ভূবনচন্দ্র মুখোপাধ্যায়
হরিদাসের গুপ্তকথাপ্রথম খণ্ড
নবম কল্প : খুন!!!
চৈত্রমাস অতিক্রান্ত। বৈশাখ মাস আগত। বৈশাখে গ্রীষ্মাতিশয্য অনুভব হয়, প্রায় প্রত্যহ অপরাহ্ণে, আকাশে ভিন্ন ভিন্ন বর্ণের মেঘোদয় হয়, এক একদিন বাতাসে উড়ায়, এক একদিন বৃষ্টি পড়ে; ছোট ঝটিকা প্রায় প্রতিদিন; তথাপি এ দেশে বৈশাখমাসে বসন্ত-ঋতুর পরিশিষ্ট শোভা নয়নগোচর হয়ে থাকে। পল্লীগ্রামের প্রতি প্রকৃতিদেবীর কিছু বেশী অনুগ্রহ। তথায় নানাজাতি তরুলতা পল্লবিত—কুসুমিত হয়ে প্রকৃতির শোভাবর্দ্ধন করে, প্রস্ফুটিত পুষ্পগুলি সুসজ্জিত হয়ে চতুর্দ্দিকে সুগন্ধ বিতরণ করে, দক্ষিণদিক থেকে সুখস্পর্শ মলয়ানিল প্রবাহিত হয়, দিবসের শেষভাগ অতি রমণীয় বোধ হয়, এই সকল লক্ষণেই আমাদের বৎসরের প্রথম মাসকে বসন্তকাল বোলতে অনেক লোক ইচ্ছা করে। বর্দ্ধমান সহরের পশ্চিমপ্রান্ত-পল্লীতে বৈশাখমাসের সেইরূপ ক্রীড়াই আমি দর্শন করি; প্রমোদানন্দে চিত্ত পুলকিত হয়ে উঠে।
মাসের দশম দিবসের সন্ধ্যার পর সর্ব্বানন্দবাবু আপন উপবেশনকক্ষে অনেকগুলি লোকের সঙ্গে সদালাপ কোচ্ছেন, নানা প্রকার জিনিসের মহাজন সেইখানে উপস্থিত হয়ে ভিন্ন ভিন্ন দ্রব্যের বায়নাপত্র গ্রহণ কোচ্ছে, সর্ব্বানন্দবাবু, সকলের সঙ্গেই মিষ্টবাক্যে সম্ভাষণ কোচ্ছেন, বৈঠকখানা গুলজার!
লোকেরা বিদায় হবার পর কর্ত্তা আমাকে ডেকে খানকতক পত্র লিখতে বোল্লেন। একখানিপত্র তিনি স্বহস্তে লিখে রেখেছিলেন, সেইখানি দেখে দেখে আমি প্রায় বিশ পঁচিশখানি নকল কোল্লেম। আশালতার বিবাহ। একমাস পূর্ব্ব থেকেই বিবাহের কথা আমি শুনে আসছিলেম, ঘটকেরা যাতায়াত কোচ্ছিলো, সম্প্রতি বিবাহসম্বন্ধ স্থির হয়েছে, এই মাসের পঞ্চবিংশ দিবসে শুভবিবাহ অবধারিত। পত্র-কখানি আমি লিখলেম, কর্ত্তা সেইগুলি একবার একবার দেখে আমার প্রতি সন্তুষ্ট হোলেন। কল্য শিরোনাম লেখা হবে, আমাকে এই কথা বোলে তিনি বাড়ীর ভিতর যাবার উপক্রম কোচ্ছেন, এমন সময় সেই খানে একজন লোক এলো। লোক এলো কি জানোয়ার এলো, চেহারা দেখে অগ্রে আমি সেটা ঠাওরাতে পাল্লেম না।
লোকটা বেঁটে, কৃষ্ণবর্ণ, গঠন গাঁট গাঁট, একখানা হাত বড়, একখানা হাত ছোট; পা-দুখানা বাঁকা; বুক পেট সমান; মুখখানা গোল; ঠিক মানুষের মতন মুখ নয়, পুতুলে আর ছবিতে বাদরের মুখ যেমন দেখা যায়, চক্ষু কর্ণ নাসিকা ওষ্ঠ সর্ব্বাবয়বে ঠিক সেই রকমের মুখ; ওষ্ঠের দুই পার্শ্বে বরাহ অথবা হস্তীদন্তের ন্যায় বড় বড় দুটো দাঁত, দেখলেই ভয় হয়; মাথায় ঝুমরো ঝুমরো কোঁকড়া কোঁকড়া, লম্বা লম্বা অনেক চুল; কপালের চুলে চক্ষু পর্য্যন্ত ঢাকা পোড়েছে; মাথার মাঝখানে টাক; সৰ্ব্বাঙ্গে ভল্লকের ন্যায় লম্বা লম্বা লোম; কণ্ঠে একটী বৃহৎ কুঁজ; লোকটা একে বেঁটে, তার উপর কুঁজের ভার, দাঁড়ালে আরও বেঁটে দেখায়। কুঁজের মাপে জামা তৈয়ারী হয় না, সুতরাং গাত্রের লোমাবলী শীতকালে জামার কাজ করে। গ্রীষ্মকালে ঘামে ভিজে কিম্ভুতকিমাকার দেখায়।
আমি সেই অবস্থায় সত্য সত্যই কিম্ভুতকিমাকার দেখলেম। ঘাড়ে গর্দ্দানে এক। গোঁফ-দাড়ী ছিল, কিন্তু যে লোকের সর্ব্বাঙ্গে গোঁফ-দাড়ী সে লোকের মুখের গোঁফ-দাড়ীর পরিচয় দেওয়া অনাবশ্যক; বাহুল্যপাঠ মাত্র।
লোকটা এসেই চৌকাঠের কাছে দাঁড়িয়ে কর্ত্তাকেই জিজ্ঞাসা কোল্লে, “হরিদাস নামে কোন ছোকরা এই বাড়ীতে থাকে?”
প্রশ্ন শুনেই আমি কেঁপে উঠলেম। চেহারাটা এতক্ষণ আমি ভয়ানক বোলেই জানছিলেম, এক একবার মানুষ বোলেও মনে হচ্ছিলো, কিন্তু এবার আর সে বিশ্বাস থাকলো না; মনে কোল্লেম, হয় হনুমান, না হয় রাক্ষস! মনে কোরেই সুট কোরে কর্ত্তার পশ্চাতে গিয়ে লুকালেম; থর থর কোরে কাঁপতে লাগলেম! আমার ভয় দেখে কৰ্ত্তা সেই লোকটাকে জিজ্ঞাসা কোল্লেন, “তুমি কে? তোমার নাম কি? হরিদাসের কথা তুমি কেন জিজ্ঞাসা কর?”
মর্কটমুখো লোকটার চেহারা যেমন কদাকার, কণ্ঠস্বরও সেইরুপ বিকট কর্কশ। ভাঙা ভাঙা কাঁসী যেমন ঝন ঝন শব্দে বাজে, সেই রকম ভাঙা ভাঙা ঝনঝনে আওয়াজ। সেই আওয়াজে সেই কুঞ্জ রাক্ষসটা গর্জ্জন কোরে উত্তর কোল্লে, “কেন? ও কথা তুমি জিজ্ঞাসা কর কেন : আমি যা জিজ্ঞাসা কোল্লেম, সেই কথার উত্তর দাও। হরিদাস নামে কোন বালক এ বাড়ীতে আছে কি না?”
লোকটার অভদ্রতার পরিচয় পেয়ে উত্তেজিতস্বরে কর্ত্তামহাশয় বোলেন, “আছে। কি তা? আমার কাছেই হরিদাস আছে; এই ছেলেটীর নাম হরিদাস।”
আমার দিকে অঙ্গুলিসঙ্কেতে কৰ্ত্তামহাশয়ের এই উত্তর। কুঁজোটা আরো কর্কশ কণ্ঠে বোলতে লাগলো, “হরিদাস আমার ভাগ্নে হয়, আমি হরিদাসের মামা হই, আমার নাম জটাধর তরফদার। কাজকর্ম্ম শিক্ষার উদ্দেশে একটী ভদ্রলোকের কাছে ওকে আমি রেখেছিলেম, পালিয়ে এসেছে। ভারী দুষ্ট, ভারী অবাধ্য; কাজকর্ম্ম কিছুই কোরবে না, বেয়াড়া ছোঁড়াদের সঙ্গে কেবল মাঠে মাঠে ছুটে বেড়াবে, গাছে গাছে উঠে উঠে বনের পাখী ধোরে ধোরে মারবে, লোকজনের সঙ্গে দাঙ্গা-হাঙ্গামা কোরবে, এই ওটার মতলব। আমি ওটাকে নিতে এসেছি, ছেড়ে দাও, নিয়ে যাই।”
বাতাসে যেমন কলাগাছ কাঁপে, রাক্ষসটার কথা শুনে সেই রকমে আমি কাঁপতে লাগলেম : দরদরধারে সৰ্ব্বশরীরে ঘাম ঝরতে লাগলো, গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল; কৰ্ত্তার পশ্চাৎ থেকে একটুখানি মুখ বাড়িয়ে কুঁজোটার দিকে আর একবার চাইলেম! পান খেয়ে এসেছিল, যে সকল রাক্ষস কাঁচা কাঁচা গরু-মানুষ ধোরে ধোরে খায়, তাদের কস বেয়ে যেমন রক্তধারা গড়ায়, সেই মর্কটমুখোর দুই কস দিয়ে সেই রকম পানের পিক গড়াচ্ছিল, সেই পানের পিকে তার বড় বড় দুটো গজ-দাঁত লাল হয়ে গিয়েছিল; ঠিক যেন রক্তমাখা! সব দাঁতগুলোই বড় বড়, গজদাঁত-দুটো আরো বড়; সব দাঁত রক্তবর্ণ!
মামা হয়ে আমাকে নিতে এসেছে, এই কথা শুনে কিছু কুপিতঘরে কর্ত্তা তাকে বোল্লেন, “তুমি হরিদাসের মামা, বিশেষ প্রমাণ না পেলে ও কথায় আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। হরিদাসের আপনার লোক কে কোথায় আছে, হরিদাস তা জানে না; জানবার জন্য খবরের কাগজে আমি বিজ্ঞাপন দিয়েছি, সে সকল বিজ্ঞাপনের ফলাফল না জেনে হরিদাসকে আমি কোথাও যেতে দিব না। তোমার কথা শুনে কেবল আমার সন্দেহ কিছুতেই বিশ্বাস হোচ্ছে না।”
“বিশ্বাস হোচ্ছে না?”—দাঁত খিঁচিয়ে, ঘাড় বেঁকিয়ে, ব্যঙ্গচ্ছলে জটাধর বোল্লে, “বিশ্বাস হোচ্ছে না? আচ্ছা, আচ্ছা, দেখা যাবে। যে ভদ্রলোকের কাছে ওটাকে আমি রেখে দিয়েছিলেম, সেই ভদ্রলোককে তোমার কাছে আমি আনবো, তিনি মিথ্যাকথা জানেন না, তাঁরি মুখে সব কথা তুমি জানতে পারবে।”
একটু নরম কথায় কৰ্ত্তা বোল্লেন, “হাঁ, হাঁ, সেই কথাই ভাল। ভদ্রলোক! সেই ভদ্রলোককেও আমি চাই! তোমার কথায় বিশ্বাস করা যেমন উচিত, তোমার সেই ভদ্রলোককেও এখানে হাজির করা সেইরূপ উচিত। বোধ হয়, সেই ভদ্রলোকের হাত থেকেই হরিদাসকে আমি উদ্ধার কোরেছি, তাকেও আমি চিনে রেখেছি, আজ তুমি চোলে যাও, কাল সেই লোককে নিয়ে এসো।”
আমি একটীও কথা কইলেম না, কথা কইতে পাল্লেমই না। বোসে বোসে কাঁপছি আর ঘামছি, মকটমুখো আরো গর্জ্জন কোরে কর্ত্তার সঙ্গে কলহ বাধাবার উদ্যোগ কোল্লে। রাত্রিকালে অকস্মাৎ বৈঠকখানায় কিসের গোলমাল, জানবার অভিপ্রায়ে বাড়ীর তিন চারিজন আমলা আর চাকর তাড়াতাড়ি সেইখানে উপস্থিত হলো। সকলেই ঐ সব কথা শুনলে। লোকটাকে দেখে সকলেরি আতঙ্ক হলো; সকলেই দেখে বদমাস বিবেচনা কোরে তাড়িয়ে দিবার চেষ্টা কোত্তে লাগলো। ক্রমশঃ বাগবিতণ্ডায় গোলমাল আরও বেড়ে উঠলো।
কৰ্ত্তা একা ছিলেন, কুঁজো পাছে জোর কোরে আমাকে কেড়ে নিয়ে যায়, এতক্ষণ আমার সেই ভয় হোচ্ছিলো, আমলারা সহায় হোলেন দেখে, একটু ভরসা পেলেম। কৰ্ত্তাকে কিছু বলি বলি মনে কোচ্ছি, এমন সময় বৈঠকখানা ঘরের উত্তরদিকের একটা দরজা খুলে গেল। একটী নীলবসনা কুমারী ধীরে ধীরে সেই ঘরে প্রবেশ কোল্লেন। কে এই কুমারী?—আশালতা।
আশালতা অল্পবয়স্কা, অবিবাহিতা বালিকা, কি দিবা, কি রাত্রি, মধ্যে মধ্যে বৈঠকখানায় এসে পিতার সঙ্গে কথা কন, বই পড়েন, ছবি দেখেন, পুতুল নিয়ে খেলা করেন; লজ্জা করবার বয়স হয় নাই, লজ্জা করেন না। ঘরে প্রবেশ কোরেই সেই কুজ্জাকার রাক্ষসমূর্ত্তি নিরীক্ষণ কোরে বালিকা অত্যন্ত ভয় পেলেন, স্বভাবসিদ্ধ কোমলকণ্ঠে পিতাকে জিজ্ঞাসা কোল্লেন, “বাবা! ওটা কে? ওটা এখানে কেন এসেছে? ওটা বলে কি? এখানে এত গোলমাল হোচ্চে কেন?”
কর্ত্তা উত্তর কোল্লেন, “কে ও, আমি জানি না। ও বোলছে, হরিদাসের মামা হয়, হরিদাসকে নিয়ে যেতে এসেছে।”
এক নিশ্বাস ফেলে, গালে হাত দিয়ে, আশালতা বোল্লেন, “ও বাবা! হরিদাসের মামা! না বাবা, ও কখনই হরিদাসের মামা নয়, ও কখনই মানুষ নয়! হরিদাস এমন সুন্দর, হরিদাসের মামা কি ঐরকম? না বাবা, ওর সঙ্গে তুমি হরিদাসকে ছেড়ে দিয়ো না।”
কন্যার কথায় একটু হাস্য কোরে, কুঁজোটার দিকে চেয়ে কর্ত্তামহাশয় বোল্লেন, “দেখ দেখি, শোন দেখি, এই ক্ষুদ্র বালিকা কি বলে! তুমি হরিদাসের মামা, কেহই এ কথা বিশ্বাস কোরবে না। তবে যদি বিশেষ প্রমাণ দিতে পার, আর সেই—আর সেই যার কথা তুমি বোলছো, তোমার সেই ভদ্রলোককে যদি হাজির কোত্তে পার, তা হোলে বিবেচনা করা যাবে। আজ তুমি মানে মানে বিদায় হও।”
প্রতিধ্বনি কোরে আশালতা বোল্লেন, “সেই ভাল, সেই ভাল, বিদায় কোরে দাও, হরিদাসকে তুমি কোথাও যেতে দিয়ো না, আমিও যেতে দিব না। কোথাকার মামা, কোথাকার ভদ্রলোক, কোথাকার কে, ওর সঙ্গে কি আমাদের হরিদাসকে যেতে দিতে আছে? দিয়ো না, দিয়ো না। যে-ই হোক, ওকে তুমি এখনি তাড়িয়ে দাও।”
আশালতার মধুর বচনগুলি শ্রবণ কোরে, অভয় পেয়ে আমি তখন কর্ত্তার কাছ থেকে সোরে আশালতার কাছে গিয়েই দাঁড়ালেম, কুঁজোটার দিকে চাইলেম না; আশালতার মুখের দিকে মুখ রেখে, পশ্চাদ্দিকে অঙ্গুলি হেলিয়ে, সভয়বদনে আতঙ্কে আতঙ্কে কুঁজোটাকে দেখিয়ে দিতে লাগলেম।
কুঁজোটাকে সম্বোধন কোরে কৰ্ত্তা পুনরায় বোল্লেন, “শুনলে জটাধর, শুনলে। মেয়েটী কি বোলছে, শুনতে পেলে। সকলেই ঐ কথা বোলবে : বিশেষ প্রমাণ না পেলে কেহই তোমার মুখের কথায় বিশ্বাস কোরবে না। তুমি চোলে যাও।”
গম্ভীর কর্কশগর্জ্জনে কুঁজোটা বোলতে লাগলো, “এখনো ঐ কথা? এখনো বিশ্বাস হোচ্ছে না? বিশেষ প্রমাণ! আচ্ছা, আচ্ছা, আমার উকীলের মুখে তুমি বিশেষ প্রমাণ পাবে, বিশেষ প্রতিফল তোমাকে ভোগ কোত্তে হবে। পরের ছেলেকে—পরের ভাগ্নেকে গুম করার দাবীতে তোমার নামে আমি নালিশ আনবো। আমি তোমাকে—”
কথা সমাপ্ত কোত্তে না দিয়ে অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে, কর্ত্তা তখন বোলেন, “যাও যাও, চোলে যাও, তোমার শাসানীতে আমি ভয় করি না। তুমি যা কোত্তে পার কোরো, তোমার উকীল যা কোত্তে পারে, কোত্তে বোলো। বিনা প্রমাণে তোমার হাতে হরিদাসকে আমি কখনই দিব না।”
কুঁজো দেখলে, জোরজবরদস্তী খাটবে না, বলপ্রকাশ কোত্তে গেলেই বিভ্রাট ঘোটবে, কাজে কাজে সে রাত্রে আর বাগবিতণ্ডা না কোরে, চক্ষু পাকিয়ে আড়ে আড়ে আমার দিকে চাইতে চাইতে রাগে ফুলতে ফুলতে, আপন মনে বিড় বিড় কোরে বোকতে বোকতে, এঁকেবেঁকে উপর থেকে নেমে গেল। চাকরের পশ্চাৎ পশ্চাৎ হাততালি দিতে দিতে, হো হো শব্দে গোল কোরে উঠলো। দেউড়ীতে একজোড়া কৃষ্ণবর্ণ প্রকাণ্ড কুক্কুর ছিল, তারাও ঘেউ ঘেউ রবে রাক্ষসটাকে ফটক পার কোরে দিয়ে এলো।
আমি হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেম, বোধ হলো যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে গেল; সে যাত্রা রক্ষা পেলেম। রাত্রি অনেক হয়েছিল, আহারাদি সমাপ্ত হোলো, রাক্ষসের কথা বলাবলি কোত্তে কোত্তে সকলে যথাস্থানে শয়ন কোল্লেন, আমিও প্রেতমূর্ত্তি ভাবতে ভাবতে অনেকক্ষণ জেগে জেগে শেষরাত্রে নিদ্রাভিভূত হোলেম।
রজনী প্রভাত। আশালতার বিবাহের আয়োজনে লোকজন সকলেই ব্যস্ত। পাঁচদিন অতীত। ১৬ই বৈশাখ। বিবাহের আটদিন মাত্র বাকী। আটদিন থাকতেই বাড়ী-মেরামত আরম্ভ হলো, ঘর সাজাবার ব্যবস্থা হলো, জিনিসপত্র, আমদানী হোতে লাগলো, ফটকের দুধারে দুটী পাকা নবৎখানায় নবৎবাজা আরম্ভ হলো। ১৬ই বৈশাখের দিবা-রজনী আকাশমণ্ডল মেঘাচ্ছন্ন, দিবা-ভাগে একবারও সূর্য্যমূর্ত্তি দর্শন হলো না, রাত্রিকালেও নক্ষত্র উঠলো না। ১৭ই বৈশাখ প্রাতঃকালে গুড়ুনি গুড়ুনি বৃষ্টি আরম্ভ, আকাশের দৃশ্য ভয়কর, দিনমানেই অন্ধকার! বৈকালে অল্প অল্প হাওয়া উঠলো, বেলা যতই শেষ হয়ে এলো, ততই জোর হাওয়া। সন্ধ্যাকালে ঝড়; ঝড়ের সঙ্গে মুষলধারে বৃষ্টি। মেঘে গর্জ্জন থাকলো না, কালো অন্ধকার মেঘ, মাঝে মাঝে বিদ্যুতের চকমকি। রাত্রে কেহই আর বাড়ী থেকে কোথাও যেতে পাল্লে না, রাত্রের সঙ্গে সঙ্গে ঝড়ের বেগবৃদ্ধি, বৃষ্টির অবিরাম। সকলেই চিন্তাযুক্ত। নিয়মিত আহারাদির পর সকলে শয়ন কোল্লেন, অট্টালিকা নিরাপদ, ঝড়বৃষ্টিতে কোন হানি হবার ভয় ছিল না, জানালা-দরজা বন্ধ কোরে সকলেই সুখনিদ্রা সম্ভোগ কোত্তে লাগলেন। কত রাত্রি পর্য্যন্ত ঝড়বৃষ্টি হয়েছিল, রাত্রের মধ্যে থেমেছিল কি না থেমেছিল, তা আমার মনে নাই; ভোরবেলা ভারী একটা গোলমালে আমি জেগে উঠলেম। কেন গোলমাল, কিসের গোলমাল, ব্যাপারখানা কি, জানবার জন্য উৎকণ্ঠিত হয়ে উপর থেকে আমি নেমে এলেম।
বাড়ীর সকলেই তখন জেগেছে। সদরবাড়ীর উঠানে গোটাকত আধপোড়া মশাল, খানকত চূণমাখা বাখারি, আর পাঁচ-সাতটা জলের কলসী পোড়ে আছে। ডাকাত পোড়েছিলো, বাড়ীতে ডাকাতী হয়ে গেছে, ভোরের সময় ডাকাতেরা পালিয়েছে, এই রকম সোরগোল শুনে ভয়েই আমি আড়ষ্ট! অকস্মাৎ অন্দরমহলে রোদনের কোলাহল! স্ত্রীলোকগণের অত্যুচ্চ ক্রন্দনধ্বনিতে বাড়ীখানা যেন প্রতিধ্বনিত হোতে লাগলো। ব্যাপার কি? ব্যাপার কি?” এই কথা বোলতে বোলতে, চাকরেরা অদরমহলে ছুটে গেল! হাহাকার কোত্তে কোত্তে বাহিরে ছুটে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বোল্লে, “সৰ্ব্বনাশ হয়েছে! ডাকাতেরা কর্ত্তাবাবুকে বিছানার উপরে কেটে রেখে গিয়েছে! রক্তের ঢেউ খেলছে।”
আমার মাথায় যেন বজ্রঘাত হলো! জ্ঞানশূন্য হয়ে উঠানের মাঝখানে আমি আছাড় খেয়ে পোড়লেম। লোকেরা অনেক যত্নে অনেক কষ্টে আমার চৈতন্যসম্পাদন কোরেছিল। না কোল্লেই ভাল হোতো, চেতন পেয়ে আমি দশদিক অন্ধকার দেখতে লাগলেম, বন বন শব্দে মাথা ঘুরতে লাগলো : চেতন পেলেম, কিন্তু প্রকৃত জ্ঞান থাকলো না; উন্মত্তের ন্যায় “হা কর্ত্তা! হা পিতা! হা আশ্রয়দাতা! হা রক্ষাকর্ত্তা! হা দয়ার সাগর! আমাদের সকলকে অতলে ভাসিয়ে আপনি কোথায় চোলে গেলেন? সংসারে কেহই আপনার শত্রু ছিল না, কে এমন শত্রুতাবাদ সাধলে? কোথা থেকে ডাকাত এলো? কেন এমন সৰ্ব্বনাশ কোরে গেল?”—বারংবার আর্ত্তস্বরে এইরূপ বিলাপ কোত্তে কোত্তে মস্তকে বক্ষে ঘন ঘন করাঘাত কোত্তে লাগলেম। বাড়ীময় ক্রন্দনের কোলাহল!
গৃহিণী মূর্চ্ছিতা! পিতৃশোকে আশালতা মূর্চ্ছিতা! দাস-দাসী, আত্মীয়-কুটুম্ব-চাকর-লোকজন, সকলেই শোকাকুল! রাত্রের মহা ঝটিকা অপেক্ষা এখন যেন এ বাড়ীতে প্রবল-ঝটিকার প্রাদুর্ভাব। আর একটা আশ্চর্য্য ব্যাপার! সদর দরজা বন্ধ ছিল। যেমন বন্ধ, ঠিক সেইরূপ বন্ধই আছে, ডাকাতেরা তবে কোন পথে এসেছিল, কোন পথ দিয়ে পালিয়েছে, সকলেই বিস্ময়ে বিস্ময়ে সেই কথা বলাবলি কোত্তে লাগলো।
মহা ঝটিকার পর প্রকৃতি প্রশান্ত হয়, এ বাড়ীতে প্রকৃতি নিতাই অশান্ত! কেবল ক্রন্দনধ্বনি ব্যতীত আর কিছুই শ্রুতিগোচর হয় না। আকাশ পরিষ্কার; উজ্জ্বল প্রভাত; আকাশে উজ্জ্বল সূৰ্য্য সমুদিত; গত দিবসের মেঘাবৃত গগনে আর এক বিন্দুও মেঘ নাই। সেরেস্তার সর্দ্দার আমলা স্বয়ং পুলিশের থানায় গিয়ে ডাকাতীর সমাচার এজাহার কোল্লেন। থানার দারোগা প্রায় এক কুড়ি বরকন্দাজ সঙ্গে নিয়ে তদারকে এলেন। জমাদারের বগলে এক দিস্তা কাগজ, মুন্সীর কর্ণে ময়ূরপুচ্ছের কলম; ভারী ঘটা!
তদারক আরম্ভ হলো। পোড়া মশাল, সাদা বাঁখারি, জলের কলসী, এই তিনটী ঐ ডাকাতীর সাক্ষী। দারোগা-মহাশয় ঘরে ঘরে তদন্ত কোরে জানতে পাল্লেন, জিনিসপত্র কিছুই যায় নাই, স্ত্রীলোকের অলঙ্কার সমস্তই আছে, জানালা-দরজা যেমন তেমনি আছে, ডাকাতেরা সিন্দুক-বাক্স কিছুই ভাঙে নাই। যে ঘরে কৰ্ত্তা থাকেন, সেই ঘরখানি ছাড়া অন্য ঘরে ডাকাত প্রবেশ কোরেছিল কি না, তারও কোন চিহ্ন নাই। কর্ত্তা একাকী আপন শয়নকক্ষে খট্টার উপর নিদ্রিত ছিলেন, গৃহিণী সে রাত্রে সে ঘরে ছিলেন না, আশালতাকে নিয়ে অন্যঘরে শুয়েছিলেন। সে ঘরের দরজা বন্ধ ছিল, সে ঘরে ডাকাত প্রবেশ করে নাই। অন্যান্য ঘরের দরজা খোলা ছিল না, সেই সকল ঘরে যাঁরা যাঁরা ছিলেন, প্রভাতে তাঁরাই ভিতরদিক থেকে দরজা খুলে বারান্দায় বেরিয়েছেন। সকলের জবানবন্দীতে এইরুপ প্রমাণ হলো। দারোগা-মহাশয় সকল কথাই রিপোর্টে লিখে নিলেন। কর্ত্তার ঘরের দরজা প্রতি রাত্রেই খোলা থাকে, সে রাত্রেও খোলা ছিল, সেই ঘরেই খুন। বিছানায় রক্ত ছড়াছড়ি, বালিসের কাছে বৃহৎ একখানা রক্তমাখা ছোরা, কৰ্ত্তার কণ্ঠদেশ মাঝামাঝি কাটা।
আরো এক আশ্চর্য্য এই যে, ডাকাতেরা সে ঘরেরও কোন জিনিসপত্রে হাত দেয় নাই, সিন্দুক-বাক্সও ভাঙে নাই, সিন্দুক-বাক্সের চাবী কৰ্ত্তা নিজেই রাখতেন, রাত্রিকালে বালিসের নীচেই রিঙে গাঁথা চাবীর গোছা থাকতো, ঠিক আছে, কেহই সরায় নাই। বেশ জানা গেল, জিনিসপত্রের লোভে এ ডাকাতী নয়।
তবে এ ডাকাতীর অর্থ কি?—বাড়ীতে ডাকাত পোড়লো, জিনিসপত্র নিলে না, অলঙ্কারপত্র ছুঁলে না, কেবল গৃহস্বামীকেই প্রাণে মেরে রেখে গেল, ব্যাপার অবশ্যই অদ্ভুত। এমন শত্রুতা কার সঙ্গে ছিল?
পুলিশের লোকেরা একটা না একটা অছিলা পেলেই আপনাদের স্বার্থের দিকে বেশী ঝোঁক রাখেন। যে সময়ের কথা আমি বলছি, সে সময়ে সে ঝোঁকটা আরও কিছু বেশী ছিল। যাদের বিপদ, তাদের উপরেই বেশী জুলুম করা সে কালের দারোগাদের বিলক্ষণ অভ্যাস ছিল, এখনও আছে, কিন্তু সৰ্ব্বত্র তত নাই। চুরি, ডাকাতী, খুন, অপঘাতমত্যু ইত্যাদি বড় বড় অভিযোগে গৃহস্থের উপর দৌরাত্ম্য অতি প্রবল হয়। এদেশের প্রভুরা এক এক জায়গায় ঠিক সেই ভাব দেখান।
পাইক বরকন্দাজ প্রভৃতি ছোট বড় শান্তিরক্ষকগণের সে সময়ের সদরবাড়িতে সাধুলোকের হৃদয়ে বিষম ভয়ের সঞ্চার হয়।
তদারকের অনেক দূর সমাপ্ত কোরে দারোগা-মহাশয় দলবল সহ সদরবাড়িতে গেলেন। সেই সময় আর এক গুরতর সমস্যা উপস্থিত হলো। সমস্ত রাত্রি সদর দরজা বন্ধ, খিড়কীদরজা বন্ধ, খিড়কীর প্রাচীরগুলাও উচ্চ উচ্চ, ডাকাত তবে কোন পথে এসেছিল? কোন পথ দিয়েই বা বাহির হয়ে গেল? দারোগা-মহাশয় এই প্রশ্ন উত্থাপন কোরে মুখের কথায় রায় দিলেন, “ডাকাতীর সংবাদ মিথ্যা, বাড়ীর লোকেরাই শত্রুতা কোরে কর্ত্তাটীকে কেটে ফেলেছে, মিছামিছি গোটাকতক পোড়া মশাল আর খানকতক চূণমাখা বাঁখারি উঠানের মাঝখানে ফেলে রেখেছে। সর্বৈব মিথ্যা।” মুল কথা, কিছু, মোটা ধরণের দক্ষিণলাভ হোলে এ সকল কথা বোধ হয়, উত্থাপিত হোতো না। জমীদারের বাড়ীতে জমীদার খুন, সে ক্ষেত্রে বেশী দক্ষিণার আশা করা পুলিশের লোকের স্বভাবসিদ্ধই হওয়া উচিত, কিন্তু কে টাকা দিবে, কেন দিবে, সে কথার মীমাংসা না হওয়াতে পুলিশ কিছু ক্ষুন্ন হোলেন, তাঁদের মনে মনে রাগও হলো। হলো হলোই, সে রাগের উপশম করা বাড়ীর লোকের সাধ্য নয়, কাজে কাজে দারোগা তখন ডাক্তার ডাকবার হুকুম দিলেন।
একজন ডাক্তার এলেন, মৃতদেহ পরীক্ষা কোল্লেন, যেমন দস্তুর, সেই রকম আপন মন্তব্য লিখে দারোগার হাতে দিলেন;— “ছোরা দিয়ে কাটা, বেশী রাত্রে কাটা, যারা অস্ত্ৰচালনে শিক্ষিত ও সুপটু তাদের মধ্যেই একজন কর্ত্তাকে খুন কোরেছে, ইহাতে সন্দেহমাত্র নাই।” ডাক্তারের সাটিফিকেটখানি পুলিশের রিপোর্টের সঙ্গে চালান হবে, সুতরাং সেখানি দারোগার হাতেই থাকলো।
এই সকল কাণ্ড হোচ্ছে, এমন সময় বাড়ীর দুজন চাকর তাড়াতাড়ি সেইখানে ছুটে এসে হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে বোল্লে, “ভারা বেয়ে লোক উঠেছিল, আশালতার বিবাহের জন্য বাড়ী মেরামত হোচ্ছিল, বাইরে ভারা বাঁধা ছিল, সেই ভারার বাঁশের উপর কাদামাখা মানুষের পায়ের দাগ। গোটাকতক দাগের সঙ্গে রক্ত দেখা যাচ্ছে, দু-পাঁচটা বাঁশের বাঁধনদড়ীও আলগা হয়ে গিয়েছে, কজন লোক এসেছিল, ঠিক জানা গেল না, কিন্তু ভারা বেয়ে মানুষ উঠা, সে স্পষ্টই জানা গেল।”
দারোগা-মহাশয় এই প্রমাণে গভীরবদনে খানিকক্ষণ মাথা হেঁট কোরে রইলেন, শেষকালে মৌনভঙ্গ কোরে জিজ্ঞাসা কোল্লেন, “পুরুষ ওয়ারীস কে আছে?” সেরেস্তার দেওয়ানজী অগ্রবর্ত্তী হয়ে উত্তর কোল্লেন, “আপনি তো সকলি জানেন, পুরুষ ওয়ারীস কেহই নাই, তবে জামাইবাবু, কন্যাদের পক্ষে অভিভাবক হবেন। তাঁকে সংবাদ দেওয়া হয়েছে, তিনি এলেই লাস জ্বালাবার ব্যবস্থা হবে। কৰ্ত্তার বড়মেয়েটীকে, মেজোমেয়েটীকে আর জামাইবাবুকে সংবাদ দেওয়া হয়েছিলো, কে কতক্ষণে পৌঁছিবেন, সেই অপেক্ষায় দারোগা মহাশয় সেই বাড়ীতেই থাকলেন। জামাইবাবুর বাড়ী অধিক দূর ছিল না, খুব শীঘ্রই তাঁর পত্নীকে সঙ্গে কোরে তিনি এসে উপস্থিত হলেন; সমস্ত বৃত্তান্ত শুনে নিজেকে সামাল দিয়ে দু-এক ফোঁটা অশ্রুপাত কোল্লেন। কন্যা উমাকালী পিতার নিকটে গিয়ে হাহাকার কোত্তে লাগলেন, তাঁর সঙ্গে বাড়ীর লোকগুলির ক্রন্দন এমন উচ্চে পৌঁছল যেন বাতাস পর্য্যন্ত কাঁপাতে লাগলো।
এদিকে অন্য বন্দোবস্ত। মৃতদেহ হাসপাতালে চালান না দিয়ে সহজে যাহাতে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সমাধা হয়, জামাইবাবু দারোগাকে সেইরূপ অনুরোধ কোল্লেন। খানিক্ষণ ইতস্ততঃ কোরে দারোগা মহাশয় দুই একটা কূটতর্ক উত্থাপন কোল্লেন, শেষকালে গোপনে আশামত সেলামী পেয়ে জল হয়ে গেলেন; গৃহস্থের তত বিপদেও তাঁর গম্ভীরবদনে মৃদু হাস্য দেখা দিল, লাস জ্বালাবার হুকুম দিয়ে জামাইবাবুর সঙ্গে আত্মীয়তা কোরে তিনি তখন বিদায় হোলেন।
শ্মশানে সর্ব্বানন্দবাবুর মৃতদেহের সৎকার হলো। শোকের বেগ কতকটা থামলো। সন্ধ্যার কিছু পূর্ব্বে জ্যেষ্ঠা কন্যা শ্যামাসুন্দরী রোদন কোত্তে কোত্তে বাড়ীতে এসে উপস্থিত হোলেন। গোলমাল, ক্রন্দন, হাহাকার, নানাকথা ইত্যাদি এ সকল কার্য্যের অঙ্গ। জামাইবাবু সকলকে প্রবোধ দিয়ে ঠাণ্ডা করবার চেষ্টা কোল্লেন, কতক পরিমাণে কৃতকার্য্যও হোলেন। চতুর্থ দিবসে কন্যারা নিয়মিত কাৰ্য্য সমাধা কোরে শুদ্ধ হোলেন। নির্দ্ধারিত সময়ে গৃহিণী ঠাকুরাণী পতির ঔদ্ধদৈহিক কার্য্য সম্পন্ন কোল্লেন। গোলমাল অনেকটা থেমে গেল।