অষ্টম অধ্যায়
একাডেমিতে শিক্ষানবিশকাল
অক্টোবর ১৯৬৭-সেপ্টেম্বর ১৯৬৮

১৯৬৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসের কোনো এক সময় আমি সিভিল সার্ভিসে নিয়োগপত্র পাই। পত্রটি স্বাক্ষর করেন ১৯৫৪ ব্যাচের পূর্ব পাকিস্তানি সিএসপি কর্মকর্তা এম মাহবুবুজ্জামান। এ চিঠিতে আমাদের সিভিল সার্ভিস একাডেমিতে কী ধরনের কাপড়চোপড় নিয়ে যেতে হবে, সে সম্পর্কে একটি তালিকা দেওয়া হয়। এই তালিকায় ঘোড়ায় চড়ার জন্য প্যান্ট এবং জুতা থেকে শুরু করে টেনিস-র্যাকেট, টেনিসের ড্রেস, স্যুট, ডিনার জ্যাকেট ইত্যাদি অনেক কিছু অন্তর্ভুক্ত ছিল। আমাদের জানানো হয়, একাডেমিতে যোগ দেওয়ার পর সরকার প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীকে ১ হাজার ৫০০ টাকা করে বিশেষ অনুদান দেবে। কিন্তু চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগেই আমাকে অনেক কিছু কিনতে হবে। আমার হাতে তখন টাকা নেই। আমার বড় চাচাতো ভাই মেজর (অব.) শওকত আলী খাঁন আমাকে এক হাজার টাকা উপহার দেন। আনুদা ৫০০ টাকা এবং শহীদদা ৫০০ টাকা উপহার দেন। এই দুই হাজার টাকা দিয়ে আমি কেনাকাটা করে লাহোর যাওয়ার প্রস্তুতি নিই।

১৯৬৭ সালের সিএসপিপিএফএস কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ

এই ব্যাচে মোট প্রশিক্ষণার্থীর সংখ্যা ছিল ৩৫ জন। তার মধ্যে ৩৪ জন ১৫ অক্টোবর ১৯৬৭ সালে লাহোরে অবস্থিত সিভিল সার্ভিস একাডেমিতে যোগ দেন। পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন কর্মকর্তা বিদেশে ছিলেন এবং মাস তিনেক পরে তিনি যোগদান করেন। এই কর্মকর্তাদের পরিচয় নিচে লিপিবদ্ধ করা হলো—

  1. ব্যাচে প্রথম স্থান অধিকার করেন শাহেদ সাদুল্লাহ। তাঁর পিতা এ এম সাদুল্লাহ আইপিএস কর্মকর্তা ছিলেন এবং আমরা যখন পরীক্ষা দিই, তখন তিনি কেন্দ্রীয় পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য ছিলেন। শাহেদ সাদুল্লাহ ১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্য অনার্সে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। তিনি এমএ পরীক্ষা না দিয়ে সরাসরি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশ নেন এবং প্রথম স্থান অধিকার করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় শাহেদ। সাদুল্লাহ কক্সবাজারের এসডিও ছিলেন। তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহায়তা করেন এবং ১৬ ডিসেম্বরের আগে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারে সেকশন অফিসার হিসেবে বদলি হয়ে যান। তিনি বিয়ে করেন একজন বাঙালি মেয়েকে। তবে তাদের প্রথম সন্তান কানে শুনতে পেত না। তাই কন্যার চিকিৎসার জন্য ইসলামাবাদ থেকে বিদেশে যাওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করেন; শেষ পর্যন্ত অন্য কোনো চাকরি না পেয়ে পিআইএর নিরাপত্তা কর্মকর্তা হিসেবে তিনি প্রেষণে লন্ডনে বদলি হন। এই পদে ৮-১০ বছর কাজ করার পর তিনি চাকরি ছেড়ে দেন এবং যুক্তরাজ্যে অভিবাসন করেন। তিনি লন্ডনের একটি পাকিস্তানি উর্দু পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। এখন তিনি যুক্তরাজ্যেই আছেন।
  2. দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন মরহুম মিজানুর রহমান। যিনি শেলী ডাকনামে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচিত ছিলেন। তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের তুখোড় ছাত্র ছিলেন এবং পাকিস্তান ছাত্র শক্তির একজন নেতা ছিলেন। তিনি সিএসএস পরীক্ষা দেবেন। কি না, এ সম্পর্কে দ্বিধান্বিত ছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি ১৯৬৭ সালে সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর অধ্যাপক গোলাম ওয়াহেদ চৌধুরীর গবেষণা সহকারী হিসেবে ইসলামাবাদ সচিবালয়ে কাজ করেন। অধ্যাপক চৌধুরী ছিলেন ইয়াহিয়া খানের অতি কাছের উপদেষ্টা। তাই মিজানুর রহমান শেলীও বিতর্কিত হন। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেননি। তিনি ফোর্ড ফাউন্ডেশনের একটি বৃত্তি নিয়ে বিলাতে যান এবং স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি পরে ঢাকায় ফিরে আসেন। তাঁকে সিভিল সার্ভিসে যোগদানের অনুমতি দেওয়া হয়। তিনি সমাজকল্যাণ বিভাগের পরিচালক পদে নিযুক্ত হন। এই পদে থাকাকালীন তাঁর কিছু কার্যকলাপ নিয়ে বিতর্ক হয়; রাগ করে তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। সিডিআরবি (Centre for Development Research, Bangladesh) নামে একটি পরামর্শক সংস্থা স্থাপন করেন এবং এশিয়ান অ্যাফেয়ার্স নামে একটি গবেষণামূলক সাময়িকী প্রকাশ করেন। আগস্ট, ২০১৯ সালে তিনি মারা যান।
  3. ব্যাচে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন মরহুম এ বি এম আবদুশ শাকুর। তিনি মাদ্রাসা থেকে কামিল পাস করে প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। তাঁর প্রবেশিকা পরীক্ষার সার্টিফিকেটে বয়স কম করে দেখানো হয়েছিল। আসলে তিনি এ ব্যাচের গড় কর্মকর্তাদের চেয়ে চার-পাঁচ বছরের বড়। তবে তার চেয়েও বয়সে বড় কর্মকর্তা পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সিভিল সার্ভিস একাডেমিতে ১৯৬৭ সালে এসেছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় বান্দরবানের এসডিও ছিলেন। চট্টগ্রামে তিনি এডিসি ছিলেন। এরপর তাঁর চাকরি চলে যায়। ১৯৭৫ সালে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তিনি চাকরি ফিরে পান এবং পটুয়াখালী জেলার ডেপুটি কমিশনার হন। তিনি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি একজন জনপ্রিয় লেখক ছিলেন। তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার এবং প্রথম আলোর বর্ষসেরা বই পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি ২০১৩ সালে মারা যান।
  4. বাঙালিদের মধ্যে চতুর্থ স্থান অধিকার করেন ড. শাহ মোহাম্মদ ফরিদ। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে বিএ অনার্স পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় এবং এমএ ফাইনাল পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। তিনি সংস্থাপনসচিব, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব ছিলেন। মুখ্য সচিব থাকাকালীন তিনি একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষে কাজ করার অভিযোগে অভিযুক্ত হন। তিনি অত্যন্ত মেধাবী এবং উৎকেন্দ্রিক ছিলেন। ড. মিজানুর রহমান শেলী কৌতুক করে বলতেন, ‘Neither a friend, nor a foe, but a Farid’. শাহ ফরিদ লোকজনের উপকার করতেন এবং তাদের কাছ থেকে প্রতিদান প্রত্যাশা করতেন। তাঁর কাছ থেকে সামান্য উপকার পেয়েছে, এমন ব্যক্তির কাছেও তিনি প্রতিদান চাইতেন; প্রতিদান না পেলে তার বিরুদ্ধে বলতেন। দুষ্টু লোকেরা বলে, তাঁর কাছে সিভিল সার্ভিস ছিল একটি লেনদেনের প্রতিষ্ঠান।
  5. বাঙালিদের মধ্যে পঞ্চম স্থানে ছিলাম আমি (গ্রন্থকার)।
  6. বাঙালিদের মধ্যে ষষ্ঠ স্থানে ছিলেন খসরুজ্জামান চৌধুরী। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় কিশোরগঞ্জের এসডিও ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি ময়মনসিংহের ডেপুটি কমিশনার ছিলেন। এরপর তিনি ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ছিলেন। তিনি সরকারি বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেনেডি স্কুল থেকে এমপিএ এবং সিরাকিউস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ ও পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি দীর্ঘদিন লুইজিয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে অর্থনীতির অধ্যাপক ছিলেন। তিনি ২০১৬ সালে মারা যান এবং তাঁর মৃত্যুর পর স্বাধীনতা পুরস্কারে সম্মানিত হন।
  7. বাঙালিদের মধ্যে সপ্তম স্থান অধিকার করেন মামুনুর রশীদ। তিনি পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে মনোনীত সদস্য ও পাকিস্তান সরকারের সচিব আবদুর রশীদের দ্বিতীয় ছেলে। তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। পরবর্তীকালে ফিলাডেলফিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি সংখ্যাতত্ত্ব বিভাগের সচিব এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব হয়েছিলেন। চাকরির শেষ বছরে তার বিরুদ্ধে বয়স জালের অভিযোগ উত্থাপিত হয় এবং তিনি পদত্যাগ করেন।
  8. বাঙালিদের মধ্যে অষ্টম স্থান অধিকার করেন কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নশাস্ত্রে বিএ অনার্স ও এমএ পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণি লাভ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এসডিও ছিলেন এবং তিনি সেখানে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। যুদ্ধের পর তিনি কুমিল্লার ডেপুটি কমিশনার হন। তিনি বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় পরিষদ সচিবালয়ের সচিব ছিলেন। তিনি সবশেষে বাংলাদেশে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত হন।
  9. বাঙালিদের মধ্যে নবম স্থান অধিকার করেন এ কে শামসুদ্দিন। তিনি রসায়নশাস্ত্রে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণি লাভ করেন এবং সিভিল সার্ভিসে যোগ দেওয়ার আগে পাকিস্তান আণবিক শক্তি কমিশনে কাজ করছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি সিরাজগঞ্জের এসডিও ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর ভূমিকার জন্য পাকিস্তান বাহিনী তাঁকে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
  10. বাঙালিদের মধ্যে দশম স্থান অধিকার করেন আবদুল হামিদ চৌধুরী। তিনি পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অত্যন্ত কৃতী ছাত্র ছিলেন। তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য-প্রশাসক ছিলেন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রাজনীতিবিষয়ক যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব ছিলেন। তিনি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব, খাদ্যসচিব এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন।
  11. বাঙালিদের মধ্যে একাদশ স্থান অধিকার করেন ওয়ালিউল ইসলাম। তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং যশোরে বাংলাদেশের প্রথম ডেপুটি কমিশনার ছিলেন। দীর্ঘদিন তিনি অস্ট্রেলিয়ায় জুটমিল করপোরেশনের জেনারেল ম্যানেজারের কাজ করেন। পরবর্তীকালে তিনি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়; সড়ক, জনপথ ও রেল পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের সচিব হিসেবে কাজ করেছেন। অবসর গ্রহণের পর তিনি দীর্ঘদিন। স্বাস্থ্যব্যবস্থা সংস্কারের জন্য স্থানীয় উপদেষ্টা হিসেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও ইউএসএআইডের সঙ্গে কাজ করেছেন।
  12. বাঙালিদের মধ্যে দ্বাদশ স্থান অধিকার করেন আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী। তিনি ভূমিসচিব ছিলেন। সচিবের পদমর্যাদায় যমুনা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে তিনি এই সেতু সম্পূর্ণ করে চালু করেন। তাঁর এই অবদানের জন্য ব্রিটিশ ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স তাঁকে বিশেষভাবে সম্মানিত করে। তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সভাপতি ছিলেন। অবসর গ্রহণের পর বিশ্বের বৃহত্তম এনজিও ব্র্যাকের তিনি নির্বাহী পরিচালক ছিলেন। তিনি ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মন্ত্রীর পদমর্যাদাসহ উপদেষ্টা ছিলেন। বর্তমানে তিনি ঢাকায় ইব্রাহীম মেমোরিয়াল ডায়াবেটিক হাসপাতালের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি।
  13. পূর্ব পাকিস্তান থেকে সিএসপিতে ত্রয়োদশ স্থান অধিকার করেন সৈয়দ রেজাউল হায়াত। তিনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তিনি স্বরাষ্ট্রসচিব ছিলেন এবং পরবর্তীকালে দীর্ঘদিন যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে সড়ক ও রাজপথ বিভাগের সচিব ছিলেন। ২০১২ সালে। তিনি মারা যান।
  14. সারা পাকিস্তানে ব্যাচের চতুর্থ স্থান অধিকার করেন ইকতিদার আহমদ চৌধুরী। তিনি একজন প্রকৌশলী ছিলেন। সিভিল সার্ভিসে যোগ দেওয়ার আগে যুক্তরাজ্য থেকে পোস্টগ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে কাজ করছিলেন। সিভিল সার্ভিসে যোগ দেওয়ার পর তাঁর বেতন প্রায় ৭৫ শতাংশ হ্রাস পায়। জুলফিকার আলী ভুট্টোর শাসনামলে সিএসপি তুলে দেওয়া হয়। ইকতিদার আহমদ চৌধুরী তখন পদত্যাগ করেন এবং বহুজাতিক কোম্পানিতে প্রকৌশলীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সম্প্রতি তিনি মারা গেছেন।
  15. সারা পাকিস্তানে পঞ্চম স্থান অধিকার করেছিলেন আমিনুল্লাহ চৌধুরী। তাঁর পিতা রেলওয়ে সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা ছিলেন এবং অনেক দিন চট্টগ্রামে কাজ করেছেন। আমিনুল্লাহ চৌধুরী পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি এবং বিএল ডিগ্রি অর্জনের পর লন্ডনে উচ্চশিক্ষার জন্য যান। লন্ডন থেকে তিনি বাণিজ্যিক আইনে এলএলএম ডিগ্রি পাওয়ার পর সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় অংশ নেন। তিনি পাঞ্জাব সরকারের মাঠপর্যায়ের প্রশাসন ও সচিবালয়ে চাকরিজীবনের প্রায় পুরোটাই অতিবাহিত করেছেন। তিনি সচিবের পদমর্যাদায় পাকিস্তান সিভিল এভিয়েশন অথরিটির চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। সে সময়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন নওয়াজ শরিফ। তিনি পারভেজ মোশাররফকে বরখাস্ত করার জন্য ষড়যন্ত্র করে তাঁকে শ্রীলঙ্কা সফরে পাঠান এবং তার অনুপস্থিতিতে তার বরখাস্তের আদেশ জারি করেন। পারভেজ মোশাররফ করাচি ফিরে আসতে চাইলে তার বিমানকে করাচি বিমানবন্দরে। নামতে বাধা দেওয়া হয়। এর ফলে পারভেজ মোশাররফের অনুগত সেনাবাহিনী বিমানবন্দর দখল করে এবং পারভেজ মোশাররফের নেতৃত্বে সামরিক শাসন জারি করে। আমিনুল্লাহ চৌধুরীকে জেলে পাঠানো হয়। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে তিনি সিভিল সার্ভিস সম্পর্কে গবেষণা শুরু করেন। সিভিল সার্ভিসের ওপর তার রচিত বই Practical Administrator সমাদৃত হয়েছে। তিনি ২০১৩ সালে মারা যান।
  16. সারা পাকিস্তানে ষষ্ঠ স্থান অধিকার করেন তারেক সুলতান। তিনি ছিলেন পাঞ্জাবের একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি অর্থনীতিতে বিএ অনার্স ও এমএ পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। তিনি প্রায় পুরো চাকরিজীবন পাঞ্জাব প্রদেশের জেলা প্রশাসন এবং সচিবালয়ে অতিবাহিত করেন। তিনি পাঞ্জাবের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব (উন্নয়ন) ছিলেন। তাঁর স্ত্রীর অসুস্থতার কারণে তিনি ইসলামাবাদে সচিবের দায়িত্ব নিতে রাজি হননি। তাঁকে কেন্দ্রীয় সরকারের সচিবের পদমর্যাদা দিয়ে লাহোর স্টাফ কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগ করা হয়। সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করার পর তাঁকে পাঞ্জাব পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য নিয়োগ করা হয়। তিনি ২০১৮ সালে মারা গেছেন।
  17. সারা পাকিস্তানে সপ্তম স্থান অধিকার করেন সায়েদুল্লাহ জান। তিনি সীমান্ত প্রদেশের হাইকোর্টের এক বিচারপতির সন্তান। তিনি সীমান্ত প্রদেশের মাঠপর্যায়ে কাজ করেন এবং সীমান্ত প্রদেশের মুখ্য সচিব নিযুক্ত হন। পরে তিনি পাকিস্তানের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব হিসেবে কাজ করেন। তিনি একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে মারা যান।
  18. সারা পাকিস্তানে অষ্টম স্থান অধিকার করেন এম আবদুল্লাহ। তিনি পেশোয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির অধ্যাপক ছিলেন। ধর্মের বিষয়ে তাঁর গভীর অনুরাগ রয়েছে। তিনি সিভিল সার্ভিসকে নৈতিক আচরণবিধির ভিত্তিতে পুনর্গঠন করতে চান। তিনি খাইবার পাখতুনখোয়াতে মুখ্য সচিব ছিলেন। বর্তমানে তিনি পেশোয়ারে অবসর যাপন করছেন।
  19. সারা পাকিস্তানে দশম স্থান অধিকার করেন আলী কাজিম। তিনি লাহোর গভর্নমেন্ট কলেজের একজন তুখোড় ছাত্র ছিলেন। তিনি লাহোর গভর্নমেন্ট কলেজের ছাত্র ইউনিয়নের সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা দেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। সেখানে তিনি মনোরোগ বিশেষজ্ঞ হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছিলেন। আলী কাজিম পাঞ্জাব সরকারের জেলা পর্যায়ে এবং সচিবালয়ে কাজ করেন। তিনি পাঞ্জাবের গভর্নরের সচিব নিযুক্ত হয়েছিলেন। এ সময়ে সরকারের সঙ্গে মতানৈক্য হওয়ায় তিনি পদত্যাগ করেন। তিনি লাহোরের একটি বিখ্যাত আইন ব্যবসাসংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। সম্প্রতি তিনি সম্পূর্ণ অবসর নিয়ে লাহোরের বাইরে একটি গ্রামে বাস করছেন।
  20. সারা পাকিস্তানে একাদশ স্থান অধিকার করেন সৈয়দ মেহেদী। তিনি পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের কৃতী ছাত্র এবং ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপকও ছিলেন। অধ্যাপক হিসেবে তার প্রিয় ছাত্র হিসেবে পেয়েছিলেন। নওয়াজ শরিফকে, যিনি পরবর্তীকালে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। ১৯৬৬ সালে তিনি পিএসপিতে যোগ দেন এবং ১৯৬৭ সালে সিএসপির জন্য মনোনীত হন। তিনি পাঞ্জাবের জেলা প্রশাসনে একজন নামকরা কর্মকর্তা ছিলেন। নওয়াজ শরিফ যখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন, তখন তিনি তাকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নিযুক্ত করেন। মুখ্য সচিব হিসেবে তিনি ছিলেন নওয়াজ শরিফের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ পরামর্শদাতা। পারভেজ মোশাররফের বরখাস্ত হওয়ার ষড়যন্ত্রে তিনি অংশগ্রহণ করেন এবং এ জন্য তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীকালে তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।