» » » অমুসলিমদের সচরাচর জিজ্ঞাসার জবাব

বর্ণাকার

জাকির নায়িক বক্তৃতামালা

অমুসলিমদের সচরাচর জিজ্ঞাসার জবাব

[REPLIES TO THE MOST COMMON QUESTIONS ASKED BY NON-MUSLIMS]

ডঃ জাকির নায়েক কর্তৃক আন্তর্জাতিক দা’ওয়াহ প্রশিক্ষণ কর্মসূচির ধারণা, বিকাশ ও পরিচালনা

ভূমিকা

দাওয়াহ একটি কর্তব্য

আরবী ‘দাওয়াহ’ শব্দের অর্থ ‘আহ্বান’ বা ‘আমন্ত্রণ’। ইসলামী প্রেক্ষাপটে এর অর্থ  অমুসলিমদের ইসলামের দাওয়াত দেওয়া বা ইসলাম প্রচার করা।

ইসলাম একটি সার্বজনীন ধর্ম, যা সমগ্র মানবজাতির জন্য। আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) হলেন সমগ্র মহাবিশ্বের প্রভু, এবং মুসলমানদেরকে সমস্ত মানবজাতির কাছে তাঁর বাণী পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে।

মহিমান্বিত কুরআন বলে:

ٱدْعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِٱلْحِكْمَةِ وَٱلْمَوْعِظَةِ ٱلْحَسَنَةِ ۖ وَجَـٰدِلْهُم بِٱلَّتِى هِىَ أَحْسَنُ ۚ … ١٢٥

আপনি মানুষকে আপনার রবের পথে আহ্বান করুন প্রজ্ঞা (হিকমাহ) ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সাথে আলোচনা করুন উত্তমপন্থায়।

— আলকুরআন, সূরা নাহল, আয়াত ১২৫।

দাওয়াতের কৌশল

অমুসলিমদের দাওয়াত দেওয়ার বিভিন্ন কৌশল রয়েছে। এমনকি যদি একজন মুসলিম ইসলাম সম্পর্কে হাজারটা ভাল কথা বলে, তবুও অধিকাংশ অমুসলিম ইসলামের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবে না কারণ তাদের মনের পেছনে ইসলাম সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন আছে যেগুলোর উত্তর পাওয়া যায় না।

তারা ইসলামের ইতিবাচক প্রকৃতির সাথে একমত হতে পারে। কিন্তু, তাৎক্ষণিক তারা বলবে— “আহ! অথচ আপনারা সেই মুসলিম যারা মৌলবাদী, যারা সন্ত্রাসী। আপনি সেই মুসলিম যারা একাধিক নারীকে বিয়ে করেন। আপনারা সেই একই মানুষ যারা নারীদেরকে পর্দার আড়ালে রেখে অবরোধবাসিনী করে রাখেন, ইত্যাদি।”

আমি ব্যক্তিগতভাবে অমুসলিমকে জিজ্ঞাসা করতে পছন্দ করি, তিনি ইসলামের ভুল কী বলে মনে করেন। তাদের সীমিত জ্ঞান দ্বারা, সঠিক বা ভুল, যেকোন উৎস থেকেই হোক না কেন, আমি সরাসরি জিজ্ঞাসা করতে পছন্দ করি, তারা ইসলামে কী ভুল বলে মনে করেন। আমি তাদের খুব অকপট এবং খোলামেলা হতে উত্সাহিত করি এবং তাদের বোঝাই যে আমি ইসলাম সম্পর্কে সমালোচনা সহ্য করতে পারি।

কুড়িটি অতি সাধারণ প্রশ্ন

আমার বিগত কয়েক বছরের দাওয়াতের অভিজ্ঞতায় বুঝতে পেরেছি যে, ইসলাম সম্পর্কে একজন সাধারণ অমুসলিমের বিশটি সাধারণ প্রশ্নও নেই। যখনই আপনি একজন অমুসলিমকে জিজ্ঞেস করেন, “ইসলামে আপনার কি ভুল মনে হয়?” তিনি পাঁচ বা ছয়টি প্রশ্ন করেন এবং এই প্রশ্নগুলি সর্বদাই বিশটি সাধারণ প্রশ্নের মধ্যে পড়ে।

যৌক্তিক জবাব সংখ্যাগরিষ্ঠকে বোঝাতে সক্ষম

ইসলাম সম্পর্কে বিশটি অতি সাধারণ প্রশ্নের উত্তর প্রজ্ঞা ও যুক্তি দিয়ে দেওয়া যেতে পারে। অধিকাংশ অমুসলিম এইসকল উত্তর দ্বারা প্রভাবিত হতে পারেন। একজন মুসলমান যদি এই উত্তরগুলো মুখস্থ করেন বা সহজভাবে মনে রাখেন, ইনশাআল্লাহ তিনি সফল হবেন; যদি অমুসলিমদের ইসলামের সম্পূর্ণ সত্য সম্পর্কে বোঝাতে না পারেন, তবে অন্তত ইসলাম সম্পর্কে অমুসলিমদের ভুল ধারণা দূর করতে এবং ইসলাম ও মুসলমান সম্পর্কে নেতিবাচক চিন্তাভাবনা বিরত রাখতে পারবেন। খুব অল্প সংখ্যক অমুসলিম এই উত্তরগুলির পাল্টা জবাব দিতে পারেন, যার জন্য আরও তথ্যের প্রয়োজন হতে পারে।

সময়ের ব্যবধানে ভুল ধারণা পরিবর্তন হয়

ইসলামের বিরুদ্ধে সবচেয়ে সাধারণ প্রশ্নগুলো বিভিন্ন সময় ও যুগে পরিবর্তিত হয়েছে। সঙ্কলিত এই বিশটি সর্বাধিক সাধারণ প্রশ্ন বর্তমান সময়ের উপর ভিত্তি করে। কয়েক দশক আগে, প্রশ্নগুলি ভিন্ন ছিল এবং কয়েক দশক পরেও এই প্রশ্নগুলি পরিবর্তন হতে পারে মিডিয়া ইসলামকে কিভাবে প্রক্ষেপণ করে তার উপর ভিত্তি করে।

বিশ্বেজুড়ে অভিন্ন ভুল ধারণা

আমি বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছি এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের সাথে আলোচনা করেছি। সারা বিশ্বের সাধারণ অমুসলিমদের দ্বারা জিজ্ঞাসা করা ইসলাম সম্পর্কে এই বিশটি সর্বাধিক সাধারণ প্রশ্ন একই।

অঞ্চলভেদে সম্পূরক প্রশ্ন হতে পারে

স্থানভেদে কয়েকটি সম্পূরক প্রশ্ন থাকতে পারে, উদাহরণ স্বরূপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, অতিরিক্ত প্রশ্ন ছিল; ইসলাম কেন সুদের লেনদেন হারাম করেছে?

কিছু সাধারণ প্রশ্ন ভারতীয় অমুসলিমদের মধ্যে নির্দিষ্ট

আমি সর্বাধিক জিজ্ঞাসিত বিশটি সাধারণ প্রশ্নের মধ্যে ভারতীয় অমুসলিমদের মধ্যে প্রচলিত কিছু প্রশ্ন অন্তর্ভুক্ত করেছি। যেমন, মুসলমানেরা আমিষ খায় কেন? কারণ এই যে, ভারতীয় বংশোদ্ভূত লোকেদের পরিমাণ প্রায় বিশ শতাংশ অর্থাৎ বিশ্বের জনসংখ্যার এক পঞ্চমাংশ এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত লোকেরা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে রয়েছে, এইভাবে সারা বিশ্বে অমুসলিমদের মধ্যেও এই প্রশ্নগুলি সাধারণ হয়ে উঠেছে।

মিডিয়ার কারণে ভুল ধারণা

অধিকাংশ অমুসলিমের মনে ইসলাম সম্পর্কে ভুল ধারণা উদিত হয় মিডিয়ার কারণে, কেননা, মিডিয়া তাদের উপর ক্রমাগত ইসলাম সম্পর্কে ভুল তথ্যের বোমাবর্ষণ করতে থাকে। আন্তর্জাতিক মিডিয়া প্রধানত পশ্চিমা বিশ্বের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তা আন্তর্জাতিক স্যাটেলাইট চ্যানেল, রেডিও স্টেশন, সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন বা বইই হোক না কেন। সম্প্রতি ইন্টারনেট তথ্যের একটি শক্তিশালী মাধ্যম হয়ে ওঠেছে। যদিও এটি ব্যক্তিবিশেষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়, তবুও ইন্টারনেটে ইসলাম সম্পর্কে একটি বিশাল পরিমাণ ভয়ানক প্রচারণা পাওয়া যায়। অবশ্য মুসলমানেরাও ইসলাম ও মুসলমানদের সঠিক ভাবমূর্তি তুলে ধরতে এই হাতিয়ার ব্যবহার করছেন, কিন্তু ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের তুলনায় তারা অনেক পিছিয়ে রয়েছেন। আমি আশা করি মুসলমানদের প্রচেষ্টা আরও বাড়বে এবং অব্যাহত থাকবে।