» » গ্রন্থকারের নিবেদন

বর্ণাকার

সেকালে সাহিত্যের রসবিচার ও মাননির্ণয় হত রাজদরবারে, একালে হয় পাঠক- দরবারে। সেদিন রাজা এবং অন্তরালবর্তিনী রানীর সামনে বসে সাহিত্যিক তাঁদের চিত্তবিনোদনের চেষ্টা করতেন, আজ তাঁর সামনে অগণিত রাজা-রানী। তাঁদের মনোরঞ্জন অসাধনীয়, অন্তত আমার কাছে। সে নিষ্ফল প্রয়াস আমি সভয়ে পরিহার করে চলেছি। কিন্তু মাঝে মাঝে পাঠককুলের কোন কোন ইচ্ছা, আবদার কিংবা দাবী পালন করবার চেষ্টা না করে পারিনি।

এই গ্রন্থ সংকলনের মূল উদ্দেশ্যও তাই। আমার একদল সহৃদয় পাঠক-পাঠিকার ফরমাশ-রক্ষা।

প্রথম পর্ব লৌহকপাট যখন প্রকাশিত হল, মনে করেছিলাম, এই শেষ। কিন্তু হল না। এল দ্বিতীয়, তারপর তৃতীয় এবং শেষ পর্যন্ত চতুর্থ।

আমি তো লিখেই খালাস। সমস্যা দেখা দিল পাঠকমহলে। পাড়ার লাইব্রেরী থেকে প্রথম খণ্ড পড়ে বসে আছেন, দ্বিতীয় আর হাতে আসে না। অনেক দিন অপেক্ষা করে পেলেন চতুর্থ। যাঁরা নিজস্ব লাইব্রেরীতে সব-কটা পর্ব সংগ্রহ করে রাখতে চান, তাঁরাও দেখলেন কাজটা সহজ নয়। চারখণ্ডের প্রকাশক তিনজন। বাংলার বাইরে যাঁরা থাকেন, তাঁদের আরও মুশকিল। কোন্টার জন্যে কাকে অর্ডার দেবেন ভেবে পান না।

আজকের পাঠকরা লেখকের উপর তুষ্ট হলে বড় একটা মুখ খোলেন না, কিন্তু কোন কারণে রুষ্ট হলে তৎক্ষণাৎ পত্রাঘাত করে বসেন। এই ব্যাপার নিয়ে আমার উপরেও বেশ কিছু পত্র বর্ষণ হল। কেউ কেউ অভিযোগ জানিয়ে নিরস্ত হলেন। কিন্তু অনেকেরই দাবী—চারটি খণ্ড একত্রে পেতে চাই।

সেই বৃহৎ বস্তুটির আকার এবং কার স্কন্ধে তার ভার চাপানো যায় যখন ভাবছি, তখন স্বেচ্ছায় ও সাগ্রহে এগিয়ে এলেন মিত্র-ঘোষ। আমি দায়মুক্ত হলাম। সেজন্য তাঁদের কাছে আমার কৃতজ্ঞতার অন্ত নেই। কিন্তু বন্ধুবর গজেন্দ্রকুমার মিত্র এবং সুমথনাথ ঘোষের সঙ্গে আমার যে সম্পর্ক, তাতে ঐ বস্তুটি ঘটা করে প্রকাশ করাটা কেমন বেখাপ্পা লাগছে। অতএব বিরত রইলাম।

সেই একই কারণে এই সুবৃহৎ সংকলনের প্রুফ সংশোধন এবং অন্যান্য বহু ঝঞ্ঝাট যাদের পোহাতে হয়েছে, বিশেষ করে আমার তিনটি স্নেহাস্পদ তরুণ বন্ধু—ভানু রায়, মণীশ চক্রবর্তী এবং নৃপেন চক্রবর্তী, তাদেরও মামুলী ধন্যবাদ দিয়ে বিব্রত করতে চাই না।

এর পিছনে যে পরিশ্রম, তার থেকে আমিও একেবারে বাদ পড়িনি। চারটি পর্ব আগাগোড়া পড়তে হয়েছে এবং নানা জায়গায় কিছু ঘষামাজা ও অদল-বদলও করতে হয়েছে—সাধু ভাষায় যাকে বলে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন ইত্যাদি।