☼ বিনোদ ঘোষাল ☼
রূপনগরের পিশাচিনী
দুপুর দুটো নাগাদ অফিসে লাঞ্চ সারার পর রাস্তায় বেরিয়ে উল্টোদিকের ফুটেই একটা বাসস্ট্যান্ডে কয়েকজন কলিগের সঙ্গে মিনিট পনেরো কুড়ি আড্ডা দেয় সুব্রত। নয় ঘন্টার ডিউটি আওয়ারে এই আধঘন্টাই একটু নিঃশ্বাস নেওয়ার সময়। তারপর আবার নিজের ডেস্কে বসে রুদ্ধশ্বাসে এক নাগাড়ে কাজ করে যাওয়া। ওর অফিসটা বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের ত্রিভোলি কোর্টে। ফিফথ ফ্লোরে অফিস। অটোমোবাইল স্পেয়ার পার্টস ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি। সুব্রত এ্যাকুন্টস এক্সিকিউটিভ। এইমাসে ছয় মাসের প্রোবেশন পিরিওড শেষ হয়েছে। এখন ও কোম্পানির পারমানেন্ট স্টাফ। ভাল স্যালারি। এই কারণে সুব্রতর খুব খুশি থাকার কথা। কিন্তু গত তিনবছর ধরে সুব্রত কোনও কিছুতেই খুশি হয় না। আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধব-পরিচিত সকলেই ব্যাপারটা খেয়াল করেছে, ওকে বারবার জিজ্ঞাসাও করেছে কিন্তু উত্তরে যা সব বলেছে সুব্রত তা একটা বাচ্চা শুনেও বলে দেবে ডাঁহা মিহ্যে। চৌত্রিশ বছরের সুব্রত মজুমদারের এই খুশিহীন জীবনের মূল কারণ ওর স্ত্রী নন্দিনী। আজ থেকে প্রায় তিনবছর আগে খবরের কাগজে পাত্র-পাত্রী চাই বিজ্ঞাপনসূত্রে শিবপুরের সুব্রতর সঙ্গে বেহালার নন্দিনীর বিয়ে হয়েছিল। ফুলশ্যার পরের দিন রাতে সুবরত তার নতুন বউ এর একটু ঘনিষ্ট হওয়ার চেষ্টা করতেই তীক্ষ্ণ চিৎকার করে এক ধাক্কায় সুব্রতকে সরিয়ে দিয়েছিল নন্দিনী। প্রথমে বেজায় ঘাবড়ে গিয়েছিল সুব্রত। তারপর ভেবেছিল হয়তো প্রথমবারের ভয়। প্রথম প্রথম অনেক মেয়েরই এমনটা হয়ে থাকে শুনেছে। পরে ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু এইক্ষেত্রে হল না। সপ্তাহ-মাস পেরিয়ে গেল, কিন্তু তবু হল না। একটু ঘনিষ্ট হওয়ার চেষ্টা করলেই প্রবলভাবে বাধা দিতে থাকে নন্দিনী। সুব্রত জোরাজুরি করলে হাউমাউ করে কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। সুব্রতর মাথায় যেন বাজ ভেঙে পড়ে। এসবের কারণ কী? কেন এমন করছে নন্দিনী? সুব্রত বহুবার জিজ্ঞাসা করেছিল ওকে। বুঝিয়েছিল, অভিমান দেখিয়েছিল, রাগ করেছিল, নন্দিনীর একই উত্তর ওইসব খারাপ লোকেরা করে।
যাববাবা তাহলে তোমার বাবা-মাও খারাপ মানুষ?
এর উত্তরে নন্দিনী বাপের বাড়ি চলে গিয়েছিল সাতদিনের জন্য।
আরেকবার অনেক ভুজুং ভাজাং দিয়ে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে কাউন্সেলিঙ্গের জন্য নিয়ে গিয়েছিল সুব্রত। ফার্সট সিটিং এর পরেই বাড়ি ফিরে নন্দিনীর প্রথম প্রশ্ন ছিল তুমি কি আমাকে পাগল ভাব?
এ বাবা তা কেন ভাবব?
তাহলে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে কেন নিয়ে গেছিলে?
সে তো…মানে দেখো মনে হয় তোমার কিছু একটা প্রবলেম হচ্ছে। সেই জন্যই।
তা বলে একটা বাইরের লোক আমাদের পারসোনাল লাইফে ইন্টারফেয়ার করবে? আর বিয়ে করা মানে তোমার কাছে শুধুই ওইসব?
শুধু ওইসব হবে কেন? কিন্তু ম্যারিটাল লাইফে ওটা তো একটা পার্ট।
ওসব নোংরামোতে যদি এতই সখ থাকে তাহলে বিজ্ঞাপনেও সেটা লিখে দিতে পারতে।
এর উত্তর কী দেওয়া উচিত মাথায় আসেনি সুব্রতর। কিন্তু ভেতরে ভেতরে একেবারে গুড়োগুড়ো হয়ে গিয়েছিল। ডিভোর্সের কথাও ভেবেছিল কয়েকবার কিন্তু তার কারণ হিসেবে সবাইকে যেটা বলতে হবে তা ভেবেই লজ্জায় গুটিয়ে গিয়েছিল। দুই একবার পরকিয়ার চেষ্টা করে দেখেছে ওই জিনিসের ধক ওর নেই। এগোতে আর সাহস পায়নি। অগত্যা গাছেদের মতো পুরোপুরি অযৌনজীবন। যৌনতা বলতে শুধু ইন্টারনেট আর টয়লেট। জীবনে অন্যান্য শখ বলতে তেমন কিছু নেই সুব্রত। বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে মিশতে ইচ্ছে করে না আর। গল্প করতে গেলেই অনেক এমন প্রসঙ্গ এসে পড়ে যা ওর পক্ষে খুব অস্বস্তিকর। তাই অফিস থেকে অনেকটা দেরি করেই বেরোয়। কাজের মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে রেখে শান্তি খোঁজে। এই তিনবছরে সুব্রত নন্দিনীর সঙ্গে কোথাও বেড়াতে যায়নি। নন্দিনীও আবদার করেনি। দুইজনে স্রেফ সামাজিকতা রক্ষার দায়ে একসঙ্গে থাকে। রাতে বিছানায় শোবার পর সুব্রতর মনে হয়, ও কোনো খাটে নয়, শ্মশানে শুয়ে রয়েছে।
আজও দুপুরে লাঞ্চ সেরে বাসট্যান্ডে এসে বসল সুব্রত। বাসস্ট্যান্ডটা ফাঁকাই থাকে। এই রাস্তায় বাসচলাচল খুবই কম। তাই লোহার ছটা চেয়ারও ফাঁকা। আজ সুব্রতর সঙ্গে কৌশিক আর রাজদীপ ছিল। পাশাপাশি চেয়ারে বসে বেশ আয়েস করে সিগারেট ধরাল তিনজনে। মিনিট কয়েক গল্পগুজবের পরে কৌশিক বলল, দেখেছিস মালটাকে?
বাকি দুইজন ভাবল কোনও সুন্দরী মেয়েকে দেখার কথা বলছে বোধহয়।
কৌশিক ফিক করে হেসে বলল তোরা যা ভাবছিস তা নয়, ওই দেখ বলে ও আঙুল তুলল বাসস্ট্যান্ডের ঠিক অপোজিট ফুটপাতে। ওখানে একটা পুরনো ফার্নিচারের দোকান রয়েছে। সাইনবোর্ডে ইংরেজিতে লেখা হুসেনস ফার্নিচার। বায়ার এন্ড সেলার অফ ওল্ড ফার্নিচারস। ছোট দোকানটাকে রোজই আলোগোছে দেখে ওরা। অত খেয়াল করে না। দোকানটায় সব কর্মচারীই মুসলিম। ফুটপাতের ওপরেই ওধিকাংশ ফার্নিচার রেখে ওরা রিপেয়ার, পালিশ ইত্যাদির কাজ করে। ওই ফুটপাতের ওপরেই দোকানের দেওয়ালে আজ হেলান দিয়ে রাখা রয়েছে বিশাল আকারের একটা আয়না।
রাজদীপ বলল ধুস শালা আয়না!
হুঁ খানদানি আয়না। আহ এমন একটা জিনিস ঘরে থাকলে সারাদিন আয়নার সামনেই দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছে করবে। বলল কৌশিক।
সুব্রত বেশ মনোযোগ দিয়ে আয়নাটাকে দেখছিল। প্রায় পাঁচফুট লম্বা হবে। আর দুই হাত চওড়া। আয়নাটা ওকে বেশ আকৃষ্ট করল।
কৌশিক বলল, হেব্বি দেখতে কিন্তু মনে হয় কোনও রইস আদমীর ছিল।
তাহলে বেচে দিল কেন? জিজ্ঞাসা করল রাজদীপ।
এটা কে রে? বেচে দিল কেন আমি কী করে বলব? চল ওঠ আড়াইটা বাজল। বলে উঠে দাঁড়াল কৌশিক। ওদের লাঞ্চ আওয়ার শেষ। রাজিদীপও উঠে দাঁড়াল। কৌশিক বলল কী রে সুব্রত ওঠ।
সুব্রত বলল তোরা যা, আমি একটা কাজ সেরে আসছি।
ওক্কে বস। ওরা দু’জন চলে গেল। সুবরত সিগারেট ফেলে উঠে দাঁরাল। রাস্তা ক্রস করে দোকানের সামনে এল। আয়নাটার সামনে এসে দাঁড়াল। এত সুন্দর দেখতে সত্যিই চোখ ধাঁধিয়ে যায়। দেখলেই বোঝা যায় অনেক পুরনো, কিন্তু এত এখনও এত ঝকঝকে যে পুরনো বলে দেগে দেওয়া যায় না। কাচ এখনও চকচকে। আয়নাটা এতই বড় সুব্রত নিজেকে আপাদমস্তক দেখতে পাচ্ছিল। কাঠের ফ্রেম পালিশ করা। ফ্রেমে অপূর্ব কাঠের কারুকাজ। সবথেকে নজর কাড়ে যেটা ফ্রেমের মাথায় এক স্বল্পবসনা নারীর রিলিফ, তার চোখের মনিদুটি লাল কাচের। এতই নিখুঁত যে একবার তাকালে চোখ সরানো যায় না। দেহের প্রতিটি খাঁজ যেন শিল্পী পরম যত্নে কুঁদে তৈরি করেছেন। মেয়েটির শরীরের কোমলতা যেন অনুভব করা যায়। সুব্রত নিজেকে আটকে রাখতে পারল না। হাত বাড়িয়ে কিছুটা বেখেয়ালেই ছুঁয়ে ফেলল আয়নাটাকে। ফ্রেমে হাত বোলাল তারপর ধীরে ধীরে নিজের আঙুল সরিয়ে নিয়ে যেতে থাকল ওই কাঠের নারী শরীরটির দিকে। সুব্রতর অস্বস্তি হচ্ছিল কিন্তু কিছুতেই নিজেকে সামলাতে পারছিল না।
লে লিজিয়ে বাবু বড়িয়া চিজ।
চমকে উঠে নিজের হাত সরিয়ে নিল সুব্রত। কথাটা দোকানের ভেতর থেকে এসেছে। সুব্রত তাকিয়ে দেখল দোকানের ভেতর বসে রয়েছে এক বয়স্ক সাদা দাড়িওলা মুসলমান। উনিই দোকানের মালিক।
সুব্রত কিছু না বলে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল লোকটার দিকে।
লে না হ্যায় তো লে লিজিয়ে। এ্যায়সা চিজ বার বার নেহি মিলেগা।
না না এমনিই দেখছি। আময়া আমতা করে বলল সুব্রত।
আরে বাবু দেখতা তো সবহি হ্যায়। লেকিন মিলতা হ্যায় নসিববালোকো। হ্যায় না?
হুঁ তা ঠিক।
লে না হ্যায় তো সোচিয়ে মত। ফট সে লে লিজিয়ে, কমতি করকে ছোড় দেঙ্গে।
তা ভাল জিনিস কম দামে ছাড়বেন কেন? প্রশ্ন করল সুব্রত।
দুকান ছোটা হ্যায় হামারা। আপ তো দেখহি রহে হো। কিতনা সামান রাখে গা। ঔর ইয়ে সিসাকা চিজ থোরি সি ভি আগর খরোচ লগ যায়ে তো কোই নেহি খড়িদে গা বাবু। ইসলিয়ে…
হুম…তা দাম কত বলছেন। হঠাৎই প্রশ্নটা করে ফেলল সুব্রত।
আজ লে না হ্যায়?
আগে দাম তো শুনি।
এক কিমত পাঁচ হাজার।
পাঁ—চ! হাহাহা করে হেসে উঠল সুব্রত। তারপর ঘড়ি দেখে হাঁটা লাগাতে গেল।
আরে রুকিয়ে বাবু। কেয়া হুয়া?
আরে দাদা এত দাম! এত টাকা আমার স্যালারিও নয়। এসব বড়লোকেদের জিনিস।
নেহি নেহি বড়লোক নেহি দিল বড়া হোনা চাহিয়ে বাস। আপ কিতনা দে সকতে হো বতাও?
আরে আপনি এত দাম বললেন আমি এরপর আর কী বলব?
ফির ভি কুছ তো বতাকে যাইয়ে বাবু।
সুব্রত ভেবে পেল না কী বলবে? আর সবথেকে বড় কথা এতবড় আয়না নিয়ে ও করবে টা কী? ঘরে রাখবে কোথায়? এসব আয়না রাখার জন্য তেমন বাড়ি হওয়া দরকার। তবু দড় করে ফেলেছে যখন কিছু একটা বলা দরকার। সুব্রত বলল, আমি মিডলক্লাস লোক। খুব বেশি হলে হাজারখানেক পারব।
নেহি বাবু কুছ সোচকে তো বতাইয়ে। চিজ দেখিয়ে আপ? মার্কিটমে কম সে কম আট দশ হাজার তো মিল হি যায় গা। লেকিন ফুরসত কাঁহা।
না চাচা আমি এর বেশি পারব না। বললাম তো আপনাকে। চললাম আমি। অফিসে ঢুকতে হবে।
আরে রুকিয়ে জনাব।
এগোতে গিয়েও আবার থামল সুব্রত।
আভি লেনা হ্যায়?
নাহ আজ কী করে নেব? অত টাকা নেই সঙ্গে। আর আমি ঢুকব অফিসে। সুব্রত মনে মনে প্রমাদ গুনল। জিনিসটা কেনার মোটেও ইচ্ছে নেই, দড় করাটাই ভুল হয়েছে।
ঘর কাঁহা হ্যায় আপকা?
বহোত দূর, শ্যামবাজার।
উয়ো দূর কাঁহা। চলিয়ে আপকে লিয়ে দো হাজার মে ছোড় দেঙ্গে।
সুব্রত কিছুটা একটা বলতে গেল সেই সুযোগ দিল না দোকানদার, তার আগেই বলে উঠল। অব ঔর কুছ মত বলিয়ে। হাথ জোড়তা হু। ইসসে কমমে নেহি দে সকতা। পুরা লস মে দে রহা হুঁ। খড়িদকে পুরা ফঁস গয়া ম্যায়নে।
সুব্রত কী বলবে বুঝে পেল না। এ তো আচ্ছা ফাঁসা গেল।
মাল হাম ঘরমে ভেজ দেঙ্গে। পেমেন্ট ঘর মে করেঙ্গে না ইঁহা?
না না দুই হাজার টাকা সঙ্গে নেই।
ঠিক হ্যায় কোই বাত নেহি কুছ এ্যাডভান্স দে দিজিয়ে।
এই রে আমার কাছে আজ বলত বলতে মানিব্যাগ খুলে সুব্রত দেখল মাত্র চারতে একশোটাকার নোট রয়েছে। ও বলল আমি তিনশ টাকা এখন দিতে পারি।
কোই বাত নেই। আপ তো জান পেহচানওয়ালা হো। এহি বগলকা অফিস মে কাম করতে হো হম জানতে হ্যায়। তিনশই দে দিজিয়ে।
সুব্রত বুঝল দোকানদার মরিয়া। আর রেহাই নেই। এরপরে না নিলে কাল থেকে উলটো ফুটে বসে আর আড্ডা দেওয়া যাবে না। ব্যাগ থেকে তিনটে একশোর নোট বার করে লোকটির হাতে দিল ও। বাড়ির ঠিকানা জেনে নোট করে বিল বানিয়ে দিল লোকটা। বিল পকেটে নিয়ে অফিসে চলে এল সুব্রত। অনেক বেশি দেরি হয়ে গেল আজ।
অফিসে ঢুকে নিজের ডেস্কে বসে কাজ মন বসছিল না সুব্রতর। বারবার মনে পড়ছিল আয়নাটার কথা। আয়নার ফ্রেমে ওই অদ্ভুত সুন্দর কারুকাজ, নারী মুর্তিটির কথা। এত বড় একটা ধুমসো আয়না কিনে বাড়িতে ঢোকালে বাবা-মা নন্দিনীর কাছে অনেক কৈফিয়ত দিতে হবে ঠিকই কিন্তু এ্যান্টিক জিনিস বাড়িতে একটা থাকলে মন্দ হয় না। আর সুব্রত এবং নন্দিনীর বেডরুমটা একেবারে ছোট নয়, ঘরে মোটামুটি মানিয়েই যাবে। যদি নন্দিনী আপত্তি না তোলে তাহলে শোবার ঘরেই রাখা যাবে ওটাকে।
বাবা-মা, নন্দিনী যথারীতি তিনজনেই বেশ অবাক হল এত ঢ্যাপ্পোস একটা আয়না আচমকা বাড়িতে নিয়ে আসার কারণে। নন্দিনী বলল তোমার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে, মা জিজ্ঞাসা করল রাখবি কোথায়? বাবা বলল দেখতে মন্দ নয়, কিন্তু এসব এ্যান্টিকের জন্য ফ্ল্যাটবাড়ি মামানসই নয়।
সুব্রত জানত এইসব প্রশ্নের উত্তর ওকে ফেস করতে হবে। তাই চুপ করে শুনে যাচ্ছিল কথাগুলো। শুধু হুঁ হাঁ করে সামান্য উত্তর। আজ সকালেই টেম্পো করে জিনিসটা হাজির হয়ে গিয়েছিল বাড়িতে। অফিসের জন্য যখন তৈরি হচ্ছিল তখনই জিনিসটা এসে হাজির হল। খালাসির সঙ্গে হাত লাগিয়ে আয়নাটা নিজের ঘরে এনে দেওয়ালে হেলান দিয়ে রাখল সুব্রত। বাকি টাকা মিটিয়ে দিয়ে ওর মন খুঁতখুত করতে থাকল এইভাবে দেওয়ালে হেলান দিয়ে রাখাটা কি ঠিক হবে? যদি হড়কে মেঝেতে পড়ে যায় তাহলে সব গেল। এই কাচ এখানে পাওয়া যাবে না। নাহ আজ আর অফিস যাবে না ঠিক করল। অফিস যাওয়ার থেকে ঢের বেশি ইমপরট্যান্ট আয়নাটার ব্যবস্থা করা। সুব্রত বেরিয়ে পড়ল কাঠের মিস্তিরির খোঁজে। কাছেই একটি দোকান, সেখান থেকে একজন কাঠ মিস্তিরিকে ধরে বেঁধে নিয়ে এল। দেওয়ালে হুক লাগিয়ে আয়না ফিটিংপর্ব চলল বেশ কিছুক্ষণ। একটা দেওয়ালের অনেকটা জায়গা জুড়ে গেল আয়নার জন্য। কিন্তু বেশ লাগছে দেখতে। নন্দিনী প্রথম দিকে খুব আপত্তি জানিয়েছিল শোবার ঘরের মধ্যে এত বড় একটা আয়না ঢোকানোর জন্য। কিন্তু ওই আয়নাতেই বারবার নিজেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছিল। মানুষের সহজাত স্বভাব সুযোগ পেলে নিজেকে একবার দেখে নেওয়া। এই স্বভাব মেয়েদের আরও অনেক বেশি। সুব্রত খেয়াল করল সকালে আয়নাটা ঘরে ঢোকানোর সময় নন্দিনী যতটা আপত্তি তুলেছিল বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ওর আপত্তিটা নরম হতে শুরু করল শুধু তাই নয় সুব্রতর অনুপস্থিতিতে আয়নাটার গায় বেশ কয়েকবা হাতও বুলিয়ে দেখল। নন্দিনী টের পাচ্ছিল ওটার সামনে ও যতবার যাচ্ছে শরীরের ভেতরে একটা অদ্ভূত অনুভূতি হচ্ছে, যেটা ওর আগে কখনই হয়নি। একেবারে অচেনা একটা অনুভূতি, গা সিরসিরে, গায়ে কাঁটা দেওয়া। সারাদিনে নন্দিনীর সঙ্গে সুব্রতর খুব বেশি কথা হয় না। দুইজনেই দুজনকে আসলে কিছুটা অ্যাভয়েড করে। দুজনের সেই অন্তরঙ্গ সম্পর্কটাই গড়ে ওঠেনি বলে কেউই খুব একটা কারও কাছে ঘেসে না। আজ ছুটি নেওয়ার কারনে সুব্রত সারাদিন অলসভাবেই ঘরে কাটাল। দুপুরে খেয়ে দেয়ে মোবাইলে নেটফ্লিক্সে সিনেমা দেখল। আর একটা বিষয় আরচোখে খেয়াল করছিল নন্দিনী বা বার কোনো অছিলায় ওই আয়নাটার সামনে যাচ্ছে আর নিজেকে দেখছে। বেশ মজা লাগছিল সুব্রতর। অবশ্য এতবড় খানদানি আয়নার সামনে নিজেকে দেখার লোভ ত্যাগ করা খুব কঠিন। কিন্তু ও জানত না আজ রাতে ওর জন্য কী অপেক্ষা করছে।
রোজের মত রাতে খেয়ে খুব বেশিক্ষণ জাগে না সুব্রত। ও খেয়ে দেয়েই শুয়ে পড়ে। নন্দিনীর শুতে একটু দেরি হয়। সারা বছর ও শোবার আগে স্নান করে তারপর বেশ কিছুক্ষণ ধরে নানা রকমের লোশন গায়ে মুখে মাখে। চুল আঁচড়ায় তারপর যখন শুতে আসে ততক্ষণে সুব্রত ঘুমিয়ে পড়ে। আজ সুব্রত বিছানায় এলিয়ে কিছুক্ষণ মোবাইলখুটখাট করতেই ঘুম দুইচোখে জড়িয়ে এল ওর। চোখ বুজতে ঘুমও চলে এল। ঘুম ভাঙল তখন ঘরে ড্রিমলাইট জ্বলছে। ওর কেমন যেন মনে হল ওর ওপরে কেউ চেপে বসেছে। প্রথমে মনে হল স্বপ্ন, তারপর মনে হল নাহ স্বপ্ন নয়, ভয় পেয়ে চোখ মেলতেই যা দেখল চমকে উঠ সুব্রত। নন্দিনী ওর গা ঘেসে শুয়ে ওর খোলা বুকে হাত বোলাচ্ছে। প্রথমে বিশ্বাস হল না সুব্রতর। ভাবল চোখের ভুল। কিন্তু তারপরে বুঝল নাহ এ সত্যি। স্লিভলেস সাদা নাইটি, মাখন ত্বক ছিপছিপে শরীর ড্রিমলাইটে কেমন অন্যরকম লাগছে নন্দিনীকে। সুব্রত বেশ সন্তর্পনেই প্রথমে হাত রাখল নন্দিনীর বাহুতে। উষ্ণ শরীর। নন্দিনী আরও ঘেঁসে এল কাছে। মুখ ঘসতে থাকল সুব্রতর বুকে। সুব্রত অবাক হয়ে তাকাল নন্দিনীর দিকে। এ যেন এক অচেনা নন্দিনী। ওর চোখদুটোর দিকে তাকাতেই গা ছমছম করে উঠল সুব্রতর। সরে আসতে চাইল। কিন্তু নন্দিনী আর সেই সুযোগ দিল না সুব্রতকে, নিপূনভাবে আদর করতে করতে জাগিয়ে তুলল ওকে। সুব্রতও মেতে উঠল খেলায়। আদিম লাগামছাড়া উদ্দাম খেলতে একটা সময়ের পর অনিবার্য ক্লান্ত ও তৃপ্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ল দু’জনেই।
পরদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গার পরেই গতরাতের কথা মনে পড়ে আনন্দ যেন চুঁইয়ে পড়ল সুব্রতর গোটা শরীর থেকে। এত খুশি এত ভাল লাগছে সবকিছু! আজও অফিস যেতে ইচ্ছে করছে না। এতদিন পর তাহলে অবশেষে…বিছানায় নন্দিনী নেই। আজও অফিস যেতে ইচ্ছে করছে না, কিন্তু কাল কামাই গিয়েছে আজ আর উপায় নেই। উঠল সুব্রত। ঘরে আয়নাটার দিকে দেখল। ওটার দিকে তাকালে কেমন যেন মনে হয় আয়নাটাই ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
ঘর ছেড়ে টয়লেটের দিকে যেতে যাবে তখনই নন্দিনী ঘরে ঢুকল। ওকে জড়িয়ে ধরল সুব্রত।
কী হল কী? ছাড়? সেই পুরনো স্টাইলেই বলল নন্দিনী।
সে না হয় ছাড়ছি, কিন্তু কাল রাতে কী হয়েছিল তোমার? এতদিন পরে অবশেষে…বেশ রসিয়ে রসিয়ে বলল সুব্রত।
কী আবার হবে? বিরক্ত হয়ে জবাব দিল নন্দিনী।
তাই নাকি? তাহলে এগুলো কী? বলে পিঠের, গলার পাশে নন্দিনীর আদরের দাগগুলো দেখাল সুব্রত।
দেখে প্রথমেই ইস করে উঠল নন্দিনী। তারপর বলল এগুলো কী?
কী মানে তোমারই তো করা। হেসে বলল সুব্রত।
বাজে কথা বলবে না। কে না কে করেছে ছি ছি…বলতে বলতে অন্য ঘরে চলে গেল নন্দিনী।
মানে! থম মেরে ঘরে দাঁড়িয়ে রইল সুব্রত।
পরপর দুইরাত তিন রাত একই ঘটনা। রাতের নন্দিনী আর দিনের নন্দিনী কেউ কাউকে চেনে না। দিনের আলোর নন্দিনী বড় চেনা, একঘেয়ে, খিটখিটে। রাতে বিছানায় সেই আবার অপূর্ব শিল্পী। সুব্রতর ভয় লাগে তখন কারণ আদরের সময় নন্দিনী যতই বন্য হয়ে ওঠে ওর চোখদুটোও ওই আয়নার কাঠখোদাই নারী মুর্তির চোখের লাল মনিদুটোর মত জ্বলজ্বল করতে থাকে। কয়েকদিনের মধ্যে খুব অন্যমনস্ক হয়ে পড়ল সুব্রত। কোনও কাজেই মন বসে না। সবসময়ে মনে কেমন যেন একটা অশান্তি। ইদানিং ওই আয়নাটার সামনে দাঁড়াতেও কেমন যেন গা ছমছম করে। আর নন্দিনী যেন পারলে সারাদিন আয়নার সামনেই দাঁড়িয়ে থাকে। নড়তেই চায় না। নড়তে পারেও না। কী এক অমোঘ আকর্ষণ ওকে সারাদিন চুম্বকের মতো আটকে রাখে আয়নার ওই কাচের সামনে। নন্দিনী তাকিয়ে থাকে বিভোরভাবে।
আজ অফিসে কাজ করতে বসে সুব্রত ঠিক করে ফেলল এইভাবে আর চলছে না। কিছু একটা রহস্য রয়েছে। আয়নাটা বাড়িতে আনার পরেই এমন অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে। নন্দিনীর এমন আচরণ আগের থেকেও বেশি অস্বস্তিকর লাগে সুব্রতর। প্রতিদিন রাতে একই উদ্দামতা আর সকাল হলেই অন্যরকম। লাঞ্চ আওয়ারের একটু আগেই ও অফিস থেকে বেরিয়ে এল আজ। সোজা গেল ওই ফার্নিচারটার দোকানে। রহস্যের কিনারা করতে গেলে ওখানেই যেতে হবে।
চাচা—
হাঁ বোলিয়ে
কিছুদিন আগে আপনার দোকান থেকে একটা আয়না কিনেছিলাম মনে রয়েছে?
হাঁ ইয়াদ হ্যায়। কেয়া হুয়া?
ওই আয়না আপনি যেখান থেকে কিনেছিলেন সেখানকার ঠিকানাটা দিতে পারবেন?
শুনে বুড়ো মালিক ভুরু কুঁচকে তাকাল কিঁউ?
খুব দরকার ঠিকানাটা।
কেয়া জরুরত হামকো বোলিয়ে না? কুছ ডিফেক্ট নিকলা মালমে?
না না সেসব কিছু না অন্য কারণে এ্যাড্রেসটা দরকার ছিল।
নেহি মালুম। বলে লোকটা নিজের কাজে ব্যাস্ত হয়ে গেল। সুব্রত বুঝল লোকটা ইচ্ছে করেই এড়িয়ে যাচ্ছে। পকেট থেকে একটা একশোটাকার নোট বার করে লোকটার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, এই নিন চাচা একটু চা মিষ্টি খাবেন।
বুড়ো নোটটার দিকে তাকাল, তারপর নেহাত অনিচ্ছায় নোটটা হাতে নিয়ে পকেট ভরে বলল আপভি কেয়া জিদ করতে হ্যায় বাবু। ঠেহরিয়ে দেখতে হ্যায়। বলে টেবিলের সামনে রাখা ডায়রি খুলে পৃষ্ঠা ওল্টাতে থাকল। মিনিট পাঁচেক পৃষ্ঠা ওল্টানোর পর বলল হাঁ মিলা হ্যায়। নোট কর লিজিয়ে, বি কে মালহোত্রা, থারটি থ্রি বাই টু রিচি রোড।
ঠিকানাটা মনে মনে একবার আওড়ে নিয়ে পিছন ফিরল সুব্রত। একটা ফাঁকা ট্যাক্সি যাচ্ছে। ট্যাক্সিইই…
ড্রয়িংরুমে বসে রয়েছে সুব্রত। বি কে মালহোত্রার বাড়ি। বাড়িটা দেখলেই বোঝা যায় পুরনো দিনের। এই এলাকায় সব অভিজাতদের বাস। মেন গেট দিয়ে ঢুকে ফার্সট ফ্লোরে ওঠার সিড়িটা কাঠের। চকচকে পালিশ। ঘরের ফার্নিচার, ডেকরেশন দেখলে বোঝা যায় অনেক দিনের বাসিন্দাই শুধু নয় যথেষ্ট ধনী। চাকর দরজা খুলে ওকে ড্রয়িং রুমে বসিয়ে রেখে গিয়েছে মিনিট দশেক হয়ে গিয়েছে। এবার ভেতরের ঘর থেকে একজন মহিলা এলেন ধীর পদক্ষেপে। সুব্রত দেখল মহিলার চেহারা স্থুল। পরনে নীল রঙের হাউজকোট, ধপধপে সাদা চুল কাঁধ পর্যন্ত সুন্দর করে কাটা। মহিলা সুব্রতর মুখোমুখি চেয়ারে বসে বললেন আমি মিসেস মালহোত্রা। কী ব্যাপার বলুন?
আপনার সঙ্গে খুব জরুরি কিছু কথা ছিল। অনুগ্রহ করে যদি একটু শোনেন।
বলুন কী বলতে চান।
আসলে মানে ব্যাপার হল আমি কিছুদিন আগে…পুরো ঘটনাটাই বলল সুব্রত। শুধু লজ্জার খাতিরে নন্দিনীর পরিবর্তনতা ডিটেলে বলতে পারল না, বলল আমার স্ত্রীর আচরণে কিছু অদ্ভুত পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি যেটা আসলে স্বাভাবিক নয়। সামথিং আনন্যাচারাল। আয়নার গল্পটা বলতে বলতে সুব্রত খেয়াল করছিল মিসেস মালহোত্রার চোখ মুখের অভিব্যক্তি বদলে যাচ্ছে। বেশ আতঙ্কিত। উনি পুরো গল্পটা স্থির হয়ে শুনলেন, তারপর টেবিলের ওপর রাখা জলের জাগ থেকে কিছুটা জল খেয়ে বললেন, আপনি ওই আয়না বাড়িতে রাখবেন না। ফেলে দিন, নষ্ট করে দিন, কাউকে দিয়ে দিন কিন্তু ঘরে রাখবেন না।
কিন্তু কেন?
সে আমি বলতে পারব না কিন্তু রাখবেন না। আমার মন বলছে ওই আয়না ঠিক নয়।
কিন্তু ওই আয়না তো আপনারই ছিল তাই না? তাহলে বলতে কেন পারবেন না? কি কারণে বিক্রি করে দিয়েছিলেন আয়নাটা? প্লিজ ম্যাডাম আমার কাছে গোপন করবেন না দয়া করে বলুন।
মহিলা একটু চুপ থাকলেন তারপর যা কাহিনি শোনালেন শুনে গা হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেল সুব্রত। এই বাড়িরই গ্রাউন্ড ফ্লোরে ভাড়া থাকত একটি এ্যাংলো মেয়ে। রোজালিন্ড গর্ডন। একটা প্রাইভেট কোম্পনাইতে রিসেপশনে কাজ করত। নামেই চাকরি আসলে ওটা লোক দেখানো মেয়েটির আসল পেশা ছিল প্রসটিটিউশন। সেট মিসেস মালহোত্রা জানতে পেরেছিলেন অনেক পরে। কিন্তু মেয়েটিকে বাড়ি থেকে তোলা সহজ ছিল না। কারণ ওর অনেক প্রভাবশালী কাস্টমার ছিল। প্রতি রাতেই চলত নতুন নতুন পুরুষের সঙ্গে লীলাখেলা। মাস তিনেক আগে মেয়েটিকে হঠাৎই তার বিছানায় মৃত পাওয়া যায়। খুন। কিন্তু কে খুন করল তার কিনারা এখনও পুলিশ করে উঠতে পারেনি। নিচের ঘরটা পুলিশ সিল করে রেখেছিল বেশ কিছুকাল। এই কিছুদিন আগে সিল খুলে দেওয়ার পরেই মিসেস মালহোত্রা মেয়েটির ঘরে ঢোকেন এবং দেখেন ঘরে অনেক পুরনো আসবাব। মানে মেয়েটির শখ ছিল পুরনো ফার্নিচারের। ওর শোবার ঘরে একটি পুরনো দিনের পালঙ্ক আর পালংকের মুখোমুখি এই বিশাল আয়নাটি দেওয়ালে সেট করা ছিল। মেয়েটির রিলেটিভ বলতে কেউ ছিল না বলে কাউকে খবরও দেওয়া যায়নি। মিসেস মালহোত্রা তাই সব ফার্নিচার কম দামে বিক্রি করে দেন। হ্যাঁ ওই হুসেনস ফার্নিচারেই।
উঠে দাঁড়াল সুব্রত। মাথা টলছে। কোনওমতে বাইরে বেরিয়ে এল।
অফিস থেকে আজ তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গিয়েছিল ও শরীর খারাপ করছে এই অজুহাতে। তারপর আগে সোজা পাড়ার সেই ফারনিচারের দোকানে গিয়ে মিস্তিরি নিয়ে এসে আগে আয়নাটাকে খোলাল। বাড়ির সকলে অবাক। নন্দিনীর তীব্র আপত্তিও শুনল না ও। আয়না খুলিয়ে একেবারে দোকানদারকে দিয়ে তাদের দোকানে পাঠিয়ে দিল। বলল যা দাম দেবে দিও। না দিলে রেখে দিও। দোকানদারও বেশ অবাক। এই দুদিন আগে লাগিয়ে এখন আবার খোলানোর তাড়া!
আয়না বিদায় নেওয়ার পর নিশ্চিন্ত হল সুব্রত। আয়েস করে বিছানায় বসল। বিকেলে মিসেস মালহোত্রা ম্যাডামের কথাগুলো যতবার মনে পড়ছে, গা ছমছম করে উঠছে। নন্দিনী ঘরে ঢুকে আবার বেশ বিরক্ত হয়েই জিজ্ঞাসা করল আয়নাটা সরিয়ে দিলে কেন?
ওটা ভাল না।
কেন শুনি।
আমাদের অফিসে একজন বাস্তু বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। উনি বললেন ঘরে এতবড় আয়না রাখতে নেই, অকল্যান হয়। বেমালুম মিথ্যে বলে দিল সুব্রত।
বাব্বা তুমি আবার কবে এই সবে বিশ্বাস করতে শুরু করলে? কাল আমার বলে আর কথা বাড়াল না নন্দিনী। নিজের ক্রিম লোশন ইত্যাদি মাখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
আয়নাটা সরিয়ে ফেলায় যেমন নিশ্চিন্তি লাগছে তেমন মনটা একটু খারাপও লাগছে সুব্রতর। শখ করে কেনা এমন রাজকীয় আয়না…জিনিসটাও গেল টাকাও গেল আর তার থেকেও বেশি যা গেল তা নন্দিনীর আদর, শরীরের স্পর্শ। হ্যাঁ হয়ত সেই স্পর্শ মনের থেকে নয়, ঘোর লাগা…তবু… আজ থেকে আবার সেই নিরুত্তাপ জীবন…নানা কথা ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়ল সুব্রত। আর আজও ঘুম ভাঙল বুকের ওপর চাপ অনুভব করায়। ভারি কিছু একটা চেপে বসেছে বুকের ওপর। অস্বস্তি হতে চোখ মেলতেই কেঁপে উঠল ও। নীল রঙের ড্রিমলাইটে দেখল নন্দিনী! হ্যাঁ নন্দিনী আজও আবার সেই দুইদিকে পা ছড়িয়ে সুব্রতর বুকের ওপর চেপে বসেছে। নিরাবরণ,
খোলা চুল…আর চোখের মনিদুটো…সেই আয়নার নারীমুর্তিটির মতোই টকটকে লাল, জ্বলছে। আজ সেই চোখদুটোয় যেন তীব্র আগুন…সুব্রত ভয়ে চিৎকার করে উঠতে গেল, পারল না, নন্দিনীর মুখ এগিয়ে গেল সুব্রতর গলার কাছে।
সমাপ্ত