» » তৃতীয় পরিচ্ছেদ

বর্ণাকার

অবসন্ন দেহে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলো নূরী, খেয়াল নেই। চোখ মেলে তাকিয়ে আশ্চর্য হলো-বনহুরের বিছানা শূন্য; বিছানায় বনহুর নেই। নূরী চিন্তিত হলো, অসুস্থ অবস্থায় কোথায় গেল সে।

নূরী ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালো। মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করছে। মন্থর গতিতে বেরিয়ে এলো বাইরে। মুক্ত আকাশের তলায় এসে দাঁড়ালো। হঠাৎ দেখতে পেলো বনহুর একটি পাথরখণ্ডে বসে রহমানের সঙ্গে কি সব আলোচনা করছে।

নূরী তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। রহমানের সঙ্গে বনহুরের কথাবার্তা শেষ হয়ে গিয়েছিল, ফিরে তাকালো বনহুর নূরীর মুখের দিকে।

নূরী ব্যথা-কাতর মুখে বললো–হুর, একটি দিনও কি তোমার বিছানায় শুয়ে থাকতে নেই?

চলো। বনহুর উঠে দাঁড়ায়।

নূরী বনহুরের হাত ধরে বললো–চলো।

তারপর ওকে সঙ্গে করে ফিরে এলো বনহুরের বিশ্রামাগারে। ওকে যত্ন করে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বললো নূরী-এবার বলো তো, ডাক্তারের নিষেধ সত্ত্বেও কেন তুমি শয্যা ত্যাগ করেছিলে?

বনহুর নূরীর কথায় মৃদু হাসলো, তারপর বললো–নূরী তুমি বুঝবে না; আমার শুয়ে থাকলে চলবে কেন। তুমি তো ডাক্তার এনেই ক্ষান্ত-তারপর ওদিকের অবস্থা একবার ভেবে দেখেছ? ডাক্তার তো বাসায় ফিরে একেবারে মহা হুলস্থুল বাঁধিয়ে দিলেন। পুলিশে পুলিশে তাঁর গোটা বাড়ি ছেয়ে গেছে। পুলিশ মনে করেছে-দস্যু বনহুর বুঝি তার বাড়ি গিয়ে বসে আছে।

এতো খবর কি করে পেলে বনহুর?

রহমান ডাক্তারকে রাখতে গিয়ে সেই ভোর থেকে ওখানেই ছিল। এতোক্ষণে ডাক্তারের গাড়ি ফেরত দিয়ে তবে এলো।

বাপরে বাপ। রহমান তোমারই তো সহকারী।

তারপর গোটা দুটো দিন কেটে গেল। নূরী বনহুরকে কিছুতেই বিছানা থেকে উঠতে দিল না। সদা-সর্বদা বনহুরের পাশে বসে ওর সেবাযত্ন করত নূরী। নিজ হস্তে বনহুরের ক্ষত পরিষ্কার করে দিত। নিজ হস্তে দুধের বাটি তুলে ধরত ওর মুখে। ঔষধ খাওয়াত, মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়াত।

একদিন হঠাৎ বনহুরের ঘুম ভেংগে গেল, তাকিয়ে দেখতে পেল–তার শিয়রে বসে দেয়ালে ঠেস দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে নূরী। নূরীর একখানা হাত তখনও বনহুরের মাথায় রয়েছে। নূরী বনহুরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে ঠিক নেই।

বনহুর ওর হাতখানা ধীরে ধীরে সরিয়ে রেখে উঠে বসলো। নূরীর ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে তার ঠোঁটের কাছে একটু খানি হাসির রেখা ফুটে উঠে। করুণায় ভরে উঠলো বনহুরের মন। নূরীর গায়ে হাত রেখে ডাকলো–নূরী।

চমকে সোজা হয়ে বসলো নূরী–ঘুমিয়ে পড়েছিলুম।

নূরী!

বল?

এভাবে তুমি নিজকে কষ্ট দিচ্ছো কেন?

মৃদু হাসি নূরীর–কে বললো আমার কষ্ট হচ্ছে? হুর, তোমার সেবা করাই যে আমার জীবনের ব্রত!

বনহুর প্রদীপের ক্ষীণালোকে নূরীর মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। সত্যিই নূরী তাকে কত ভালবাসে, কিন্তু তার এ ভালবাসার প্রতিদানে কি দিয়েছে সে নূরীকে! বনহুরের চোখ দুটো আর্দ্র হয়ে উঠে। দৃষ্টি নত করে নেয় বনহুর।

নূরী স্বাভাবিক গলায় বলে–হুর, কি হলো তোমার?

কিছু না নূরী।

একটা কিছু হয়েছে যা তুমি আমার কাছে গোপন করে যাচ্ছো?

বনহুর নিশ্চুপ।

নূরী বনহুরের পাশে ঘনিষ্ঠ হয়ে বসে–হুর, আজও আমি তোমাকে চিনতে পারলুম না। কোথায় যেন কি হয়েছে তোমার!

একটি কথা তোমাকে বলবো যা তোমাকে ভীষণ আঘাত দেবে।

তোমার জন্য আমি সব আঘাত হাসিমুখে গ্রহণ করবো। তুমি বল?

আজ নয়, আর একদিন শুনো।

না, আজই তোমাকে বলতে হবে হুর–বল, বল তুমি?

নূরী, তুমি যা চাও, জীবনে হয়তো আমার কাছে তা পাবে না।

হুর!

হ্যাঁ নূরী, তোমার এ পবিত্র ভালবাসার বিনিময়ে আমি তোমায় কিছু দিতে পারিনি।

প্রতিদান তো আমি চাই না হুর, তোমাকে পেয়েছি এই আমার যথেষ্ট।

বনহুর নূরীর দীপ্ত উজ্জ্বল মুখের দিকে তাকিয়ে স্তম্ভিত হয়ে যায়। আর কিছু বলার মত খুঁজে পায় না বা সাহস হয় না তার। নূরীর অপরিসীম ভালবাসাকে বনহুর প্রত্যাখ্যান করে চলেছে। তবু নূরীর মনে নেই এতোটুকু বিরক্তির আভাস বা সন্দেহের ছোঁয়াচ। বনহুর একটা দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করল।

সেই রাত্রি ভোর হবার সঙ্গে সঙ্গে যখন জানতে পারলো মনিরা পুলিশ সুপার আহম্মদ এবং ইন্সপেক্টর সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী নিয়ে আজ রাতে দস্যু বনহুরকে আক্রমণ করেছিল এবং সে আহত অবস্থায় পালিয়ে গেছে। আরও শুনলো মনিরা, তাদের বাগানের পাশে দস্যু বনহুরের রক্ত তখনও জমাট বেধে রয়েছে।

মনিরার অবস্থা তখন অবর্ণনীয়। তার মাথায় কে যেন বজ্রাঘাত করল।

চৌধুরী সাহেব যদিও অতি কষ্টে নিজকে সংযত করে রাখলেন, তবু তাঁর মনেও দারুণ ব্যথা অনুভব করলেন। মরিয়ম বেগম তো গোপনে অশ্রুবিসর্জন করে চললেন। নামাজের কক্ষে প্রবেশ করে কোরআন শরীফ খুলে বসলেন। চোর ডাকু দস্যু যাই হোক, তবু সে তাদের সন্তান। মায়ের প্রাণ আকুল হয়ে উঠল। খোদার দরগায় মোনাজাত করতে লাগলেন হে খোদা, আমার মনিরকে তুমি মঙ্গলমত রেখ!

মনিরা চোখের পানিতে বুক ভাসিয়ে চলল। না জানি ওর কোথায় গুলী লেগেছে? না জানি কেমন আছে। সে বেঁচে আছে কিনা, তাই বা কে জানে! অস্থির হৃদয় নিয়ে ছটফট করতে লাগলো। সে। বনহুরের এ দুর্ঘটনার জন্য সে–ই যেন দায়ী। কেন সে ওকে আসতে অনুরোধ জানিয়েছিল। তার সঙ্গে দেখা করবে বলেই তো আসছিল বনহুর। বিছানায় লুটিয়ে পড়ে কাঁদে মনিরা। সে কান্নার যেন শেষ নেই। নিরুপায় মনিরা বনহুরের কোন সন্ধান জানে না–কোথায় থাকে সে। শহরের পূর্বের বাড়িখানা এখন আর বনহুরের নেই। পুলিশ সে বাড়িখানা দখল করে নিয়েছিল, এখন অবশ্য তার মামু চৌধুরী সাহেবের হেফাজতেই রয়েছে। তবে শহরের অন্য কোথাও যে বনহুরের কোন গোপন বাড়ি আছে, জানে মনিরা। কিন্তু কোথায় তা জানে না সে। বনহুরের এখনও দুটো নতুন মোটর গাড়ি রয়েছে। সে গাড়িগুলো শহরের সেই গোপন বাড়িখানাতেই থাকে। মনিরা অনেকদিন এ বাড়িখানার ঠিকানা চেয়েও জানতে পারেনি বনহুরের কাছে। নইলে সে এতোক্ষণ সেই বাড়িখানাতে গিয়ে হাজির হত।

একদিন দু’দিন করে যখন প্রায় সপ্তাহ কেটে গেল, তখন মনিরার অবস্থা মর্মান্তিক হয়ে পড়লো। নাওয়া খাওয়া নেই। পাগলিনীর মত হয়ে পড়লো মনিরা। চৌধুরী সাহেব এবং মরিয়ম বেগম চিন্তিত হলেন। যদিও তাঁদের মনেও দারুণ অশান্তি ছিলো, তবু মনিরার জন্য আরও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন।

মনিরা দিন দিন অসুস্থ হয়ে পড়লো। ওর মনে সদা ভয়–আর সে বেঁচে নেই। বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই আসতো কিংবা কোনো সংকেত জানিয়ে দিত–আমি ভাল আছি।

ক্রমে হতাশ হয়ে পড়লো মনিরা। সেই দিনের ফুলের মালাটা ছবির গলায় শুকিয়ে গেছে। ছবির দিকে তাকিয়ে মনিরার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে ফোঁটা ফোঁটা অশ্রু।

মনিরা ভাবে–শিশুকালে তার জীবন থেকে যে হারিয়ে গিয়েছিল, আবার কেনই বা সে ফিরে এসেছিল তাকে কি শুধু কাঁদাবার জন্যই এসেছিল ও!

এ কথা মিথ্যে নয়, যে নারী বনহুরকে ভালবেসেছে তাকেই কাঁদতে হয়েছে। কেউ ওকে ধরে রাখতে পারেনি কোন দিন। বনহুরকে কেউ মায়ার বন্ধনে বেঁধে রাখতে সক্ষম হয়নি। শুধু মনিরাই নয়, দস্যু বনহুরকে ভালবেসে অনেককেই কাঁদতে হয়েছে। কিন্তু বনহুরের মনে আজও কেউ রেখাপাত করতে পারেনি একমাত্র মনিরা ছাড়া।

তবু মনিরাকেও মাঝে মাঝে বিস্মৃত হয়ে যায় বনহুর। ভুলে যায় সে গোটা দুনিয়াকে, নিজের মধ্যে যখন চাড়া দিয়ে উঠে তার উন্মত্ত দস্যুভাব।

মনিরা যতই বনহুরের কথা চিন্তা করে চলে ততই সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। জ্বর দেখা দেয় ওর শরীরে।

মরিয়ম বেগম স্বামীকে ডাক্তার ডাকতে বলেন। চৌধুরী সাহেব তাঁর বাল্যবন্ধু ডাক্তার সেনকে কল করলেন।

ডাক্তার সেন এলেন এবং মনিরাকে পরীক্ষা করে বললেন, অসুখ এর শরীরে নয়, মনে। কাজেই এর জ্বরটা স্বাভাবিক নয়। তবু আমি ঔষধপত্র দিচ্ছি। তাড়াতাড়ি প্রেসক্রিপশন করে উঠতে যান ডাক্তার সেন।

চৌধুরী সাহেব ডাক্তার সেনের তাড়াহুড়ো দেখে বলেন, এতো ব্যস্ত হচ্ছো কেন জয়ন্ত? অনেকদিন পর এসেছ, তবু স্বেচ্ছায় নয়, ডেকে এনেছি; অথচ চা না খেয়ে যেতে চাও?

না ভাই, আজ আমি বিলম্ব করতে পারছিনে, দেখছো তো সন্ধ্যা হয়ে এলো। আর একদিন সকাল সকাল আসবো।

হেসে বললেন চৌধুরী সাহেব, রাতকে এতো ভয় কেন ডাক্তার?

ডাক্তার সেন ভয়াতুর কণ্ঠে বলে উঠলেন–রাতকে আমি খুব ভয় করি।

তার মানে?

সেদিন যা এক বিভ্রাটে পড়েছিলুম।

কি হয়েছিল?

সাংঘাতিক এক কাণ্ড! শোন তবে বলছি–কিছুদিন আগে এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটে গেছে। রাতে খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়েছি, হঠাৎ তিনটে কিংবা সাড়ে তিনটে হবে একটি যুবক গাড়ি নিয়ে হাজির। সাংঘাতিক এক্সিডেন্ট; এক্ষুণি যেতে হবে। জানোই তো, আমি রাতে কোথাও যাইনে। তবু যুবক নাছোড় বান্দা। বাধ্য হয়েই গেলুম। তারপর কি জানো, সে এক বিস্ময়কর ঘটনা।

চৌধুরী সাহেব বললেন–তোমার কাহিনীটা দেখছি বেশ রস পদ ধরনের। যাক চা খেতে খেতেই শোনা যাবে। চলো হল ঘরে যাই। তারপর বৃদ্ধ চাকর নকিবকে ডাকতে শুরু করেন তিনি–নকিব, নকিব…..

একটা কম্বল মুড়ি দিয়ে নকিব এসে দাঁড়ালো।

চৌধুরী সাহেব ওর দিকে তাকিয়ে প্রথম আশ্চর্য কণ্ঠে বললেন–সেকি, এই গরমের দিনে কম্বল কেন গায়ে দিয়েছিস?

কাঁপা গলায় বললো নকিব–জ্বর হয়েছে।

তবে তুই এলি কেন?

আপনি যে ডাকলেন!

শোন, বাবুর্চিকে বল হলঘরে দুকাপ চা আর নাস্তা পাঠিয়ে দিতে। আর শোন এই ঔষধটা দেখছিস-এটা এক্ষুণি মনিরাকে এক দাগ খাইয়ে দে।

আচ্ছা।

চৌধুরী সাহেব আর ডাক্তার সেন মনিরার কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান।

বৃদ্ধ নকিব এবার টেবিল থেকে ঔষধের শিশি আর ছোট্ট গেলাসটা হাতে তুলে নিয়ে মনিরার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।

মনিরা খেঁকিয়ে উঠে–ভাগ হতভাগা, ঔষধ আমি খাব না।

নকিব দাঁড়ি নেড়ে বললো–খেতেই হবে তোমাকে।

আবার কথা বলছিস…

নকিব তবু গেলাসে ঔষধ ঢাললো।

মনিরা ওর হাত থেকে ঔষধ নিয়ে ঢেলে ফেললো পাশের ফুলদানিতে; তারপর বললো– আমি বলছি আমার কোন অসুখ হয়নি, তবু ঔষধ খেতে হবে।

নকিব এক নজরে তাকিয়ে ছিল মনিরার মুখের দিকে।

মনিরা বলে উঠে–অমন হা করে আমার মুখে কি দেখছিস শুনি?

তোমায় দেখছি আপামনি…

বের হয়ে যা বলছি …

যাচ্ছি যাচ্ছি আপামনি, কিন্তু …

আর কিন্তু নয়, শীগগির বের হয়ে যা।

নকিব বেরিয়ে যায়, যাবার আগে আর একবার মনিরার দিকে ফিরে তাকায়।

নকিব বেরিয়ে যেতেই, মনিরা শয্যা ত্যাগ করে চুপি চুপি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে, তারপর সন্ধ্যার আধো অন্ধকারে গা ঢাকা দিয়ে দাঁড়াল দরজার আড়ালে।

ডাক্তার সেন বলছেন–গাড়িখানা আমাকে নিয়ে শহরের এক গলিপথে গিয়ে পড়লো। ঠিক সেই মুহূর্তে পিঠে একটা ঠান্ডা কিছু অনুভব করলুম; ফিরে দেখি, যুবকটা আমার পিঠে রিভলবার চেপে ধরেছে।

চৌধুরী সাহেব ভয়ার্ত কণ্ঠে প্রতিধ্বনি করে উঠেন বল কি?

এমন সময় নকিব চায়ের ট্রে হস্তে মনিরার পিছনে এসে দাঁড়ায়-দরজা ছাড়ুন আপামনি, চা নাস্তা নিয়ে যাব।

চমকে সরে দাঁড়ায় মনিরা, ঠোঁটের উপর আংগুল চাপা দিয়ে বলে–চুপ! খবরদার, আমার কথা বলবিনে।

না গো না, বলবো না। কিন্তু এখানে লুকিয়ে কি শুনছো?

সে তুই বুঝবিনে, তুই যা।

নকিব একবার আড়নয়নে মনিরার দিকে তাকিয়ে কক্ষে প্রবেশ করে।

ডাক্তার সেন বলে চলেছেন–আমি বিবর্ণ হয়ে গেলাম। তখন আমার মনের অবস্থা তোমাকে বুঝিয়ে বলতে পারব না। ধীরে ধীরে হাত তুলে বসলাম। যুবক এবার আমার চোখে একটা কালো রুমাল দিয়ে পট্টি বেঁধে দিল। আরও কিছুক্ষণ গাড়ি চলার পর আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে নেওয়া হল। আমি ভয়ানক ঘাবড়ে গেছি দেখে যুবক আমাকে অভয় দিচ্ছিলো, ভয় নেই, আমি আপনার কোন ক্ষতি করব না।

রুদ্ধ নিঃশ্বাসে প্রশ্ন করলেন চৌধুরী সাহেব–তারপর?

তারপর আমাকে একটি ঘোড়ায় চাপিয়ে নেওয়া হলো। যখন আমার চোখের বাঁধন খুলে দেওয়া হলো তখন দেখলুম, সুন্দর সজ্জিত একটি কক্ষমধ্যে দাঁড়িয়ে আছি। বাড়িটা যে কোথায়, শহরের কোন প্রান্তে, কিছুতেই বুঝতে পারলুম না। সম্মুখে তাকিয়ে আরও আশ্চর্য হলুম–আমার সামনে শয্যায় শুয়ে এক যুবক। অদ্ভুত সুন্দর তার চেহারা। আমি তাকে ইতোপূর্বে কোথাও দেখেছি বলে মনে হলো না….

নকিব চায়ের ট্রে হাতে দাঁড়িয়েছিল এতোক্ষণ এক পাশে। চৌধুরী সাহেব বলে উঠলেন– হা করে দাঁড়িয়ে আছিস কেন। চা নাস্তা এনেছিস?

হ্যাঁ! রাখব?

রাখবি নাতো কি দাঁড়িয়ে থাকবি?

নকিব চায়ের কাপ আর নাস্তার প্লেট টেবিলে সাজিয়ে রাখছিল। চৌধুরী সাহেব বলে উঠলেন–কম্বলটা খুলবিনে আজ?

নকিব বলে উঠলো–বড্ড শীত করছে।

তবে ডাক্তারকে হাতটা দেখানা। ঔষধ পাঠিয়ে দেবে।

না, না ওসব জ্বর-ঔষধ লাগবে না সাহেব। একটু তেঁতুল গোলা পানি খেলেই সেরে যাবে।

যা তবে এখান থেকে।

বেরিয়ে যায় নকিব।

চৌধুরী সাহেব নিজে একটি কাপ হাত উঠিয়ে নিয়ে বললেন– নাও আরম্ভ কর। খেতে খেতেই গল্প শোনা যাবে।

ডাক্তার সেনও চায়ের কাপ তুলে নেন।

চৌধুরী সাহেব বলে উঠলেন–সেকি, ওগুলো খাবে না?

ভাই, বিকেলে পেট পুরে নাস্তা করেছি। চা টুকু খাব।

আচ্ছা, তাই খাও।

ডাক্তার সেন চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বললেন—

হ্যাঁ, কি বলছিলুম যেন?

চৌধুরী সাহেব বললেন–ইতোপূর্বে তাকে কোথাও দেখনি বলে তোমার মনে হলো….

হ্যাঁ, তাকে কোথাও দেখিনি। যে তরুণ আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিল সে বললো– এই যে রোগী-আপনি দেখুন। আমি দেখলুম, যুবকের বাম হস্তে আঘাত লেগেছে এবং আঘাতটা স্বাভাবিক নয়–গুলীর আঘাত।

চৌধুরী সাহেব ক্রমেই উত্তেজিত হয়ে উঠছেন; তিনি ডাক্তার সেনের কথায় বেশ বুঝতে পারলেন, যার কথা ডাক্তার সেন বলে চলেছেন, সে–ই তার পুত্র মনির এবং পুলিশের গুলীতে সে ই আহত হয়েছে। তিনি ব্যাকুল কণ্ঠে বলে উঠলেন–তারপর কেমন দেখলে তাকে?

দেখলুম প্রচুর রক্তপাত হয়েছে তার শরীর থেকে …

মনিরা নিজের অজ্ঞাতে কখন যে কক্ষমধ্যে প্রবেশ করেছে সে নিজেই জানে না, ব্যাকুল কণ্ঠে। জিজ্ঞাসা করে থামলেন কেন ডাক্তার সাহেব বলুন–বলুন…

চৌধুরী সাহেব বিস্ময়ভরা চোখে তাকান ভগিনীর মুখে– তুমি আবার এখানে এলে কেন মা?

ডাক্তার সেনও চশমার ফাঁকে অবাক দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন, মেয়েটি অসুস্থ শরীর নিয়ে কখন আবার এলো। তবু তিনি বলে চললেন.. আঘাতটা তার সাংঘাতিক হয়েছিল। কেউ তাকে গুলীবিদ্ধ করে হত্যা করতে চেয়েছিল….

মনিরা ব্যাকুল আগ্রহে বলে উঠে– তারপর ডাক্তার সাহেব? তারপর? সে ভালো আছে তো?

ডাক্তার সেন বলতে বলতে থেমে পড়লেন। তিনি বিস্ময়ভরা গলায় বলেন চৌধুরী। সাহেব, আপনার ভগিনীকে বড় উত্তেজিত মনে হচ্ছে, ব্যাপার কি?

পরে তোমাকে সব বলবো। তুমি বলে যাও জয়ন্ত তাকে কেমন দেখলে?

ডাক্তার সেন চৌধুরী সাহেবের কন্ঠের উদ্বিগ্নতায় মনে মনে আশ্চর্য হলেন। তবুও তিনি বলতে শুরু করলেন–রোগী পরীক্ষা করে দেখলুম তার জন্য প্রচুর রক্তের প্রয়োজন। যে তরুণ আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিল সেই রক্ত দিল। প্রচুর রক্ত সে দিল–আশ্চর্য, তরুণটি এতোটুকু ঘাবড়ালো না। তারপর আমি সুন্দর করে ব্যান্ডেজ বেঁধে দিলুম।

চৌধুরী সাহেব বলে উঠলেন–সে তো আরোগ্য লাভ করবে?

এবার ডাক্তার সেনের মুখমণ্ডল কঠিন হয়ে উঠে, বলেন তিনি–চৌধুরী তুমি তার আসল পরিচয় জানো না, তাই অতো আগ্রহান্বিত হচ্ছে। আগে যদি জানতুম কে সে, তাহলে–তাহলে আমার কাছে যে মারাত্মক ইনজেকশান ছিল তারই একটি এম্পল–বাস, তাহলেই একেবারে ঠাণ্ডা হয়ে যেতো…

হঠাৎ মনিরা আর্তকণ্ঠে একটা শব্দ করে উঠে–উঃ।

ঢোক গিলে বলেন চৌধুরী সাহেব–কেন, কেন তুমি তাকে হত্যা করবে ডাক্তার। সে তোমার কাছে কি অপরাধ করেছিল?

জানো না চৌধুরী কে কে সে, যাকে অহরহ পুলিশ বাহিনী অনুসন্ধান করে চলেছে। যে দস্যুর ভয়ে আজ গোটা দেশবাসী প্রকম্পমান, যে দস্যু হাঙ্গেরিয়া কারাগার থেকে পালিয়েছে– ঐ যুবক সেই দস্যু বনহুর।

চৌধুরী সাহেব এটা পূর্বেই অনুমান করেছিলেন। তিনি ডাক্তার সেনের কথায় এতোটুকু চমকান না। স্থির কণ্ঠে বললেন–ডাক্তার বিনা দোষে একটি সুন্দর জীবন নষ্ট করতে তোমার হাত কাঁপতো না।

হেসে উঠেন ডাক্তার সেন–যে দস্যুকে জীবিত কিংবা মৃত অবস্থায় পুলিশের নিকটে পৌঁছাতে পারলে লাখ টাকা পুরস্কার পাওয়া যাবে, তাকে হত্যা করতে হাত কাঁপবে–কি যে বল?

ডাক্তার, লাখ টাকা লাখ টাকা আমি তোমায় দেব, তুমি আমাকে ঐরকম একটি সন্তান এনে দিতে পার? এক লাখ দু’লাখ যা চাও তাই দেব, তবু পারবে–পারবে অমনি একটি জীবন আমাকে এনে দিতে?

চৌধুরী তুমি দস্যু বনহুরকে চেনো না, তাই ওসব বলছো।

ডাক্তার ওকে আমি যেমন চিনি তেমনি আর কেউ চেনে না। দস্যু বনহুর আমার সন্তান….

চৌধুরী! ডাক্তার সেনের দু’চোখ কপালে উঠে।

চৌধুরী সাহেব বলেন—হ্যাঁ, হ্যাঁ ডাক্তার, তোমার কাছে আমার যে সন্তানের গল্প করেছিলুম, ঐ আমার হারিয়ে যাওয়া রত্ন।

সত্যি বলছো?

হ্যাঁ, সত্যি বলছি।

ডাক্তার সেন অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন চৌধুরী সাহেবের মুখের দিকে।

নকিব তখন টেবিল থেকে চায়ের কাপগুলো উঠিয়ে নিচ্ছিলো।

ডাক্তার সেন চৌধুরী বাড়ি থেকে বিদায় গ্রহণ করে বাসায় না ফিরে সোজা চললেন পুলিশ অফিসে। দস্যু বনহুর চৌধুরী পুত্র–এতোবড় একটা কথা তিনি কিছুতেই হজম করতে পারছিলেন না! বাল্যবন্ধু হয়েও ডাক্তার সেন চললেন তাঁর ক্ষতিসাধন উদ্দেশ্যে। ভাবলেন, এই কথাটা পুলিশকে জানিয়ে কিছুটা বাহাদুরী নেবেন।

ডাক্তার সেনকে হন্তদন্ত হয়ে পুলিশ অফিসে প্রবেশ করতে দেখে এগিয়ে আসেন মি. হারুন ব্যাপার কি ডাক্তার সেন?

ডাক্তার সেন চাপা কণ্ঠে বলেন–একটা গোপন কথা আছে।

কি কথা, দস্যু বনহুর আবার আপনার ল্যাবরেটরীতে এসে ছিল নাকি?

এমন সময় ডাক্তার সেনের ড্রাইভার এসে বলে–স্যার আপনার সিগারেট কেসটা…

ডাক্তার সেন পকেট হাতড়ে বলেন– তাইতো দাও।

ড্রাইভার বেরিয়ে যায়। যাবার সময় তার মুখে মৃদু হাসির রেখা ফুটে উঠে।

ডাক্তার সেন সিগারেট কেসটা পকেটে রেখে বলেন–দস্যু বনহুর আমার ল্যাবরেটরীতে আসেনি। কিন্তু তার চেয়েও অত্যধিক বিস্ময়কর ঘটনা।

বলেন কি? দস্যু বনহুরের আবির্ভাবের চেয়েও বিষ্ময়কর ঘটনা?

হ্যাঁ। চলুন কোন গোপন স্থানে গিয়ে বসি। কথাটা যাতে কেউ শুনতে না পায়।

উঠে দাঁড়ান মি. হারুন–চলুন।

মি. হারুন ও ডাক্তার সেন পাশের কক্ষে গিয়ে মুখোমুখি বসলেন। ডাক্তার সেন কক্ষের চারিদিকে তাকিয়ে বললেন–দেখবেন কথাটা আমি বলছি-এ কথা যেন কেউ জানতে না পারে বা প্রকাশ না পায়।

না না, তা পাবে না, আপনি নিঃসন্দেহে বলতে পারেন।

কারণ সে আমার বাল্যবন্ধু। হাজার হলেও আমি প্রকাশ্যে তার অন্যায় করতে পারিনে। সে তাহলে মনে ভীষণ ব্যথা পাবে।

আপনি এ বিষয়ে নিশ্চিন্ত থাকুন ডক্টর সেন। আপনার বিষয়ে কোন কথাই প্রকাশ পাবে না।

সত্যি ইন্সপেক্টর আমি ভাবতেও পারিনি এটা সম্ভব। এ যে একেবারে কল্পনাতীত।

বলুন না কি বলতে চান? এবার মি. হারুনের কন্ঠে বিরক্তির ছাপ।

চৌধুরী সাহেবকে চেনেন তো?

হ্যাঁ, তাঁকে না চেনে এমন জন আছে বলুন?

চৌধুরী সাহেব আমার বাল্যবন্ধু ….

একথা আপনি পূর্বেই বলেছেন।

আমি তাকে অত্যন্ত ভালবাসি এবং সমীহ করি তাই..

দেখুন যা বলতে এসেছেন তাই বলুন ডক্টর সেন। সময় আমাদের অতি অল্প কিনা!

হ্যাঁ, সেই কথাই তো বলবো কিন্তু দেখবেন আমিই যে কথাটা বলেছি একথা যেন চৌধুরী সাহেব জানতে না পারে।

পারবে না, পারবে না বলুন।

দস্যু বনহুর চৌধুরী সাহেবের সন্তান। কথাটা বলে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন মি. হারুনের মুখের দিকে।

কিন্তু মি. হারুনের মুখোভাবে এতোটুকু পরিবর্তন দেখা গেল না। কারণ একথা নতুন নয়। পুলিশ মহলে সবাই একথা জানেন। দস্যু বনহুর যে চৌধুরী সাহেবের একমাত্র হারিয়ে যাওয়া সন্তান মনির–একথা আজ নতুন শোনেন নি। কাজেই তিনি মৃদু হেসে বললেন–ডক্টর সেন, আপনি যে এতো কষ্ট করে এই কথা জানাতে এসেছেন এজন্য আমি দুঃখিত। কারণ একথা আমরা পূর্ব হতেই জানি।

বিস্ময়ভরা গলায় বলে উঠেন ডাক্তার সেন–জানেন! দস্যু বনহুর চৌধুরী পুত্র–এ কথা আপনারা জানেন?

হ্যাঁ ডক্টর সেন শহরবাসিগণ না জানলেও পুলিশ মহল একথা জানে।

আপনারা জেনেও চৌধুরীকে কিছু বলছেন না কেন?

পুত্রের অপরাধে পিতা অপরাধী নয় ডাক্তার সেন। আপনার পুত্র যদি খুনী হয় তার জন্য আপনাকে আমরা ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলাতে পারিনে। উপরন্তু সে এখন তার বাড়ির লোক নয়। আপনি আসতে পারেন।

ডাক্তার সেনের মুখমণ্ডল মলিন বিষণ্ণ হয়ে পড়লো। মনে মনে লজ্জিতও হলেন তিনি। ভেবেছিলেন, মস্ত একটা বাহাদুরী পাবেন কিন্তু উল্টো ফল ফললো। উঠে দাঁড়ালেন ডাক্তার সেন… আচ্ছা, চলি তা হলে।

আচ্ছা আসুন। মি. হারুনও উঠে দাঁড়ালেন–গুড নাইট।

ডাক্তার সেন চলতে চলতে বলেন–গুড নাইট।

ডাক্তার সেন গাড়ির নিকটে পৌঁছতেই ড্রাইভার গাড়ির দরজা খুলে ধরে। ডাক্তার সেন পিছন আসনে উঠে বসে বলেন–আমার ল্যাবরেটরীতে চললো।

আচ্ছা। ড্রাইভার তার আসনে উঠে বসে ষ্টার্ট দেয়।

গাড়ি ছুটে চলেছে। ডাক্তার সেনের মনে একটা গভীর চিন্তাধারা বয়ে যাচ্ছিলো। তিনি অন্যমনস্কভাবে গাড়িতে ঠেস দিয়ে বসেছিলেন।

হঠাৎ ব্রেক কষার শব্দে সম্বিত ফিরে পান ডাক্তার সেন। একি! এ যে এক অন্ধকার গলিপথ।

ডাক্তার সেন বলেন–ড্রাইভার এ কোথায় এসে পড়েছ?

ততক্ষণে ড্রাইভার নেমে এসেছে গাড়ির পাশে। অন্ধকারে চক চক করছে তার হস্তে কালোমত একটা কি যেন। যদিও জিনিসটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিলো না, তবু ডাক্তার সেন বুঝতে পারলেন সেটা কি। ভয়ে বিবর্ণ হয়ে উঠে তার মুখমণ্ডল। ভয়ার্ত কণ্ঠে বলেন–ড্রাইভার, তোমার মতলব?

চাপা কণ্ঠে বলে উঠে ড্রাইভার–নেমে আসুন।

ডাক্তার সেন চমকে উঠলেন, এ তো তাঁর ড্রাইভারের গলার আওয়াজ নয়, তবে কে–কে এ লোক তাঁর ড্রাইভারের বেশে তাঁর সঙ্গে ছলনা করছে! রাগত কণ্ঠে বললেন–কে তুমি?

অন্ধকারে একটা হাসির শব্দ শোনা যায়–আমি কে, জানতে চান?

হ্যাঁ, বল কে তুমি?

যার কথা এই মাত্র পুলিশ অফিসে বলে এলেন–আপনার বন্ধু-সন্তান।

দস্যু বনহুর?

হ্যাঁ ডাক্তার সেন, সেদিন আপনি যে ভুল করেছেন তার জন্যই প্রস্তুত হয়ে এসেছি, যদি আমার পরিচয় সেদিন জানতেন তবে একটি ইনজেকশান– তা হলেই বাস আমাকে আপনি ঠান্ডা করে দিতেন না?

এসব তুমি কি করে জানলে?

আপনার পাশেই তখন ছিলুম আমি, যখন আপনি চৌধুরী সাহেবের নিকট কথাবার্তা বলছিলেন–

বল কি? কই কোথাও তো তোমাকে দেখলুম না?

নকিব! নকিবকে দেখেছিলেন?

তুমি–তুমিই নকিবের বেশে…

হ্যাঁ ডাক্তার সেন। যাক যা বলার জন্য এখানে এসেছি, বলছি শুনুন।

ঢোক গিলে বলেন ডাক্তার সেন–বল?

আমার হাতের ক্ষত, এখনও সম্পূর্ণ শুকিয়ে যায়নি, এখন কি করতে হবে দেখবেন। কিন্তু মনে রাখবেন, কোনো রকম চালাকি করতে গেলে মরবেন। চলুন আপনার ল্যাবরেটরীতে।

গাড়ি যখন ডাক্তার সেনের ল্যাবরেটরীর সম্মুখে গিয়ে পৌঁছল, তখন রাত প্রায় একটা বেজে গেছে। কারণ, রাত বাড়াবার জন্যই বনহুর রাস্তার অলিগলি ঘুরেফিরে বিলম্ব করে তবেই এসেছে।

ল্যাবরেটরীতে প্রবেশ করে ডাক্তার সেন তাঁর ঔষধের বাক্স খুললেন। তারপর বনহুরকে একটা সোফায় বসতে বলে চারিদিকে তাকালেন, মনোভাব–হঠাৎ যদি এই সময় কেউ এসে পড়তো তাহলে বনহুরকে হাতেনাতে ধরে লাখ টাকা পুরস্কার পেতেন।

বনহুর ডাক্তার সেনের মনোভাব বুঝতে পেরে হেসে বলে ডাক্তার সেন, আপনি ডাক্তার, আপনার কর্তব্য রোগীর চিকিৎসা করে তাকে আরোগ্য করে তোলা। আপনি তার জন্য উপযুক্ত পারিশ্রমিক পাবেন। কিন্তু কোন রকম চালাকি করতে গেলে…

না না, আমি দেখছি। ডাক্তার সেন বনহুরের হাতখানা তুলে নিয়ে পট্টি খুলতে থাকেন। ক্ষত পরীক্ষা করে বলেন– এই তো সেরে গেছে, আর সামান্য ক’দিন–তাহলেই সম্পূর্ণ সেরে যাবে। মনোভাব গোপন করে ঔষধ লাগিয়ে পুনরায় ব্যান্ডেজ বেঁধে দেন।

বনহুর প্যান্টের পকেট থেকে একশত টাকার দু’খানা নোট বের করে টেবিলে রাখে, তারপর রিভলবার উদ্যত করে পিছু হটে বেরিয়ে যায়।

ডাক্তার সেন হতভম্বের মত তাকিয়ে থাকেন। দস্যু বনহুর দৃষ্টির অন্তরালে অদৃশ্য হয়ে যায়।