হুমায়ূন আহমেদ
মিসির আলি অমনিবাস
সমকালীন কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন, এখনও আছেন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। গ্রন্থজগতের পরিসংখ্যান বিগত কয়েক বৎসর যাবৎ এই সত্য প্রতিষ্ঠিত করছে। এই কথাশিল্পীর সৃজনশীলতার ক্ষমতা ইতোমধ্যেই প্রায় কিংবদন্তীতুল্য।
কিশোর থেকে বৃদ্ধ, স্বল্পশিক্ষিত থেকে বুদ্ধিজীবী পণ্ডিত—সকলেই তাঁর উপন্যাসের আগ্রহী পাঠক, অথবা টেলিভিশনের পর্দায় তাঁর কাহিনীর নাট্যরূপায়ণের বিমুগ্ধ দর্শক। কোন ক্ষমতায় এভাবে সকলকে কাছে টানেন হুমায়ূন আহমেদ? চিত্রল গতিময় সহজ ভাষাবিন্যাস। অভাবনীয় ঘটনা বিশ্বাসযোগ্যভাবে ঘটানোর মনোহারী কৌশল। কল্পনা হার মেনে যায় এমন অকল্পনীয় বিদ্যুন্নিভ সংলাপ। এবং তাঁর কাহিনীতে ছড়ানো জীবন কখনোই আমাদের চেনা মধ্যবিত্ত সমাজসত্যের বাইরে ছোটাছুটি করে না। মধ্যবিত্ত-জীবনের আশা-নিরাশা, অনিশ্চিতি এবং দোলাচলপ্রবণ মূল্যবোধ, তার সামান্য লাভ ও সামান্য ক্ষতির বন্ধনে আততিময় অস্তিত্ব। হুমায়ূন আহমেদের যে-কোন উপন্যাস ধারণ করে আছে তাঁর সৃজনীসত্তার মনন-কল্পনার এ-সকল উপাদান। সাধারণ মানুষের কাতর জীবন চূর্ণকণায় ছড়িয়ে থাকে তাঁর লেখায়।
যখন প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ বেরোয়, তখন প্রথিতযশা অধ্যাপক ডক্টর আহমদ শরীফ লিখেছিলেন, “হুমায়ূন আহমেদ বয়সে তরুণ, মনে প্রাচীন দ্রষ্টা, মেজাজে জীবনরসিক, স্বভাবে রূপদর্শী, যোগ্যতায় দক্ষ রূপকার। ভবিষ্যতে তিনি বিশিষ্ট জীবনশিল্পী হবেন এই বিশ্বাস ও প্রত্যাশা নিয়ে অপেক্ষা করব।” এভাবেই যাত্রা শুরু হয়েছিল হুমায়ূন আহমেদের। তারপর ক্রমাগত পথচলার প্রবাহে একের পর এক সাহিত্যকর্ম উপহার দিয়ে চলেছেন এ-দেশের পাঠকসমাজকে। পণ্ডিত সমালোচক ও হৃদয়বান গল্পপ্রেমিক উভয়েরই প্রত্যাশা তিনি পূরণ করে চলেছেন।
একই সঙ্গে অতিপ্রজ অথচ শিল্পরুচিময় লেখক তাঁর মতো আর কেউ এই মুহূর্তে আছেন কিনা সন্দেহ। প্রতি বৎসর অব্যাহত গতিতে তাঁর ফসলের ডালা ভরে উঠছে।
হুমায়ূন আহমেদের জন্ম ময়মনসিংহের মোহনগঞ্জ গ্রামে, ১৯৪৮ সালের ১৩ই নভেম্বর তারিখে। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পলিমার কেমিস্ট্রিতে গবেষণা করে ১৯৮২ সালে পি-এইচ. ডি. ডিগ্রী অর্জন করেছেন, বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রসায়নশাস্ত্রে অধ্যাপনারত। লেখক-জীবনে সাফল্যের প্রথম উল্লেখযোগ্য স্বীকৃতি পেয়েছিলেন অপেক্ষাকৃত নবীন বয়সে, ১৯৮১ সালে, ‘বাংলা একাডেমী পুরস্কার’ প্রাপ্তির মাধ্যমে। এ ছাড়াও তিনি পেয়েছেন শিশু একাডেমী ও লেখক শিবির পুরস্কারসহ আরও অনেক পুরস্কার।
২০১১ সালের সেপ্টেম্বের মাসে তার মলাশয়ের ক্যান্সার ধরা পড়ে। তিনি নিউইয়র্কের মেমোরিয়াল স্লোয়ান-কেটরিং ক্যান্সার সেন্টারে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। ১২ দফায় তাকে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়েছিল। অস্ত্রোপচারের পর তার কিছুটা শারীরিক উন্নতি হলেও, শেষ মুহূর্তে শরীরে অজ্ঞাত ভাইরাস আক্রমণ করায় তার অবস্থা দ্রুত অবনতির দিকে যায়। কৃত্রিমভাবে লাইভ সাপোর্টে রাখার পর ১৯শে জুলাই ২০১২ তারিখে তিনি নিউ ইয়র্কের বেলেভ্যু হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে নুহাশ পল্লীতে দাফন করা হয়।
সিরিজ পরিচয়
‘মিসির আলি’, বাংলাদেশের প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদ সৃষ্ট একটি জনপ্রিয় চরিত্র। মিসির আলি কাহিনীগুলো রহস্যমাত্রিক। মিসির আলির কাহিনীগুলো ঠিক গোয়েন্দা কাহিনী নয়, কিংবা ‘ক্রাইম ফিকশন’ বা ‘থ্রিলার’-এর মতো খুনি-পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়া নয়, বরং মনস্তাত্ত্বিক, বিজ্ঞাননির্ভর এবং যুক্তিনির্ভর কাহিনীর বুনটে বাঁধা। অনেক ক্ষেত্রে একে রহস্যগল্প বলা চলে। চারিত্রিক দিক দিয়ে মিসির আলি চরিত্রটি হুমায়ূন আহমেদের আরেক অনবদ্য সৃষ্টি হিমু চরিত্রটির পুরোপুরি বিপরীত। তরুণ হিমু চলে প্রতি-যুক্তির (anti-logic) তাড়নায়, অপরপক্ষে বয়োজ্যেষ্ঠ মিসির আলি অনুসরণ করেন বিশুদ্ধ যুক্তি (pure-logic)। এই যুক্তিই মিসির আলিকে রহস্যময় জগতের প্রকৃত স্বরূপ উদ্ঘাটনে সাহায্য করে। সেসব কাহিনীর প্রতিফলন ঘটেছে মিসির আলি সম্পর্কিত প্রতিটি উপন্যাসে।1
চরিত্র রূপায়ণ
ঔপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদ যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমণের সময়ে নর্থ ডাকোটার ফার্গো শহরে স্ত্রীর সাথে গাড়িতে ভ্রমণের সময় মিসির আলি চরিত্রটির ধারণা মাথায় আসে।2 এই ঘটনার অনেকদিন পরে তিনি মিসির আলি চরিত্রের প্রথম উপন্যাস ‘দেবী’ রচনা করেন।3
চরিত্রের স্বরূপ
উপন্যাসের কাহিনী অনুসারে মিসির আলি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের “অস্বভাবী মনোবিজ্ঞান” (Abnormal Psychology) বিভাগের একজন সহযোগী অধ্যাপক4 (খণ্ডকালীন)5। শুধুমাত্র একজন শিক্ষক হিসেবেই নন, তার অনুসারীদের কাছেও তিনি বেশ মর্যাদাবান একজন চরিত্র হিসেবে উল্লিখিত। সেজন্য উপন্যাস বা বড় গল্পে, মিসির আলিকে বোঝাতে লেখক ‘তার’ লেখার পরিবর্তে সম্মানসূচক ‘তাঁর’ শব্দটির ব্যবহার করে থাকেন।
মিসির আলির বয়স ৪০-৫০-এর মধ্যে। তার মুখ লম্বাটে। সেই লম্বাটে মুখে এলোমেলো দাড়ি, লম্বা উসকো-খুসকো কাঁচা-পাকা চুল। প্রথম দেখায় তাকে ভবঘুরে বলে মনে হতে পারে; কিছুটা আত্মভোলা। তার হাসি খুব সুন্দর, শিশুসুলভ। মিসির আলির স্মৃতিশক্তি বেশ ভালো।6
তিনি মানুষের মন, আচরণ, স্বপ্ন এবং নানাবিধ রহস্যময় ঘটনা নিয়ে অসীম আগ্রহ রাখেন। হুমায়ূন আহমেদের নিজের ভাষ্যে7:
“মিসির আলি এমন একজন মানুষ, যিনি দেখার চেষ্টা করেন চোখ বন্ধ করে। যে পৃথিবীতে চোখ খুলেই কেউ দেখে না, সেখানে চোখ বন্ধ করে দেখার এক আশ্চর্য ফলবতী চেষ্টা।”
চরিত্রটির পরিচিতি দিতে গিয়ে হুমায়ূন আহমেদ বলছেন:8
“মিসির আলি একজন মানুষ, যাঁর কাছে প্রকৃতির নিয়ম-শৃঙ্খলা বড় কথা, রহস্যময়তার অস্পষ্ট জগৎ যিনি স্বীকার করেন না।”
মিসির আলি চরিত্রে হুমায়ূন আহমেদ, পরস্পর বিপরীতধর্মী দুটি বৈশিষ্ট্য ‘যুক্তি’ এবং ‘আবেগ’কে স্থান দিয়েছেন।9
মিসির আলি একজন ধূমপায়ী। তিনি ‘ফিফটি ফাইভ’ ব্র্যান্ডের সিগারেট খান। তবে তিনি প্রায়ই সিগারেট ছেড়ে দেবার চেষ্টা করেন। তার শরীর বেশ রোগাটে আর রোগাক্রান্ত। নানারকম রোগে তার শরীর জর্জরিত: লিভার বা যকৃৎ প্রায় পুরোটাই অকেজো, অগ্ন্যাশয়ের কার্যকারিতা হ্রাস পেয়েছে, রক্তের উপাদানে গড়বড়, হৃৎপিণ্ড ড্রপ বিট দেয়।10 এজন্য কঠিন এসব রোগের পাশাপাশি সাধারণ যেকোনো রোগই তাকে বেশ কাহিল করে ফেলে। ফলে প্রায়ই অসম্ভব রোগাক্রান্ত হয়ে তাকে হাসপাতালে থাকতে হয় এবং শেষ পর্যন্ত তিনি সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন।
মিসির আলি যুক্তিনির্ভর একজন মানুষ বলেই অনেক সাহসী। ভূতাশ্রিত স্থানেও রাত কাটাতে তিনি পিছপা হোন না, বরং এজন্য থাকেন যে, তাতে তিনি রহস্যময়তার ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে পারবেন। মিসির আলির অনেকগুলো পারঙ্গমতার মধ্যে অন্যতম হলো তিনি যে কাউকে, বিশেষ করে ঠিকানাওয়ালা মানুষকে, খুব সহজে অজানা স্থানেও খুঁজে বের করতে পারেন। এজন্য তিনি টেলিফোন ডিরেক্টরি, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর, টিভি-বেতার-এর লাইসেন্স নম্বর11, পুলিশ কেস রিপোর্ট, হাসপাতালের মর্গের সুরতহাল (পোস্টমোর্টেম) রিপোর্ট12 ইত্যাদির আশ্রয় নিয়ে থাকেন। মিসির আলি প্রকৃতির বিস্ময়ে বিস্মিত হলেও প্রচণ্ড যুক্তির বলে বিশ্বাস করেন প্রকৃতিতে রহস্য বলে কিছু নেই।13 মিসির আলি ধর্মীয় বিশ্বাসের দিক থেকে একজন নাস্তিক। মিসির আলি সিরিজের প্রথম উপন্যাস “দেবী”-এর ষষ্ঠ অধ্যায়ে তিনি নিজেকে নাস্তিক বলে অভিহিত করেছেন। তবে কিছু জায়গায় তাকে ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাসী অর্থাৎ একজন আস্তিক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।14
মিসির আলি মূলত নিঃসঙ্গ একজন মানুষ, মোটামুটি সব উপন্যাসে তাকে এভাবেই রূপায়িত করা হয়। কিন্তু “অন্য ভুবন” উপন্যাসে মিসির আলি বিয়ে করে ফেলেন বলে উল্লেখ আছে। তিনি বিয়ে করেন নীলুফারকে, যার প্রথম আবির্ভাব ঘটে দেবী উপন্যাসে। পরবর্তীতে “নিশীথিনী” উপন্যাসে লেখক মিসির আলির প্রতি নীলুফারের আবেগ দেখিয়েছেন। পরের অনেক উপন্যাসে এই সাময়িক আবেগ দেখা গেলেও মিসির আলি সব আবেগ, ভালোবাসার ঊর্ধ্বে নিজেকে স্থাপন করেছেন। তাই পরবর্তী উপন্যাসগুলিতে আবার তাকে নিঃসঙ্গ একজন মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। এপ্রসঙ্গে লেখক নিজেই স্বীকার করেন যে, “এটি বড় ধরনের ভুল” ছিল। মিসির আলির মতো চরিত্র বিবাহিত পুরুষ হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। আর সেই ভুল শোধরে পরবর্তী উপন্যাসগুলোতে আবার মিসির আলিকে নিঃসঙ্গ হিসেবে উপস্থাপন করেন লেখক। ফলে মিসির আলি চরিত্রটি যা দাঁড়ায়: মিসির আলি ভালবাসার গভীর সমুদ্র হৃদয়ে লালন করেন, কিন্তু সেই ভালবাসাকে ছড়িয়ে দেবার মত কাউকেই কখনও কাছে পান না। ভালবাসার একাকিত্বে জর্জরিত মিসির আলির নিঃসঙ্গতা ঘোচাতে বিভিন্ন সময় কিশোরবয়সী কাজের লোকের উল্লেখ পাওয়া যায়। যেমন: “আমি এবং আমরা” উপন্যাসে “বদু” নামের একটি, ১৫-১৬ বছরের কাজের ছেলের উল্লেখ রয়েছে। “দেবী” ও “নিশীথিনী” গল্পে হানিফা নামে একটা কাজের মেয়ে ছিল। এরকম কাজের লোককে মিসির আলি লেখাপড়া শেখানোর চেষ্টা করেন। আবার “অন্য ভূবন” উপন্যাসে “রেবা” নামের একটি কাজের মেয়ের উল্লেখ পাওয়া যায়।
মিসির আলির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগত সারমর্ম করতে হুমায়ূন আহমেদই লিখেন: মিসির আলি নিঃসঙ্গ, হৃদয়বান, তীক্ষ্ণ ধীশক্তির অধিকারী।15 কাহিনী অনুসারে তিনি অকৃতদার। চরিত্রটি লেখকেরও, প্রিয় চরিত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম।
মিসির আলি চরিত্রটি এতটাই পাঠক জনপ্রিয়তা পেয়েছে যে, অনেকেই তাকে রক্তমাংসের মানুষ ভাবতে শুরু করেছেন। হুমায়ূন আহমেদ প্রায়ই জিজ্ঞাসিত হন যে, মিসির আলি কি কোনো বাস্তব চরিত্রকে দেখে লেখা কিনা। এর নেতিবাচক উত্তর পেয়ে অনেকেই আবার মিসির আলি চরিত্রটির মধ্যে লেখকেরই ছায়া খুঁজে পান। এপ্রসঙ্গে স্বয়ং হুমায়ূন আহমেদই উত্তর করেন:16
“না, মিসির আলিকে আমি দেখিনি। অনেকে মনে করেন লেখক নিজেই হয়তো মিসির আলি। তাঁদেরকে বিনীতভাবে জানাচ্ছি— আমি মিসির আলি নই। আমি যুক্তির প্রাসাদ তৈরি করতে পারি না এবং আমি কখনও মিসির আলির মতো মনে করি না প্রকৃতিতে কোনো রহস্য নেই। আমার কাছে সব সময় প্রকৃতিকে অসীম রহস্যময় বলে মনে হয়”
কিন্তু এই অভয়বাণী সত্ত্বেও নলিনী বাবু B.Sc উপন্যাসে লেখককেই মিসির আলির ভূমিকায় দেখা যায়, এবং তিনি যে মিসির আলি থেকে আলাদা কিন্তু তার স্রষ্টা তার স্পষ্ট উল্লেখ করেন:
“আমি (লেখক) এই ভেবে আনন্দ পেলাম যে, সালেহ চৌধুরী (লেখকের সফরসঙ্গী) মিসির আলিকে উপন্যাসের চরিত্র হিসেবে দেখছেন না। অতি বুদ্ধিমান মানুষও মাঝে মাঝে বাস্তব-অবাস্তব সীমারেখা মনে রাখতে পারেন না।17”
গণমাধ্যমে মিসির আলি
বাংলাদেশ টেলিভিশন
১৯৮৭ সালে ছোটপর্দায় মিসির আলীর প্রথম আবির্ভাব। তখন হুমায়ূন আহমেদের মিসির আলীকে নিয়ে লেখা প্রথম উপন্যাস দেবীর বয়স হয়েছিল মাত্র দুই বছর। জনপ্রিয় চরিত্রটির ভূমিকায় আবুল হায়াত প্রথম অভিনয় করেন। অন্য ভুবনের সে এবং পরবর্তীতে ১৯৮৯ সালে অন্য ভুবনের ছেলেটা, মোট দুটি নাটকের মিসির আলী চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। এছাড়া, প্রয়াত অভিনেতা আবুল খায়ের একবার এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
বেসরকারি টেলিভিশন
বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর মধ্যে, এনটিভিতে মিসির আলিকে নিয়ে অনিমেষ আইচ তিনটি নাটক নির্মাণ করেন। “বৃহন্নলা” উপন্যাস অবলম্বনে একই নামে নির্মিত প্রথম নাটকে মিসির আলির ভূমিকায় শতাব্দী ওয়াদুদ অভিনয় করেন। পরবর্তীতে ২০০৭ সালে একই নির্মাতার পরবর্তী নাটক নিষাদ এ মিসির আলী চরিত্রে অভিনয় করেন আশীষ খন্দকার। মিসির আলীকে নিয়ে লেখা ছোটগল্প স্বপ্ন সঙ্গিনী অবলম্বনে অনিমেষ আইচের তৃতীয় নাটকে হুমায়ুন ফরিদী অভিনয় করেন। নির্মাতা রেদোয়ান রনির নাটকেও একবার মিসির আলী চরিত্রের দেখা মিলেছিল।
বাংলা চলচ্চিত্রে
২০১৮ সালে মিসির আলিকে প্রথম বড় পর্দায় আনেন অনম বিশ্বাস তার দেবী চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। এটি হুমায়ূন আহমেদের মিসির আলিকে নিয়ে প্রথম উপন্যাস দেবী অবলম্বনে নির্মিত হয়। চলচ্চিত্রটিতে চঞ্চল চৌধুরী মিসির আলি চরিত্রে অভিনয় করেন।
প্রকাশনা
মিসির আলি সংক্রান্ত উপন্যাস ও গল্পগ্রন্থ প্রথম পর্যায়ে আলাদা আলাদা বই আকারে বের হলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা চরিত্রটির পাঠক সমাদর বিবেচনা করে তা সংকলিত আকারেও প্রকাশ করে। এরকম সংকলনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো প্রতীক প্রকাশনা সংস্থার “মিসির আলি অমনিবাস” নাম তিন খণ্ডে মিসির আলির সকল উপন্যাস ও গল্পগ্রন্থ প্রকাশ করে। এছাড়াও মিসির আলির সমস্ত উপন্যাস নিয়ে (মিসির আলি UNSOLVED, “মিসির আলি আপনি কোথায়?”, “পুফি” এবং “যখন নামিবে আঁধার” ব্যতীত) অনন্যা প্রকাশনা সংস্থা মিসির আলি সমগ্র নামে একটি বই প্রকাশ করে। বইটি ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে প্রকাশিত হয়। কলকাতার কাকলি প্রকাশনী দুই খণ্ডে সম্প্রতি মিসির আলি সমগ্র প্রকাশ করেছে।
মিসির আলি অমনিবাস
ক্রম |
শিরোনাম | প্রথম প্রকাশ |
প্রকাশক |
১ |
দেবী | জুন ১৯৮৫ |
অবসর প্রকাশনা, ঢাকা |
২ |
নিশীথিনী | ১৯৮৮ |
প্রতীক প্রকাশনী |
৩ |
নিষাদ | ১৯৮৯ |
প্রতীক প্রকাশনী |
৪ |
অন্যভুবন | ১৯৮৭ |
অনন্যা প্রকাশন |
৫ |
বৃহন্নলা | আগস্ট ১৯৮৯ |
প্রতীক প্রকাশনী |
৬ |
ভয় (গল্পগ্রন্থ) | মে ১৯৯১ |
আফসার ব্রাদার্স, ঢাকা |
৭ |
বিপদ | ১৯৯১ |
শিখা প্রকাশনী, ঢাকা |
৮ |
অনীশ | মে ১৯৯২ |
অনুপম প্রকাশনী, ঢাকা |
৯ |
মিসির আলি অমনিবাস-১ | ফেব্রুয়ারি ১৯৯৩ |
প্রতীক প্রকাশনী |
১০ |
মিসির আলির অমীমাংসিত রহস্য | ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ |
সময় প্রকাশন, ঢাকা |
১১ |
আমি এবং আমরা | ১৯৯৩ |
প্রতীক প্রকাশনী |
১২ |
হিমুর দ্বিতীয় প্রহর18 | ১৯৯৭ |
কাকলী প্রকাশনী |
১৩ |
তন্দ্রাবিলাস | ২০০৯ |
অন্বেষা প্রকাশন |
১৪ |
আমিই মিসির আলি | ফেব্রুয়ারি ২০০০ |
অন্যপ্রকাশ, ঢাকা |
১৫ |
বাঘবন্দী মিসির আলি | জুন ২০০১ |
অনন্যা |
১৬ |
কহেন কবি কালিদাস | ২০০৫ |
দিব্যপ্রকাশ |
১৭ |
মিসির আলি অমনিবাস-২ | ফেব্রুয়ারি ২০০৬ |
প্রতীক প্রকাশনী |
১৮ |
হরতন ইশকাপন | ২০০৮ | |
১৯ |
মিসির আলির চশমা | ফেব্রুয়ারি ২০০৮ |
অন্যপ্রকাশ, ঢাকা |
২০ |
মিসির আলি!আপনি কোথায়? | ফেব্রুয়ারি ২০০৯ |
সময় প্রকাশন, ঢাকা |
২১ |
মিসির আলি UNSOLVED | জুলাই ২০০৯ |
কাকলী প্রকাশনী, ঢাকা |
২২ |
হিমু মিসির আলি যুগলবন্দি | ২০১১ |
আফসার ব্রাদার্স ঢাকা |
২৩ |
পুফি | ২০১১ |
অনন্যা |
২৪ |
যখন নামিবে আঁধার | ২০১২ |
অন্যপ্রকাশ |
২৫ |
মিসির আলী অমনিবাস-৩ | ২০১৩ |
প্রতীক প্রকাশনী |
সূত্রনির্দেশ ও টীকা
- হুমায়ূন আহমেদ। মিসির আলি অমনিবাস ১ (প্রিন্ট)। মিসির আলি (ফেব্রুয়ারি ১৯৯৩ সংস্করণ)। ঢাকা: প্রতীক প্রকাশনা সংস্থা। পৃষ্ঠা ৫১৩।
- মুখবন্ধ: “মিসির আলির কথা”, হুমায়ূন আহমেদ, মিসির আলি অমনিবাস ১; ফেব্রুয়ারি ১৯৯৩, এলিফেন্ট পার্ক থেকে লেখা।
- হুমায়ূন আহমেদ (ফেব্রুয়ারি ১৯৯৩)। এই আমি। কাকলী প্রকাশনী, ৩৮/৪ বাংলাবাজার, ঢাকা। পৃষ্ঠা ৬৭-৬৮। আইএসবিএন ৯৮৪ ৪৩৭ ০৩৬ ১।
- “নিষাদ” (উপন্যাস), হুমায়ূন আহমেদ।
- “বৃহন্নলা” (উপন্যাস), হুমায়ূন আহমেদ।
- “বৃহন্নলা” (উপন্যাস), হুমায়ূন আহমেদ।
- মুখবন্ধ: “মিসির আলির কথা”, হুমায়ূন আহমেদ, মিসির আলি অমনিবাস ১; ফেব্রুয়ারি ১৯৯৩, এলিফেন্ট পার্ক থেকে লেখা।
- মুখবন্ধ: “মিসির আলির কথা”, হুমায়ূন আহমেদ, মিসির আলি অমনিবাস ১; ফেব্রুয়ারি ১৯৯৩, এলিফেন্ট পার্ক থেকে লেখা।
- মুখবন্ধ: “মিসির আলির কথা”, হুমায়ূন আহমেদ, মিসির আলি অমনিবাস ১; ফেব্রুয়ারি ১৯৯৩, এলিফেন্ট পার্ক থেকে লেখা।
- “আমি এবং আমরা” (উপন্যাস), হুমায়ূন আহমেদ। এবং মিসির আলি অমনিবাস ২ (প্রিন্ট)। মিসির আলি (ফেব্রুয়ারি ২০০৬ সংস্করণ)। ঢাকা: প্রতীক প্রকাশনা সংস্থা। পৃষ্ঠা ৪৩০।
- “আমি এবং আমরা” (উপন্যাস), হুমায়ূন আহমেদ।
- “তন্দ্রাবিলাস” (উপন্যাস), হুমায়ূন আহমেদ।
- Book Review:Mysterious Misir Ali, Tanvir Hafiz, The Daily Star, 2006
- “সঙ্গিনী” গল্প, “ভয়” (গল্পগ্রন্থ), হুমায়ূন আহমেদ।
- মুখবন্ধ: “মিসির আলির কথা”, হুমায়ূন আহমেদ, মিসির আলি অমনিবাস ১; ফেব্রুয়ারি ১৯৯৩, এলিফেন্ট পার্ক থেকে লেখা।
- মুখবন্ধ: “মিসির আলির কথা”, হুমায়ূন আহমেদ, মিসির আলি অমনিবাস ১; ফেব্রুয়ারি ১৯৯৩, এলিফেন্ট পার্ক থেকে লেখা।
- হুমায়ূন আহমেদ। নলিনী বাবু B.Sc (প্রিন্ট)। মিসির আলি (জানুয়ারি ২০১১ সংস্করণ)। ঢাকা: কাকলী প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ৪৯। আইএসবিএন 984-70133-0413-5
- হিমুর চরিত্রের সাথে মিসির আলির সাক্ষাৎ।