হাজার বছর ধরে

হাজার বছর ধরে প্রখ্যাত বাংলাদেশী ঔপন্যাসিক ও চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান রচিত একটি কালজয়ী সামাজিক উপন্যাস। ১৯৬৪ সালে এ উপন্যাসটির জন্য তিনি আদমজী পুরষ্কারে সম্মানিত হন। কাহিনী সংক্ষেপ নদী বয়ে চলেছে আপন গতিতে। গাছে গাছে ফুলContinue Reading

এক

মস্ত বড় অজগরের মতো সড়কটা এঁকেবেঁকে চলে গেছে বিস্তীর্ণ ধান খেতের মাঝখান দিয়ে। মোঘলাই সড়ক। লোকে বলে, মোঘল বাদশাহ আওরঙ্গজেবের হাতে ধরা পড়বার ভয়ে শাহ সুজা যখন আরাকান পালিয়ে যাচ্ছিলো তখন যাবার পথে কয়েক হাজারContinue Reading

দুই

ধপাস ধপাস ঢেঁকির শব্দে গমগম শিকদার বাড়ি। ঘুমে ঢুলুঢুলু বউ দুটোর গা বেয়ে দরদর ঘাম নামে। এতক্ষনে রীতিমতো হাঁপিয়ে উঠেছে ওরা। আঁচলটা কাঁধের ওপর থেকে নামিয়ে নিয়ে, সামনে হাত রাখার বাঁশের ওপরে গুটিয়ে রেখেছে দুইজনে।Continue Reading

তিন

এতক্ষণে ঘুম থেকে উঠলো টুনি। এত শিঘ্রী উঠত না সে, বুড়ো মকবুলের ধমক খেয়ে শুয়ে থাকাটা নিরাপদ মনে করলো না। মনে মনে বুড়োকে এক হাজার একশো অভিশাপ দিলো। চোখজোড়া জ্বালা করছে তাঁর। মাথাটা ঘুরছে। ঘরেরContinue Reading

চার

খড়ম জোড়া তুলে নিয়ে হাত পা ধোয়ার জন্যে পুকুর ঘাটে চলে যায় মন্তু। অজু করে এসে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়বে আজ। মাঝি-বাড়ি থেকে ধপাস ধপাস ঢেঁকির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। রাত জেগে আজও ধান ভানছে আম্বিয়া। বড়Continue Reading

পাঁচ

নৌকাটা ঘাটে বেঁধে রেখে একগাদা কাদা ডিঙিয়ে পাড়ে উঠে আসে ওরা। মন্তু আর করিম শেখ। হাটের এক কোণে মনোয়ার হাজীর চায়ের দোকানে বসে গরম দু’কাপ চা খায়। হাটের নাম শান্তির হাট। কিন্তু সারাদিন অশান্তিই লেগেContinue Reading

ছয়

কিছুদিন ধরে বেশ শীত পড়তে শুরু করেছে। দিনের বেলা ঈষৎ গরম। শেষরাতে প্ৰচণ্ড শীতে হাড়কাঁপুনি শুরু হয়। কাঁথার নিচেও দেহটা ঠকঠক করে কাঁপতে থাকে। এ সময়ে বাড়ির সবাই মাটির ভাঁড়ে তুসির আগুন জ্বেলে মাথার কাছেContinue Reading

সাত

নবীনগরের ছোট খালে এসে নাওয়ের নোঙর ফেললো মন্তু। খালপাড়ে উঠে দাঁড়ালে টুনিদের বাড়ির লম্বা নারকেল আর তালগাছগুলো দেখা যায়। আর সেই তাল-নারকেলের বনের ফাঁকে ওদের দেউড়ি-ঘরটাও চোখে পড়ে এখান থেকে। নৌকা থেকে নামবার আগে মুখ-হাতটাContinue Reading

আট

দেখতে-না-দেখতে হীরনের বিয়ের দিনটা ঘনিয়ে এলো। একমাত্র মেয়ের বিয়ে, তাই আয়োজনের কোনো কার্পণ্য করেনি বুড়ো মকবুল। সাড়ে আট টাকা দাম দিয়ে একটা ছাগল কিনেছে সে। হাট থেকে চিকন চাল কিনে এনেছে আর অধসের ঘি। মিয়া-বাড়িContinue Reading

নয়

চৈত্র মাসের রোদে পুরো মাঠটা খা খা করছে। যেদিকে তাকানো যায় শুধু শুকনো মাটি। পাথরের চেয়েও শক্ত। আর অসংখ্য ফাটল। মাটি উত্তাপ সহ্য করতে না-পেরে ফেটে যায়। দাঁড়কাকগুলো তৃষ্ণায় সারাক্ষণ কা-কা করে উঠে বেড়ায় এContinue Reading

দশ

অবশেষে বুড়ো মকবুল মারা গেলো। ধলপহর দেখা দেবার অনেক আগে যখন সারাগ্রাম ঘুমে অচেতন তখন এ দুনিয়া থেকে বিদায় নিলো সে। সারারাতে কেউ ঘুমোল না। গনু মোল্লা, আবুল, রশীদ, সালেহা, মন্তু, টুনি, সবাই জেগে রইলContinue Reading