হুমায়ূন আহমেদ

মিসির আলি অমনিবাস
প্রথম খণ্ড

ভয়

একটা মজার ঘটনার কথা বলি।

ক্লাস নিচ্ছি, পড়াচ্ছি থার্মোডিনামিক্স। একটি ছেলেকে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলাম সে উত্তর দিতে পারল না। বিরক্ত হয়ে বললাম, নাম কি তোমার? সে উঠে দাঁড়াল কিন্তু নাম বলল না। ক্লাসের সব ছেলেমেয়েরা হাসতে শুরু করল। আমি বিস্মিত। তাদের হাসির কারণ ধরতে পারছি না। আবার বললাম, নাম কি তোমার? ছাত্র-ছাত্রীরা আবারও হেসে উঠল। ছেলেটির পাশে বসা একজন বলল, স্যার সে নাম বলবে না। কারণ তার নাম— মিসির আলি।

ঘটনাটা ক্ষুদ্র। কিন্তু এই ক্ষুদ্র ঘটনা আমার মন আনন্দে পূর্ণ করল। মিসির আলি নামের চরিত্রটি আমি তাহলে অনেকের কাছেই পৌঁছে দিতে পেরেছি। একজন লেখকের কাছে এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কি হতে পারে?

আমি বিব্রত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটিকে বললাম, তুমি অস্বস্তি বোধ করছ কেন? মিসির আলি চরিত্রটি কি তুমি পছন্দ কর না?

সে মাথা নীচু করে রইল, অন্য একজন পেছন থেকে বলল, স্যার ওর নামটাই মিসির আলি, বুদ্ধি শুদ্ধি খুব কম।

আবার সবাই হেসে উঠল।

ঐ দিনের ক্লাসের ঘটনাটি আমার জীবনের আনন্দময় ঘটনার একটি।

মিসির আলিকে নিয়ে আরো তিনটি গল্প লেখা হল। এই আনন্দময় ঘটনার উল্লেখ সেই কারণেই করলাম। হয়ত এতে খুব সূক্ষ্ম ভাবে হলেও সামান্য অহংকার প্রকাশ করা হয়েছে। পাঠক-পাঠিকা আমার এই মানবিক ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন এই বিনীত কামনা।

হুমায়ূন আহমেদ

শহীদুল্লাহ হল