হঠাৎ যুদ্ধের দামামা বেজে উঠায় সমস্ত দেশ এক মহা সমস্যার সম্মুখীন হল। চারিদিকে শুধু মাতৃভূমি রক্ষার আকুল আহ্বান। যুবক বৃদ্ধ, নারী পুরুষ সবাই দৃঢ়কণ্ঠে ঘোষণা করে চলেছে, আমরা শরীরের শেষ রক্তবিন্দু দেব, তবু মাতৃভূমির এক কণা মাটি অন্য দেশকে দেব না। রণ প্রাঙ্গণে ধ্বনিত হল হাজার হাজার সৈনিকের কলকন্ঠে লা-ইলাহা ইল্লালাহ শব্দ। তার সঙ্গে গর্জে উঠলো আগ্নেয় অস্ত্রগুলি। সীমান্তের আকাশ ধোঁয়ায় ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেল। মরতে লাগলো দু’পক্ষের শত শত লোক। আহতদের আর্তনাদ আর কামানের শব্দে কেঁপে কেঁপে উঠতে লাগলো বসুন্ধরা।
মাতৃভূমির এ আকুল আহ্বানে সাড়া না দিয়ে পারলো না বনহুর। মন তার অস্থির হয়ে উঠলো। এ দেশেরই সন্তান সে। জন্মভূমির এ বিপদাপন্ন অবস্থা তাকে চঞ্চল করে তুলল।
যুদ্ধে যাবার পূর্বে মনে পড়লো মনিরার কথা। অনেক দিন তার সঙ্গে দেখা করেনি; অবশ্য এর কারণ ছিল অনেক। একে সে আহত অবস্থায় বেশ অনেকদিন শয্যাশায়ী ছিল, তারপর নানা ঝামেলায় যাওয়া হয়ে উঠেনি। পুলিশ সুপার মি. আহম্মদ এরপর থেকে চৌধুরী বাড়ির চারিপাশে গোপনে কড়া পাহারার ব্যবস্থা করেছিলেন–এটাও একটা কারণ। তবু যে বনহুর মনিরাকে না দেখে এসেছে, তা নয়। মাঝে আরও একদিন ফকিরের বেশে এসেছিলো সে–তখন মনিরা বেশ অসুস্থ ছিলো।
সেদিন গভীর রাতে একটা শব্দে ঘুম ভেংগে গেল মনিরার। চোখ মেলে চাইতেই আশ্চর্য হল, মুক্ত জানালার পাশে মেঝেতে দাঁড়িয়ে বনহুর। মুহূর্তে উজ্জ্বল দীপ্ত হয়ে উঠলো মরি মুখমণ্ডল। ছুটে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো ওর বুকে–মনির! মনির তুমি এসেছো? তারপর উদগ্রীব নয়নে বনহুরের শরীরের দিকে লক্ষ্য করে বলে–কোথায়, কোথায় তুমি আঘাত পেয়েছিলে মনির?
বনহুর জামার হাতা গুটিয়ে দেখায়–ভাগ্যিস গুলীটা আমার হাতের মাংস ভেদ করে চলে গিয়েছিল। তাই আবার তোমার পাশে আসতে পেরেছি।
মনিরা বনহুরের শুকিয়ে যাওয়া ক্ষতটায় সস্নেহে হাত বুলিয়ে বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বলে–মনির, এ জন্য আমিই দায়ী। আল্লাহ তোমাকে রক্ষা করেছেন, এ আমারই সৌভাগ্য। তোমাকে ফিরে পাব, এ আমি ভাবতে পারিনি। চেয়ে দেখ.. বনহুরের ছোটবেলার ছবিখানার দিকে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে বলে মনিরা–সেদিন তোমার জন্য যে মালাখানা গেঁথে রেখেছিলুম, আজ সে মালা শুকিয়ে গেছে।
বনহুর ওকে নিবিড়ভাবে কাছে টেনে নেয়; তারপর স্থির কণ্ঠে বলে–মনিরা!
বল?
তোমার কাছে বিদায় নিতে এসেছি।
বিদায়! সে আবার কি?
মাতৃভূমির ডাক এসেছে।
তার মানে?
আমি যুদ্ধে যাচ্ছি।
সেকি!
মনিরা, আমি দস্যু ডাকু, তাই বলে কি আমি এদেশের সন্তান নই? আমার জন্ম কি এদেশের মাটিতে হয়নি? আজ আমাদের মাতৃভূমির সঙ্কটময় অবস্থা। আর আমি তাঁর একজন সন্তান হয়ে নিশ্চুপ বসে থেকে দেখব?
মনির।
বনহুর ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে–জানি তুমি ব্যথা পাবে। কিন্তু আমি আশা করি না মনিরা, তুমি আমার চলার পথে বাধার সৃষ্টি করবে।
মনিরা বাষ্পরুদ্ধ গলায় বলে উঠে–তুমি আমার কণ্ঠরোধ করে দিলে! কেন, কেন তবে এসেছিলে আমার কাছে বিদায় নিতে? না এলেই আমি তো জানতাম না কিছু।
মনিরা!
না, না তুমি কেন আমার মনে নতুন করে আগুন জ্বালাতে এলে! কেন তুমি আমাকে নিশ্চিন্তে থাকতে দিলে না! ছোট বেলায় যখন আমি কিছু বুঝতাম না, ভালবাসা কি জিনিস জানতাম না, তখন তুমি আমার জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছিলে। ভুলে গিয়েছিলুম তোমার কথা। আবার ধূমকেতুর মত কেন এসেছিলে তবে….
মনিরা, তুমি শিক্ষিতা, তুমি জ্ঞানবতী নারী। আজ এ সময় ওসব কথা স্মরণ করা তোমার। পক্ষে উচিত নয়। দেশের ডাকে তোমার প্রাণ কি আকুল হয়ে উঠেনি? তুমি কি চাও না তোমার মাতৃভূমির মান ইজ্জত রক্ষা হউক? আমাদের দেশের প্রতিটি যুবকের কর্তব্য সমর প্রাঙ্গণে গিয়ে। শত্রুর সঙ্গে মোকাবিলা করা। মাতৃভূমি রক্ষার্থে জীবন সমর্পণ করা। আজ ঘরে বসে থাকার সময় নয়। যার যতটুকু সামর্থ্য আছে, তাই দিয়ে দেশকে রক্ষা করা আজ সকলের ধর্ম। মনিরা এ ব্যাপারে তুমিও এগিয়ে আসতে পার।
সত্যি?
হ্যাঁ, জানো না আজ সীমান্তে আমাদের অগণিত সৈনিক ভাইরা প্রাণপণে যুদ্ধ চালিয়ে চলেছে। তাদের এ চলার পথে এখন বহু জিনিসের প্রয়োজন। টাকা পয়সা, অলঙ্কার রক্ত– যে যা পার, তাই দিয়ে সাহায্য করতে হবে। আমাদের সৈনিক ভাইদের বাহুবল মজবুত করতে হবে।
আমার সমস্ত অলঙ্কার আমি তোমায় দেব।
আমাকে নয় মনিরা সমর তহবিলে দান কর।
আমি রক্ত দেব মনির।
বেশ দিও। ব্লাড ব্যাঙ্ক আছে, সেখানে তুমি রক্ত দিতে পার।
মনির সত্যি তুমি যুদ্ধে যাবে?
হ্যাঁ।
অভিজ্ঞতা আছে তোমার?
বনহুর মনিরার প্রশ্নে হাসলো, একটু থেমে বললো– দস্যু বনহুরের অজানা কিছুই নেই, মনিরা।
কথার ফাঁকে বনহুর মনিরা খাটের পাশে এসে বসেছিল। বনহুর ওর চিবুক ধরে উঁচু করে তোলে–তুমি আমার জীবনের এখনও কিছু জান না, মনিরা। তোমার মনির কামান চালাতেও জানে।
হ্যাঁ, সত্যি! মনিরা শোন, আজ তোমাকে কয়েকটি কথা বলবো যা আজও কেউ জানে না।
মনিরা বনহুরের পাশে আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে বসে বলে–বল?
চৌধুরী সাহেবের কক্ষ থেকে ভেসে আসে দেয়ালঘড়ির সময় সংকেতধ্বনি ঢং ঢং ঢং-রাত তিনটে বাজলো।
মুনিরা একাগ্রচিত্তে তাকিয়ে আছে বনহুরের মুখের দিকে।
বনহুর বলে চলে–আমি যখন সতের বছরের যুবক তখন আমার সমস্ত অস্ত্র বিদ্যা শিক্ষা শেষ হয়ে গেছে। লেখাপড়া স্কুলে ও কলেজে শেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি, তবে ছোটবেলায় বাপু আমাকে নিজেই লেখাপড়া শিখিয়েছিলেন। বাপুর কথা একদিন তোমাকে সব বলেছি। তিনি ছিলেন শিক্ষিত। বাংলা, ইংরেজি, ফারসি সব জানতেন বাপু। আমাকেও তিনি এসব ভাষা লিখতে পড়তে এবং বলতে শিখিয়েছিলেন। সতের বছর বয়সে যখন আমি সবদিকে শিক্ষা লাভ করলাম, তখন বাপু আমাকে প্রথম একদিন সঙ্গে করে শহরে নিয়ে গেলেন। শহরে মোটগাড়ি দেখে খুব ইচ্ছা হল মোটর চালনা শিখবো। বাপু আমার বাসনা জানতে পেরে খুশি হলেন। তিনি আমার জন্য শহরে বাড়ি তৈরি করলেন; গাড়িও কিনে দিলেন–একটি নয় দু’টি। আশা আমার পূর্ণ হলো, ড্রাইভিংও শিখলুম। তবু মনের কোথায় যেন খুঁতখুঁত করতে লাগলো, আরও যেন অনেক কিছু শেখার বাকি আছে। নিজ মনেই ভাবতাম আর কি শেখার আছে। যে-কোন অস্ত্র বিদ্যাই আমার জানা আছে। অশ্বচালনা থেকে মোটর চালনা সব শিখেছি। আর তবে কি বাকি? হঠাৎ মনে পড়লো, এরোপ্লেন চালনা শিখতে পারলে আমার কোন সাধই অপূর্ণ হবে না। বাপুকে একদিন মনের কথা জানালাম।
মনিরা অবাক হয়ে শুনছে বনহুরের কথাগুলো। দু’চোখে তার বিস্ময় উজ্জ্বল দীপ্তি। অস্ফুট কণ্ঠে বললো সে–তারপর?
বাপু কথাটা শুনে গম্ভীর হলেন, কিছুক্ষণ ভেবে বলেন–প্লেন চালনা সকলের পক্ষেই সম্ভব নয়, বনহুর।
আমি বললুম–কেন?
বাপু বলেন–তুমি বুঝবে না।
আমার তখন জেদ চেপে গেছে, কেন বুঝব না। প্লেন–সেকি মানুষ চালায় না? আমিও মানুষ, নিশ্চয়ই পারবো।
বাপু হয়তো আমার মনের কথা জানতে পারলেন। তিনি আমাকে মত দিলেন। তারপর প্লেন চালনাও শিখলাম।
মনিরা বিস্ময়ভরা কণ্ঠে বলে উঠে-মনির, তুমি প্লেন চালাতে পার?
পারি।
সত্যি তুমি কি! কি বলে যে তোমাকে অভিনন্দন জানাব।
মনিরা তুমি হাসিমুখে বিদায় দাও, সেটাই হবে তোমার সত্যিকারের অভিনন্দন।
মনির, যাও তুমি জন্মভূমিকে রক্ষা করে ফিরে এসো।
বনহুর উঠে দাঁড়াল।
স্তব্ধ নির্বাক চোখে তাকিয়ে রইলো মনিরা।
সৈনিক ফরহাদের বীরত্বে সমস্ত সামরিক বাহিনী আজ গর্বিত। তার অপরিসীম সাহসিকতায় সবাই মুগ্ধ। ফরহাদের রণকৌশলে শত্রুপক্ষের বিপুল সৈন্য আজ পরাভূত হতে বসেছে। সেনাপতি নাসের আলী তাকে বিপুল উৎসাহ দান করে চলেছেন।
যুদ্ধ চলছে।
শত্রুপক্ষের অসংখ্য সৈন্য বিপুল অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ভীষণভাবে আক্রমণ চালাচ্ছে। প্রতিহত করে চলেছে মিত্র পক্ষের সৈন্যগণ।
ফরহাদ প্রাণপণে যুদ্ধ করছে। কখনও রাইফেল হস্তে, কখনও মেশিনগান নিয়ে, কখনও বা কামানের পাশে দাঁড়িয়ে শত্রুপক্ষকে সে পরাহত করে চলেছে। তার অব্যর্থ গুলীর আঘাতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে শত্রুপক্ষের সৈন্যদল।
সেনাপতি নাসের আলী ফরহাদের বীরত্ব এবং রণকৌশলে মুগ্ধ হয়ে তাকে তার সৈন্যবাহিনীর ক্যাপ্টেন করে দিলেন। দক্ষ ক্যাপ্টেনের মত সৈন্য চালনা করতে লাগলো সে।
সেদিন অতর্কিতভাবে তাদের ঘাটির উপর শত্রুপক্ষ হামলা করল। এজন্য প্রস্তুত ছিলেন না। সেনাপতি নাসের আলী। তিনি হতভম্বের মত কি করবেন ভাবছেন, কিন্তু তার পূর্বেই তিনি দেখতে পেলেন তাদের কামানগুলো এক সঙ্গে গর্জে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে রাইফেল আর মেশিনগানের শব্দও তার সঙ্গে কানে ভেসে এলো আর ভেসে এলো ‘আল্লাহু আকবর ধ্বনি।
সেকি ভীষণ যুদ্ধ!
দুদিন থেকে অবিরাম গুলীবর্ষণ হচ্ছে। সেনাপতি নাসের আলী আশ্বস্ত হলেন। তিনি বুঝতে পারলেন, তাদের সৈন্যবাহিনী প্রস্তুত ছিল। তিনি একজন হাবিলদারকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন– ফরহাদ কোথায়?
হাবিলদার ব্যস্ততার মধ্যেও সুউচ্চ কণ্ঠে জবাব দিলেন–ফরহাদ সাহেব স্বয়ং কামান চালাচ্ছেন। শত্রুপক্ষ তাঁর কামানের গোলার আঘাতে পিছু হঠতে শুরু করেছে।
সেনাপতি নাসেরের মুখমণ্ডল উজ্জ্বল দীপ্ত হয়ে উঠলো। তিনি আদেশ দিলেন–যাও, তাকে তোমরা সবাই মিলে সাহায্য কর।
ফরহাদ অবিরাম গুলীবর্ষণ করে চলেছে। তার গোলার আঘাতে শত্রুপক্ষ অল্পক্ষণেই অতিষ্ঠ হয়ে উঠলো। এবার তারা রণেভঙ্গ দিয়ে পালাতে বাধ্য হলো! ফরহাদ তবু ক্ষান্ত হলো না, তার সৈন্যবাহিনীকে আদেশ দিল ওদের পিছু ধাওয়া করতে। নিজেও রাইফেল হস্তে অগ্রসর হল।
শত্রুপক্ষের মেজর জেনারেল মি. মুঙ্গেরী নিহত হল। আর নিহত হলো তাদের অসংখ্য সৈন্য। অজস্র অস্ত্রশস্ত্রও হস্তগত করলো ফরহাদ।
শত্রুপক্ষ বার বার পরাজিত হয়েও ক্ষান্ত হলো না। তারা গোপনে সন্ধান নিয়ে জানতে পারলো, ক্যাপ্টেন ফরহাদের রণ-নৈপুণ্যে আজ তারা এভাবে পরাজিত হয়ে চলেছে। কিভাবে ক্যাপ্টেন ফরহাদকে নিহত কিংবা বন্দী করা যায়, এ নিয়ে মাথা ঘামাতে শুরু করলেন শত্রুপক্ষের সামরিক অফিসারগণ।
বার বার অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে ফরহাদের সৈন্য বাহিনীকে পরাজিত করার চেষ্টা করতে লাগলো ওরা। কিন্তু কোনক্রমে পেরে উঠলো না ফরহাদের সঙ্গে।
ফরহাদ যেন পূর্ব হতে সব জানতো এবং বুঝতে পারত, কোন দিক দিয়ে আজ শত্রুপক্ষ তাদের ঘাটির উপর হামলা চালাবে সে ভাবে প্রস্তুত থাকত সে।
একদিন শত্রুপক্ষ কৌশলে ফরহাদের সৈন্যবাহিনীকে চারদিক থেকে বেষ্টন করে ফেলল, উদ্দেশ্য ক্যাপ্টেন ফরহাদকে বন্দী কিংবা নিহত করা। অবিরাম গোলা গুলী চালিয়ে ফরহাদের সৈন্যবাহিনীকে কাবু করার চেষ্টা করতে লাগলো তারা।
ফরহাদের সহকারী সৈনিক জব্বার খাঁও আজ ফরহাদের পাশে থেকে তাকে সাহায্য করে চলেছে। সেকি ভীষণ লড়াই! ছোট ছোট টিলার আড়ালে লুকিয়ে গুলী চালাচ্ছে ফরহাদের সৈন্যবাহিনী।
শত্রুপক্ষ একেবারে নিকটবর্তী হয়ে পড়েছে। আজ তারা মরিয়া হয়ে লড়ছে। ফরহাদের সৈন্যবাহিনীকে পরাজিত করতেই হবে। ছলে বলে–কৌশলে ফরহাদকে নিহত অথবা বন্দী করতেই হবে।
কিন্তু ফরহাদ নিপুণতার সঙ্গে সৈন্য চালনা করে চলল। জব্বার খাঁ এবং ফরহাদের রাইফেল পুনঃ পুনঃ গর্জন করে চলেছে। তারা ক্রমান্বয়ে অগ্রসর হয়ে শত্রুপক্ষের বেষ্টনী পরিষ্কার করার চেষ্টা করতে লাগলো।
মাথার উপরে প্রচণ্ড সূর্যের তাপ। পায়ের নিচে উত্তপ্ত বালুকা রাশি, ফরহাদের সুন্দর মুখমণ্ডল রক্তাভ হয়ে উঠেছে। পরিধেয় বস্ত্র ঘামে ভিজে চুপসে গেছে। কোনদিকে তার ভ্রূক্ষেপ নেই। শত্রুসৈন্যকে সে একের পর এক নিহত করে চলেছে। অব্যর্থ তার লক্ষ্য। কখনও হামগুড়ি দিয়ে কখনও উঁচু হয়ে এগুতে লাগলো ফরহাদ ও তার সৈন্যবাহিনী।
বুদ্ধিমান ফরহাদ অবিরাম যুদ্ধ চালিয়ে শত্রুপক্ষের সৈন্য বাহিনীকে একত্রিত করে ঘিরে ফেলল। কতক পালিয়ে প্রাণ বাঁচালো কতক আত্মসমর্পণ করল ফরহাদের কাছে।
এতোবড় একটা পরাজয়ের কালিমা মুখে মেখে শত্রুপক্ষ আরও ক্ষেপে উঠল। নতুনভাবে আক্রমণ চালাবার জন্য পুনরায় প্রস্তুত হতে লাগল তারা।
সাফল্যের বিজয়মাল্য গলায় পরে ফরহাদ যখন ফিরে গেল ঘাটিতে তখন সেনাপতি নাসের আলী, মেজর জেনারেল হাশেম খান এবং অন্যান্য সামরিক সেনানায়ক ফরহাদের সঙ্গে বুকে বুক মিলালেন। এতোবড় একটা বিজয় তাঁরা যেন আজ আশাই করতে পারেন নি।
আজ প্রায় এক সপ্তাহ কাল অবিরাম যুদ্ধ চালিয়ে এসেছে ফরহাদ। তাই দু’দিনের জন্য তাকে বিশ্রামের নির্দেশ দেওয়া হল।
ওদিকে জব্বার খাঁ কোথায় যে ডুব মেরেছে, আর তাকে খুঁজে পাচ্ছে না ফরহাদ। তবে কি সে নিহত হয়েছে? নিজের তাবুতে শুয়ে ভাবছে এসব কথা। এমন সময় জব্বার খাঁ তার তাবুতে এসে হাজির। সেলুট ঠুকে সোজা হয়ে দাঁড়ালো স্যার আমি এসেছি।
ফরহাদ ওকে দেখেই উঠে বললো কি খবর জব্বার খাঁ? কোথায় ডুব মেরেছিলে?
জব্বার কণ্ঠস্বর নিচু করে নিয়ে বললো–স্যার শত্রু পক্ষের আহত সৈন্যদের স্তূপের মধ্যে ডুব মেরে একেবারে ওদের শিবিরে গিয়ে পৌঁছেছিলুম।
ফরহাদ এক লাফে উঠে দাঁড়ায় তারপর?
তারপর গোপনে ওদের পেটের খবর জেনে এসেছি। স্যার, আমাদের আর এক মুহূর্ত বিশ্রামের সময় নেই এবার জঙ্গী বোমারু বিমান নিয়ে আক্রমণ চালাবে। আজ শেষ রাতের দিকেই আক্রমণটা চালাবে জানতে পেরেছি।
ফরহাদের বিশ্রাম শেষ হয়ে গেল। নতুন এক উন্মাদনায় চোখ দুটো তার জ্বলজ্বল করে জ্বলে উঠল। কালবিলম্ব না করে নিজের সৈন্যবাহিনীকে প্রস্তুত হতে নির্দেশ দিল ফরহাদ।
ঘাটির আশেপাশে কামান আর মেশিনগান বসিয়ে যে যার জায়গায় প্রস্তুত হয়ে দাঁড়াল। প্রত্যেকেই রাইফেল হস্তে গোপন স্থানে লুকিয়ে রইল।
ফরহাদ আজ নতুন রূপ ধারণ করেছে। চোখ দিয়ে তার অগ্নিস্ফুলিঙ্গ নির্গত হচ্ছে। ললাটে গভীর চিন্তারেখা ফুটে উঠেছে। জব্বার খাঁর পাশে গিয়ে দাঁড়াল ফিস ফিস করে কি সব অলোচনা হলো দু’জনার মধ্যে।
জব্বার খাঁর মুখমণ্ডল বিষণ্ণ হলো। দু’চোখ তার অশ্রু ছলছল হয়ে উঠলো।
ফরহাদ জব্বার খাঁর পিঠ চাপড়ে কি যেন বলল। তারপর বেরিয়ে গেল। ঘাটির গোপনকক্ষে বসে ওয়্যারলেসে সেনাপতি নাসেরের সঙ্গে কিছুক্ষণ আলাপ হল তার।
অল্পক্ষণের মধ্যেই জঙ্গী বোমারু বিমানগুলোও তৈরি হয়ে নিল। একটি বোমারু বিমানের ড্রাইভ আসনে গিয়ে বসলো ফরহাদ। শরীরে তার জঙ্গী বোমারু বিমানের পাইলটের ড্রেস।
ফরহাদের সৈন্যবাহিনী প্রতিমুহূর্তে শত্রুপক্ষের বিমান আক্রমণের প্রতীক্ষা করতে লাগলো। প্রাণ দিয়ে তারা লড়াই করবে। শত্রুপক্ষকে ধ্বংস করার জন্য তারা প্রতিমুহূর্তে প্রস্তুত আছে। মেজর মাসুদ আর জব্বার খাঁ আজ গোলন্দাজ সৈন্য পরিচালনা করবেন।
গভীর অন্ধকারে গোটা বিশ্ব অন্ধকার। ঘাটির আশেপাশে পরিখার মধ্যে আত্মগোপন করে রয়েছে রাইফেলধারী সৈন্যবাহিনী। শত্রুপক্ষের আক্রমণের জন্য তৈরি হয়ে আছে তারা। কামানের পাশে, মেশিনগানের ধারে, যে যার অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত। মৃত্যুকে তারা যেন উপহাস করে চলেছে।
হঠাৎ নিস্তব্ধ ধরণী প্রকম্পিত করে বেজে উঠলো বিপদ সংকেত ধ্বনি। সঙ্গে সঙ্গে শোনা গেল বিমানের শব্দ।
মাত্র কয়েক সেকেণ্ড। মিত্রপক্ষের জঙ্গী বিমানগুলো উল্কা বেগে আকাশপথে উড়ে উঠল। একসঙ্গে জঙ্গী বিমান গুলো ধাওয়া করলো শত্রুপক্ষের জঙ্গী বোমারু বিমানগুলোকে।
মিত্রপক্ষের বিমানের চেয়ে তিনগুণ বেশি ছিল শত্রুপক্ষের বোমারু বিমান। তুমুল আকাশযুদ্ধ শুরু হল। দক্ষ পাইলটের মত কাজ করে চলল ফরহাদ।
বিমান ধ্বংসী কামান আর মেশিনগানের শব্দে আকাশ বাতাস কম্পিত হয়ে উঠল। কামানের গোলার আঘাতে শত্রুপক্ষের কয়েকটি বিমানে আগুন ধরে গেল। ঘূর্ণীয়মান অগ্নিকুণ্ডের মত আকাশের বুকে জ্বলে উঠল; পরক্ষণেই বিধ্বস্ত হয়ে ভূপাতিত হল।
ফরহাদ প্রাণের মায়া বিসর্জন দিয়ে শত্রুপক্ষের বিমানগুলো ধ্বংস করে চলল।
প্রায় ঘণ্টা দুই আকাশযুদ্ধ চলার পর শত্রু জঙ্গী বিমানগুলো পরাজয় বরণ করে পিছন দিকে ফিরে চলল। বেশ কয়েকখানা ধ্বংস হয়ে গেছে ইতোমধ্যেই।
মিত্রপক্ষের দু’খানা বিমানও নষ্ট হল।
যখন জানতে পারলো জব্বার খাঁ রণভূমিতে দাঁড়িয়ে আঁতঙ্কে মন তার দুলে উঠলো। ফরহাদের বিমানখানা তো বিধ্বস্ত হয়ে যায় নি?
কিন্তু খোদার অশেষ কৃপা। শত্রু বিমানগুলোকে পরাজিত করে সাফল্যের জয়টিকা ললাটে পরে ফিরে এলো ফরহাদ তার জঙ্গী বোমারু বিমান নিয়ে। শুধু শত্রুপক্ষকে পরাজিত করেই ক্ষান্ত হয় নি ফরহাদ। শত্রুপক্ষের একটি ঘাটিও তারা বিধ্বস্ত করে দিয়ে এসেছে।
ফরহাদের প্লেনখানা ফিরে আসতেই সেনাপতি নাসের আলী, মেজর জেনারেল হাশেম খান এবং আরও অন্যান্য সেনানায়ক ফরহাদকে অভিনন্দন জানালেন। সেনাপতি নাসের আনন্দে আত্মহারা হয়ে ফরহাদের সঙ্গে বুকে বুক মিলালেন।
প্রেসিডেন্ট ফরহাদকে খেতাব দান করলেন। সেদিন সবচেয়ে বেশি খুশি হলো জব্বার খাঁ। নিভৃতে হাতে হাত মিলালো তার সঙ্গে।
দেশ যখন মহাসঙ্কটময় অবস্থায় উপনীত হয়েছে, যুদ্ধ নিয়ে সবাই দিশেহারা এমন সময় মুরাদ নাথুরামের সাহায্য যথেচ্ছাচারণে প্রবৃত্ত হল-কোথাও লুটতরাজ, কোথাও বা নারী হরণ কোথাও বা খুনখারাবি। পুলিশ মহল এই যুদ্ধ ব্যাপারে ব্যস্ত-ত্রস্ত হয়ে উঠেছে, তারপর রোজই এখানে সেখানে রাহাজানি, লুটতরাজ, নারী হরণের সংবাদ লেগেই আছে। পুলিশ মহলের দৃঢ় বিশ্বাস-এসব বনহুরের কাজ। পুলিশ সুপারের গুলী খেয়ে সে ক্ষেপে উঠেছে।
চারদিকে কড়া পাহারার ব্যবস্থা করেও কিছু হচ্ছে না। শয়তান নাথুরাম আর মুরাদ ঠিকভাবে কাজ করে চলেছে। এতে করেও মুরাদের শান্তি নেই। মনিরার উপর তার কু দৃষ্টি রয়েছে। কেমন করে তাকে পাবে এ চিন্তায় অস্থির সে
একদিন গভীর রাতে মনিরার দরজায় মৃদু টোকা পড়ল। মনিরা তখনও ঘুমোতে পারেনি। বার বার বনহুরের বিদায়ক্ষণের কথাগুলো স্মরণ হচ্ছিল। নীরবে অশ্রু বিসর্জন করছিল সে।
হঠাৎ দরজায় মৃদু শব্দ। মনিরার মুখমণ্ডল উজ্জ্বল দীপ্ত হয়ে উঠল। নিশ্চয়ই সে এসেছে। বলেছিল বনহুর, সুযোগ পেলেই এসে তোমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে যাব। মনিরা মুহূর্ত বিলম্ব না করে দরজা খুলে দিল। সে ভাবতেও পারেনি, তার জন্য অন্য কোন বিপদ প্রতীক্ষা করতে পারে।
মনিরা দরজা খুলতেই কক্ষে প্রবেশ করলো ভীষণ আকার দুটি লোক। লোক দুটি মনিরাকে একটি টু শব্দ করতে না দিয়েই মুখে রুমাল চাপা দিল। শুধুমাত্র একটু মিষ্টি গন্ধ, তারপর আর কিছু মনে নেই মনিরার।
মনিবার সংজ্ঞাহীন দেহটা একটা কালো কাপড়ে ঢেকে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিঃশব্দে নিচে নেমে এলো লোক দুটি। সদর দরজার পাশে দারওয়ান ঠেস দিয়ে আছে, তার বুকে বিদ্ধ হয়ে রয়েছে একখানা সূতীক্ষ্ণধার ছোরা। তাজা রক্তে ভেসে যাচ্ছে তার সাদা ধবধবে পোশাকটা।’
গাড়ি বারান্দায় দাঁড়িয়ে একখানা কালো রং-এর মোটর গাড়ি অন্ধকারে মিশে রয়েছে যেন।
লোক দুটি মনিরাকে নিয়ে গাড়িখানায় উঠে বসল। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি ছুটতে শুরু করল। জনহীন রাজপথ বেয়ে ছোট্ট কালো রং এর গাড়িখানা দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। আকাশে অসংখ্য তারার মালা। গোটা শহরটা যেন ঝিমিয়ে পড়েছে। মাঝে মাঝে দু’একটি মোটর এদিক থেকে ওদিকে চলে যাচ্ছে।
বড় রাস্তা ছেড়ে একটি নির্জন অন্ধকার গলিপথে প্রবেশ করলো গাড়িখানা। আঁকাবাঁকা পথে ঘন্টাখানেক চলার পর একটি পুরানো বাড়ির সম্মুখে গাড়িখানা থেমে পড়লো।
লোক দু’টি এবার মনিরার জ্ঞানহীন দেহটা নামিয়ে নিয়ে সেই পুরানো বাড়িটার মধ্যে প্রবেশ করলো। কয়েকটি ভাঙা চুরো ঘর এবং বারান্দা পেরিয়ে একটি সিঁড়ি আছে; সেই সিঁড়ি বেয়ে চললো তারা। তারপর উপরে বড় বড় কয়েকখানা অর্ধ ভগ্ন ঘর। ওদিকে একটি মস্তবড় ঘরের মধ্যে নীলাভ ধরনের আলো জ্বলছে। মেঝেতে দামী কার্পেট বিছানো। মাঝখানে একটি টেবিলের পাশাপাশি কয়েকখানা চেয়ার। আর তেমন কোন আসবাবপত্র নেই সে কক্ষে। টেবিলে কয়েকটা মদের বোতল আর কাঁচের গেলাস বিক্ষিপ্তভাবে ছড়ানো। কমধ্যে একটি চেয়ারে বসে রয়েছে। মুরাদ। মদের নেশায় চোখ দুটো ওর ঢুলু ঢুলু।
মনিরাকে নিয়ে লোক দুটি যখন মুরাদের সম্মুখে রাখলো তখন মনিরার সংজ্ঞা ফিরে আসছে। ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকালো মনিরা। সব যেন কেমন এলোমেলো ঝাপসা লাগছে। কিছুক্ষণ হাঁটুর মধ্যে মাথা গুঁজে বসে রইল সে।
মুরাদ ইঙ্গিত করলো লোক দুটিকে বেরিয়ে যেতে।
লোক দুটি নিঃশব্দে বেরিয়ে গেল।
মুরাদ টলতে টলতে এগিয়ে এলো মনিরার পাশে। মনিরার মাথার চুলে হাত রেখে মৃদু টান দিল।
মনিরা মুখ তুলে তাকালো। সঙ্গে সঙ্গে ভূত দেখার মতই চমকে উঠল। চিৎকার করে বললো–মুরাদ!
অট্টহাসি হেসে উঠলো মুরাদ–হ্যাঁ, আমি-আমি তোমার ভাবী স্বামী….
মনিরা তখন কম্পিত পদে উঠে দাঁড়িয়েছে। মুরাদ ওকে ধরতে যায়।
মনিরার তখন মাথাটা ঝিমঝিম করছে। চট করে সরে দাঁড়াতে গিয়ে পড়ে যায়।
মুরাদ তার দিকে এগুতেই পুনরায় উঠে দাঁড়ায় মনিরা।
নিঃশ্বাস দ্রুত বইছে। দাঁতে অধর দংশন করে বলে–শয়তান, তুমি আমাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছ?
হেসে উঠে মুরাদ–এখনও বুঝতে পারনি? তোমার জন্যই আমার এ সংগ্রাম। হাজার হাজার টাকা আমি পানির মত খরচ করে চলেছি…
মনিরার চোখ দিয়ে তখন অগ্নিস্ফুলিঙ্গ নির্গত হচ্ছে। ললাটে ফুটে উঠেছে বিন্দু বিন্দু ঘাম।
মুরাদ বলে চলেছে–কিন্তু তোমাকে পাইনি। দস্যু বনহুর সব সাধ, সব আশা বিনষ্ট করে দিয়েছে… হাঃ হাঃ হাঃ, আজ কোথায় তোমার সেই প্রিয়তম…
মনিরা চোখে সর্ষে ফুল দেখে–এখন তার উপায়! এ পাপিষ্ঠের হাত থেকে কি করে সে পরিত্রাণ পাবে? নিরুপায়ের মত কক্ষের চারদিকে তাকায়। কণ্ঠনালী তার শুকিয়ে আসছে। বার বার জিভ দিয়ে শুকনো ঠোঁট দুখানা ভিজিয়ে নেয় মনিরা।
মুরাদ এগিয়ে আসছে, চোখে লালসাপূর্ণ লোলুপ দৃষ্টি। মুখে কুৎসিত হাসি, দু’হাত প্রসারিত করে এগিয়ে আসছে সে–মনিরা তোমাকে নিয়ে আমি আকাশ কুসুম গল্প রচনা করেছিলুম। সে আকাশ কুসুম স্বপ্ন আমার ধূলোয় মিশে যেতে বসেছে। আজ আমি তোমাকে পেয়েছি…না না, আর আমি তোমাকে কিছুতেই ছাড়ছি না। দস্যু বনহুরও আজ তোমাকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারবে না… মনিরাকে ধরতে যায় মুরাদ।
মনিরা ক্ষিপ্তের ন্যায় একখানা চেয়ার তুলে নিয়ে ছুঁড়ে মারে মুরাদের শরীর লক্ষ্য করে।
মুরাদ হাত দিয়ে অতি সহজেই চেয়ারখানা ধরে ফেলে হেসে উঠে–হাঃ হাঃ হাঃ তুমি আমাকে কাবু করবে। এসো, এসো বলছি আমার বাহুবন্ধনে…
মনিরা একটা মদের বোতল তুলে ছুঁড়ে মারে।
মুরাদ মুহূর্তে সরে দাঁড়ায়। বোতলটা ওপাশের দেয়ালে লেগে সশব্দে ভেঙে যায়।
হঠাৎ মনিরার চোখে পড়ে-টেবিলের এক পাশে একটি ছোরা পড়ে রয়েছে। কালবিলম্ব না করে টেবিল থেকে ছোরাখানা হাতে তুলে নেয় মনিরা।
ঠিক সেই মুহূর্তে মুরাদ জড়িয়ে ধরে মনিরাকে। মনিরা সঙ্গে সঙ্গে হস্তস্থিত ছোরাখানা বসিয়ে দেয় মুরাদের বুকে।
একটা তীব্র আর্তনাদ করে ভূতলে পড়ে যায় মুরাদ। ভাগ্যিস ছোরাখানা মুরাদের বক্ষ ভেদ করে যায় নি। বাম পার্শ্বের কিছুটা মাংস ভেদ করে গেঁথে গিয়েছিল ছোরা খানা। ফিনকি দিয়ে রক্ত ছোটে।
সঙ্গে সঙ্গে কক্ষে প্রবেশ করে একজন লোক। মনিরা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। লোকটাকে। দেখামাত্র চিনতে ভুল হয় না তার সেই নৌকার মাঝি ছিল লোকটা। বনহুরের মুখে শুনেছিল লোকটা নাকি শয়তান ডাকু নাথুরাম। ভয়ে শিউরে উঠে মনিরা না জানি তার অদৃষ্টে আজ কি আছে!
লোকটা হাতে তালি দিল। সঙ্গে সঙ্গে আরও কয়েকজন ভীষণ আকার লোক কক্ষে প্রবেশ করল। সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ল মুরাদকে নিয়ে।
মনিরা দেখলো দরজা মুক্ত যেমনি সে দরজার দিকে পা বাড়িয়েছে অমনি একজন ধরে ফেলল তাকে। লোকটার বলিষ্ঠ হাতের চাপে মনিরার হাতখানা যেন পিষে যাচ্ছিল। লোকটা বলল সর্দার একে কি করব?
কর্কশ কঠিন কণ্ঠে বলে উঠে শয়তান নাথুরাম–সেই অন্ধকার ঘরটায় বন্দী করে রাখ। দেখিস যেন না পালায়।
লোকটা মনিরাকে নিয়ে বেরিয়ে যায়।
পিছনে শোনা যায় মুরাদের আর্তকণ্ঠ–উঃ আঃ.