চন্দ্রনাথ

চন্দ্রনাথ একজন উচ্চ বংশীয় ব্রাহ্মণ। সম্প্রতি তার পিতা গত হয়েছে। সে কাশীতে তার পিতার এক পুরনো ভৃত্যের বাড়িতে উঠে। সেখানে তার সরযূর সাথে দেখা হয়। সরযূর মা সুলোচনা সেই ভৃত্যের বাড়িতে কাজ করে। চন্দ্রনাথ সরযূকেContinue Reading

প্রথম পরিচ্ছেদ : চন্দ্রনাথের পিতৃ-শ্রাদ্ধ

চন্দ্রনাথের পিতৃ-শ্রাদ্ধের ঠিক পূর্বের দিন কি একটা কথা লইয়া তাহার খুড়া মণিশঙ্কর মুখোপাধ্যায়ের সহিত তাহার মনান্তর হইয়া গেল। তাহার ফল এই হইল যে, পরদিন মণিশঙ্কর উপস্থিত থাকিয়া তাঁহার অগ্রজের পারলৌকিক সমস্ত কাজের তত্ত্বাবধান করিলেন, কিন্তুContinue Reading

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ : দিন-দুই পরে

দিন-দুই পরে আহারে বসিয়া চন্দ্রনাথ বামুন-ঠাকরুনের মুখের পানে চাহিয়া সহসা জিজ্ঞাসা করিল, আপনারা কোন্‌ শ্রেণী? বামুন-ঠাকরুনের মুখখানি বিবর্ণ হইয়া গেল। এ প্রশ্নের হেতু তিনি বুঝিলেন। কিন্তু যেন শুনিতে পান নাই, এই ভাবে তাড়াতাড়ি দাঁড়াইয়া বলিলেন,Continue Reading

তৃতীয় পরিচ্ছেদ : তাহার পর কতদিন

তাহার পর কতদিন অতিবাহিত হইয়া গেল। সরযূ বড় হইয়াছে। স্বামীকে সে কত যত্ন করিতে শিখিয়াছে। চন্দ্রনাথ বুঝিতে পারে যে, সে কথা কহিবার পূর্বেই সরযূ তাহার মনের কথা বুঝিয়া লয়। কিন্তু সে যদি শুধু দাসী হইত,Continue Reading

চতুর্থ পরিচ্ছেদ : চন্দ্রনাথের মাতুলানী

চন্দ্রনাথের মাতুলানী হরকালীর মনে আর তিলমাত্র সুখ রহিল না। ভগবান তাহাকে এ কি বিড়ম্বনার মধ্যে ফেলিয়া দিলেন। এ সংসারটা কাহারো নিকট কণ্টকাকীর্ণ অরণ্যের মত বোধ হয়, তাহাদের চেষ্টা করিয়া এখানে একটা পথের সন্ধান করিতে হয়।Continue Reading

পঞ্চম পরিচ্ছেদ : বয়সের সন্মান-জ্ঞান

বয়সের সন্মান-জ্ঞানটা যেমন পুরুষের মধ্যে আছে, স্ত্রীলোকদিগের মধ্যে তেমন নাই। পুরুষের মধ্যে অনেকগুলি পর্যায় আছে—যেমন দশ, কুড়ি, ত্রিশ, চল্লিশ, পঞ্চাশ, ষাট প্রভৃতি। ত্রিশবর্ষীয় একজন যুবা বিশ বছরের একজন যুবার প্রতি মুরুব্বিয়ানার চোখে চাহিয়া দেখিতে পারে,Continue Reading

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ : তখনও কথাটা

তখনও কথাটা প্রকাশ পায় নাই। হরিদয়াল ঘোষালের সন্দেহের মধ্যেই প্রচ্ছন্ন ছিল। একজন ভদ্রলোকের মত দেখিতে অথচ বস্ত্রাদি জীর্ণ এবং ছিন্ন আজ দুই-তিন দিন হইতেই বামুন-ঠাকরুন সুলোচনা দেবীর সহিত গোপনে পরামর্শ করিয়া যাইতেছিল। সুলোচনা ভাবিত, হরিদয়ালContinue Reading

সপ্তম পরিচ্ছেদ : সুলোচনা কোথায়?

কিন্তু সুলোচনা কোথায়? আজ তিন দিন ধরিয়া হরিদয়াল আহার, নিদ্রা, পূজা-পাঠ, যাত্রীর অনুসন্ধান, সব বন্ধ রাখিয়া তন্ন তন্ন করিয়া সমস্ত কাশী খুঁজিয়াও যখন তাহাকে বাহির করিতে পারিলেন না, তখন ঘরে ফিরিয়া আসিয়া শিরে করাঘাত করিয়াContinue Reading

অষ্টম পরিচ্ছেদ : হরিদয়াল সমস্ত কথা

হরিদয়াল সমস্ত কথা পরিষ্কার করিয়া মণিশঙ্করকে লিখিয়া দিয়াছিলেন। সেই জন্যই তাঁহার সহজেই বিশ্বাস হইল, সংবাদটা অসত্য নহে। কিন্তু বুঝিতে পারিলেন না, এস্থলে কর্তব্য কি? এ সংবাদটা তাঁহার পক্ষে সুখেরই হউক বা দুঃখেরই হউক, গুরুতর তাহাতেContinue Reading

নবম পরিচ্ছেদ : চন্দ্রনাথ কহিল

চন্দ্রনাথ কহিল, কৈ চিঠি দেখি? মণিশঙ্কর নিঃশব্দে বাক্স খুলিয়া একখানি পত্র তাহার হাতে দিলেন। চন্দ্রনাথ সমস্ত পত্রটা বার-দুই পড়িয়া শুষ্ক-মুখে প্রশ্ন করিল, প্রমাণ? রাখালদাস নিজেই আসচে। তাঁর কথায় বিশ্বাস কি? তা বলতে পারিনে। যা ভালContinue Reading

দশম পরিচ্ছেদ : সেই রাত্রে সরযূ

সেই রাত্রে সরযূ নিজের ঘরে ফিরিয়া আসিয়া কাঁদিয়া ফেলিয়া মনে মনে কহিল, আমি বিষ খেতে কিছুতেই পারব না। একা হ’লে মরতে পারতাম কিন্তু আমি ত আর একা নই—আমি যে মা। মা হয়ে সন্তান বধ করবContinue Reading

একাদশ পরিচ্ছেদ : সমস্ত রাত্রি

সমস্ত রাত্রি মণিশঙ্কর ঘুমাইতে পারিলেন না। সারারাত্রি ধরিয়াই তাঁহার দুই কানের মধ্যে একটা ভারী গাড়ির গভীর আওয়াজ গুমগুম শব্দ করিতে লাগিল। প্রত্যুষেই শয্যা ত্যাগ করিয়া বাহিরে আসিলেন। দেখিলেন, গেটের উপর একজন অপরিচিত লোক দীনবেশে অর্ধ-সুপ্তাবস্থায়Continue Reading

দ্বাদশ পরিচ্ছেদ : হরিদয়ালের বাটীতে

হরিদয়ালের বাটীতে পুরাতন দাসীটি পর্যন্ত নাই। বামুন-ঠাকরুন ত সম্পূর্ণ নিরুদ্দেশ। সরযূ যখন প্রবেশ করিল, তখন বাটীতে কেহ নাই, শূন্য বাটী হাহা করিতেছে। বৃদ্ধ সরকার কাঁদিয়া কহিল, মা, আমি তবে যাই? সরযূ প্রণাম করিয়া নতমুখে দাঁড়াইয়াContinue Reading

ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ : শরৎকালে

শরৎকালে প্রাতঃসমীরণ যখন স্নিগ্ধ-মধুর সঞ্চরণে চন্দ্রনাথের কক্ষে প্রবেশ করিত, সারা রাত্রির দীর্ঘ জাগরণের পর চন্দ্রনাথ এই সময়টিতে ঘুমাইয়া পড়িত। তাহার পর তপ্ত সূর্যরশ্মি জানালা দিয়া তাহার মুখের উপর, চোখের উপর পড়িত, চন্দ্রনাথের আবার ঘুম ভাঙ্গিয়াContinue Reading

চতুর্দশ পরিচ্ছেদ : ঘটনার পর

উপরিউক্ত ঘটনার পর দুই বৎসর অতিবাহিত হইয়া গিয়াছে। এই দুই বৎসরে আর কোন পরিবর্তন হউক বা না হউক, কৈলাশখুড়ার জীবনে বড় পরিবর্তন ঘটিয়াছে। যেদিন তাঁহার কমলা চলিয়া গিয়াছিলেন, যেদিন তাঁহার কমলচরণ সর্বশেষ নিশ্বাসটি ত্যাগ করিয়াContinue Reading

পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ : এই দুই বৎসর

এই দুই বৎসরের মধ্যে চন্দ্রনাথের সহিত তাহার বাটীর সম্বন্ধই ছিল না। শুধু অর্থের প্রয়োজন হইলে সরকারকে পত্র লিখিত, সরকার লিখিত ঠিকানায় টাকা পাঠাইয়া দিত। দুঃখ করিয়া হরকালী মধ্যে মধ্যে পত্র লিখিতেন। ব্রজকিশোর ফিরিয়া আসিবার জন্যContinue Reading

ষোড়শ পরিচ্ছেদ : চন্দ্রনাথ

চন্দ্রনাথ এলাহাবাদের টিকিট কিনিয়াছিল, কিন্তু পথিমধ্যে অকস্মাৎ সঙ্কল্প পরিবর্তন করিয়া কাশী আসিয়া উপস্থিত হইল। সঙ্গে যে দুইজন ভৃত্য ছিল, তাহারা গাড়ি ঠিক করিয়া জিনিসপত্র তুলিল; কিন্তু চন্দ্রনাথ তাহাতে উঠিল না; উহাদিগকে ডাকবাংলায় অপেক্ষা করিয়া থাকিবারContinue Reading

সপ্তদশ পরিচ্ছেদ : তখন স্বামী-স্ত্রীতে

তখন স্বামী-স্ত্রীতে এইরূপ কথাবার্তা হইল। চন্দ্রনাথ বলিল, বড় রোগা হয়েচ। সরযূ মুখপানে চাহিয়া অল্প হাসিল, যেন বলিতে চাহে, ইহাতে আর আশ্চর্য কি! তাহার পর চন্দ্রনাথ বিশুকে লইয়া একটু অধিক পরিমাণে ব্যস্ত হইয়া পড়িল। সরযূ তাহারContinue Reading

অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ : কিন্তু চন্দ্রনাথ

কিন্তু চন্দ্রনাথ যখন বৃদ্ধকে উদ্দেশ করিয়া কহিল, কাল এদের নিয়ে যাব, তখন কৈলাসচন্দ্রের বক্ষ-পঞ্জরের মধ্যে এককালে শতাধিক কামান দাগার মত শব্দ করিয়া উঠিল! নিজে কি কহিলেন, নিজের কানে সে শব্দ পৌঁছিল না। কিন্তু চন্দ্রনাথ শুনিল,Continue Reading

ঊনবিংশ পরিচ্ছেদ : বাড়ি পৌঁছিয়া

বাড়ি পৌঁছিয়া চন্দ্রনাথের যেটুকু ভয় ছিল, খুড়ো মণিশঙ্করের কথায় তাহা উড়িয়া গেল। তিনি বলিলেন, চন্দ্রনাথ, পাপের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করতে হয়, যে পাপ করেনি তার আবার প্রায়শ্চিত্তের কি প্রয়োজন? বধূমাতার কোন পাপ নেই, অনর্থক প্রায়শ্চিত্তের কথাContinue Reading