» » » কিতাবুত তাওহীদ : তাওহীদের মাসায়েল

বর্ণাকার

কিতাবুত তাওহীদ বা তাওহীদের মাসায়েল, উর্দু ভাষায় লিখিত তাফহীমুস্‌ সুন্নাহ সিরিজের প্রথম কিতাব। উর্দু নাম, তাওহীদ কি মাসায়েল; লেখক, মুহাম্মদ ইকবাল ইবনে ইদরীস কীলানী; ব্যবস্থাপক, হারুনুর রশিদ কিলানী; প্রকাশক, হাদীস পাবলিকেশন্স, ২ শিটমহল রোড, লাহোর; প্রথম প্রকাশ, জানুয়ারি ১৯৯৭। বাংলায় কিতাবটির একাধিক অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। অনূদিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত মুহাম্মদ হারুন আযিযী নদভীর অনুবাদ। এটি প্রকাশ করেছে দারুস-সালাম, রিয়াদ, সাউদী আরব। এডুলিচারের জন্য গ্রন্থটি অনুবাদ করেছেন তাহের আলমাহদী। ধর্মীয় গ্রন্থের সাহিত্যমান থাকা জরুরি নয়, এমন একটি ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। যে কোন গ্রন্থেরই সাহিত্যমান থাকা জরুরি। তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ পবিত্র কুরআনুল কারীম। সাহিত্যমানের বিবেচনা করেই কিতাবটিকে অনুবাদে হাত দিয়েছেন তাহের আলমাহদী। আশাকরি, তার অনূদিত গ্রন্থটি যেকোন পাঠকের ভাল লাগবে।

মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা, গ্রন্থটির লেখক ও অনূবাদককে তিনি কবুল করুন এবং অনূদিত গ্রন্থটির মাধ্যমে বাংলাভাষী পাঠকদের আক়ীদায়ে তাওহীদকে মজবুত করুন। আমীন!

( ءَأَرْبَابٌۭ مُّتَفَرِّقُونَ خَيْرٌ أَمِ ٱللَّهُ ٱلْوَٰحِدُ ٱلْقَهَّارُ ) ٣٩

ভিন্ন ভিন্ন বহু রব উত্তম, না মহাপ্রতাপশালী এক আল্লাহ্‌?

—সূরা ইউসুফ, আয়াত ৩৯

⁑          ⁑          ⁑

تَعَــالَوْا إِلىٰ كَلِمَــةٍ سَوَاءٍ بَيْنَنـا وَ بَيْنَكُــمْ

হে মানুষ! এমন এক কালিমার দিকে এসো যা তোমাদের ও আমাদের মাঝে অভিন্ন।

  • ওহে বনি ইসরাঈল! তোমাদের বিশ্বাস যে, উজাইর আলাইহিস সালাম আল্লাহর পুত্র ছিলেন এবং এটাও স্বীকার কর যে, তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। কখনও তোমরা বিবেচনা করেছ কি, আল্লাহর সত্তা হচ্ছে “হাইয়্যু” ও “কাইউম” এবং তাঁর পুত্রেরও এইসব গুণাবলী থাকা উচিত ছিল, তবে উজাইর আলাইহিস সালামের মৃত্যু হ’ল কেন? যিনি মৃত্যুবরণ করেন তিনি কি করে আল্লাহর পুত্র হতে পারেন?
  • ওহে মরিয়ম পুত্র ঈসা আলাইহিস সালামের অনুসারীগণ! তোমরা বিশ্বাস কর যে, ঈসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর পুত্র এবং এটাও স্বীকার কর যে, তাঁকে ক্রুশ বিদ্ধ করা হয়েছে। কখনও চিন্তা করে দেখেছ কি, আল্লাহ সর্বশক্তিমান ও যে কারও উপর প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হওয়ার পরও তাঁর পুত্র এত দুর্বল ও অসহায় কেন ছিলেন যে তাঁকে ক্রুশে চড়ানো হয়েছিল, যাকে ক্রুশে চড়িয়ে হত্যা করা যায় তিনি কি করে আল্লাহর পুত্র হতে পারেন?
  • ওহে হিন্দুগণ! তোমরা তো তেত্রিশ কোটি দেবতায় বিশ্বাস কর। তোমাদের প্রত্যেকে আলাদা আলাদা দেবতা রাখে, যেন, একেক জনের জন্য একেক দেবতা যারা নিজ নিজ ভক্তের প্রয়োজন মেটাতে এবং আকাঙ্ক্ষাপূর্ণ করতে সক্ষম। যেন বাকী বত্রিশ কোটি নিরানব্বই লক্ষ নিরানব্বই হাজার নয়শত নিরানব্বই জন দেবতা তার প্রয়োজন মেটাতে অক্ষম। কখনও ভেবেছ কি, বত্রিশ কোটি নিরানব্বই লক্ষ নিরানব্বই হাজার নয়শত নিরানব্বই জন দেবতা যেখানে প্রয়োজন মেটাতে ও আকাঙ্ক্ষাপূর্ণ করতে সক্ষম নন, তাহলে একজন কি করে সক্ষম হবেন?
  • ওহে বৌদ্ধগণ! তোমাদের বিশ্বাস যে, গৌতম বুদ্ধ মহাসত্যের সন্ধানে বছরের পর বছর মাঠে, জঙ্গলে, মরুভূমিতে পড়েছিলেন। কখনও কি ভেবেছ যে ব্যক্তি মহাসত্যের সন্ধানে দীর্ঘ সময় ঘুরে বেড়ালেন তিনি কি করে মহাসত্য হতে পারেন?
  • ওহে নিষ্পাপ ইমামদের অনুসারীগণ! তোমরা বিশ্বাস কর যে, জগতের ছোট বড় সকল কিছু ইমামের আদেশের অধীন এবং তোমাদের দাবী হচ্ছে, ‘আহলে বাইতে’র উপর যা মসিবত ও দুঃখ-দুর্দশা এসেছিল ওই সব কিছু এসেছিল আবু বাকার রাদি আল্লাহু তা’য়ালা আনহু ও উমর রাদি আল্লাহু তা’য়ালা আনহুর কারণে। একবারও কি ভেবে দেখেছ যে, জগতের ছোট বড় সব কিছু যাদের হুকুমের অধীন তাদের উপর মসিবত ও দুঃখ-দুর্দশা কী করে আসতে পারে? আর যাঁর উপর মসিবত ও দুঃখ-দুর্দশা আসতে পারে তিনি কী করে পৃথিবীর সব কিছুর উপর হুকুমদাতা ও সর্বশক্তিমান হন কী করে?
  • ওহে বুজুর্গানে দীন ও আওলিয়াদের অনুসারীগণ! তোমরা বিশ্বাস কর যে, আলী হাজওয়েরী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি মানুষকে ভাণ্ডার দিয়ে থাকেন; খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তুফান থেকে মুক্তি দান করে থাকেন; আবদুল ক়াদীর জিলানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি যাবতীয় বালা-মসিবত দূর করে থাকেন; ইমাম বরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি হতভাগাকে ভাগ্যবান করে থাকেন এবং সুলতান বাহু রহমাতুল্লাহি আলাইহি ছেলে সন্তান দান করে থাকেন। কখনও কি চিন্তা করে দেখেছ, যখন আলী হাজওয়েরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন না তখন ভাণ্ডার কে দান করতেন? যখন মুঈনুদ্দীন চিশতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন না তখন তুফান থেকে মুক্তি দিতেন কে? যখন আবদুল ক়াদির জিলানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন না তখন বালা-মসিবত কে দূর করতেন? যখন ইমাম বরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন না তখন হতভাগাকে ভাগ্যবান কে করতেন? যখন সুলতান বাহু রহমাতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন না তখন সন্তান কে দান করতেন?
  • ওহে দুনিয়ার মানুষ! আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনো! আল্লাহ তায়ালা অবতীর্ণ শিক্ষায় কখনও স্ববিরোধ থাকতে পারে না। কিন্তু তোমাদের আকাইদ ও চিন্তাধারায় থাকা স্ববিরোধ এটা প্রমাণ করে যে, তোমাদের আকাইদ ও চিন্তাধারা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ নয়।

অতএব, হে দুনিয়ার মানুষ! এমন এক কালিমার দিকে এসো—

  • যার শিক্ষায় কোন স্ববিরোধ নেই;
  • যা মানব জাতির আত্মাকে প্রশান্তি ও দেহকে মুক্তি দান করে;
  • যা মানব জাতিকে মর্যাদা, সম্মান ও মহত্ত্ব প্রদান করে;
  • যা মানব জাতিকে শান্তি ও নিরাপত্তা, সাম্য ও ন্যায়বিচার, সাম্য ও স্বাধীনতা; ভাতৃত্ব ও ভালবাসা ইত্যাদি উচ্চমানের মানবীয় গুণাবলীর নিশ্চয়তা প্রদান করে;
  • যা মানব জাতিকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দেয়।

সেই এক মাত্র কালিমা হলো—

لآَ إِلٰــهَ إِلاَّ اللهٌ

আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই।