» » ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

বর্ণাকার

ভোরে মনিরার কক্ষে প্রবেশ করে মরিয়ম বেগম আশ্চর্য হন। মনিরা এতো সকাল সকাল তো কোনদিন উঠে না।

তাছাড়া গেলোই বা কোথায়। মরিয়ম বেগম ভাবলেন সে হয়তো বাথরুমে গেছে। তাই তখনকার মত ফিরে গেলেন মরিয়ম বেগম। স্বামীকে অজুর পানি দিয়ে নিজেও নামায পড়ে পুনরায় ফিরে এলেন মনিরার কক্ষে। কিন্তু একি এখনও মনিরা ঘরে আসেনি! মরিয়ম বেগমের মনটা কেমন যেন করে উঠলো। তিনি কক্ষের চারদিকে তাকালেন। কক্ষের জিনিসপত্র ঠিক আছে-এমনকি মনিরার বিছানাটাও এলোমেলো নয়। জানালাগুলোও খিল আটা মনিরা স্বইচ্ছায় দরজা খুলে বাইরে বেরিয়েছে। মরিয়ম বেগম চিন্তিতভাবে ছুটলেন চৌধুরী সাহেবের কক্ষে ওগো শুনছো ঘরে মনিরা নেই।

চৌধুরী সাহেব নামাযান্তে তসবী তেলাওয়াত করছিলেন, আশ্চর্য কণ্ঠে বলেন সেকি কথা?

হ্যাঁ, আমি বাড়ির সব জায়গা খুঁজে দেখলুম, কোথাও সে নেই।

বাইরে কোথাও যায়নি তো?

না, এতো ভোরে সে কোনদিন ঘুম থেকেই উঠে না, আর আজ সে কাউকে কিছু না বলে বাইরে যাবে। ওগো, একি কাণ্ড?

আচ্ছা দাঁড়াও ড্রাইভারকে ডাকি। দেখি বাইরে গেছে কিনা।

এমন সময় বয় ছুটে আসে হাউ মাউ করে কাঁদছে সে ভয়াতুর কণ্ঠে বলে–স্যার খুন খুন…

ব্যস্তকণ্ঠে বলে উঠেন চৌধুরী সাহেব এবং মরিয়ম বেগম–খুন কে খুন হয়েছে?

বয় কাঁপতে কাঁপতে বলে–দারওয়ান-দারওয়ান খুন হয়েছে!

চৌধুরী সাহেব বলে উঠে–কি বলছিস তুই?

হা স্যার, সব সত্যি বলছি। দেখবেন আসুন, দরজার পাশে দারওয়ান মৃত অবস্থায় পড়ে আছে।

মি. চৌধুরী এবং মরিয়ম বেগম ছুটলেন সিঁড়ি বেয়ে নিচে।

সদর দরজার নিকটে পৌঁছে স্তম্ভিত হতবাক হলেন। বহু দিনের পুরানো দারওয়ান মংলু মিয়ার রক্তাক্ত দেহটা ভূতলে লুটিয়ে আছে। চৌধুরী সাহেব এবং মরিয়ম বেগমের দু’চোখ ছাপিয়ে পানি এলো; রুমালে চোখ মুছলেন চৌধুরী সাহেব।

অল্পক্ষণেই লোকজনে বাড়ি ভরে গেল।

মনিরার অন্তর্ধান ব্যাপারের সঙ্গে এ খুন রহস্য নিশ্চয়ই জড়িত আছে। চৌধুরী সাহেব পুলিশ অফিসে ফোন করলেন। তিনি অত্যন্ত চিন্তিত এবং ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। মনিরার নিরুদ্দেশ তাঁকে ভাবিয়ে তুলল। কারণ, এটা চৌধুরী বাড়ির ইজ্জৎ নিয়ে ব্যাপার!

কিছুক্ষণের মধ্যেই মি. হারুন কয়েকজন পুলিশসহ চৌধুরী বাড়িতে হাজির হলেন। সমস্ত ঘটনা শুনে মি. হারুন মৃদু হাসলেন; ভাবলেন, এ দস্যু বনহুরের কাজ ছাড়া আর কারো নয়। তিনি প্রকাশ্যে বলেন–চৌধুরী সাহেব, আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন। কারণ, মনিরা এখন আপনার পুত্রের পাশেই রয়েছে।

মুহূর্তে চৌধুরী সাহেবের মুখমণ্ডল রাঙা হয়ে উঠে, তিনি ভাঙ্গা ভাঙ্গা কণ্ঠে বলেন–আপনি কি বলতে চান মনির দারওয়ানকে খুন করে মনিরাকে নিয়ে পালিয়েছে?

হ্যাঁ মি. চৌধুরী, এ কথা নির্ঘাত সত্য। আপনার পুত্র ছাড়া এ কাজ কেউ করতে পারে না।

মিথ্যা সন্দেহ করছেন ইন্সপেক্টর সাহেব। আমার মনির কখনও নরহত্যা করতে পারে না। তাছাড়া মনিরাকে নিয়ে তার পালাবার কোন প্রয়োজনই নেই।

মি. হারুন বলেন–চৌধুরী সাহেব, আপনি নিশ্চয়ই জানেন, আপনার ভাগনী মনিরা আপনার পুত্রকে ভালবাসে।

সেই কারণেই দারওয়ানকে খুন করার কোন দরকার ছিল না তার।

মি. হারুন এবং চৌধুরী সাহেব কথাবার্তা বলছেন, এমন সময় ডিটেকটিভ মি. শঙ্কর রাও এসে হাজির হলেন। তিনি পুলিশ অফিসে এসে ঘটনাটা জানতে পেরে থাকতে পারেন নি, সোজা চলে এসেছেন চৌধুরী বাড়িতে।

তিনিও ঘটনাটা বিস্তারিত শুনলেন। মি. রাও বলেন–চলুন, মনিরার কক্ষটি একবার পরীক্ষা করে দেখব।

চৌধুরী সাহেব বলেন…কক্ষের একটি জিনিসপত্র এলোমেলো হয় নি বা কোন কিছুর চিহ্ন নেই,..

উঠে দাঁড়ান মি. রাও-চলুন, তবু একবার দেখা দরকার।

সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে চললেন মি. হারুন, মি. রাও এবং চৌধুরী সাহেব।

উঠতে উঠতে জিজ্ঞাসা করলেন মি. রাও উপরে উঠবার সিঁড়ি কি এই একটি?

জবাব দিলেন চৌধুরী সাহেব হাঁ, এই একটি সিঁড়িই রয়েছে।

তাহলে এই সিঁড়ি দিয়েই নেমে গেছে মনিরা এবং যে তাকে নিয়ে গেছে সে।

হ্যাঁ, তাই হবে। নীরস কণ্ঠস্বর চৌধুরী সাহেবের।

মি. রাও সকলের অলক্ষ্যে সিঁড়ির প্রত্যেকটা ধাপে লক্ষ্য রেখে এগুচ্ছিলেন। হঠাৎ তার নজরে পড়ে যায় সিঁড়ির এক পাশে একটি লেডিস স্যান্ডেল কাৎ হয়ে পড়ে আছে। মি. রাও স্যান্ডেলখানা হাতে উঠিয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন–এটা কার?

চৌধুরী সাহেব জুতোখানা লক্ষ্য করে বলেন–মনিরার। কিন্তু একখানা জুতো এখানে এল কি করে?

তাইতো?

কথার ফাঁকে তারা উপরে এসে পৌঁছে গেছেন। তখনও মনিরার স্যান্ডেলখানা মি. রাও-এর হাতে ধরা রয়েছে।

মি. রাও স্যান্ডেলখানা বারান্দার একপাশে রেখে বলেন–মনিরা স্বইচ্ছায় কারো সঙ্গে যায় নি। তাকে কেউ বা কারা জোরপূর্বক ধরে নিয়ে গেছে।

মি. হারুন বলে উঠেন–দস্যু বনহুর ছাড়া তাহলে এ কাজ কে করতে পারে?

গোটা কক্ষটা তারা সুন্দরভাবে পরীক্ষা করে দেখলেন। কক্ষের একটি জিনিসও স্থানচ্যুত হয়। নি। দরজা মনিরা যে স্বহস্তে খুলেছে তার প্রমাণ রয়েছে। কারণ, দরজার খিল ভাঙ্গেনি বা কোনরকম আগলা হয় নি।

ক্রমেই ব্যাপারটা ঘোরালো হয়ে উঠছে।

দস্যু বনহুরকে মনিরা ভালবাসে–এ কথা সবাই জানে।

মনিরাকে চুরি করে নিয়ে যাবার তার কোন প্রয়োজন হবে না, মনিরা ইচ্ছা করেই যেতে পারতো। দারওয়ানকে খুন করবার কোন দরকারই নেই তাদের। তাছাড়া সিঁড়ির ধাপে মনিরার একটি স্যান্ডেলই বা পড়ে থাকবে কেন?

আরও একটি প্রমাণ তারা পেলেন। বারান্দার মেঝেতে লক্ষ্য করে দেখল, কয়েকটি পায়ের ছাপ বেশ স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। আরও দেখলেন তারা, পায়ের ছাপগুলো খালি পা এবং থেবড়ো থেবড়ো পাগুলো।

মি. হারুন পায়ের ছাপগুলো বিশেষভাবে লক্ষ্য করে বললেন–দস্যু বনহুর যেখানেই হানা দিয়েছে, আমরা লক্ষ্য করেছি, কখনও তার খালি পা ছিল না।

মি. রাও বলেন–এ নিশ্চয়ই অন্য কোন শয়তানের কাজ। দস্যু বনহুর মনিরাকে নিয়ে যায় নি-এ সত্য।

চৌধুরী সাহেব মাথায় হাত দিয়ে একটি সোফায় বসে পড়লেন-তাহলে উপায়?

বার বার যুদ্ধে পরাজয় বরণ করে শত্রুপক্ষ পিছু হটে গেল। পুনরায় আক্রমণের চেষ্টা তাদের মন থেকে কর্পূরের মত উবে গেল। ফরহাদের পরিচালনায় বিমানবাহিনী শত্রুপক্ষকে একেবারে পঙ্গু করে দিয়েছে।

শেষ পর্যন্ত যুদ্ধে জয়ী হল মিত্রপক্ষ। পরাজয়ের কালিমা মুখে মেখে হটে পড়ল শত্রুপক্ষ। সেনাপতি নাসের আলীর আনন্দ আর ধরে না! শুধু তিনিই নন, সমস্ত সামরিক অফিসারদের মুখমণ্ডল জয়ের উল্লাসে দীপ্ত হয়ে উঠলো। সবাই একবাক্যে ক্যাপ্টেন ফরহাদের রণকৌশলের প্রশংসা করতে লাগলেন।

কিন্তু এক আশ্চর্য ব্যাপার-সবাই যখন ক্যাপ্টেন ফরহাদের গুণগান করেছেন, তখন দেখা গেল ফরহাদ আর তাদের মধ্যে নেই! আর নেই জব্বার খা।

এ ব্যাপার নিয়ে দেশময় একটা হুলস্থুল পড়ে গেল। সেনাপতি নাসের এবং মেজর জেনারেল হাশেম খান ও অন্যান্য সামরিক অফিসার গভীর চিন্তিত হয়ে পড়লেন।

পত্রিকায় পত্রিকায় যখন ক্যাপ্টেন ফরহাদের জয়গান প্রচারিত হচ্ছে, এমন দিনে শোনা গেল ফরহাদের নিরুদ্দেশের কথা।

কথাটা জানতে পেরে দেশবাসী গভীর শোকাভিভূত হয়ে পড়ল। সকলের মুখমণ্ডল বিষণ্ণ মলিন হলো। নিশ্চয়ই শত্রুপক্ষ তাঁকে গোপনে চুরি করে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছে।

দেশবাসী যখন ক্যাপ্টেন ফরহাদের নিরুদ্দেশ ব্যাপার নিয়ে চিন্তিত, এমন দিনে মেজর। জেনারেল একখানা চিঠি পেলেন। চিঠিখানা পড়ে তিনি স্তম্ভিত-হতবাক হয়ে পড়লেন। চিঠিতে লেখা রয়েছে মাত্র একটি কথা–

মাতৃভূমি রক্ষার্থে আমাদের প্রচেষ্টা

সার্থক হয়েছে। এজন্য আমরা

ধন্য। আপনাদের অভিনন্দন আমি সানন্দে গ্রহণ করেছি।

-দস্যু বনহুর

চিঠির কথা অল্পক্ষণের মধ্যেই ফোনে সমস্ত সামরিক অফিসে পৌঁছে গেল। পৌঁছল পুলিশ অফিসে প্রত্যেকটা অফিসারের কানে। সবাই নির্বাক, বিস্ময়ে স্তম্ভিত-এ যে কল্পনার অতীত”! যে দস্যু বনহুরকে গ্রেপ্তারের জন্য অহঃরহ পুলিশ বাহিনী উন্মাদের মত ঘুরে বেড়াচ্ছে, পুলিশ সুপার যাকে জীবিত কিংবা মৃত এনে দেবার জন্য লাখ টাকা ঘোষণা করেছেন, সেই দস্যু বনহুর আজ সকলের অভিনন্দন গ্রহণের পাত্র।

কথাটা পত্রিকায় বিরাট আকারে প্রকাশ পেল।

লোকের মুখে মুখে, পথে-ঘাটে-মাঠে সর্বত্র দস্যু বনহুরের জয়-জয়কার!

নূরী গহন বনে বসে শুনলো সব। আনন্দে স্ফীত হয়ে উঠলো তার বুক। তার বনহুর আজ জয়ের টিকা ললাটে পরে ফিরে এসেছে। কি বলে যে সে অভিনন্দন জানাবে খুঁজে পেল না। আনন্দোচ্ছাসে গুণ গুণ করে গান গাইতে লাগলো সে। ইচ্ছে হল, হাওয়ায় ডানা মেলে ভেসে বেড়াবে-কিন্তু সে যে মানুষ! বনে বনে ঘুরে অনেক ফুল সগ্রহ করলো, ঝর্ণার পাশে বসে সুন্দর করে মালা গাঁথলো। তারপর পা টিপে টিপে প্রবেশ করলো বনহুরের বিশ্রামকক্ষে। অতি সন্তর্পণে বনহুরের বিছানার পাশে গিয়ে দাঁড়াল।

বনহুর বিছানায় অর্ধশায়িত অবস্থায় শুয়ে শুয়ে কি যেন ভাবছিল। শরীর ক্লান্ত, তাই কোথাও বের হয় নি সে। নূরী ঠিক তার পিছনে গিয়ে দাঁড়াল, তারপর চট করে মালাখানা পরিয়ে দিল সে তার গলায়।

বনহুর মৃদু হেসে বললো–খুব যে খুশি দেখছি, ব্যাপার কি নূরী?

নূরী হেসে বললো–হুর, আজ কি বলে তোমাকে……

থাক, ঐ ঢের হয়েছে। বস।

নূরী বনহুরের বিছানার একপাশে বসে পড়ে বলল–হুর, আজ তোমার জয়গানে দেশবাসী পঞ্চমুখ হয়ে উঠেছে।

কে বলল এসব কথা তোমাকে?

কেন, রহমান–রহমান সব পত্রিকাগুলো আমাকে এনে দিয়েছে।

তুমি পত্রিকা পড়তে শিখেছ?

বাঃ তোমার বুঝি মনে নেই? তুমিই তো আমাকে লেখা আর পড়া শিখিয়েছ?

এতোবড় যে পণ্ডিত হয়েছ তা জানতাম না।

পত্রিকা পড়তে পারলেই বুঝি পণ্ডিত হয়? অভিমান-ভরা কণ্ঠস্বর নূরীর।

বনহুর ওর চিবুক উঁচু করে ধরে ছিঃ, সামান্যতেই অমন রাগ করতে নেই। নূরী, ধরো আর যদি ফিরে না আসতুম?

নূরী বনহুরের মুখে হাতচাপা দেয়।

বনহুর কিছু বলতে যাচ্ছিল, এমন সময় রহমান দরজার ওপাশে এসে দাঁড়ায়–সর্দার!

বনহুর গলা থেকে মালাটা খুলে পাশের টেবিলে রেখে বিছানায় সোজা হয়ে বসে বলে– এসো।

রহমান এসে দাঁড়াতেই নূরী হেসে বলে–রহমান নয়, জব্বার খাঁ।

সবাই হাসলো।

রহমান বলল–সর্দার, একটি কথা আছে।

বনহুর বিছানা থেকে নেমে দাঁড়িয়ে বলল–চলো।

বাইরে আকাশের নিচে এসে দাঁড়ালো বনহুর আর রহমান। বনহুর জিজ্ঞাসা করলো–কি কথা রহমান?

সর্দার সেই মেয়েটি…থেমে যায় রহমান।

বনহুর ভ্রু কুচকে তাকায় রহমানের মুখের দিকে-কোন মেয়েটি? কি ব্যাপার?

সর্দার, সেই যে মনসাপুরের জমিদার-কন্যা সুভাষিণীর কথা বলছি।

কেন, হসপিটাল থেকে সে বাড়ি ফিরে যায় নি?

গিয়েছে–কিন্তু…

থামলে কেন, বল?

মেয়েটি নাকি পাগল হয়ে গেছে?

বল কি? মেয়েটি পাগল হয়ে গেছে? কিন্তু কেন?

রহমান একটা দীর্ঘশ্বাস চেপে বলে–সুভাষিণী এমন একজনকে ভালবাসছে, যাকে–যাকে সে কোনদিন পাবে না।

সকলের অজ্ঞাতে নূরী একটি গাছের আড়ালে এসে দাঁড়িয়েছিল। গোপনে সে রহমান আর বনহুরের কথাবার্তা সব শুনছিল। সুভাষিণীর নাম তার পরিচিত। গোপনে তার বিষয়ে আলোচনা শুনেই চমকে উঠছিল সে। এখন কিছুটা ঘেমে উঠে। না জানি কাকে ভালবেসেছে। আশঙ্কা জাগে মনে–তার হুরকে নয়তো। আরো ভালোভাবে কান পাতে নূরী।

বনহুরের কণ্ঠস্বর শোনা যায়–এটাই তোমার গোপন কথা?

হাঁ সর্দার। মেয়েটির যা অবস্থা, তাতে সে বেশিদিন বাঁচবে বলে মনে হয় না। যদি সে….পুনরায় থেমে যায় রহমান।

বনহুর গম্ভীর গলায় বলে–থামলে কেন?

মাথা চুলকে বলে রহমান–মানে তার ভালোবাসার পাত্রটিকে যদি না পায়, তাহলে….

বাঁচবে না–এ তো বলতে চাচ্ছো?

হ্যাঁ সর্দার।

কে সে যুবক যাকে ভালবাসে? সুভাষিণীর মত সুন্দরী গুণবতী যুবতাঁকে যে উপেক্ষা করতে পারে? বল, আমি তাকে উচিত সাজা দেব।

রহমান নীরব।

চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলে কেন?

সর্দার, আপনি যদি একবার তার সঙ্গে দেখা করতেন, তাহলে হয়তো কাকে সে ভালবাসে, জানতে পারতেন।

সে এখন কোথায়?

মনসাপুরে। পিতামাতার কাছে।

বেশ, আমি তার সঙ্গে দেখা করব–তুমি তার আয়োজন কর। আমি জানতে চাই কাকে সে ভালবাসে।

তাকে এনে দিতে পারবেন সর্দার?

দস্যু বনহুরের অসাধ্য কিছু নেই রহমান। ছলে-বলে–কৌশলে তাকে রাজি করাব। যত টাকা চায় তাই দেব। তবু যদি স্বীকার না হয়, বন্দী করে নিয়ে আসব। সামান্য ভালবাসার জন্য একটি সুন্দর ফুলের মত জীবন বিনষ্ট হতে পারে না।

মারহাবা সর্দার। তারপর রহমান চলে যায় সেখান হতে।

বনহুর ধীর মন্থর গতিতে ফিরে আসে নিজের কক্ষে।

ইতোমধ্যে নূরী এসে নিজ জায়গায় বসে পড়েছিল।

বনহুর এসে পুনরায় বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ে।

নূরী গম্ভীর মুখে বসেছিল, বলে–হুর, আজও তুমি আমাকে বিশ্বাস করতে পারলে না!

কেন?

ঐ যে গোপনে কি সব আলোচনা কর?

সব কথা তোমার শোনা উচিত নয় নূরী।

কেন, আমি কি সব বুঝি না?

ওসব চুরি-ডাকাতির ব্যাপার কি শুনবে….

মিথ্যে কথা! রহমান কোন মেয়ে সম্বন্ধে তোমাকে কি সব বলছিল না?ওঃ সেই কথা? হ্যাঁ, ঐ যে মনসাপুরের জমিদার-কন্যা সুভাষিণীর সম্বন্ধে বলল রহমান। মেয়েটি নাকি পাগল হয়ে গেছে।

আমি সব শুনেছি।

দেখ, মেয়েটিকে বাঁচাতে হলে আমাকে একবার সেখানে যেতে হবে। জানতে হবে কাকে সে ভালবাসে। যেমন করে হোক, তার ভালবাসার পাত্রটিকে এনে দিতে হবে…..

সব কাজেই তোমার মাথাব্যথা। আমি বুঝতে পারি না এসব।

সে জন্যই তো বলেছিলুম সব কথা তুমি জানতে চেও না নূরী।

নূরী আর কোন কথা না বাড়িয়ে তখনকার মত চলে যায় সেখান হতে।

বনহুর এবার পাশ ফিরে শোয়, কিন্তু মনে তখন একটি অতি পরিচিত মুখ ভেসে উঠছে। যুদ্ধ থেকে ফিরে কয়েক দিন বেশ অসুস্থ বোধ করেছিল সে। মনিরা নিশ্চয়ই অভিমান করে বসে আছে। যেমন ভাবা অমনি বনহুর শয্যা ত্যাগ করে উঠে দাঁড়াল! ইস কতদিন মনিরাকে দেখেনি! চটপট তৈরি হয়ে নিল বনহুর। আজ সে দস্যু বনহুরের বেশে নয়, সৈনিকের বেশে সজ্জিত হয়ে তাজের পাশে এসে দাঁড়াল।

তাজ মনিবকে পাশে পেয়ে সম্মুখের পা দিয়ে মাটিতে মৃদু আঘাত করতে লাগল।

বনহুর তাজের পিঠ চাপড়ে আদর করল, তারপর উঠে বসল তার পিঠে।

তাজ এবার উল্কাবেগে ছুটতে শুরু করল।

তাজের পিঠে বনহুর ছুটে চলেছে। মনে তার রঙিন স্বপ্নের নেশা। কতদিন পর মনিরাকে পাশে পাবে সে। বিদায় দিনে মনিরার অশ্রুসজল মুখখানা ভাসতে লাগলো তার চোখের সম্মুখে।

ঐ দেখা যাচ্ছে চৌধুরী বাড়ির বিরাট প্রাচীর। অন্ধকারের আড়ালে বিরাট প্রাসাদের এক অংশ দেখা যাচ্ছে। আকাশে অসংখ্যা তারকারাজি। নীল শাড়ির বুকে যেন জরীর বুটিগুলো ঝিকমিক করছে। অন্ধকার নির্জন পথ।

বনহুরের অশ্ব নিঃশব্দে চৌধুরী বাড়ির পিছন প্রাচীরের পাশে গিয়ে দাঁড়াল। বনহুর কালবিলম্ব না করে অশ্বপৃষ্ঠ থেকে প্রাচীরের উপরে উঠে বসল। হঠাৎ মনটা যেন কেমন বিষণ্ণ হয়ে পড়ল। মনিরার কক্ষ অন্ধকার। জানালা দিয়ে কোনো আলোর ছটা আজ তাকে অভিনন্দন জানাল না। প্রাচীর টপকে ভিতরে প্রবেশ করলো বনহুর। তারপর দ্রুত পাইপ বেয়ে উঠে গেল উপরে। কিন্তু একি! মনিরার কক্ষের প্রত্যেকটা জানালা বন্ধ-তবে কি মনিরা এ কক্ষে থাকে না!

বনহুর রেলিং বেয়ে বেলকুনিতে গিয়ে পৌঁছে। মনিরার দরজার পাশে গিয়ে থমকে দাঁড়ায়-দরজায় তালা লাগানো। মুহূর্তে বনহুরের মুখমণ্ডল অন্ধকার হয়ে পড়ল। সেকি, মনিরা তবে গেল কোথায়! নিশ্চয়ই তাহলে মামীমার কক্ষে শুয়েছে। বনহুর পাশের কক্ষের দরজার নিকট দাঁড়িয়ে ভাবলো, তবে কি সে ফিরে যাবে? তা হয় না, মনিরাকে না দেখে ফিরে যেতে পারে না। সে। কিন্তু কি উপায়ে কক্ষে প্রবেশ করবে সে। দস্যু বনহুরের অসাধ্য কিছু নেই। রেলিং বেয়ে কক্ষের পিছনের জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়াল। ওপাশের আর একটি কক্ষ থেকে ভেসে আসছে চৌধুরী সাহেবের নাসিকাধ্বনি। বনহুর কতকটা আশ্বস্ত হল। এ কক্ষে তাহলে তার মা আর মনিরা শুয়েছে। কতদিন পর মায়ের কথা স্মরণ হতে দু’চোখে পানি এলো। আজ মা-কেও দেখবে সে।

কক্ষে ডিমলাইট জ্বলছে। বনহুর অল্প চেষ্টাতেই জানালার শার্শী খুলে কক্ষে প্রবেশ করল। ধীরে অতি সন্তর্পণে এগুতে লাগলো কিন্তু একি! বিছানায় শুধু একটি মহিলাই শুয়ে রয়েছেন। মনিরা কই? তবে কি মনিরা অন্য কোন কক্ষে শুয়েছে? ফিরে যাবার পূর্বে মায়ের মুখখানা দেখার। প্রবল বাসনা জাগল তার মনে। প্যান্টের পকেট থেকে ম্যাচটা বের করে একটা কাঠি জ্বালাল। বনহুর। এগিয়ে ধরলো মায়ের মুখের পানে।

হঠাৎ মরিয়ম বেগমের ঘুম ভেঙ্গে গেল, চোখ মেলেই চিৎকার করতে গেলেন তিনি, অমনি বনহুর তার মুখে হাতচাপা দিয়ে বলল–মা!

মরিয়ম বেগম ততক্ষণে বিছানায় উঠে বসেছেন। চোখ রগড়ে বলেন–কে-কে তুই?

বনহুর নিশ্চপ, সোজা হয়ে দাঁড়াল সে।

মরিয়ম বেগম শয্যা থেকে নেমে দাঁড়ালেন, হাত বাড়িয়ে সুইচ টিপে আলো জ্বেলে বনহুরকে দেখে দু’পা পিছিয়ে গেলেন। বনহুরের শরীরে সম্পূর্ণ সৈনিকের ড্রেস দেখে তিনি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলেন।

বনহুর বুঝতে পারল, তার মা তাকে চিনতে পারেন নি। আর চিনবেনই বা কি করে। বনহুর মাথার ক্যাপটা খুলে আলোর সম্মুখে এগিয়ে দাঁড়াল। তারপর ধীরস্থির শান্ত কণ্ঠে বলল–মা, আমি তোমার সন্তান।

মরিয়ম বেগম নিষ্পলক আঁখি মেলে তাকালেন’ বনহুরের উজ্জ্বল-দীপ্ত মুখের দিকে। কই, একে তো মনে পড়ছে না-তার মনির এটা! ফুলের মত সুন্দর একটি মুখ ভেসে উঠলো চোখের সামনে। হঠাৎ মনে পড়ল মনিরের ললাটের এক পাশে কাটা একটি দাগ ছিল। ছোটবেলায় বড় দুষ্ট ছিল মনির-গাছ থেকে পড়ে কপালটা বেশ কেটে গিয়েছিল। মরিয়ম বেগম বনহুরের ললাটে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। সঙ্গে সঙ্গে মরিয়ম বেগমের অস্ফুট কণ্ঠ দিয়ে বেরিয়ে এলো-বাবা মনির।

বনহুর মায়ের বুকে মুখ গুঁজে বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে ডেকে উঠল,মা, আমার মা!

কতদিন পর পুত্রকে ফিরে পেয়েছেন মরিয়ম বেগম। আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন তিনি, কচি শিশুর মত বনহুরের মুখে-মাথায়-পিঠে হাত বুলাতে থাকেন। চোখ দিয়ে তার ঝরে পড়তে থাকে আনন্দ-অশ্রু। তিনি যেন হারানো রত্ন খুঁজে পেয়েছেন। খুশিতে আত্মহারা হয়ে ডাকতে থাকেন–ওগো, শুনছো, দেখে যাও, দেখে যাও কে এসেছে…..

বনহুর মায়ের মুখে হাতচাপা দিয়ে বলে–মা, চুপ করো। চুপ করো।

ওরে তোর আব্বাকে ডাকছি……

না, আজ নয় মা, আজ নয়। আব্বাকে তুমি আজ ডেকো না। মা, একটি কথার জবাব দাও?

বল, ওরে বল?

মা, মনিরা কই? ওকে তো দেখছিনে

মুহূর্তে মরিয়ম বেগমের মুখমণ্ডল বিবর্ণ হয়ে পড়লো। শুষ্ক কণ্ঠে বলেন–আজ প্রায় দু’সপ্তাহ হল মনিরাকে কে বা কারা চুরি করে নিয়ে গেছে বাবা।

বনহুরের চোখ দুটো ধক করে জ্বলে উঠে-আর তোমরা চুপ করে বসে আছো!

না রে না। পুলিশকে জানানো হয়েছে। জোর খোঁজা-খুঁজি চলছে। তোর আব্বা তো পাগলের মত হয়ে গেছেন। কি হবে বাবা, মনিরাই যে আমাদের চৌধুরী বংশের ইজ্জৎ।

মা, তুমি যতটুকু জান খোলসা বল-কবে, কিভাবে, কোথা থেকে সে চুরি হয়ে গেছে? বনহুরের কণ্ঠে একরাশ চঞ্চলতা ঝরে পড়ল।

মরিয়ম বেগম সংক্ষেপে সব বললেন।

স্তব্দ নিঃশ্বাসে শুনলো বনহুর। দু’চোখে তার আগুন ঝরে পড়তে লাগল। নিঃশ্বাস দ্রুত বইছে। বার বার দক্ষিণ হস্তখানা প্যান্টের পকেটে রিভলভারের বাটে গিয়ে ঠেকছে। অধর দংশন করতে লাগলো বনহুর। সমস্ত মুখমণ্ডল তার কঠিন হয়ে উঠেছে।

মরিয়ম বেগম পুত্রের মুখের দিকে তাকিয়ে শিউরে উঠলেন।

বনহুর আর এক মুহূর্ত বিলম্ব না করে মায়ের পায়ে সালাম করে উঠে দাঁড়াল।

মরিয়ম বেগমের চোখ দিয়ে তখন অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। তিনি প্রাণভরে আশীর্বাদ করলেন।

বনহুর ক্যাপটা মাথায় দিয়ে একবার ফিরে তাকালো মায়ের মুখে।

মরিয়ম বেগম কিছু বলতে গেলেন, কিন্তু ততক্ষণে মুক্ত জানালা দিয়ে বেরিয়ে গেছে বনহুর।

মরিয়ম বেগম ছুটে গেলেন জানালার পাশে। অস্ফুট কণ্ঠে ডাকলেন–মনির!

মনির ততক্ষণে অন্ধকারে অদৃশ্য হয়ে গেছে।

বনহুর যখন তাজের পিঠে চেপে বসলো, তখন দমকা হাওয়া বইতে শুরু করেছে। আকাশে তারকারাজিগুলো মেঘের অন্তরালে লুকিয়ে পড়েছে। অন্ধকারে তাজের কালো দেহটা মিশে গেছে। যেন।

কিছু পূর্বেই বনহুরের মনে ছিল অফুরন্ত আনন্দ, আশা-বাসনা-মনিরার সঙ্গে সাক্ষাতের এক উদ্যম প্রেরণা। সব যেন এক নিমিষে অন্তর্ধান হয়ে গেছে। ক্রুব্ধ সিংহের মত হিংস্র হয়ে উঠল বনহুর। কে সে পিশাচ যে তার মনিরাকে হরণ করতে পারে! এ মুহূর্তে বনহুর তাকে পেলে ছিঁড়ে খণ্ড খণ্ড করে ফেলবে।

বনহুরের অশ্ব যখন আস্তানায় গিয়ে পৌঁছল তখন পূর্ব আকাশ ফর্সা হয়ে এসেছে। বনহুর পৌঁছতেই দু’জন বলিষ্ঠ লোক তাজকে ধরে ফেলল। বনহুর সোজা দরবার-কক্ষে প্রবেশ করল। ক্ষিপ্তের ন্যায় চিৎকার করে ডাকলো-রহমান! রহমান!

রহমান দ্রুত কক্ষে প্রবেশ করে সেলুট করে দাঁড়াল-সর্দার।

এ মুহূর্তে আমার সমস্ত অনুচরগণকে ডেকে বলে দাও-শহরে-গ্রামে, ঘাটে-মাঠে, গহন বনে সমস্ত জায়গায় তাদের ছড়িয়ে পড়তে হবে। যে যে-কোন ছদ্মবেশে যাবে। সাধু-সন্ন্যাসী, ভিখারী, অন্ধ, নাপিত, ধোপা-যে যা পারে। চৌধুরী সাহেবের মনে মনিরা চুরি হয়ে গেছে, কে বা কারা তাকে হরণ করেছে, কেউ জানে না। পুলিশ জোর তদন্ত চালিয়েও মেয়েটির কোন সন্ধান করতে পারছে না। আমি চাই তোমরা কৃতকার্য হবে। যাও, এক্ষুণি চলে যাও।

রহমান মাথা চুলকে বলে–চৌধুরী কন্যার জন্য…মানে….

আমার এতো মাথাব্যথা কেন, এইতো বলতে চাচ্ছো?

তিনি বুঝি কন্যার জন্য বড় রকমের পুরস্কার ঘোষণা করেছেন? কথাটা বলে রহমান।

না, তিনি করেন নি, আমি করলুম। যে চৌধুরী কন্যার সন্ধান সর্বপ্রথম এনে দিতে পারবে সে আমার সবচেয়ে প্রিয় হবে এবং আমি তাকে লাখ টাকা পুরস্কার দেব।

রহমান বেরিয়ে যায়।

বনহুর ক্ষিপ্তের ন্যায় পায়চারি করতে থাকে। গোটা রাত অনিদ্রায় চোখ দুটো লাল টকটকে হয়ে উঠেছে। মাথার চুলগুলো এলোমেলো; ললাটে গভীর চিন্তারেখা ফুটে উঠেছে।

এমন সময় নূরী কক্ষে প্রবেশ করলো। রহমান তাকে কথাটা বলেছে। নূরীর মনেও ঝড় বইতে শুরু করেছে। চৌধুরী-কন্যার জন্য তার এত দরদ কেন! লাখ টাকা পুরস্কার দেবে বনহুর কেন, কেন এতো উম্মত্ত হয়ে উঠেছে সে। বীর পদক্ষেপে বনহুরের পাশে গিয়ে দাঁড়াল নূরী। বনহুরের চেহারা দেখে হঠাৎ কিছু বলতে সাহস হলো না তার। তবু একটু কেশে বলল নূরী– হুর, হঠাৎ তোমার কি হয়েছে, অমন করছো কেন?

বনহুরের কানে নূরীর কণ্ঠ পৌঁছলো কিনা কে জানে। বনহুর দ্রুত সেখান থেকে চলে গেল নিজের কক্ষে। ক্ষিপ্র-হস্তে শরীর থেকে পোশাক বদলাতে লাগল। বনহুরের চোখে-মুখে এক উম্মত্ত ভাব ফুটে উঠেছে। শিকারীর ড্রেসে সজ্জিত হয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো সে। পিঠের সঙ্গে রাইফেল বাঁধা। কোমরের বেল্টে গুলীভরা রিভলভার।

নূরী এসে সম্মুখে দাঁড়ালো-কোথায় যাচ্ছো হুর?

শিকারে।

হঠাৎ আজ এই অসময়ে শিকারের খেয়াল হল কেন?

অনেক দিন শিকারে যাইনি তাই।

কিন্তু না খেয়েই যাবে? গোটা রাত বাইরে কাটিয়ে এই তো সবে ফিরলে–চলো, কিছু মুখে দিয়ে যাও।

না, ক্ষুধা আমার পায় নি নূরী।

তা হবে না, তোমাকে কিছু না খেয়ে এই সকাল বেলা বেরুতেই দেব না।

নূরী!

নূরীর মুখের দিকে তাকিয়ে মায়া হয় বনহুরের, বলে সে–চলো।

বনহুর আর নূরী খাওয়ার কক্ষে এসে বসলো।

বাবুর্চি টেবিলে চা-নাস্তা সাজিয়ে রাখল। নূরী খাবার এগিয়ে দিল বনহুরের সম্মুখে। বনহুর অন্যমনস্কভাবে খাবার মুখে তুলে দিতে লাগল। একটু খেয়েই উঠে পড়ল সে।

নূরী ব্যথিত কণ্ঠে বলল–একি, কিছুই যে খেলে না হুর?

এই তো অনেক খেয়েছি–টেবিলে ঠেস দেওয়া রাইফেলটা হাতে উঠিয়ে নেয় বনহুর।

নূরী ব্যাকুল আঁখি মেলে তাকায় বনহুরের মুখের দিকে, শত শত প্রশ্ন তার মনকে অস্থির। করে তুলছে, কিন্তু বনহুরকে কিছুই জিজ্ঞাসা করার মত অবকাশ হয় না তার।

বনহুর নূরীর স্থির মুখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে–আল্লাহ হাফেজ।

বনহুর বেরিয়ে যায়।

নূরী স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।