সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ
কর্নেল সমগ্র
জিরো জিরো জিরো
আমার বৃদ্ধ বন্ধু প্রকৃতিবিজ্ঞানী কর্নেল নীলাদ্রি সরকারের ঘরে ঢুকেই আমি হতবাক। তিনি চাঁদের হাট বসিয়ে মৌজ করছেন। এ যে জলে শিলা ভেসে যায়, বানরে সঙ্গীত গায়, দেখিলেও না হয় প্রত্যয়!
না, কর্নেল মোটেও বদমেজাজী মানুষ নন। কিংবা প্রেমে ব্যর্থ, তাই নারী বিদ্বেষী গোঁয়ার গোবিন্দও নন। বরং সুরসিক বলে খ্যাতি আছে ওঁর। বিশেষ করে সুন্দরী যুবতীদের প্রতি ওঁর পক্ষপাতদুষ্ট স্নেহ সুপ্রচুর। কিন্তু, আমার বিস্ময়ের কারণ অন্য। ইলিয়ট রোডের এই অ্যাপার্টমেন্টে অনেকদিন ধরে যাতায়াত করছি, কখনও কোনও সুন্দরী যুবতীকে এখানে পদার্পণ করতে দেখিনি, তা নয়। সচরাচর বেশি যাঁরা আসেন, তাঁরা রাশভারি মানুষ সব। বিষয়ী এবং কেজো প্রকৃতির লোক। কোনও না কোনও গূঢ় মতলব নিয়েই তারা আসেন।
আজ যাদের দেখছি, এরা একেবারে উল্টো প্রকৃতির। এক পলকেই আন্দাজ করেছি—খবরের কাগজের রিপোর্টারের অভ্যাসলব্ধ চাতুর্যেই, এরা সংখ্যায় তিন এবং আঠারো থেকে বাইশটি বসন্ত ঋতু দেখেছে। প্রত্যেকেরই চেহারায় উচ্চমধ্যবিত্ত শ্রেণীর চিকণ মেদ ও শ্রী পরিস্ফুট। এরা কথায় কথায় প্রচুর হাসছে। প্রচুর কথা বলার চেষ্টা করছে। এবং কর্নেল হংস মধ্যে বক যথা বসে আছেন।
আমাকে দেখেই অবশ্য কয়েক মুহূর্তের জন্য স্তব্ধতা জাগল। তারপর কর্নেল খুব খুশি দেখিয়ে বলে উঠলন—হ্যাল্লো ডার্লিং! এসো, এসো তোমার কথাই ভাবছিলুম।
নিছক মিথ্যা, তাতে ভুল নেই। গম্ভীর হয়ে সামান্য দূরে একটা গদীআঁটা চেয়ারে বসে পড়লুম। তারপর বললুম—আমার কথা ভাববার ফুরসৎ পাচ্ছিলেন এতে সন্দেহ আছে।
কর্নেল হাততালি দিয়ে উচ্চহাসি হাসলেন। ব্র্যাভো জয়ন্ত! ঠিকই বলেছ।
যুবতী তিনটি আমাকে দেখছিল। আমি সামনের টেবিলে চোখ রাখলুম। তারপর কর্নেলকে বলতে শুনলুম—মাই ডিয়ার লেডিস অ্যাণ্ড জেন্টলমেন……
একজন মেয়ে বলে উঠল— কর্নেল কর্নেল! এখানে জেন্টলম্যান কিন্তু একজনই।
অন্য একজন বলল—সোনালী, তুই কিছু বুঝিস না। কর্নেল নিজেকেও কাউন্ট করছেন যে!
আবার প্রচুর হাসিতে ঘর ভরে গেল। কর্নেল গলা ঝেড়ে শুরু করলেন—যাই হোক, পরিচয় করিয়ে দেওয়া গৃহকর্তা হিসেবে আমার কর্তব্য ইনি হচ্ছেন, দৈনিক সত্যসেবকের স্বনামধন্য জয়ন্ত চৌধুরী।
আমার চোখের ভুল হতেও পারে, হয়তো ইচ্ছাকৃত চিন্তা বা উইশফুল থিংকিং গোছের কিছু মনে হলো ওদের চোখে বিস্ময় মেশানো শ্রদ্ধা ফুটে উঠল।
—আর জয়ন্ত, ইনি সোনালী ব্যানার্জি, ইনি রত্না চ্যাটার্জি—সোনালীর মাসতুতো বোন। আর ইনি দীপ্তি চক্রবর্তী। দুজনের বন্ধু, সহপাঠিনী। এঁরা কিন্তু কেউ কলকাতার বাসিন্দা নন। রানীডিহি নামে প্রখ্যাত পার্বত্য শিল্পাঞ্চলে সম্প্রতি একটি তৈলশোধনাগারও গড়ে তোলা হয়েছে। শ্রীমতি সোনালীর বাবা শ্ৰীঅনিরুদ্ধ ব্যানার্জি তার ডিরেক্টর। আমার বিশেষ স্নেহভাজন বন্ধু। এবং…‥।
সোনালী হাত তুলে হাসতে হাসতে বলল—কর্নেল, যথেষ্ট হয়েছে। আমরা কেউই জয়ন্তবাবুর মতো খ্যাতিমান নই। অত বলার কিছু নেই।
কর্নেল হতাশ ভঙ্গিতে বসে পড়লেন এবং চুরুট ধরালেন। কর্নেলের ভাষণের মধ্যেই আমরা পরস্পর নমস্কার পর্ব সেরে নিয়েছি। এবার আমিও সিগারেট ধরালুম। এই সময় চোখে পড়ল, ওরা মহিলাসুলভ সতর্ক ভঙ্গিতে কিছু বলাবলি করছে—সেটা চোখের ভাষাতেই, এবং তাদের লক্ষ্য যে আমি, তাতে কোনও ভুল নেই। তারপর সোনালী কর্নেলের দিকে তাকাল, ঠোঁটে চাপা কুণ্ঠিত হাসি কর্নেল! জয়ন্তবাবু যদি কিছু মনে না করেন…।
ধুরন্ধর বৃদ্ধ খুশি হয়ে বলে উঠলেন—কিচ্ছু মনে করবে না ও। সোনালী, তুমি ওকে স্বচ্ছন্দে তোমার জন্মদিনের নেমন্তন্নটা করতে পারো। বরং জয়ন্তের মতো একজন প্রাণবন্ত যুবক থাকলে তোমাদের অনুষ্ঠানের ষোলোকলা পূর্ণ হবে।
আবার হাসির ধূম পড়ল। সোনালী তার ব্যাগ থেকে একটা সুদৃশ্য কার্ড এবং খাম বের করে সযত্নে আমার নাম লিখল। লিখে আমার কাছে এসে বিনয় দেখিয়ে বলল—হয়তো অডাসিটি হচ্ছে, তবু আপনাকে পেলে আমি—আমরা সবাই খুব খুশি হবো। প্লীজ, আসতে ভুলবেন না।
একটু দ্বিধা দেখিয়ে বললুম—কিন্তু মুশকিল কি যানেন? রিপোর্টারের চাকরি করি। কখন কোথায় কোন অ্যাসাইনমেন্ট এসে কাঁধে চাপে বলা যায় না!
কর্নেল প্রায় ধমক দিয়ে বলে উঠলেন—জয়ন্ত, বাজে বকো না! রানীডিহি এবং আমার কন্যাবৎ এই মেয়ে দুটোই মর্ত্যের এক দুর্লভ বস্তু। সুতরাং কোনওরকম বাচালতা না করে কার্ডটি পকেটেস্থ করো। এবং তোমার ক্ষুদে রিপোর্টিং বহিটি বের করে তারিখটা লিখে রাখো। লেখ, ১৭ সেপ্টেম্বর, সকাল সাড়ে সাতটায় হাওড়ায় ট্রেন। দশ নম্বর প্লাটফর্ম। আমার বাসায় আসার দরকার নেই। কারণ, তাহলে তুমি ট্রেন ফেল করবেই। তারও কারণ, তুমি লেটরাইজার।…‥
আরও কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে ওরা চলে গেল। তখন কর্নেলের কাছে গিয়ে বসলুম। বললুম—হ্যালো ওল্ড ম্যান! এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য কী?
—কিসের?
—এই নিছক একটি মেয়ের জন্মদিনের অনুষ্ঠানের তিনশো কিলোমিটার ভ্রমণের?
কর্নেল চোখে মুগ্ধতা ফুটিয়ে বললেন—জয়ন্ত, ডার্লিং! রানীডিহির সৌন্দর্য তুলনাহীন। মর্ত্যের স্বর্গ।
—হাতি! আমি শুনেছি, রানীডিহি শিল্পনগরী। আকাশ বাতাস কুচ্ছিত ধোঁয়া আর গ্যাসে ভরা। নরক বিশেষ।
কর্নেল মৃদু হেসে বললেন—হ্যাঁ। কিন্তু সোনালীদের কোয়ার্টার যেখানে অবস্থিত, সেখানে গেলে পৃথিবীর যাবতীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নমুনা তুমি পাবে। নদী, পর্বতমালা, অরণ্য…
—এবং দুর্লভ প্রজাপতি পাখি কীটপতঙ্গ!
—ডার্লিং, আমি কথা দিচ্ছি, এবার আমি প্রকৃতিবিদ হিসাবে রানীডিহি যাবো না। যাবো…
ওঁকে থামতে দেখে বললুম—হুঁ, বলুন।
—যাবো আমার আসল মূর্তিটা পোশাকের তলায় লুকিয়ে নিয়ে।
—তার মানে?
—প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটার হিসেবেই।
চমকে উঠে বললুম—সে কী! কেন?
কর্নেল চোখ বুজে দুলতে দুলতে বললেন—একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটেছে জয়ন্ত। এটা না ঘটলে শ্রীমতী সোনালীর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আমি অতদূরে কিছুতেই যেতুম না। স্বীকার করছি, জায়গাটার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের খ্যাতি আছে। কিন্তু তার চেয়েও একটা জরুরী বিষয় সম্প্রতি আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। তোমাকে আগাগোড়া সবটা বলছি। ভাল করে শোনো।
কর্নেল আমাকে যা শোনালেন, তা সংক্ষেপে এই: এক সপ্তাহ আগে অর্থাৎ ৩রা সেপ্টেম্বর সোনালীর বাবা অনিরুদ্ধবাবু কর্নেলের সঙ্গে দেখা করেন। তারও দুদিন আগে রানীডিহিতে ওঁর কোয়ার্টারে একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে, তাই কর্নেলের পরামর্শ চাইতে আসেন। সেদিন ছিল রবিবার। বেলা একটায় লাঞ্চের পর উনি অভ্যাস মতো গড়াচ্ছেন, পরিচারিকা এসে খবর দেয় যে এক ভদ্রলোক জরুরী ব্যাপারে দেখা করতে এসেছেন। অনিরুদ্ধবাবু বিরক্ত হন। এটা দেখা করার সময় নয়। তাছাড়া উনি কোয়ার্টারে অপরিচিত লোকের সঙ্গে দেখা করেন না। অফিসেই যেতে বলেন। পরিচারিকা সব জানে এবং বুঝিয়ে বলা সত্ত্বেও সেই লোকটি শোনেনি। বলেছে, দেখা না করলেই চলবে না। এবং এই দেখা করার পিছনে নাকি অনিরুদ্ধবাবুরই বিশেষ স্বার্থ আছে। অনিরুদ্ধবাবু বিরক্ত হলেও কৌতূহল দমন করতে পারেননি। তাই বলেন—ঠিক আছে, তুমি আধঘণ্টা অপেক্ষা করতে বলল। এই আধঘণ্টা ভাতঘুম বাঙালীর মজ্জাগত এবং অনিরুদ্ধবাবু মনে মনে ভীষণ বাঙালী। যাইহোক, পরিচারিকা গিয়ে তাকে অপেক্ষা করতে বললে সে ততক্ষণ সময় কাটানোর জন্যে একটা বই চায়। এটাই অদ্ভুত যে সে অন্য কোনও বই পছন্দ করেনি। আলমারিতে পশ্চিম এশিয়ার অর্থনীতি নামে প্রকাণ্ড ইংরেজি বই ছিল, সেটাই চায়। তারপর পরিচারিকা বইটি তাকে দিয়ে চলে আসে। আধঘণ্টা পরে অনিরুদ্ধবাবু ড্রয়িং রুমে যান। কিন্তু লোকটিকে দেখতে পান না। টেবিলে সেই বইটি পড়ে থাকতে দেখেন। বইটি রাখতে গিয়ে হঠাৎ লক্ষ্য করেন, একটা ভাঁজ করা কাগজ উঁকি মারছে ফাঁকে। কাগজটা খুলে পড়ার পর হতভম্ব হয়ে যান উনি। তাতে ডটপেনে ইংরেজিতে লেখা আছে : যা বলতে এসেছিলুম, বলা হলো না। ওরা আমাকে ফলো করে এসেছে টের পেলুম। তাই চলে যাচ্ছি। আজ রাত এগারোটায় আপনি জলের ট্যাংকের পিছনে আমার সঙ্গে দেখা করুন। আমি সেখানে থাকব। আপনি কাকেও দেখামাত্র বলবেন—জিরো নাম্বার? সে যদি বলে—জিরো জিরো জিরো, তাহলে জানবেন সে আমিই। অন্য কিছু ঘটলে তখুনি পালিয়ে আসবেন। জিরো জিরো জিরো। ভুলবেন না।
নামের বদলে তিনটে শূন্য বসানো। বলা বাহুল্য, অনিরুদ্ধ এই অদ্ভুত চিঠি পেয়ে খুব উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। ভাবেন, পুলিশের কাছে যাবেন। কিন্তু শেষ অব্দি কৌতূহল তার সব মতলব দাবিয়ে রাখে। যথাসময়ে সেই জলের ট্যাংকের কাছে যান। জায়গাটা খেলার মাঠ ও বড় রাস্তার সঙ্গমে রয়েছে। কিছু ঝোপঝাড় ও পাথরও আছে। উনি গিয়ে একটা লাশ দেখতে পান। পিঠে ছুরিমারা হয়েছে। তখনও রক্ত তাজা। সুতরাং ভীষণ ভয় পেয়ে পালিয়ে আসেন।
সকালে লাশটার খবর পেয়ে পুলিশ আসে। অনিরুদ্ধবাবু নিজেকে এ ব্যাপারে জড়াতে চাননি। লোকটাকে সনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। যাইহোক, অনিরুদ্ধবাবুর মনে পড়ে যায় কর্নেল নীলাদ্রি সরকারের কথা। পরদিনই কলকাতা এসে দেখা করেন। সেই চিঠিটাও নিয়ে আসেন।
কর্নেল এই সাতটা দিন কি সব করেছেন, আমাকে কোনওরকম আভাস দিলেন না। শুধু বুঝলাম, হঠাৎ এই প্রখ্যাত ব্যক্তিটি রানীডিহি হাজির হলে পুলিশমহলে ঔৎসুক্য জাগতে পারে এবং সম্ভাব্য শত্রুপক্ষ—যারা সেই অজ্ঞাতনামা লোকটিকে খুন করেছে, তারাও সতর্ক হয়ে যায়—তাই সোনালীর জন্মদিনের অছিলা। অবশ্য, সোনালী এসব ব্যাপার জানেই না। সে তার জন্মদিনে আর সবাইকে নেমতন্ন করার জন্য কলকাতা এসে বাবার কথামতো কর্নেলকেও নেমতন্ন করে গেল।…‥
কর্নেল চুপ করলে বললুম—ব্যাপারটা রহস্যময়। আমার মনে হচ্ছে, সেই সঙ্গে বিপজ্জনকও বটে। সচরাচর আপনি যে সব ব্যাপারে নাক গলান এবং কৃতিত্ব অর্জন করেন, এটা তত সহজ মোটেও নয়। আপনার লাইফ রিক্সের কথা ভেবেছেন তো?
কর্নেল একটু হাসলেন। কিছু বললেন না।
বললুম—এসব ব্যাপারে নাক না গলানোই উত্তম, আমার মতো সরকারী লোকেরা যা পারে, করুক! আপনি গোয়েন্দাবিদ্যায় যত ধুরন্ধরই হোন, ভুলে যাবেন না যে এই কেসে খুনী কোনও ব্যক্তিবিশেষ নয়, সম্ভবত একটা দল এবং এতে কোনও ব্যক্তিগত অভিসন্ধি কাজ করছে না। কে বলতে পারে, কুখ্যাত মাফিয়া দলের মতো কোনও আন্তর্জাতিক গুপ্তদল এর পেছনে আছে কি না? তাদের কী উদ্দেশ্য, তাও তো আপাতত আপনার জানা নেই।
কর্নেল টাকে হাত বুলিয়ে বললেন—তোমার পরামর্শ খুব উৎকৃষ্ট জয়ন্ত। যুক্তি আছে। তোমার অনুমানও সম্ভবত ঠিক।
উৎসাহে বললুম—আলবাৎ ঠিক। একটা ব্যাপার তো পরিষ্কার বোঝা যায়, লোকটা সেই দলেরই লোক। কোনও কথা ফাঁস করে দিতে চেয়েছিল অনিরুদ্ধবাবুকে। তা টের পেয়ে তাকে মেরে ফেলল ওরা। তাছাড়া…‥
কর্নেল সায় দিয়ে বললেন—বলে যাও ডার্লিং!
—অনিরুদ্ধবাবু কে? না—উনি এক তৈল শোধনাগারের ডিরেক্টর। দ্বিতীয় পয়েন্ট লক্ষ্য করুন: লোকটা যে বই বেছে নিয়ে চিঠি রেখেছিল, সেটা পশ্চিম এশিয়ার অর্থনীতি। এবং পশ্চিম এশিয়ার অর্থনীতি একান্তভাবে তৈলশিল্পকেন্দ্রিক। এই যোগাযোগ কি আপনি আকস্মিক মনে করছেন?
কর্নেল সপ্রশংস দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন—অপূর্ব জয়ন্ত! এজন্যেই সব কেসে আজকাল তোমাকে সঙ্গে নিয়ে যাই। ব্রিলিয়ান্ট! বলে যাও ডার্লিং!
সবার আগে সেই বইটা আপনার পরীক্ষা করা দরকার!
—হ্যাঁ!
—অনিরুদ্ধবাবুর উচিত ছিল, রিফাইনারিতে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করা।
—কারণ?
—আমার ধারণা, ওখানে কোনও অন্তর্ঘাত ঘটাবার ষড়যন্ত্র চলেছে। সে কথাটাই লোকটা বলতে এসেছিল। সুযোগ পায়নি। তাই দেখা করতে বলে ওইভাবে। এবং খুন হয়ে যায়।
—রিফাইনারিতে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা তখনই করেছেন অনিরুদ্ধবাবু।
—আমার আরও ধারণা, রিফাইনারির অফিসার ও কর্মীদের মধ্যে ওই দলের লোক আছে।
—অসম্ভব নয়, জয়ন্ত।
আমি আরও কিছু তত্ত্ব খুঁজছি, দেখি কর্নেল উঠে দাঁড়ালেন এবং মেঝেয় কয়েকপা হেঁটে আমার দিকে হঠাৎ ঘুরে হো হো করে হেসে উঠলেন। বললুম— আমাকে তাচ্ছিল্য করতে পারেন, কিন্তু আমি বাজী রেখে বলতে পারি—একচুলও অযৌক্তিক কথা বলিনি।
কর্নেল বললেন—তাহলে জয়ন্ত, সব রহস্য ফাঁস হয়ে গেছে বলা যায়। কিন্তু একটা পয়েন্ট তুমি আমল দিচ্ছ না যে যদি কোনও অন্তর্ঘাত সম্পর্কে অনিরুদ্ধবাবুকে কেউ সতর্কই করতে চাইত, তাহলে চিঠি বা ফোনেই জানাতে পারত! দেখা করতে আসা, ওই বিশেষ বইটা চেয়ে নেওয়া এবং…জয়ন্ত, শুধু তাই নয়, যে পাতায় চিঠিটা ছিল, তার পেজমার্ক কত জানো? থ্রি জিরো—মানে তিরিশ!
—বলেন কী!
—ওই পাতায় কী আছে, তাও জেনে নিয়েছি। চ্যাপ্টারটা পুরো লেখা হয়েছে সেই সুবিখ্যাত টি. ই. লরেন্স সাহেবকে নিয়ে। অর্থাৎ লরেন্স অফ অ্যারাবিয়ার কার্যকলাপ। আশা করি, লরেন্স সম্পর্কে তুমি বিশদ জানো। এমনকি সিনেমাতেও তার ক্রিয়াকলাপ দেখে থাকবে।
হাত তুলে বললুম—দেখেছি। আশ্চর্য ছবি!