লাঠালাঠি হাঙ্গামা ছাড়াই খুনের চর দখল হয়েছে। এত সহজে চরটা দখল করতে পারবে, ভাবতে পারেনি জঙ্গুরুল্লা। সে মনে করেছিল–বিপক্ষের কিছু লোক আর চাকরিয়ারা অন্তত থাকবে চরে। তারা মুখোমুখি হবে তার লাঠিয়ালদের, ছোটখাট মারামারি হবে। কিন্তু কিছুই হয়নি। পুলিসের ভয়ে ওদের সবাই ছুটছাট পালিয়েছিল চর খালি রেখে।

চর দখলের পরের দিন ভোরবেলা জঙ্গুরুল্লার পানসি এসে ভিড়ে খুনের চরের ঘোঁজায়। পানসি দেখে লোকজন ভিড় করে এসে দাঁড়ায় পানসির কাছে। জঙ্গুরুল্লা রুমিটুপি মাথায় দিয়ে শালটা ভাল করে গায়ে জড়িয়ে খাস খোপ থেকে বেরোয়। তার পেছনে বেরোয় তার দুই ছেলে হরমুজ ও জহির।

‘আসোলামালেকুম।’ এক সাথে সবাই সালাম দেয় জঙ্গুরুল্লাকে।

‘ওয়ালাইকুম সালাম।’ ফরমাশ দিয়ে তৈরি তেরো নম্বরি জুতো-জোড়া পায়ে ঢোকাতে ঢোকাতে জঙ্গুরুল্লা সালামের জবাব দেয়। জহিরের হাত থেকে রূপার মুঠিবাধানো বেতের লাঠিটা নিয়ে সে দাঁড়ায় নৌকার মাথির ওপর।

‘মজিদ খালাসি কই হে?’

‘এইতো হুজুর।’

‘আমিও আছি হুজুর।’ দবির গোরাপি বলে।

‘চলো, চরটা আগে দেইখ্যা লই।’

‘চলেন হুজুর।’ মজিদ খালাসি বলে।

জঙ্গুরুল্লা চরের মাটিতে নামে। তাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যায় মজিদ খালাসি ও দবির গোরাপি।

জঙ্গুরুল্লা থপথপ করে পা ফেলে এগিয়ে যায় বুক টান করে, মাথা উঁচু করে। তার চলনে-বলনে দিগ্বিজয়ীর দৃপ্ত ভঙ্গি।

চলতে চলতে চরটার চারদিকে চোখ বুলায় জঙ্গুরুল্লা। মাঝখানের কিছু জায়গা বাদ দিয়ে সারাটা চরেই লাগানো হয়েছে বোরো ধান। ধানগাছের গোছা পেখম ধরেছে বেশ। গাছের মাজা মুটিয়ে উঠেছে। কিছুদিনের মধ্যেই শীষ বেরুবে।

‘কেমুন মিয়ারা! তোমরাতো চর দখলের লেইগ্যা হামতাম শুরু করছিলা।’ চলতে চলতে বলে জঙ্গুরুল্লা। ‘অত ত্বরাহুড়া করলে এমুন বাহারিয়া ধান পাইতা কই? আমি তখন কইছিলাম না, ওরা ধান-পান লাগাইয়া ঠিকঠাক করুক, আমরা তৈয়ার ফসল ঘরে উডাইমু।’

‘হ, আল্লায় করলে তৈয়ার ফসল ঘরে উড়ান যাইব।’ দবির গোরাপি বলে।

‘খুব মজা, না? ধান বোনে হাইল্যা, প্যাট ভরে বাইল্যা।’ মনে মনে হাসে জঞ্জুরুল্লা।

‘আপনে জবর একখান ভোজবাজির খেইল দ্যাহাইছেন।’ বলে মজিদ খালাসি।

‘হ, এরই নাম ভোজবাজির খেইল, আক্কেলের খেইল। দ্যাখলা তো আমার আক্কেল দিয়া ওগ কেমুন বেয়াক্কেল বানাইয়া দিছি।’ জঙ্গুরুল্লার চোখে-মুখে আত্মপ্রসাদের হাসি।

‘হ, ওরা এক্কেরে বেয়াক্কেল অইয়া গেছে।’

মাঘ মাস। উত্তুরে বাতাসে ঢেউয়ের আলোড়ন তোলে ধান খেতে। জঙ্গুরুল্লা শালটার এক প্রান্ত গলায় পেঁচিয়ে নেয়। বলে, ‘জবর শীত পড়ছে তো। ও মজিদ, বাইরে হোগলা বিছাইয়া দ্যাও। রউদে বইয়া তোমাগ লগে কথা কইমু।’

চরের চারদিকটা ঘুরে ফিরে দেখে তারা এরফান মাতব্বরের তৈরি ভাওর ঘরের পুবপাশে এসে দাঁড়ায়।

মজিদ খালাসি ঝুপড়ি থেকে হোগলা ও বিছানার চাদর এনে মাটিতে বিছিয়ে দেয়। জুতো ছেড়ে জঙ্গুরুল্লা আসনসিঁড়ি হয়ে বসে।

‘আর লোকজন কই?’ জিজ্ঞেস করে জঙ্গুরুল্লা।

‘বেড়ে মাছ ধরতে গেছে।’

‘বেড় দিছে! বানা পাইল কই?’

‘মাতব্বরের কোলশরিকরা ফালাইয়া গেছে।’ দবির গোরাপি বলে।

‘আইচ্ছা! আর কি কি ফালাইয়া গেছে?’

‘ঢাল-কাতরা, লাডি-শরকি, ক্যাথা-বালিশ, থালা-বাসন, তিনডা টচ লাইট।’

‘ঝাঁকিজাল, টানাজাল, মইয়া জাল, ইলশা জাল।’ একজন কোলশরিক দবির গোরাপির অসম্পূর্ণ তালিকা পরিপূরণের উদ্দেশ্যে বলে।

‘আরো অনেক কিছু—চাঁই, দোয়াইর, আটি, বইচনা, খাদইন, পারন।’ বলে আর একজন কোলশরিক।

‘এইডারে কয় বুদ্ধির খেইল, বোঝলা? আক্কেলের খেইল।’ জঙ্গুরুল্লা আবার তার নিজের বাহাদুরি প্রকাশ করে। ‘দ্যাখলাতো আমার আক্কেলের ঠেলায় ওগ আক্কেল গুড়ুম।’

‘হ, আপনের বুদ্ধির লগে কি ওরা কুলাইতে পারে? আপনের বাইয়া পায়ের বুদ্ধিও ওগ নাই।’ বলে মজিদ খালাসি।

পায়েরও আবার বুদ্ধি থাকে! মনে মনে খুশি হয় জঙ্গুরুল্লা। সে আড়চোখে তাকায় তার নিন্দিত পা দুটোর দিকে।

‘বেড়ে মাছ পাওয়া যায়?’ জিজ্ঞেস করে জঙ্গুরুল্লা।

‘আইজই বেড় পাতছে। কিছু তো পাইবই।’ দবির গোরাপি বলে।

‘ওরা চাউল-ডাউল, তেল-মরিচ ফালাইয়া গেছে না?’

‘হ কিছু ফালাইয়া গেছে। আমাগ বেবাকের তিন-চারদিন চইল্যা যাইব।’

‘শোন, ভাটাতো শুরু অইয়া গেছে। ওরা মাছ মাইরা আসুক। বেবাক মানুষ একখানে অইলে কথা কইমু তোমায় লগে। এক কাম করো, চাউল-ডাইল তো আছেই। বেড়ে মাছও পাওয়া যাইব। রান্দনের আয়োজন কর। আইজ বেবাক মানুষ একখানে বইস্যা আমার লগে খাইব।’

‘হ, আয়োজন করতে আছি।’ মজিদ খালাসি বলে।

‘শোন, বেড়ের মাছ ধরতে গিয়ে ধানেরে পাড়াইয়া-চড়াইয়া যেন বরবাদ না করে। তোমরা গিয়া হুঁশিয়ার কইর‍্যা দিয়া আসো।’

‘হ যাই।’

মজিদ খালাসি চলে যায়।

‘চরের পাহারায় কারা আছে?’

‘চাকইর‍্যারা আছে। আর যারা বেড়ে মাছ ধরতে গেছে তারাও নজর রাখব।’ দবির গোরাপি বলে।

‘ওরা আর আইতে সাহস করব না। কি মনে অয় তোমাগ, আইব ওরা? ওরা আইব ক্যামনে? কি লইয়া আইব? ওগ বেবাক আতিয়ার তো আমাগো দখলে।’

‘হ, আতিয়ার বানাইয়া তৈয়ার অইতে বহুত দেরি। যহন আইব, আইয়া দ্যাখব রাইস্যা গাঙ চরডারে খাবলা দিয়া লইয়া গেছে।’

সবাই হেসে ওঠে।

হঠাৎ হাঁক ছাড়ে জঙ্গুরুল্লা, ‘মাঝিমাল্লাগুলা গেল কই? হারামজাদারা এতক্ষণের মইদ্যে এক ছুলুম তামুক দিয়া গেল না। অই কেরা, অ ফেকু–’

দবির গোরাপি উঠে পানসির দিকে দৌড় দেয়।

জঙ্গুরুল্লা তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে, ‘থাউক তোমার যাওনের দরকার নাই। আমিই নৌকায় গিয়া বসি। বেড়ে কি মাছ পাও আমারে দ্যাখ্যাইয়া নিও।’

জঙ্গুরুল্লা নৌকায় উঠে ছই-এর বাইরে পাটাতনের ওপর বসে। মাঝি কেরামত ফরসি হুঁকোয় তামাক সাজিয়ে দীর্ঘ নলটা এগিয়ে দেয় তার দিকে। সে নলে মুখ দিয়ে টানে গুড়ুক—গুড়ুক।

দবির গোরাপি, হরমুজ, জহির ও আরো কয়েকজন দাঁড়িয়েছিল পাড়ে।

‘ও জহির, ও হরমুজ।’

‘জ্বী।’

‘তোরা নৌকারতন শিকল নিয়া যা। দবিররে লইয়া চরটার মাপ-জোখ নে।’

জহির নৌকা থেকে জমি মাপার শিকল নিয়ে নামে।

জঙ্গুরুল্লা আবার বলে, ‘ওরা কেম্বায় জমি ভাগ করছিল, জানোনি দবির?’

‘হ, চরডারে দুই ভাগ করছে পয়লা। উত্তরে একভাগ আর দক্ষিণে একভাগ। হেরপর আট আতি নল দিয়া মাইপ্যা ভাগ করছিল।’

‘ঠিক আছে, আমরাও এই নলের মাপেই ভাগ করমু। ওরা যেই আইল বানছিল সেই আইল ভাঙ্গনের দরকার নাই। শিকল দিয়া নলের মাপ ক্যাদায় দিবা, জানোনানি?’

‘জানি।’ হরমুজ বলে। ‘আঠারো লিঙ্কে আট হাত, মানে একনল।’

‘ঠিক আছে তোরা যা। দুফরে খাওনের পর জমি ভাগ-বাটারার কাম করণ যাইব।’

পুবদিক থেকে স্টিমার আসছে। এ সময়ে খাটো চোঙার জাহাজ–দেখেই জঙ্গুরুল্লা বুঝতে পারে এটা কোন লাইনের জাহাজ। চাঁদপুর থেকে গোয়ালন্দ যাচ্ছে চাটগাঁ মেল। আবার পশ্চিম দিক থেকেও আসছে একটা লম্বা চোঙার স্টিমার। এটা নিয়মিত কোনো যাত্রীজাহাজ নয়–জঙ্গুরুল্লা বুঝতে পারে।

কোনো একটার থেকে পানি মাপা হচ্ছে। দূর থেকে তারই ঘোষণার সুর অস্পষ্ট ভেসে আসছে কিছুক্ষণ পর পর—‘দুই বাম মিলে-এ-এ-এ-এ–না–আ–আ—আ।’

‘কেরা, মজবুত কইর‍্যা নাও বাইন্দা রাখ। জবর ঢেউ ওঠব। দুই জাহাজের ঢেউ।’

কেরামত পানসিটাকে কিনারা থেকে কিছুদূর সরিয়ে দুই মাথি বরাবর লগি পুঁতে রশিতে আয় রেখে শক্ত করে বাঁধে।

স্টিমার দুটো পরস্পরের দিকে এগিয়ে আসছে।

‘পুঁ–উ-ত।’ মেয়েলি মিহি আওয়াজে দীর্ঘ সিটি বাজায় লম্বা জাহাজ।

‘ফুঁ-উ-ত।’ চাটগাঁ মেল সিটির জবাব দেয় পুরুষালি মোটা বাজখাই আওয়াজে।

‘এই কেরা, জাহাজ দুইডা হুইসাল মারলো ক্যান্ জানস নি?’

‘হ, আমরা যেমুন নাও বাওনের সময় আর একটা নাও দ্যাখলে কই, হাপন ডাইন, জাহাজ দুইডাও হুইসাল দিয়া কইল হাপন বাম–যার যার বাঁও দিগ দিয়া যাও।’

‘দুও ব্যাডা, পারলি না কইতে। লম্বা চুঙ্গা হুইসাল দিয়া কইল–সেলামালেকুম, কেমুন আছেন? খাডো চুঙ্গা জ’ব দিল–আলেকুম সালাম। ভাল আছি। তুমি কেমুন আছ?’

খুনের চরের উত্তর দিক দিয়ে স্টিমার দুটো একে অন্যের পাশ কাটিয়ে চলে যায়। পূর্বগামী জাহাজটিতে বোঝাই হয়ে যাচ্ছে দেশী-বিদেশী সৈন্য।

‘এত সৈন্য যায় কই, হুজুর।’ কেরামত জিজ্ঞেস করে।

‘যায় লড়াই করতে। আমরা যেমুন চর দখলের লেইগ্যা বিপক্ষের লগে মারামারি করি, ওরাও তেমুন যাইতেছে বিপক্ষের লগে লড়াই করতে।’

একটা চাঙারি তিনজনে ধরাধরি করে এনে পানসির মাথির ওপর রাখে। তিনজনই শীতে কাঁপছে ঠকঠক করে। ওদের সাথে এসেছে মজিদ খালাসি। সে বলে, কিরে তোরা শীতে এমুন ঠকঠকাইতে আছস ক্যান? তোগ এত শীত! এই শীত লইয়া পানির মইদ্যে মাছ ধরলি ক্যামনে?’

‘মাছ ধরনের কালে শীত টের পাই নাই।’ বলে ওদের একজন। ‘মাছ ধরনের নিশার মইদ্যে শীত আইতে পারে নাই। এহন বাতাস গায়ে লাগতেছে আর শীত করতেছে।’

জঙ্গুরুল্লা খাস কামরায় গিয়ে গড়াগড়ি দেয়ার আয়োজন করছিল, শব্দ পেয়ে বেরিয়ে আসে। মাছ দেখে সে খুশি হয় খুব। অনেক মাছ! কমসে কম পনেরো সের দুই ওজনের একটা কালিবাউস। আর সবই ছোট মাছ-ট্যাংরা, পুটি, পাবদা, চাপিলা, বাতাসি, বেলে, বাটা, চিংড়ি।

‘বড় মাছ দুইডা এহনো জিন্দা আছে। দুইডারে দড়ি দিয়া বাইন্দা জিয়াইয়া রাখো।’ জঙ্গুরুল্লা বলে। ‘ঐ দুইডারে বাড়িতে লইয়া যাইমু। কইরে, কেরা, একটা দড়ি লইয়া আয়।’

কেরামত মাছ দুটোর কানকোর ভেতর দিয়ে রশি ঢুকিয়ে মুখ দিয়ে বার করে। তারপর গিঁট দিয়ে পানিতে ছেড়ে দেয়। রশির অন্য প্রান্ত বেঁধে রাখে পানসির ঘষনার সাথে।

‘মাছগুলা লইয়া যাও।’ জঙ্গুরুল্লা বলে। ‘হাতে হাতে কুইট্যা রান্দনের আয়োজন করো।’

চাঙারিটা তিনজনে ধরাধরি করে নিয়ে যায়। ওদের তিনজনের একজন মজিদ খালাসির ছেলে ফজিলত।

কিছুদূর গিয়ে ফজিলত বলে, ‘দ্যাখলেন নি? এই মাঘ মাইস্যা শীতে ক্যাদার মইদ্যে কষ্ট কইর‍্যা মাছ ধরলাম আমরা। আর উনি বড় মাছ দুইডা থাবা মাইর‍্যা লইয়া গেল। মাইনষে কয় কথা মিছা না–শুইয়া রুই, বইস্যা কই, ক্যাদা ঘাইট্যা ভ্যাদা।’

‘এই ফজিলত, চুপ কর।’ মজিদ খালাসি ধমক দেয়। ‘হুজুরের কানে গেলে বাঁশডলা দিয়া চ্যাগবেগা বানাইয়া দিব। তহন ভ্যাদা মাছও পাবি না।’

‘আপনেরা মোখ বুইজ্যা থাকেন বুইল্যাইতো আপনেগ চ্যাগবেগা বানাইয়া রাখছে।’

‘আরে আবার কথা কয়! চুপ কর হারামজাদা।’

একটু থেমে অন্য লোক দুটিকে অনুরোধ করে মজিদ খালাসি, ‘ও মিয়া ভাইরা, তোমরা কুন্তু এই নাদানের কথা হুজুরের কানে দিও না।’

চরধানকুনিয়া পদ্মার জঠরে বিলীন হয়ে গেছে গত বর্ষার সময়। সেখানে বাইশ ঘর কোলশরিকের বসত ছিল। চরভাঙা ভূমিহীন আর সব মানুষের মতোই তারা ভেসে যায় অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে। কয়েকজন বউ-ছেলে-মেয়ে নিয়ে আসাম চলে গেছে। সেখানে জঙ্গল সাফ করে জমি আবাদ করলেই নাকি জমির মালিক হওয়া যায়। কয়েকজন পুরানো কাঁথা-কাপড়, হাঁড়ি-পাতিল, গাঁটরি-বোচকা বেঁধে পরিবারসহ চলে গেছে শহরে। চরভাঙা এ সব মানুষের দিনের আশ্রয় রাস্তার বট-পাকুড় গাছের তলা আর রাতের আশ্রয় অফিস আদালতের বারান্দা। যাদের সামান্য কিছু জমা টাকা আছে তারা কষ্টে-সৃষ্টে ঝুপড়ি বেঁধে নেয় বস্তি এলাকায়। পুরুষেরা কুলি-মজুরের কাজ পেলে করে, না পেলে শুয়ে বসে কাটিয়ে দেয় সারাদিন। বউ-ছেলে-মেয়ে চাকুরে-ব্যবসায়ীদের বাসা-বাড়িতে ঝি-চাকরের কাজ জুটিয়ে নেয়। এমনি করে খেয়ে না খেয়ে শাক-পাতা অখাদ্য-কুখাদ্য পেটে জামিন দিয়ে এরা দিন গোনে, রাত গোনে। এরা চাষের কাজে, ফসল উৎপাদনের কাজে আর কোনো দিন ফিরে আসে না চরের মাটিতে। ইচ্ছে থাকলেও আসতে পারে না আর। জমি পেতে হলে সেলামি দিতে হয়। কিন্তু সেলামির টাকা সারা জীবনেও কেউ যোগাড় করতে পারে না।

চরধানকুনিয়ার চারজন এখানে-সেখানে কাজের সন্ধানে ঘুরে হতাশ হয়ে ফিরে আসে। তারা বউ-ছেলে-মেয়ে নিয়ে পাতনা দিয়ে আছে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ি। অন্যের জমিতে কামলা খেটে তারা অনাহারে অর্ধাহারে দিন গুজরান করে।

জঙ্গুরুল্লা খুনের চর দখল করেছে–খবর পেয়েই তারা অনেক আশা নিয়ে এসেছে তার সাথে দেখা করতে। তারা পানসির কাছে ঘোঁজার কিনারায় চুপচাপ বসে থাকে, শুনতে থাকে জঙ্গুরুল্লার নাকডাকানি। সে খাস খোপে বিশ্রাম নিচ্ছে। তার বিশ্রামের কোনো রকম ব্যাঘাত না হয় তার জন্য মাঝি কেরামত এদের সাবধান করে দিয়েছে।

নাকডাকানি কখন শেষ হবে বুঝতে পারে না অপেক্ষমাণ লোকগুলো। তারা আশায় বুক বেঁধে ধৈর্য ধরে বসে থাকে।

জঙ্গুরুল্লার ঘুম ভাঙে যখন পেটে টান লাগে। উঠেই সে রূপার চেনে বাঁধা পকেট ঘড়িটা বের করে দেখে।

‘আরে, তিনটাতো বাইজ্যা গেছে! ইস, জহুরের নামাজটা কাজা অইয়া গেল! ও কেরা রান্দনের কি অইল?’

‘এহনো অয় নাই।’ কেরামত বলে। ‘মনে অয় খাইল্যা ঘাসের আগুনে তেজ নাই।’

‘তুই খবর দে। শীতকালের বেলা। আর এট্টু পরেই আন্ধার ঘনাইয়া আইব।’

‘হ, খবর দিতে আছি। হুজুর, চাইরজন মানুষ আইছে আপনের লগে দ্যাহা করনের লেইগ্যা।’

‘কারা? কি ব্যাপারে আইছে?’

‘চিনি না। কি ব্যাপারে কিছু কয় নাই।’

জঙ্গুরুল্লা খাস খোপ থেকে বেরিয়ে গলুইয়ের ওপর দাঁড়ায়।

‘আসলামালেকুম।’ একসাথে সালাম দেয় চারজন।

‘ওয়ালাইকুম সালাম। তোমরাই দ্যাখা করতে আইছ?’

‘হ হুজুর। দলের মুরব্বি তোবারক বলে।’

‘কও, ত্বরাত্বরি কও। আমার অত সময় নাই।’

‘হুজুর, আমাগ ধানকুনিয়ার চর রসাতল অইয়া গেছে। আমাগ আর কিছু নাই।’

‘আমি কি করতে পারি, কও?’

‘আমাগ কিছু জমি দ্যান। আমাগ বাঁচনের একটা রাস্তা কইর‍্যা দ্যান।’

‘দুনিয়াশুদ্ধ মানুষের বাঁচনের রাস্তা কি আমার বানাইতে অইব?’

‘হুজুর আমাগ বাঁচনের আর কোন পথ নাই। আমরা গেছিলাম কালামাডি।’

‘কালামাটি মানে টাটানগর?’

‘হ, টাটানগর, বানপুর।’

‘সেইখানে তো শুনছি বহুত মানুষ কামে ভর্তি করতেছে। লড়াইর সরঞ্জাম বানাইতে আছে।’

‘হ, ভর্তি করতে আছে। হেই খবর পাইয়া গেছিলাম। কিন্তু সরদারগ, দালালগ দুইশ রুপিয়া না দিলে কোনো কামে ভর্তি অওয়ন যায় না।’

‘দিয়া দিতা দুইশ রুপিয়া।’

‘হুজুর দুইশ ট্যাহা কি গাছের গোড়া? আমরা গরিব মানুষ। পাইমু কই এত ট্যাহা?’

‘টাকা ছাড়া দুইন্যাই ফাঁকা। বোঝ্‌লা? তোমরা ওইখানে টাকা দিতে পার নাই, আমার সেলামির টাকা দিবা কইতন?’

‘আস্তে আস্তে শোধ কইরা দিমু।’

‘দুও ব্যাটারা। নগদ সেলামি দিয়া মাইনষে জমি পায় না। আর তোরা আইছস বাকিতে  জমি নিতে। যা-যা অন্য কিছু কইর‍্যা খা গিয়া।’

‘হুজুর।’ তোবারকের কথার স্বরে আকুল আবেদন।

‘আর প্যাচাল পাড়িস না তো। কইলামতো অন্য কিছু কইর‍্যা খা গিয়া।’

মজিদ খালাসি ও দবির গোরাপি এসে খবর দেয়, ‘রান্না হয়ে গেছে।’ তাদের আসার পর লোক চারজন আর কিছু বলার সুযোগ পায় না।

জঙ্গুরুল্লা একটুও দেরি না করে একেবারে খাবার জায়গায় গিয়ে বসে। খাবার জায়গা বাইরেই করা হয়েছে।

খাদিমদারির জন্য কয়েকজন বাদে সবাই যার যার থালা নিয়ে গামছা বিছিয়ে বসে।

খেতে খেতে আছরের নামাজও কাজা হয়ে যায়। সেজন্য দুঃখ প্রকাশ করে জঙ্গুরুল্লা। সে বলে, ‘মাগরেবের নামাজের পর বৈঠক শুরু অইব।’

এরফান মাতব্বরের তৈরি ভাওরবাড়ির এক ঘরে হারিকেনের আলোয় বৈঠক বসে। বিশিষ্ট কয়েকজন কোলশরিক নিয়ে জঙ্গুরুল্লা দুই ছেলেসহ সেখানে বসে। বাকি সবাই মাথায় গামছা বেঁধে গায়ে চাদর জড়িয়ে উন্মুখ হয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে।

‘হরমুজ, চরটার মাপজোখ নিছস?’

‘হ, পুবে পশ্চিমে সাড়ে ছয়চল্লিশ চেইন, উত্তর দক্ষিণে উনিশ চেইন।’

‘ওরা তো আটহাতি নল দিয়া মাইপ্যা ভাগ করছিল। কত নল অয় হিসাব করছস?’

‘হ করছি।’ দবির গোরাপি বলে। ‘ওরা পুবে পশ্চিমে মাঝ বরাবর দুই ভাগ করছিল চরডারে। উত্তর দিগে ঘোঁজা বাদ দিয়া দুইশ ছয়চল্লিশ নল আর দক্ষিণ দিগে দুইশ আটান্ন নল।’

‘মোট কত অয়?’

‘পাঁচ শ’ চার নল।’

‘আমাগ কোলশরিক অইল সাতষট্টি। সব্বাইকে ছয় নল কইর‍্যা দিলে, কত নল লাগে? কাগজ কলম লও, ও মজিদ।’

মজিদ খালাসি অঙ্ক কষে বলে, ‘চারশ দুই নল।’

‘ঠিক আছে, এম্বায়ই ভাগ করো। একশ দুই নলের হিসাব পরে অইব।’

পানসির মাল্লা ফেকু তামাক সাজিয়ে লম্বা নলটা এগিয়ে দেয় জঙ্গুরুল্লার দিকে। সকলের সামনে নিজের বাহাদুরি প্রকাশের স্পৃহা সে দমন করতে পারে না। বলে, ‘এই মিয়ারা, বাইরে কারা আছ? মন লাগাইয়া শোন। এরফান মাতবরের দলরে কেমুন চক্করটা দিলাম। কেমনে ছাপ্পরছাড়া কইর‍্যা দিলাম, হুহুহু। ওরা চাকইর‍্যা রাখছিল। আমি মনে মনে ঠিক করলাম, রাখুক ওরা চাকইর‍্যা। দেখি, ওগ বেতন দিয়া, খাওন দিয়া এরফান মাতবরের মিরদিনা কয়দিন সোজা থাকে। ওগ টাকা পয়সার যখন ছেরাদ্দ অইয়া গেছে, সুতা যখন খতম, তখনি দিলাম একখান গোত্তা। ব্যস, বৌকাট্টা–আ—আ–।’

সবাই হেসে ওঠে। দবির গোরাপি বলে, ‘হুজুর কি ছোডকালে ঘুড়ি উড়াইছেন নি?’

‘আরে, ছোডকালে ঘুড্‌ডি আবার কে না উড়ায়! শোন, তোমাগ পরামিশ মতন যদি তখন তখনি চর দখল করতে যাইতাম, তয় কি অইত? খুনাখুনি অইত, মামলা-মকদ্দমা অইত। কিন্তু এমন খেইল দ্যাখাইলাম, আমার আক্কেলের ঠেলায় ওগ আক্কেল গুড়ুম।’

আবার খিকখিক করে হেসে ওঠে সবাই। মজিদ খালাসি বলে, ‘হু, আপনে যেই খেইল দ্যাহাইছেন, ওগ বেবাক গেছে–ট্যাহা-পয়সা, হাতিয়ার-সরঞ্জাম। আমাগও আর খুনাখুনি মামলা-মকদ্দমার ঝামেলায় পড়তে অইল না।’

‘ওগ টাকা পয়সা বেবাক খতম। ওরা আর আইব ক্যামনে চর দখল করতে?’

‘হ, ওরা আর আইতে পারব না।’ দবির গোরাপি বলে।

‘আর দ্যাখো, তোমায় বুদ্ধি মতন যদি তখনি চর দখলের হামতাম করতাম, তয় এমনু তৈয়ার ধান পাইতা কই? কি মজা আঁ? ধান বোনে হাইল্যা, পেট ভরে বাইল্যা।’

সবাই হি-হি, হো-হো করে হেসে উঠে।

‘এই বাইল্যার গুষ্টি, হাসনের কি অইল? তৈয়ার ধান তো পাইতেছ। আমারে সেলামি কত কইরা দিবা?’

‘আপনেই ঠিক করেন।’ মজিদ খালাসি বলে।

‘নল পিছু পঞ্চাশ টাকা কইর‍্যা দিও।’

‘পঞ্চাশ ট্যাহা খুব বেশি অইয়া যাইতেছে। এরফান মাতবর নিছিল পঁচিশ ট্যাহা কইর‍্যা।’ একজন কোলশরিক বলে।

‘আরে! এরফান মাতবরের লগে আমার তুলনা, আঁ! ঐ পঁচিশ টাকার জমি আছে? ঐ জমিতো গরবাদ! চাউলে পাতিলে তল! আমি পঞ্চাশ টাকা সেলামি নিয়া জমি দিমু। কারো বাপের সাধ্য নাই এই জমির কাছে আসে।’

সবার অনুরোধে শেষে নল পিছু চল্লিশ টাকা সেলামি নিতে রাজি হয় জঙ্গুরুল্লা।

বৈঠক শেষ করে উঠবার সময় জঙ্গুরুল্লা বলে, ‘আমার ফন্দি-ফিকিরে তৈয়ার ধান পাওয়া গেছে। এই ধানের অর্ধেক আমার, মনে রাইখ্য মিয়ারা।’

কোলশরিকদের কেউ আপত্তি করে না।

মজিদ খালাসি হারিকেন নিয়ে আগে আগে চলে। তার পেছনে হাঁটে জঙ্গুরুল্লা ও তার দুই ছেলে। কোলশরিক ও তাদের জোয়ান ছেলেরা তাদের অনুসরণ করে দল বেঁধে।

এতই রঙ্গেরই খেলা জান হায়রে মন,

এতই রঙ্গেরই খেলা জান।

দোতারা বাজিয়ে গান গাইছে কেউ।

‘গান গাইছে কেডা ও?’ জঙ্গুরুল্লা জিজ্ঞেস করে।

‘কোনো ব্যাপারি নায়ের মাঝি না অয় মাল্লা অইব মনে অয়।‘ মজিদ খালাসি বলে।

‘হ, অনেক পরদেশী নাও এই ঘোঁজায় পাড়া গাইড়া জিরায় তামাম রাইত।’ দবির গোরাপি বলে।

‘বানাইয়া আদম নবী

বেহেশত করিলা রে খুবী,

গন্দম খাইতে মানা কেন রে,

গন্দম খাইতে মানা কেন?

খাওয়াইয়া গন্দম দানা

ছাড়াইলা বেহেশতখানা॥

কি কৌশলে সংসারেতে আন

হায়রে মন।

এতই রঙ্গেরই খেলা জান॥

‘মকরমরে কও দাগা কর,

আদমরে কও হুঁশিয়ার,

শত্রু তোমার জানিও শয়তান রে,

শত্রু তোমার জানিও শয়তান।

দাগা কর, নাহি পড়,

কে বুঝিবে খেলা তোর॥

এর ভেদ তুমি মাত্র জান

হায়রে মন।

এতই রঙ্গেরই খেলা জান॥

‘নমরুদ পাপীয়ে বল,

ইব্রাহিম অগ্নিতে ফেল

আগুনরে করহ বারণ রে,

আগুনরে করহ বারণ।

ইব্রাহিমকে দাও কোরবানি॥

ছুরিরে নিষেধ করো পুনঃ

হায়রে মন।

এতই রঙ্গেরই খেলা জান॥

কেহ পাপী, কেহ ভক্ত

কেহ ফকির, কেহ তখ্‌ত,

খেলা তোমার না যায় বুঝন রে,

খেলা তোমার না যায় বুঝন।

কি বুঝিবে বেঙ্গু ভ্রান্ত,

তোমার খেলার নাহি অন্ত॥

তোমারে না বোঝে অজ্ঞ জন

হায়রে মন।

এতই রঙ্গেরই খেলা জান॥

গানের কথা ও সুরে সবাই অভিভূত। বিমোহিত তাদের মন। যতক্ষণ গান চলছিল একটা কথাও কেউ বলেনি।

গান শেষ হলে দবির গোরাপি বলে, ‘একটা মনের মতো গান হুনলাম।’

‘হ গানডা খুব চমৎকার।’ অনেকেই বলাবলি করে।

সবাই পানসির কাছে এসে গিয়েছিল গান শেষ হওয়ার আগেই। তারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গান শুনছিল। ঐ সময়ে জঙ্গুরুল্লার চোখ জোছনার আলোয় জরিপ করছিল ঘোঁজাটা। অনেক কয়টা বড় মালের নৌকা পাড়া গেড়ে আছে ঘোঁজায়।

‘মজিদ, দেইখ্যা আস তো কয়ডা নৌকা আর নৌকায় কি মাল বোঝাই?’

জঙ্গুরুল্লা ছেলেদের নিয়ে পানসিতে ওঠে। মজিদ খালাসি আর দবির গোরাপি চলে যায় নৌকার খোঁজ খবর নিতে।

কিছুক্ষণ পরে তারা ফিরে এসে জঙ্গুরুল্লাকে জানায়–‘নৌকার সংখ্যা বার। তিনটা চালের নৌকা—খুলনা থেকে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জে। একটায় ঝুনা নারকেল বরিশালের নলসিটি থেকে ঢাকা যাচ্ছে। একটায় পেঁয়াজ যাচ্ছে কুষ্টিয়ার জগন্নাথপুর থেকে চাঁদপুর। একটায় আলু–যাচ্ছে কমলাঘাট থেকে ফরিদপুর। একটায় তেজপাতা যাচ্ছে কমলাঘাট থেকে রাজবাড়ি। একটায় খেজুর গুড়–মাদারীপুর থেকে যাচ্ছে ঢাকা। চারটা নৌকা খালি। সেগুলো বিভিন্ন বন্দরে যাচ্ছে মাল কেনার জন্য।’

‘এই মজিদ, আমাগ জাগায় নাও রাখছে। খাজনা আদায় করো, তোলা উডাও।’ জঙ্গুরুল্লা নির্দেশ দেয়।

‘যদি না দিতে চায়।’

‘দিতে না চাইলে পাড়া উড়াইয়া চইল্যা যাইতে কও এইখানতন।’

মজিদ খালাসি ও দবির গোরাপি জঙ্গুরুল্লার নির্দেশ মতো তোলা উঠিয়ে চলে আসে কিছুক্ষণ পর। তিনটা নৌকা থেকে পাওয়া গেছে সের পাঁচেক চাল। অন্যগুলো থেকে পাওয়া গেছে একজোড়া নারকেল, সের দুই পেঁয়াজ, সের খানেক আলু, পোয়াটাক তেজপাতা আর মুছি খেজুরগুড় আটখান। সবগুলো এনে তারা পানসিতে তুলে দেয়। জঙ্গুরুল্লা খুশি হয়।

‘রাইত অনেক অইছে। আর দেরি করণ যায় না।’ জঙ্গুরুল্লা বলে। তারপর সে হাঁক দেয়, ‘এই কেরা, এই ফেকু নাও ছাইড়া দে ত্বরাত্বরি।’

পাড়া উঠিয়ে পানসি ছেড়ে দেয় কেরামত।

খাস খোপে হারিকেন জ্বলছে। হরমুজ ও জহিরকে বলে জঙ্গুরুল্লা, ‘নাও জিরানের এমুন সোন্দর একখান ঘোঁজা আশেপাশের কোনো চরে নাই।’

‘হ, ঠিকই। নাও রাখনের লেইগ্যা জায়গা খুবই চমৎকার।’ হরমুজ বলে।

‘আইতে আছে চৈত্র-বৈশাখ মাস। আসমানে তুফাইন্যা মেঘ দ্যাখলে বহুত নাও আইয়া পাড়া গাড়ব এই ঘোঁজায়।’

‘হ, তহন অনেক নাও ঢুকব এই ঘোঁজায়।’ বলে হুরমুজ।

‘শোন, আমার মস্তকে একখান বুদ্ধি খেলছে। এই ঘোঁজায় নাও রাখলেই খুঁটগাড়ি আদায় করন লাগব। তাতে আমাগ অনেক পয়সা আয় অইব।’

‘খুঁটগাড়ি আদায় করলে যদি এইখানে নাও না রাখে।’ বলে জহির।

‘রাখব না ক্যান্? নাও যাতে অন্য জা’গায় না রাখে তার একটা ফিকিরও আমার মগজের মইদ্যে ঘুরতে আছে। তোরা রউজ্যারে খবর দিস। সে যে কালই আমার লগে দ্যাখা করে।’

ভাটি পানি। তবুও দূরের পথ বলে বাড়ির ঘাটে পৌঁছতে পানসিটার অনেক সময় লাগে।