দোলন-চাঁপা

‘দোলনচাঁপা’ বিংশ শতাব্দির প্রথমার্ধের অন্যতম জনপ্রিয় বাঙালি কবি কাজী নজরুল ইসলামের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ। ১৩৩০ বঙ্গাব্দের আশ্বিন (১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর) মাসে ‘দোলন-চাঁপা’ কাব্যগ্রন্থটি আর্য পাবলিশিং হাউস থেকে প্রকাশিত হয়।

১৯২২ খ্রিষ্টাব্দের দুর্গাপূজোর আগে ধুমকেতু পত্রিকায় নজরুলের ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ নামে বিদ্রোহাত্মক কবিতাটি প্রকাশের জন্য তাকে রাজদ্রোহের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। অভিযুক্ত কবিকে ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ জানুয়ারি এক বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে প্রেসিডেন্সি জেলে রাখা হয়। এই সময় ‘দোলনচাঁপা’ কাব্যের কবিতাগুলি রচিত হয়। জেল কর্তৃপক্ষের অগোচরে পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায় ওয়ার্ডারদের সাহায্যে তার সব কবিতাই বাইরে নিয়ে আসেন। কবির নির্দেশমত আর্য পাবলিশিং হাউস এ কবিতাগুলো দিয়ে ‘দোলনচাঁপা’ প্রকাশ করে।

‘দোলনচাঁপা’ প্রথম সংস্করণের প্রকাশক শরচ্চন্দ্র গুহ, আর্য পাবলিশিং হাউস, কলেজ ষ্ট্রিট মার্কেট, কলিকাতা। পৃষ্ঠা ৬+৫৪; মূল্য এক টাকা চার আনা। প্রথম সংস্করণ এই কাব্যগ্রন্থে ১৯টি কবিতা ছিল। সূচিপত্রের আগে মুখবন্ধরূপে সংযোজিত কবিতা “আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে” ১৩৩০ বঙ্গাব্দের (১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দ) জ্যৈষ্ঠ মাসের কল্লোল পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

‘দোলনচাঁপা’ কাব্যগ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয় ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের আগে, আনুমানিক ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে। এর প্রকাশক গোপালদাস মজুমদার, ডি. এম লাইব্রেরি, ৬১ কর্ণওয়ালিশ ষ্ট্রিট, কলিকাতা। পৃষ্ঠা ৮+৫৪, মূল্য পাঁচ সিকা।

তৃতীয় সংস্করণে (শ্রাবণ ১৩৬১ বঙ্গাব্দ) কবিতার অদলবদল করা হয়েছে। প্রথম সংস্করণের পউষ, পথহারা, অবেলার ডাক, পূজারিণী, অভিশাপ, পিছু-ডাক, কবি-রাণী কবিতাগুলি বাদ দিয়ে হংসদূতী, সে যে চাতকই জানে তার মেঘ এত কি, লাল নটের ক্ষেতে, মদালস ময়ূর-বীণা কার বাজে গান, না মিটিতে সাধ মোর বেণুকা, তোমার ফুলের মত মন, বরষা, ঐ নীল গগনের নয়ন-পাতায়, মাত্‌লা-হাওয়া, সবুজ শোভার ঢেউ খেলে যায়, বনমালি, বেদনা-অভিমান, নিশীথ-প্রতিম, অ-বেলায়, হার-মানা-হার, বেদনা-মণি, পরণ-পূজা, অনাদৃতা, নীলপরী, হে-ভীতু, অকরুণপিয়া, মরমী, মুক্তি-বার, বিরাগিনী, হারামণি, প্রিয়ার রূপ, পাপড়ি-খোলা, বিধুরা পথিক, প্রিয়া, প্রতিবেশিনী, বাদল-দিনে, মনের মানুষ, কার বাঁশি বাজিল, দহনমালা, দুপুর-অভিসার, শেষের গান, রৌদ্র-দগ্ধের গান, আলতা-স্মৃতি কবিতাগুলি সংযেজিত করা হয়েছে। এই কবিতাগুলি “ছায়ানটে”র অন্তর্গত ছিল।

বর্তমান এডুলিচার সংস্করণে ‘বাঙলা একাডেমি’ প্রকাশিত ‘নজরুল রচনাবলী’ জন্মশতবর্ষ সংস্করণ অনুসরণ করা হয়েছে। এই সংস্করণে তৈরি হয়েছে ‘দোলন-চাঁপা’র প্রথম ও দ্বিতীয় সংস্করণের অনুসরণে। উল্লেখ্য, প্রথম ও দ্বিতীয় সংস্করণে উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তন নেই।

এই কাব্যের মুখবন্ধ-রূপে লেখা কবিতাটি ‘সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে’ শিরোনামে ১৩৩০ জ্যৈষ্ঠে প্রথম বর্ষের দ্বিতীয় সংখ্যাক ‘কল্লোল’-এ প্রকাশিত হয়।

‘দোদুল দুল’ ১৩২৮ চৈত্রের ‘প্রবাসী’তে প্রকাশিত হয়েছিল এবং ‘প্রবাসী’ হতে ১৩২৯ মাঘের ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য-পত্রিকা’য় উদ্ধৃত হয়েছিল।

‘পউষ’ রচিত হয়েছিল ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে। কবি তখন কলিকাতার প্রেসিডেন্সী জেলে বিচারাধীন বন্দী। ‘পউষ’ ১৩২৯ মাঘের এবং ‘পথহারা’ ১৩২৯ ফাল্গুনের ‘প্রবাসী’তে প্রকাশিত হয়।

‘ব্যথা-গরব’ ১৩২৯ চৈত্রের মাসিক ‘বসুমতী’তে এবং ‘সমর্পণ’ ১৩২৯ চৈত্রের ‘ভারতী’তে বের হয়।

‘অবেলার ডাক’ ১৩৩০ জ্যৈষ্ঠের ‘প্রবাসী’তে প্রকাশিত হয়।

‘অভিশাপ’ ১৩৩০ শ্রাবণের এবং ‘আশান্বিতা’ ১৩৩০ আশ্বিনের ‘কল্লোল’-এ ছাপা হয়েছিল।