হরিদাসের গুপ্তকথাপ্রথম খণ্ড
সন্ধ্যা হলো। পল্লীগ্রামের সন্ধ্যাকাল। সহরের সন্ধ্যাকালের ন্যায় রাজমার্গগুলি আলোর মণ্ডিত হয় না, জনকোলাহল বাড়ে না, ঢোলকতবলা বাজে না, স্বরলহরী উঠে না, পাহারার আঁটা-আঁটি হয় না, চোর-গাঁটকাটা ঘোরে না, গাড়ী-ঘোড়াও ছোটে না, এ প্রকার কিছুই হয় না,—পল্লীগ্রামের সন্ধ্যাকালে অন্ধকার হয়, নক্ষত্র উঠে, শেয়াল ডাকে, সকলে ঘরে যায়, ঘরে ঘরে সন্ধ্যা জ্বালে, ভক্তগৃহে শঙ্খধ্বনি হয়, দুই একটী দেবগৃহে আরতির সময় শঙ্খঘণ্টা বাজে, পল্লী নিস্তব্ধ হয়, প্রকৃতি নিদ্রা যান, পাখীরা আলয় অন্বেষণ করে, পশুরা খোয়াড়ে গহ্বরে আশ্রয় লয়, এই সকল লইয়াই পল্লীগ্রামের সন্ধ্যা। সেই সন্ধ্যাকালে আমি হুগলীজেলার সপ্তগ্রামের এক বকুলতলায়। আমার ভাগ্যক্রমে সে দিন শুক্লপক্ষের দশমী তিথি ছিল, আকাশে চন্দ্রোদয় হলো,—দিব্য জ্যোৎস্না। বকুলপল্লব ভেদ কোরে চন্দ্রদেব আমার অঙ্গে অল্প অল্প শীতল কিরণ বর্ষণ কোত্তে লাগলেন, আমি আকাশপানে চাইলেম; চন্দ্রদেবকে দর্শন কোলেম। আকাশ আমি দেখবো, চন্দ্রদেবকেও দেখবো, আবার সন্ধ্যাকাল আসবে, কিন্তু সপ্তগ্রামের এই আকাশ, এই চন্দ্র আর আমি দেখতে পাব না! গুরুঠাকুরাণীর যে প্রকার ভাব, তাতে কোরে এই রাত্রেই হয় তো আমাকে সপ্তগ্রাম-ছাড়া হোতে হবে! যে লোকটাকে বাড়ীর ভিতর দেখলেম, ঐ লোকটার হাতেই হয় তো আমার ভাগ্যচক্রের নতন ঘূর্ণন আরম্ভ হবে! আশাভরসার বিসর্জ্জন হয়ে যাবে। কি যে হবে, কিছুই তখন ঠিক কোত্তে পাল্লেম না। আগাগোড়া অনেক ভাবলেম, মীমাংসা পেলেম না।
রাত্রি প্রায় চারি দণ্ড। গুরুপত্নী ফিরে এলেন না। একা আমি এতক্ষণ বৃক্ষতলে বোসে তাঁর আজ্ঞা পালন কোচ্চি, এটা হয় তো তিনি ভুলে গেছেন। রাত্রি অন্ধকার থাকলে আমার ভয় হোতো, জ্যোৎস্নাটুকু সহায় আছে বোলে ততটা ভয় আসছে না, এক-রকমে আছি ভাল। হঠাৎ একদিক থেকে তিনটা প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড বন্য শৃগাল আমার সম্মুখ দিয়ে ভোঁ ভোঁ কোরে নক্ষত্ৰবেগে ছুটে গেল।
এ সংসারে দুঃসময়ে আপন মুখে সুখের কথা বোলতে নাই। ভাল আছি বোলতে বোলতেই সম্মুখ দিয়ে শেয়াল ছুটে গেল! শেয়াল ছুটে গেল, পাছে আবার বাঘ ছুটে যায়, সেই ভয়ে আমি তাড়াতাড়ি উঠে, টোলমহলের দরজার কাছে ছুটে গেলেম। ঠাকুরাণীর নিদেশ-নিৰ্ব্বন্ধ বিস্মৃত হোলেম। আস্তে আস্তে দরজাটা একটু ফাঁক কোরে, বাড়ীর ভিতর এদিক ওদিক উঁকি মেরে দেখলেম, উত্তরদিকের ঘরে প্রদীপ জ্বোলছে; দ্বার আবত আছে; জানালার ফাঁক দিয়ে আলো আসছে; দুটী লোক বেশ ডেকে ডেকে কথা কোচ্ছেন।— কে সেই দুটী লোক, একবার দেখেই তৎক্ষণাৎ নিঃসন্দেহে আমি তা বুঝতে পাল্লেম।
প্রাঙ্গণ পার হয়ে ইতিপূর্বে যে লোকটী উত্তরের ঘরে প্রবেশ কোরেছিল, সেই একটী আর দ্বিতীয়টা আমার স্নেহময়ী গুরুঠাকুরাণী। কি তাঁদের কথা, সেটুকু বুঝে নিতেও আমার বিলম্ব হলো না। আমারি অদৃষ্ট ফলকের অক্ষরগুলির রূপভাগ করাই তাঁদের কার্য্য;—তারি উপায় নির্দ্ধারণ করা তাঁদের পরামর্শ।
ধীরে ধীরে পা টিপে টিপে বাড়ীর ভিতর আমি প্রবেশ কোল্লেম। যে ঘরে তাদের পরামর্শ হোচ্ছিল, সেই ঘরের পশ্চিম গায়ে একখানা পরচালা; তার ভিতর পাঁচ রকম বাজেজিনিস থাকতো, এক এক সময় সে জায়গাটা খালী পোড়ে থাকতো। সেখানে দাঁড়ালে ঘরের ভিতরের কথাবার্ত্তা বেশ স্পষ্ট স্পষ্ট শুনা যেতো। আমার সেটা জানা ছিল, চুপি চুপি সেই পরচালা ঘরেই আমি প্রবেশ কোল্লেম; একটী কোণ ঘেঁষে প্রচ্ছন্নভাবে দাঁড়ালেম।
ঘরে দর্ম্মার বেড়া। একদিকে আমি, একদিকে তাঁরা দুজন। ব্যবধান একখানি পাতলা দর্ম্মা মাত্র। কথাগুলি স্পষ্ট স্পষ্ট আমার কাণে আসতে লাগলো। গোপনে দাঁড়িয়ে অন্য লোকের কথোপকথন শ্রবণ করা সেই আমার নূতন;—সেই আমার প্রথম কেন তেমন গর্হিত কার্য্যে আমার মতি হয়েছিল, আবশ্যকবোধে তাও এইখানে বোলে রাখি। আমি নিশ্চয় জেনেছিলেন, তাঁরা বলাবলি কোচ্ছিলেন আমারি কথা। কোন অপরিচিত লোকের কাছে আমার উপকারিণী গুরুপত্নী আমার চরিত্রচর্য্যার পরিচয় দিচ্ছেন, এমনটী যদি বুঝতে পাত্তেম, তা হোলে ঐ ভাবে লুকিয়ে শুনবার প্রয়োজন হতো না। সে রকম প্রবৃত্তিও আসতো না; কিন্তু যখন জেনেছিলেম, আমাকে নিরাশ্রয় কোরে অকূলে ভাসিয়ে দেওয়াই গুরুপত্নীর ইচ্ছা,—সুদঢ় পণ, সেই ইচ্ছা ও সেই পণ পূর্ণ করবার উদ্দেশেই যখন ঐ লোকটীকে এনেছেন, তখন আর গুপ্তশ্রোতা হয়ে মনকে স্থির রাখতে পাল্লেম না; কাজেই ঐ ঘৃণিত কার্যে প্রবৃত্তি।
কথা কইতে কইতে হঠাৎ দুজনেই একবার থেমে গেলেন। একটু পরেই আবার হাস্যের কলরব উঠলো। ভাল কোরে গলা শাণিয়ে লোকটা তখন নূতন রকম কথা তুল্লে। দর্ম্মার গায়ে নিঃশব্দে আমি কাণ পেতে থাকলেম। বলে “চেহারাটা আছে ভাল; চেহারার চটোকে বুঝা যায়, বুদ্ধিটাও ভাল, বেশ মোটাসোটাও আছে, কিন্তু খাটে না, খাটতে পারে না, তোমার মুখে এই কথাটা শুনে আমার কেমন কেমন বোধ হোচ্ছে; রোগমাখা মাংসপিণ্ড নিয়ে আমি কি কোরবো?”
ঠাকুরাণী বোল্লেন, “খাটতে পারে না, এমন কথা আমি বলি নাই, তবে কি জান, কৰ্ত্তার আদর পেয়ে ও কেমন একরকম নাই পেয়ে গিয়েছে; কর্ত্তা আদরে আমারও আদর পেয়েছিল, কাজে কাজেই কুড়ে বোনে গেছে; খাটালেই খাটবে,—ঘাড়ের উপর চাপ পড়লে সকলকেই খাটুনী অভ্যাস কোত্তে হয়। তুমি এক কাজ কর। আজ আর নয়, কালকের দিনটেও থাক, পরশুদিন বিকেলবেলা তুমি এসো, আমি ওটাকে তোমার সঙ্গে বিদায় কোরে দিব।”
লোক।—ছোঁড়াটা দেখতে দিবি ফুটফুটে, আদরে আদরে বোধ করি আয়েসী হয়ে পোড়েছে, সহজে বোধ হয় বাগে আনা যাবে না। একটা কথা জিজ্ঞাসা করি, সেই কথাটাই আগে দরকার; জাতটা কি?
ঠাকুরাণী।–জাতজন্ম আমি কিছুই জানি না। কার ছেলে, কোথাকার ছেলে, কোন দেশে ঘর, কিছুই জানা নাই; কৰ্ত্তা জানতেন কি না, সে কথাও আমি বোলতে পারি না, আমায় কিন্তু একদিনও কিছু বলেন নাই। আমি জানি, ছোঁড়াটা বেওয়ারীস। মাসে মাসে বেনামী রেজিষ্টারী চিঠিতে টাকা আসতো, তাই আমি জানতেম, কে পাঠাতো, কতবার জিজ্ঞাসা কোরেছিলেম, কিন্তু কিছুই বোলতেন না। ডাকের মোহরে অবশ্য ডাকঘরের ঠিকানা থাকতো, আমি মেয়েমানুষ কি জানবো, চিঠি খুলে নিয়েই কৰ্ত্তা সেই খামখানা ছিঁড়ে ফেলতেন। যাক সে কথা, জাতের কথা তুমি জিজ্ঞাসা কোচ্চো কেন? কাজ চোল্লেই হলো, জাতের খবরে কি দরকার?
লোক।—জিজ্ঞাসা কোচ্চি এই জন্য, অন্য কাজ যদি না জানে, অন্য কাজ যদি না পারে, চাষের কাজে জুড়ে দিব। দশ জায়গায় দশজনের হাতে আমার কাজ, একটা কিছু সুবিধা পেলেই একরকমে লাগিয়ে দিব।
ঠাকু।—যাতে দিবে, তাই পারবে। কেন পারবে না? পেটের দায় বড় দায়। পেটের জ্বালা ধোল্লে লোকে বাঘের মুখে সাপের মুখে যেতেও পেছপা হয় না। দোকানের কাজেই দাও, পেয়াদার কাজেই দাও কিম্বা চাষের কাজেই লাগাও, ক্রমে ক্রমে সব কাজেই পটু হয়ে উঠবে।
আমার গা কেঁপে উঠলো। আমার গুরুপত্নী আমাকে এই লোকটার হাতেই সোঁপে দিবেন, এই লোক আমাকে চাষের কাজে নিযুক্ত করবে। কোথায় যে নিয়ে যাবে, কে বোলতে পারে? চাষের কাজে দুদিনেই আমি মারা যাব! হায় হায়! আমার ভাগ্যে যে কি আছে, ভাগ্যলিপির যিনি কর্ত্তা, সেই বিধাতাপুরষ ভিন্ন আর কেহই সে তত্ত্ব পরিজ্ঞাত নয়। ভাগ্য আমার বড়ই মন্দ। তা যদি না হবে, জন্মাবধি নিরাশ্রয় হয়েও একটা আশ্রয় পেয়ে ছিলেম, অকস্মাৎ সে আশ্রয়টীও হারাব কেন? আমার ভাগ্যের কথা নিয়ে এরা আমোদ কোরে হাসিখুসী কোচ্চে, এটাও আমার ভাগ্যের ফল! হায় হায়! মানুষের মন বুঝে উঠা মানুষের অসাধ্য! এই গুরুগৃহিণীকে আমি মায়ের সমান দেখতেম; এখন দেখতে পাচ্ছি, তা তো নয়, ইনি একটী মায়ারাক্ষসী। মনে এই সব আলোচনা কোরে সেইখানে দাঁড়িয়ে আমি তিনটী দীর্ঘনিশ্বাস পরিত্যাগ কোল্লেম।
খানিকক্ষণ চুপ কোরে থেকে লোকটা আবার আমার গুরুপত্নীকে জিজ্ঞাসা কোল্লে, “লেখাপড়ায় কেমন?”
বিকৃতকণ্ঠে গুরুপত্নী উত্তর কোল্লেন, লেখাপড়া মাথা আর মুণ্ডু! কেবল খানকতক পুথি, কে জানে কি, তাই নিয়ে বর্ষাকালের ব্যাঙের মতন কোঁ কোঁ কোত্তো, দশ জনে জড়ো হয়ে চীৎকারশব্দে আমার এই দর্ম্মার ঘরের চালের গোলপাতাগুলো পর্য্যন্ত কাঁপিয়ে দিতো, এই পর্য্যন্ত বিদ্যা! সে বিদ্যাতে তোমার কোন উপকার হবে না। তুমি ওটাকে তোমার মনের মতন কাজেই ভর্ত্তি কোরে দিও। না পারে ত সপাসপ চাবুক দিও, চাবুকের চোটে ভূত-প্রেত বশীভূত হয়, ওটা তো একটা সামান্য বেওয়ারীস ছোঁড়া!”
আবার আমি কেঁপে উঠলেম। উঃ! এই রাক্ষসী আমাকে বাছা বোলে ডাকতো, কত রকম আদর কোত্তো, স্নেহ জানাতো, মায়ায় ভুলে—আমি ছেলেমানুষ, এত কি জানি, মায়ায় ভুলে এই রাক্ষসীকে আমি জননী তুল্য শ্রদ্ধাভক্তি কোত্তেম। পেটে পেটে এত ছিল, কেমন কোরেই বা জানবো! রাক্ষসী আমাকে চাবুক মারবার হকুম দিচ্ছে! উঃ! সংসারের মায়া-মমতা কত স্থানে কত আবরণে ঢাকা, নিরুপণ করা অসাধ্য। একবার ইচ্ছা হলো, সরাসর সম্মুখে গিয়ে চোটপাট জবাব করি, আশ্রয়ের ধূলায় দণ্ডবৎ কোরে জন্মের মত বিদায় চাই; ইচ্ছা হলো বটে, কিন্তু ভয় এসে অগ্রে অগ্রে সেই ইচ্ছার সম্মুখে দাঁড়ালো। যদি এখন গিয়ে দেখা দিই, লোকটা এখনি আমাকে ধোরে ফেলবে, দুদিন সময় দিবার পরামর্শ হোচ্ছিলো, সে অবসরও আর থাকবে না। ভয়ে ভয়ে মনে মনে এইরূপ চিন্তা কোরে সেইখানেই আমি নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেম।
দুজনে আবার চুপি চুপি কি বলাবলি কোরে দু-একবার আমার নাম কোল্লে, আবার খানিকক্ষণ চুপ কোরে থাকলো। তার পর লোকটা ইতস্তত কোরে জিজ্ঞাসা কোল্লে, “আচ্ছা, আজ নিয়ে যেতে তুমি বারণ কোচ্চো কেন?” ঠাকুরাণী বোল্লেন, “আজ আমি সব কথা ওকে খুলে বলেছি, এ দেশে আমি থাকবো না, এখানকার সব জিনিসপত্র বেচে কিনে মেয়েটী নিয়ে কাশী যাব, এই মিথ্যাকথাটাও বোলেছি, তাই শুনে ছোঁড়াটা হাপুসনয়নে কাঁদতে লেগেছে। খুব ছোটবেলা থেকে এখানে রয়েছে, মায়ার সংসারে বেরালকুকুরের উপরেও একটু একটু মায়া বসে, তার কান্না দেখে আমারও একটু, মায়া হয়েছিলো, সেইজন্য তাকে গাছতলায় বসিয়ে আমি এখানে চোলে এসেছি। আমার পায়ে ধোরে কতই কেঁদেছে, কতই সাধনা কোরেছে, আমার চক্ষেও জল এসেছিলো, তাই জন্যে বলা, এ দু-দিন থাক, পরশুদিন তুমি নিয়ে যেয়ো।” হো হো কোরে হেসে লোকটা বোল্লে, “ও হো হো! এই কথা তোমার! এত মায়া তোমার! ঐ রকম মায়াকান্নায় তুমি ভুলে যাও! ছোঁড়াটা তো ভারী ধড়ীবাজ! এই বয়সে এত ধড়ীবাজী বুদ্ধি ধরে! ও সব মায়াকান্না! মায়াতে তুমি ভুলতে পার, আমি ভুলি না। আজ রাত্রেই আমি নিয়ে যাব। রাত্রিকালে নিয়ে যাওয়াই ভাল। কোন দিক দিয়ে কোথায় নিয়ে ফেলবো, পথ চিনে আর ফিরে আসতে পারবে না। মল্লিকবাবুদের নদীয়াজেলার নীলকুঠীতে।”
তাড়াতাড়ি বাধা দিয়ে ঠাকুরাণী বোলে উঠলেন, “না, না, এ রাত্রে নিয়ে যেয়ো না; আর একটা দিন থাক : দেখই না, কি তামাসা হয়, কি রঙ্গটা করে; আর একটা দিন থাক। ঘনশ্যাম, তুমি আমারে চেন না; যখন আমি যে সঙ্কল্পটা ধরি, সেটা আমি সিদ্ধ করিই করি; ব্রহ্মা বিষ্ণু, মহেশ্বর তিন জনে একত্র হোলেও আমারে নিবারণ কোতে পারে না। যখন আমি সঙ্কল্প কোরেছি তাড়াবো, তখন ওটাকে তাড়াবোই তাড়াবো! মায়া-দয়া আমার কিছুই নাই! কার প্রতি মায়া-দয়া?—কে ও? তোমাকে আমি দিয়েছি, ও এখন তোমারি; একটা দিন রেখে দাও। রাত্রি কত?—বোধ হয় বেশী। ছোঁড়াটা একাকী গাছতলায় বোসে আছে, আজ তুমি বিদায় হও, তারে বাড়ীর ভিতর এনে বুঝিয়ে পড়িয়ে আমি রাজী কোরে রাখবো। তার পর অন্যকথা।”
আর আমার সেখানে লুকিয়ে থাকবার সাহস হলো না। গুরুঠাকুরাণী আগে গিয়ে যদি দেখেন, সেখানে আমি নাই, তা হলে বিপদ হবে! বাড়ীর ভিতর থেকে আমি বেরিয়ে যাচ্ছি, এটা যদি তিনি দেখতে পান, তবেই মনে কোরবেন, লুকিয়ে লুকিয়ে আমি তাঁদের গুপ্তপরামর্শ শ্রবণ কোরেছি। ভারী রাগ হবে : আজ রাত্রেই আমাকে মেরে ধোরে তাড়িয়ে দিবেন। সেটা ভাল নয়; একটা রাত্রি, একটা দিন, আবার একটা রাত্রি, তার পর এক বেলা, সময় নিতান্ত কম নয়; আজ রাত্রে যদি রক্ষা পাই, তা হোলে ঐ সময়ের মধ্যে অবসর বুঝে যে দিকে ইচ্ছা, সেই দিকেই আমি পালিয়ে যেতে পারবো, রাক্ষসীর কাছেও থাকতে হবে না, রাক্ষসের কবলেও পোড়তে হবে না। এই স্থির কোরে চুপি চুপি সেই গুপ্তস্থান থেকে বেরিয়ে অলক্ষিতে আমি সেই বকুলতলায় গিয়ে চুপটী কোরে বোসে থাকলেম। আকাশে উজ্জ্বল চন্দ্র, ধরাতলে দিব্য জ্যোৎস্না।