সে দিন বনহুর মাধুরীর ঘরে রাত কাটিয়ে গেছে কথাটা যখন সবাই জানতে পারলো তখন মাধুরীর অবস্থা শোচনীয় হয়ে ওঠে। ভোরে যখন অদ্ভুতভাবে জামাইবাবু স্বয়ং এসে উপস্থিত হল তখন তো আরও ঘোরর ব্যাপার। জামাই বাবু রাতের ঘটনা সব বর্ণনা করে শুনাল কিন্তু নিজের স্ত্রীর কক্ষে দস্যু বনহুর রাত্রিবাস করছিল এ যে যার-পর-নাই কেলেঙ্কারি কথা। অমন স্ত্রীকে জামাই নিমাই বাবু গ্রহণ করতে অসম্মত হলো।
মাধুরী অনেক করে বলেন–স্বামীর পা ছুঁয়ে শপথ করলো, দস্যু হলেও সে অতি মহৎ জন মাধুরীকে সে স্পর্শ করেনি। কিন্তু মাধুরীর কথাটা জামাই নিমাই বাবু বিশ্বাস করলো না।
শ্বশুর শাশুড়ীর কান্নাকাটি, স্ত্রী মাধুরীর চোখের জল নিমাইকে ধরে রাখতে পারলো না। সে বাগ করে চলে গেল।
মাধুরীর জীবনে নেমে এলো এক চরম পরিণতি। চোখের পানি হলো তার সম্বল। একি হলো তার বিয়ের পর স্বামীকে না চিনতেই তাকে হারাল মাধুরী। যত রাগ গিয়ে ছিল দস্যু বনহুরের ওপর, কিন্তু তার তো কোন অপরাধ নেই, দুস্য হলেও মাধুরী তার হৃদয়ের যে পরিচয় পেয়েছে সে অতি মহান-অতি মহৎ। স্বর্গের দেবতার চেয়েও সে পবিত্র!
মাধুরী নিজের অজ্ঞাতে বনহুরের স্মৃতিকে মনের মধ্যে গেঁথে নিয়েছে। তার সৌম্যসুন্দর মূর্তি হৃদয় আসনে প্রতিষ্ঠা করেছে সে। শত চেষ্টাতেও মাধুরী ভুলতে পারছে না দস্যু বনহুরের কথা। মানুষ কত হৃদয়বান হলে তবেই তার স্বভাব এমন দেবসমতুল্যা হতে পারে, সদাসর্বদা তাই ভাবে মাধুরী। মনের অর্ঘ্য দিয়ে পূজা করে তার স্মৃতিকে। ঐ একটি রাতের পরিচয় মাধুরীর জীবনে এনে দেয় বিরাট একটা পরিবর্তন। বনহুরের সুন্দর দীপ্ত মুখখানা মাধুরী কিছুতেই ভুলতে পারলো না।
মাধুরী ছিল মনিরার সহপাঠিনী। এককালে মনিরার সঙ্গে একই কলেজে পড়তো। মাধুরী ছিল হিন্দু, মনিরা মুসলমান, কিন্তু উভয়ের মধ্যে ছিল গভীর একটা যোগাযোগ। মনিরা মাধুরীকে খুব ভালবাসত। হঠাৎ মাধুরীর বাবা দূরে শহরের অপর প্রান্তে একটি বাড়ি করে সেখানে চলে যান। সে জন্য ছাড়াছাড়ি হয় উভয়ের মধ্যে।
সেদিন মনিরা শহরের ঐ দিকে কোন প্রয়োজনবশতঃ গিয়েছিল হঠাৎ তার মনে পড়ে মাধুরীর কথা, একবার দেখা করে গেলে মন্দ হয় না। মাধুরীর বিয়ে হয়ে গেছে খবরটা মাধুরীর একটা চিঠিতেই জানতে পেরেছিল। বাড়ির ঠিকানাটাও মাধুরী পাঠিয়েছিল তাকে।
মাধুরীর বাড়ি খুঁজে বের করতে বেশি বিলম্ব হয় না মনিরার! গাড়ি রেখে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে ডাকে-মাধুরী-মাধুরী!
অতি পরিচিত কণ্ঠস্বর, মাধুরী ঘরে শুয়ে শুয়ে কি ভাবছিল, শুনতে পেরে ছুটে আসে। জড়িয়ে ধরে উভয়ে উভয়কে। মনিরা মাধুরীর সাদাসিধে পোশাক দেখে হেসে বলে–কিরে মাধুরী বিয়ে করলি, কিন্তু এমন কেন?
মনিরার কথায় মাধুরীর মুখমণ্ডল বিষণ্ণ মলিন হয়ে ওঠে, কি যেন ভাবে। তারপর বলে—মনি, ঘরে চল্ সব বলছি।
মনিরাকে সঙ্গে করে নিয়ে বাসায় মাধুরী।
মনিরা হেসে বলে—এরই মধ্যে যে একেবারে বুড়ী বনে গেছিস মাধু, ব্যাপার কি?
একটা দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে বলে মাধুরী—ভাই, বিয়ে হয়েছে সত্য, কিন্তু ও বিয়ে আমার বিয়ে নয়।
তার মানে?
মানে, স্বামী বলে কিছু জানি না।
হেঁয়ালি রেখে সোজা কথা বল।
তবে শুন্ আমার জীবনে এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটে গেছে, যদি ধৈর্য ধরে শুনিস তবে বলি।
বল আমি শুনতে চাই। মনিরা ভালো হয়ে বসলো।
মাধুরী একটা দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করে বলে-হঠাৎ আমার বাবা মামীমার নিকট থেকে একদিন একটা চিঠি পেলেন। তাতে লিখেছেন, আপনার কন্যা মাধুরীর জন্য একটি সুপাত্র পেয়েছি, যদি এক সপ্তাহের মধ্যে আসতে পার, তবে বিয়ে হবে কারণ পাত্রের মা ছেলের বিয়ে দিয়েই চলে যাব তীর্থে।
এ দিকে ঠিক সে সময় আমার দিদিমার ভীষণ অসুখ। জানিস তো দিদিমাই ছিল আমাদের সবচেয়ে প্রিয়জন। দিদিমার অসুখের জন্য এ বিয়েতে কেউ মত দিল না, কিন্তু বাবার ইচ্ছা তিনি এখানেই আমাকে সঁপে দেব। এত ভালো ছেলে নাকি আর পাওয়া যাবে না। কাজেই বাবা শুধু আমাকে নিয়ে রামনগর চললেন।! মা কিংবা আমাদের বাড়ির কেউ যেতে পারলেন না। দিদিমার অবস্থা খারাপ কখন কি হয়।
তারপর সেখানে পৌঁছে দুদিন কেটে গেল বিয়ের আয়োজন করতে। বাবা আমাকে নিয়ে মাসীমার ওখানেই উঠেছিল। তিনদিন পর বিয়ে হলো, কিন্তু বাসর শয্যার পূর্বেই একটা টেলিগ্রাম এসে হাজির-দিদিমার মৃতপ্রায় অবস্থা, যদি দেখার ইচ্ছে থাকে চলে এসো। বিয়ে তো হয়েই গেছে কাজেই বাবা চলে আসতে চাইলেন। আমিও কেঁদেকেটে আকুল হলাম দিদিমাকে একটিবার শেষ দেখা দেখবো।
স্বামী রাগ করলেন তবু আমি বাবার সঙ্গে চলে এলাম। তারপর দিদিমা চলে গেল, শ্রাদ্ধ হলো, বাবা অনেক করে আমার স্বামীকে লিখলেন, কিন্তু তিনি এলেন না। রাগ তার পড়েনি। তারপর পনেরো দিন যেতে না যেতেই স্বামীর চিঠি পেলাম, আমি অমুক দিন রাতের ট্রেনে তোমাকে নিতে আসছি।
চিঠি পেয়ে বাবা মা এবং আমিও অত্যন্ত খুশি হলাম। যাক রাগ তাহলে পড়েছে।
যেদিন উনি আসবেন ঐদিন আমার আনন্দ আর ধরে না। আমাদের পুরোন ভৃত্যটিকে পাঠালাম স্টেশনে ওকে এগিয়ে আনতে।
আসলেন উনি, রাত তখন তিনটে হবে। বাবা-মা তাকে আদর অভ্যর্থনা জানিয়ে গ্রহণ করলেন।
তারপর স্বামীর সঙ্গে আমার প্রথম রাত্রি।
মনিরা অবাক হয়ে শুনছে, ভাবছে এ আবার বলার মত কি! তবু হেসে বলেন-খুব খুশি লাগছিল বুঝি তোর?
হ্যাঁ সে, দিনের আনন্দ আমি কোনদিন ভুলব না মনিরা। স্বামী ঘরে এল, সে আমি প্রথম তাকে ভাল করে দেখার সুযোগ পেলাম। বিয়ের দিন লজ্জায় তাকে এমন করে দেখতে পারিনি। আমি কল্পনাও করতে পারিনি আমার স্বামী এত সুন্দর। ভুলে গেলাম লজ্জা শরম স্বামীকে সাদর-সম্ভাষণ জানালাম। কিন্তু কি আশ্চর্য সে তাতে এতটুকু সাড়া দিল না।
সেকি।
হ্যাঁ, শুধু নির্নিমেষ নয়নে আমার দিকে তাকিয়ে দেখলো।
তারপর? সে জানালো আমি বড় অসুস্থ ঘুমাবো! আমি তার ঘুমে বাধা দিলাম না। কখন যে রাত ভোর হয়ে গেছে চেয়ে দেখি পাশে সে নেই। তারপর যখন তার আসল পরিচয় পেলাম জানতে পারলাম সে আমার স্বামী নয়।
স্তব্ধকণ্ঠে অস্ফুট ধ্বনি করে ওঠে মনিরা—কি বল, সে তোর স্বামী নয়!
না।
তারপর?
আর তার দেখা পাইনি। ভোর হলো, আমার স্বামী স্বয়ং এসে পৌঁছলেন। যখন তিনি জানতে পারলেন অন্য এক পুরুষ আমার কক্ষে রাত কাটিয়ে গেছে, তখন তিনি আর কিছুতেই আমাকে গ্রহণ করতে পারলেন না। আমি তার পা ছুয়ে শপথ করেছি, সে আমাকে স্পর্শ করে নি, তবু—
এসব কি বলছিস মাধু! সব আমার কাছে আশ্চর্য লাগছে।
হ্যাঁ, সব আশ্চর্য। আজ তোকে ছুঁয়েও আমি শপথ করলাম।
এবার বুঝেছি তোর স্বামী তোকে অবিশ্বাস করেছেন।
হ্যাঁ।
এ তার ভারী অন্যায়। জেনে যদি কোন ভুল হয়, তার কি ক্ষমা নেই? আম আজ উঠি ভাই।
মাধুরী বলে ওঠে গল্প করতে করতে সময় কাটলো। চা, খাবি নে?
আজ নয়, আর একদিন আসব।
ক্ষিপ্তের মত পায়চারী করতে করতে বলে মুরাদ নাথুরাম, তোমার মত বীর পুরুষকে যে কাবু করতে পারে সে কে হতে পারে।
নাথুরাম মাথা চুলকায়–জুর, আমি তাকে কোনদিন না দেখলেও বুঝতে পেরেছি সে দস্যু বনহুর ছাড়া কেউ নয়।
তোমাদের এতগুলো লোককে দস্যু বনহুর পরাজিত করে চলে গেল অথচ তোমরা কিছু করতে পারলে না?
আমরা এজন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। দু বনহুর কখন যে আমাদের একজন মাঝিকে সরিয়ে তারই ছদ্মবেশে আমাদের নৌকায় উঠে। পড়েছিল, আমরা কেউ এতটুকু টের পাইনি।
ওকেই তো বলে বাহাদুরের বাহাদুরি। এবার বল মেয়েটা কোথায় গেল? ডুবে মরেনি তো?
না হুজুর, দস্যু বনহুর তাকে মরতে দেয়নি। সে সুস্থ শরীরে মামা মামীর পাশে ফিরে এসেছে।
কথাটা কানে যেতেই মুরাদের চোখ দুটো ধক করে জ্বলে উঠলো। আনন্দসূচক শব্দ ওঠে মুরাদ-মনিরা বেঁচে আছে।
হ্যাঁ হুজুর, আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন। আমি যেমন করে হউক তাকে আপনার হাতে পৌঁছে দেবই। নইলে আমার নাম নাথুরাম সিং নয়। কিন্তু হুজুর আরও কিছু-হাতে হাত কচলায় নাথুরাম।
মুরাদ গভীর কণ্ঠে বলে—পাবে, আরও পাবে। পাঁচ হাজার, দশ হাজার, পনের হাজার যা চাও তাই দেব, তবু ওকে চাই।
আচ্ছা হুজুর।
আর একটি কথা, তোমরা জেনে রাখ নাথু, যতদিন দস্যু বনহুরকে তোমরা নিঃশেষ করতে না পেরেছো, ততদিন তোমাদের কোন বাহাদুরি নেই। তাছাড়া তোমরা নিশ্চিন্ত নও। আমিও নই। কারণ, আমি জানি দস্যু বনহুর ভালবাসে মনিরাকে এবং সে কারণেই ওকে হত্যা করতে হবে। যতদিন দস্যু বনহুর জীবিত থাকবে ততদিন আমি মনিরাকে একান্তভাবে পাব না।
ঠিক বলেছেন, বনহুরকে হত্যা না করতে পারলে আমাদের কিছুই করা সম্ভব নয়। হুজুর আজ আর বিলম্ব করতে পারি না। এক্ষুণি আমরা আস্তানায় রওনা দেব, অনুচরগণ সেখানে অপেক্ষা করছে।
নতুন কোন খবর পেয়েছ বুঝি?
হ্যাঁ হুজুর, মনসাপুরের জমিদার কন্যা সুভাষিণী আজ পালকী যোগে দোল পূর্ণিমায় মেলা হতে মনসাপুরে ফিরছে। মেয়েটি অতি সুন্দরী।
মুরাদের চোখ দুটো ক্ষুধিত শার্দুলের মত জ্বলে ওঠে—তাই নাকি।
হ্যাঁ হুজুর।
তাহলে তো আর একটি নতুন শিকারের সন্ধান পেয়েছ। সাবাস নাথুরাম! সত্যি তুমি কাজের লোক।
পুলিশ অফিস।
ইন্সপেক্টার মিঃ হারুন পেছনে হাত রেখে চিন্তিতভাবে দাঁড়িয়েছিল। অদূরে কয়েকজন পুলিশ অফিসার বসে আছেন। সকলের মুখেই গভীর চিন্তার ছাপ।
দস্যু বনহুর হাঙ্গেরী কারাগার থেকে পালিয়ে যাবার পর পুলিশ মহলে এক বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়েছে। হাজার হাজার পুলিশ পরিবেষ্টিত এ হাঙ্গেরী কারাগার। এ কারাগার থেকে কোন দস্যু আজ পর্যন্ত পালাতে পারেনি। পাষাণ প্রাচীরে ঘেরা, লৌহ ইস্পাতে গড়া এই হাঙ্গেরী কারাগার। ছোটখাটো চোর ডাকুর জন্য এ কারাগার নয়। যে ডাকাত বা দস্যু অত্যন্ত দুর্দান্ত তাদের জন্যই এ কারাগার। শেষ পর্যন্ত সে কারাগার থেকেও পালাল দস্যু বনহুর। পুলিশমহলে একটা আলোড়নের সৃষ্টি হয়েছে।
পুলিশ সুপার পর্যন্ত ঘাবড়ে গেছেন। এতকাল তিনি বহু দস দেখে এসেছেন, কিন্তু দস্যু বনহুরের মত দস্যু তিনি দেখেন নি। কারাগারের ভেন্টিলেটরের শিক বাঁকিয়ে পালানো কম কথা নয়–এ যে অদ্ভুত কাণ্ড।
পুলিশ মহল ব্যস্ত সমস্ত হয়ে পড়েছে। শহরে বন্দরে, পথেঘাটে সকলের মুখেই এক কথা দস্যু বনহুর হাঙ্গেরী কারাগার হতে পালিয়েছে।
ইন্সপেকটার হারুন বলে ওঠেন, দেখুন আপনারা এ দস্যু বনহুরকে যাই মনে করুন, সে ভদ্রঘরের সন্তান। মিঃ চৌধুরীর মত মহৎ ব্যক্তির সন্তান সে, কিন্তু পরিবেশ তাকে এতখানি জঘন্য করে তুলেছে।
পুলিশ অফিসার মিঃ হোসেন বলেন একথা সত্য, শুনেছি দস্যু বনহুর নাকি অপূর্ব সুন্দর দেখতে।
জবাব দেন মিঃ হারুন শুধু অপূর্ব সুন্দর নয় মিঃ হোসেন, অপূর্ব সুন্দর . এমন চেহারার লোক এমন হতে পারে কল্পনার অতীত।
আর একজন অফিসার বলেন, দস্যু হবে দস্যুর মত ভয়ঙ্কর, কিন্তু তা না হয়ে হয়েছে সুন্দর। আমি শুনেছি দস্যু বনহুরের ব্যবহারও নাকি অত্যন্ত ভদ্র।
সে বিষয়ে আমি নিঃসন্দেহ মিঃ কাওসার, তার ব্যবহার যদি দেখতেন কিছুতেই আপনি তাকে দস্যু বলে মেনে নিতে পারতেন না। কথাটা বলে আসন গ্রহণ করেন মিঃ হারুন। তারপর একটা সিগারেটে অগ্নিসংযোগ করে বলেন—হাজার সুন্দর হউক, হাজার ভদ্র হউক, তবু সে দস্যু-ডাকাত। আইনের চোখে সে অপরাধী।
শুধু অপরাধী নয়, সে পলাতক আসামী। কথাটা বলতে বলতে কক্ষে প্রবেশ করেন প্রখ্যাত ডিটেকটিভ মিঃ শঙ্কর রাও।
মিঃ হারুন উঠে দাঁড়িয়ে তাঁকে অভ্যর্থনা করে বসান। তারপর বলেন—মিঃ রাও, কি করা যায় বলুন তো? সমস্ত শহরে-বন্দরে সব জায়গায় পুলিশ মোতায়েন করেছি। যাকে সন্দেহ হবে তাকেই এরেস্ট করে হাজতে ভরবে।
শঙ্কর রাও হেসে বলেন—শেষ পর্যন্ত দস্যু বনহুরকে ধরতে গিয়ে কত যে ভদ্রলোক হাজতে বাস করবে, তার ঠিক নেই।
অগত্যা এ ব্যবস্থা করতে বাধ্য হয়েছি মিঃ রাও। আপনার মত অভিজ্ঞ ডিটেকটিভও দস্যু বনহুরকে গ্রেফতারে সক্ষম হলো না। কিন্তু মিঃ রাও, আবার আপনাকে নতুন করে বনহুরকে গ্রেপ্তারের জন্য অবতীর্ণ হতে হবে।
ইয়েস, আমি এ ব্যাপারে সব সময় প্রস্তুত আছি।
থ্যাঙ্ক ইউ মিঃ রাও। আপনাকে আমরা যথাসাধ্য সাহায্য করবে।
এমন সময় একজন পুলিশ সাব-ইন্সপেকটার একখানা টেলিগ্রাম এনে মিঃ হারুনের হাতে দেয়—স্যার টেলিগ্রাম।
মিঃ হারুন টেলিগ্রামখানা হাতে নিয়ে পড়ে দেখলেন। তারপর বলেন—আগামীকাল কমিশনার সাহেব স্বয়ং হাঙ্গেরী কারাগার দর্শনে আসছেন।
বলে ওঠেন মিঃ কাওসার, এবার তাহলে পুলিশ মহলকে নাচিয়ে ছাড়বে।
মিঃ নাসের বলে ওঠেন—দস্যু বনহুর শেষ পর্যন্ত কমিশনার সাহেবকেও ঘাবড়ে তুললো।
মিঃ খালেক এতক্ষণ নিচুপ হয়ে শুনছিল। তিনি বলেন, হাঙ্গেরী কারাগার থেকে দস পালানো সরকার বাহাদুরের চরম অপমানের কথা।
আরও কিছুক্ষণ আলোচনার পর সবাই বিভিন্ন কাজে উঠে পড়েন, সমস্ত থানায় এবং পুলিশ অফিসে ফোন করে কথাটা জানিয়ে দিল। কারণ সবারই প্রস্তুত থাকতে হবে, তিনি যেন তাদের দোষ-ত্রুটি ধরতে না পারেন।
মনসাপুরের পথ।
সন্ধ্যার অন্ধকার ঝাপসা হয়ে এসেছে। পাল্কী বেহারাগণ দ্রুত পা চালিয়ে চলেছে। তাদের কষ্ঠের হুম্ হুম্ শব্দে নিস্তব্ধ প্রান্তর মুখরিত হয়ে উঠেছে। আজকাল দিন সময় ভালো নয়, রাহাজানি, চুরি-ডাকাতি প্রায়ই লেগে আছে। পাকীটির সঙ্গে কয়েকজন বন্দুকধারী পাহারাদার চলেছে। পাকীটিতে রয়েছে মনসাপুরের জমিদার কন্যা, সঙ্গে একজন দাসীও আছে।
নির্জন পথ।
এতদ্রুত পা চালিয়েও পাল্কী বেহারাগণ সন্ধ্যার পূর্বে মনসাপুরে পৌঁছতে সক্ষম হলো না। পথিমধ্যেই নেমে এলো গভীর অন্ধকার। সুভাষিণী চিন্তিত কণ্ঠে বেহারাগণকে জিজ্ঞেস করলো—আর কত পথ আছে বেহারা?
একজন বেহারা বলে ওঠে—এখনও আরও দুক্রোশ যেতে হবে দিদিমণি?
তোমরা একটু জোরে পা চালাও। আমার কেমন ভয় লাগছে! একজন পাহারাদার বলে ওঠেকুছ ভয় নেহি দিদিমণি। হাম লোক আপকো সাথ হয়।
আর কিছুক্ষণ চলার পর পথটা একটা বনের পাশ দিয়ে চলেছে, সে পথ দিয়ে এগিয়ে চলল তারা। কিন্তু বেশি দূর এগুতে সক্ষম হলো না। হঠাৎ একদল মুখোশপরা লোক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করলো। মার মার কাট কাট শব্দে স্তব্ধ বনভূমি মুখরিত হয়ে উঠলো।
বেহারাগণ ভয়ে পাল্কী ছেড়ে যে যেদিকে পারলো ছুটে পালাল।
বন্দুকধারী পাহারাদারগণ প্রাণপণ চেষ্টায় দস্যুদলের সঙ্গে লড়তে লাগলো, কিন্তু চারজন পাহারাদার কতক্ষণ টিকতে পারে! দস্যুদল তিনজন পাহারাদারকে হত্যা করে ফেললো। একজন বন বাদাড় ভেঙে ছুটতে লাগলো মনসাপুর অভিমুখে।
এ দস্যুদল অন্য কেই নয়, শয়তান নাথুরামের দল। এবার নাথুরাম পাল্কীর পাশে এসে দাঁড়ালো। ভয়ে বিবর্ণ ফ্যাকাশে হয়ে উঠেছে সুভাষিণীর মুখমণ্ডল। বৃদ্ধা দাসী হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করেছে।
নাথুরাম পা দিয়ে বৃদ্ধাকে সরিয়ে সুভাষিণীর হাত চেপে ধরলো। একটানে বের করে আনলো তাকে। মশালের আলোতে সুভাষিণীর দেহের অলঙ্কার ঝকমক করে উঠলো।
নাথুরাম বিকট শব্দে হেসে উঠলোহাঃ হাঃ হাঃ একেবারে স্বর্গজয়। একগাদা অলঙ্কারের সঙ্গে অপসরী লাভ! হাঃ হাঃ হাঃ নাথুরামের হাসির শব্দে রাতের অন্ধকার খান খান হয়ে ভেঙ্গে ছিল। একজন অনুচরকে লক্ষ্য করে বলেন সে—খাদু সিং একে কাঁধে উঠিয়ে নাও।
খাদু সিং তার বলিষ্ঠ বাহু দিয়ে যেমনি সুভাষিণীকে ধরতে গেল, অমনি বৃদ্ধা দাসী সুভাষিণীকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে উঠলো–না না, একে দেব না, একে নিতে দেব না।
বৃদ্ধাকে টেনে ফেলে দেয় খাদু সিং। কিন্তু বৃদ্ধা তাতে ক্ষান্ত হয় না, সুভাষিণীকে হারিয়ে মনিবের নিকটে কি জবাব দিবে সে, পুনরায় উঠে জড়িয়ে ধরে সুভাষিণীর দেহটা কিছুতেই আমি সুভাষিণীকে নিতে দেব না….।
এবার নাথুরাম বৃদ্ধাকে জোরপূর্বক ছাড়িয়ে মাটিতে ফেলে দেয়, তারপর বর্শার এক আঘাতে গেঁথে ফেলে ওকে।
বৃদ্ধার কণ্ঠ চিরতরে রুদ্ধ করে দিয়ে পুনরায় আদেশ করে—এবার ওকে ওঠাও।
কিন্তু সুভাষিণীও কম মেয়ে নয়। সে খাদুর সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু করলো। কিছুতেই সে বশ্যতা স্বীকার করবে না।
হঠাৎ এমন সময় একটা খট খট শব্দ ভেসে আসতে লাগলো। নাথুরাম উবু হয়ে মাটিতে কান লাগিয়ে শুনতে লাগলো। তারপর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলেন-খাদু, রংলাল, জগাই। তাড়াতাড়ি কর, মনে হচ্ছে কেউ ঘোড়ায় চড়ে এদিকে আসছে। তাড়াতাড়ি যুবতীকে কাঁধে উঠিয়ে নাও।
সুভাষিণীকে এবার তিন-চার জন ধরলো। সুভাষিণী কিল-চড় লাথি দিয়ে বাধা দিতে লাগলো, কিন্তু সে নারী; কতক্ষণ নিজেকে রক্ষা করতে পারে। হাঁপিয়ে পড়েছে।
জগাই জোর করে এবার সুভাষিণীকে কাঁধে উঠিয়ে নিল।
ঠিক সে মুহূর্তে একটা কালো অশ্ব ছুটে আসছে বলে মনে হলো তাদের। ওরা কতক পালাতে চেষ্টা করলো, কিন্তু তার পূর্বেই অশ্বারোহী এসে ছিল সেখানে। মাত্র কয়েক মিনিট, অশ্বটা দু’পা উঠিয়ে নিজেকে সংযত করে নিল। অশ্বারোহী ততক্ষণে অশ্ব থেকে লাফিয়ে নেমে পড়েছে। মাথায় কালো পাগড়ী মুখে কালো রুমাল বাঁধা। শরীরে কালো ড্রেস, এক একটা প্রচণ্ড ঘুষিতে এক একজন শয়তানকে ধরশায়ী করে চললো সে।
জগাই তাড়াতাড়ি সুভাষিণীকে কাঁধ থেকে নামিয়ে দিয়ে ছোরা বের করলো। খাদুও বর্শা উঁচিয়ে আক্রমণ করলো অশ্বারোহীকে।
অশ্বারোহী সকলকে বীরত্বের সঙ্গে পরাজিত করে চললো।
নাথুরাম একটু দূরে দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য লক্ষ্য করছিল, এবার সে অশ্বারোহীর বুক লক্ষ্য করে রিভলভার উচুঁ করে গুলি ছোড়ে। অশ্বারোহী মুহূর্তে সরে দাঁড়ায়। নাথুরামের গুলি গিয়ে বিদ্ধ হয় অদূরস্থ বৃনে। এবার অশ্বারোহী নাথুরামকে দ্বিতীয়বার গুলি করার সুযোগ না দিয়ে আত্রণ করে। অল্পক্ষণেই নাথুরামকে পরাজিত করে তার হাত থেকে মিতভার কেড়ে নেয় অশ্বারোহী।
নাথুরামকে পরাজিত হতে দেখে তার দলবল কে কোনদিকে পালালো ঠিক নেই। নিরস্ত্র নাথুরাম এবার উঠে দ্রুত অন্ধকারে অদৃশ্য হলো।
অশ্বারোহী এগিয়ে এসে সুভাষিণীর সামনে দাঁড়ালো।
সুভাষিণী এতক্ষণ স্তব্ধ হয়ে এই অদ্ভুত কাণ্ড দেখছিল আর থর থর করে কাঁপছিল। না জানি এ আবার কোন্ দস্যু? অশ্বারোহী এগিয়ে আসতেই সুভাষিণী ভয়কম্পিত কণ্ঠে বলেন—কে আপনি, আমাকে এভাবে রক্ষা করলেন।
অশ্বারোহী বলেন—আমি যেই হই, আপনার মঙ্গলাকাংখী। ঠিক সময় পৌঁছতে পেরেছিলাম বলে আপনাকে বাঁচাতে সক্ষম হলাম। আসুন এবার আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দি।
সুভাষিণী। অন্ধকারে নির্বাক দৃষ্টি মেলে তাকালো অশ্বারোহীর মুখের দিকে। এ আবার কোন শয়তানি করবে না তো? বিশ্বাস কি? এই নির্জন স্তব্ধ বনভূমিতে সে একা যুবতী মেয়ে। অজ্ঞাত এক পুরুষের সঙ্গে কোথায় যাবে। তবু তার ড্রেস স্বাভাবিক নয়, মুখেই বা কালো রুমাল বাঁধা কেন, সন্দেহের দোলায় দুলতে লাগলো সুভাষিণী। এই বিপদ মুহূর্তে একমাত্র বৃদ্ধা দাসী তার সম্বল ছিল, তাকেও হত্যা করেছে শয়তান ডাকাতের দল। সুভাষিণীর চোখ দিয়ে জল পর্যন্ত বের হচ্ছে না, কেমন যেন আড়ষ্ট হয়ে গেছে সে।
অশ্বারোহী হেসে বলল—ভয় পাবার কিছু নেই আমি মানুষ। তবু সুভাষিণী তাকে বিশ্বাস করতে পারছে না। ভাবছে, মানুষ সবাই, কিন্তু তাদের কত বিচিত্র রূপ।
অশ্বারোহী এবার বুঝতে পারলো সুভাষিণীর মনোভাব। সে তার সঙ্গে যেতে নারাজ। সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে সে তার মুখে।
নাথুরামের অনুচরগণের হাতে ছিল জ্বলন্ত মশাল। পালাবার সময় তারা হাতের মশালগুলো ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে গিয়েছিল। অশ্বারোহী উবু হয়ে একটা জ্বলন্ত মশাল হাতে উঠিয়ে নিয়ে পুনরায় সুভাষিণীর সম্মুখে এসে দাঁড়ায়। তারপর নিজের মুখের রুমালটা এক টানে খুলে মশালটা উঁচু করে ধরলো।
যুবক জানে তার চেহারায় এমন একটা আকর্ষণীয় বস্তু আছে যার কাছে সবাই নতি স্বীকার করতে বাধ্য।
মশালের উজ্জ্বল আলোতে সুভাষিণী অশ্বারোহীকে দেখলো, কিন্তু কিছুতেই দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতে পারছিল না সে। একি কোন্ দেবকুমার। এত সুন্দর সুপুরুষ সে তো কোনদিন দেখেনি।
এবার বিশ্বাস হচ্ছে। হেসে বলেন অশ্বারোহী।
সুভাষিণী ধীরে শাস্তকণ্ঠে বলেন–চলুন।
আসুন, ঘোড়ায় উঠতে হবে। অশ্বারোহী এগিয়ে চলে তার অশ্বের দিকে।
সুভাষিণী তাকে অনুসরণ করে।
অশ্বের পাশে এসে দাঁড়ালো উভয়ে। অশ্বারোহীর হস্তে তখনও জ্বলন্ত মশাল। সুভাষিণী নির্বাক আখি মেলে তখনও তাকিয়ে আছে ওর মুখের দিকে।
অশ্বারোহী বলেন—আসুন, আপনাকে উঠিয়ে দি।
অশ্বারোহী সুভাষিণীকে ঘোড়ার পিঠে উঠিয়ে দিয়ে নিজেও চড়ে বসে। সুভাষিণীর মনে এক অভূতপূর্ব আলোড়নের সৃষ্টি হয়। কে এই যুবক? কি এর পরিচয়? স্বর্গের দেবতা ছাড়া এত সুন্দর মানুষ হয়? সুভাষিণী মনে প্রাণে ওকে কৃতজ্ঞতা জানায়। যার শক্তির কাছে এতগুলো দস্যু পর্যন্ত পরাজিত হলো।
অন্ধকার ভেদ করে অশ্ব ছুটে চলেছে। অশ্বপৃষ্ঠে অশ্বারোহী কালো পোশাকধারী আর সুভাষিণী। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা মনসাপুর জমিদার বাড়ি পৌঁছে গেল। কৃষ্ণপক্ষের চাদ তখন পূর্ব আকাশে ভেসে উঠেছে।
জমিদার বাড়ির অদূরে একটা ঝোপের আড়ালে অ রেখে নেমে দাঁড়ালো অশ্বারোহী। তারপর সুভাষিণীকে অশ থেকে নামিয়ে নিল সে। অশ্বারোহী বলেন-এবার আপনি বাড়ি যেতে পারবেন নিশ্চয়ই?
সুভাষিণী নির্নিমেষ নয়নে তাকিয়েছিল অশ্বারোহীর মুখের দিকে। চাদের আলোতে ওকে শষ্ট দেখা যাচ্ছে। ভুলে গেল সুভাষিণী জবাব দিতে।
অশ্বারোহী হেসে নিজের রুমালখানা বেঁধে নেয়। তারপরে বলে ঐ আপনার বাড়ি দেখা যাচ্ছে, যান।
সুভাষিণী এবার জবাব দেয় আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
ততক্ষণে অশ্বারোহী অশ্ব চড়ে বসেছে।
সুভাষিণী বলে ওঠে—একটি কথা, আপনার পরিচয়?
অশ্বারোহী প্যান্টের পকেট থেকে একটি কাগজের টুকরা বের করে সুভাষিণীর হাতে দিয়ে বলে—এতেই পাবেন আমার পরিচয়।
কিন্তু আবার কবে আপনার দেখা পাব?
ঈশ্বর না করুন আবার যদি এমন বিপদে পড়েন তখন… অথ ছুটতে শুরু করেছে, শেষের কথার অংশগুলো আর শুনা যায় না!
অশ্বারোহী অদৃশ্য হতেই সুভাষিণী বাড়ির দিকে ছুটতে শুরু করে। বাড়ির নিকটবর্তী হতেই দেখতে পায় তার পিতামাতা, আত্মীয়-স্বজন মিলে জোট পাকিয়ে হল শুরু করছে।
মা কাঁদছেন, আরও অনেকে কাঁদছেন। কিছুসংখ্যক লোক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত। সুভাষিণী বুঝতে পারে দকবল থেকে পালিয়ে এসে পাহারাদার তার পিতার নিকটে খবরটা জানিয়েছে, তাই এসব আয়োজন চলছে।
সুভাষিণীকে সুস্থ দেহে অক্ষত অবস্থায় অলঙ্কারপূর্ণ শরীরে ফিরে আসতে দেখে সবাই অবাক হলো। মা ছুটে এসে কন্যাকে জড়িয়ে ধরলেন। পিতা ব্যাকুল কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন—মা, কি করে ফিরে এলি? কি করে ডাকাতের হাত থেকে রেহাই পেলি?
সুভাষিণী বলেন—সব বলছি, তোমরা ভিতরে এসো।
কন্যার সঙ্গে সবাই অন্দরবাড়িতে গিয়ে বসলো!
সুভাষিণী সব বলেন, কিন্তু কে যুবক এ এখনও জানে না। সকলের অজ্ঞাতে আলোর সামনে মেলে ধরলো কাগজের টুকরাখানা যার মধ্যে আছে তার অজ্ঞাতবন্ধুর পরিচয়। অতি সাবধানে খুলেন কাগজের টুকরাখানা। না জানি কোন রাজার ছেলে কিনা; কিংবা কোন দেবকুমার হবে সে কাগজে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ভয়ার্ত কণ্ঠে অস্ফুট ধ্বনি করে ওঠে সুভাষিণী-দস্যু বনহুর।
কতক্ষণ যে সে স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো খেয়াল নেই ওর। যে দস্যু বনহুরের নামে গোটা দেশবাসীর আতঙ্কের সীমা নেই, যে দস্যুর নামে লোকের হৃদকম্প হয়, এ সে দস্যু বনহুর! সুভাষিণী একবার নয়, শত শত বার ঐ কাগজের টুকরাখানা ছিল।