আপন জীবনের অন্তকালে মহারাজের অনুরোধে কিরীটেশ্বরী-দেবীর চরণামৃত পান কোরেছিলেন।
মুর্শিদাবাদের রাঙামাটী একটী প্রসিদ্ধ স্থান। এখন সেই রাঙামাটী কেবল প্রস্তর আর রক্তবর্ণ মৃর্ত্তিকার স্তূপে পরিণত; অধিকাংশ স্থান ভাগীরথীগর্ভে প্রবেশ কোরেছে! রাঙামাটীর প্রাচীন নাম কর্ণসুবর্ণ,—অপভ্রংশে কাণসোণা। প্রবাদ এইরুপ যে, ঐ স্থানে দাতাকর্ণের রাজধানী ছিল। কর্ণসুবর্ণ পূরাণপ্রসিদ্ধ অঙ্গরাজ্যের অন্তর্গত। মহাভারতের উদযোগপর্ব্বে বর্ণিত আছে, রাজা দুর্যোধন কর্ণকে অঙ্গরাজ্যের রাজপদে বরণ কোরে ভারতযুদ্ধে সেনাপতিত্ব প্রদান কোরেছিলেন, সেই অঙ্গরাজ্যের রাজধানী কর্ণসুবর্ণ। স্থানের নাম রাঙামাটী কেন হয়েছিল, সে প্রসঙ্গেও একটা প্রবাদ প্রচলিত আছে। কর্ণপুত্র বৃষকেতুর অন্নপ্রাশনের সময় লঙ্কেশ্বর বিভীষণের নিমন্ত্রণ হয়েছিল, রাজা বিভীষণ নিমন্ত্রণস্থলে উপস্থিত হয়ে স্বর্ণবৃষ্টি কোরেছিলেন, সেই স্বর্ণপ্রভায় কর্ণসুবর্ণের সমস্ত মূর্ত্তিকা স্বর্ণবর্ণ ধারণ কোরেছিল; স্বর্ণবর্ণ রক্তবর্ণ নয়, তথাপি লোকমুখে সেই স্থানের নূতন নাম হয় রাঙামাটী। বহুলোকের মুখেই এই কথা শুনা যায়। বস্তুতঃ কর্ণসুবর্ণ একজন বড়রাজার রাজধানী ছিল, তার অনেক চিহ্ন দেখা যায়; শোভাসমৃন্ধি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে, তথাপি এখনো রাজডাঙ্গা, ঠাকুরডাঙ্গা, ব্রাহ্মণডাঙ্গা, ভাণ্ডারডাঙ্গা প্রভৃতি কতকগুলি উচ্চ উচ্চ স্থান বিদ্যমান আছে। কর্ণসুবর্ণে অনেক অট্টালিকা ও অনেক দেবালয় ছিল, ইষ্টকপ্রস্তরাদি-স্তূপের ভগ্নাবশেষ দৃষ্ট হয়। কিরীটেশ্বরীতেও অনেক মন্দির ও অনেক দেব-মূর্ত্তির ভগ্নাবশেষ দৃষ্ট হয়ে থাকে।
কিরীটেশ্বরীর ভৈরব প্রকৃতপক্ষে মহাদেবের ন্যায় মূর্ত্তিবিশিষ্ট কি না, এ বিষয়ে অনেকে সন্দেহ করেন। মূর্ত্তি পদ্মাসনে উপবিষ্ট, বাম হস্তখানি ক্রোড়সংলগ্ন, দক্ষিণ-হস্তখানি পাদসংলগ্ন, মস্তকে টোপর, গলদেশে যজ্ঞোপবীত। এই মূর্ত্তি দর্শন কোরে অনেকে অনুমান করেন, ভৈরবরূপী বুদ্ধমূর্ত্তি। বুদ্ধদেবের পাঁচ প্রকার মূর্ত্তি; ধ্যানী বুদ্ধ, সমাধিস্থ বুদ্ধ, প্রচারক বুদ্ধ, যাত্রী বুদ্ধ, মুমূর্ষ বুদ্ধ। ঐ মূর্ত্তি ধ্যানী বুদ্ধমূর্ত্তি বোলে অনুমিত হয়। ঐ মূর্ত্তি প্রাচীনকালাবধি ঐ স্থানে আছে কিম্বা কোন বুদ্ধতীর্থ থেকে ঐ বুদ্ধমূর্ত্তি কিরীটেশ্বরীতে কেহ আনয়ন কোরেছেন, এখানকার লোকেরা সে কথা বোলতে পারেন না। বিজ্ঞলোকেরা বলেন, ভৈরবেরা ত্রিনেত্র, এ মূর্ত্তিতে ত্রিনয়ন নাই, অতএব ধ্যানীবুদ্ধমূর্ত্তি বোলেই সিদ্ধান্ত করা করা হয়।
এখানে মহীপাল নামে একটী স্থান আছে। স্থানটী গঙ্গাতীরে। রাজা মহীপাল এই স্থানের নাম দিয়েছিলেন মহীপাল নগর। অধুনা সেই নগরের ধ্বংসাবশেষ বিদ্যামান। রাজা মহীপালের প্রাসাদ এখন ভগ্নস্তূপে পরিণত। রাজা মহীপাল এখানে একটী দীর্ঘিকা খনন করান, সেই দীর্ঘিকার নাম সাগরদীঘী। প্রাচীনলোকের মুখে শুনা গেল, প্রায় একাদশ শতবর্ষ পূর্ব্বে এই দীঘী খনিত হয়। এই দীঘীর নাম কেন সাগরদীঘী, তৎসম্বন্ধে এখানে একটা গল্প আছে। খননকার্য্য সমাপ্ত হয়ে গেলেও দীঘীতে জল হয় নাই, রাজা মহীপালদেব স্বপ্নযোগে এইরূপে একটী দেবাদেশ প্রাপ্ত হন যে, “মহীপালনগরে সাগরপাল নামে এক কুম্ভকার বাস করে, সে যদি দীঘীর নিম্নভাগে এক কোদাল মাটী কেটে দেয়, তা হোলেই তৎক্ষণাৎ জল উঠবে।”
সেই প্রত্যাদেশে রাজা তৎপরদিবস সাগরপালকে ডাকান, সাগরপাল মাটী কাটে, দীঘী জলপূর্ণ হয়। এ গল্প কতদূর বিশ্বাস্য, সে কথা বলা যায় না। লোকে বলে, সাগরপালের নামেই দীঘীর নাম সাগরদীঘী। এই দীঘী পূৰ্ব্বপশ্চিমে অর্দ্ধক্রোশ দীর্ঘ, উত্তরদক্ষিণে প্রায় সহস্র হস্ত প্রশস্ত। দীঘীর উভয় তীরে দশটী বাঁধাঘাট ছিল; ঘাটগুলির এখন ভগ্নাবস্থা, কেবল কিছু কিছু চিহ্ন দেখা যায় মাত্র। ঘাটের ধারে ধারে কতকগুলি পান্থাশ্রম ছিল, সে সকল আশ্রম এখন কেবল ইষ্টকস্তূপে পরিণত। একটা স্তূপের বর্ত্তমান নাম “বুড়ো পীরের দরগা।” রাজা মহীপালদেব ৭৪০ শকে এই দীঘী খনন করান। বঙ্গেশ্বর লক্ষণসেনের সময়ে গৌড়ে এই প্রকার একটা দীঘী খনিত হয়, সে দীঘীর নামও সাগরদীঘী। দিনাজপুরে রাজা মহীপালের কীর্ত্তিখাতস্বরুপ একটী দীঘী আছে, সে দীঘীর নাম মহীপালদীঘী।
লোকের মুখেও কতক কতক শুনলেম, চক্ষেও কতক কতক আমি দেখলেম। ভাগীরথীর উভয়তীরে মুর্শিদাবাদের যে যে স্থান দর্শনযোগ্য, কতিপয় বিশেষজ্ঞ লোকের সঙ্গে এক একদিন বেড়িয়ে বেড়িয়ে সেগুলিও আমি দর্শন কোল্লেম। পূৰ্ব্বতীরে নবাব নাজীমের বাড়ী, বাগান, চিত্রশালা, তোপখানা ইত্যাদি দিব্য সুন্দর; কাশীমবাজারের রাজবাড়ী খুব প্রশস্ত, কিন্তু প্রাচীন ধরণের। বহরমপুরের আদালতগুলি বেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। খাগড়ার পিত্তল-কাঁসার জিনিস বঙ্গদেশে প্রসিদ্ধ। একে একে এই সব আমি দেখলেম। আমার চক্ষে সুন্দর বোধ হলো, কিন্তু এখানকার ভদ্রলোকেরা বলেন, মুর্শিদাবাদের পূর্ব্বশ্রী এখন কিছুই নাই। মুর্শিদাবাদ যখন বাঙলার রাজধানী ছিল, তখন এ স্থানের শোভাসমৃদ্ধির সীমা ছিল না। চীন-পরিব্রাজক হিউয়েনশিয়াং ভারতভ্রমণ সময়ে মুর্শিদাবাদে এসেছিল, সেই দূরদর্শী ভ্রমণকারীর লিখিত বিবরণীতে মুর্শিদাবাদের উচ্চপ্রশংসা পরিকীর্ত্তিত আছে, এ কথাও আমি এখানকার পণ্ডিতলোকের মুখে শ্রবণ কোল্লেম।
তিনমাস আমি দীনবন্ধুবাবুর বাড়ীতে অবস্থান কোল্লেম, চাকরী করি আর ভ্রমণ করি, এই আমার কাৰ্য্য। বাবুর পরিবারবর্গের কাছে দিন দিন আমার আদর-যত্ন বাড়তে লাগলো; বাবুর যথেষ্ট আদর-যত্ন তো ছিলই, বাবুর কনিষ্ঠ ভ্রাতা পশুপতিবাবুও আমারে খুব ভালবাসলেন। পশুপতিবাবুর স্বভাবচরিত্র নির্ম্মল, অল্পবয়সে বিষয়বুদ্ধিও বেশ পরিপক্ক, নীতিশাস্ত্রজ্ঞানেও তিনি বঞ্চিত ছিলেন না, তাঁর কথাবার্ত্তায় আর সদয়ব্যবহারে দিন দিন তাঁর প্রতি আমার বিশেষ শ্রদ্ধা জন্মিল। তিনি আমার সঙ্গে সখ্যভাবে কথা কন, ধর্ম্মশাস্ত্রের ইতিহাস বলেন, বিষয়কর্ম্মের জটিলতা বুঝিয়ে দেন, এক একদিন সন্ধ্যাকালে তাঁর মুখে আমি আমোদপ্রমোদের খোসগল্প শুনে বড় সুখী হই। গল্পগুলি দোষাংশপরিশূন্য, তার উপর নীতিশাস্ত্রের অনুগত। আমলাবর্গের সঙ্গেও আমার বেশ আলাপ হলো, বাবুদের আদর-যত্ন দেখে বাড়ীর চাকরেরাও আমার আজ্ঞাকারী হয়ে থাকলো, পল্লীবাসী ভদ্রসন্তানেরাও ক্রমে ক্রমে আমারে চিনলেন, তাঁদের কাছেও আমি স্নেহ-ভালবাসালাভে হতাশ হোলেম না।
যে বৎসরের কথা আমি বোলছি, সে বৎসর কার্ত্তিকমাসে দুর্গাপুজো হয়। বাবুর বাড়ীতে মহা সমারোহে মহামায়ার পূজা হলো। বৃহৎ প্রতিমা, চমৎকার গঠন, চমৎকার সজ্জা, সমস্তই চমৎকার। পূজার তিনদিন বিস্তর লোকের সমাগম, ভোজের ব্যাপার সমৃদ্ধিসম্পন্ন, নিমন্ত্রিতগণের আদর-অভ্যর্থনাও অনুপম। কলিকাতায় প্রতিমার নিকটে প্রণামী দিবার রীতি আছে, এখানে সে রীতি নাই। দিবারাত্রি উৎসব। বৈকালে চণ্ডীর গান, রাত্রিকালে যাত্রা। এই গ্রামের অনেক বাড়ীতেই পূজা হয়, অনেক বাড়ীতেই ঘটা হয়, কিন্তু চণ্ডীর গান আর যাত্রা ছাড়া কোন বাড়ীতেই খেমটানাচ কিম্বা বাইনাচের মজলীস দেখা গেল না। সকলেই ভাবেন, মহামায়ার আগমন-উৎসবে বাড়ীতে বেশ্যানর্ত্তন দূষণীয়।
দশমীতে ভাগীরথীগর্ভে মা দুর্গার নিরঞ্জন। অনেক লোকের সঙ্গে আমি নিরঞ্জন দেখতে গেলেম। ছোট বড় অনেকগুলি প্রতিমা এক জায়গায় জমা হলো, দুর্গামঙ্গলের গায়ক-সম্প্রদায় করুণরাগিণীতে গঙ্গাতীরে বিজয়া গাইলেন, অনেক ভক্তের চক্ষে অশ্রুবিন্দু দেখা গেল, তার পর বিসর্জ্জন। স্বর্ণপ্রতিমার ন্যায় মহামায়ার মৃন্ময়ী প্রতিমাগুলি একে একে হেলে হেলে গঙ্গাজলে ডুবলেন, ভাগীরথীবক্ষে নৌকার উপর ৫/৭ খানি প্রতিমার বাচখেলা হলো, সন্ধ্যার পূর্ব্বেই নিরঞ্জন সমাপ্ত। কলিকাতা বিজয়োৎসবে যে যে অঙ্গ পালিত হয়, শান্তিজলগ্রহণ, দুর্গানাম লেখা, সিদ্ধিপান, পরস্পর আলিঙ্গন-সম্ভাষণ ইত্যাদি সেই সেই অঙ্গগুলি সমভাবেই প্রতিপালিত হলো। এখানে কেবল দুটী প্রথা আমি নূতন দেখলেম। সুর্য্যাস্তের পূর্ব্বেই প্রতিমা বিসর্জ্জন হয়ে গেল, কিন্তু যতক্ষণ আকাশে নক্ষত্রোদয় না হলো, ততক্ষণ পূজাবাড়ীর কর্ত্তারা কেহই ঘরে ফিরে এলেন না, সন্ধ্যার সময় পূর্ণঘট সঙ্গে কোরে, নক্ষত্র দেখে দলবলসহ বাড়ী এলেন, এই একটী প্রথা; আর,— যাঁরা বনিয়াদী লোক, পুরুষানুক্রমে যাঁদের বাড়ীতে দুর্গোৎসব হয়, তাঁরা বাড়ীতে প্রবেশ করবার অগ্রে একটী লক্ষণ পরীক্ষা করেন। বাড়ীর কৰ্ত্তা সদরদরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে এক একটী নীলকণ্ঠপাখী উড়িয়ে দেন, পাখী যদি উড়ে উড়ে বাড়ীর ভিতর যায়, তবেই মঙ্গল, নতুবা পাখী যদি বাহিরদিকে উড়ে যায়, তবেই অমঙ্গল লক্ষণ বুঝায়; সেই অমঙ্গলের প্রতিবিধানার্থ আগামী বৎসরে মা দুর্গার উদ্দেশে স্বতন্ত্র মানসিক পূজার মানস কোত্তে হয়। দীনবন্ধবাবুও তদনুসারে নীলকণ্ঠপাখী উড়ালেন, পাখীটী ফর ফর কোরে উড়ে পুজার দালানে গিয়ে বোসলো, উচ্চকণ্ঠে “জয় মা দুর্গা!” উচ্চারণ কোরে প্রহৃষ্টবদনে সকলে বাড়ীর মধ্যে প্রবেশ কোল্লেন। বাবুদের কাছে কাছে আমি। দালানের যে চৌকীতে প্রতিমাস্থাপন হয়েছিল, সেই চৌকীর উপর দুটী বালিকা গৌরীকুমারী বোসেছিলেন, পার্শ্বে একটী ঘৃতপ্রদীপ জ্বোলছিল, সম্মুখে সেই নীলকণ্ঠ; চৌকীর উপর পূর্ণঘটস্থাপন কোরে সকলে সেইখানে ভূমিষ্ঠ হয়ে প্রণাম কোল্লেন, আমিও প্রণাম কোল্লেম। তার পর বিজয়াকৃত্যের অপরাপর অঙ্গসমাধান। সে রাত্রে আর যাত্রাদি কোন প্রকার উৎসব হলো না, ঘটের কাছে আরতি হলো, আবার আমরা প্রণাম কোল্লেম। রাবণবধের অগ্রে সমদ্রতীরে রামচন্দ্র অকালে শরৎকালে দুর্গাপুজা কোরেছিলেন, রামচন্দ্রের বিজয়োৎসবের অনুকরণে এই বিজয়োৎসবের প্রবর্ত্তন; কিন্তু বিজয়ার অনেকগুলি অঙ্গ অধুনা নূতন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। রামচন্দ্র সেকালে বানর-ভল্লুকাদির সঙ্গে কোলাকুলি কোরেছিলেন, একালে এখন মানুষে মানুষে মেলা।
বিজয়া-রজনী প্রভাত হলো, বাদ্যকরের মধুরতালে নানাপ্রকার রং বাজিয়ে বকসীস নিয়ে বিদায় হয়ে গেল, দক্ষিণা পেয়ে আশীর্ব্বাদ কোরে পুরোহিতেরাও বিদায় হোলেন, সংবৎসরের মত দুর্গোৎসবের আমোদ ফুরালো।
দিনে দিনে ক্রমে ক্রমে গোলমাল থেমে গেল, পুজোর পূর্ব্বাবধি শেষের পাঁচ সাত দিন পর্য্যন্ত দপ্তরখানার কাজকর্ম্ম বন্ধ ছিল, বন্ধের অবসানে পুনরায় আমরা স্ব কর্ত্তব্যকার্যে মনোনিবেশ কোল্লেম।