তাদের অধিকাংশকেই বর্শা ও তলোয়ার দেখিয়ে গ্রেফতার করা হলো। তারা হাতে অস্ত্র নেয়ার কোন সুযোগই পেলো না।
যারা ঘরের ভেতর থেকে তলোয়ার ও বর্শা- হাতে বের হলো তারা সবাই মারা গেল। বাকীরা সকলেই অস্ত্র ফেলে দাঁড়িয়ে গেল।
তাদের নাইটকে পাওয়া গেল ঘোর মাতাল অবস্থায়। নর্তকীর জন্য পাতা জাজিমের ওপর পড়ে আছে তার শরীর। প্রায় উলঙ্গ। সে হৈ চৈ শুনে নেশার ঘোরে গালিগালাজ করছিল। মুসলমান সৈন্যদেরকেই সে তার নিজের সৈন্য মনে করছিল।
তার কামরা তল্লাশী করা হলো। সেখানে পাওয়া গেল তিনজন মুসলমান মেয়ে। তার পাশের কামরা থেকেও কয়েকজন মেয়েকে উদ্ধার করা হলো। এরাও সবাই মুসলমান। মেয়েদের অবস্থা খুবই করুণ। আলুথালু শিথিল শরীর।
মেয়েরা মুসলমান সৈন্যদেরকে অন্য কোন ডাকাত দল মনে করেছিল। তাই তারা আতঙ্কে মিয়মান হয়ে দিশেহারার মত তাকিয়ে ছিল ওদের দিকে।
যখন তারা জানতে পারলো, এরা সবাই মুসলিম সৈন্য তখন তারা যেন পাগল হয়ে উঠলো। তারা অঝোরে কাঁদতে, লাগলো। কেউ কেউ শোকে দুঃখে ডাকাতদের গালি দিতে লাগলো।
কেউ আবার মুসলমান সৈন্যদেরকেই গালি দিতে লাগলো তাদের বিলম্বে আসার কারণে। মেয়েরা তাদেরকে কাপুরুষ বলে তিরস্কার করতে লাগলো।
কেউ কেউ বলতে লাগলো, যদি তোমরা মুসলমান হও তবে কাফেরদের হত্যা করছে না কেন? আমরা কি তোমাদের মা-বোন নই? আমাদের মান-ইজ্জত কি তোমাদের মা বোনদের থেকে আলাদা?
সে সময় হিশামুদ্দিন ও তার বাহিনীর সবাই ডাকাতদের বন্দী করা ও গুহার অভ্যন্তরে অনুসন্ধান চালানোর কাজে ব্যস্ত ছিল। তারা মেয়েদের ক্ষোভ ও রাগের কোন জবাব দিল না।
এত সহজে এমন বিশাল বাহিনী পরাস্ত করা যাবে ধারনাও করেননি কমাণ্ডোার বা হিশামুদ্দিন। অভিযান শেষে আল্লাহর এ অভাবিত সাহায্যের জন্য শোকরিয়া জানালেন হিশামুদ্দিন। সৈনিকদের বললেন, ‘এটা আল্লাহরই দয়া যে, শাহাদাতের কোন নজরানা না নিয়েই আল্লাহ আমাদের এক বিরাট বিজয় দান করলেন।
ভোর রাতে বন্দীদের নিয়ে হিশামুদ্দিন রওনা দিলেন উপকূলের দিকে।
ভোর হলো। ততোক্ষণে খৃস্টানদের নেশা সম্পূর্ণ কেটে গেছে। রাতেই তাদের নিয়ে যাত্রা করার ফলে ভোরের দিকে তারা উপকূলে পৌঁছে গেল। সূর্য উঠলে তারা দেখলো লোহিত সাগরের তীরে বসে আছে ওরা।
উপকূলে এসে পৌঁছার পরপরই বন্দী খৃস্টানদের এক জায়গায় বসিয়ে দেয়া হয়েছিল। তারা বসার পর তাদের চারপাশে দাঁড়িয়ে গেল সশস্ত্র সৈন্যরা। একটু দূরত্বে ধনুকে তীর জুড়ে নিশানা তাক করে দাঁড়িয়ে রইল তীরন্দাজ বাহিনী।
মেয়েদেরকে নিয়ে যাওয়া হলো এ্যাডমিরাল হিশামুদ্দিনের হেফাজতে। তাদেরকে সবার আগে জাহাজে তুলে দিয়ে তাদের আরামের ব্যবস্থা করা হলো।
গুণে দেখা গেল বন্দীদের সংখ্যা পাঁচশো চৌদ্দ জন। ধারনা করা হলো রাতে মোকাবেলা করতে গিয়ে প্রায় শ’খানেক ডাকাত মারা গেছে।
তারা টিলার মধ্যে যেসব জিনিষপত্র ও অর্থ জমা করেছিল সেগুলো পড়েছিল সাগর তীরে। সেই সাথে ছিল খৃস্টানদের বিশাল অস্ত্রভাণ্ডোার। মুজাহিদরা সেগুলোও পাহারা দিচ্ছিল।
বন্দীদের লিডার সেই নাইটকে হাজির করা হলো সুলতান আইয়ুবীর নৌবাহিনী প্রধান এ্যাডমিরাল হিশামুদ্দিনের সামনে। তিনি তার কাছে জানতে চাইলেন তাদের পরিচিতি।
নাইট জানালো, তারা প্রসিদ্ধ খৃস্টান সম্রাট বিলডনের সেনাবাহিনী। মুসলমানদের কাফেলা লুট করার জন্য তিনি তাদেরকে এখানে নিয়োজিত করেছেন। এখানে তারা বিরাট ঘাঁটি বানিয়ে আরামেই ডাকাতি করে যাচ্ছিল।
‘এ সম্পদ দিয়ে তোমরা কি করো?’
‘এখানে যে সম্পদ লুট হয় তার কিছু অংশ সৈন্যদের মধ্যে বিতরণ হয়। অবশিষ্ট সবই সম্রাটর দরবারে পাঠানো হয়। উট এবং ঘোড়াও সরকারী হিসাবে চলে যায়।’
‘তোমরা মেয়েদের কি করেছো? শিশুদের কি করেছে? কাফেলায় যেসব মেয়ে এবং শিশু ছিল, যাদের তোমরা বন্দী করে এনেছিলে তাদের সবাইকে পাওয়া যায়নি। ওরা কোথায়? কি করেছো ওদের?’
‘মেয়েদের সম্পর্কে আমাদের ওপর নির্দেশ আছে, যারা অসাধারণ সুন্দরী তাদেরকে আমাদের হেড কোয়ার্টারে পাঠিয়ে দিতে হবে। শিশুদের ব্যাপারেও একই রকম নির্দেশ, মেয়ে শিশুদের হেড কোয়ার্টারে পাঠিয়ে দিতে হবে।’
‘কেন? এইসব শিশুদের দিয়ে তোমাদের কাজ কি?’
‘তাদেরকে সেখানে গোয়েন্দাগিরী করার ট্রেনিং দেয়া হয়। যখন ওরা যৌবনে পা দেয় তখন ওদের পাঠিয়ে দেয়া হয় কোন, মুসলিম দেশে। ওখানে ধ্বংসাত্মক কাজ, নাশকতা ও গোয়েন্দাগিরীতে লাগিয়ে দেয়া হয় ওদের। আর তাদের মধ্যে যারা পরমাসুন্দরী তাদেরকে হেডকোয়ার্টারেই রেখে দেয়া হয়।’
‘এই কাফেলার কয়জন শিশুকে বন্দী করেছিলে তোমরা? তাদের সবাইকে কি হেডকোয়ার্টারে পাঠিয়ে দিয়েছো?’
‘বারো চৌদ্দজন শিশু ছিল। খৃস্টান কমাণ্ডোার বললো, তাদের মধ্যে মাত্র একজনকে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।’
‘আর অবশিষ্ট শিশুরা?’
‘তাদের সবাইকে হত্যা করা হয়েছে।’
‘আর কাফেলার যে সব লোক ধরে এনেছিলে তারা কোথায়?’
‘তাদেরকে শুধুমাত্র মালপত্র বহনের জন্যই বাঁচিয়ে রাখা হয়েছিল। পরে সবাইকে হত্যা করা হয়েছে।’
‘কেন্দ্রে কি তবে মাত্র একজন শিশুকেই পাঠিয়েছো?’
‘না, একজন মেয়েও পাঠানো হয়েছে।’ নাইট বললো, ‘পরমা সুন্দরী মেয়ে পেলে তাদের কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেয়ার নির্দেশ ছিল। বন্দীদের মধ্যে এক যুবতী ছিল। সে ছিল এক নর্তকী। তার শারিরীক গঠন, মুখের সৌন্দর্য ও নাচের ভঙ্গিমা সবই ছিল অপূর্ব।
এ ধরনের মেয়ে আমরা অনেক অনুসন্ধান করেও পাই না। ভাগ্যক্রমেই আমরা এ মেয়েকে পেয়ে যাই।’
‘ওদের কি বৈরুত পাঠিয়েছো? এত তাড়াহুড়ো করে পাঠানোর কারণ কি?’
‘না, গোপনীয়তা রক্ষার জন্য সরাসরি আমরা কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ রাখি না। এ জন্য সিরিয়ায় আমাদের একটি কেন্দ্র আছে। আমরা ওদেরকে সেখানেই পাঠিয়ে দিয়েছি। আর তাড়াতাড়ি পাঠানোর কারণ হলো, এমন মেয়েদের বেশী দিন সৈনিকদের কাছাকাছি রাখতে নেই। কখন কোন সৈন্য তাকে মুক্ত করার প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে পালাবে এ-ভয়েই তাকে তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি।’
হিশামুদ্দিন তার কমাণ্ডোারের দিকে ফিরলেন। বললেন, ‘এই শয়তানরা কেবল একটি হজ্জ কাফেলাই লুট করেনি। তারা কাফেলার নিরীহ লোকদের বন্দী করে পরে সেই নিরস্ত্র লোকগুলোকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। এমনকি কাফেলার শিশুদেরকেও ঠাণ্ডোা মাথায় খুন করতে ওদের বিবেক সামান্যও কাঁপেনি। এই অমার্জনীয় অপরাধের শাস্তি তাদেরকে পেতে হবে।’
হিশামুদ্দিন আফসোস করে কমাণ্ডোারকে বললেন, ‘হায়, এই পবিত্র কাফেলাটি হেজায পর্যন্ত যেতে চেয়েছিল আল্লাহর ঘর জিয়ারত করতে। কিন্তু হতভাগ্য হজ্জযাত্রীদের সেই আশা পূরণ হয়নি। তার আগেই এই খুনীরা তাদেরকে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিয়েছে। এখন এই খুনীদেরকে আমি হেজায পাঠাবো। আর সেখানেই ওদের বিচার হবে।’
হিশামুদ্দিন নাইটকে নিয়ে সেই স্থানটি পরিদর্শন করতে গেলেন, যেখানে তারা হজ্জযাত্রীদের পাইকারীভাবে হত্যা। করেছিল। নেকড়ে ও মরু শৃগাল তাদের লাশগুলো খেয়ে ছিন্নভিন্ন করে রেখেছিল।
হিশামুদ্দিন খৃস্টান কয়েদীদের দিয়ে ওখানে কবর খোদাই করলেন। তারপর মৃতদের জন্য জানাজা পড়ে সমস্ত লাশ দাফন করলেন।
এই লাশগুলো তার চিন্তা-চেতনাকে এতটাই আচ্ছন্ন করে দিল যে, বন্দীদের শাস্তি দেয়ার জন্য তিনি কঠিন সংকল্প গ্রহণ করলেন।
তিনি এই ঘটনার খবর দিয়ে কায়রো ও সুলতান আইয়ুবীর কাছে কাসেদ পাঠিয়ে দিলেন। কিন্তু কাসেদদের ফিরে আসার অপেক্ষা না করে তিনি সমস্ত কয়েদীদের জাহাজে বোঝাই করলেন। তারপর জাহাজ ছাড়লেন জেদ্দা বন্দরের উদ্দেশ্যে।
জেদ্দা পৌঁছে তিনি বন্দীদের নিয়ে গেলেন মীনা প্রান্তরে। সেখানে হজ্জ কাফেলার নিরীহ ছয় শতাধিক যাত্রীকে নৃশংসভাবে হত্যা করার অপরাধে তাদের সবাইকে মৃত্যুদণ্ডো দিলেন এবং এই দণ্ডো অবিলম্বে কার্যকর করা হলো।
ইউরোপের ঐতিহাসিকরা এই মৃত্যুদণ্ডোকে বর্বরোচিত বলে আখ্যায়িত করেছে কিন্তু নিরীহ হজ্জ যাত্রীদের খুন করার বিষয়ে তারা কোন মন্তব্য করেনি।
খৃষ্টান ঐতিহাসিকরাও এ জন্য উত্তেজিত ভাষায় উষ্মা প্রকাশ করেছে। তারা অভিযোগ করে বলেছে, হিশামুদ্দিন বন্দীদের হত্যা করে অমানবিকতার পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু এই বন্দীরা কোন ধরনের বন্দী এবং তাদের অপরাধ কতটুকু সে ব্যাপারে তারা নিশ্চুপ।
মুসলিম ঐতিহাসিকদের বর্ণনা থেকে জানা যায়, এ্যাডমিরাল হিশামুদ্দিন লুলুর এই শাস্তিদানের ব্যাপারে সুলতান আইয়ুবী কিছুই জানতেন না। হিশামুদ্দিন লুলু শরীয়তের কিসাসের বিধান অনুযায়ী নিজে এককভাবেই তাদের শাস্তি দানের পর্বটি সমাধা করেছিলেন।
খৃস্টান ডাকাত কমাণ্ডোার যে নর্তকীর কথা বলেছিল, সে নর্তকীকে নিয়ে কাফেলা সিরিয়ার দিকে যাচ্ছিল। এই নর্তকীর নাম রায়াদী।
ঘোড়ার নিচে চাপা পড়ায় তার অবস্থা খুবই শোচনীয় হয়েছিল। কমাণ্ডোার এই ভয়ে তাকে তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দিল, যেন তার উপর কোন দোষারোপ না আসে যে, সুন্দরী নর্তকীর উপর কোন অত্যাচার উৎপীড়ন করা হয়েছে।
নাইট যে সময় হিশামুদ্দিনকে রায়াদীর বর্ণনা শোনাচ্ছিল সে সময় নর্তকী চারজন খৃষ্টান প্রহরীর পাহারায় সেখান থেকে বহু দূর চলে গিয়েছিল। সে ছিল ঘোড়ার উপর সওয়ার। উপযুক্ত
চিকিৎসার কারণে তার অবস্থার ক্রমশঃ উন্নতি হচ্ছিল।
রাস্তায় সৈন্যদের সে বললো, “তোমরা আমাকে কায়রো পৌঁছে দাও, আমি তোমাদেরকে আশাতীত মূল্য ও পুরস্কার দেবো।’
কিন্তু সৈন্যরা তার প্রস্তাবে রাজি হলো না। সে একই প্রস্তাব বার বার দিতে থাকলে এক সৈনিক বললো, ‘দেখো, তুমি আমাদেরকে প্রলোভন দেখিও না। তুমি তো দেখতেই পাচ্ছো, তোমাকে আমরা কেমন শাহজাদীর মত সসম্মানে নিয়ে যাচ্ছি। তুমি এতই রূপসী, তোমার দেহে এমন যাদু আছে যে, তুমি যাকে ইশারা করবে সেই তোমার পায়ের তলে এসে জীবন দিতে রাজি হয়ে যাবে।
কিন্তু আমরা তোমার এই লোভনীয় দেহ থেকে নিজেদেরকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে রেখেছি। কারণ, তুমি আমাদের কাছে আমানত। আর এ আমানত আমাদের সম্রাটের আমানত। আমরা যদি তোমার কথা মেনে নেই অথবা তোমাকে আমাদের সম্পদ মনে না করি তবে সম্রাট আমাদের ক্ষমা করবেন না আর ক্রুশও আমাদের ক্ষমা করবে না। তাই তোমার কোন প্রস্তাবই আমরা গ্রহণ করতে পারবো না।’
‘আমরা এখন কোথায় যাচ্ছি। আমাদের পরবর্তী ঠিকানা কোথায়?’ রায়াদী প্রশ্ন করলো।
‘আমরা অনেক দূরের পথে যাত্রা করেছি!’ তারা উত্তর দিল, ‘এ যাত্রা বড় কঠিন ও দীর্ঘ। সবচেয়ে বড় আশংকার বিষয় হলো, আমাদেরকে মুসলমানদের এলাকার ভেতর দিয়ে যেতে হবে।’
এই চারজন খৃস্টান রায়াদীকে সত্যি রাজকুমারীর মতই নিয়ে যাচ্ছিল।
‘তুমি অবশ্যই কোন বড় আমীরের মেয়ে অথবা কোন ধনী সওদাগরের কন্যা!’ সৈনিকটি বললো, ‘তোমার প্রস্তাবটি লোভনীয় অস্বীকার করছি না। বিশ্বাস করি, তুমি যা বলছে তা করতে পারবে। কিন্তু আমরা ক্রুশের আমানত খেয়ানত করতে পারবো না। এই কাফেলায় তোমার সাথে আপনজন আর কে কে ছিল?’
‘তোমাদেরকে কেউ বলেনি, আমি একজন পেশাদার নর্তকী?’ রায়াদী উত্তর দিল, ‘আমার কোন বাবা নেই, কোন ভাই নেই। আমার মা নিজেও একজন নামকরা গায়িকা ও নর্তকী ছিল। আমি বলতে পারবো না, আমি তার কোন প্রেমিকের সন্তান।
মা শিশুকাল থেকেই আমাকে নাচ শিক্ষা দিতে থাকেন। আমারও নাচগান খুব ভাল লাগতো। আমার বয়স যখন মোল কিংবা সতেরো তখন আমার মা আমাকে এক ধনী লোকের ঘরে পাঠিয়ে দিল।
সে লোকটি ছিল খুবই বুড়ো এবং সে মদ পান করতো। বুড়ো আমাকে বললো, আমাকে পাওয়ার জন্য সে একেবারে পাগল হয়ে উঠেছে। বুড়োর কথা শুনে তার প্রতি আমার প্রচণ্ড ঘৃণা জাগলো। বুড়োকে দেখে আমার মনে হচ্ছিল, আমার তো, কোন পিতা নেই, এই বুড়োই হয়তো আমার বাবা হবে।
বুড়ো যতই আমাকে কাছে টানতে চাইলো ততোই আমার মনে হতে লাগলো, এ লোক আমার বাবাও নয় আর আমার প্রতি তার কোন ভালবাসাও নেই! সে আমার যৌবনের এক বৃদ্ধ ও অচল গ্রাহক মাত্র।
একদিন আমি সেখানে থেকে পালিয়ে এলাম। মাকে যখন ঘটনা বললাম, মা বললো, এটা আমাদের পেশা ও জীবিকা।’ আমি কিছুতেই তা মেনে নিতে পারলাম না। মা আমাকে পূনরায় তার কাছে ফিরে যেতে বললো, কিন্তু আমি তার সে আদেশ মানতে অস্বীকার করলাম। রেগে গিয়ে মা আমাকে খুব মারপিট করলো। তবু নতি স্বীকার না করে আমি মাকে বললাম, আমি নাচবো, গাইবো, কিন্তু কারো শয্যা সঙ্গীনি হবো না।’ অবশেষে মা আমার শর্ত মেনে নিলেন। ওই লোকের অগাধ ধন সম্পদ ছিল। সে আমাকে নেয়ার জন্য বার বার আমাদের বাড়ীতে আসতে লাগলো। কিন্তু আমি রাজি হলাম না। যেহেতু আমি বিয়ে করিনি এবং কারো সাথে সম্পর্কও গড়িনি সে জন্য আমার মূল্য বেড়ে গেল। অনেক নামী দামী পুরুষ আমার পেছনে ঘুর ঘুর করতে লাগলো। এভাবে তিনটি বছর কেটে গেল। এ সময় আমার মনে এক নতুন প্রেরণা ও আবেগ জেগে উঠলো। আমার মনে হলো, আমার নাচ, গান ও সৌন্দর্যের পরিবর্তে, যদি আমাকে কেউ ভালবাসে, তাহলে তেমন লোককে মন দেয়া যায়। আমি মনে মনে এমন ব্যক্তিকে খুঁজছিলাম। শেষে এমন এক ব্যক্তি ভাগ্যে জুটে গেল। লোকটিকে দেখে আমার খুব ভাল লেগে গেল। সে আমার চেয়ে সাত আট বছরের বড়। তার সাথে ঘরে বাইরে সবখানেই আমার সাক্ষাৎ হতে লাগলো। আমি ঘোড়া গাড়ীতে বেড়ানোর নাম করে বেরিয়ে যেতাম। আর সে সেখানে উপস্থিত থাকতো। আমার চোখে সে ছিল এক রাজকুমার। তার সাথে মিশতে গিয়ে জানতে পারলাম সে মদ পান করে। আমি তাকে নিষেধ করলাম। এক সন্ধ্যায় তাকে বললাম, ‘তুমি মদ পান ত্যাগ করো।’
সে রাজি হলো এবং কসম খেয়ে বললো, সে আর মদ পান করবে না। সে তার অঙ্গীকার পূরণ করে দেখালো। একদিন সে আমাকে বললো, তুমি নাচ ছেড়ে দাও। আমি তার কথায় রাজি হয়ে গেলাম এবং কসম খেয়ে বললাম, ভবিষ্যতে আমি এ পেশাকে অভিশপ্ত মনে করবো। কিন্তু যে পর্যন্ত আমি এ বাড়ীতে থাকবো সে পর্যন্ত এ পেশা ছাড়া আমার পক্ষে সম্ভব না। মা জোর করে আমাকে দিয়ে এ কাজ করাবে। নাচ ছাড়তে হলে আমাকে এ বাড়ী ত্যাগ করতে হবে।
সে স্বীকার করলো। সে আরো বললো, ‘আমিও এক বিলাসী পিতার বিলাস পুত্র। আমার বাবার রং মহলে তোমার চেয়েও ছোট ছোট মেয়েরা আছে। আমিও আমার বাড়ীতে কখনও সৎ, থাকতে পারবো না।’
আমি তাকে বললাম, ‘আমিও আমার এক নর্তকী মায়ের একমাত্র নাচিয়ে মেয়ে। তোমাকে তোমার বাবার বিলাসিতা যেমন খারাপ করেছে আমাকে খারাপ পথে টেনে নিয়ে যাচ্ছে আমার মায়ের পেশা। এসো, আমরা কোথাও দূরে পালিয়ে যাই এবং স্বামী স্ত্রীর মতো পবিত্র জীবন যাপন করি।’ আমরা দুজনেই এ প্রস্তাবে একমত হলাম। আমার ধর্ম কি তা আমার জানা ছিল না। যার জন্য পরিচয় জানা নেই তার আবার ধর্ম কিসের? আমার বাবা মুসলমান, খৃষ্টান না ইহুদী ছিল কে বলবে সে কথা? কিন্তু সে ছিল মুসলমান। আমি তাকে বললাম, তুমি আমাকে মুসলমান হিসেবেই গণ্য করো আর আমাকে বুঝাও এ ধর্মটা কি? আমি তাকে আরো বললাম, তুমি আমাকে ভালবাসা দাও; আমাকে পবিত্র জীবন দান করো।’
সে আমাকে বুঝালো, পবিত্র হতে হলে হেজাযে যেতে হবে। কাবার গিলাফ ধরে তওবা করতে হবে আল্লাহর কাছে। আমি নিজেও হেজাযের অনেক গল্প শুনেছি আগে। হেজাযের গান আমার খুব প্রিয় ছিল। আমি অনেক সময় গুন গুন করে একা একাই সে গান গাইতাম। চলো কাফেলা হেজায পানে। হেজাযের নাম শুনে সেখানে যাওয়ার জন্য আমার আকাংখার আগুন বেড়ে দিল। আমি তাকে বললাম, আমি প্রস্তুত! আমি যাবো হেজাযে।’
সে বললো, ‘অধৈর্য হয়ো না। সাহস ও ধৈর্য্য ধারন করো।’
আমি বললাম, সাহসের অভাব নেই আমার। তুমি আমার আশা পুরণ করে দাও। এখান থেকে বের করে নাও আমায়। সে আমাকে বললো, তুমি কি জানো, অন্য কোথাও না গিয়ে কেন আমি হেজায যেতে চাচ্ছি?’ আমি বললাম, “সে স্থান অতি পবিত্র ও সুন্দর। সে বললো, “শুধু সুন্দরই না, সে স্থান অতি পবিত্র এবং মানুষের নিরাপদ আবাসভূমি। সেখানে পবিত্র কাবাঘর আছে। আছে আবে জমজম কুপের পানি। সেখানে যে যায় তার আত্মা পবিত্র হয়ে যায়। সে আরও বললো, আমরা সেখানে হজ্জব্রত সমাপন করে পবিত্র হয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবো এবং সেখানেই থেকে যাবো।’ আমি তার সেই সময়ের স্মৃতি কখনও ভুলতে পারবো না, যখন সে আমার সাথে সরল শিশুর মত কথা বলছিল আর আমি তার চোখে চোখ রেখে তার কথা শুনছিলাম। তার কথাগুলো যেন আমার হৃদয়ে গেঁথে যাচ্ছিল। আমার তখন মনে হচ্ছিল আমার নিজস্ব অস্তিত্ব বলে কিছু নেই। আমার স্বত্ত্বা তার স্বত্ত্বার সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে! আমি তাকে বললাম, ‘যদি যেতেই চাও দেরী করে লাভ কি? আগামী কালই চলো।’ সে বললো, ‘দাঁড়াও, আমি খোঁজ নিয়ে দেখি কবে কাফেলা যাত্রা করবে। পরে এক সন্ধ্যায় সে বললো, “আজ রাতে প্রস্তুত হয়ে থেকো।
কাফেলা যাত্রা শুরু করেছে। আমরা তাদের সাথে রওনা হতে পারিনি, কারণ আমাদের পরিবার জানতে পারলে আমাদের পথ – আটকে দেবে। কাফেলা এগিয়ে যাক, রাতে রওনা হয়ে আমরা দ্রুত ছুটে গিয়ে ওদের সাথে মিলিত হবো।
আমি তাকে বললাম, আমি যদি বাড়ী যাই তবে আমাকে আর আসতে দেবে না। তুমি আমাকে এখনি নিয়ে চলো।’
কিন্তু সে রাজি হলো না। বললো, এখন রওনা হলে ধরা পড়ে যাবো। তুমি বাড়ী যাও, রাতে গোপনে বেরিয়ে আসবে। সবাই ঘুমিয়ে গেলে আমিও বাড়ী ছেড়ে বেরিয়ে পড়বো। আমি সংকেত দিলে তুমি বেরিয়ে এসো।
সে আমাকে নির্দিষ্ট সংকেত শিখিয়ে দিল। বললো, আমার আরো কিছু প্রস্তুতির প্রয়োজন হবে। এখন তুমি যাও, নিজেও প্রস্তুতি নাও। প্রয়োজনীয় কাপড় ও সফরের উপযোগী হালকা সরঞ্জাম সঙ্গে নিও।’
আমি বাড়ী ফিরে এলাম। সন্ধ্যা পেরিয়ে গেল। আমার বুকের ভেতর কেমন যেন করতে লাগলো। আবেগে ও পুলকে আমি অস্থির হয়ে পড়েছিলাম। আমার এ অস্থিরতা যেন মায়ের চোখে ধরা না পড়ে সে জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করতে লাগলাম।
রাত একটু গভীর হলো। আমার কানে ভেসে এলো সেই নির্দিষ্ট সংকেত। বাতি নিভিয়ে শুয়েছিলাম আমি। সংকেত শুনে সন্তর্পণে নেমে এলাম বিছানা ছেড়ে। আস্তে ঘর থেকে বেরিয়ে নেমে এলাম রাস্তায়।
অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এলো সে। আমরা গোপনে বেরিয়ে পড়লাম কাফেলায় শামিল হওয়ার জন্য। কিছু দূর আমরা হেঁটে গেলাম।
সে এক জায়গায় দুটো ঘোড়া লুকিয়ে রেখে এসেছিল। সেখানে পৌঁছে আমরা দুজন দুটো ঘোড়ায় আরোহণ করলাম। অশ্বপৃষ্ঠে আরোহণ করতে যা দেরী, পরিচিত লোকালয় থেকে পালানোর জন্য আমরা প্রাণপণে ঘোড়া ছুটিয়ে দিলাম। পানি, খাবার এবং আসবাবপত্র ঘোড়ার সঙ্গে বাঁধা ছিল। পথে বিশ্রামের জন্য থামলে আমরা সেখান থেকে সামান্য কিছু খেয়ে নিতাম।
পরের দিন সন্ধ্যায় আমরা কাফেলার সাথে গিয়ে মিলিত হলাম। আমাদের যাত্রা ছিল খুবই শান্তিপূর্ণ। নিশ্চিন্তে পথ চলছিলাম আমরা। রাতে বিশ্রামের জন্য যখন থামতো কাফেলা, আমরা আকাশের তারাদের সাথে কথা বলতাম। চাঁদের সাথে কথা বলতাম। আমার রাজপুত্র আমার মনে স্বপ্নের বীজ বুনে যেতো। ভাবতাম, আহা! পৃথিবী এত সুন্দর! সে রাতেও আমি আমার রাজপুত্রের পবিত্র ভালবাসা বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলাম। কিন্তু আমি কি জানতাম আগামী কালের রক্তলাল সূর্য উঠবে আমাকে রক্তের স্রোতে ভাসিয়ে নেয়ার জন্য? আমাকে নিঃস্ব ও অসহায় করার জন্য?’
রায়াদী বললো, ‘আমার প্রেমিক পুরুষটি তোমাদের হাতে নিহত হলো। আমি আহত হয়ে ধরা পড়লাম তোমাদের হাতে। হেজাযের কাফেলা লুট হয়ে গেল। খানায়ে কাবার মুসাফিররা কাবার দুয়ারে পৌঁছার বদলে পৌঁছে গেল আল্লাহর দরবারে।
আল্লাহ আমার পাপ ক্ষমা করেননি তাই তিনি আমাকে গ্রহণ করেননি। আমার ভাগ্যলিপিতে কাবাঘরে তোয়াফ এবং সিজদাও লিখে রাখেননি। তাই আমার অপবিত্র সত্ত্বা তোমাদের হাতে পড়ে গেল।
‘তুমি যদি ধর্মের মধ্যেই আশ্রয় নিতে চাও তবে আমাদের ধর্মেই আশ্রয় নাও। পবিত্র ক্রুশতো তুমি হাতের কাছেই পাচ্ছে।’ এক সিপাই বললো।
‘তোমরা আমার এক পবিত্র বাসনা ও ছবি ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছো।’ রায়াদী বললো, ‘তোমরা যা করেছো এটা কি তোমাদের ধর্ম বৈধ বলে স্বীকার করে? আমি যে স্বপ্ন নিয়ে বের হয়েছিলাম সে স্বপ্ন এতো বিভীষিকাময় ছিল না। যদি কোন ধর্ম এভাবে নির্বিচারে মানুষ খুনকে অনুমোদন করে তবে সে ধর্মে মানুষের কি দরকার?’
‘এটা আমাদের ধর্ম নয়, এ ধর্ম আমাদের সম্রাটের।’ সিপাই বললো, ‘আমরা সেই ব্যক্তির আদেশের চাকর মাত্র।’
‘তোমার থেকে তো আমিই তবে উত্তম। আমার পদতলে কত শাহজাদা ও রাজকুমার ধনরত্ন ও তার মাথা নত করে রাখে। কিন্তু আমি এখনো আমার আত্মা ও বিবেককে কারো গোলাম বানাইনি। তোমরা যা করেছো তাতে তোমাদের বিবেক কি সায় দেয়?’ রায়াদী বললো, ‘মানুষের গোলামী করার চেয়ে নিজের বিবেকের গোলামী করা অনেক ভাল।’
প্রহরী চুপ করে গেল। তার আত্মায় প্রশ্ন জাগলো, “এ নারী কি অবান্তর প্রশ্ন করেছে নিরীহ মানুষগুলোকে আমরা কেন খুন করতে গেলাম? যে শিশুগুলোকে আমরা হত্যা করেছি কি অপরাধ ছিল তাদের?
প্রহরীকে চুপ থাকতে দেখে রায়াদী বললো, ‘তোমরা বিবেকের আদেশ মান্য করো। বিবেকই ধর্ম। যে কাজ তোমার বিবেক সমর্থন করে না তা ধর্ম হতে পারে না।’
‘আমরা আমাদের মুনীবের আদেশের তাবেদার।’ প্রহরী বললো, ‘মুনীবের হুকুমই আমাদের বিবেক, আমাদের ধর্ম।’
‘মিথ্যে কথা।’ রায়াদী বললো, “বিবেক অবশ্যই তোমাদের আছে। কিন্তু তাকে সামনে আনতে তোমরা ভয় পাও। আমি সেই ধর্মের অনুসারী যে আমাকে পবিত্র ভালবাসা দান করেছে। যে আমার মনে পবিত্র ধারনা ও বোধ বিশ্বাস দিয়েছে। আমি আমার আত্মার কাছে প্রশ্ন করে জেনেছি, এটাই সত্য ধর্ম। ধর্ম মানুষের কল্যাণের জন্য, মানুষের মঙ্গলের জন্য। পবিত্র ধর্ম কখনো মানুষের অকল্যাণ চাইতে পারে না। এ পবিত্র ধর্মই আমাকে স্বপ্নের দেশ হেজাযের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু তোমরা আমাকে সে পথ থেকে ছিনতাই করেছো।’
‘তারচেয়ে তুমি বলো তোমার ধর্ম তোমাকে ত্যাগ করেছে। সে জন্যই তুমি আমাদের হাতে এসে পড়েছে।’ সৈনিক তাকে আরো বললো, ‘তোমার আল্লাহ তোমাকে ত্যাগ করেছে। তুমি এখন আমাদের আদেশের তাবেদার। আমরা তোমাকে যেখানে নিয়ে যাচ্ছি সেখানে যিনি তোমার মনীব হবেন তিনিই তোমার খোদা। এখন চিন্তা করো সেই খোদাকে কেমন করে খুশী করবে।’
‘না, আমি এখনো আমার আল্লাহর হুকুমের তাবেদার। যদি আমি কোন পূণ্যকর্ম করে থাকি, যদি আমার চিন্তা সঠিক হয় তবে আল্লাহ অবশ্যই আমাকে ক্ষমা করে দেবেন।’
‘তাহলে তোমার এ দশা কেন? কেন তুমি আমাদের হাতে বন্দী?’
‘এটা আমার পাপের শাস্তি। এ শাস্তি শেষ হলেই আমি আমার আল্লাহর সাহায্য পেয়ে যাবো।’
‘কিন্তু আমরা তোমাকে যেখানে নিয়ে যাচ্ছি সেখানে তোমাকে সাহায্য করার জন্য কেউ এগিয়ে আসবে না।’
‘যদি না আসে সেটা আমার আল্লাহর দোষ নয়। আমি জানি তোমরা আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো এবং কেন নিয়ে যাচ্ছো।’ রায়াদী বললো, ‘আমার স্বত্ত্বা সেখানে আপাদমস্তক পাপে ডুবে যাবে। সেখানে আমার কোন পূণ্য সঞ্চয় করার সুযোগ থাকবে না। তাহলে আমার আল্লাহ আমাকে সাহায্য করতে আসবেন কেন?”
‘আমরাও সে কথাই বলি। তুমি তো কোন সৎ চিন্তা করতেই পারো না।’ এক সিপাই বললো, ‘তুমি পাপের মধ্যে জন্ম নিয়েছো, পাপের মধ্যেই প্রতিপালিত হয়েছে আর এক পাপীর সাথে তুমি বাড়ী থেকে পালিয়ে যাচ্ছিলে। তুমি পূণ্য ও নেকী কেমন করে কামনা করবে?’
‘আমি স্বীকার করি আমি পাপী। কিন্তু যে নিস্পাপ লোকদের তোমরা অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে তার প্রতিশোধ নিয়ে আমি পূণ্যবান হয়ে যাবো। আমার মধ্যে যে প্রতিশোধ স্পৃহা টগবগ করছে তাই আমাকে পবিত্র করে দেবে।’
সৈনিকরা এক সাথে জোরে হো হো করে হেসে উঠলো। একজন বললো, ‘তোমাকে সম্মানের সাথে নিয়ে যাওয়ার হুকুম দেয়া হয়েছে আমাদের। নইলে প্রতিশোধ নেয়ার ইচ্ছা আমরা এখনই মিটিয়ে দিতে পারতাম।’
রায়াদী কথা বন্ধ করলো। সে সৈনিকদের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে দেখতে পেলো সেখানে জিঘাংসা কিলবিল করছে। তার মনেও এই বিবেকহীন ডাকাতদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও বিদ্বেষ উত্তরোত্তর বাড়তে লাগলো। রায়াদী কি পারবে তার কাঙ্খিত প্রতিশোধ নিতে? নাকি সেই কতিপয় বর্বর ও অমানুষের প্রতিশোধের শিকার হবে?
সমাপ্ত