উত্তমকুমার চট্টোপাধ্যায়
হারিয়ে যাওয়া দিনগুলি মোর
সাত
গণেশদার মুখ থেকেই জানতে পারলাম, ‘মায়াডোর’ ছবিতে আমার কাজ স্রেফ বর সেজে বসে থাকা।
ওদিকে পান্না সাজবেন কনে। আমার স্যুটিং একদিনেই শেষ।
তখনই মাথার মধ্যে খেলে গেল সন্ন্যাসীর কথা। আমি না বড়ো অভিনেতা হব?
কিন্তু এতে তো অভিনয়ের নামগন্ধও নেই। স্রেফ রং মেখে সঙ সাজা।
আচ্ছা কুছ পরোয়া নেহি। সুযোগ যখন একটা পেয়েছি, স্টুডিওর গেট পার হওয়ার, তা আর ছাড়ছি না। কে জানে, এর থেকেই পরে একটা বড়ো চান্স পাব কি না।
গণেশদাকে জিজ্ঞেস করলুম— ‘আমায় কবে যেতে হবে, কী করতে হবে?’
হেসে তিনি বলেন— ‘আরে, সে একটা দিন আমি তোকে বলে দেব। তারপরে সেই বুঝে তুই অফিসের ছুটি নিয়ে নিবি। তারপর স্যুটিং করে পরের দিন অফিসে গেলেই চলবে।’
আমি ছবিতে নামব! একদিন হোক, দু’দিন হোক, আমি স্যুটিং করব! যেন বিশ্বাস হচ্ছে না।
তাই গণেশদার দিকে চেয়ে জিজ্ঞাসা করি— ‘কথাটা সত্যি বলছ তো?’
— ‘সত্যি না তো কী, তোর সঙ্গে আমি ইয়ার্কি করছি?’
যাক তবুও ভালো। কথা শেষ করে অফিসে চলে গেলাম।
কিন্তু এতবড়ো খবরটা আমি চেপে রাখব কী করে? সারা বাস বাদুড়ঝোলা হয়ে গিয়েও খুঁজতে লাগলাম যদি কোনো চেনা লোক চোখে পড়ে, অন্তত তাকে বলেও খানিকটা নিশ্চিন্ত হওয়া যেতে পারে।
একটু দেরি হওয়ার জন্য, আমার সঙ্গে বেশিরভাগই যাঁরা অফিসে যান, তাঁরা প্রায় সকলেই অফিস চলে গেছেন। তাই বিশেষ চেনা মুখের সঙ্গে দেখা হল না। সুখবরটা তাই কাউকে দেওয়াও হল না।
অফিসে পৌছেই, আজও স্পষ্ট মনে আছে, সেদিন যার সঙ্গে দেখা হয়েছিল তাকেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আমার ফিল্মে নামার খবরটা জানিয়ে দিয়েছিলুম।
এখানে বলে রাখা ভালো, আমাদের পাড়ার লুনার ক্লাবে যখনই কোনো থিয়েটার হত আমি তাতে বিশেষ অংশগ্রহণ করতাম। এখানে অভিনয় করার সময় আমার কাকার কাছ থেকে উৎসাহ পেয়েছিলাম প্রচুর। এইভাবেই আমি তাঁদের সঙ্গে অভিনয় করেছিলাম—কর্ণার্জুনে—শ্রীকৃষ্ণ, সাজাহানে—দিলদার, দুই পুরুষে—সুশোভন।
তারাশংকরবাবুর ‘দুই পুরুষ’ নাটকটি নাট্যভারতীতে (বর্তমান গ্রেস সিনেমায়) অভিনীত হয়েছিল। তাতে ‘নুটুবিহারী’র ভূমিকায় প্রথমে ছবিদা অপূর্ব অভিনয় করেছিলেন। পরে ওই ভূমিকায় স্বর্গীয় বিশ্বনাথ ভাদুড়ি১অভিনয় করেন। তাঁর সুন্দর অপূর্ব বাচনভঙ্গির দ্বারা তিনি দর্শকের মন জয় করতে পেরেছিলেন। অবশ্য নাট্যভারতী ভেঙে যাবার পর ছবিদা কিছুদিন মিনার্ভায় ‘নুটুবিহারী’র ভূমিকায় অভিনয় করেন। কিন্তু ‘সুশোভন’-এর ভূমিকায় বরাবরই দক্ষতার সঙ্গে অভিনয় করতেন সুলালদা বা জহর গাঙ্গুলি। শেষের দিকে তিনি যখন স্টেজে এসে বলতেন— ‘আমাকে দশটা টাকা দিতে পারো নুটুদা—আজও আমার মুখ দিয়ে রক্ত উঠেছে’—তখন দর্শকের চোখ আর শুকনো থাকত না।
সেই ভূমিকায় আমি যখন অভিনয় করতে নামি তখন আমার মনে মনে বেশ ভয় করেছিল। হোক না একদিনের জন্য, পারব কি আমি দর্শকের মনে ছাপ রাখতে?
কিন্তু আমার ভাগ্য প্রসন্ন ছিল, তাই অভিনয় দেখে সেদিন অনেকেই আমার সুখ্যাতি করেছিলেন।
ঠিক তেমনি ছিল ‘দিলদার’-এর চরিত্র। বাংলার প্রায় সব শ্রেষ্ঠ শিল্পী একবার করে দিলদারের চরিত্রে অভিনয় করে তাঁদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন। তা থেকে সুলালদা, ছবিদাও বাদ যাননি।
পাড়াতে যখন এই ভূমিকায় অভিনয় করবার জন্য আমাকে মনোনীত করা হয়েছিল, তখন মুখে সাহস দেখালেও, ভেতরে সাহস পাইনি সেদিন। সত্যি কথা বলতে কী বেশ ভয় করেছিল।
তার কিছু আগে কালিকায় (বর্তমান কালিকা সিনেমায়) নরেশদা২ ও একবার এই দিলদারের ভূমিকায় অভিনয় করলেন। তাঁর— ‘একটা সমুদ্র শুকিয়ে গেছে’, ‘পর্বত ভেঙে পড়েছে’ কিংবা ‘জাগো অন্ধ জাগো’ এইসমস্ত উক্তি আমার মনে তখনও স্পষ্ট ভেসে আছে।
ছবিদা সুন্দর চেহারায় যখন বিরক্ত ভঙ্গিতে বলতেন— ‘বিদ্যার এখনও সে তেজ আছে, যা তোমার রৌপ্যের মাথায় লাথি মারতে পারে’ —তখন দর্শকের মনে অপূর্ব এক ভাবের সঞ্চার হত।
সব শেষে বলি সুলালদার কথা। তাঁর অপূর্ব কণ্ঠস্বরে তিনি দর্শকদের মাতিয়ে তুলতেন। বিশেষ করে ‘দারা’র মৃত্যুদৃশ্যে, কোনও দর্শকের চোখ তাঁর অভিনয় দেখে শুকনো থাকত না।
সেই ভূমিকায় নামলাম আমি। তখন আমার বয়স কতই বা! অভিনয়েরই বা কতখানি জানি! ভেবেছিলাম দর্শকরা হাততালি দিয়ে আমাকে উপহাস করবেন। কিন্তু না, তা হল না। অভিনয় বেশ জমল। দর্শকেরা ভালোও বললেন আমাকে।
এসব তো গেল পাড়ার অভিনয়ের কথা। অফিসে আমি অভিনয় করেছিলাম অবশ্য একবারই, তা হল শরদিন্দুবাবুর হাসির নাটক ‘ডিটেকটিভ’-এ একেবারে অনন্তর ভূমিকায়।
অফিসে ‘চান্স’ পাওয়া কি মুখের কথা? আমার মতো ‘হিরো’ সাজবার জন্যে দলে দলে লোক প্রস্তুত হয়ে আছে। তার ওপর যিনি ইনস্টিটিউটের সেক্রেটারি, মনতোষবাবু, তিনি ছিলেন আমার বিপক্ষে। তাঁর আদৌ ইচ্ছা ছিল না আমি ওই ভূমিকায় অভিনয় করি। মুখে সাহস দেখালেও ভেতরে বেশ ভয় করছিল। শেষ দৃশ্যে ‘ফেয়ার’ জুতো খোলার সময় ‘আঃ, আমি কী ডিটেকটিভ রে বাবা’—এই কথা শুনে দর্শকদের ভালোও লাগল। যবনিকা পড়বার পর সেই মনতোষবাবুই আমাকে উপহার দিলেন একটি স্বর্ণপদক। এর থেকে আমরা পরিচয় পাই তাঁর মহৎ হৃদয়ের। অবশ্য এই অভিনয় করার ব্যাপারে আরও দুজন আমায় অলক্ষ্য থেকে সাহায্য করেছিলেন। তাঁদের একজনের নাম সুধামাধব চট্টোপাধ্যায়, অপরের নাম প্রকাশ ঘোষ।
বড়কর্তারা অভিনয়ের পর কে অরুণকুমার তা দেখবার জন্যে আমায় ডেকেছিলেন। বুঝতেই পারছেন, এই সব কারণের জন্যেই বোধহয় আমার মনে একটা বিশ্বাস জন্মে গিয়েছিল, ভালোরকম চান্স পেলে আমিও আমার এলেমটা একবার দেখিয়ে দিতে পারি। কিন্তু বুঝতেই তো পারছেন, তেমন চান্স এখনও পর্যন্ত আমি পাইনি।
হতাশায় মন বেশ ভেঙে গেছে। এমন সময় ফিল্মে নামবার সুযোগ আমার এল। তাই একথা আর কি চেপে রাখতে পারি! তাই অফিসে পৌঁছনোর ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যে সারা অফিসের লোক জেনে গেলেন, আমি এবার ফিল্মে নামছি।
কেউ আমাকে বললেন— ‘ব্রেভো’, কেউবা বললেন— ‘সাবাস’, আবার কেউ বা নাক কুঁচকে বললেন— ‘জানতুম ছেলেটা ভালো অভিনয় করে।’ আর বৃদ্ধগোছের কেউ কেউ বললেন— ‘ছেলেটা এতদিনে একেবারে গোল্লায় গেল। যা থিয়েটার যাত্রার দিকে ঝোঁক, যাবে না তো কি?’
সর্বনাশ! এরকম মন্তব্যের জন্য তো প্রস্তুত ছিলুম না। আনন্দের চোটে এদিকটা তো ভাবিনি। বাবা-মার মত নেওয়া দরকার। তার ওপর, কেমন মনে মনে লজ্জা করল,—ওই গৌরীকে একবার জিজ্ঞেস করলে কেমন হয়।
নাঃ, আর ভাবতে পারছি না। কথা তো বলিনি কোনোদিন। এই ফাঁকে কোনোরকমে যদি কথা বলাটা আরম্ভ করা যায়, তাহলে কেমন হয়!
কিন্তু অন্নপূর্ণাটা আছে যে? বাড়ির সকলকে বলে দেবে না তো? যাক, যাই হোক, একটা ব্যবস্থা করতেই হবে। ওই তিনজনের মত আমাকে নিতেই হবে।
আনন্দটা কেমন যেন আদ্ধেক হয়ে গেল। বিকেলে অফিস থেকে বাড়ি এলুম।
মা খাবার দিতে এলেন আমার ঘরে। এইখানে বলে রাখা ভালো, আমার মা, চিরদিন আমাদের তিন ভাইকে, নিজে হাতে করে সবসময় খেতে দিয়েছেন। আজও আমাদের কারোর বাড়ি ফিরতে যদি দেরি হয় নিজে অভুক্ত থেকে মা তার জন্য অপেক্ষা করেন।
এর ব্যতিক্রম দেখিনি কখনও। স্টুডিওর কাজে যখন সকালে আমাকে বেরিয়ে যেতে হয়, যেদিন আর বাড়ি ফিরবার সময় পাই না, শুনেছি মারও ভালো করে সেদিন খাওয়া হয়না।
যাক, যা বলছিলাম। মা ঘরে ঢুকতেই, মাকে দুহাত দিয়ে ছোটেআ ছেলের মতো জড়িয়ে ধরলাম। তারপরে কথা বললাম— ‘মা, একটা কথা বলবো?’
মা জানতেন এরপরেই আমি হয়তো কিছু চেয়ে বসবো।
সস্নেহে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন— ‘কিছু চাই বুঝি? ওঁকে বলতে হবে?’
আমি বললাম— ‘না মা, তেমন কিছু চাই না। চাই তোমার অনুমতি।’
মা একটু বিস্মিত হয়ে গিয়ে বলেন— ‘অনুমতি? কিসের?’
— ‘আমি—ফিল্মে নামবো।’
মার সাদা মুখটা কেমন যেন কালো হয়ে গেল।
তারপরে আমায় বললেন— ‘তুমি বড়ো হয়েছ খোকা। ভালমন্দ বোঝবার বয়সও তোমার হয়েছে। ফিল্মে নামতে চাও নামো। কিন্তু আমাকে কথা দাও জীবনে এমন কিছু করবে না, যাতে আমার লজ্জায় মুখ পুড়ে যাবে।’
মার পা ছুঁয়ে তখনই বললাম— ‘না মা, তোমাকে আমি কথা দিচ্ছি, তোমার খোকা জীবনে এমন কাজ করবে না, যাতে তুমি তার পরিচয় দিতে লজ্জা পাবে।’
আমাকে দুহাত দিয়ে বুকে জড়িয়ে নিয়ে মা বললেন— ‘জানি বাবা, সে বিশ্বাস তোমার ওপর আমার আছে। ছেলেবয়েস থেকে তুমি যাত্রা করেছ, থিয়েটার করেছ, লোকে তোমার কত সুখ্যাতি করেছে, তোমার সুখ্যাতি শুনতে আমার যে কত ভালো লাগে তা কি তুমি জানো না। ফিল্মে নামছো নামো। আমি জানি, ওতেও তুমি নাম করবে, কিন্তু ওর মতও তো একবার নেওয়া দরকার।’
আমি বলি— ‘বাবাকে, তুমি একবার বলো না মা।’
মা বললেন— ‘না, এ কথা তোমাকে নিজে গিয়েই বলতে হবে।’
পরের দিন ভয়ে ভয়ে গেলাম বাবার ঘরে। তারপর আস্তে আস্তে বললাম আমার বক্তব্য।
বাবা সব শুনে, একটু গম্ভীর হয়ে বললেন— ‘তোমাদের কারোকে কোনো ব্যাপারে আমি বাধা দিতে চাইনা। যা ভালো বুঝবে তাই করবে। সবসময় মনে রেখো আর্ট জিনিসটা কিছু খারাপ নয়। তবে তা করতে গেলে চাই সাধনা। তা কি তুমি করতে পারবে?’
আমি আস্তে আস্তে বলি— ‘আপনি যদি আশীর্বাদ করেন তাহলে নিশ্চয়ই পারবো।’
—Very good. চেষ্টা করে দেখ তোমার ভাগ্যে কী আছে।
বাবার কাছ থেকে অনুমতি তো পাওয়া গেল। কিন্তু যার সঙ্গে কোনোদিন কথা বলিনি তার কাছ থেকে অনুমতি নিই কেমন করে! দূর হোকগে ছাই। অনুমতি নেবারই বা কি দরকার। সে আমার কে? পরমুহূর্তে মনে হলো সন্ন্যাসীর কথা— ‘যার কথা তুমি ভাবছো সে-ই তোমার স্ত্রী হবে।’
করবো তো একটা ‘বরে’র পার্ট। তার জন্য এত কিসের?
পরমুহূর্তেই মনে হলো এই সুযোগে কথা বলা আরম্ভ করা যেতে পারে। কিন্তু আজতো অন্নপূর্ণার গানের স্কুল নেই। গৌরী তো আসবে না আমাদের বাড়ি। আবার কাল যদি গণেশদা একটা দিন বলে দেয় তাহলে?
সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে তো অফিস চলে গেলাম। সেদিন অফিস থেকে ছুটি নিয়ে সাড়ে তিনটের মধ্যে বেরিয়ে পড়লাম। জানতাম গৌরী রমেশ মিত্তির গার্লস স্কুলে পড়ে। সেইসময় রাস্তায় কোনোরকমভাবে যদি—
এলাম স্কুলের সামনে। সবে ছুটি হয়েছে তখন। হরেকরকমের শাড়ি দুলিয়ে মেয়েরা বাড়ি ফিরছে। কিন্তু গৌরী কোথায়? হঠাৎ দেখি গৌরী স্কুল থেকে বেরিয়ে এদিক ওদিক কী দেখে নিয়ে চলতে শুরু করলো।
সঙ্গে যথানিয়মে দারোয়ানও আছে। আমার সবটুকু আশা, আনন্দ, উৎসাহ যেন কোথায় উবে গেল।
হন হন করে দুচারবার গৌরীর সামনে যাতায়াত করলাম, কিন্তু একটাও কথা বলতে সাহস হল না। বুকের ভেতরটা কেমন যেন ঢিপ ঢিপ করতে লাগলো। এখন কী বলে কথা আরম্ভ করা যায়?
হঠাৎ গৌরীর চোখে চোখ পড়ায় দেখি সে কেমন ফিক করে হেসে ফেললো। তারপর, মেয়েদের কাছ থেকে একটু দূরে সরে গিয়ে, পেছন থেকে আমাকে হাত নেড়ে ডাকলো।
আমি কাছে যেতেই আমাকে বললো— ‘আজ অফিস যাওয়া হয়নি? কী হচ্ছে এখানে?’
সারাটা দিন কত কথা ভেবে রেখেছিলুম বলবো বলে। এখন যেন সব গুলিয়ে গেল। কেবল আমতা আমতা করে বলি— ‘না, তাড়াতাড়ি অফিস থেকে এলুম, তাই ভাবলুম— ‘
একটু হেসে গৌরী বললো— ‘আমাকে দেখে যাই, না?’
আমি বলি— ‘না গৌরী। তোমাকে একটা মানে—আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করবার ছিল।’
গৌরী হেসে ফেলে বললো— ‘থাক বীরপুরুষ, রাস্তায় আর কথা বলতে হবে না। বাড়ি ফিরে যাও, খানিকটা পরে আমি আসছি তোমাদের বাড়িতে।’
গৌরী আমাকে ‘তুমি’ বললো? অথচ আমি ক্যাবলার মত তাকে ‘আপনি’ ‘আপনি’ করছিলুম?—প্রথম কথা গৌরী চলে যেতেই আমার মনে হলো। এ ‘তুমি’র অর্থ? মানে—মানে—ও কি আমাকে ভালোবাসে?
রাস্তায় চলতে চলতেও সেই বিকেলবেলায়ও মনে হলো যেন আমি আর চলতে পারছি না, সমস্ত শরীর যেন মাটি ছেড়ে উড়ে যেতে চাইছে। ভালো যেন দেখতে পাচ্ছি না।
আঃ, সে কী অপূর্ব অনুভূতি! গৌরী আমায় ভা—লো—বা—সে।
সূত্রনির্দেশ ও টীকা
- বিশিষ্ট অভিনেতা বিশ্বনাথ ভাদুড়ি (১৮৯৭-১৯৪৫)-র অগ্রজ ছিলেন নাট্যাচার্য শিশিরকুমার ভাদুড়ি। শিশিরবাবুর কাছেই অভিনয় শিক্ষা। ১৯২৩ সালে শিশিরকুমারের পরিচালনায় ‘সীতা’ নাটকে লক্ষ্মণের চরিত্রে বিশ্বনাথবাবু প্রথম মঞ্চেনামেন। এরপর, ‘জনা’,’সাজাহান’, ‘পাষাণী’, ‘রঘুবীর’, ইত্যাদি আরো অনেক নাটকে অসামান্য অভিনয়ের সাক্ষ্য রাখেন। এছাড়া, ‘সমাজ’, ‘টকি অব টকীজ’, ‘সীতা’, ‘ভাগ্যচক্র’, ‘গৃহদাহ’, ইত্যাদি বেশকিছু চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেন বিশ্বনাথ ভাদুড়ি।
- ‘নরেশদা’ হচ্ছেন প্রখ্যাত পরিচালক ও অভিনেতা ‘নটশেখর’ নরেশচন্দ্র মিত্র (১৮৮৮-১৯৬৮)। শিশির ভাদুড়ির অভিন্নহৃদয় বন্ধু ছিলেন নরেশচন্দ্র এবং নরেশবাবুরই অনুরোধে কলেজের চাকরি ছেড়ে থিয়েটার জগতে প্রবেশ করেন শিশিরকুমার। ছাত্রাবস্থায় ১৯০৮ সালে কলকাতার ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউটে ‘কুরুক্ষেত্র’ নাটকে নরেশবাবু ও শিশিরবাবু অভিনয় করেন যথাক্রমে ‘দুর্বাসা’ ও ‘অভিমন্যু’ চরিত্রে। কখনো পরিচালনাসহ অভিনয় আবার কখনো বা শুধুই অভিনয় দিয়ে নাট্যমঞ্চ আলোকিত করেছেন নরেশ মিত্র। ‘পুনর্জন্ম’, ‘প্রফুল্ল’, ‘কর্ণার্জুন’, ‘প্যালারামের স্বাদেশিকতা’, ‘চন্দ্রগুপ্ত’ ইত্যাদি আরো অজস্র নাটকে অভিনয় বা পরিচালনা করেছেন। নির্বাক যুগের ছবি মানভঞ্জন, চন্দ্রনাথ, দেবদাস ইত্যাদি আর ‘গোরা’, ‘স্বয়ংসিদ্ধা’, ‘কঙ্কাল’, ‘উল্কা’, ইত্যাদি সবাক ছবির পরিচালক ছিলেন নরেশচন্দ্র মিত্র।