পঞ্চদশ অধ্যায়
উপসংহার

আমার আত্মজীবনীর প্রথম খণ্ডে একটি সাদাসিধা বালকের বড় হওয়ার কাহিনি বর্ণনা করা হয়েছে। বালকটির জন্ম হয়েছিল নবীনগর থানার জলাভূমিতে। বাইরের জগতের সঙ্গে এ ভূমির যোগাযোগ ছিল ক্ষীণ। কয়েকটি লঞ্চ সার্ভিস এই থানা সদরকে যুক্ত করেছিল দেশের রাজধানী এবং মহকুমা শহরের সঙ্গে। এ অঞ্চলে ফসল হতো প্রচুর, জলাশয়গুলো ছিল মাছে ভরা। তবু সম্পদের অসম বণ্টনের কারণে দরিদ্রদের আর্থিক পরিস্থিতি ছিল দুঃখভারাক্রান্ত। দারিদ্র্য সত্ত্বেও এ অঞ্চলের সাংস্কৃতিক জীবন ছিল সমৃদ্ধ। বিশ্ববিখ্যাত সুরকার ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ এবং তাঁর পূর্বপুরুষ ও উত্তর পুরুষদের বাসস্থান ছিল নবীনগর থানার শিবপুর গ্রামে। এই থানারই সাতমোড়া গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন মলয়সংগীত রচয়িতা মনমোহন দত্ত। এই থানাতেই ৭০ শতাংশ লোক ছিল মুসলমান এবং তাদের ধর্মগুরুরা ছিলেন ধর্মান্ধ। পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর প্রধান গোলাম আযমের পূর্ব পুরুষসহ এখানে ছিল মৌলবাদী আলেমদের আড্ডা। এখানে সংখ্যাগুরু মুসলমানদের শোষণ করতেন হিন্দু জমিদারেরা। এখানে শোষণ ছিল, সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছিল প্রচুর, আশপাশের থানাগুলোতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাও অনেক হয়েছে। তবে নবীনগর থানায় গত ১০০ বছরে কোনো উল্লেখযোগ্য দাঙ্গা হয়নি। বরং মৌলবাদীদের সঙ্গে সঙ্গে এখানে সমন্বয়বাদী মুসলিম ধর্মপ্রচারকেরাও ঠাঁই পেয়েছেন। তারা মনের আনন্দে দোতারা বাজিয়ে কোরআন শরিফের সুরা স্রষ্টার উদ্দেশে নিবেদন করেছেন।

ছেলেটি বই পড়তে ভালোবাসত। দৌড়ঝাঁপ বা খেলাধুলা তার পছন্দ ছিল না। বালকটি ছিল কল্পনাবিলাসী এবং অন্তর্মুখী। বালকটি বই পছন্দ করত কিন্তু ভালো বই পাওয়া ছিল তার জন্য অত্যন্ত কঠিন। একমাত্র পাঠাগার ছিল নবীনগর হাইস্কুলে। পাঠাগারের দায়িত্বে নিযুক্ত শিক্ষক তাকে বেশি বই পড়তে দিতে চাইতেন না। শিক্ষকদের ধারণা ছিল পাঠ্যবই পড়াই যথেষ্ট। পাঠ্যের বাইরের বই (যাকে আউট বই বলা হতো) পড়ে খুব লাভ হয় না। বই পড়ার জন্য বালকটি বই বিক্রেতাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছে। বইয়ের দোকানে বসে যেসব ‘আউট বই’ পাওয়া যেত, সেগুলো সে পড়েছে; কিন্তু তা যথেষ্ট ছিল না। যেখানে যা কিছু লিখিত পাওয়া যেত, সবই সে পড়ার চেষ্টা করেছে। এমনকি মুদিদোকান থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষার পুরোনো খাতা সের দরে কিনে এনে পড়েছে। পয়সার অভাবে বাইরের বই কেনা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। সামান্য টাকা নিয়ে সে বাড়ি থেকে ১০ মাইল দূরে শ্রীঘর বাজারে পুরোনো বই কিনতে গিয়েছিল। শ্রীঘর বাজার ছিল ওই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় গরু-ছাগল, হাঁস-মোরগের বাজার। সেই বাজারের একটি বড় অংশে পুরোনো বই বিক্রি হতো। এই বাজার থেকে বই কিনে এনে সে পড়েছে। তার জন্য ভালো বইয়ের অভাব অনেক কমে যায়, যখন সে ঢাকায় কলেজে পড়তে যায়। ঢাকা কলেজ লাইব্রেরি, কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি, ভারতীয় হাইকমিশনের উদ্যোগে পরিচালিত পাঠাগার, ব্রিটিশ কাউন্সিল লাইব্রেরি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির মতো পাঠাগারে যখন খুশি সে যেতে পারত। বৃত্তির টাকা দিয়ে সিনেমা পত্রিকা থেকে শুরু করে দর্শনশাস্ত্রের দুরূহ বইও নিজের পয়সায় কিনে পড়ার চেষ্টা করত। বালকটির এই পড়ার অভ্যাস কখনো কমেনি। যখন যেখানেই সে কাজ করুক না কেন, সময় পেলেই সে বই পড়ত। স্বল্পমূল্যে অনেক পুরোনো বিদেশি বই কিনেছে, আবার চড়া দামে অনেক নতুন বইও কিনেছে।

আমি মূলত ‘bookworm’ বা গ্রন্থকীট। আমি স্বজ্ঞানে লেখক হতে চাইনি, পাঠকই থাকতে চেয়েছি। লেখক হতে হলে অনেক কষ্ট করতে হয়। পাঠকের কাজ অনেক সহজ। তাই আমি বিভিন্ন বিষয়ের ওপরে পড়াশোনা করেছি, কিন্তু কোনো বই লিখিনি। যখন আমি বই লেখা শুরু করি, তখন আমার বয়স ৫০ অতিক্রম করেছে। দুটি কারণে আমি পাঠক থেকে লেখক হই।

পড়তে পড়তে আমি দেখতে পাই যে বিভিন্ন প্রশ্নে অনেক মতবিরোধ রয়েছে। অনেক প্রশ্নের কোনো জবাব এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। আমি সেসব প্রশ্ন সম্পর্কে চিন্তা করা শুরু করি। চিন্তা করতে করতে আমি অনেক ক্ষেত্রে নিজের সিদ্ধান্তে পৌঁছি। আমার মনে হয় যে অনেক বিষয় রয়েছে, যেগুলো সম্পর্কে আমারও কিছু বক্তব্য দাঁড়িয়ে গেছে। কিন্তু বিষয়গুলো ছকবাঁধা গৎ-এর মধ্যে পড়ে না। অবশ্যই ইতিহাস সম্বন্ধে মনে অনেক প্রশ্ন জেগেছে; অবশ্যই অর্থনীতি সম্বন্ধে প্রশ্ন জেগেছে; প্রশ্ন জেগেছে লোকপ্রশাসন সম্পর্কে প্রশ্ন জেগেছে সুশাসন সম্পর্কে প্রশ্ন জেগেছে দেশের রাজনীতি সম্পর্কে প্রশ্ন জেগেছে সাহিত্য সম্পর্কে; আবার প্রশ্ন জেগেছে দেশের পানিসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার সম্পর্কে। যেকোনো বিষয়ে যখনই মনে হয়েছে আমার নিজস্ব কিছু বক্তব্য আছে, সেখানেই আমি কিছু লেখার চেষ্টা করেছি। আমার নিজস্ব কোনো বক্তব্য না থাকলে আমি অন্যের বক্তব্য প্রচার করার জন্য কোনো বই লিখিনি।

বই লেখার আমার দ্বিতীয় কারণ হলো অনেক বই পড়তে আমার ভালো লাগত। আমার এই ভালো লাগাটা অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে ইচ্ছা করত। বিশেষ করে যখন দ্বিতীয় দফায় বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি পড়তে গেলাম, তখন অর্থনীতির অনেক তত্ত্ব আমাকে আলোড়িত করে। অর্থনৈতিক তত্ত্বের সৌন্দর্য রয়েছে। আমার ইচ্ছা করে এই সৌন্দর্য সবার সঙ্গে উপভোগ করি। বিশেষ করে যেসব অর্থনীতিবিদ অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, তাদের ধারণা সাধারণ পাঠকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিই। তবে বই পণ্ডিতদের জন্য লিখি অথবা সাধারণ পাঠকদের জন্য লিখি না কেন; সর্বত্রই বই লেখার পেছনে আমার অনেক বছরের চিন্তা ও ভাবনা রয়েছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার থেকে পদত্যাগ করার পর আমাকে কয়েক হাজার সাক্ষাৎকার গণমাধ্যমের কাছে দিতে হয়েছে। এ ছাড়া দৈনিক পত্রিকা এবং সাময়িকীতে কলাম লিখতে হয়েছে। বেশ কয়েকজন প্রকাশক এসব সাক্ষাৎকার এবং কলাম থেকে লেখা নির্বাচন করে বই প্রকাশের জন্য আমাকে অনুরোধ করেছেন। আমি এ ধরনের প্রস্তাবে কখনো রাজি হইনি। সাক্ষাঙ্কার এবং কলামে আমি যা বলেছি, সেগুলো শুধু তঙ্কালীন পরিবেশে প্রযোজ্য। কিন্তু আমি আমার বইয়ে যা লিখেছি, তা আমার বিশ্বাস অনুসারে সর্বকালেই সত্য।

আমি কোনো গল্প, উপন্যাস, কবিতা, নাটক–এ ধরনের বই প্রকাশ করিনি। আমি শুধু প্রবন্ধের বই লিখেছি। প্রবন্ধের বইও যে পাঠক এত আগ্রহের সঙ্গে পড়েন, সেটা আমার জানা ছিল না। আমার শুধু একটি দোষ ছিল, আমি কিশোর বয়সে সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখা গোগ্রাসে গিলেছি। এর প্রভাবে আমার অনেক গবেষণাগ্রন্থও লেখা হয়েছে রম্যরচনার ঢঙে। এই ঢঙটি আমার লেখাকে সাধারণ পাঠকের কাছে নিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত আমার একটি বইয়েরও শুধু প্রথম মুদ্রণে সীমাবদ্ধ থাকেনি; সবচেয়ে কম যে বইটি বিক্রি হয়েছে, তারও দুটি মুদ্রণ বেরিয়েছে। আমার লেখায় পাঠকদের এ আগ্রহের ফলেই আমি এখনো লিখে যাচ্ছি।

পণ্ডিতদের জন্যই লিখি বা সাধারণ পাঠকদের জন্য লিখি না কেন, সব বইয়ের পেছনে রয়েছে অনেক বছরের চিন্তা ও ভাবনা। বনলতাকে নিয়ে দুটি বই লিখেছি। বনলতাকে নিয়ে চিন্তা শুরু করি ১৯৬৮ সালে। এ সম্পর্কে প্রথম বই (অন্ধকারের উৎস হতে) প্রকাশিত হয় ২০১১ সালে। এরপর চাবিকাঠির খোঁজে প্রকাশিত হয় ৪৬ বছর পর ২০১৪ সালে। রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন নিয়ে চিন্তা শুরু করি ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকীতে। ভাবনা ও দুর্ভাবনা রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে প্রকাশিত হয় ৫৮ বছর পর–২০১৯ সালে। বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে গবেষণা শুরু করি ১৯৮০ সালে। ডিসকভারি অব বাংলাদেশ প্রকাশিত হয় ১৯৯৬ সালে–প্রায় ১৬ বছর পর। বাংলাদেশের প্রশাসনের সংস্কার নিয়ে পড়াশোনা শুরু করি ১৯৬৮ সালে। এ সম্পর্কে বই প্রকাশিত হয় ৪৭ বছরের গবেষণা শেষে ২০১৪ সালে।

১৯৯৬ সালে আমি বাংলাদেশের অর্থসচিব নিযুক্ত হই। বাংলাদেশের বাজেট সম্পর্কে আমার বই প্রকাশিত হয় ১৫ বছর পর ২০১১ সালে। বাংলায় ইসলাম প্রচারের সাফল্য সম্পর্কে গবেষণা শুরু করি ১৯৮০ সালে। ২৯ বছরের গবেষণার পর এ সম্পর্কে বই প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালে। Friendly Fires, Humpty Dumpty Disorder[১] সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ শুরু করি ১৯৬৮ সালে। ৪২ বছরের গবেষণার পর ২০১০ সালে বইটি প্রকাশিত হয়। পরার্থপরতার অর্থনীতির প্রশ্নগুলো নিয়ে ১৯৭৯ সাল থেকে চিন্তা শুরু করি। ৩১ বছরের গবেষণার পর বইটি প্রকাশিত ২০০০ সালে। ২০০৩ সালে। বিশ্বব্যাংকে যোগ দেওয়ার পর সুশাসন সম্পর্কে গবেষণা শুরু করি। ১৪ বছরের গবেষণার পর ২০১৭ সালে প্রকাশিত হয় অবাক বাংলাদেশ। লেবিট ও ডুবনার আজব ও জবর আজব অর্থনীতিনিয়ে প্রথম বই প্রকাশ করে ২০০৫ সালে। এ বিষয়ে আমার বই প্রকাশিত হয় ২০১৩ সালে। অল্প কিছু বিষয়ে প্রতিবেদন লেখা হয়েছে তিন-চার বছরের গবেষণায়। অন্যত্র আমার সব বই ই দীর্ঘদিনের গবেষণার ভিত্তিতে রচিত।

বই থেকে আমি যেমন শিখেছি, আমার নিজের জীবন থেকেও আমি শেখার চেষ্টা করেছি। সরকারের কাজ করতে গিয়ে উন্নয়ন তত্ত্বের অনেক দুর্বলতা আমার চোখে পড়ে। আমি দেখতে পাই, সরকার কীভাবে জনগণের উপকার করতে গিয়ে জনগণের অপকার করে। আমি আরও দেখতে পাই, বিদেশি দাতাগোষ্ঠী এবং কায়েমি স্বার্থবাদীরা যেখানে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের প্রয়োজন, সেখানে সংস্কার করার চেষ্টা করে। অথচ অনেক ক্ষেত্রেই সংস্কার করলে চলবে না, বৈপ্লবিক পুনর্গঠনের প্রয়োজন রয়েছে। বাংলাদেশের সরকারের কর্মকাণ্ডে আমি গ্রেসাম বিধির ব্যামো লক্ষ করি। গ্রেসাম বিধি হলো Bad money drives out good money.’ তেমনি বাংলাদেশ প্রশাসনে দুষ্টের পালন হচ্ছে আর শিষ্টের লালন হচ্ছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে আমি দুটি বই লিখি। বই দুটির নাম হলো : Friendly Fires, Humpty Dumpty Disorder, and Other Essays;  Gresham’s Law Syndrome and Beyond[২].

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে একসময় আমি কাজ করেছি। বন্যা এবং সুপেয় পানির সরবরাহ সম্পর্কে আমি দুটি প্রবন্ধ জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির জন্য লিখেছি এবং এ দুটি লেখা সংক্ষিপ্ত আকারে ন্যাচারাল রিসোর্সের্স ফোরাম নামে একটি আন্তর্জাতিক সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়।[৩] কিছুদিন আগে প্রথম আলোতে আমি প্রস্তাবিত টিপাইমুখ বাঁধ সম্পর্কে একটি লেখা লিখেছিলাম, যেটি সাধারণ পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। প্রায় ৪০ বছর ধরে বাংলাদেশের পানির সমস্যা সম্পর্কে যেসব চিন্তাভাবনা করেছি, তা নিয়ে এখন একটি নতুন বই লেখার কথা চিন্তা করছি।[৪] তেমনি ইতিহাস সম্পর্কে আমি যা লিখেছি, তার সমর্থনে গত ৫০ বছর ধরে অনেক নতুন তথ্য সংগৃহীত হয়েছে। মনে সাধ আছে বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে আরেকটি বই লিখব। তবে শেষ পর্যন্ত এই বইগুলো লেখার কাজ সমাপ্ত করতে পারব কি না, সে। বিষয়ে আমি এখনো নিশ্চিত নই।

আমার আত্মজীবনীর প্রথম খণ্ডে আমার জীবনের প্রথম ২৯ বছরের ঘটনাবলি বর্ণনা করা হয়েছে। তবে ১৯৪৪ সালে আমার জন্ম থেকে এ বইয়ের মূল ঘটনা শুরু হলেও এ বইয়ে আনুমানিক ২০০ বছরের পারিবারিক ইতিহাসও বিবৃত হয়েছে। এই ইতিহাস বাংলাদেশের বেশির ভাগ উচ্চবিত্ত বা মধ্যবিত্ত মুসলমানের পারিবারিক ইতিহাস থেকে ভিন্ন। বামুন খাঁ নামে একজন ব্রাহ্মণ হিন্দু এই বংশের প্রতিষ্ঠা করেন। সুদের ব্যবসা করে এরা বড়লোক হয়, তালুকদার হয় এবং গ্রামের অধিকাংশ জমির মালিক হয়। তবু এই পরিবার গ্রামের লোকদের শুধু শোষণই করেনি, গ্রামে হাইস্কুল স্থাপন করেছে, গ্রামে তিনটি খেলার মাঠ করে দিয়েছে, গ্রামে বাজার স্থাপন করেছে, স্থানীয় ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবে তারা গ্রামের মানুষের সুখ দুঃখের ভাগীদার হয়েছে। ২০০ বছর পর বামুন খাঁর পরিবার এখন আর। গ্রামে আবদ্ধ নয়। প্রায় ১৩০ বছর ধরে এরা পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ও বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। বংশের শতকরা ৫ ভাগ সদস্যও এখন রসুল্লাবাদ গ্রামে নেই।

প্রথম ২৯ বছর বয়সে আমার জীবনে দুটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে। প্রথম ঘটনা হলো বিএ অনার্স ও এমএ পরীক্ষায় খুব উঁচু নম্বর পেয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করা সত্ত্বেও আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পাইনি। আমার আগে পাঁচ বছর ধরে যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন, তাঁদের সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপকের কাজ করেছেন এবং পরবর্তীকালে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ভিত্তিতে সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তানে যোগ দিয়েছেন। আমার ক্ষেত্রে কিন্তু তা হয়নি। তার কারণ হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি এবং বিভাগীয় রাজনীতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ওসমান গণি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সদস্যদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক করতে রাজি ছিলেন না। অন্যদিকে ইতিহাস বিভাগে ড. আবদুল করিম তাঁর প্রতিপত্তি বাড়ানোর জন্য তার ছাত্রকে আমার চেয়ে অনেক কম নম্বর পাওয়া সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক করে নিজের প্রতিপত্তি জাহির করতে চান। যখন সিএসএস পরীক্ষার ফরম দাখিল করেছি বলে আমাকে ইন্টারভিউতে কোনো প্রশ্ন না করে ইন্টারভিউ বোর্ড আমাকে ফেরত পাঠিয়ে দেয়, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর খুব রাগ হয়েছিল। অবশ্য এখন আর সেই রাগ নেই। পরে জেনেছি এ ধরনের ঘটনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক ঘটেছে। কামরুদ্দীন আহমদ জানাচ্ছেন, ১৯৩৫-৩৬ সালের দিকে মহিউদ্দিন আহমদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ইতিহাস বিভাগের সুপারিশে তাকে বিভাগের একজন প্রভাষক নিয়োগ করা হয়। কিন্তু তার চাকরি সাত দিনও টেকেনি। তার কারণ হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংসদীয় আসনে তখন নির্বাচিত হয়েছেন ফজলুর রহমান। মহিউদ্দিন আহমদ খান সাহেব আবদুল খালেকের শ্যালক। খালেক সাহেব ফজলুর রহমানের প্রতিদ্বন্দ্বী। তাই ফজলুর রহমান সাত দিনের মধ্যে মহিউদ্দিন আহমদকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষকের পদ থেকে তাড়িয়ে দেন। সাময়িকভাবে অসুবিধা হলেও মহিউদ্দিন আহমদ জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত হন। তিনি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ভিত্তিতে ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিসে নিযুক্ত হন।[৫] হাবিবুর রহমান শেলী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হওয়ার পর তাঁকে ইতিহাস বিভাগে চাকরি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি যেহেতু বামপন্থী ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন, সে জন্য এক মাস পর তাঁকে বরখাস্ত করা হয়। প্রতিবাদ করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের বাইরে পান-বিড়ির দোকান দেন। অবসরপ্রাপ্ত সচিব সুলতান-উজ জামান খান জানাচ্ছেন যে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে চাকরির জন্য দরখাস্ত করেছিলেন। তখন ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান (ড. মাযহারুল হক) তাঁকে বলেন, যেহেতু তিনি সিএসএস পরীক্ষা দিয়েছেন, সেহেতু তাঁকে নেওয়া যাবে না। তার বদলে যাকে চাকরি দেওয়া হয়, তিনিও সিএসএস পরীক্ষা দিয়েছিলেন। কিন্তু যেহেতু বিভাগীয় প্রধান এবং যিনি চাকরি পেয়েছেন উভয়েই নোয়াখালী জেলার, সেহেতু তাদের ক্ষেত্রে তথাকথিত আইন প্রয়োগ করা হয়নি।[৬]

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বর্ণযুগে যখন এ ধরনের অবিচার ঘটেছে, সেহেতু মোনেম খান-ওসমান গণিশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাকে চাকরি না দেওয়াটা মোটেও কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা ছিল না। তবু দুটি কারণে আমার খুবই মানসিক যন্ত্রণা হয়। প্রথম কারণ হলো আমি ইতিহাস বিভাগের অনেক শিক্ষকের চেয়ে ইতিহাস ভালো জানতাম (হামবড়া মনে হলেও কথাটি একেবারে মিথ্যা নয়)। বক্তৃতা দেওয়া ছিল আমার শখ। কাজেই ইতিহাস পড়তে পড়তে আমি কল্পনা করতাম আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের কীভাবে ইতিহাস পড়াব। দুর্ভাগ্যবশত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি না পাওয়ায় আমার এ স্বপ্ন কোনো দিনই সফল হয়নি।

দ্বিতীয়ত, চাকরি না পাওয়ায় আমার জীবনে একটি বড় দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। আমি একদিকে ছাত্র ইউনিয়ন করতাম এবং মেহনতি মানুষের মুক্তির কথা ভাবতাম। অন্যদিকে আমি বিলাসী জীবনযাপন করতাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে আমি চেইন স্মোকার হয়ে যাই। সিগারেটের জন্য আমার প্রচুর টাকা লাগত। আমি বিদেশি বই কিনি। তার জন্য আমার টাকা লাগত। আমি ভালো খাবারদাবার পছন্দ করতাম, তার জন্য আমার টাকা লাগত। বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি না পাওয়ায় এসবই আমার বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। সহৃদয় আত্মীয়স্বজনের সহযোগিতায় আমি সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তানে যোগ দেওয়ার আগপর্যন্ত টিকে ছিলাম। তখন আমি স্পষ্টভাবে বুঝতে পারি, হয় আমার বামপন্থী রাজনীতি ছেড়ে দেওয়া উচিত, নয় আমার বিলাসবহুল জীবন প্রত্যাখ্যান করে সাধারণ মানুষের পর্যায়ে নেমে আসা উচিত। আমি শ্রেণিচ্যুত হতে রাজি হইনি, আবার বাম রাজনীতির প্রতি আনুগত্যও ছুঁড়ে ফেলতে পারিনি। এই দ্বন্দ্ব আমাকে সারা জীবন ভুগিয়েছে।

এই সময়ে আমার জীবনের দ্বিতীয় উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো মুক্তিযুদ্ধে আমার অংশগ্রহণ। আমি ছিলাম পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসের সদস্য। সিএসপি ছিল পাকিস্তানের স্টিল ফ্রেম। সিএসপিরাই এক হাজার মাইলের ব্যবধানে। অবস্থিত দুটি অঞ্চলে বিভিন্ন ভাষাভাষী জনগণকে এক রাষ্ট্রে ধরে রেখেছিল। তবু আমি এই স্টিল ফ্রেম থেকে বেরিয়ে যেতে দ্বিধাবোধ করিনি। তার কারণ হলো মানুষের তৈরি আইনের ওপরেও আইন রয়েছে। সেটি হলো খোদার আইন বা প্রকৃতির আইন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী যে নৃশংসতার সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানে তাদের দখল প্রলম্বিত করেছিল, তা পৃথিবীর যেকোনো আইনের পরিপন্থী। এ ধরনের আইনবহির্ভূত ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার কোনো দায়িত্ব আমার ছিল বলে আমি মনে করি না।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতি রাতে যখন ঘুমাতে যেতাম, তখন প্রায়ই মনে প্রশ্ন জাগত বিদ্রোহ করে আমি ঠিক কাজ করেছি তো? সঙ্গে সঙ্গে মনের ভেতর থেকে উত্তর পেতাম যে আমি সঠিক কাজ করেছি। এ প্রসঙ্গে স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধের কথা আমার মনে পড়ত। স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধে যখন বামপন্থীরা ফ্যাসিস্ট সরকার উৎখাতের জন্য লড়াই শুরু করে, তখন শুধু স্পেনের লোকজনই এতে যোগ দেননি, এ সংগ্রামে বিদেশ থেকে অনেক স্বেচ্ছাসেবী এসে মরণপণ সংগ্রাম করেছেন। বিলাতের প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী ক্রিস্টোফার কডওয়েল (Christopher Caudwell) তাঁর সহকর্মীদের বাঁচাতে গিয়ে ফ্যাসিস্টদের গুলিতে নিহত হন। বামপন্থীদের সমর্থনে আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী ব্রিগেড গড়ে ওঠে। এই ব্রিগেডে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও রাশিয়া থেকে স্বেচ্ছাসেবকেরা দলে দলে যোগ দেন। যদি বাইরের দেশের লোকেরা স্পেনকে মুক্ত করার জন্য লড়াই করতে পারে, তাহলে আমার নিজের দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য যদি আমি আমার দায়িত্ব পালন না করি, তাহলে আমি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে মুখ দেখাব। কীভাবে। ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বরের পর প্রতিদিনই আমার মনে হয় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। সব প্রজন্মের মানুষ এ ধরনের সংগ্রামে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পায় না। আমি পেয়েছি, অংশ নিয়েছি এবং আমি নিজে ধন্য হয়েছি। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে বসে মনে করতাম যে এ ধ্বংসাবশেষ সাময়িক কিন্তু দেশের স্বাধীনতা চিরন্তন। স্বাধীন দেশে অবশ্যই আমরা সমৃদ্ধির স্বর্ণ শিখরে পৌঁছাব।

১৯৭৩ সালে আমি যখন কানাডিয়ান কমনওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে কানাডায় যাই, তখন আমার চাকরির মাত্র ছয় বছর পূর্ণ হয়েছে। ছয় বছরের চাকরিজীবন অতি স্বল্প সময়ের। সব আমলাই চাকরিতে সফল হতে চান। অনেকে সফল হন, অনেকে হন না। এর কারণ কী? আমলাতন্ত্রে শুধু কঠোর পরিশ্রম, কাজে নিষ্ঠা, সহকর্মীদের সঙ্গে সহযোগিতা এবং সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্য সদিচ্ছা থাকলেই হয় না; সরকারি চাকরিতে ভাগ্যের বা নিয়তির ভূমিকা রয়েছে। যাদের কপাল ভালো, তারা অনেক সময় ফাঁকি দিয়ে সফল হতে পারেন, আর যাদের কপাল খারাপ, তারা শত চেষ্টা করেও সফল হতে পারেন না।

আমি এসডিও থাকাকালীন দুটি ঘটনা ঘটেছিল, যার যেকোনো একটিতে আমি অসফল প্রমাণিত হতে পারতাম। প্রথম ঘটনাটি হলো হবিগঞ্জে আনসার ক্যাম্পের রাইফেল স্কুলছাত্রদের দ্বারা লুট হওয়া। সেদিন আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। আমার সেকেন্ড অফিসার ছিলেন। তাঁর উপস্থিতি সত্ত্বেও রাইফেল লুট হওয়ার জন্য তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। আমার মনে মাঝেমধ্যে প্রশ্ন জাগে, যদি আমি থাকতাম এবং এ ঘটনা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারতাম, তাহলে নিশ্চয়ই আমি অসফল কর্মকর্তা হিসেবে চিহ্নিত হতাম।

তেমনি আরেকটি ঘটনা ঘটে, যেখানে জলবসন্তের টিকা দেওয়ার জন্য একজন পীর সাহেব ও তাঁর খলিফাঁদের গ্রেপ্তার করে টিকা নিতে বাধ্য করেছিলাম। কাজটি অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে করা হয়েছিল। যদি গোপনীয়তা ফাস হয়ে যেত, তাহলে হয়তো আমি অসফল কর্মকর্তা প্রমাণিত হয়ে যেতাম। প্রত্যেক প্রশাসকের জীবনেই এ ধরনের মুহূর্ত আসে। কেউ কেউ অধিকাংশ সমস্যায় উতরে যান, আবার কেউ কেউ পারেন না। এতে এঁদের লজ্জিত হওয়ার কিছু নেই। প্রত্যেক প্রশাসককেই যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে।

জীবনযাপন করাই যথেষ্ট নয়, জীবন থেকে শেখার প্রয়োজন রয়েছে। জীবন নিয়ে বীক্ষণ করতে হবে। চিন্তা করলে দেখতে পাব আমরা কেউই সম্পূর্ণ সৎ নই। প্রত্যেকের মধ্যেই কমবেশি মুনাফেকি রয়েছে। পরিবেশবিষয়ক সংগ্রামী নেতা Paul Watson লিখেছেন, ‘Everybody is a hypocrite. You cannot live on this planet without being a hypocrite.’ পৃথিবীতে শতভাগ লোক মুনাফেক নয়, আবার শতভাগ লোক সৎ-ও নয়। সততা ও মুনাফেকির আলপনায় চলছে মানুষের জীবন।

টীকাপুঞ্জ (Glossary)

  • আইএএস Indian Administrative Service
  • আইসিএস Indian Civil Service
  • আইসিডিসিআরবি International Centre For Diarrhoeal Disease Research, Bangladesh
  • ইপিআর East Pakistan Rifles
  • ইপিসিএস East Pakistan Civil Service
  • এজিজি Agent to Governor General
  • এডিসি Additional Deputy Commissioner
  • এপিএ Assistant Political Agent
  • এলএও Land Acquisition Officer
  • এএমএফ Licentiate Medical Fellow
  • এলএলএম Master of Laws
  • ওসি Officer In charge of Police Station (Popularly known as Bara Darogha)
  • কে ফোর্স Khaled Mosharaf Force
  • ক্রিমিনাল প্রসিডিউর কোড Criminal Procedure Code
  • জেড ফোর্স Ziaur Rahman Force
  • টিএবিসি Typhoid, Amoebic, Bacillery and Cholera
  • ডিসি Deputy Commissioner
  • পিএফএস Pakistan Foreign Service (Pakistan)
  • পেনাল কোড Penal Code
  • পিএ Political Agent
  • বিসিএল Bachelor of Civil Laws
  • বিসিএস Bangladesh Civil Service
  • বিএলএফ Bangladesh Liberation Forces
  • সিও Circle Officer
  • সিপিসি Civil Procedure Code
  • এসডিও Sub-divisional Officer
  • এসডিপিও Sub- divisional Police Officer

সূত্রনির্দেশ ও টীকা

  1. Akbar Ali Khan, Friendly Fires, Humpty Dumpty Disorder, and Other Essays, 2010. (The University Press Limited)
  2. Akbar Ali Khan, Gresham’s Law Syndrome and Beyond, 2015, (The University Press Limited)
  3. A. A. Khan, (1988). Institutional aspects of water supply and sanitation in Asia. Natural Resources Forum, 12(1), P-45-56 & A. Khan, (1987). Floods. Natural Resources Forum, 11(3), P-259-269
  4. আকবর আলি খান, ২০১১, অন্ধকারের উৎস হতে, পরিবেশ-বিনাশী টিপাইমুখ বাঁধ : ঝুঁকির রাজনীতি ও অর্থনীতি, (ঢাকা : পাঠক সমাবেশ), পৃষ্ঠা-১২৫-১৫১
  5. কামরুদ্দীন আহমদ, বাংলার মধ্যবিত্তের আত্মবিকাশ, ২০২০, (ঢাকা : প্রথমা প্রকাশন), পৃষ্ঠা-১১৬
  6. সুলতান-উজ জামান খান, স্মৃতির সাতকাহন : এক আমলার আত্মকথা, ২০০৭, (ঢাকা : সাহিত্য প্রকাশ), পৃষ্ঠা-৮২-৮৩