পঞ্চম অধ্যায় : বাবুরের যুদ্ধ ও বিশ্বস্তদের ভূমিকা
খাজা হুসাইন বেগ একজন উত্তম স্বভাব ও সরল প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। ওই যুগের রীতি অনুযায়ী খানা-পিনার মাহফিলে শায়রী শুনিয়ে বাহবা লুটতেন।
আল-মজাল্দ্ বেগ আমার প্রথম অভিভাবক ছিলেন। শাসন কার্যের উত্তম নিয়ম-কানুন সম্পর্কে জ্ঞান রাখতেন।
আল-মজাল্দ্, উমর শেখ মির্জা (পিতা)-র ওহদেদার ছিলেন। তিনি দু’বার বিদ্রোহ করেন, একবার অকশায়, আরেকবার তাশখন্দে। তিনি অকৃতজ্ঞ, নেমকহারাম ও অকর্মণ্য ব্যক্তি বলে প্রমাণিত হন।
ইয়াকুবের পুত্র হাসান আমার অন্যতম অভিভাবক ছিলেন। তিনি সংকীর্ণচেতা, কিন্তু তিনি উত্তম স্বভাবের ফুর্তিবাজ এবং চালাক-চতুর মানুষ ছিলেন। তাঁর কবিতার পঙ্ক্তি আজও আমার মনে আছে—
‘ও হুমাঁ, ফিরে এসো তুমি তোতার আসার আগে
এবং আমার অস্থি-মজ্জা কাকে চুষে খাওয়ায় আগে।’
‘ফিরে এসো হুমাঁ, তোতা পক্ষীর নিচেয় নামার আগে
এবং কাকের আমার হাড্ডি চুষে খেয়ে যাবার আগে॥’
তিনি সাহসী ও শিল্পকলাবিশারদ ছিলেন। পোলো খেলতে ভালোবাসতেন। তিনি ব্যাঙের মতো লাফ দিতে পারতেন। উমর শেখ মির্জার মৃত্যুর পর তিনি আমার অভিভাবকত্বের দায়ভার গ্রহণ করেন। তিনি এতই প্রভুভক্ত ছিলেন যে, বিপদের মুখোমুখি হতেও ভয় পেতেন না।
কাসিম বেগ, আন্দিজানের বেগ সেনাদের প্রধান ছিলেন, তিনিও আমার প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন। হাসান পুত্র ইয়াকুবের পর তিনি আমার শুভাকাঙ্ক্ষী ছিলেন। বীরপুরুষ ছিলেন। একবার তিনি উজবেকদের আচ্ছা রকমের বেগ লাগিয়ে দেন। তিনি কাসন অভিমুখে অগ্রসর হওয়া অশ্বারোহী সেনার উপর আক্রমণ চালিয়ে দেন। তখন তাঁর উদ্যত তরবারি তাদের দ্রুত গতিতে অগ্রসরমান বাহিনীকে চিরে দিয়েছিল। তিনি এই কাণ্ড উমর শেখ মির্জার উপস্থিতিতে ঘটিয়েছিলেন, যাতে তিনি খুবই প্রভাবিত হন।
আমার গেরিলা যুদ্ধের কারণে তিনি খুসরো শাহের অধীনে চলে যান। তবে, ১৫০৪ ঈসায়ীতে তিনি আমার কাছে আবার ফিরে আসেন। তাঁর ফিরে আসার পর আমি আমার নিজের প্রতি তাঁর পুরনো প্রভুভক্তি ও স্নেহের পরশ পাই। আমি যখন তুর্কমান হাজারার উপর দররা-এ-খাশ থেকে আক্রমণ করি, তখন তিনি একজন যুবা সৈনিকের মতো পুরো উৎসাহের সঙ্গে আমার আগে-আগে থাকেন। আমি কাবুল ফেরার পর পুরস্কার স্বরূপ তাঁকে বংগশ এলাকাটি প্রদান করি। তাঁকে আমি হুমায়ূনের অভিভাবক নিযুক্ত করি। ১৫২২ ঈসায়ীতে তিনি আল্লাহর সন্নিধানে চলে যান। তিনি একজন সৎ ও আল্লাহ-ভীরু মুসলমান ছিলেন। তাঁর ছিল পূর্ণরূপে একজন ত্যাগীমানুষের জীবন। তাঁর পরামর্শ ও সিদ্ধান্ত হতো অত্যন্ত সুন্দর। যদিও তিনি লেখাপড়া জানতেন না তা সত্ত্বেও চুটকি বলে মনোরঞ্জন করার কলা জানতেন।
বাবা বেগ কুল আরেকজন বিশ্বস্ত ব্যক্তি ছিলেন, শেখ মজদ্ বেগের মৃত্যুর পর যাঁর উপর আমার দেখাশোনার দায়ভার এসে পড়ে। মির্জা যখন আন্দিজান অভিমুখে সেনা অভিযান চালান তখন তিনি আহমদ মীরের পক্ষে চলে যান। মাহমুদ মির্জার মৃত্যুর পর সমরখন্দ ত্যাগ করেন এবং আমার কাছে চলে আসেন। তিনি আমার শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। তাদের পরাজিত করেন ও পালাতে বাধ্য করেন। তাঁর প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও যুদ্ধকলা ছিল নিপুণ। সৈন্যদের তিনি সম্পূর্ণরূপে এবং শক্তভাবে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতেন। তিনি নামাজও পড়তেন না, রোজাও করতেন না। তাঁর স্বভাব ছিল অত্যাচারী এবং হাবভাব ছিল বন্ধ্যা ভূমির মতো।
আমার নানি, আলসান দৌলত বেগমের আত্মীয় আল-দোস্ত-তগলও আমার এতটাই বিশ্বস্ত ছিলেন যতটা তিনি উমর শেখের আমলে ছিলেন। লোকেদের আশা ছিল যে, তিনি আমার অনেক কাজে আসবেন। তবে তিনি কোনো বাজ পাখি ধরা ব্যক্তির মতোই ব্যর্থ মানুষ বলে প্রতীত হন। তিনি ছিলেন শুষ্ক স্বভাব বিশিষ্ট, কৃপণ, সহজে মুসিবতে পড়ে যাওয়া, রুক্ষ ভাষা প্রয়োগকারী এমন এক ব্যক্তি, যার চেহারায় সর্বদাই মৃতবৎ ছায়া ফুটে উঠত।
সমরখন্দের তুগলক পরিবারের আরেক ব্যক্তি, কঠিন দিনগুলোতে আমার সাথি হয়েছিলেন, তাঁর নাম ছিল বাইসালঘা। গেরিলা যুদ্ধের সময়ে তিনি আমার সঙ্গে থাকেন। তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী এবং সঠিক পরামর্শদানকারী মানুষ ছিলেন।
আলী দোস্ত তগাইয়ের ছোট ভাই মীর গিয়াস তগাইও আমার বিশ্বাসভাজনদের অন্যতম ছিলেন। তিনি আগে আবু সঈদ মির্জার অধীনে ছিলেন। ১৪৯৪ ঈসায়ীতে যখন কাসন, মাহমুদ খানের অধিকারে চলে এসেছিল, তখন ঐ দিনগুলোতেও তিনি খানেদের অধীনে ছিলেন। তিনি কিছুটা জোকার স্বভাবের হাস্যরসিক মানুষ ছিলেন। কারো ক্ষতি করতে গিয়ে তিনি খুবই নির্ভীক থাকতেন।
খোরাসান সেনা চৌকিতে থাকা আলী দরবেশ খোরাসানীও আমার একজন উত্তম সহযোগী ছিলেন। তিনি একজন নির্ভীক যোদ্ধা ছিলেন। বাইশকরাম দ্বারের রক্ষায় যখন আমি তাকে মোতায়েন করেছিলাম তখন আমি তাঁর বিশ্বস্ততার সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলাম। তিনি ‘নকশে তালিক’ রচনা করেছিলেন। তাঁর লেখা খুবই স্বচ্ছ ছিল। তিনি কিছুটা তোষামোদি ও কিছুটা লোভী স্বভাবের মানুষ ছিলেন।
ইকিউরি নিবাসী কম্বর আলী মোগলও আমার সহযোগীদের অন্যতম ছিলেন। তিনি লোকেদের কাছে সিকনার নামে পরিচিত ছিলেন। এটা এ জন্যই ছিল যে, তাঁর পিতা যখন ফারগানায় এসেছিলেন তখন তিনি সেনা বাহিনীর সঙ্গে চলমান পানির পাত্র বহনের কাজে নিযুক্ত ছিলেন। পরে তাঁকে বেগ বলা হতে থাকে। তিনি এমন একজন মানুষ ছিলেন যিনি তাঁর ভাগ্যের খোদ নির্মাতা হন। তিনি সুন্দর চরিত্রের মানুষ ছিলেন। তাঁর মধ্যে দোষ বলতে একটাই ছিল যে, তিনি ছিলেন কিছুটা অলস প্রকৃতির এবং অতিশয় বাক্যবাগীশ। আমি মনে করি যে, অতি বাক্যবাগীশরা মূর্খ হয়ে থাকে। তাদের কর্মক্ষমতা কমে যায়। তার মাথায় গোবর পোরা থাকে।
উমর শেখ মির্জার মৃত্যুর সময়ে আমি আন্দিজানের চারবাগী বাগিচায় ছিলাম। আন্দিজানে এ খবর আসে রমজান মাসের ৯ তারিখে মঙ্গলবার, ৯ জুনে। আমি আমার বিশ্বস্ত ও নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে তৎক্ষণাৎ মহল অভিমুখে যাত্রা করি। আমি সোজা মহলে প্রবেশ করতে চাচ্ছিলাম কিন্তু মহলের দ্বার রক্ষক সিরাম তঘাল অগ্রসর হয়ে আমার ঘোড়ার লাগাম ধরলেন এবং আমাকে ইবাদতগাহের দিকে নিয়ে গেলেন। অবশ্যই, ঐ সময় তিনি হয়তো ভেবে থাকবেন যে, আহমদ মির্জা যদি সসৈন্যে সেখানে চলে আসেন (আমার পিতার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে) তখন আন্দিজানের সকল বেগ (বেগ দলপতিগণ)-কে তাঁর সামনে অবশ্যই হাজির হতে হবে। এমতাবস্থায়, না জানি আমার পিতার মৃত্যুশোক ও অন্তিম সৎকারে আমি সামিল হতে পারব কি-না?
ইবাদতগাহে, আমার পিতার মৃত্যুর পরের জন্য পঠিতব্য দোয়ার পর আমি ঔজক-এ সৎ-ভাই আহমদ খান ও মাহমুদের কাছে গেলাম। খাজা মওলানা-এ-কাজীরও মৃত্যু-সংবাদ শুনে চলে আসার কথা আশা করা হচ্ছিল। কিন্তু তিনিও ফারগানায় এলেন না, তখন বেগ সরদাররা আমার জন্য আনত মস্তক হলেন। তাঁরা খাজা মাহমুদ, যিনি আমার পিতার আমলের দর্জি ছিলেন, তাঁকে ডেকে আনার জন্য আমাকে পাঠালেন। তিনি লোকেদের সকল প্রকারের আশঙ্কা নিবারণের কাজ করলেন। (আশঙ্কা এ জন্য যে, আহমদ মির্জার দ্বারা ক্ষমতা দখলের লড়াই যেন ছড়িয়ে দেওয়া না হয়)।
আমি কেল্লায় এলাম। ওখান থেকে ইবাদতগাহে শোকের রসম পালন করতে গেলাম। পিতার আমলের বেগ দলপতিরা আমাকে পূর্ণ সমর্থন জানালেন, সে জন্য পিতার উত্তরাধিকার স্বরূপ আমি ক্ষমতা লাভ করলাম। ইয়াকুবের পুত্র হাসান ও কাসিম আমার পক্ষ মজবুত হয়ে যাওয়ার পর আমার কাছে এলেন। তাঁরাও সোৎসাহে অন্য লোকেদের সঙ্গে আমাকে কেল্লায় নিয়ে গেলেন।
ইতোমধ্যে এ খবরও ছড়িয়ে পড়ল যে, আহমদ মির্জা, আউসা-টিপা, খুজন্দ ও মার্খম অতিক্রম করেছেন। তবে তিনি আন্দিজান পর্যন্ত আসতে পারেননি।
খাজা কাজী ও ঔজিগ হাসান, যিনি খাজা হুসাইনের ভাই ছিলেন, তাঁদের আন্তরিকতাপূর্ণ সহযোগিতাও আমি পেয়ে গেলাম।
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের দ্বারা বাবুরকে সাহায্য
সর্বশক্তিমান আল্লাহর সিদ্ধান্ত আমার পক্ষে ছিল। তাঁর কৃপা ছিল আমার উপর। ওই সময়ে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যার উল্লেখ এখানে একান্ত আবশ্যক। যার পক্ষ থেকে আমার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আশংকা ছিল তিনি খিবা নামক স্থানে অগ্রসর হয়ে আন্দিজান পর্যন্ত পৌঁছাতে পারতেন না। ঐ সময়ে ওই এলাকার ভূমি, অধিক বর্ষার কারণে কর্দমাক্ত হয়ে পড়েছিল। অবশিষ্ট ছিল শুধু একটি পুল, তাও এতটা পিছল যে, তার উপর দিয়ে ঘোড়া বা উটেদের পার হয়ে আসা সম্ভব ছিল না।
এ ধরনের আরো একটি ঘটনা ঘটে, তা হলো পশুদের মধ্যে ভয়ংকর মহামারী ছড়িয়ে পড়ে। তারা দলে দলে মারা পড়তে থাকে।
আমার সিপাই ও কৃষকরা আমার জয়ের জন্য এরকমই তৈরি ছিল যে, জীবন-মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য বলে মানতেও পিছপা ছিল না। তারা নিজেদের শেষ নিশ্বাসটি পর্যন্ত লড়ার জন্য প্রস্তুত ছিল।
এমতাবস্থায়, আহমদ মির্জার বাহিনী অগ্রসর হওয়ার আর কোনো সুযোগই পেল না।
মির্জার মা শাহ সুলতান বেগম, জাহাঙ্গীর মির্জা ও হেরেমের অন্য মহিলারা অকশা থেকে আন্দিজানে এলেন। বাহাদুর সৈনিকেরা ও বেগ দলপতিরা তাদের অভ্যর্থনা জানালেন। শোক পালনের রীতি পুরো করার পর খাদ্য ও রসদ সামগ্রী দীন-দরিদ্র ও আশ্রয়হীনদের মধ্যে বণ্টন করা হলো।
এ সবের মধ্যে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতিও পুরো মাত্রায় মনোযোগ রাখা হচ্ছিল। আহমদ মির্জা, যিনি আন্দিজানের বাইরে থেকেই লোক-লস্কর নিয়ে ফিরে গিয়েছিলেন, ফেরার পথেই তাঁর শরীর স্বাস্থ্য অকস্মাৎ ভেঙে পড়ে। প্রচণ্ড জ্বর হয় এবং টিপার নিকট অকশায় পৌঁছাতেই তিনি এই নশ্বর জগৎ-সংসার ছেড়ে অনন্তের উদ্দেশে যাত্রা করেন। ১৪৯৪ ঈসায়ী সনের মধ্য জুলাইয়ে তাঁর জীবনাবসান হয়। ঐ সময়ে তাঁর বয়স ছিল ৪৪ বছর।
তিনি আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে মন-প্রাণ দিয়ে স্বীকার করতেন। তিনি শরাব পানের দিনগুলোতেও আল্লাহর ইবাদত করতে কখনোই ভুলতেন না। পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ তিনি নিয়মিত পড়তেন। তিনি খাজা উবাইদুল্লাহর অনুসারী ছিলেন। তিনি তাঁর দ্বারা কথিত দীনের বিধানাবলি নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতেন।
ওই দিনগুলোতে তিনি খুব বেশি পরিমাণে ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করতেন, যে সময়ে খাজা তাঁর মেহমান হতেন। লোকে বলে, ওই সময়ে খাজার সঙ্গে হাঁটুতে হাঁটু ঠেকিয়ে বসে থাকা অবস্থায় তাঁকে কখনো দেখা যায়নি। তিনি তাঁর পদতলে বসতেই বেশি পছন্দ করতেন।
তিনি লেখাপড়া জানতেন না। অবশ্য যে তালিম নিতেন তা সর্বদাই মনে রাখতেন। খাজা যখন তাঁর অতিথি হতেন তখন তিনি তাঁর সঙ্গে ছায়ার মতো অবস্থান করতেন। ওয়াদা রক্ষায় তিনি পাক্কা ঈমানদার ছিলেন। সাহসী ছিলেন। তিনি স্বহস্তে কিছুই করা পছন্দ করতেন না। তিনি আদেশ দিয়ে তা যথারীতি পালন হচ্ছে কি-না তা দেখার মানুষ ছিলেন। তীর-ধনুক দিয়ে হাঁস পাখি শিকার করতে তিনি খুব আনন্দ লাভ করতেন। তিনি বাজ ছেড়ে তোতা শিকার করতেও পছন্দ করতেন। তাঁর সম্পর্কে লোকে বলে, তিনি গোসলখানাতেও এবং ঘনিষ্ঠ লোকেদের মধ্যেও নিজের পা দুটিকে নির্বস্ত্র হতে দিতেন না। তার একমাত্র কারণ এটাই হতে পারে যে, তাঁর স্বভাব-প্রকৃতি এই রকমই ছিল। তাঁর স্বভাব-প্রকৃতির এটাও একটা ভিন্ন দিক ছিল যে, তিনি যখন শরাব পান করতে শুরু করতেন তখন বিশ-ত্রিশ দিন পর্যন্ত একটানা পান করে পুরো নেশাখোর হয়ে যেতেন আর যখন শরাব পান ত্যাগ করতেন তখন বিশ-ত্রিশ দিন পর্যন্ত শরাবের পেয়ালা পর্যন্তও স্পর্শ করতেন না।
তিনি চারটি যুদ্ধ করেন। প্রথম যুদ্ধ করেন বলখ জামাল আরগুনের ছোট ভাই নিয়ামত আরগুনের সঙ্গে অবুরতুজিতে, যাতে তিনি জয়লাভ করেন। দ্বিতীয় যুদ্ধ উমর শেখ মির্জার সঙ্গে খাওয়ামে, এতেও তিনি জয়লাভ করেন। তৃতীয় যুদ্ধ তিনি মাহমুদ খানের সঙ্গে তাশখন্দের চীর নামক স্থানে করেন ১৪৯৬ ঈসায়ীতে। আসলে যুদ্ধ না হয়ে এটি ছিল একটি সংঘর্ষ। এতে সামনা-সামনি সরাসরি যুদ্ধ না হয়ে, এক-এক, দুই-দুই করে উভয় পক্ষের সৈনিকেরা একে অন্যের উপর হামলা করতে থাকত, শক্তি পরীক্ষা হতো। এই শক্তি পরীক্ষায় তাঁর সামরিক শক্তি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চতুর্থ যুদ্ধ হায়দার কুকুল দাস মোগলের সঙ্গে মটমিলক নামক স্থানে হয়, যাতে তিনি জয়লাভ করেন।
তিনি তাঁর পিতার কাছ থেকে সমরখন্দ ও বুখারা লাভ করেছিলেন। তাশখন্দ ও সেরাম তিনি তাঁর শক্তির বলে জয়লাভ করেছিলেন। যাকে তিনি তার ছোট ভাই উমর শেখ মির্জাকে দিয়ে দিয়েছিলেন। খোজেন্দ ও আওসারিয়া তাঁর অধিকারে অনেক দিন পর্যন্ত থাকে।
তাঁর দুই পুত্র অতি অল্প বয়সে আল্লাহর সন্নিধানে চলে যান। তাঁর পাঁচটি কন্যা ছিল, যাঁদের মধ্যে চতুর্থ মেয়েটি কুতক বেগমের গর্ভে জন্মেছিলেন। রাজিয়া সুলতান বেগম সর্ব জ্যেষ্ঠ কন্যা ছিলেন। তিনি তাঁর সৌন্দর্যের জন্য মশহুর ছিলেন। তাঁর এক পুত্র সন্তান জন্মেছিল, যিনি বাবা খান নামে সুপরিচিত ছিলেন।
মেহের নিগার খানম তাঁর প্রথম পত্নী ছিলেন। তিনি ইউনুস খানের বড় মেয়ে তথা আমার মায়ের সহোদরা বোন ছিলেন।