শেষ বিকেলের মেয়ে

শেষ বিকেলের মেয়ে (১৯৬০) জহির রায়হানের প্রথম উপন্যাস। রোমান্টিক প্রেমের উপাখ্যানটির প্রকাশক সন্ধানী প্রকাশনী।Continue Reading

এক

আকাশের রঙ বুঝি বারবার বদলায়। কখনো নীল। কখনো হলুদ। কখনো আবার টকটকে লাল। মাঝে মাঝে যখন সাদা-কালো মেঘগুলো ইতি-উতি ছড়িয়ে থাকে আর সোনালী সূর্যের আভা ঈষৎ বাঁকা হয়ে সহস্ৰ মেঘের গায়ে লুটিয়ে পড়ে তখন মনেContinue Reading

দুই

পাশের ঘর থেকে মায়ের কোরান শরীফ পড়ার শব্দ শোনা যাচ্ছে। টেনে টেনে সুর করে পড়ছেন তিনি। রোজ পড়েন। সকালে, দুপুরে আর রাতে। মাসে একবার করে কোরান শরীফ খতম করা চাই, নাইলে উনি শান্তি পান না।Continue Reading

তিন

জাহানারা এখনো এলো না। একদল ছেলেমেয়ের সঙ্গে কথা বলছে সে। ওদের কথা যেন ফুরোবে না কোনদিন। মনে মনে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলো কাসেদ। এ কী বলছেন আপনি? জাহানারা অবাক চোখে তাকালো ওর দিকে। মৃদু গলায় বললো,Continue Reading

চার

বড় সরল মেয়ে শিউলী। কিছুক্ষণের পরিচয়ে বড় সহজ হয়ে এসেছে সে। যে কথাগুলো সকলকে বলা যায় না, তাও সে বলেছে ওকে। জাহানারা যদি শিউলীর মত হতো? কাসেদ ভাবলো নীরবে। শিউলী বললো, আমার আর সব বন্ধুরাContinue Reading

পাঁচ

কাসেদের আপন বোন নয় নাহার। মায়ের দূর সম্পৰ্কীয় এক খালাতো বোনের মেয়ে। ছোটবেলায় ওর মা মারা যান। ওর বাবা তখন কী একটা কোম্পানীতে চাকরি করতেন। স্ত্রীকে হয়তো বড় ভালবাসতেন তিনি, তবুও কিছুদিন পরে চাকরিতে ইস্তফাContinue Reading

ছয়

ঘুটফুটে সন্ধ্যা। আকাশে অসংখ্য মেঘের ভিড়। এই বুঝি বৃষ্টি এলো। কাঠের সিঁড়িগুলো বেয়ে উপরে উঠে এসে কাসেদ দেখলো, বাসায় কেউ নেই। শুধু সালমা ড্রয়িং রুমে একখানা চৌকির ওপর লম্বা হয়ে শুয়ে কি একটা পত্রিকা পড়ছে।Continue Reading

সাত

অন্যদিন। খালুজী তখন বরিশালে বদলী হয়ে গেছেন। সালমা কলেজে পড়ে। অফিসের কী একটা কাজে বরিশাল যেতে হলো তাকে। তিন দিন ছিলো। যেদিন রাতে সে চলে আসবে সেদিন সবার কাছ থেকে বিদায় নেয়া হলো, কিন্তু সালমাকেContinue Reading

আট

মা, নামাজ পড়া শেষ করে এসে ছেলের দিকে নীরবে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষণ। হাতের তালুতে মুখ রেখে ওপাশের দেয়ালের কী যেন দেখছে সে। চোখের মণিজোড়া স্থির নিম্পলক। কী রে ভাত খাবি না? মায়ের ডাকে চোখের পলকContinue Reading

নয়

ফোনের ওপর হাত রেখে তখনো দাঁড়িয়ে রয়েছে কাসেদ। শিউলীর সঙ্গে আমন অভদ্র ব্যবহার না করলেও পারতো সে। কে জানে কী ভাবছে। জাহানারার সঙ্গে দেখা হলে হয়তো সব কিছু খুলে বলবে সে। বলবে, তোমার কেরানী বন্ধুটিকেContinue Reading

দশ

চলুন, এবার ওঠা যাক। বড় সাহেব আস্তে করে বললেন। কোন কথা না বলে উঠে দাঁড়ালো কাসেদ। হয়তো সে অনেক বদলে গেছে। এখন দেখলে আর সেই পুরনো মেয়েটিকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। সিঁড়ি বেয়ে দোতলার ঘরেContinue Reading

এগারো

দিন কয়েক পরে অফিসে এসে শিউলীর কাছ থেকে আরেকখানা টেলিফোন পেলো কাসেদ। শিউলী বললো, আহ গলাটা চিনতে পারছেন তো? কাসেদ জবাব দিলো, অবশ্যই পারছি। শিউলী বললো, তাহলে শুনুন, আপনাকে কয়েকটা খবর দেবার আছে। বাবা কুমিল্লায়Continue Reading

বারো

দরজার ঝুলানো ময়লা পর্দাটা ঈষৎ নড়ে উঠলো। কে যেন পাশে দাঁড়িয়ে। অন্ধকারে তাকে ঠিক দেখা গেলো না। চুড়ির আওয়াজ শুনে মনে হলো একটি মেয়ে। হয়তো সেই মেয়েটি, যে একটু আগে আঙ্গিনার পাশে বসে বসে মাথায়Continue Reading

তেরো

বাইরে রাত। ভেতরে দু’জন নীরবে বসে। আশেপাশে কারো কোন সাড়া শব্দ নেই। সমস্ত পৃথিবী যেন চুপ করে আড়ি পেতে আছে ওরা কি বলে শুনবার জন্য। কাসেদ বললো, আপনার আঙ্গুলে একটা কালো দাগ পড়ে গেছে। জাহানারাContinue Reading

চৌদ্দ

দুটো ঘটনাই পরপর ঘটলো। আগের দিন পুরো অফিসটা একটা চাপা উত্তেজনায় ভুগেছে। কারণটা তেমন অভাবিত কিছু নয়। বড় সাহেবের সঙ্গে তার বউয়ের ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। বউ ডিভোর্স করেছে তাকে। হাজার হোক অফিসের বড় সাহেব, তাকেContinue Reading

পনেরো

মকবুল সাহেব। পক্ষাঘাতে আক্রান্ত মকবুল সাহেব কি ভালো হবেন? এ রোগ তো ভালো হবার নয়। আর তিনি যদি ভালো না হন তাহলে তার জায়গায় নিশ্চয় এই অফিসের একজনকেই নেয়া হবে। কাকে নেবে কিছু জানেন? একContinue Reading

ষোলো

দিন কয়েক থেকে মায়ের শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। মাঝে মাঝে জ্বর আসে। ছেড়ে যায়। আবার আসে। এই জ্বরের মধ্যেও মা নামাজ পড়া বাদ দেন নি। পড়েন, বসে বসে। আর সারাক্ষণ শব্দ করে দোয়া দরুদ পাঠContinue Reading

সতেরো

বিকেলে কাসেদের মনটা হঠাৎ উদাস হয়ে গেলো। বাড়িতে মায়ের অসুখ। তবু বাসায় ফিরতে ইচ্ছে করলো না তার। ইচ্ছে হলো জাহানারাদের ওখানে যেতে। কী করছে জাহানারা? হয়তো বাগানে বসে বসে গল্প করছে পাড়ার বান্ধবীদের সঙ্গে। কিম্বাContinue Reading

আঠারো

হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে ওর। দেহটা কাঁপছে। বুকের মধ্যে একটা চিনচিনে ব্যথা। যন্ত্রণা। কাসেদের মনে হলো এ মুহূর্তে এখান থেকে ছুটে দূরে কোথাও পালিয়ে যেতে পারলে যেন কিছুটা শান্তি পেত সে। স্বস্তি পেতো। মাথাটা ভার হয়েContinue Reading

ঊনিশ

আগামী রোববার বাসায় আসবে বলেছে জাহানারা। কেন আসবে? কিছু কথা আছে তার। কী কথা? একবার ডেকেছিল সেতারের মাষ্টার ঠিক করে দেবার জন্য। এবার হয়তো বলবে, মাষ্টারের সঙ্গে আমার বিয়ের আয়োজন করে দাও। কাসেদ যেন এContinue Reading