উত্তমকুমার চট্টোপাধ্যায়

হারিয়ে যাওয়া দিনগুলি মোর

তের

অনেকে মনে করেন অভিনেতার জীবন বড়ো সুখের, বড়ো আরামের, যেন নরম ফুল দিয়ে বিছানো। এর প্রধান কারণ শখের দলে এক—আধ দিনের জন্যে অভিনয় করতে সকলেরই ভালো লাগে। তাতে উত্তেজনাও প্রচুর আছে, সেকথা স্বীকার করতে হবে। কিন্তু সেই অভিনয় যখন দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর চলতে থাকে, তখন আর তার মধ্যে আনন্দ থাকে না। একথা আমি আগে বলেছি ‘শ্যামলী’র অভিনয় থেকে যখন বিদায় নিয়েছিলাম তার কারণ হিসেবে।

আপনারা হয়তো বলবেন, বাপু হে, তুমি তো অভিনয় করছ ক্যামেরার সামনে। সে ক্যামেরা চলতে শুরু করে, যখন তুমি তাকে চলতে বলো। আর এতে তোমায় একটানা অভিনয় করতেও হয় না। সামান্য কয়েকটা মিনিট—তাতে আবার কষ্ট কী? আমি বলব—এ সামান্য কয়েকটা মিনিটের পেছনে থাকে বিরাট প্রস্তুতি। হয়তো দশটায় স্যুটিং আরম্ভ হবার কথা, সাড়ে নটার মধ্যে আপনি স্টুডিওতে পৌঁছেছেন, মেকাপ করেছেন। সেটে পৌঁছেছেন। হয়তো সেদিন আপনাকে একটা হাসির দৃশ্যে অভিনয় করতে হবে, কিন্তু মুশকিল বেধেছে আপনার নিজেকে নিয়ে। হাসি আর সেদিন আপনার ফুটছে না, পরিচালকেরও মনোমতো হচ্ছে না। ফলে সে দু’মিনিটের দৃশ্য তুলতে লেগে গেল দু’ঘণ্টার ওপর।

কেন এমন হয়?

এই দেহের পিছনে মন বলে আমাদের একটা পদার্থ আছে। সেই মনটা ছুটিয়ে নিয়ে বেড়ায় আমাদের শরীরটাকে। সেই মনটাই মাঝে মাঝে মহা অনর্থ সৃষ্টি করে বসে। একদিন হয়তো ঘুম থেকে উঠেই দেখলেন, আপনার মনটা অকারণে দুঃখে ভরে রয়েছে। বাড়িতে এটা—সেটা করতে যান। এদিকে স্টুডিওতে যাবারও সময় হল। স্টুডিওতে এসেও, যে চরিত্রে আপনি অভিনয় করবেন, তা ভাববার সময় আপনি পাবেন না। মেকাপ—রুমে যান, বন্ধুবান্ধব এসে কথা বলছেন, কারোকে আপনি না বলতে পারছেন না। না বলাটা অভদ্রতা —তাঁরাই বা কী মনে করবেন। ফ্লোরে গেলেন, সেখানেও ঐ একই অবস্থা। স্যুটিং হচ্ছে, এদিকে গালগল্পও চলছে। আপনার ডাক এলো, চরিত্র নিয়ে আপনি চিন্তাও করেননি ইতিপূর্বে। তাই পরিচালক চরিত্রচিত্রণে মুখের ওপর যেমন অভিব্যক্তি চান, তেমনটি আপনার মুখে আর ফুটছে না। কারণ ইতিপূর্বে আপনার মনঃসংযোগ হয়নি। তাই খাটুনিও বেড়ে চলল। সে খাটুনির কোনো মাপকাঠি নেই।

আমার মনে হয়, অভিনেতা যখন মেক—আপ নিতে শুরু করেন, তখন থেকে পরিচালক বা সহকারী পরিচালক যদি শিল্পীদের কাছে এসে তাঁদের চরিত্র সম্বন্ধে ভালো করে বুঝিয়ে দেন বা সেই ঘটনার মধ্য দিয়ে তাঁরা দর্শককে কী বোঝাতে চাইছেন, সেটুকু আলোচনা করেন, তাহলে অভিনয়ের মান আরো উন্নত হতে পারে এবং কম খাটুনিতেও ছবি তোলা সম্ভব হতে পারে। একথা বলছি তার কারণ হচ্ছে, যিনি যখন যে চরিত্রে অভিনয় করবেন, সাময়িক হলেও তাঁর নিজেকে ভুলে যেতে হবে। ভাবতে হবে সেই চরিত্রই আমি। এই চিন্তা তাঁর মধ্যে যত স্পষ্ট হয়ে উঠবে তাঁর চরিত্র—রূপায়ণ তত ভালো হবে।

এই ক্ষেত্রে একটা কথা বলি। ‘সপ্তপদী’র কৃষ্ণেন্দুর চরিত্র বা ‘দুই ভাই’ এর উৎপল—এর চরিত্র—দুটো চরিত্রই আমার ভালো লেগেছিল। অভিনয় করে আমি নিজেও আনন্দ পেয়েছি। ইদানীং রোম্যাণ্টিক চরিত্রে অভিনয় করতে করতে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। তারাশঙ্করবাবুর কৃষ্ণেন্দুর চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে দেখি সেখানে রয়েছে নতুন কথা— মানুষকে ভালোবাসো, মানুষের ঊর্ধ্বেও আর একজন আছেন যিনি আমাদের চালিয়ে নিয়ে চলেছেন, তিনি আমাদের ভালোই করেন, কখনও মন্দ করেন না। মানুষের মধ্যে কৃষ্ণেন্দুকে তাঁর প্রকাশ দেখে।

নৃপেন্দ্রকৃষ্ণের‘দুই ভাই’এর উৎপলের চরিত্রের মধ্যেও তেমনি নতুনত্ব দেখেছি। সে বড়োভাই, প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে তার ছোটোভাই কমলকে। তার কল্পনা অনুপাতে সে ছোটোভাইকে মানুষ করতে চায়। কিন্তু ছোটোভাই তার কল্পনা নিচ্ছে না। সে কালের চাকায় গড়িয়ে চলেছে, লাগল ভালোবাসার সঙ্গে সংঘাত। সবটুকুর মধ্যেই রয়েছে ভালোবাসা। দুঃখ, বেদনা, হাসি,—সবগুলোই গাঁথা রয়েছে এক সূত্রে। হয়তো মনের কোনো গোপন অজানা আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে হয়েছে তার মিল। তাই আনন্দ পেলাম এই চরিত্রদুটোতে অভিনয় করতে।

এখন কথা হল এ দুটো চরিত্র আমার নয় মনোমতো হয়েছে। এমন তো বহু চরিত্রে আমাকে অভিনয় করতে হয়, যা আমার মনোমতো হয় না। তখনই প্রয়োজন হয়েছে মনঃসংযমের এবং সেইজন্যই বলছিলাম পরিচালক বা সহকারীদের উচিত বারবার অভিনয়ের বিষয়বস্তু নিয়ে অভিনেতা—অভিনেত্রীর সঙ্গে আলোচনা করা, যাতে চরিত্র বুঝতে এতটুকু দেরি না হয়।

শ্রদ্ধেয় নাট্যাচার্য এ বিষয়ে বলতেন—’যখন তুমি যে চরিত্রে অভিনয় করবে, তখন পর্দা উঠলে তুমি মনে করবে তুমি সেই। তোমার সত্তাকে তুমি একেবারে দেবে ডুবিয়ে।’ অদ্ভুত অভিনেতা ছিলেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি অভিনয় করতেন সাজাহানআর ঔরঙ্গজেব, আলমগীর আর রাজসিংহের চরিত্রে। সাজাহান স্নেহবৎসল ঔরঙ্গজেব কঠোর, কুটিল; সাজাহান পুত্রস্নেহে পাগল, ঔরঙ্গজেব স্বার্থসিদ্ধির খাতিরে ধর্মের ভান করে। তেমনি আলমগীর কুটিল হলেও সত্যাশ্রয়ী আর রাজসিংহ যুদ্ধপ্রিয় হলেও সরল, উদার। এই ভিন্নধর্মী চরিত্রে অভিনয় তাঁর পক্ষেই সম্ভব হয়েছিল।

মনঃসংযম দিয়ে তিনি বদলে ফেলতেন নিজেকে। এ যেন একই মানুষের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা ডক্টর জেকিল আর মিস্টার হাইড। তাই আজও তিনি যুগান্তকারী অভিনেতা— তিনি সত্যিকারের একজন সাধক।

তাই বলি অভিনয় ছেলেখেলা নয়। দুটো ছবিতে নিজেকে সুন্দর করে সাজিয়ে, দু-চারটি নায়িকার সঙ্গে রোম্যাণ্টিক দৃশ্যে অবতীর্ণ হয়ে, দম্ভভরে ভালো জামা গায়ে দিয়ে গাড়ি চড়ে রাস্তায় বা লোকের ভিড়ের মধ্যে দিয়ে চলে গেলাম—কিছু স্কুল-কলেজের পড়ুয়া ছেলে একটু টীকাটিপ্পনী কাটল বা কিছু রঙিন মুখে তাকিয়ে হাসল বা একটু উচ্ছ্বাস দেখাল, এটা অভিনয়ের মূল কথা নয়। অভিনয়, সাধনার বস্তু। এ রসে যারা একবার মজেছে তারাই মরেছে।

এ প্রসঙ্গে প্রবীণ অভিনেতা তুলসীদা মানে তুলসী চক্রবর্তীর মুখে আমি একটি গল্প শুনে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। সে যুগের স্টেজ সম্বন্ধে তুলসীদা যা বলেন সেগুলো গল্প নয়—সেগুলো সত্য ঘটনা। তিনি বলেছিলেন যে তখনকার দিনে কোনো একজন অভিনেতা, নামটা আমার ঠিক মনে নেই, জয়দেব চরিত্রে অভিনয় করতেন। দিনের পর দিন যায়। তিনি ভক্তিরসে নিজেকে আপ্লুত করার চেষ্টা করেন। সেই ভক্তিরসে ডুবতে গিয়ে তিনি শেষে মজে গেলেন। একদিন দেখা গেল তিনি আর স্টেজে এলেন না, কৃত্রিম পথে ভগবানকে না পেয়ে অকৃত্রিম পথে তিনি ছুটলেন ভগবানের পিছনে। কিছুদিন খোঁজ তল্লাসির পর তাঁকে পাওয়া যায় পুরীর রাস্তায়,— মুখে ঠিক সেই অভিব্যক্তি— সেই বাণী—হা প্রভু! হা জগন্নাথ! তারপর শোনা যায় যে, যে—মুহূর্তে তিনি জগন্নাথ—মন্দিরে পদার্পণ করেন সেই মুহূর্তে তাঁর প্রাণবায়ু নির্গত হয়। আপনারা বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না, কিন্তু এটা সত্যি ঘটনা। তুলসীবাবু শ্রদ্ধেয়, মাননীয় এবং আমি তাঁর কথা সম্পূর্ণভাবে বিশ্বাস করি— বিশেষ করে তিনি যখন পুরোনো দিনের স্টেজের কথা বলেন।

তাছাড়া এসব কথা নিয়ে কেউ মশকরা করে না বলেই আমার ধারণা। এই থেকে বুঝতে পারা যায়, সৎ চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে যদি সে সত্যি চরিত্র ফুটিয়ে তোলার জন্য চেষ্টা করে, তবে আখেরে সে সৎই হয়ে যায়।

এই প্রসঙ্গে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের বলা একটা কথা মনে পড়ল। তিনি বলতেন, ‘মন ধোপা ঘরের কাপড়। একে যে রঙে রাঙাবে সেই রঙ হবে।’

এতেই বোঝা যাবে তুলসীদা যে ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন তার মধ্যে বুজরুকি থাকা সম্ভব নয়। শুধু তাই নয়, সৎ অভিনয় মানুষকে দেবতার স্তরে তুলে নিয়ে যেতে পারে।

যাক সে কথা।

অভিনয়ের কথা বলতে বসে অভিনয় থেকে অভিনেতার চরিত্রের পরিবর্তনের সম্ভাবনা অবধি আলোচিত হয়ে গেল। এখন অভিনেতাদের মধ্যে বিশেষ করে বিদেশি অভিনেতাদের মধ্যে কাকে আমার ভালো লাগে বলছি।

বলছি আমি এই কারণে, কেন অভিনয়টাকে আমি শিল্প বলে গ্রহণ করতে পেরেছি। যাঁর কথা বলব, যাঁকে আজও আমি আমার সর্বান্তঃকরণ দিয়ে শ্রদ্ধা করি, তিনি আজ জীবিত নেই। তবুও তাঁর সুক্ষ্ম অবস্থিতি আমি প্রতি মুহূর্তে স্মরণ করি।

সেই চিরস্মরণীয় অভিনেতার নাম রোনাল্ড কোলম্যান।১০ ‘Double Life’এ তাঁর অভিনয় দেখতে দেখতে আমি অভিনেতাকে হারিয়ে ফেলে নায়কের সুখদুঃখের সঙ্গে নিজেকে মিশিয়ে ফেলেছিলুম। এখনও মনে হয় এ কি করে সম্ভব হয়, আর সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ে— বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি—

সূত্রনির্দেশ ও টীকা

  1. নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়ের কাহিনী অবলম্বনে সুধীর মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘দুই ভাই’ ছবিটি মুক্তি পায় ২০ অক্টোবর ১৯৬২ তারিখে। দুই সহোদর ভাইয়ের এক অদ্ভুত আন্তরিক সম্পর্কের টানাপোড়েনের ছবি ফুটে উঠেছে, এই চলচ্চিত্রে। বড়োভাই উৎপল চরিত্রে রূপদান করেছিলেন উত্তমকুমার। তৎকালীন ছবিগুলিতে উত্তমকুমার বেশিরভাগক্ষেত্রে যেমন একধরনের রোম্যাণ্টিক নায়ক চরিত্রের ভূমিকা নিতেন, সেইদিক থেকে দেখলে, এই উৎপল চরিত্রটি অনেকটাই ব্যতিক্রমী। উৎপলের ভাই ‘কমল’ চরিত্রে অভিনয় করেন বিশ্বজিৎ। দুটি প্রধান নারী চরিত্রের অত্যন্ত সার্থক রূপ দেন যথাক্রমে সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় ও সুলতা চৌধুরী। অন্যান্য ভূমিকায় ছিলেন জীবেন বসু, তরুণকুমার, তুলসী চক্রবর্তী প্রমুখ স্বনামধন্য অভিনেতারা। সংগীত পরিচালক ছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়।
  2. নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায় (১৯০৫-১৯৬৩) বর্তমান দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলার ফুটিগোদা গ্রামে জন্মেছিলেন। এক বহুমুখী প্রতিভাধর ছিলেন- গল্প, উপন্যাস, বিজ্ঞান, ইতিহাস, ধর্ম ইত্যাদি অজস্র বিষয়ে লেখালিখি করেছিলেন। বিশেষ করে শিশু সাহিত্যে নৃপেন্দ্রকৃষ্ণে-র অবদান চিরস্মরণীয়। সারা পৃথিবীর সেরা কাহিনির শিশুপোযোগী অসাধারণ বঙ্গানুবাদ করেছিলেন এই সাহিত্যিক। অত্যন্ত জনপ্রিয় অনেকগুলি চলচ্চিত্রের কাহিনি, চিত্রনাট্য, সংলাপ, গীতিকার ইত্যাদি ক্ষেত্রে নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায় সুনামের শিখর ছুঁয়েছিলেন বলা যায়। কলকাতা বেতার প্রতিষ্ঠানের আদি যুগ থেকে বেশ কিছুদিন যুক্ত ছিলেন। ‘বিদ্যার্থীমণ্ডল’, ‘পল্লীমঙ্গল আসর’, ‘গল্পদাদুর আসর’ (‘দাদুমণি’ নামে) ইত্যাদি জনপ্রিয় বেতারানুষ্ঠান নানা সময়ে পরিচালনা করেছেন। ১৯৩৯ সালে পুরী থেকে প্রথমবার সরাসরি রথযাত্রার ধারাভাষ্য সম্প্রচারিত হয় কলকাতার বেতারে। ধারাভাষ্যকার ছিলেন নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়। ‘গল্পভারতী’ মাসিক-পত্রিকার প্রতিষ্ঠা-সম্পাদকের দায়িত্ব পালন ছাড়াও ‘মহীয়সী মহিলা’, ‘সান ইয়াৎ সেন’, ‘মা'(অনুবাদ), ‘সেক্সপিয়ারের কমেডি’, ‘সেক্সপিয়ারের ট্রাজেডি’, ‘নানাকথা’, ইত্যাদি আরো কিছু গ্রন্থের লেখক ছিলেন নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ। ‘গীতগোবিন্দ’-র গদ্যানুবাদও করেছিলেন।
  3. দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত প্রখ্যাত ‘সাজাহান’ নাটকের দুটি মুখ্য চরিত্র। নাট্যাচার্য শিশিরকুমার ভাদুড়ি একই শো-এ দুটি চরিত্রেই সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে অবিস্মরণীয় অভিনয় করতেন। শেষ দৃশ্যে যেখানে একবারই মাত্র ‘সাজাহান’ ও ‘ঔরঙ্গজীব’-এর দেখা হচ্ছে, সেখানে ডামি ব্যবহার করে অদ্ভুতভাবে দৃশ্যটিকে সাজাতেন শিশিরকুমার। সে যুগে এই প্রয়োগ পদ্ধতিগত দিক থেকে যথেষ্ট বিস্ময়কর।
  4. দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত প্রখ্যাত ‘সাজাহান’ নাটকের দুটি মুখ্য চরিত্র। নাট্যাচার্য শিশিরকুমার ভাদুড়ি একই শো-এ দুটি চরিত্রেই সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে অবিস্মরণীয় অভিনয় করতেন। শেষ দৃশ্যে যেখানে একবারই মাত্র ‘সাজাহান’ ও ‘ঔরঙ্গজীব’-এর দেখা হচ্ছে, সেখানে ডামি ব্যবহার করে অদ্ভুতভাবে দৃশ্যটিকে সাজাতেন শিশিরকুমার। সে যুগে এই প্রয়োগ পদ্ধতিগত দিক থেকে যথেষ্ট বিস্ময়কর।
  5. ক্ষিরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ রচিত অত্যন্ত জনপ্রিয় ‘আলমগীর’ নাটকের দুটি চরিত্র।
  6. ক্ষিরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ রচিত অত্যন্ত জনপ্রিয় ‘আলমগীর’ নাটকের দুটি চরিত্র।
  7. ডাঃ জেকিল ও মিঃ হাইড হল রবার্ট লুই স্টিভেনসনের লেখা ‘THE STRANGE CASE OF DR. JACKIL & MR. HIDE’ গল্পের দুই মুখ্য চরিত্র। ডাঃ জেকিল একটি ওষুধ আবিষ্কার করেছিলেন, যা খেলে মনের সুপ্ত খারাপ চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটত। এর ফলে, জেকিল অন্য মানুষ হয়ে মিঃ হাইডে পরিণত হতেন। এইসব নিয়েই এই গল্পটি গড়া হয়েছে। একটি মানুষের আমূল চারিত্রিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে, এই চরিত্র দুটি দিয়ে উদাহরণ দেওয়ার রেওয়াজ তখন থেকেই চালু হয়েছে। প্রসঙ্গত, এই গল্পের ভিত্তিতে তৈরি কাহিনিনির্ভর ছবি ‘বহ্নিশিখা’ মুক্তি পেয়েছিল ১৯৭৬ সালে। পীযূষ বসু পরিচালিত এই ছবিটিতে নায়ক চরিত্রে অভিনয় করেন উত্তমকুমার।
  8. ডাঃ জেকিল ও মিঃ হাইড হল রবার্ট লুই স্টিভেনসনের লেখা ‘THE STRANGE CASE OF DR. JACKIL & MR. HIDE’ গল্পের দুই মুখ্য চরিত্র। ডাঃ জেকিল একটি ওষুধ আবিষ্কার করেছিলেন, যা খেলে মনের সুপ্ত খারাপ চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটত। এর ফলে, জেকিল অন্য মানুষ হয়ে মিঃ হাইডে পরিণত হতেন। এইসব নিয়েই এই গল্পটি গড়া হয়েছে। একটি মানুষের আমূল চারিত্রিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে, এই চরিত্র দুটি দিয়ে উদাহরণ দেওয়ার রেওয়াজ তখন থেকেই চালু হয়েছে। প্রসঙ্গত, এই গল্পের ভিত্তিতে তৈরি কাহিনিনির্ভর ছবি ‘বহ্নিশিখা’ মুক্তি পেয়েছিল ১৯৭৬ সালে। পীযূষ বসু পরিচালিত এই ছবিটিতে নায়ক চরিত্রে অভিনয় করেন উত্তমকুমার।
  9. তুলসী চক্রবর্তী (১৮৯৯-১৯৬১) এক সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনেতা। অভিনয়ের পাশাপাশি গান, নাচ সবেতেই পারদর্শী ছিলেন। তুলসীবাবুর জ্যাঠামশাই পাবলিক থিয়েটারে অভিনয় করতেন। তাঁর জন্যে প্রতিদিন থিয়েটারে খাবার নিয়ে যেতে যেতে অভিনয়ের প্রতি আকৃষ্ট হন তুলসী চক্রবর্তী। এরপর, সেই অল্পবয়সে ‘বোসেজ সার্কাস’ নামক এক সার্কাস দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে দেশ ঘুরতে থাকেন। এরপর কলকাতায় ফিরে অন্যান্য কাজের সঙ্গে কিছুদিন যুক্ত থেকে অবশেষে স্টার থিয়েটারে যোগ দেন। প্রথম অভিনয় করেন ‘দুর্গেশনন্দিনী’ নাটকে। সেইসময় স্টারের নির্দেশক-প্রযোজক প্রখ্যাত অপরেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়কে সারাজীবন গুরু মানতেন তুলসীবাবু। তাঁর শেষ মঞ্চাভিনয় স্টারে ‘শ্রেয়সী’ (১৯৬১) নাটকে। ১৯৩২ সালে প্রেমাঙ্কুর আতর্থীর পরিচালনায় ‘পুনর্জন্ম’ ছবিতে প্রথম চিত্রাবতরণ। এরপর ‘শ্রীগৌরাঙ্গ’, ‘সাড়ে চুয়াত্তর’, ‘সমাপিকা’, ‘ভুলি নাই’, ‘অঞ্জনগড়’, ‘শ্রীতুলসীদাস’, ‘সবার উপরে’, ‘দেড়শো খোকার কাণ্ড’, ‘পথের পাঁচালি’, ‘পরশপাথর’ ইত্যাদি অসংখ্য ছবিতে তাঁর অবিস্মরণীয় অভিনয়ের সাক্ষ্য রাখেন তুলসী চক্রবর্তী। বেতার নাটকেও বহুবার তুলসীবাবুর অভিনয় শোনা গেছে।
  10. রোনাল্ড কোলম্যান (১৮৯১-১৯৫৮) ছিলেন হলিউড চলচ্চিত্রজগতের একজন স্টার। লণ্ডন কলোসিয়াম-এ ১৯১৬ সালে প্রথম ‘মহারানি অফ আরাকান’ নাটকে অভিনয় করেন। এরপর ছবির জগতে এসে ‘দ্য ডার্ক অ্যাঞ্জেল’, ‘এ টেল অব টু সিটিজ’, ‘দ্য প্রিজনার অব জেণ্ডা’ ইত্যাদি অনেক জনপ্রিয় ছবির নায়ক হিসেবে স্টার হয়ে ওঠেন। কলকাতায় অভিনেতাদের বিশেষ করে যারা নায়ক চরিত্রে অবতীর্ণ হতেন, তাদের মধ্যে কয়েকজনের কাছে আদর্শ হয়ে উঠেছিলেন কোলম্যান। ১৯৪৮ সালে ‘এ ডাবল লাইফ’ ছবির জন্য অভিনেতা হিসেবে ‘অস্কার’ পেয়েছিলেন রোনাল্ড কোলম্যান।