» » পঁচিশ

বর্ণাকার

কদম শিকারি পকেট ঘড়িটা বুঝিয়ে দেয় ফজলের হাতে। সে দেখে পৌনে পাঁচটা বাজে। বেলা ডুবতে দেরি আছে এখনো।

পাহারারত চল্লিশজন ছাড়া আর সবাই জড় হয় ফজলের চারপাশে। তারা মাটিতে গামছা বিছিয়ে বসে। সবার মনে খুশির প্লাবন। হাসিতে ঝলমল করছে সবার চোখ-মুখ।

‘কই চাচা লস্করের পো? আমাগ পোলাপাইন্যা কাণ্ড-কারখানা কেমুন দ্যাখলেন?’ হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করে ফজল।

‘হ মিয়া, একখান খেইল দেহাইছ।’ জাবেদ লশকর বলে।

‘আমাগ শরীলে একটা আঁচড়ও লাগে নাই। বিপক্ষের কোনো মানুষও খুন-জখম অয় নাই।’

‘রক্তারক্তি ছাড়া এমুন মারামারি আমার জীবনে কোনোদিন দেহি নাই।’ রজিম মিরধা বলে।

‘শোনেন, আঁউকড়াগুলা বেবাক টোকাইয়া রাখেন। চোত্‌রাগাছ গুলারে লাগাইয়া দ্যান এক জায়গায়। ভবিষ্যতে এগুলা কামে লাগব।’

‘আমাগ নায়ের মইদ্যে ওগ বিস্তর গুলি পইড়া রইছে।’ কদম শিকারি বলে।

‘হ, ওগুলা টোকাইয়া একখানে করেন। আরো কিছু গুলি যোগাড় করতে অইব। ওরা কিন্তু দখলে আসার চেষ্টা করব। চাকইর‍্যা লইয়া হামলা করব। ওগ নাও দ্যাখলেই আমাগ নৌকার দল গুলাইল লইয়া ওগ এক পাশে গিয়া গুলি মারতে শুরু করব। আমরাও চরেরতন গুলি ছাড়মু। দুই দিগের গুলি ওরা ঢাল দিয়া ফিরাইতে পারব না। চাকইর‍্যারা কিন্তু বেশির ভাগ বইস্যা বইস্যা আউগ্‌গায়, হাতিয়ার চালায়। ওগ কাবু করণের লেইগ্যা আঁকড়ার ঝাঁপটা মারতে অইব ওগ মাথায় আর পিঠে।’

‘আমাগ কিছু চাকইর‍্যা আইন্যা রাখন দরকার।’ রমিজ মিরধা বলে। ‘ট্যাহাতো আছেই।’

‘না। আর চাকইর‍্যা আননের দরকার নাই।’ ফজল বলে। ‘খামাখা টাকা খরচ করতে যাইমু কোন দুকখে? আমরা নিজেরাই ওগ হটাইয়া দিতে পারমু। কি কও জুয়ানরা পারবা না?’

‘হ, পারমু।’ সমস্বরে চেঁচিয়ে ওঠে কিশোর ও জোয়ানরা। জয়ের জোশে তারা উদ্দীপ্ত।

‘আপনারা আগে চাকইর‍্যার পিছে বেশুমার টাকা ঢালছেন। আর আমরা? আমরা অল্প খরচে কাম ফতে করছি।’

‘কত ট্যাহা খরচ অইছে?’ জাবেদ লশকর জিজ্ঞেস করে।

‘খুব অল্প। রামদাও, ঢাল, টর্চলাইট আর এইডা ওইডা কিনতেই যা খরচ অইছে। কাইলই জগু পোদ্দারের দোকানে যাইবেন। গয়নাগুলা বেবাক ছাড়াইয়া লইয়া আইবেন।’

‘হ, এইডা একটা কামের কাম অইব।’ মেহের মুনশি বলে।

‘হ, সুদ বড় জোর এক মাসের নিতে পারে।’ রমিজ মিরধা বলে।

‘এক মাসের সুদ আর আসল দিয়া গয়নাগুলা ফর্দের লগে মিলাইয়া ওজন কইর‍্যা লইয়্যা আইবেন।’ ফজল বলে।

‘হ, কাইলই গিয়া লইয়া আইমু।’ মেহের মুনশি বলে। ‘বউ-ঝিগ দায়-দাবির তলে আর থাকন লাগব না।’

‘কিন্তু মিয়া, এই চরে থাকতে গেলে খরচ লাগব না? ট্যাহা পাইবা কই?’ রমিজ মিরধা বলে।

‘টাকার লেইগ্যা ভাবনা নাই।’ ফজল বলে। ‘আমাগ বানাগুলা তো আছেই। সবাইরে লাগাইয়া দ্যান মাছ ধরতে। বেড়ের মাছ বেইচ্যা খরচ চালাইতে অইব। আমাগ চাঁই, দোয়াইর, খাদইন, পারন, ঝাঁকিজাল, ধর্মজাল, ইলশাজাল, মইজাল–মাছ ধরনের যত সরঞ্জাম ঐবার থুইয়া গেছিলাম, ওগুলা ওরা এই চরেই থুইয়া গেছে। বেবাক বিচরাইয়া বাইর করেন। এগুলা দিয়া মাছ ধরনের ব্যবস্থা করেন?’

‘তুমি কি আমাগ বেবাকটিরে জাউল্যা বানাইয়া দিতে চাওনি?’ শ্লেষ-মেশানো কণ্ঠে জাবেদ লশকর বলে।

‘কি যে কথা কন! পা-না-ধোয়ার কোলশরিকরা মাছ বেচে নাই? ওরাও তো বেড়ের মাছ বেইচ্যা সংসার চালাইছে। জঙ্গুরুল্লাও তো ঐ টাকার ভাগ নিছে। জাইত যাওনের ভয় খালি আপনাগ!’

ফজলের সমর্থনে প্রায় সবাই গুঞ্জন করে ওঠে।

ফজল আবার বলে, ‘আর শোনেন, ওরা কি কি জিনিস থুইয়া গেছে তার লিস্টি করেন। ঐগুলার মধ্যে আমাগ জিনিস, আমাগ হাতিয়ারও পাওয়া যাইব–যেগুলা আমরা ঐবার ফালাইয়া গেছিলাম। ঐগুলা আর ওগ তামাম হাতিয়ার আমরা রাইখ্যা দিমু। থালা-বাসন, লোটা-বদনা যা কিছু থুইয়া গেছে, সেগুলা কিন্তু রাখন যাইব না।’

‘ক্যান্? ওরাতো আমাগ জিনিস ফিরত দেয় নাই।’ কোলশরিকদের কয়েকজন প্রতিবাদ করে।

‘ঐগুলার মালিকতো আপনাগ মতন গরিব কোলশরিকরা। ঐগুলা যদি জঙ্গুরুল্লার অইত, তয় ফিরত দেওনের কথা কইতাম না। আমরা খুদ খাইয়া পেট নষ্ট করতে যাইমু ক্যান? ঐগুলা একখানে কইর‍্যা রাইতের আন্ধারে ওগ চরে ফালাইয়া দিয়া আইবেন। আপনারা কয়েকজন চইল্যা যান। আন্ধার হওয়ার আগে সবগুলা ভাওর ঘর তালাশ কইর‍্যা দেখেন, কোন ঘরে কি আছে। পোলাপানরা তালাশ করুক ধানখেতে। ওগ হাতিয়ার, আমাগ আঁউকড়া–বেবাক বিচরাইয়া লইয়া আসুক। মারামারির সময় ধানের গাছ কিছু নষ্ট অইছে। আর যেন নষ্ট না হয়।’

মাগরেবের নামাজের পর আবার সবাই জড় হয় ফজলের ভাওর ঘরের সামনে। তারা বিপক্ষ দলের ফেলে যাওয়া জিনিসপত্র নিয়ে আসে।

হারিকেনের আলোয় ফজল ও আরো কয়েকজন মিলে ফেরতযোগ্য জিনিসগুলো বেছে বেছে আলাদা করে। চাল-ডাল ইত্যাদি খাবার জিনিস ফেরত দেয়ার প্রয়োজন বোধ করে না তারা। কারণ তারাও পুলিসের ভয়ে পালাবার সময় অনেক খাবার জিনিস ফেলে গিয়েছিল এ চরে। চাল-ডাল-মশলাদি–যা ওরা রেখে গেছে তাতে বেশ কয়েকদিন চলে যাবে সকলের।

চর দখলের আনন্দে সবাই মেতে ছিল এতক্ষণ। খাবার কথা কারো মনেই হয়নি। চাল ডাল দেখে হঠাৎ খিদের তাড়না অনুভব করে সবাই। এক সাথে এত লোকের রান্না করার মতো বড় ডেগ নেই এখানে। ফজল দশটা চুলোয় দশ পাতিল খিচুড়ি রান্নার ব্যবস্থা করে দিয়ে আবার এসে আলোচনায় বসে।

জাবেদ লশকর বলে, ‘জঙ্গুরুল্লার মতন খুঁটগাড়ি আদায় করণ লাগব।’

‘হ, ঘোঁজায় নানা মুলুকের নাও আইস্যা পাড়া গাড়ে।’ ধলাই সরদার বলে। ‘খুঁটগাড়ি আদায় করতে পারলে অনেক ট্যাহা আমদানি অইব।’

‘উঁহু। আমরা খুঁটগাড়ি আদায় করমু না।’ ফজল বলে।

‘ক্যান। এত বড় একখান আয়ের সুযোগ—’

‘ঘোঁজায় নৌকা রাখে আশ্রয়ের লেইগ্যা। আশ্রয়ের বদলে কিছু আদায় করা ঠিক অইব না। আমরা যদি খুঁটগাড়ি আদায় করতে শুরু করি, তয় নৌকা আর একটাও এই ঘোঁজায় আসব না। মাঝিরা অন্য চরের কোনা-কাঞ্ছিতে গিয়া নাও রাখব। আপনাগ কাছেই তো শুনছি। রউজ্যার কাণ্ড। যদি ওর মতন ডাকাতি করতে পারেন, তবে ডাকাতির ভয়ে কিছু নৌকা আসতে পারে এই ঘোঁজায়।’

হঠাৎ একটা শোরগোল শোনা যায়।

সবাই সচকিত হয়ে এদিক ওদিক তাকায়। তারা দেখতে পায়, চরমান্দ্রার অনেক পুবে, কোনো একটা চরে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। আগুনের লেলিহান জিভ লকলক করে উঠছে আকাশে।

‘তোমরা বোঝতে পারছনি, ব্যাপারখান কি?’ জাবেদ লশকর বলে। ‘কী মনে অয় তোমাগ?’

‘এইডা জঙ্গুরুল্লার কারসাজি।’ রমিজ মিরধা বলে। ‘নিজেগ ঘরে আগুন লাগাইয়া আমাগ বিরুদ্ধে থানায় ইজাহার দিব।’

‘তুমি ঠিকই ধরছ।’ জাবেদ লশকর বলে। ‘জঙ্গুরুল্লা ঐবার নাহক ডাকাতি মামলায় আমাগ আসামি দিয়া চর দখল করছিল। এইবার আবার ঘর পোড়নের মামলা দিয়া পুলিস সুলাইয়া দিব আমাগ ধরতে।’

জাবেদ লশকর নিচু গলায় বলে, ‘একটা কাম করলে অয়। কিন্তু বেবাকের সামনে কওন যাইব না।’

চলেন ঘরে গিয়া বসি।

‘ও মিয়ারা তোমরা গিয়া পাত পাইত্যা বস। মনে অয় খিচুড়ি এতক্ষণে রান্দা অইয়া গেছে।’

‘হ, তোমরা যাও। আমরা আইতে আছি।’

ফজল একটা হারিকেন হাতে করে পুলকি মাতব্বরদের নিয়ে তাদের ভাওর ঘরে গিয়ে বসে।

‘বলেন, কি বলতে চাইছিলেন?’ ফজর উৎসুক হয়ে তাকায় জাবেদ লশকরের দিকে।

সে চাপা গলায় বলে, ‘আমরাও একটা ঘরে আগুন লাগাইয়া ওগ নামে ইজাহার দিমু।’

‘উঁহু, এইডা ঠিক অইব না।’

‘কী যে কও তুমি! জানো না, বিষ দিয়া বিষ মারতে অয়? কাডা দিয়া কাডা খুলতে অয়?’

‘তা তো জানি। কিন্তু ডাহা মিথ্যারে সত্য বইল্যা প্রমাণ করতে পারবেন?’

‘ক্যান্ পারমু না? ওগ পিঠে আমাগ গুলির দাগ আছে না?’

‘হ, কিছু লোকের শরীরে গুলিতো লাগছিলই।’

‘হোন, আমরা এই বুইল্যা ইজাহার দিমু—অমুক, অমুক, অমুক, আরো দশ বারোজন আমাগ ঘরে আগুন লাগায়। আমরা টের পাইয়া যখন গুলাইল মারতে শুরু করি তখন ওরা দুইডা শড়কি ফালাইয়া ভাইগ্যা যায়। আমাগ গুলির দাগ আছে ওগ শরীলে।’

‘ওরা দিব ঘর পোড়ার ইজাহার, আমরাও যদি ঘর পোড়ার পাল্টা ইজাহার দেই তা দারোগা বিশ্বেস করব না।’ রমিজ মিরধা বলে। ‘তার চাইয়া ডাকাতির মামলা সাজাও। জঙ্গুরুল্লার দুই পোলা ও আরো দশ বারোজন রামদাও শড়কি লইয়া ডাকাতি করতে আইছিল। আমাগ গুলাইলের গুলি খাইয়া একটা রামদাও আর দুইডা শড়কি ফালাইয়া ওরা ভাইগ্যা যায়। ওগ শরীলে আমাগ গুলির দাগ আছে।’

‘ইজাহার দেওয়া সোজা।’ ফজল বলে। ‘সাক্ষী-সাবুদ দিয়া প্রমাণ করা বড় কঠিন। জোরে কচ্‌লান দিলে কোন্‌টা সত্য, কোটা মিথ্যা বাইর অইয়া পড়ে। মাইনষে কইতেই কয়–সাচ্চা গুড় আন্ধার রাইতেও মিডা।’

‘তা অইলে কী করতে চাও? আমাগই খালি পুলিস দিয়া অয়রান করব আর আমরা চুপ কইর‍্যা সইজ্য করমু।’

‘আমাগ হয়রান করতে ওরাও হয়রান অইয়া যাইব, ওগ টাকার শেরাদ্দ অইব। আমরা এত টাকা খরচও করমু না, আর মাইনষের নাহক হয়রানির মইদ্যেও ফেলমু না। শোনেন, আমাগ কোলশরিক যারা পাতনা দিয়া আছে অন্যের জাগায়, তারা এই রাইতের মইদ্যে বউ পোলাপান, হাঁস-মুরগি, গিরস্থালির বেবাক মাল-সামান লইয়া আইব এই চরে। ভাওর ঘরে গিরস্তালি শুরু করব। যার যার গরু-বাছুর কাইল সকালের মইদ্যে আইন্যা বাইন্ধা থুইব ঐ বাথানে। দারোগা-পুলিস আইলে যেন বুঝাইয়া দিতে পারি, এই চর আমাগ। আমরা ধান লাগাইছি, কলাগাছ লাগাইছি। বাপ-দাদার আমলতন এই জা’গার চর আমাগ। এইখানে কতবার চর জাগছে, কতবার ভাঙছে। কিন্তু আমরা সব সময় খাজনা চালাইয়া আইছি। আমাগ পর্চা-দাখিলা আছে। জঙ্গুরুল্লার কি আছে? পারব কোনো কাগজ দেখাইতে?’

‘না, ওরা কাগজ দেহাইব কইতন?’ মেহের মুনশি বলে। ‘হুনছি বিশুগাঁয়ের রায়চদরীগ তিন বচ্ছরের খাজনা দিয়া আমলদারি নিছে জঙ্গুরুল্লা। দেহাইলে ঐ আমলদারি আর খাজনার দাখিল দেহাইতে পারে। কিন্তু আগের আমলের কোনো কাগজ দেহাইতে পারব না।’

‘রায়চৌধুরীগ কান্দার চর তো আছিল অনেক দক্ষিণ-পশ্চিমে। সেই চর তো ভাইঙ্গা গেছে ছয়-সাত বছর আগে। জমিদারগ শয়তানি দ্যাখেন না। নিজেগ চরের নাম-নিশানা নাই। তবু তারা আমলদারি দিছে জঙ্গুরুল্লারে। সে এখন আমাগ চর খাবলা দিয়া নিতে চায়।’

‘হ, জমিদাররা এম্বায়ই যত আউল-ঝাউল লাগায় আর আমরা মারামারি কইর‍্যা মরি।’

‘শোনেন, দারোগা-পুলিস কাইল পরশুর মইদ্যে আইসা পড়ব মনে হয়। খবরদার কেও যেন চর ছাইড়া না পালায়। কয়জনরে আর ধরব!’ ফজল বলে।

‘কিন্তু মিয়া, পুলিস আইলে তুমি এট্টু সইর‍্যা থাকবা।’ কদম শিকারি বলে। ‘তোমারে ধইর‍্যা নিলে এই চর রাখন যাইব না। তুমি পরে আদালতে আজির অইয়া জামিন লইয়া আইতে পারবা।’

কদম শিকারির প্রস্তাবে সায় দেয় সবাই। কিন্তু ফজল আমতা আমতা করে। সে বলে, ‘আপনাগ পুলিসে ধইর‍্যা লইয়া যাইব আর আমি পলাইয়া থাকমু?’

‘হ, পুলিস আইলে তুমি সইর‍্যা থাকবা।’ জাবেদ লশকর বলে।

‘লড়াইয়ের সময় সেনাপতি থাকে বেবাকের পিছনে। তারে রক্ষা করে সিপাই লশকররা। তুমি আমাগ সেনাপতি। তোমারে রক্ষা করণ আমাগ ফরজ।’

‘হ, তুমি রক্ষা পাইলে আমরাও রক্ষা পাইমু।’ মেহের মুনশি বলে।

‘দারোগার পানসি দূরের তন দ্যাখলেই চিনা যায়। চাইরদিগে আমাগ পাহারাদার থাকব। তারা নজর রাখব সব সময়।’

‘হ দারোগার নাও দ্যাখলেই চিক্কইর দিব।’ রমিজ মিরধা বলে। ‘ষাঁড়েরে যেমুন কইর‍্যা মাইনষে ডাক দেয় তেমুন কইর‍্যা ডাক দিব–মোল্লাকে ডাক্ কুরুত্। আবার গামছা উড়াইয়া ইশারাও দিব।’

‘হ, ইশারা ধরনের লেইগ্যা পালা কইর‍্যা এক জনের পর আরেক জন ভাওর ঘরের কাছে বইয়া চউখ রাখব চাইরদিগে।’

‘হ, এইডাই ঠিক।’ জাবেদ লশকর বলে। ‘জমিরদ্দির দাঁড়াইশ্যা ডিঙিখান তৈয়ার থাকব সব সময়। পাঁচজন বাইছাও ঠিক কইর‍্যা রাখন লাগব।’

‘আচ্ছা, আপনাগ রায় মাইন্যা নিলাম।’ ফজল বলে। ‘আর শোনেন, ভাটিকান্দি ছাইড়্যা আমি চইল্যা আসমু এই চরে। তিন-চারদিনের মইদ্যে ঘর-দরজা ভাইঙ্গা মাল-সামান লইয়া এই চরে আইস্যা বসত করমু। আর কেও যদি এই চরে আইতে চান, আইতে পারেন। দারোগা-পুলিস আসার ইশারা পাইলেই হাতিয়ারগুলা ধানখেতের ভিতর গুঁজাইয়া রাখতে অইব।’

অন্য চরে যাদের জমাজমি নেই তারা সবাই এই চরে এসে বসত করাই উচিত কাজ মনে করে। তারাও কয়েক দিনের মধ্যেই ঘর-দরজা ভেঙে বউ-ছেলে-মেয়ে নিয়ে চলে আসবে।