শ্রীকান্ত

শ্রীকান্ত শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত একটি জীবনচরিত মূলক উপন্যাস। তিনি এই উপন্যাসটি মোট চার খণ্ডে সমাপ্ত করেন। চারটি খণ্ড একসাথে লিখেন নি। যথাক্রমে ১৯১৭, ১৯১৮, ১৯২৭ এবং ১৯৩৩ সালে চারটি খণ্ড লেখা শেষ করেন। প্রথম পর্ব,Continue Reading

প্রথম পর্ব

‘শ্রীকান্ত, প্রথম পর্ব ১৩২২ সালের মাঘ থেকে চৈত্র এবং ১৩২৩ সালের বৈশাখ থেকে মাঘ সংখ্যা পর্যন্ত ‘ভারতবর্ষ’ পত্রিকায় ‘শ্রীকান্তের ভ্রমণ কাহিনী’ নামে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। এই সময় শরৎচন্দ্র লেখক হিসাবে শ্রীশ্রীকান্ত শর্মা এই ছদ্মনাম গ্রহণContinue Reading

এক : আমার এই ‘ভবঘুরে’

আমার এই ‘ভবঘুরে’ জীবনের অপরাহ্ন বেলায় দাঁড়াইয়া ইহারই একটা অধ্যায় বলিতে বসিয়া আজ কত কথাই না মনে পড়িতেছে! ছেলেবেলা হইতে এমনি করিয়াই ত বুড়া হইলাম। আত্মীয় অনাত্মীয় সকলের মুখে শুধু একটা একটানা ‘ছি-ছি’ শুনিয়া শুনিয়াContinue Reading

দুই : কয়েক মুহূর্তেই ঘনান্ধকারে

কয়েক মুহূর্তেই ঘনান্ধকারে সম্মুখ এবং পশ্চাৎ লেপিয়া একাকার হইয়া গেল। রহিল শুধু দক্ষিণ ও বামে সীমান্তরাল প্রসারিত বিপুল উদ্দাম জলস্রোত এবং তাহারই উপর তীব্রগতিশীলা এই ক্ষুদ্র তরণীটি এবং কিশোরবয়স্ক দুটি বালক। প্রকৃতিদেবীর সেই অপরিমেয় গম্ভীরContinue Reading

তিন : বড় ঘুম পেয়েছে

বড় ঘুম পেয়েছে ইন্দ্র, বাড়ি ফিরে চল না ভাই! ইন্দ্র একটুখানি হাসিয়া ঠিক যেন মেয়েমানুষের মত স্নেহার্দ্র কোমল স্বরে কথা কহিল। বলিল, ঘুম ত পাবার কথাই ভাই! কি করব শ্রীকান্ত, আজ একটু দেরি হবেই—অনেক কাজContinue Reading

চার : পা আর চলে না

পা আর চলে না—এম্‌নি করিয়া গঙ্গার ধারে ধারে চলিয়া সকালবেলা রক্তচক্ষু ও একান্ত শুষ্ক ম্লানমুখে বাটী ফিরিয়া আসিলাম। একটা সমারোহ পড়িয়া গেল। এই যে! এই যে! করিয়া সবাই সমস্বরে এম্‌নি অভ্যর্থনা করিয়া উঠিল যে, আমারContinue Reading

পাঁচ : সমস্ত ব্যাপারটা শুনিতে

সমস্ত ব্যাপারটা শুনিতে শুনিতে ইন্দ্রর দিদি হঠাৎ বার-দুই এম্‌নি শিহরিয়া উঠিলেন যে, ইন্দ্রর সেদিকে যদি কিছুমাত্র খেয়াল থাকিত, সে আশ্চর্য হইয়া যাইত। সে দেখিতে পাইল না, কিন্তু আমি পাইলাম। তিনি কিছুক্ষণ নীরবে চাহিয়া থাকিয়া সস্নেহেContinue Reading

ছয় : নিস্তব্ধ গভীর রাত্রে

নিস্তব্ধ গভীর রাত্রে মা-গঙ্গার উপকূলে ইন্দ্র যখন আমাকে নিতান্ত অকারণে একাকী ত্যাগ করিয়া চলিয়া গেল, তখন কান্না আর সামলাইতে পারিলাম না। তাহাকে যে ভালবাসিয়াছিলাম, সে তাহার কোন মূল্যই দিল না। পরের বাড়ির যে কঠিন শাসনপাশContinue Reading

সাত : আজ একাকী গিয়া

আজ একাকী গিয়া মুদীর কাছে দাঁড়াইলাম। পরিচয় পাইয়া মুদী একটি ছোট ন্যাকড়া বাহির করিয়া গেরো খুলিয়া দুটি সোনার মাকড়ি এবং পাঁচটি টাকা বাহির করিল। টাকা কয়টি আমার হাতে দিয়া কহিল, বহু, মাকড়ি-দুইটি আমাকে একুশ টাকায়Continue Reading

আট : লিখিতে বসিয়া

লিখিতে বসিয়া আমি অনেক সময়ই আশ্চর্য হইয়া ভাবি, এই-সব এলোমেলো ঘটনা আমার মনের মধ্যে এমন করিয়া পরিপাটিভাবে সাজাইয়া রাখিয়াছিল কে? যেমন করিয়া বলি, তেমন করিয়া ত তাহারা একটির পর একটি শৃঙ্খলিত হইয়া ঘটে নাই। আবারContinue Reading

নয় : মানুষের অন্তর

মানুষের অন্তর জিনিসটিকে চিনিয়া লইয়া, তাহার বিচারের ভার অন্তর্যামীর উপর না দিয়া মানুষ যখন নিজেই গ্রহণ করিয়া বলে, আমি এমন, আমি তেমন, এ কাজ আমার দ্বারা কদাচ ঘটিত না, সে কাজ আমি মরিয়া গেলেও করিতামContinue Reading

দশ : সমস্ত ঘটনারই হেতু

সমস্ত ঘটনারই হেতু দেখাইবার জিদটা মানুষের যে বয়সে থাকে, সে বয়স আমার পার হইয়া গেছে। সুতরাং কেমন করিয়াই যে এই সূচিভেদ্য অন্ধকার নিশীথে একাকী পথ চিনিয়া দীঘির ভাঙ্গাঘাট হইতে এই শ্মশানের উপকণ্ঠে আসিয়া উপস্থিত হইলাম,Continue Reading

এগার : পিয়ারীর কাছে

পিয়ারীর কাছে যে সত্য করিয়াছিলাম, তাহা যে রক্ষাও করিয়াছিলাম, বাটী ফিরিয়া এই সংবাদ জানাইয়া তাহাকে চিঠি দিলাম। অবিলম্বে জবাব আসিল। আমি একটা বিষয় বারবার লক্ষ্য করিয়াছিলাম—কোন দিন পিয়ারী আমাকে তাহার পাটনার বাটীতে যাইবার জন্য পীড়াপীড়িContinue Reading

বার : যাহাতে অচৈতন্য

যাহাতে অচৈতন্য শয্যাগত হইয়া পড়িয়াছিলাম, তাহা বসন্ত নয়, অন্য জ্বর। ডাক্তারিশাস্ত্রে নিশ্চয়ই তাহার একটা-কিছু গালভরা শক্ত নাম ছিল, কিন্তু আমি তাহা অবগত নই। খবর পাইয়া পিয়ারী তাহার ছেলেকে লইয়া জন-দুই ভৃত্য এবং দাসী লইয়া আসিয়াContinue Reading

দ্বিতীয় পর্ব

শ্রীকান্ত দ্বিতীয় পর্ব ১৩২৪ সালের আষাঢ় থেকে ভাদ্র, অগ্রহায়ণ থেকে চৈত্র এবং ১৩২৫ সালের বৈশাখ থেকে আষাঢ়, ভাদ্র, আশ্বিন সংখ্যা ‘ভারতবর্ষ’ পত্রে সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়। তখনও এর নাম ছিল ‘শ্রীকান্তর ভ্রমণ কাহিনী’। এর মধ্যে ১৩২৪Continue Reading

এক : এই ছন্নছাড়া জীবনের

এই ছন্নছাড়া জীবনের যে অধ্যায়টা সেদিন রাজলক্ষ্মীর কাছে শেষ বিদায়ের ক্ষণে চোখের জলের ভিতর দিয়া শেষ করিয়া দিয়া আসিয়াছিলাম, মনে করি নাই, আবার তাহার ছিন্ন-সূত্র যোজনা করিবার জন্য আমার ডাক পড়িবে। কিন্তু ডাক যখন সত্যইContinue Reading

দুই : এক-একটা কথা

এক-একটা কথা দেখিয়াছি, সারাজীবনে ভুলিতে পারা যায় না। যখনই মনে পড়ে—তাহার শব্দগুলা পর্যন্ত যেন কানের মধ্যে বাজিয়া উঠে। পিয়ারীর শেষ কথাগুলাও তেমনি। আজও আমি তাহার রেশ শুনিতে পাই। সে যে স্বভাবতঃই কত বড় সংযমী, সেContinue Reading

তিন : দিন পাঁচ-ছয় পরে

দিন পাঁচ-ছয় পরে একদিন ভোরবেলায় একটা লোহার তোরঙ্গ এবং একটা পাতলা বিছানামাত্র অবলম্বন করিয়া কলিকাতার কয়লাঘাটে আসিয়া উপস্থিত হইলাম। গাড়ি হইতে নামিতে না নামিতে, এক খাঁকি-কুর্তি-পরা কুলি আসিয়া এই দুটাকে ছোঁ মারিয়া লইয়া কোথায় যেContinue Reading

চার : সেদিন এমন প্রবৃত্তি

সেদিন এমন প্রবৃত্তি হইল না যে নীচে যাই। সুতরাং নন্দ-টগরের যুদ্ধের অবসান কি ভাবে হইল, সন্ধিপত্রে কোন্‌ কোন্‌ শর্তাদি নির্দিষ্ট হইল, কিছুই জানি না। তবে, পরে দেখিয়াছি, শর্ত যাই হোক, বিপদের দিনে সেই স্ক্র্যাপ-অফ-পেপারটা কোনContinue Reading

পাঁচ : কেরেন্টিন্‌ কারাবাসের

কেরেন্টিন্‌ কারাবাসের আইন কুলিদের জন্য—ভদ্রলোকের জন্য নয়; এবং যে-কেহ জাহাজের ভাড়া দশ টাকার বেশি দেয় নাই, সেই কুলি। চা বাগানের আইনে কি বলে জানি না, তবে জাহাজী আইন এই বটে এবং কর্তৃপক্ষরাও প্রত্যক্ষ জ্ঞানে কিContinue Reading