সূর্য দীঘল বাড়ী

সূর্য দীঘল বাড়ী

বাংলা সাহিত্যের সার্থক উপন্যাসগুলোর অন্যতম আবু ইসহাকের ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’; উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৫৫ সালে। কুসংস্কার, দারিদ্র্যতা, সামাজিক অবহেলা ও ধনী-শ্রেণির শোষণের বিরুদ্ধে গ্রামীণ জনপদের মহিলা জয়গুণের জীবনযুদ্ধের কথা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এ উপন্যাসে।Continue Reading

সূর্য দীঘল বাড়ী

এক পরিচ্ছেদ

আবার তারা গ্রামে ফিরে আসে। পেছনে রেখে আসে স্বামী-স্ত্রী, পুত্র-কন্যা, মা-বাপ, ভাই-বোন। ভাতের লড়াইয়ে তারা হেরে গেল। অনেক আশা, অনেক ভরসা নিয়ে গ্রাম ছেড়ে তারা শহরের বুকে পা বাড়িয়েছিল। সেখানে মজুতদারের গুদামে চালের প্রাচুর্য, হোটেলেContinue Reading

সূর্য দীঘল বাড়ী

দুই পরিচ্ছেদ

পাশাপাশি পিঁড়ে বিছিয়ে বসে দুটি ভাইবোন—হাসু ও মায়মুন। জয়গুন পান্তা বেড়ে ছেলে ও মেয়ের সামনে দুটো থালা এগিয়ে দিয়ে নিজেও একটা নিয়ে বসে। মায়মুন আড়চোখে হাসুর থালার দিকে চায়। রোজ সে এমনি চেয়ে দেখে। রোজইContinue Reading

সূর্য দীঘল বাড়ী

তিন পরিচ্ছেদ

আজকের ডিম দুটো মায়মুনের। সে বাচ্চা ফুটাবে। মা রাজী হয়েছে। সারা রাত তার ভাল ঘুম হয়নি। তার ছোট মনে কত কল্পনা জেগেছে। হাঁসের বাচ্চা হবে, সেগুলো বড় হবে, ডিম দেবে—ফকফকে সাদা ডিম। সেই ডিমের থেকেContinue Reading

সূর্য দীঘল বাড়ী

চার পরিচ্ছেদ

রেল-রাস্তার ধারে মা-কে নামিয়ে দিয়ে হাসু কোষা ডুবিয়ে রাখে। কেউ নিয়ে যেতে পারে। এই ভয়ে সে তার ওপর কচুরি ঢাকা দিয়ে রাখে। এ ব্যাপারে খুবই হুঁশিয়ার সে। কারণ, বর্ষার দিনে কোষাটা তাদের চলাফেরার একমাত্র সম্বল।Continue Reading

সূর্য দীঘল বাড়ী

পাঁচ পরিচ্ছেদ

বয়সের সাথে সাথে মানুষের মেজাজ পরিবর্তন হয়। পঁয়তাল্লিশ বছর বয়সে করিম বকশের মেজাজ ঠাণ্ডা না হলেও কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছে বৈকি। তা না হলে তার শড়কির হাতল ঘুণে ধরতে পায়? চার বছর বোধ হয় লাঠিটায়ও তেলContinue Reading

সূর্য দীঘল বাড়ী

ছয় পরিচ্ছেদ

১৫ই আগষ্ট শুক্রবার, ১৯৪৭ সাল। হাসু মা-কে মোড়ল পাড়ায় নামিয়ে দিয়ে রেল-রাস্তার পাশে আসে। রোজ সেখানে কোষা ডুবিয়ে রেখে সে কাজে যায়। রাস্তায় উঠেই সে চমকে ওঠে। চারদিক থেকে চিৎকারের ধ্বনি শোনা যায়। হিন্দু-মুসলমানে কাটাকাটিContinue Reading

সূর্য দীঘল বাড়ী

সাত পরিচ্ছেদ

চারদিকে আনন্দকোলাহল। মায়মুন ডাকে—মা, চান ওঠছে বুঝিন, ঈদের চান। মায়মন দৌড়ে যায় বাড়ীর পশ্চিম দিকে। শফি এসে দাঁড়ায় এর পাশে। পশ্চিম দিগন্তের রঙিন মেঘের ফাঁকে ফাঁকে ওরা তন্ন তন্ন করে খোঁজে চাদ। জয়ন এসে যোগContinue Reading

সূর্য দীঘল বাড়ী

আট পরিচ্ছেদ

খুরশীদ মোল্লা গ্রামের ফুড কমিটির সেক্রেটারী। ঈদের দিন ভোর হওয়ার সাথে সাথে তার বৈঠকখানার বাইরে জড় হয় অনেক লোক। কেউ কেউ ভেতরেও আসে। খুরশীদ মোল্লা একটু দেরীতেই ঘুম ভেঙ্গে তাড়াতাড়ি হাত মুখ ধুয়ে চৌকির উপরContinue Reading

সূর্য দীঘল বাড়ী

নয় পরিচ্ছেদ

জয়গুন ও হাসু আজ সকাল সকালই বেরিয়ে গেছে। মায়মুন হাঁস দুটো খাঁচা থেকে বের করে পানিতে ছেড়ে আসে। এবার সে হাঁসের বাচ্চা দুটো বের করে ঘরের মেঝের ওপর ছেড়ে দেয়। নিজেও হাত দুটো মাটিতে রেখেContinue Reading

সূর্য দীঘল বাড়ী

দশ পরিচ্ছেদ

এমন দিন পড়েছে, এক মুহূর্তের জন্যেও সূর্যের মুখ দেখা যায় না। সারাদিন টিপিরটিপির বৃষ্টি পড়ে। হাসু ঘরের বার হয় না। শরীরটাও ভালো নেই। শরীরের সমস্ত গিঁঠে গিঁঠে বিশেষ করে ঘাড়ে টনটনে ব্যথা হয়েছে। হাসু মা-কেContinue Reading

সূর্য দীঘল বাড়ী

এগার পরিচ্ছেদ

কুউ—কুরু—ত—কু—উ– মোরগের ডাক শুনে জয়গুন আর বিছানায় পড়ে থাকে না। তাড়াতাড়ি উঠে আগে ফজরের নামাজ পড়ে, তারপর মায়মুনকে ডাকে—গা তোল, মায়মুন। আত-মোখ ধুইয়া জলদি কইর‍্যা চুলা জ্বাল। —মিয়াভাই আহে নাই, মা? –উহুঁ। জয়গুন আর কিছুContinue Reading

সূর্য দীঘল বাড়ী

বার পরিচ্ছেদ

বিকেল বেলা ঘুরে ঘুরে জয়গুন অনেক গন্ধভাদাল পাতা যোগাড় করে আনে। শহরের গিন্নিরা এ জংলী শাকের বড়া খেতে ভালবাসে। পাতাগুলো শুকিয়ে ওঠে বলে রাত্রিবেলা ওগুলো সাজিয়ে ঘরের চালার ওপরে রেখে দেয়া হয়। রাত্রির শিশির-ভেজা হয়েContinue Reading

সূর্য দীঘল বাড়ী

তের পরিচ্ছেদ

মেয়ে লোকটি কে? কাসুর মনে বারবার এই প্রশ্নটাই আনাগোনা করতে থাকে। তাকে কোলে নিয়ে কত আদর করলো! আখ খেতে দিলো। দরদর করে পানি পড়ছিল তার চোখ বেয়ে! কে সে? একবার তার জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছা হয়েছিল।Continue Reading

সূর্য দীঘল বাড়ী

চৌদ্দ পরিচ্ছেদ

৯ই অগ্রহায়ণ। আজ মায়মুনের বিয়ে। লতিফ মিয়ার বাড়ী গিয়ে এই শুভ দিনটি জেনে এসেছিল শফির মা। লতিফ মিয়া তার পকেট পঞ্জিকা বের করে। একটা পাতার ওপর নজর দিয়ে সে আপন মনেই বলে—চন্দ্র রাজ্জা বুধ মন্ত্রী।Continue Reading

সূর্য দীঘল বাড়ী

পনের পরিচ্ছেদ

আজকাল করিম বক্‌শ কাসুকে কড়া নজরে পাহারা দেয়। যত দিন মাঠ-ভরা পানি ছিল ততদিন কালাপানির বন্দীর মত ছিল কাসু। কিন্তু মাঠে পথ পড়ার সাথে সাথে করিম বক্‌শ চিন্তিত হয়। তার মনে আশকা জাগে—কাসু হয়তো একদিনContinue Reading

সূর্য দীঘল বাড়ী

ষোল পরিচ্ছেদ

মায়মুন শ্বশুর বাড়ী থেকে চলে এসেছে। জয়গুন রাগে ফেটে পড়ে। কঠিন স্বরে জেরা করতে আরম্ভ করে—না কইয়া পলাইয়া আলি ক্যাঁ? এহন মাইনষে হুনলে ঝাটা মারব মোখে। —পলাইয়া আহি নাই মা। খেদাইয়া দিছে। —খেদাইয়া দিছে! —হ,Continue Reading

সূর্য দীঘল বাড়ী

সতের পরিচ্ছেদ

জয়গুন আহার-নিদ্রা ভুলে দিনের পর দিন ছেলের শয্যা-পার্শ্বে কাটিয়ে দেয়। মায়মুনও থাকে মা-র কাছে। প্রত্যেক দিন খাবার সময়ে করিম বক্‌শের ইঙ্গিতে আঞ্জুমন জয়গুনের হাত ধরে টানাটানি করে খাওয়ার জন্যে। বলে—এই রহম পেডে পাথর বাইন্দা থাইক্যContinue Reading

সূর্য দীঘল বাড়ী

আঠার পরিচ্ছেদ

–কারা ওইখানে? কেডা, কেডারে? শফির মা চেঁচিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে।–খবরদার, ফলগাছে কোপ দিলে আজগাই ঠাডা পড়ব মাতায়, কইয়া রাখলাম। কে একজন বলে—আমরা কিনছি এই গাছ। জিগাও গিয়া হাসুর মা-রে। শফির মা রাগে গরগর করতেContinue Reading

সূর্য দীঘল বাড়ী

ঊনিশ পরিচ্ছেদ

সূর্য-দীঘল বাড়ীর ভূত ক্ষেপেছে। রাতে জয়গুনের ঘরের বেড়া ও চালের ওপর ঢিল পড়তে শুরু করে। হাসু, কাসু ও মায়মুন চিৎকার করে ওঠে, শেষে গলা দিয়ে চিৎকারও বের হয় না। ভয়ে তারা মা-কে জড়িয়ে ধরে। ওদিকেContinue Reading