» » সাম্যবাদী (কাব্য)

বর্ণাকার

সাম্যবাদী (কাব্য)

কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘সাম্যবাদী’ কাব্যগ্রন্থ ১৯২৫ সালের ডিসেম্বরে (পৌষ,১৩৩২) প্রকাশিত হয়। প্রকাশক মৌলভী শামসুদ্দীন হুসেন, বেঙ্গল পাবলিশিং হোম, ৫ নূর মহম্মদ লেন, কলিকাতা। ১৫ নং নয়ান চাঁদ [দত্ত] ষ্ট্রীট, কলিকাতা, মেটকাফ প্রেসে শ্রীমণিভূষণ মুখার্জী কর্তৃক মুদ্রিত হয়। পৃষ্ঠা সংখ্যা ৩২, মূল্য দুই আনা। এই কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলোয় বেশিরভাগই মানবিক বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে।

১৩৩২ বঙ্গাব্দের ১লা পৌষ মুতাবিক ১৯২৫ খৃষ্টাব্দের ১৬ই ডিসেম্বর তারিখে ৩৭নং হ্যারিসন রোড, কলিকাতা হতে ‘শ্রমিক-প্রজা-স্বরাজ-সম্প্রদায়ে’র সাপ্তাহিক মুখপত্ররূপে ‘লাঙল’ পত্রিকা প্রকাশিত হয়। প্রধান পরিচালক ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম, সম্পাদক ছিলেন কবির পল্টনের বন্ধু মণিভূষণ মুখার্জী এবং কর্মাধ্যক্ষ ছিলেন মরহুম শামসুদ্দীন হুসেন। লাঙলের বিশেষ (প্রথম) সংখ্যায় ‘সর্ব্বপ্রধান সম্পদ’রূপে ‘সাম্যবাদী’ কবিতাটি প্রকাশিত হয়।

‘সাম্যবাদী’ কাব্যগ্রন্থে মোট ১১টি কবিতা সঙ্কলিত হয়েছিল; কবিতাগুলো হচ্ছে— ‘সাম্যবাদী’, ‘ঈশ্বর’, ‘মানুষ’, ‘পাপ’, ‘চোর-ডাকাত’, ‘বারাঙ্গানা’, ‘মিথ্যাবাদী’, ‘নারী’, ‘রাজা-প্রজা’, ‘সাম্য’ ও ‘কুলি-মজুর’। পরে ‘সাম্যবাদী’সহ এর চারটি কবিতা ‘সর্বহারা’ কাব্যগ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণে সঙ্কলিত হয়। আমাদের এই সংস্করণে ‘সাম্যবাদী’ গ্রন্থের প্রথম সংস্করণের পাঠ অনুসৃত হয়েছে।

‘সাম্যবাদী’ কাব্যের সবগুলো কবিতাতেই মানুষের সমতা নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে। বিশেষ করে ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় কাজী নজরুল ইসলাম বৈষম্যহীন অসাম্প্রদায়িক মানবসমাজ প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন। কবির বিশ্বাস মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে পরিচিত হয়ে ওঠা সবচেয়ে সম্মানের। নজরুলের এ আদর্শ আজও প্রতিটি মানুষের জীবনপথের প্রেরণা। কিন্তু মানুষ সম্প্রদায়কে ব্যবহার করে রাজনীতি করে, দুর্বলকে শোষণ করে, এখনও একের বিরুদ্ধে অন্যকে উস্কে দেয়। একজনের প্রতি অন্যজনকে বিমুখ করার ষড়যন্ত্র করে। নজরুল এ কবিতায় মানুষের অন্তর ধর্মের ওপর জোর প্রদান করেন। ধর্মগ্রন্থ পড়ে অর্জিত জ্ঞান যথার্থভাবে উপলব্ধি করতে প্রয়োজন মানবিকতাবোধ। কবি বলেছেন, মানুষের হৃদয়ের চেয়ে শ্রেষ্ঠ কোন মন্দির কাবা নেই। কবি সকল মত, সকল পথের উপরে স্থান দিয়েছেন মানবিকতা। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, মুসলিম সকলকে একই মায়ের সন্তানের মত ভেবেছেন। নজরুল মানবিক মিলবন্ধনের জন্য সঙ্গীত রচনা করেছেন। বাণী ও সুরের মাধ্যমে মানবতার সুবাস ছড়ানোর চেষ্টা করেছেন।

নজরুল ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় মন্দির, মসজিদ, গির্জা বা অন্যান্য তীর্থক্ষেত্রের মত পবিত্র মনে করেছেন মানুষের হৃদয়কে। এ হৃদয় যদি পবিত্র থাকে, হৃদয়ে যদি কারো প্রতি হিংসা, বিদ্বেষ না থাকে, সকলের প্রতি সমদর্শিতা থাকে তাহলে পৃথিবী হবে সুখের আবাসস্থল। সাম্যবাদ মানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নিৰ্বিশেষে রাষ্ট্রের সকল মানুষের সমান অধিকার থাকা উচিত এ মতবাদ। কাজী নজরুল ইসলাম তার ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় সব ধরনের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সাম্যবাদের বাণী প্রচার করেছেন।