» » হরিদাসের গুপ্তকথা

বর্ণাকার

ভূবনচন্দ্র মুখোপাধ্যায়

হরিদাসের গুপ্তকথা

গ্রন্থপরিচয়

‘হরিদাসের গুপ্তকথা’ নামের বইটি বেশ দুষ্প্রাপ্য। বইটি সম্পর্কে অনেকের ধারণা যে এটি বোধহয় প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য আপাত নিষিদ্ধ ধরনের কোন বই। কিন্তু বইটি এককালে বেশ জনপ্রিয় ছিল। বইটির লেখক শ্রীভুবনচন্দ্র মুখোপাধ্যায়। বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৩১০ বঙ্গাব্দ, অর্থাৎ মোটামুটি ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দে। নিঃসন্দেহে বইটি তারও আগে লেখা হয়েছিল। আর কাহিনীর ঘটনাক্রম তারও বেশকিছু বছর আগেকার। উপন্যাসটি চার খণ্ডে বিভক্ত।

কাহিনীর নায়ক হল হরিদাস নামের একটি ছেলে। কাহিনীর আরম্ভের সময়ে তার বয়স চোদ্দ বছর। মোটামুটি হিসাব করে দেখা যায় তার জন্ম ইংরেজি ১৮৩৮ খ্রিষ্টাব্দে। হুগলি জেলার সপ্তগ্রামে চোদ্দ বছর বয়েসে হরিদাসের যাত্রা শুরু হয় এক গ্রামের পাঠশালা থেকে। সে নিজের কোন পরিচয় জানত না। পাঠশালার গুরুমশাইয়ের বাড়িতে সে লালিত। গুরুমশাইয়ের মৃত্যুর পর সে বাইরের জগতের সঙ্গে পরিচিত হতে বাধ্য হয়। এরপর সাত-আট বছর নানা ঘটনার ঘনঘটার মধ্যে দিয়ে এই দরিদ্র সহায় সম্বলহীন অনাথ বালক কিভাবে নিজের পরিচয় জানল এবং পরিশেষে বিরাট ধনী জমিদারে পরিণত হল তারই রোমাঞ্চকর আখ্যান এই বই।

উপন্যাসটিতে হরিদাসের নায়িকাও উপস্থিত। তার নাম অমরকুমারী। নানা বিপত্তি পেরিয়ে শেষ অবধি হরিদাস এবং অমরকুমারীর মিলন হয়।

উপন্যাসটিতে প্রচুর চরিত্র। উপন্যাসের শেষপ্রান্তে এসে প্রতিটি চরিত্রেরই পরিণাম দেখানো হয়েছে। নানা রকম নাটকীয়তায় ভরপুর এই উপন্যাস। শেষে এসে সব কিছুকেই একটি বিন্দুতে মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে। সব রহস্যেরই সমাধান করা হয়েছে। বইটিকে একটি অ্যডভেঞ্চারের গল্প বললেও ভুল হয় না। প্রায় ৬৮০ পাতার বইটিতে প্রচুর রোমাঞ্চকর ঘটনার সন্নিবেশ ঘটেছে। নানা রকম চুরি, ডাকাতি, জালিয়াতি, খুন-খারাপি, আত্মহত্যা, কিডন্যাপিং, পুলিশ-দারোগা, মামলা-মোকদ্দমা, ভূতুড়ে ঘটনা এবং ষড়যন্ত্রের ঘটনায় ঠাসা। সিপাহী বিদ্রোহের চাক্ষুষ বর্ণনাও এতে স্থান পেয়েছে।

ঊনবিংশ শতকের বাঙলি এবং ভারতীয় জীবনের নানা বিচিত্র ঘটনার বর্ণনা এতে রয়েছে। এর সাথে আরো যুক্ত হয়েছে নানা রকম কেচ্ছা এবং ব্যাভিচারের ঘটনা। এবং প্রেমের ঘটনাও কিছু কম নেই। তখনকার সমাজব্যবস্থার একটি বাস্তব চিত্র দেখা যায়। বাঙালি বাড়িতে ব্যভিচারের ঘটনা যে কত বেশি ছিল তার বর্ণনা পড়লে অবাক হতে হয়। অনেক পুরুষই কোন আত্মীয় মহিলার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক রাখতেন এবং অনেক সময়ে বিপদে পড়লে তাদের নিয়ে গৃহত্যাগও করতেন। বেশিরভাগ সময়েই তাঁরা বারাণসীর মত কোন তীর্থস্থানে গিয়ে নাম পরিচয় এবং সম্পর্ক ভাঁড়িয়ে থাকতেন এবং অনেক ক্ষেত্রে সামাজিক সম্মানও আদায় করতেন।

লেখক লিখছেন যে– “বাঙ্গালীদলের বেশী কলঙ্ক। জাতিতে জাতিতে, জাতিতে বিজাতিতে, সম্পর্কে সম্পর্কে, সম্পর্কে নিঃসম্পর্কে, বাঙ্গালী নর-নারী পাপলিপ্ত হলেই নিরাপদের আশাতে কাশীতে পালিয়ে আসে; মাতুলের ঔরসে ভগিনী-পুত্রী, পিতৃব্যের ঔরসে ভ্রাতৃকুমারী, ভ্রাতার ঔরসে বিমাতৃকুমারী, ভাগিনেয়ের ঔরসে মাতুলানী, জামাতার ঔরসে শ্বশ্রু-ঠাকরানী, শ্বশুরের ঔরসে যুবতী পুত্রবধূ গর্ভবতী হলেই কাশীধামে পালিয়ে আসে! গর্ভগুলি নষ্ট কোত্তে হয় না, কাশীর পবনের প্রসাদে বংশ-রক্ষা হয়।”

মনে রাখতে হবে এই বর্ণনার সময়কাল ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহেরও আগের! খুনোখুনির ঘটনাও বেশ কিছু আছে। আর আছে সেই সময়ের ভালো-খারাপ পুলিশ এবং বিচার ব্যবস্থার বর্ণনা। উপন্যাসটিতে পুলিশকে বেশ করিৎকর্মা হিসাবেই দেখানো হয়েছে। তবে তারা যে উৎকোচ গ্রহনেও সিদ্ধহস্ত তার ঈঙ্গিতও রয়েছে।

কাহিনীর পটভূমিকাও বদলেছে বারে বারে। তৎকালীন ভারতবর্ষের নানা তীর্থস্থানের বর্ণনাও এতে রয়েছে। পশ্চিমের গুজরাট থেকে আরম্ভ করে পূর্বের ত্রিপুরা পর্যন্ত উপন্যাসটির ব্যাপ্তি। কাহিনী ছুঁয়ে গেছে ভারতের বিভিন্ন শহর যেমন বরোদা, আমেদাবাদ, আগ্রা, মথুরা, বৃন্দাবন, পাটনা, বারাণসী, কলকাতা, মুর্শিদাবাদ, ঢাকা, বর্ধমান, কানপুর, গৌহাটি। এই কাহিনী যে সময়ের সেই সময়ে ভারতে রেলপথ ছিল না বা সবে স্থাপিত হতে আরম্ভ করেছে। তাই বিভিন্ন স্থানে যাওয়াও অনেক কষ্টকর ছিল এবং তাতে বিপদের ভয়ও ছিল যথেষ্ট।

হরিদাসের নিজের বক্তব্য ও মন্তব্য থেকে লেখকের ব্যক্তিতের বিষয়েও জানতে পারি। ইংরেজ শাসন বিষয়ে তিনি বেশ খুশি তবে সিপাহী বিদ্রোহের সময়ে তিনি উভয় পক্ষেরই নৃশংসতার জন্য সমালোচনা করেছেন। রানী ভিক্টোরিয়াকে তিনি ভক্তি করতেন। তিনি ছিলেন বাল্যবিবাহ এবং জাতিভেদ প্রথার একজন সমর্থক। এবং অসবর্ণ বিবাহ প্রথার বিরোধী। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি সৎ এবং উপকারী।‘হরিদাসের গুপ্তকথা’ একটি উপন্যাস হলেও পড়লেই বোঝা যায় যে এটির পিছনে অনেক সত্য, লেখকের নিজের চোখে দেখা ঘটনাও রয়েছে। এটিকে একটি ঐতিহাসিক বিবরণও বলা যায়। তাই ঊনবিংশ শতকের মধ্যভাগের একটি চমৎকার বর্ণনা আমরা পাই।

ভূবনচন্দ্র মুখোপাধ্যায়

সাহিত্যিক ভুবনচন্দ্র মুখোপাধ্যায় (১৮৪২-১৯১৬) একজন বাঙালী অনুবাদক, সম্পাদক, সাহিত্যিক। তিনি ১৮৪২ সালের ১০ জুলাই মাতামহাশ্রম চব্বিশ পরগণার অন্তর্গত বারুইপুর সন্নিহিত শাসন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যে ভুবনচন্দ্র মুখোপাধ্যায় প্রধানত মিশনরী স্কুলে অধ্যয়ন করেন।

অল্প বয়স হতেই তাঁকে অন্নসংস্থানে মনোযোগী হতে হয়। স্কুলের পাঠ সমাপ্তির পর তিনি বারুইপুরের সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের তৃতীয় শিক্ষকের পদে অধিষ্ঠিত হন। সময় সময় তিনি গৃহ শিক্ষকের কাজ করে জীবিকা অর্জ্জন করেন।

উনবিংশ শতকের শেষে যে কয়জন গদ্য লেখক ও অনুবাদক বাংলা সাহিত্যের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করে তুলেছেন ভুবনচন্দ্র তাদের মধ্যে অন্যতম একজন। অনুবাদকর্মে তিনি বিশেষ কৃত্বিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর অক্লান্ত লেখনি বাঙালিকে বৈদেশিক গল্পের একান্ত দেশিরূপের স্বাদ এনে দিয়েছে। ইংরেজি ভাষায় তাঁর প্রগাঢ় বুৎপত্তি থাকা সত্ত্বেও মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসার টানে বাংলা সাহিত্যে তিনি মনোনিবেশ করেন।

ভুবনচন্দ্র কালীপ্রসন্ন সিংহ প্রতিষ্ঠিত বিদ্যোৎসাহিনী সভার লিপিকার ছিলেন। সম্পাদক কালীপ্রসন্ন সিংহের ‘পরিদর্শন’ দৈনিক পত্রিকায় ভুবনচন্দ্রের অনেক কবিতা প্রকাশিত হ’ত। ১৮৬২ সালে ভুবনচন্দ্র উক্ত পত্রিকার সহকারী সম্পাদক নিযুক্ত হন। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে প্রধানত গ্রাহকগণের অনাদরের কারণে কালীপ্রসন্ন সিংহ ‘পরিদর্শক’ পত্রিকার প্রচার বন্ধ রাখেন। কিন্তু ভুবনচন্দ্রের প্রতি তিনি প্রসন্ন থাকায় তাকে ভাল চাকরি পাইয়ে দিবেন এ আশ্বাসে তাঁর নিকট রাখেন। ‘হুতোম প্যাঁচার নক্‌শা’ ১ম খণ্ড প্রচারের অব্যবহিত পরেই ভুবনচন্দ্র পুনরায় কালীপ্রসন্ন সিংহের আশ্রয় লাভ করেন। দুবছর পর তিনি স্বয়ং কালীপ্রসন্ন সিংহের ‘হুতোমে’র আদর্শে ‘সমাজ কুচিত্র’ নামে একটি সামাজিক নক্‌শা প্রকাশ করেন। তিনি এটি ‘সাহসের অদ্বিতীয় আশ্রয় অনরেবল হুতোম’কে উৎসর্গ করেন। ছদ্ম নামে প্রকাশিত হলেও প্রকৃতপক্ষে এটাই ছিল ভুবনচন্দ্রের প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ। অনেকের মতে কালীপ্রসন্ন সিংহের হুতোম প্যাঁচার নকশার অনেক রচনা তার লেখা।

পরে তিনি সোমপ্রকাশ পত্রে দেড় বছর সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। সম্ভবত ১৮৬৮ সালে তিনি সংবাদ প্রভাকরের সহকারী সম্পাদক পদে যোগদান করেন। উক্ত পদে তিনি দীর্ঘ ২২ বছর কর্মরত ছিলেন। এর পাশাপাশি তিনি বিদূষক (১৮৭০) ও পূর্ণশশী (১৮৭৩) নামে দুটি মাসিকপত্র সম্পাদন করেন। ১৮৫৭ সালে তিনি সাপ্তাহিক বসুমতী (১৮৯৬) পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৮৯৮ সালে পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিকট তিনি উক্ত দায়িত্ব অর্পণ করে বসুমতীর গ্রন্থপ্রকাশ বিভাগে যোগদান করেন। কিন্তু সম্পাদকীয় বিভাগ থেকে তিনি পুরোপুরিভাবে বিচ্ছিন্ন ছিলেন না। তাছাড়া তিনি ১৯০০ সালে প্রকাশিত জন্মভূমি মাসিক পত্রিকার ১১শ ভাগের (১৩০৯) প্রথম কয়েক সংখ্যার সম্পাদকের কাজ করেন। উক্ত পত্রিকায় তাঁর অনেক কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ ছাপা হয়।

বাংলা সাহিত্যের সব বিভাগেই ভুবনচন্দ্র তাঁর কৃতিত্বের সাক্ষর রেখেছেন, তিনি সারাজীবন দারিদ্র্যের মধ্যে থেকেও সাহিত্য চর্চা থেকে নিবৃত্ত হননি। তাঁর রচিত কাব্য, গল্প-উপন্যাস, সামাজিক নক্‌শা, প্রহসন, ইতিহাস, জীবনী, ভ্রমণ কাহিনী রয়েছে। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: সমাজ-কুচিত্র (১৮৬৫), তুমি কি আমার (উপন্যাস, ১৮৭৩-৭৯), মধু-বিলাপ (অমিতাক্ষর কাব্য, ১৮৭৩), রহস্য-মুকুর (উপন্যাস, ১৮৮৩), ঠাকুরপো (প্রহসন, ১৮৮৬), তুমি কে (অমিতাক্ষর কাব্য, ১৮৮৭), বঙ্কিমবাবুর গুপ্ত কথা (উপন্যাস, ১ম খণ্ড-১৮৯০, ২য় খণ্ড-সম্বৎ ১৯৪৭), গুপ্তচর (ডিটেকটিভ উপন্যাস, ১৮৯৮), মহাদেবের মাদুলী (রঙ্গরচনা), রামকৃষ্ণ-চরিতামৃত (১৯০১), চন্দ্রমুখী (ডিটেকটিভ গল্প, ১৯০২), ধর্ম্মরাজ (সচিত্র সমাজ-রহস্য, ১৯০৯), লণ্ডন রহস্য (অনুবাদ), বিলাতী গুপ্তকথা, স্বদেশ বিলাস, রামকৃষ্ণচরিতামৃত, বাবুচোর, প্রভৃতি। ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন “মায়াকানন” নামে ট্রাজেডি নাটক অসমাপ্ত রেখে মাইকেল মধুসূদন দত্ত মৃত্যুবরণ করলে ভূবনচন্দ্র মুখোপাধ্যায় নাটকটি সম্পূর্ণ করেন।

১৮ জুলাই ১৯১৬ সালে ভুবনচন্দ্রের মৃত্যু হয়।

প্রকাশকের নিবেদন

“……কিন্তু কাব্যের সঙ্গে দ্বিতীয়বার পরিচয় ঘটলো এবং বেশ মনে পড়ে এইবারে পেলাম তার প্রথম সত্য পরিচয়। এরপরে এ বাড়ির উকীল হবার কঠোর নিয়ম-সংযম আর ধাতে সইলো না; আবার ফিরতে হলো আমাদের সেই পুরোনো পল্লী-ভবনে। কিন্তু এবার বোধোদয় নয়, বাবার ভাঙ্গা দেরাজ থেকে খুঁজে বের করলাম ‘হরিদাসের গুপ্তকথা’। গুরুজনদের দোষ দিতে পারিনে, স্কুলের পাঠ্য ত নয়, ওগুলো বদ্-ছেলের অ-পাঠ্য পুস্তক। তাই পড়বার ঠাঁই কোরে নিতে হোলো আমার বাড়ির গোয়াল ঘরে। সেখানে আমি পড়ি, তারা শোনে। এখন আর পড়িনে, লিখি।……”

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
(১৩৩৮)

প্রকাশক হিসেবে ভুবনচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের (১৮৪২-১৯১৬) এই গ্রন্থটি পড়বার পর ঠাকুমার যৌবনকালের আতর মেশানো পুরোনো বেনারসী শাড়ির গন্ধ পাই। অনেক দিন সেই আতরের গন্ধ আমার নাকে লেগেছিল। গন্ধটা ফিকে হয়ে যাবার মুখেই নতুন করে মনে করিয়ে দিল বিমল করের ‘বালিকা বধূ’-র ছায়াচিত্রের নায়ক-নায়িকারা। এরপর বইটি বহু খুঁজেছি। পরে সেই বইটি পড়ার সুযোগ করে দিলেন বঙ্গীয়-সাহিত্য পরিষৎ-এর কর্মী সাহিত্যিক-গবেষক শ্রীবিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায়। বইটি পড়ে মনে হলো প্রায় পঞ্চাশখানি বইয়ের লেখক সেকালের স্বনামধন্য বহু বিতর্কিত সাহিত্যিক ভুবনচন্দ্রের এই গ্রন্থটি—আজ যাঁরা সাহিত্যচর্চায় ব্যাপৃত, আধুনিক পাঠক-পাঠিকা, আমাদের মতো প্রকাশক—সকলেরই বইটি পড়া উচিত। যাচাই করে দেখে নেওয়া উচিত ১৩০৪ বঙ্গাব্দে চলিত ভাষায় লেখা সমাজ-চিত্রের অপূর্ব ইতিহাস এই উপন্যাস থেকে আমরা কতটা এগোতে পেরেছি। প্রখ্যাত সাহিত্যিক-সাংবাদিক পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় একসময় তাঁর ‘নায়ক’ পত্রিকায় ভুবনচন্দ্র সম্বন্ধে লিখেছিলেন : ‘আলালের সময় হইতে যিনি বাঙ্গালার গদ্য-পদ্য লেখক, মাইকেলের সহচর, যাঁহার লিখিত পুস্তকরাশির সংখ্যা করা যায় না, যাঁহার পাঠকগণেরও সংখ্যা হয় না—সেই সরল, সোজা দেশী বাঙ্গলা গদ্যের লেখক ভুবনচন্দ্রের মতন অনুবাদক আর বাঙ্গালায় ছিল না—বোধহয় আর হইবে না।’ পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যের সত্যতা প্রকৃতই ‘হরিদাসের গুপ্তকথা’ পাঠে উপলব্ধ হয়। পাঠকসমাজের হাতে তাই তুলে দিলাম বহু দুষ্প্রাপ্য এই গ্রন্থটি। সকলের ভালো লাগলে আমার এই পরিশ্রম সার্থক বলে মনে করবো।