প্রথম পর্ব
‘শ্রীকান্ত, প্রথম পর্ব ১৩২২ সালের মাঘ থেকে চৈত্র এবং ১৩২৩ সালের বৈশাখ থেকে মাঘ সংখ্যা পর্যন্ত ‘ভারতবর্ষ’ পত্রিকায় ‘শ্রীকান্তের ভ্রমণ কাহিনী’ নামে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। এই সময় শরৎচন্দ্র লেখক হিসাবে শ্রীশ্রীকান্ত শর্মা এই ছদ্মনাম গ্রহণ করেন। ১৩২৪ সালের মাঘ মাসে (১২ই ফেব্রুয়ারি, ১৯১৭ খৃষ্টাব্দ) পরিমার্জিত হয়ে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।
১৯১৫ খৃষ্টাব্দের ১৫ই নবেম্বর ‘ভারতবর্ষ’ পত্রিকার হরিদাস চট্টোপাধ্যায়কে লেখেন: শ্রীকান্তের ভ্রমণ কাহিনী যে সত্যিই ‘ভারতবর্ষে’ ছাপিবার যোগ্য আমি তাহা মনে করি নাই, এখনও করি না। তবে যদি কোথাও কেহ ছাপে এই মনে করেছিলাম। বিশেষ, তাহাতে গোড়াতেই যে সকল শ্লেষ ছিল, সে সকল যে কোনমতেই আপনার কাগজে স্থান পাইতে পারে না, সে ত জানা কথা। তবে, অপর কোন কাগজের হয়ত আপত্তি না থাকিতে পারে এই ভরসা করিয়াছিলাম। সেই জন্যই আপনার মারফতে পাঠানো। যদি বলেন ত আরও লিখি—আরও অনেক কথা বলিবার রহিয়াছে। তবে ব্যক্তিগত শ্লেষ বিদ্রূপ পর্যন্তই। তবে শেষ পর্যন্ত সব কথাই সত্য বলা হইবে। …
“আমার নামটা কোনমতেই প্রকাশ না পায়। এমনকি আপনি ছাড়া; উপেনবাবু ছাড়া (তাঁর ত মুখ দিয়া কথা বাহির হয় না—তা ভালই হোক মন্দই হোক) আর কেহ না জানে ত বেশ হয়…
“যাই হোক ‘শ্রীকান্ত পড়ে লোকে কিরকম ছি ছি করে দয়া করে আমাকে জানাবেন। ততদিন ‘শ্রীকান্ত’ একটি ছত্রও আর লিখব না।”
ঐ বছরেরই ৭ ডিসেম্বর শরৎচন্দ্র একটি চিঠিতে লিখেছেন: “এই কাহিনীটাকে সম্পাদক মহাশয়েরা দয়া করিয়া যেন নেহাৎ তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য না করেন। আমার বড় আশা আছে—ইহা অন্ততঃ যে সকল লেখা ছাপা হয় এবং হইয়াছেও তাহাদের নিতান্ত নীচের আসনের যোগ্যনয়। অনেক সামাজিক ইতিহাস ইহার ভবিষ্যৎ জঠরে প্রচ্ছন্ন আছে। আমার অনেক চেষ্টা ও যত্নের জিনিস অন্ততঃ বন্ধু-বান্ধবের কাছেও একটু খাতির পাইবার মতই হইবেই। প্রথমটা অবশ্য খুবই খারাপ—তা অনেক সত্যকার ভাল জিনিসেরও প্রথমটা মন্দ এমন দেখাও যায় ত। এই আমার কৈফিয়ৎ এবার ছাপা হবে কি? হাতের লেখা ছাপার অক্ষরে দেখার আশাতেই ওটা দেওয়া সে ত ভূমিকাতেই লেখা আছে।”