হযরত ওমর
বিচারপতি আবদুল মওদূদ রচিত ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমর ইবনুল খাত্তাব রা.-এর জীবনী ‘হযরত ওমর’। গ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল পৌষ ১৩৭৪ বঙ্গাব্দ (জানুয়ারি ১৯৬৭)। গ্রন্থটির দ্বাদশ সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে ২০২৩ খৃষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে। প্রকাশক মেছবাহউদ্দীন আহমদ, আহমদ পাবলিশিং হাউস, ৬৬ প্যারীদাস রোড, ঢাকা ১১০০। প্রচ্ছদ এঁকেছেন গোপাল মণ্ডল।
উৎসর্গ
বহু-ভাষাবিদ্ জ্ঞান সাগর
ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্
শ্রদ্ধাভাজনেষু—
ওকবাহ-বিন-আমিরের উক্তি-মতে নবী করীম (স.) বলেছিলেন–আমার পরে যদি কেউ নবী হতো, তা হলে ওমর-বিন্-খাত্তাব হতো।
—তিরমিযি
ভূমিকা
‘হযরত ওমর’ রচনা আজ শেষ হলো। এজন্যে প্রথমেই জানাই করুণাময় আল্লাহতালার উদ্দেশ্যে অশেষ শুকরিয়া।
ওমর চরিত্রের বিশালতা উপলব্ধি করে স্বভাবতঃই আমি কুণ্ঠিত হই এ দায়িত্ব গ্রহণ করতে, যদিও অনুরোধ আসে ‘কেন্দ্রীয় বাঙলা-উন্নয়ন-বোর্ডের পরিচালকের নিকট থেকে, যা আমার পক্ষে গৌরবের বিষয়। আমি আরও কুণ্ঠিত হই প্রধানত দুটি কারণে : যে পরিমাণ জ্ঞান ও অধ্যয়ন থাকা দরকার এরূপ মহৎ চরিত্র-চিত্রণে, তার কোনটাই আমার নেই; দ্বিতীয়তঃ সরকারী গুরু কর্তব্যভার যথাযোগ্য সম্পন্ন করে এরূপ বিরাট কাজে হস্তক্ষেপ করার মতো উপযুক্ত অবসর এবং মন ও মেজাজ পাওয়াও আমার পক্ষে সুদুর্লভ। তবুও এ কাজের ভার গ্রহণ করতে সাহসী হই, শ্রদ্ধেয় বন্ধুবর ডক্টর মুহম্মদ এনামুল হক সাহেবের আগ্রহাতিশয্যে। আমার সীমিত সামর্থের মধ্যে এ কাজে কতোটুকু সফল হতে পেরেছি, তার বিচারভার রইলো সহৃদয় পাঠক-শ্রেণীর উপর।
আমি আগেই বলেছি, ওমর চরিত্র বিশাল ও মহৎ। এরূপ মহান চরিত্র চিত্রণকালে যে সব বিষয়ে, বিশেষতঃ খালিদ-বিন-ওলিদের পদচ্যুতি সম্পর্কিত তর্কিত বিষয়ে, যেরূপ আলোকপাত করা উচিত, আমার অক্ষম লেখনী-মুখে তা সম্ভব হয়নি, বিশাদ বা পরিচ্ছন্ন হয়নি। এ অক্ষমতাটুকুর জন্যে ওজরখাহী করে আমি শুধু এটুকু বলতে পারি, কোথাও সত্য গোপন করিনি, ঐতিহাসিক তথ্যের বিপরীত কিছু আলোচনা করিনি, কিংবা আমার আজন্ম শ্রদ্ধান্বিত হিরোর’ চরিত্র-চিত্রণে অতিরঞ্জনের চেষ্টাও পাইনি। ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে তথ্য-সম্বলিত সঠিক আলেখ্য তুলে ধরতে প্রয়াস পেয়েছি।
আরও একটি বিষয়ে পাঠকশ্রেণীর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আবুবকর, ওমর, ওসমান, আলী প্রভৃতি ইসলামের পরম শ্রদ্ধেয় ব্যক্তির নামোল্লেখে আমি ইংরেজিতে ও সাধারণতঃ উর্দুতে অনুসৃত নীতি অবলম্বন করে কেবলমাত্র তাঁদের নামোল্লেখ করেছি, নামের পূর্বে ‘হযরত’ ও পরে ‘রাদিআল্লাহ্” লিখিনি। এ পন্থা অবলম্বন করেছি লেখার সুবিধার্থে ও সাহিত্যের রীতি অনুসারে। আমি ‘হযরত’ শব্দটির শুধুমাত্র নবী-করীমের উদ্দেশ্যই ব্যবহার করেছি এবং এভাবে তাঁর ও তাঁর সাহাবাদের মধ্যে পার্থক্য বজায় রাখিতে প্রয়াস পেয়েছি।
১৫ নভেম্বর, ১৯৬৫।
❀ ❀ ❀
ওমর! ফারুক! আখেরী নবীর ওগো দক্ষিণ বাহু!
আহ্বান নয়-রূপ ধরে এসো! -গ্রাসে অন্ধতা রাহু
ইসলাম-রবি, জ্যোতি তার আজ দিনে দিনে বিমলিন!
সত্যের আলো নিভিয়া-জ্বলিছে জোনাকীর আলো ক্ষীণ!
* * *
ইসলাম-সেত পরশ-মাণিক, তারে কে পেয়েছে খুঁজি?
পরশে তাহারা সোনা হলো যারা, তাদেরই মোরা বুঝি।
আজ বুঝি—কেন বলিয়াছিলেন শেষ পয়গম্বর
“মোর পরে যদি নবী হতো কেউ-হত সে এক উমর।”
* * *
হে খলিফাতুল মুসলেমীন! হে চীরধারী সম্রাট!
অপমান তব করিবনা আজ করিয়া নান্দী পাঠ
মানুষেরে তুমি বলেছ বন্ধু, বলিয়াছ ভাই, তাই
তোমারে এমন চোখের পানিতে স্মরি গো সর্বদাই।
— কাজী নজরুল ইসলাম